বড়োজা পর্ব-১৪

0
308

#বড়োজা
#Nadia_Afrin

১৪
আজকের মেজাজ বেশ ভালো তন্নির।নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে।
কাল লতা আপা ও চাচি কেঁদেছে তাকে জড়িয়ে ধরে।
দুঃখ সইতে পারে নি তারা।

আজ কাজে গিয়ে মন দিয়ে কাজ করতে লাগলাম।
আজও দেখলাম রাশেদ স‍্যার দূর থেকে তাকিয়ে আছে।
প্রথমে ভেবেছি সবার কাজেই নজর রাখছে হয়ত।কিন্তু কিছু সময় যাওয়ার পর বুঝলাম তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমার নিকট শুধু।

‘সে কী আমার কাজে নজর রাখছে?
রাগলে রাখুক।
আমার দিক থেকে আমি সৎ।

লাঞ্চ ব্রেকে রাশেদ স‍্যার আবারো এলেন।
আমার সামনে বসে বললেন,”দুদিন এসে আপনি কাজটা বেশ ভালো শিখে নিয়েছেন।
মন দিয়ে কাজ করছেন।
এভাবেই লেগে থাকুন,আমি আপনার পাশে আছি।”

আমি শুধু কিঞ্চিৎ হাসলাম।

ডিউটি শেষ করে মেয়ে নিয়ে ফিরছিলাম।আজও একই দৃশ্য দেখলাম।
এবার রিঙ্কি অন‍্য আরেকটা ছেলের বুকে মাথা দিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছে।
ছেলেটা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আজ প্রাইভেট কারে ছিল ওরা।জানালা খোলা ছিল।এবং স্পিড ছিল ধীরগতির।তাই আমি স্পষ্ট দেখেছি এ দৃশ্য।

মেয়েটা প্রতিদিন অসুস্থ হয় নাকি!
হলেও ওর সঙ্গে আকাশ কোথায়?
নতুন নতুন ছেলেগুলো কে?
এভাবে পরপুরুষের বুকে মাথা দিয়ে যাচ্ছে কেন?

আমার ঠিক বুঝে আসেনা বিষয়টি।

বাড়ির পথে রওনা হই।
বস্তিতে ঢোকার আগে খালার বাড়ি পড়ে।
কী যেন মনে করে ঐ বাড়ির দিকে তাকাই।
আমি তো অবাক ভীষণ!
বাড়ির সামনে বিশাল ভীড়।
লতা আপা সহ আমার ছেলেও আছে দেখছি।

কৌতুহলবশত আমিও যাই সেদিকে।
আমায় দেখেই ছেলে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,”চলে এসেছো আম্মু?আমি এখানে এসেছি লতা আন্টির সঙ্গে।
এই বাড়িতে না ঝগড়া হয়েছে।”

ছেলের কথা শুনে একটু এগিয়ে লতা আপার পাশে দাড়ালাম।
খালাকে দেখছি বাড়ির সামনে বসে আছে।
কেমন একটা বাজে অবস্থা।
ধীরে ধীরে ভেতরে যাই আমরা।
খালা চিৎকার করে কাঁদছে এবার।
আমায় দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,”ওহ তন্নি গো আমার সব শেষ।
আমায় লুটে নিয়ে গেছে।
আমার সব শেষ।
আমি পথের ভিখারী হয়ে গেলাম।
নিঃস্ব হয়ে গেছি আমি তন্নি।”

আমি ঠিক বুঝলাম না বিষয়টি।
না জেনেই সান্ত্বনা দিয়ে আশেপাশে তাকালাম।
এক মেয়ে এগিয়ে এলো।
ঐ মেয়ে খালার বাড়ি সবজি কাঁটার কাজ করতো।
লতা আপা কাজ ছেড়ে দিয়েছিল।

আমি একটু দূরে গেলাম মেয়েটাকে নিয়ে।
জিজ্ঞেস করলাম,”কী হয়েছে এখানে?
জানেন কিছু?”

মেয়েটা মুখ বাকিয়ে বলে,”কী আর বলব আপা,সব দোষ খালাম্মারই।
আপনি বাড়ি ছাড়ার পর এক মহিলাকে স্বামী সহ ভাড়া দিয়েছিল।
বলা নেই কওয়া নেই, খোঁজ না নিয়েই এমনি একজনকে ভাড়া দেয় ঘর।
দিয়ে আবার শুরু করেছিল আলগা দরদ।সবই নাটক।
আপনারই মতো করে ঐ মহিলাকেও তার ঘরে খেতে বলেছে।কাজ করিয়েছে।
গলায় গলায় মিল ছিল।
আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিল।
অপরিচিত এক মহিলা এতো সহ‍্য করে নাকি?
কাল খালাম্মা ব‍‍্যাংক থেকে সব টাকা উঠিয়ে এনে ঘরে রেখেছিল।জমি কিনবে শুনেছিলাম।
ঘরের সব কথা ঐ মহিলাকে বলেছে।মহিলার থেকে যখন টাকা ধার চেয়েছে পেয়েছে।
ভেবেছিল বোকা সোকা হবে।
কিন্তু মহিলা বেড়িয়েছে ডাকাত।
কাল রাতে মহিলা তার স্বামী সহ কজন ছেলে নিয়ে এসে গভীর রাতে খালাম্মাকে আর খালুকে বেধে রেখে সব নিয়ে গেছে।
খালুকে মার*ধর করেছে ভীষণ।
সব লুটে নিয়ে গেছে একদম।
ছেলে বিদেশ থাকতো।কতো গহনা, যাবতীয় টাকা, মূল‍্যবান সব জিনিস সব নিয়ে গেছে।
খালাম্মার গা থেকে অব্দি গয়না খুলে নিয়েছে।
দামী শাড়ি থেকে শুরু করে ছোট ফার্নিচার নিয়ে গেছে।
ওদের সব ব‍্যবস্থা করাই ছিল।
গাড়ি নিয়ে বাড়ির পেছনে দাড় করিয়ে রেখেছিল আগে থেকেই।
সব নিয়ে গেছে।”

মনটা বেশ খারাপ হলো আমার।
মানুষটা যতোই খারাপ হোক,খালা বলে ডেকেছি।মায়ের পরেই খালা।

লতা আপা বলে,”এতোকিছু হয়ে গেল আশেপাশের কেউ কিছু বোঝেনি?
উনারা চিৎকার করেনি?
সাহায্য চায়নি?”

“বুঝবে কী করে!
কতো রাতের ব‍্যাপার।উনাদের তো বেধে রেখেছিল।সকালে আমি কাজে এসে শুনেছি সব।
খালুর অবস্থা খারাপ।হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
খালাম্মা বাড়িতেই।
উনার ছেলেরা প্রবাস থেকে গালা*গালি করছে।বাড়ি ছেলেদের নামে।
ছেলেরা বলেছে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে।
রক্ত ঘাম করা পয়সা।সব নিয়ে গেছে।প্রবাসে কম কষ্ট করে নাকি ছেলেগুলো?মাকে বার বার বুঝিয়েছে এমন স্বভাব ছাড়তে।সে ছাড়েনি।সৃষ্টিকর্তার রহমতে ওদের কম ছিল না।
খালাম্মার চাহিদা আরো ছিল।
লোভ মানুষকে ধ্বংস করে।তাই হলো।সামান‍্য দু-তিন হাজার টাকার জন্য ছোটলোকি করতো।
কষ্ট করে কাজ করতাম আমি,পারিশ্রমিক দিত না ঠিক মতো।ধার দেনা করে মেরে খাওয়ার চেষ্টা করতো।ওদের এতো ছিল তবুও যাকাত ফেতরা দিত না জানেন?
বলতো আমার টাকা কেন অন‍্যকে দেব।কষ্ট করে টাকা করেছি।
আমার টাকার ওপর শুধু আমার অধিকার।টাকার ভাগ কেন গরীবদের দেব?
একথা বলতেন ইনি।
ভাড়াটিয়ার সঙ্গে গলায় গলায় মিল ছিল।ব‍্যাংকে টাকা উঠাতে যাবে তাও বলে যায় ভাড়াটিয়াকে।
আমি নিষেধ করেছিলাম বলে মা-বাপ তুলে গাল দিয়েছিল আমায়।
এদের একটা শিক্ষা পাওয়ার দরকার ছিল।
অতি লোভ ধ্বংস করে দিল।দশ টাকার আশায় দশ লক্ষ হারালো।
খালুর দোকানের টাকা ঘরে এনে রেখেছিল সেগুলোও নিয়েছে।একপ্রকার এরা পথের ভিখারী হয়েছে।
কতো গরীবের হক মেরে খেয়েছে।সব এক দিক দিয়ে বেড়িয়ে গেল।
বিদেশ থেকে ছেলেরা বলেই দিয়েছে আর একটা টাকাও বাড়ি দেবেনা।ওরা ওখানে বিয়ে করে সেটেল হয়ে গেছে।
মা-বাপ ভিক্ষা করে খেলেও ওরা দেখবেনা আর।”

আমি বললাম,”এই মূহুর্তে এসব বললে হবে?
খালাদের মনে এমনিতেই ঝড় চলছে।
সন্তান হিসেবে ওদের মা-বাবার পাশে দাড়ানো উচিৎ।ভুল যা হওয়ার হয়ে গেছে।
কেঁদে কেটে লাভ নেই।”

“ওদের দিকটাও দেখতে হবে তন্নি আপা।
ছেলেগুলোর কষ্টের টাকা।ভেবেছিল জমি কিনে একটা বাড়ি করে বউ বাচ্চা নিয়ে দেশে চলে আসবে।
মা-বাবাকে বলেছিল টাকার কথা গোপন রাখতে।

ওর মা ভাড়াটিয়ার সঙ্গে পিরিত বানিয়ে সব বলেছে।
ছেলেগুলোর মাথায় বাড়ি একদম।
দেশে আসা আর হবে কিনা সন্দেহ!”

মেয়েটার কথা খুব বেশি অযৌক্তিক নয়।
যার মাথা সে ই বোঝে ব‍্যাথা।

লতা আপা তাড়া দিল বাড়ি যেতে।
এখানে থেকেই বা লাভ কী!
আমরা তো কিছু করতে পারবনা।পুলিশে খবর দিয়েছে।তাড়া এসে যদি কিছু করতে পারে।

ছেলের হাত ধরে বেড়িয়ে আসতে নিলাম।
খালা দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
বারবার বলে,”আমার লোভের শাস্তি আমি পেয়ে গেছি তন্নি।
দুই পয়সার আশায় আমার সব শেষ।
কতো ভালো ছিলে তুমি।মায়ের মতো কদর করতে আমায়।
আমি তোমার প্রতি জুলুম করেছি।অন‍্যায় করেছি।ঠকিয়েছি।
কতশত মানুষের হক মেরে খেয়েছি।তাদের হাহাকার আমায় শেষ করে দিল।
আজ যদি তুমি আমার সঙ্গে থাকতে একাজ হতোনা।
কয়েক টাকা বাড়তির আশায় আমি ডাকাত ঘরে এনেছিলাম।
তোমার সঙ্গে মিলেজিলে থাকলে আমি সুখে থাকতাম।কতো উপকার করতে তুমি আমার।
আমি শুধু নিজের স্বার্থ বুঝেছি।
তোমার মতো অসহায়ের প্রতি অন‍্যায় করেছি।সৃষ্টিকর্তা আমায় আমার পাপের শাস্তি দিল।
জানি সব শেষ।তবুও তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমি।যদি পারো আমায় মাফ করে দিও মা।”

আমার চোখটাও পানিতে ভরে ওঠে।
অধিক আবেগি আমি।
এই মানুষটার প্রতি আজ মায়া হচ্ছে ভীষণ।

“দেখুন খালা যা হওয়ার হয়েছে।
নিজেকে সামলান।আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ অভিযোগ নেই।
মানুষ মাত্রই ভুল করে।তবে আপনার ভুলটা হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত।বোঝানোর পরও বোঝেননি আপনি।জানি এ কথা গুলো এখন বলা ঠিক না।তবুও বলছি।
চলার পথে খালা প্রতিবেশি,আপন মানুষ প্রয়োজন হয়।
আপনি যদি লোকের সঙ্গে ভালো ব‍্যবহার করতেন।গরীবের দুঃখ বুঝতেন।সবাই আপনার পাশে থাকতো।মানুষ মানুষেরই জন্য।
আজ দেখুন কী পরিস্থিতি!
এতো বড়ো বিপদ আপনার অথচ কেউ পাশে নেই।
আঙ্কেলকে নিজেই হাসপাতালে যেতে হলো।
আপনার নিজেরই পুলিশ ডাকতে হয়েছে।
আপনার বিপদে কেউ পাশে নেই।
তাই বলি খালা,জীবনে যাই করেন পরের ক্ষতি করে কখনো নিজ স্বার্থ হাসিল করবেন না।
অভিশাপ না হোক,হাহাকার লেগে যায়।”

খালা মাথা নিচু করে কাঁদে।
আমি ছেলেকে নিয়ে বাইরে আসি।
সত‍্যিই মানুষের জীবন কতো বিচিত্র।

বাড়ি ফিরে রান্না করেছি।
খেয়েদেয়ে ছেলে নিয়ে শুয়ে পড়েছি তাড়াতাড়িই।
প্রায় রাত দশটার দিকে রাশেদ স‍্যারের নাম্বার থেকে কল এলো।
আমি রিসিভ করি।হ‍্যালো বলতেই স‍্যার বলে,”দুঃখিত মিস তন্নি।এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে কল করেছি।
কাল আমাদের ফ‍্যাক্টারিতে অনুষ্ঠান।
কম্পানির দশ বছর পূর্ণ হবে।
অন‍্য সব স্টাফদের হাতে হাতে নোটিশ পত্র দেওয়া হয়েছে।আপনি নতুন তাই মনে ছিল না হয়ত।
পড়ে আমি খেয়াল করেছি বিষয়টি।
কাল ফ‍্যাক্টারির কাজ বন্ধ থাকবে।
ঘন্টা খানিকের জন্য এসে অনুষ্ঠানে যোগদান করে যাবেন।
চাইলে আপনার মেয়েকে রেখে আসতে পারেন।
আসলে অনুষ্ঠান তো,ভীড় বাট্টা থাকবে।প্রচন্ড কোলাহল।
বাচ্চা নিয়ে এলে অসুবিধা হতে পারে।
সামান্য একঘন্টারই ব‍্যাপার তো।
আর হ‍্যা,থিম হবে রেড।
সবাই লাল শাড়ি পড়ে আসবে।আপনিও পড়ে আসবেন কিন্তু।এটা নিয়ম।
এবার আমি রাখছি।শুভ রাত্রী।”

কল কেঁটে দেয় তিনি।
আমি ভাবনায় পড়ে যাই।লাল শাড়ি তো আমার নেই।ওবাড়ি ছিল একটা।
যাকগে সেসব।সকালে ভাবা যাবে।
আগে একটা শান্তির ঘুম দেই।

পরদিন ঘুম ভাঙতে বেলা হয়ে গেছে বেশ।
তাড়াতাড়ি উঠে লতা আপার ঘরের দিকে ছুট লাগালাম।
লতা আপা তখন সবে মাত্র কাজে বের হচ্ছে।
আমায় দৌড়ে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,”কী হয়েছে তন্নি?
এখনো কাজে যাওনি?
বেলা তো অনেক হলো।এসময় তো তুমি চলে যাও।”

“আজ উঠতে দেরি হয়ে গেছে আপা।”

আমি আমতা আমতা করে বলি,”আপনার কাছে একটা লাল রঙের শাড়ি হবে আপা?
আসলে আমার ফ‍্যাক্টারিতে আজ অনুষ্ঠান।সবাইকে লাল শাড়ি পরে যেতে হবে।এটা নাকি নিয়ম।
আমার লাল শাড়ি নেই।
আপনার থাকলে একটা দিন।কথা দিচ্ছি কোনো ক্ষতি করবো না।মাত্র এক ঘন্টার জন্য নেব।
অনুষ্ঠান শেষ হলে বাড়ি ফিরেও সুন্দর করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ভাঝ করে দিয়ে যাব।
যদি থাকে একটু দিন না আপা।”

আমার কন্ঠে অনুরোধ।
লতা আপা একগাল হেসে বলে,”বোকা মেয়ে!
এতো অনুরোধের কী আছে?
বড়ো আপার থেকে শাড়ি নেবে তুমি।পরের থেকে নয়।
আমার একটা আছে লাল শাড়ি।খুব বেশি দামি নয়।চিকন সুতোর জরির হালকা কাজ।
তোমার ফর্সা গায়ে মানাবে বেশ।”

আপা ঘরে ঢোকে।
শাড়ি বাহির করে দিয়ে বলে,”পড়িয়ে দিয়ে যাই তোমায়।তাড়াতাড়ি হবে।”

“আপনার কাজে দেরি হবেনা?”

“আমার কাজ অফিস আদালতে নয় বোন।
অন‍্যের বাড়ি কাজ করি।
একদিন দেরি হলে খুব বেশি কিছু হবেনা।প্রয়োজনে কাজ আরো বেশি করে দিয়ে আসবোনি।
আমার কর্তা ভীষণ ভালো মানুষ।
ঐ খালার মতো নয়।”

আমি মুখটা ছোট করে বলি,”থাক না আপা।বাদ দিন ওসব।শাড়ি পরিয়ে দিন আমায়।”

লতা আপা আমায় ভীষণ সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেয়।
গা-হাত খালি আমার।বড্ড বেমানান লাগে শাড়ির সঙ্গে।
তাই আপা জোর করে এক জোড়া কানের,হাতের পড়িয়ে দেয়।চুলে খোপা করে দেয়।চোখে হালকা কাজল।
এই আমার সাজ।
লতা আপার ভাষ‍্যমতে এতেই আমার রুপ খুলেছে।
মনে মনে ভাবি,রুপ খুলে আর কী হবে!
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

দৌড়ে ঘরের দিকে যাই আবার।মেয়েকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে চাচির ঘরে শুইয়ে গেছি।
ওতো কোলাহলে ছোট বাচ্চাটাকে আর নিতে চাইনা।
প্রয়োজনে এক ঘন্টার জায়গায় আধঘন্টায় ফিরে আসবো।
আজ তো আর কাজ নেই।শুধু অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করলেই হলো।

ছেলেকে চিপস কিনে দিয়ে একটা বাচ্চার সঙ্গে খেলতে দিয়ে বেরিয়ে পরলাম আমি।
কিন্তু বিপদ বাধে রাস্তায় গিয়ে।
কোনো রিক্সা নেই।দূরদূরান্তে তাকিয়েও কোনো রিক্সা পেলাম না।
অগত‍্যা আমায় হেঁটেই যেতে হলো।
মাঝপথে তখন সবে।শাড়ি পরে হাঁটতে পারছিনা।এরমাঝে আজ সকাল সকালই সূর্য কড়া হয়েছে।রোদে মুখ দিয়ে ঘাম চুয়ে পরছে।
হটাৎ একটা গাড়ি এসে থামে আমার সামনে।
জানালা খুলে রাশেদ স‍্যার বলেন,”রিক্সা পাননি বুঝি?
এই রোদের মাঝে হেঁটে যাচ্ছেন?
একটু হলে জ্ঞান হারাবেন।
আমার গাড়িতে বসুন।
একজায়গাতেই যাচ্ছি আমরা।”

“না স‍্যার।থাক।
আমি নিজেই চলে যেতে পারবো।
এইতো আর একটু পথ বাকি আছে।”

“একটু একটু করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে অলরেডি।
ত্রিশ মিনিট লেট আপনি।
আমি বস।আমার কিছু হবেনা।
আপনার দেরি হলে বকা শুনতে হতে পারে।
তাই চলুন উপকৃত হবেন।”

ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও গাড়িতে বসলাম।
স‍্যার একটা রুমাল দিল পকেট থেকে।মুখ মুছে নিতে বলল।
আমি মুখ মুছলাম।
পানির বোতল ও দিলেন তিনি।খেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম।কড়া রোদে তৃষ্ণায় বুক ফেঁটে যাচ্ছিলো একপ্রকার।

আমি চুপচাপ গাড়িতে বসে রইলাম।
স‍্যারকে দেখি একটু পর পর আড় চোখে আমার দিকে তাকায়।
আমি ইতস্তত বোধ করলাম।
ড্রাইভার গাড়ি থামায়।
সঙ্গে সঙ্গে এক লাফে নেমে পড়ি আমি।এতোক্ষণ গুমোট পরিবেশে আটকে ছিলাম।

যেইনা ভেতরে ঢুকবো, স‍্যার ডেকে বলেন,”আবার দেখা হবে।”

আমি মাথা নাড়িয়ে ভেতরে যাই।
চারপাশের সবাই লাল রঙের শাড়ি নয় থ্রিপিছ পড়েছে।
একদম লালে লাল পরিবেশ।
সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ফ‍্যাক্টারি।
আমি ঘুরে ঘুরে দেখলাম সবটা।
মনটা বেশ ফ্রেশ লাগছিল।
কজনের সঙ্গে পরিচিত হলাম।কথাবার্তা বললাম।টুকটাক হাসি তামাশাও হলো।

এবার খাবারের পালা।
ফ‍্যাক্টারির ভেতরে পরিষ্কার করে চট বিছিয়েছে।
সকল কর্মীরা সেখানে গিয়ে বসলো একে একে।
আমিও বসলাম।
প‍্যাকেট বিরিয়ানি দিয়েছে খেতে।
যেই না খেতে যাব ওমনি স‍্যার প্রবেশ করে ভেতরে।
সবাই দাড়াতে নিলে স‍্যার নিষেধ করে।
বলেন,”আজকের দিনে কোনো ভেদাভেদ নেই।আমি আপনি সবাই এক।আপনাদের জন্য আমাদের এই কম্পানির অনেক উন্নতি হয়েছে।এজন‍্য কৃতজ্ঞ।
আজ আমরা মিলেমিশে খাবো সকলে।”

স‍্যার দেখলাম এদিকেই এগিয়ে আসছে।
আমি কাচুমাচু হয়ে বসে রইলাম।
স‍্যার এসে আমার পাশে ধপ করে বসে পরলো।
আমি ঘাবড়ে গেলাম প্রথমে।
সরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।
স‍্যার সামান্য হেসে বলল,”বিব্রত হওয়ার দরকার নেই।খেয়ে নিন।”

বাধ‍্য হয়েই ওভাবে খেতে লাগলাম।
পাশ থেকে এক মহিলা আরেকজনকে বলছে,”কী হলো আজ!
স‍্যার এসেছে আমাদের সঙ্গে খেতে।আগে তো কখনো আসেনি খেতে।”

বিষয়টি কেমন যেন লাগে আমার।
কোনো মতে খেয়ে বাইরে আসি।হাত ধুই।
বেশ দেরি হয়ে গেছে।মেয়েটা কাঁদছে নিশ্চয়।
বাড়ির জন্য এক প‍্যাকেট করে খাবার দিয়েছে।তা নিয়ে আমি বের হতে যাব এমন সময় স‍্যার ডাকলেন।
আমি দাড়ালাম।
স‍্যার এগিয়ে এসে বললেন,”আপনি দেখলাম ঠিক মতো খেলেনই না।”

আমি বললাম,”না মানে বাড়িতে মেয়ে রেখে এসেছি তাই। “

“আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি এই তিন প‍্যাকেট খাবার নিয়ে যান।
ছেলেকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে পেট ভরে খাবেন।”

আমি নিতে চাইনা কিছুতেই।
স‍্যার জোর করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।
আবারও সেই মহিলা ফিসফিসিয়ে বলে,”আমাদের দিচ্ছে এক প‍্যাকেট।ওকে দিল তিনটা।
তাও আবার আলাদা ডেকে নিয়ে।
ঘটনা কী?”

আমি এবারও পাত্তা দিলাম না তেমন।
মেয়ের চিন্তায় বিভোর আমি।
না জানি কী করছে আমার বাচ্চা গুলো!

দ্রুত বের হয়ে রিক্সা করে বাড়ি ফিরলাম।
ফিরে দেখি আরেক কান্ড!

(পর্ব ছোট হয়েছে জানি।এজন‍্য ক্ষমাপার্থি।)