#বড়োজা
#Nadia_Afrin
১৫
ফ্যাক্টারির কাজ শেষ করে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরেছি।
এসে দেখি ছেলে আমার মাটিতে বসে বসে কাঁদছে।
গায়ে ধুলো বালি মাখা।
হাতে পায়ে আচড়ের দাগ।
আমার বুকটা ধ্বক করে উঠলো।
তড়িঘড়ি ছেলের কাছে দৌড়ে গিয়ে কোলে নিলাম।
কোলেতে বসিয়ে আদর করতে করতে বললাম,”কী হয়েছে বাবা?
এ অবস্থা কেন তোমার?
দাদিমা কোথায় গেছে?”
ছেলে বলে,”দাদিমা আপুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে।
আমায় যেতে বলেছিল।
আমি যাইনি।আমি বস্তির বাইরে খেলতে গিয়েছিলাম।
কয়েকটা ছেলে আমায় ধরে খুব মেরেছে।”
“তোমায় কেন মেরেছে হঠাৎ?
তুমি কী কোনো দোষ করেছিলে?”
“না তোহ।আমি শুধু খেলা কম পেরেছি।
তাই ওরা আমায় মেরেছে অনেক।
বলেছে আবার দেখলে মেরে পা ভেঙে দেবে।”
আমার বেশ রাগ হলো।ছোট বাচ্চাকে কেউ এভাবে মারে?বিবেক ছাড়া!
ততক্ষণাৎ ছেলেকে কোলে নিয়ে সেখানে গেলাম।
বস্তির বাইরের এলাকা এটি।
একটা মাঠ মতো।
ফ্ল্যাটের বিভিন্ন বাচ্চারা খেলছে।
ছেলে হাত দিয়ে ইশারা করলো,ওরাই মেরেছে।
প্রতিটি বাচ্চাই বড়ো।বয়স বারো-তেরো হবে হয়ত।
বুঝদার বাচ্চাগুলো আমার ছবছরের ছেলেটাকে এভাবে মেরেছে!
আমি এগিয়ে গিয়ে একটু বকা দিলাম তাদের।
বুঝিয়ে বলেছিও।
ছেলেগুলো ওদের মা-বাবাকে ডেকে আনে।
মূহুর্তে একপ্রকার ঝগড়ার সৃষ্টি হয়।
আমার ছেলের জন্ম নিয়ে কথা বলেন তারা।
গালাগালি করে।
তেড়ে আসে।
টাকা থাকলেই মানুষ ভালো হয়না।
দোষ এদের ছেলের।
এনাদের উচিৎ ছিল নিজ বাচ্চাকে কন্ট্রোল করা।
এরাই করছে আমার সঙ্গে ঝগড়া।
আমি কিন্তু ঝগড়া করতে আসিনি মোটেও।
আমি চেয়েছিলাম বুঝিয়ে মিল করে দিতে।
ছেলে রেখে কাজে যেতে হবে আমায়।
পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হোক তাই মিল করিয়ে দিতে এসেছিলাম।
যাক গে।এদের সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই।
বেশি কোলাহল তৈরী হোক চাইনা।
ছেলেকে নিয়ে চলে এলাম।
বাড়ি ফিরে গোসল করিয়ে দিলাম।
বস্তির বাইরে যেতে নিষেধ করি।
মেয়ে সেই যে ঘুমিয়েছে।ওঠেই নি।
কাজ শেষে উঠলো মেয়ে।
তিনটি বিরিয়ানির প্যাকেট থেকে একটি লতা আপার ছেলে ও একটি চাচিদের জন্য রেখেছি।
বাকি একটা ছেলেকে দিয়ে পানি আনতে গেলাম।
ছেলে প্যাকেট খুলে চিৎকার করে বলে,”আম্মু দেখে যাও কাগজ বিরিয়ানি।”
আমি তো অবাক।দ্রুত ঘরে গেলাম।
দেখলাম বিরিয়ানির প্যাকেটে একটি ছোট্ট কাগজ।এটা তো থাকার কথা নয়।
কৌতূহল বসত খুললাম সেটি।
ভেতরে লেখা,’আপনাকে লাল শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে তন্নি।’
ভ্রু কুচকাই আমি।খাবারের মাঝে এসব কে দিল?
রাশেদ স্যার আমার হাতে এই প্যাকেট দিয়েছে।
কোনোভাবে তিনিই দেয়নি তো?
এই মানুষটির আগ বাড়িয়ে কথা বলা,তাকিয়ে থাকা,সাহায্য করতে চাওয়া,আমার ঠিক ভালো লাগছেনা ।
আমরা পূর্বপরিচিত নই।
দুদিনের দেখাতেই একটা মানুষ কেন এতো ভাবছে আমায় নিয়ে?
চেনা-জানা হতেও তো সময় লাগে।
উনি খুব দ্রুতই যেন আমার সঙ্গে মিশতে চাচ্ছে।
উদ্দেশ্য খারাপ কিনা জানিনা,তবে সতর্ক থাকতে হবে আমায়।
এতো সহজে কোনো সম্পর্ক হয়না।এক জায়গা থেকে প্রতারিত হয়ে এসেছি আমি।
বয়স আমার উঠতি নয়।যে চোখে রঙিন চশমা পড়ে প্রেমে পড়ে যাব।
দুই সন্তানের জননি আমি।সর্বপ্রথম নিজের সন্তানদের চিন্তা করতে হবে।
আমার ভবিষ্যৎ আমার নিজেকেই তৈরী করে নিতে হবে।সামনের পথ অনেক কঠিন।বিপথে পা বাড়ালে হবেনা।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
ছেলে বায়না ধরেছে বিস্কুট আর মুড়ি কিনে দিতে।
টাকা তেমন নেই হাতে।তবুও কিনে দিতে হলো।
এমনিতেই আজ বাচ্চাটা আঘাত পেয়েছে ভীষণ।
তাই আর না করতে পারিনি।
দোকানে গিয়ে বিস্কুট,মুড়ি,চানাচুর কিনে বাড়ি ফিরছিলাম।
বস্তির কটা বাচ্চা আমাদের খাবারের দিকে বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইলো।
এক প্যাকেট বিস্কুট ছিড়ে ওদের দিয়েছি।
ওরা খুশি মনে নিয়ে খায় আর খেলে।
ওগুলো সব একটা বয়ামে রেখেছি।ছেলে ক্ষিদে পেলে খাবে।বাড়ি থাকিনা আমি।
বিকেলের দিকে আমার নাম্বারে কল এলো।
অচেনা নাম্বার।
রিসিভ করি আমি।
গলা শুনে চোখে পানি জমে।
আর কেউ নয়,এটা তটিনী।
আমি কান্নাভেজা কন্ঠে বললাম,”এতোদিনে এই বোনটাকে মনে পরলো তোমার?
কেমন আছো তুমি?”
“আপা আমার ফোন সমেত সিম হারিয়ে গেছিলো।সিমটা ওঠাতে পারিনি।
ওর ফোনে আপনার নাম্বার ছিল না।আমি অনেক খোঁজ করেছি আপনার।
পাইনি।শুনেছি আপনার নাকি ডিভোর্স হয়ে গেছে আপা।
আমি একথা কাল জেনেছি।
বাসা বাড়িতে থাকি আমি।জব ও ছেড়ে দিয়েছি।দেড় মাসের প্রেগনেন্ট আমি।
তাই খবর পাইনি।
আপনার কথা অনেক মনে পড়তো আমার আপা।
আমার মা-বাবাকে ঐ বাড়ি পাঠিয়েছিলাম আপনার খোঁজে।বা নাম্বার এনে দিতে।
ওরা নাকি জানিয়েছে আপনি এক লোকের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন।
সেই লোক আবার কে জানেন?
আমাদের বাড়িতে সবছি দিত না?সেই সবজি ওয়ালা।
আমি যেহেতু ওখানে নেই তাই আমার মা-বাবা আর জোর দিয়ে কিছু বলতে পারিনি।
আমিও যেতে পারছিনা।
রিস্কি প্রেগনেন্সি আমার।ফুল বেড রেস্ট।
সিড়ি পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারি না।বাজারে পর্যন্ত যেতে পারিনা।এজন্য জবও ছেড়েছি।
অন্তত ছয়টা মাস এখানেই থাকতে হবে।
তাই বাড়ি যেতে পারছিনা।
গেলে ওদের শিক্ষা দিতাম।
এখান থেকে কিছু করতে পারছিনা আমি।
আপনার দেবরও কেমন যেন বদলে যাচ্ছে।
ওর টাকায় খাচ্ছি,পড়ছি তাই কথা শোনায়।
অফিসে গেলেই ওর ভাবি,মা কল করে কিসব যেন বলে।
বাড়ি এসে সেই রাগ আমায় দেখায়।
আমি ভেবেই নিয়েছি,বেবিটা হয়ে গেলে আবারো জবে জয়েন হবো।
হাতে টাকা না থাকলে দাম থাকেনা কোনো।
প্রতিবাদও করতে পারছিনা তেমন।”
“শুনে খুশি হলাম।নতুন অথিতি আসতে চলেছে।নিজের যত্ন নিও বোন আমার।
ও বাড়িতে যাওনি যখন,যাওয়ার দরকার নেই।
দেখলে না আকাশের ব্রেন ওয়াশ করে কতো বড়ো ঘটনা ঘটালো।তুমি গেলেও তাই করবে।তোমার স্বামীকে তোমার থেকে কেড়ে নিয়ে চাইবে।কারণ তুমি বড়োজার পক্ষে নয়।
দূর থেকে ফোনে দুটো কথা বললেও তেমন প্রভাব পরবেনা।কাছে থাকবে তুমি।তোমার কথাই বেশি শুনবে।
আর ওদের কোনো ভেদাভেদ নেই।
তোমার শরীর ভালো না এমনিতেই।শত্রুতা করে ওরা তোমায় ফেলে টেলে দিতে পারে।অথবা অন্যভাবে ক্ষতিও করতে পারে।
আমার বেলা এমনটা করেছে অনেক।
ভাগ্য ভালো ছিল।তাই বেঁচেছি।”
“এই জন্যেই তো বাধা পড়ে গেছি আপা।
তাহলে থেমে থাকার মেয়ে আমি নই।অন্যকে ভয় পায়না তটিনী।
নিজেকে নিয়ে কখনোই ভাবিনা আমি।
চিন্তা হয় পেটের বাচ্চাকে নিয়ে।
মা তো আমি,সন্তানের জীবন সংশয়ে রেখে কিছু করতে পারিনা।
ও বাড়িতে এখন যাওয়া মানে একহাতে জীবন আর একহাতে মৃত্যু নিয়ে যাওয়া।
তবে থেমে থাকার পাত্রী আমি নই।
একটু সুস্থ হতে দিন আমায়।প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো।
যখন থেকে এ ঘটনা শুনেছি,রাগে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার।
আপনি কেন কিছু বলেন নি আপা?
পুলিশের কাছে যান,মামলা দিন।ওদের ক্যারিয়ার নষ্ট করুন।
নিজে না যেতে পারলে আমার এখানে আসুন।
আমি আপনায় নিয়ে লড়াই করবো।”
“বোন আমার,সেই সময় আমার পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ ছিল।
পাশে কেউ ছিল না।যার ভরসায় আমি লড়তে পারি।
একা মেয়ে আমি,কতোদূর যেতাম?
ওরা টাকা ওয়ালা মানুষ,টাকা দিয়ে সব মিটিয়ে নিত।
আমার পাশে কেউ থাকতো না।
বেশি দূর গেলে সেই প্রভাব আমার সন্তানের ওপর পড়তে পারতো।ওরা নানা ভাবে আমার ক্ষতির চেষ্টা করেছে।
আমায় মা*রতে মানুষ পর্যন্ত লাগিয়ে রেখেছে।
তুমি এখন অন্যের সংসারে।আমি তোমার কাছে গেলে তোমার সংসার জীবনে সমস্যা সৃষ্টি হবে।
তোমার স্বামীর সঙ্গে অশান্তি হবে।
বড়ো বোন হয়ে এটা চাইনা কখনোই।
জানি তুমি প্রচন্ড শক্তিশালী ও বুদ্ধিমতি মেয়ে।
তবে এই অবস্থায় তুমি ভীষণ দূর্বল।
তুমি পারবেনা মুখে মুখে,হাতে হাতে জবাব দিতে।
স্বামীর সঙ্গে অশান্তি হলে মনে প্রভাব পরবে।মানসিকভাবে হেনস্থা হবে।
যা তোমার বেবির জন্য ভালো নয়।
আমার সঙ্গে যা হওয়ার হয়েছেই।জোর করে সংসার হয়না।
বাকি রইলো প্রতিশোধের কথা।
সেটা আমার দিতে হবেনা।
আমার বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তা ওদের ছাড়বেন না।আজ পর্যন্ত কোনো জুলুমকারীর শেষ পরিণতি ভালো হয়নি।ওদের ও হবেনা।
আমার বাচ্চাদের হাহাকার,আমার তিক্ততা ওদের ধ্বংস করে দেবে।
কিছু পাপির হিসেব দুনিয়াতেই হয়,ওদের টাও হবে।
এটা আমার বিশ্বাস।
তবে প্রতিষ্ঠিত আমি হবোই।প্রতিশোধ না নেই,জবাব টা দেব।”
“সে আপনি যাই বলেন আপা,একটা শাস্তি আমি ওদের দিয়েই ছাড়বো।
ঐ রিঙ্কিকে আমি এতো সহজে ছাড়বো না।শুধু আমায় সুস্থ হতে দিন।
ভাববেন না আমি একদমই বসে আছি।এ ঘটনা শোনার পর আকাশ ভাইয়ের অফিসের কিছু লোককে বাবার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি পরিচয় গোপন রেখে।
সবাই জানুক মানুষটার চরিত্র সম্পর্কে। কৃতকর্ম সম্পর্কে।
ওর কাজের ক্ষেত্রে সম্মান হানি হোক।
আচ্ছা আপা বড়োজা এখনো যাচ্ছেনা কেন?
এসেছিল আমার বিয়ে উপলক্ষ্যে।আমার বিয়ে হয়ে বাচ্চা পেটে।তবুও কেন যাচ্ছেনা?
আর বিবাহিত এক ছেলের সংসার ভেঙে নিজের বোনকে কেন বিয়ে দিল?
এই না তাদের এতো সম্পদ,অর্থবিত্ত!”
“বিয়ে উপলক্ষ্যে এলেও পরবর্তীতে তার ধারণা বদলেছে।
আমার সংসার ভাঙতে থেকে গেছিলো সে।
হয়ত সব কিছু নিজের করার ধান্ধা।
কিন্তু রিঙ্কির সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কারণটি আমারো অজানা।”
তটিনী এবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,”আপা আপনি এখন কোথায় আছেন?
আমি জানি,আপনি যেখানেই আছেন ভালো আছেন।নরকে তো ছিলেন এতোদিন।এবার অন্তত মুক্ত বাতাস পেয়েছেন।
নিজের স্বাধীনতা পেয়েছেন।
আপা বাচ্চা দুটোকে আগলে রাখবেন।ওদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
ওরাই আপনার ভবিষ্যৎ।
আপনি তো আমার বাড়ি চেনেন আপা।আপনি আমার বাড়ি গিয়ে থাকুন।
আমার মা-বাবা মেয়ে করে রাখবে আপনায়।”
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ওপাশ থেকে প্রচন্ড চিৎকারের শব্দ পেলাম।
দেবর চেচাচ্ছে।হয়ত জানতে পেরে গেছে তটিনী আমার সঙ্গে কথা বলছে।
আমি দ্রুত কল কেঁটে দিলাম।
শেষে শুধু একটা কথাই বললাম,”আমি ভীষণ ভালো আছি।আমায় নিয়ে চিন্তা করোনা।
নিজের যত্ন নাও।
কখনো আর আমায় কল দিও না।
আমার জন্য তোমায় অশান্তি পোহাতে হবে।”
কল কেঁটে অনেকক্ষণ ঝিম মেরে বসে ছিলাম আমি।
তটিনীর কথা ভেবেছি।
তর্ক করা,রাগী স্বভাবের মেয়েটাও আজ শান্ত হয়ে গেছে সন্তানের চিন্তায়।
সন্তান এমন এক জিনিস যা উত্তপ্ত আগুনের গোলাকেও বরফে রুপান্তর করতে পারে।
আমি জানতাম তটিনী গর্ভবতী।এজন্য আমি ইচ্ছে করেই আমার বিষয়ে ওকে জানতে দেইনি।
চেনা-পরিচিত সকলকে নিষেধ করে দিয়েছিলাম।
মেয়েটা হুটহাট কাজ করে বসে।
একথা জানলে রাগে না জানি চলেই আসতো তখন।
সন্ধ্যা হয়ে এলো ধীরে ধীরে।
লতা আপা এলেন না আজ।
আমি নিজেই গেলাম তার কাছে।
দুটো কথা বললাম।
মনটায় কেমন যেন অশান্তি লাগছে আমার।
খুব বেশি আনচান লাগছে।
তাই ঘরে চলে এলাম।
ভাবলাম ঘুমালে শান্তি লাগবে হয়ত।
ইদানিং ঘুমটাও আমায় ফাকি দিয়েছে।চোরা ঘুম হয়।
চোখ বন্ধ মস্তিষ্ক জাগ্রত।
এ ঘুমের ফলে মাথা ব্যাথা সহ শরীরে নানান জটিলতা সৃষ্টি হয়।
জানিনা কোন রোগে ধরেছে আমায়।
মরণ রোগে ধরেনা শুধু।
ছেলে-মেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়েছি।কাল কাজ নেই।বন্ধ থাকবে ফ্যাক্টারি।কাল দেরিতে উঠবো।
রাত নটার দিকে আজও রাশেদ স্যার কল করলেন।
আজ কেন কল করছেন ইনি?
কাল তো কাজ বন্ধ।
প্রথমে রিসিভ করলাম না ইচ্ছে করেই।
আবারো কল দিলে ধরলাম।
যতোই হোক,বস সে।কল না ধরলে কেমন দেখায়!
উনি বলেন,”ওহ মিস তন্নি!
আপনাকে আবারও বিরক্ত করতে হলো।
কাল একবার ফ্যাক্টারিতে আসতে পারবেন?”
আমি উঠে বসে বললাম,”কাল তো অফিস বন্ধ স্যার।আপনিই তো বলে দিলেন।”
“বন্ধ সবার জন্যই।
শুধু আপনাদের জন্য খোলা থাকবে।
আসলে কাল কিছু প্রোডাক্ট ডেলিভারির কথা ছিল।
আমি ভেবেছিলাম সব রেডি করা আছে।
এই মাত্র অফিস গিয়ে দেখছি সব এলোমেলো হয়ে আছে।
কাল তো ছুটি,তাই সবাই তো আসবেনা।
আমি কজনকে ফোন করে ডেকে নিচ্ছি।
আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ ও আগ্রহ দেখে আপনাকেও ডাকছি।
কাল একবার আসবেন প্লিজ।
তিন-চার ঘন্টা কাজ হবে।মানুষ কম,প্রতিজনকে হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
বলতে পারেন এটা আপনাদের ওভার ডিউটি।”
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই স্যার বললেন,”প্লিজ ‘না’ বলবেন না।অনেক আশা নিয়ে ফোন করেছি আমি।
আপনার বিপদের সময়ে আমি আপনার পাশে ছিলাম।কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।এবার আপনি আমায় সাহায্য করুন।
এই ডেলিভারিটা না দিতে পারলে আমার ভীষণ লস হবে প্লাস ওপর মহল থেকে কথা শুনতে হবে।
এছাড়াও বেশি সময়ের তো ব্যাপার না।
আপনি সহ আরো কজন আসবে।
কাজ ও তেমন নেই।প্রোডাক্ট গুলো বেছে,গুছিয়ে লোগো ঠিক করে দিয়ে দেবেন যাষ্ট।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
অন্য পেজে বা গ্রুপে আর এই গল্পটি পাবেন না।শুধু পাবেন নাদিয়া আফরিন পেজেই।
আমি প্রথমে না করতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু এনার শেষ কথাতেই আটকে গেলাম।
সত্যিই তো,এই মানুষটা আমায় উপকার করেছে।
আমি তন্নি উপকারের প্রতিদান দিতে জানি।
টাকাও হাজার খানিক।মাস শেষের দিন গুলোর যাতায়াত ভাড়া সহ ছেলের সদাইপাতির টাকাটা হয়ে যাবে।
তাই রাজি হয়ে গেলাম।
জিজ্ঞেস করলাম,”কটায় যেতে হবে?”
“বেশি সকালে আসতে হবেনা। ডেলিভারি বিকেলে হবে।আপনি এগারোটার মধ্যে চলে আসবেন।
কাজ শেষ করে তিনটের মাঝে চলে যাবেন।”
স্যার কল কেঁটে দেয়।
আমি শুয়ে পড়ি।ঘুমিয়ে যাই।
সকালে ঘুম ভাঙে।
রান্না করতে হাড়ি বের করেছি।ছেলে চিকেন খাবে।
কান্না জুড়েছে।
এখন তেমন টাকা নেই হাতে।ভেবেছিলাম এ মাসটা সবজি,মাছ দিয়েই পার করে দেব।
বেতন পেলে না’হয় বাজার করতাম।
ডিম ভেঝে দিতে চাই।মাছের কথাও বলি।
ছেলে তার কথায় অটুট।
আজ সে চিকেনই খাবে।
আমি পড়ি মহা মুসকিলে।বাচ্চা কান্না করিয়ে কাজেও যেতে পারবো না।গেলেও কাজ আর হবেনা আমার।
এদিকে রান্নাতেও দেরি হচ্ছে।না খেয়ে যেতে না হয় আজকে!
আলিফের কান্না শুনে চাচি ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।কান্নার কারণ শুনে বলে,”তোমার কাছে হয়ত টাকা নেই।
একটা কাজ করি,ঐপাড়াতে মুরগি বিক্রি করে।আমার পরিচিত।কিনে এনে দেই বাকিতে।পরে হাতে টাকা হলে দিয়ে দিও।
আমার ঘরেও নেই মাংস।আমার থাকলে আমিই দিতাম।”
কী আর করার!
রাজি হলাম।
চাচি মুরগি এনে কুটে,বেছে ধুয়ে দেয়।
আমি অন্যসব তৈরি করে রেধে ফেলি।
রান্না শেষে চাচির ঘরে তরকারি দেই।সে নেবে না কিছুতেই।বাচ্চাকেই খাওয়াতে বলে।
আমি জোর করে ঘরে রেখে আসি।
তৈরী হয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হই মেয়েকে নিয়ে।
পৌঁছে দেখলাম আরো চার-পাঁচজন এসেছে।
বিরিয়ানি নিয়ে কানাঘুষা করা সেই মহিলাও আছে দেখছি।
আমায় দেখেই তিনি বললেন,”এসব কাজে তো স্যার আমাদের পুরাতন কর্মীদের ডাকেন।আজকাল দেখছি নতুনদের ও ডাকছেন।”
আমি জবাব দেইনা এবারেও।
চামড়ার মুখ দিয়ে মানুষ অনেক কিছু বলতে পারে।সব কী আর গায়ে মাখতে আছে!
নিজ স্থানে গিয়ে বসলাম।
স্যার এলো একটু পর।আজ তার পরণে নীল টি-শার্ট আর প্যান্ট।
অফডে তাই হয়ত!
অন্যদিন ফর্মাল পোশাকে আসেন তিনি।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এসেই আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন।
সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন।
আমিও কাজে মনোযোগ দেই।
মিনিট বিশেক পর স্যারকে একলোক দু-কাপ চা দিয়ে গেলেন।
স্যার এক কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,”তন্নি আপনার জন্য চা এনেছি।নিয়ে যান।”
আমিতো হতভম্ব।কাজ বাদে সবাই আমার দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে।থাকাটাই স্বাভাবিক।
সবাইকে ছেড়ে আমায় একা অফার করছেন যে!
বললাম,”এমনিতেই গরম।এর মাঝে আবার গরম চা খাবোনা আমি স্যার।
আপনি অন্য কাউকে দিয়ে দিন।”
স্যার ততক্ষণাৎ উঠে দাড়িয়ে বললেন,”ওহ আপনার গরম লাগছে?
আগে বলবেন তো!
দাড়ান ফ্যান ছেড়ে দেই।”
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম।
সবাই তখনো সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
কাজে মন দিতে চাচ্ছি কিন্তু হচ্ছেনা।
রাশেদ স্যার সামনের টেবিলে বসে কাজ তদারকি করছে।
সত্যি বলতে তদারকি করছে কম,আমায় দেখছে বেশি।
আবার হাসছেও মিটিমিটি।
ভাববেন না আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
আসলে আমার সামনে একটা ছোট্ট আয়না রাখা ছিল।যা রাশেদ স্যারের মুখ বরাবর।
তা দিয়েই দেখেছি আমি।
কাজ করতে ভীষণ বিব্রত লাগছে।
তবুও করছি।
প্রায় ঘন্টা দুয়েক কেঁটে গেল এভাবেই।
মেয়েকে কোলে নিয়ে কাজ করছিলাম।হাত ধরে এলো।
মুখ দিয়ে আর্তনাদ সূচক শব্দ বেরিয়ে এলো।
স্যার ততক্ষণাৎ দৌড়ে এলো।
বলল,”কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি?
আমারই ভুল হয়েছে আপনাকে ডাকা।
আজকের দিনটাও রেস্ট হলোনা আপনার।
এভাবে বাচ্চা কোলে নিয়ে একটানা কাজ করা যায় নাকি!
সরুন আপনার কাজ গুলো আমি করে দেই।”
স্যার এসে সোজা আমার পাশে মেঝেতে বসে।
সঙ্গে সঙ্গে অন্যসবার মুখে হাত।
পরিস্থিতি সামলাতে আমি বলি,”তার প্রয়োজন হবেনা স্যার।কাজ প্রায় শেষের দিকে।এটুকু আমি নিজেই পারবো।
অনেকক্ষণ বসে আছি তাই কোমর ধরে এসেছে।
আমি বাইরে গিয়ে একটু হেটে আসি আর পানি খেয়ে আসি।
ফিরে বাকিটা করে দেব।”
“ঠিক আছে।আমায় পানির পটটা নিয়ে যান।”
আমি উঠে দাড়িয়ে বলি,”বাহিরের ট্যাপ থেকে খেয়ে নেব পানি।”
স্যার হয়ত একটু রাগ করলেন।
হেটে নিজ স্থানে গিয়ে বসলেন।
আমি মেয়ে নিয়ে বাইরে এলাম।
পানি খেলাম।
এক কোণে দাড়িয়ে মেয়েকেও খাইয়েছি।
হাত-পা ঝাকি দিলাম।
এরপর ভেতরে গেলাম।
কাজ প্রায় শেষের দিকে ।
স্যার আবারো বলেন,”পানি খাবেন মিস তন্নি?
আপনাকে তৃষ্ণার্ত মনে হচ্ছে তাই বললাম।”
আমি মাথা ঝাকিয়ে নিষেধ করি।
বেলা আড়াইটা বেজে যায়।
কাজ তখন শেষ।
সবাই উঠে দাড়িয়েছি।স্যার বলেন,”দুপুর হয়ে গেছে।
আমি খাবার অর্ডার করেছি।ফ্রাইড রাইস আর চিলি চিকেন।
খেয়ে যাবেন আপনারা।
টাকাটা আপনাদের বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
সবার মুখেই দেখছি হাসি।
ঐ মহিলা আবারো বলছে,”এতোদিন তো কখনো খেতে বলেনি।টাকা দিয়ে ভাগিয়ে দিত।
কদিন ধরে কী হয়েছে স্যারের!”
আমি বুঝি না এই মহিলার সমস্যা কী!
সব বিষয়ে এতো কেন কথা বলে?
পজেটিভ নিতে পারেনা কিছু?
খাওয়াচ্ছে ভালোই তো!খেয়ে চলে যাবি।
এর নাম যেমন চম্পা, মুখেও তেমন চাপা।
সব কিছু আমায় শুনিয়ে শুনিয়ে বলবে।
স্যার যেন ওর বিবাহিত স্বামী!
স্যারের যে কোনো পদক্ষেপে ওর খুত ধরা চাই।
খাবার এলো।
আমরা বসেছি একসঙ্গে।
সবাইকে প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।
সঙ্গে এক বোতল কোক।
খেয়েছি সবাই।
আমার খাওয়া শেষ হতেই স্যার আরেক প্যাকেট সামনে রেখে বলেন,”এটা নিয়ে যান।বাড়ি যেয়ে খাবেন।”
ওমনি চম্পা মহিলা কথা কেড়ে নিয়ে বলে,”কেন স্যার?
ওর বাড়িতে কী খাবার নেই?
রোজ রোজ অফিস থেকে নিয়ে খেতে হবে নাকি!”
আমার অপমান বোধ হলো ভীষণ।
বেরিয়ে এলাম।
স্যারও জবাব দিলেন না কোনো।
ফ্যাক্টারি থেকে বের হয়ে দাড়িয়েছি রিক্সার জন্য।
এক বয়স্ক করে মহিলা এলেন।তিনিও কাজ করেন আমাদের সঙ্গে।
এসেই বললেন,”আজ তোমার জন্য খেতে পারলাম।”
এখানে আমি কী করেছি?
আমিও উনাদের মতোই কাজ করেছি।
আলাদা সুযোগ-সুবিধা পাইনি তো কিছু।
সব বিষয়ে আমায় দাড় করানোর কী দরকার?
বয়স্ক মানুষ দেখে কিছু বলিনা।
সামনে এগিয়ে যাই।
ততক্ষণে সবাই চলে গেছে।
আমি একটা রিক্সা ডেকে ভাড়া মিটাচ্ছি।
রাশেদ স্যার গাড়ি নিয়ে আমার সামনে থামনেল।
ড্রপ করে দেওয়ার কথা বললেন।
আমি নিষেধ করি সঙ্গে সঙ্গেই।
এমনিতেই আমায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।এবার একসঙ্গে দেখলে কী না কী বলে বসে!
রিক্সাতে উঠে পড়ি।
স্যারকে দেখি পিছে পিছে আসছে।
রিক্সা যেমন ধীরে চলে,তিনিও তেমন ধীরে চালায় গাড়ি।
একপর্যায়ে বিরক্ত হলাম আমি।
চাচ্ছেটা কী তিনি?
এমন করার কারণ কী?
কিসের এতো দরধ?
একটু দূর যেতেই রিক্সা একটা চাপা গলিতে ঢুকে গেল।
স্যারের বড়ো গাড়ি আর আসতে পারলোনা।
গলির সামনে দাড়িয়ে থাকে।যে পর্যন্ত না আমার রিক্সা দেখা যায়,সে পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকে।
আমি ফোন করি তার নাম্বারে।
বলি,”আপনি এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন স্যার?বাড়ি কেন যাচ্ছেন না?”
উনি বলে,”না আপনাকে অসুস্থ মনে হচ্ছিলো।
তার মাঝে ছাদ ছাড়া রিক্সায় যাচ্ছিলেন।
প্রখর রোদে যদি মাথা ঘুরে পড়ে যান।
তাই দাড়িয়ে ছিলাম।
যতোই হোক আপনি আমার স্টাফ।একটা দায়িত্ব আছে।”
এর অযৌক্তিক কথা গুলো আমার মাথার ওপর দিয়ে গেল।
মাথা ঘুরে পড়ে গেলে উনি ধরবে নাকি দৌড়ে এসে?
উনার অফিসের কর্মী ঠিক আছে।
কাজ শেষে কীসের কর্মী থাকি?
আমি একটু রাগ দেখিয়েই বলি,”আপনাকে ভাবতে হবেনা।
আমার বাড়ি সামনেই।চলে যেতে পারবো আমি।
ওতো দূর্বল আমি নই।”
বাড়ি ফিরে সেদিনও দেখি আরেক ঘটনা,,,,
(পর্ব বড়ো দিয়েছি কিন্তু।কথা রেখেছি।এবার সবাই রেসপন্স করুন বেশি বেশি।
লাইক কমেন্ট করুন।নেক্সট না লিখে গল্প বিষয়ে দুটো কথা বলুন।ভালো লাগবে।
আজ কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক কিছু বলা হয়নি গল্প।মূল কাহিনী নিয়েই লিখেছি।কষ্ট করে লিখি আমি,মূল্যটা দেবেন।মন্তব্য করবেন ভালো -মন্দ)
#বড়োজা গ্রুপে জয়েন হচ্ছেন না কেন?
তাড়াতাড়ি জয়েন হয়ে আলোচনা শুরু করুন।
গল্পের আকর্ষণীয় দিক পাবেন সেখানে।
তাই জয়েন হয়ে আড্ডা দিন।প্রশ্ন করুন।মাতিয়ে তুলুন গ্রুপকে।
সেই সঙ্গে পাবেন গল্পের আপডেট।
প্রিয় পাঠক।
ইতিমধ্যে “বড়জা” গল্পটা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে এটাকে নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করেছেন পাঠকমহল।
গ্রুপে জয়েন হয়ে গল্প সম্পর্কে আলোচনা, সমালোচনা করে মাতিয়ে তুলুন আপনাদের পছন্দের গল্পটিকে।
গ্রুপ লিঙ্ক
https://www.facebook.com/share/g/15rAzSEdH1/
#বড়োজার মতো আরেকটি গল্প পড়তে চান?
কিনে নিন স্বল্প মূল্যে আমার ইবুকটি।
দাম মাত্র ত্রিশ টাকা।
লিংক,,,,https://link.boitoi.com.bd/hmWh