বড়োজা পর্ব-১৬ (দ্বিতীয় অংশ)

0
411

#বড়োজা
#Nadia_Afrin

১৬(দ্বিতীয় অংশ)
রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে মাথায় পানি ঢেলেছি অনেকক্ষণ।
রাগে রীতিমতো কাঁপছিলাম আমি।লোকটা আজ সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে।
সাহস দেখলে অবাক হই আমি।
যেই সন্তান আমার পুরো দুনিয়া,উনি তাদেরই এতিমখানায় দিতে চায়।

রাগে গা পুড়ে যাচ্ছে একপ্রকার।
আর যাই হোক,ওর ফ‍্যাক্টারি মুখো আমি আর হবোনা।
ওমন স্বার্থপর মানুষের সঙ্গে কাজ করার রুচি আমার নেই।

অন‍্য কিছু করে দেখাবো একে।

খোঁজ নিয়ে একটা কম্পানির নাম শুনলাম।
সেখানে গেলাম।কিন্তু লাভ হলোনা কোনো।
মোটা অঙ্কের টাকা ঘুস চায়।
আমার পক্ষে সম্ভব নয় এই টাকার জোগাড় করা।

দিকদিশাহীন হয়ে অনেক জায়গাতেই ছুটলাম।
একসময় নিজেকে বড্ড দূর্বল মনে হলো।
ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে কাঁদি।
পথে দেখা হলো রিতা আর ওর স্বামীর সঙ্গে।
ছেলেকে নিয়ে শপিং এ যাচ্ছে ওরা।আমি আগে খেয়াল করিনি।
বাচ্চাটা আমায় দেখে খালামণি খালামণি বলে চেচিয়ে উঠেছে।
আমি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে মুচকি হাসলাম।
ছেলের হাত ধরে রিতা সমেত ওর হাজবেন্ড আসে।

রিতা এসে বলে,”কেমন আছো আপা?
কোথায় যাও?”

“একটা কাজ খুঁজছি।আগের কাজটা ছেড়ে দিয়েছি।তাই কাজ খুঁজছি।”
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

রিতা এরপর চুপ থাকে।ওর স্বামীকে দেখি দূরে দাড়িয়ে ফোন দেখছে।
আমার পাওনা সেই টাকাগুলোর কথা মাথায় আসে।
টাকার ভীষণ প্রয়োজন আমার।
ঐ টাকা কটা পেলে বস্তির মাঝে ছোট খাটো একটা কিছু করতে পারবো।
পাইকারিতে কিছু সবজি কিনে বিক্রি করলেও হবে।মা-ছেলের পেট চলে যাবে।

ভনিতা ফেলে বলি,”রিতা আমার টাকার ভীষণ প্রয়োজন।
তোদের কাছে যে কটাকা পাই দিয়ে দে।ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিছু করে খাই আমি।”

রিতাকে দেখলাম মুখটা শুকনো করলো।দু-দন্ড মাথা নিচু করে রইলো।আমি ওর উত্তরের আশায়।

স্বামীর কাছে গেল সে।
কী যেন বলল।
মূহুর্তেই ওর স্বামীর আচরণ পরিবর্তন।আমার দিকে তেড়ে এসে বলে,”এই কীসের টাকা চান আপনি?
রাস্তাঘাটে নাটক শুরু করেছেন?
যে কটা টাকা,তা আবার চাইতে এসেছে।এতো কেন লোভ,নাইনাই আপনার?
হাতে টাকা নেই তো আমি কী করবো?
এতোই যখন সমস্যা জীবন চালাতে,বাচ্চা নিয়ে নদীতে ঝাপ দিয়ে ম*রতে পারেন না?না’হলে কোনো পল্লিতে যান।একদিনেই অনেক টাকা পাবেন।
রাস্তাঘাটে আমার সময় নষ্ট করেন।টাকা নিয়েছি কোনো প্রমাণ আছে?
কোনো টাকা নেইনি আমি।”

“তোদের মতো ছোটলোক আমি জীবনে দেখিনি।
ঐ টাকার হকদার আমি।আমার টাকা নিয়ে আবার আমাকেই অপমান করছিস?
লজ্জা করেনা তোর কাপুরুষ?
মরা তো তোর উচিৎ।মেরুদন্ডহীন নোংরা লোক কোথাকার।
তোর ঐ মুখে ছাই পরুক।
খুব বেশি টাকার অহংকার না তোর?
দেখবি তোর এই অহংকার একদিন পতনের মূল হবে।
মনে কর ঐ টাকা তোকে সাদকা দিলাম। ভিক্ষা দিলাম।
তুই ওসবেরই যোগ্য।”

রিতার স্বামী আমায় গা*লি দিয়ে তেড়ে আসে গায়ে হাত তুলতে।
একটা ধাক্কাও মারে রাস্তাতে।
আমি নিজের পায়ের জুতো খুলে ওর গালে সপাসপ তিনটে বারি মেরেছি।
আশেপাশের লোক জোগাড় হয়।
রিতা যাকে আমি ছোট বোন ভাবতাম,সেও দেখি ওর অপরাধি স্বামীর পক্ষে।
আমিই নাকি রাস্তাঘাটে ওদের ছিনতাই করতে এসেছি।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

আমি চিৎকার করে সকলের সম্মুখে বলি,”এতোই সস্তা তো সব!
এতো মানুষের ভিরে এদের আমি ছিনতাই করতে আসবো?
আমায় দেখে মনে হয় আমি ছিনতাইকারী?
উনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করুন।
দোষটা আমার নয় উনার।
আমি এনার কাছে টাকা পেতাম।আজ দেখা হয়েছে তাই টাকাটা চেয়েছি।ওমনি আমার সঙ্গে খারাপ ব‍্যবহার শুরু করেছে।গা*লিগা*লাজ করেছে।এমনকি ধাক্কাও মেরেছে আমায়।
তাই আমি একে জুতো মেরেছি।”

রিতার ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বলছে,”বাবাহ খালামণিকে ধাক্কা দিয়েছে।
খালামণি জুতো মে*রেছে।”

এবার সবটাই ক্লিয়ার হলো।

আমি সকলের উদ্দেশ্যে বললাম,”এবার বিচার আপনারাই করূন।
রাস্তাঘাটে একটা মহিলার গায়ে হাত দিচ্ছে।
মা*রতে চেয়েছে আমায়।
আমরা নারীদের কী কোনো নিরাপত্তা নেই?
গরীব বলে কোনো মূল্য নেই আমার!”

কজন মহিলা রিতার স্বামীর কলার ধরে গাল মন্দ করে।
একলোক এসে থাপ্পড়,কিল বসায়।
অপমানে জর্জরিত হয়ে স্বামী-স্ত্রী কোনো রকম প্রাণ বাঁচিয়ে পালায়।
উপযুক্ত শিক্ষা হয়েছে।
আর চুপ থাকবোনা আমি।চুপ থেকে দেখেছি,সবাই শুধু হেনস্থাই করে।
এবার যা করবো,সঙ্গে সঙ্গে।
আমার লড়াই আমি নিজেই করবো।
আমার প্রতি যারা অন‍্যায় করবে,জুলুম করবে,তাদের কিছুতেই ছাড়বোনা।
আর কোনো ক্ষমা নেই কারো।
ততক্ষণাৎ ব‍্যবস্থা নেব।

রিতার স্বামী খুব বেড়েছিল।পরপর বেশ কবার অপমান করেছে।ছোট বোনের স্বামী দেখে কিছু বলিনি।আজ সেই বোনই আমার ক্ষতি চায়।
দোষটা আমার।
পর কে অধীক আপন ভেবেছিলাম।
কাগজে কলমে টাকা না দিয়ে মুখের কথাতেই বিশ্বাস করেছি।
আজ যখন আমার পাশে কেউ নেই,এরাও বদলে গেছে।
আজকে এই লোকটার একটা দারুণ শিক্ষা হয়ে গেল।
আমায় ভীষণ দূর্বল মনে করেছিল।
এবার বুঝবে,তন্নি ওতোটাও দূর্বল নয়।

বাড়ি এসে দেখি আরেক কান্ড।
আমার ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে এক মহিলা।
ইনি ঐ ফ‍্যাক্টারিতেই কাজ করে।বেশ ভালোই তিনি।
মিশুক খুব।
আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল কবার।

ভ্রু কুচকে বলি,”আপনি এখানে?”

“হ‍্যা তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।শুনলাম তুমি নাকি কাজটা ছেড়ে দেবে।
কী হয়েছে?
আসল ঘটনা কী?
স‍্যারের সঙ্গে তোমার কিছু আছে এটা সবাই বলে।তবে আমার অন‍্য কিছু মনে হয়।
তোমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম।তাই আজ এলাম।
বলো দেখি এবার।”

আমি তাকে সবটাই খুলে বলি।

উনি বলেন,”বিষয়টা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে।
আগে কেন প্রতিবাদ করোনি?
কাজটা যদি আগেই ছেড়ে দিতে এসব কিছু হতোনা।”

আমি সামান্য হেসে বলি,”কাজ ছাড়লে আমার বাচ্চা দুটোর মুখে দু-বেলা খাবার তুলে দেবে কে?
আপনাদের মা-বাবা আছে,স্বামী আছে।মাথার ওপর ছাদ আছে।
আমার কে আছে?
কার ভরসায় বাচ্চা নিয়ে থাকতাম?
লোকে মানবিকতার খাতিরে একদিন দিত মুখে ভাত।প্রতিদিন দেবে?
কাজ ছাড়লে কাজ পাওয়া খুব কঠিন।
এই মাত্র বিতাড়িত হয়েই এলাম।
আমি দিক দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
আপনাদের জন‍্য যা খুব সহজ,আমার জন্য তা ভীষণ কঠিন।
তবে ঐ ফ‍্যাক্টারিতে কাজটা আমি আর করবোনা।
আপনি স‍্যারকে জানিয়ে দেবেন।
উনি যা করেছে,তাতে আমার পক্ষে সম্ভব নয় উনার অফিসে কাজ করা।”

মহিলা কিছুপল চুপ থেকে বলে,”ঠিক আছে।তবে যা করবে ভেবে চিনতে করিও।
বসকে অপমান করেছো।না জানি কেমন আঘাত করে বসে।”

“ওসবের ভয় আমি আর পাইনা।
জীবন আমায় অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে।
ভয় পেয়ে পিছিয়ে থেকে থেকে আজ আমার এই পরিস্থিতি।
শুরু থেকেই যদি সাহস দেখাতাম,লড়াই করতাম,আজ এ দৃশ্য দেখতে হতোনা।
আমি জানি আমি ঠিক।কে কী বলল তা দেখার সময় নেই।
উনি অন‍্যায় করেছে। জঘন্যতম অন‍্যায়।অন‍্যায়কারীকে শাস্তি দিয়েছি।ভুল তো কিছু করিনি।”

“উনি তোমার উপকার করেছিল তন্নি।কাজ দিয়ে সাহায্য করেছিল।”

“আমিও তার প্রতিদান দিয়েছি।চেষ্টা করেছি উনার মান রাখার।
এতোকিছু হয়ে গেছে,বিষয়টি পাবলিক করিনি কখনো।উনার সম্মানের কথা ভেবে চুপ ছিলাম।
বোঝানোর মাধ‍্যমে পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করেছিলাম।
কিন্তু আমি ব‍্যর্থ।”

মহিলাটি আর কোনো কথা বলেনা।
আমি ঘরে বসতে বলেছিলাম তাকে।
নাস্তা করতে বলেছি।
সে রাজি হয়নি।চলে গেছে খালি মুখেই।

এরপর কী হয়েছে জানিনা।
রাশেদ স‍্যার পরপর কল দিয়েছে অনেকবার।
আমি রিসিভ করিনি।ব্লক করে রেখেছি।

সন্ধ‍্যায় ঘটে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
স‍্যার সোজা আমার বস্তিতে চলে আসেন।
সম্ভবত ঐ মহিলা ঠিকানা দিয়েছে।
বস্তির পাশে একটা আম বাগান ছিল।
স‍্যার ওখানে দাড়িয়ে একটা ছেলেকে দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে।

ছেলেটা এসে আমায় বলছে,”আপনার ভাই আপনাকে ডাকছে।
ঐ আম বাগানে দাড়িয়ে আছে।”

ছেলেটা রাশেদ স‍্যারকে আমার ভাই ভেবেছিল।
আমিও ভেবেছি আমার বড়োভাই মনে হয় এসেছে।
আর কিছু না ভেবেই ছেলেকে নিয়ে গিয়েছি সেখানে।
সবে আজান হয়েছে।
আলো আছে এখনো।
গিয়ে দেখি রাশেদ স‍্যার দাড়িয়ে।উনাকে দেখেই আমি পেছন ফিরে চলে আসতে নেব,উনি দাড় করায় আমাকে।
পেছন ডাকে।সামনে এসে দাড়ায়।
আমি পথ ছাড়তে বলি।
তিনি মিনতির স্বরে বলে,”অনেক কষ্টে আপনার ঠিকানা জোগাড় করে এসেছি আমি।
দয়া করে ফিরিয়ে দেবেন না।
আপনার সঙ্গে ভীষণ দরকার আমার।
প্রয়োজনীয় কথা আছে।
একটু দাড়িয়ে যান।”

অনিচ্ছাকৃতভাবে দাড়াই আমি।

উনি বলেন,”আপনি আমায় থাপ্পড় মেরেছেন তবুও কিছু বলিনি আমি।
আপনার ভালোবাসায় মুগ্ধ আমি।তাই শতো আঘাতেও আপনাকে ভুলতে পারছিনা।
আমার কথা একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
আপনার ভালোর জন্য বলেছি।
সন্তান শুধু আপনার একার দায়িত্ব নয়।
ওর বাবা কিন্তু ঠিকই নতুন জীবন শুরু করেছে।বউ নিয়ে ভালো আছে।আমি খোঁজ নিয়েছি।
তাহলে আপনি কেন পারবেন না?
ছেলে হিসাবে আমি কী খুব অসৎ?আপনার যোগ্য নই?”

“দেখুন এখানে যোগ্য অযোগ্যের প্রসঙ্গ নয়।
আপনি যা করেছেন তাতে আপনার সঙ্গে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধছে।”

“ভুল কী করেছি আমি?
সন্তান সন্তান করে কতোকাল কাঁটাবেন?
এভাবে একা থাকা যায়?
সন্তান নিয়ে আপনার কোনো মূল্য নেই।
সন্তান রেখে রাস্তায় বেড়িয়ে দেখুন,সবার কাছে পাত্তা পাবেন।
আপনার জীবনে এখনো অনেক কিছু বাকি আছে।
যদি নিজের চিন্তা না করে বাচ্চা বাচ্চা করে যান তাহলে দিন শেষে কিছুই পাবেন না।”

আমি রাগান্বিত স্বরে বলে,”কী বলতে চাচ্ছেন আপনি?
কী করতে বলেন আমায়?
ওদেরকে ফেলে দিতে বলেন নাকি!”

“ না না।আমি সেটাতো বলিনি।
ঐ এতিমখানা ভীষণ ভালো।
আপনার বাচ্চাকে ভালো রাখবে।
ওরা আপনার কাছ থেকে গেলে আপনি মুক্ত একদম।
এরপর আমার সঙ্গে নতুন করে শুরু করবেন সবটা।
নতুন অনুভূতি,নতুন সংসারে ভীষণ ভালো থাকবেন।
আমি আপনায় যত্নে রাখবো।কথা দিচ্ছি।
দয়া করে আমায় ফিরিয়ে দেবেন না।
আমার ভালোবাসাকে গ্রহণ করুন।
আকাশ আপনার অতীত।ওর সন্তানদের ও অতীত করে আমার সঙ্গে ভবিষ্যৎ কাটিয়ে দিন।”

“কদিন চিনি আপনাকে?
আপনার জন্য আমার সন্তান ছেড়ে দেব?
আমার কোলের বাচ্চাকে এতিমখানায় দেব?
এসব চিন্তা মাথাতেও আনবেন না।
এরপর যদি কোনদিন আপনার মুখ দিয়ে আমার সন্তান সম্পর্কে কোনো একটা নেগেটিভ কথা শুনি ঐ মুখ ভেঙে গুড়িয়ে দেব।

যার সঙ্গে সাতবছর সংসার করেও ঠকেছি,আপনার সঙ্গে একমাস কথা বলে কী নিশ্চয়তা আমার ?

সস্তা ভেবেছেন আমায়?
যা খুশি বলে দেবেন?আমার জীবন আমার অধিকার।
এখানে আপনার এতো নাক গলানোর কী আছে?
একটা কথা বারবার বলেছি আপনায়।
আমার আপনার প্রতি কোনো অনুভূতি নেই।
এসব ধনীক শ্রেণির লোকদের আমার ভালোই চেনা আছে।
এক ধনীর সংসার করে এসেছি।
বিনিময়ে বিশ্বাসঘাতকতা পেয়েছি।ঐ মানুষটা প্রথমে ঠিক ছিল।ভালো একজন মানুষ ছিল।
অন‍্যের প্ররোচনায় পড়ে নিজের সম্মান খইয়েছে।
আপনি তো শুরুতেই স্বার্থপর বের হলেন।
শুধু নিজ স্বার্থ বুঝছেন।
নিজের ভালোলাগাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বাবা ছাড়া বাচ্চাদুটোর কথা একবারো ভেবেছেন?
যদি প্রকৃত পক্ষে একজন ভালো মানুষ হতেন,এমন নিষ্ঠুর কথা বলতেন না।
আমার দুধের শিশু,আমায় ছাড়া বাঁচবে?
আপনার তো কম নেই।
এই ছোট দুই বাচ্চার দায়িত্ব নিলে আহামরি কোনো লস হতোনা।
প্রয়োজনে আমি নিজেই ওদের দায়িত্ব নিতাম।আমার সন্তানদের কখনোই আমি অন‍্যের ওপর বোঝা করে রাখতাম না।
এতোকাল নিজে করেছি সব।বাকি জীবন নিজেই করতাম।
আপনি শুধু ওদের একটু ঠায় দিতেন।
যদিও আমি আশা করিনা।
একজন নৈতিক মানুষের গুণ বললাম শুধু।
জানি,পৃথিবীতে এখন কেউ নিজ স্বার্থ ছাড়া বোঝেনা।
আকাশ ছেড়ে দিয়েছে বলে আমিও আমার বাচ্চাকে ছাড়তে পারিনা।
কুকুরের সঙ্গে কুকুর হলে চলেনা।মানুষকে কুকুর বলতে হয়না।তবুও আজ বললাম।কারণ ওর ব‍্যবহার ছিল কুকুরের চেয়েও অধম।

এই সন্তানের জন্য আমি কী কী করেছি জানেন?
কতো ত‍্যাগ স্বীকার করেছি জানেন?
ওরা আমার প্রাণ।
এইযে আমি বেঁচে আছি,সবটাই ওদের জন্য।
দিনশেষে ওরাই আমার আপন।
আমি ওদের না,বরং ওরাই আমায় আগলে রেখেছে।
আমার কোনো পরিচয় নেই জানেন।
কেউ বলে না এটা ওর মেয়ে,ওর পুত্র বধু অথবা ওর স্ত্রী।
আমার শুধু একটাই পরিচয়।আমি ওদের মা।
এটাই আমার বড়ো পরিচয়।
আমার অহংকার।
আপনি শুধু আমার সন্তানদের নিয়ে কথা বলেননি।
আমার অস্তিত্বে আঘাত হেনেছেন।
আপনিও দ্বিতীয় আকাশ।
যিনি প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলে দেবেন।
আপনি আমায় ভালোবেসেছেন শুধু।
আমার অস্তিত্ব,আমার পরিচয়কে বাসেনকি।
আমার সন্তান আমার কাছেই থাকবে।
ওদের মা-বাবা সবই আমি।
প্রয়োজন নেই আমার কারো।
তন্নি একাই লড়বে।
কী লাভ স্বার্থপর মানুষদের জীবনে এনে ঝামেলা বাড়ানোর?
মা,ছেলে-মেয়ে মিলে আমরা বেশ আছি।
আর কাউকে চাইনা।”

ছেলের হাত ধরে হাঁটা ধরেছি।
স‍্যার পেছন থেকে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,”অতিরিক্ত ছেলে ছেলে করছেন না?
দিন শেষে এই ছেলে-মেয়েই আপনায় ধোকা দেবে।বড়ো হয়ে বিয়ে করে আপনাকে ছুড়ে ফেলবে।
এসব আবেগের মূল্য তখন থাকবেনা।
ওরা ঠিকই নিজের জীবন নিয়ে ব‍্যস্ত হয়ে পড়বে একসময়।
আপনি শূন্য হয়ে রইবেন।
তখন আর কিচ্ছু করার থাকবেনা।”

“ভবিষ‍্যৎ এর আশায় বাচ্চা ছেড়ে দেব?ফেলে দেব?
মানবের ভবিষ্যৎ বলতে কিচ্ছু হয়না।
দুনিয়ার একমাত্র নিশ্চিত ভবিষ্যৎ হলো মৃত্যু।
আমি ভাগ‍্যে বিশ্বাসী।ভাগ‍্যে যা আছে তাই হবে।
ছেলে-মেয়ে না চিনতে পারলেও আফসোস থাকবেনা।
ভাববো এটাই আমার নিয়তি ছিল।
কম তো হারাইনি জীবনে।স্বামী,সংসার সবই যখন বিসর্জন দিয়েছে।এটাও দিতে পারবো।
বলতে তো পারবো,আমি একজন যোগ্য মা।খারাপ সময়ে সন্তানদের ছেড়ে যাইনি।

শুধুমাত্র ভবিষ্যৎ এর আশায় ছেলে মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে নিজে নিজের জীবন নতুন করে শুরু করতে পারবোনা।”

স‍্যারকে আর কিছু বলার সুযোগ দেইনি।
ছেলেকে নিয়ে চলে আসি।
পথেতে ছেলে প্রশ্ন করে,”আম্মু ঐ আঙ্কেল কী বলছে?
আমাদের ফেলে দিতে বলছে?
তুমি কী আমাদের ফেলে দেবে?
আপুকেও ফেলে দেবে?
ডাস্টবিনে ফেলে দেবে আমাদের?
বাবার মতো তুমিও কী তাড়িয়ে দেবে আমাদের?
তাড়িয়ে দিয়ে ঐ আঙ্কেলের কাছে চলে যাবে?”

আমি ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু দেই গালে।
বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলি,”কখনোই না।
আমি কখনো তোমাদের ছাড়বো না।
সবসময় তোমরা আমার সঙ্গে থাকবে।”

বাড়ি এসেছি।মনটা বেশ হালকা লাগছে আমার।
চাচির কাছ থেকে মেয়েকে আনতে গেছি।
চাচি দেখি আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।

কারণ জিজ্ঞেস করি।

তিনি বলেন,”লতার থেকে শুনেছি আমি সবটা।
তুমি কতো শক্ত তন্নি।
জীবনে কতোকিছু হারিয়েও কী সুন্দর শক্ত তুমি।
তোমার মনোবল কতো দৃঢ়।
আমি হলে এতোটা পারতাম না।কবেই ভেসে যেতাম।
তোমার থেকে শেখা উচিৎ মা।
চলার পথ কতোটা কঠিন তোমার।তবুও মনে সাহস প্রচুর।”

“আসলে কী জানেন চাচি,আমরা মেয়েরা চাইলে সব পারি।শুধু দরকার একটু সাহস ও মনোবল।
জীবনে কম অত‍্যাচার সহ‍্য করিনি।
তাই এবার আর কিছুতেই ভয় পাইনা।
দুই দিনের এই দুনিয়ায় যে কদিন বাঁচবেন,লড়াই করে যাবেন।”

চাচির সঙ্গে কথা শেষ করে মেয়েকে নিয়ে ঘরে এসেছি।
রাত তখন নটা প্রায়।
ফোনে কল এলো রিতার নাম্বার থেকে।
ও কেন আমায় কল করছে?
এইতো সকালেই কতো কিছু হয়ে গেল।
এখন আবার ফোন দেওয়ার কারণ?

রিসিভ করলাম।
রিতা কাঁদছে।আমি অবাক হই।
জিজ্ঞেস করি কী হয়েছে।

রিতা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আপা আমার ছেলের এ‍্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।অবস্থা বেশ খারাপ।
প্রচুর রক্ত গেছে শরীর থেকে।বাঁচানো যাবেনা রক্ত না পেলে।
আমার একটাই ছেলে আপা।ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।
ব্লাড লাগবে।কিন্তু পাচ্ছিনা আমরা।অনেক খুঁজেছি।
পাইনি কোথাও।
ওর আর তোমার ব্লাড গ্রুপ এক।এই রক্ত খুব বেশি পাওয়া যায়না।
তুমিই একমাত্র উপায় আপা।
ওকে রক্ত দিয়ে প্রাণ ভিক্ষা দাও।আমি সারাজীবন তোমার পায়ে পড়ে থাকবো।
আমায় ক্ষমা করে দাও আপা।ভুল আমারই ছিল।
আমাদের পাপ আমার সন্তানের এসে লেগেছে।
আমায় সাহায্য করো আপা।”

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলি,”কোন হাসপাতাল?
এ‍্যাড্রেস পাঠিয়ে দে।
আমি যাচ্ছি।”

রিতা বলে,”আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি আপা।এতো রাতে ঐ রাস্তায় গাড়ি নাও পেতে পারো।”

আমি ফোন রেখে দেই।
সত‍্যিই মানুষের জীবন বড়োই অদ্ভুত।এই তো সকালে যারা বুক ফুলিয়ে অন‍্যায় করছিল,আমায় অপমান করছিল।
আজ তারাই আমার পায়ে পড়ছে একপ্রকার।

রিতা গাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
আমি গাড়িতে উঠি ততক্ষণাৎ।হাসপাতালে পৌঁছে রক্ত দিয়েছি আগে।
ডাক্তার নিতে চায়নি আমার রক্ত।কারণ আমার শরীর এমনিতেই বেশ হালকা।
এদিকে রক্ত না পেলে বাচ্চাটাকে হয়ত বাঁচানো যাবেনা।তাই বাধ‍্য হয়ে নিয়েছে তারা।
তবে রক্ত নেওয়া শেষে বলেছে আমায় পুষ্টিকর খাবারের ব‍্যবস্থা করে দিতে।ফল ও সবজি খেতে বলেছে।
রিতার স্বামী শুনেছে সবটা।
শুনে বাইরে চলে গেছে।
রিতা ওর স্বামীর কাছে গিয়ে এসব কথা বলে।
ওর স্বামী বলেন,”রক্ত দিয়েছে বলে মাথা কিনে নিয়েছে নাকি!
আবার ফলমূল কিনে দিতে হবে!”

এর অহংকার কমেনি এখনো।
অসভ‍্য একটা লোক।

চলবে