#বড়োজা
#Nadia_Afrin
২০
সময় চলে তার নিজ গতিতে।
তবে আমার জীবনের গতি পরিবর্তন হয়না।
দিন যায় রাত আসে।
আকাশে নতুন তারা,সূর্যের উদয় হয়।আমার জীবনে নতুনের ছোঁয়া লাগেনা কিছুতেই।
ইদানিং ভীষণ একঘেয়েমি লাগে জীবনের প্রতি।
দিনে কাজের চিন্তা করো,সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় মশগুল থাকি।
রাত হলে অতীত এসে চোখের পাতা ভারি করে।
দিনে দিনে কেমন যেন হয়ে উঠেছি আমি।
অগোছালো,খিটখিটে,বদ মেজাজি।
বস্তির বাচ্চাগুলো দিন কয়েক ভালোই পড়লো।
কিন্তু তারপর থেকে আমার অবাধ্য হয়ে গেছে।
পড়তে এসে মা*রামা*রি ঝগড়া-ঝাটি করে বেড়ায়।নিষেধ করলে শোনেনা।
শাসন মানেনা।
চিৎকার-চেচামেচি করে পরিবেশ নষ্ট করে।
চাচিও দেখছি ইদানিং বিরক্ত হচ্ছে।কতো আর সহ্য করতে পারে একটা মানুষ!
আমিও নিরুপায়।
সে’দিন এক বাচ্চাকে ধমক দিয়েছি।
সে কাঁদতে কাঁদতে মাকে গিয়ে নালিশ করেছে।মা এসে আমার সঙ্গে সে’কি ঝগড়া।
তার নাকি কষ্টের সন্তান।কষ্ট করে জন্ম দিয়েছে।খুবই শখের বাচ্চা।
আমি কেন গায়ে হাত তুলেছি।কোন সাহসে তুলেছি!
মানে এদের বাচ্চা পড়াবো ঠিকই।কিন্তু অন্যায় করলে শাসন করতে পারবো না।
কিছু বললেই আমি দোষী।
এভাবে বাচ্চা পড়ানো যায়?
আমি শিক্ষক,আমিই মারবো আবার আমি ভালোবাসবো।
ওদের আমি জ্ঞান দিচ্ছি,ভবিষ্যৎ এর জন্য খাটছি।সুতরাং ভুল করলে শাষনের অধিকারও আমি রাখি।
মায়ের পরেই স্থান হয় শিক্ষকের।
এরা তা বোঝেনা।
ওদের যদি আমি সঠিক শিক্ষাই দিতে না পারি তাহলে শিক্ষক হিসাবে আমার কী মূল্যটাই থাকলো?
একটা বাচ্চাকে আমি শেখাবো,আদর্শের পথ দেখাবো,যাতে সে মানুষ হতে পারে।
যদি এগুলো না ই করতে পারি, দিনশেষে সে পরিপূর্ণ একজন মানুষ হয়ে উঠবে না কখনোই।
অন্যায় কাজ করবে।লোকে তার শিক্ষা তুলে প্রশ্ন করবে।দূর থেকে হলেও শিক্ষক হিসেবে আমার দিকে একটা অযোগ্যতার তীর এটে থাকবে।
যা আমি চাইনা।
শিক্ষকতা একটা মহান পেশা।পেশা কম দায়িত্ব বেশি।
আমার সকল শিক্ষার্থী আমার সন্তান স্বরুপ।তাদের নিজ হাতে মানুষ করা আমার দায়িত্ব।
প্রতিটি সন্তানই তাদের পিতা-মাতার প্রিয় হয়।
সন্তান জন্মদান অবশ্যই কষ্টের।
তবে সেই কষ্টের কথা বিবেচনা করে নিরক্ষর রাখা যাবেনা।
প্রিয় হলে মানুষের কাছেও প্রিয় করে তুলতে হবে।
শিক্ষকের সঙ্গে সমান তালে বাচ্চার মূল্যবোধ তৈরিতে সাহায্য করতে হবে।
ঝগড়া করে উসকে দিলে ঐ বাচ্চা আর যাই হোক,মানুষ হবেনা কোনদিনই।
এতোকিছুর পরও শান্ত ছিলাম আমি।
এক ছেলে পড়তে এসে এতোই বিশৃঙ্খলা তৈরী করে যে ওকে তাড়িয়ে না দিয়ে উপায় পাইনি।
ঐ ছেলে সবাইকে মা*রা*মা*রি করতে বলে।আমি প্রতিবাদ করলে একটুও শোনেনা।
তাই একান্ত বাধ্য হয়ে ওকে পড়তে আসতে নিষেধ করে দেই।
দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ঢের ভালো।
পরদিন ছেলেটার মা এসেছে তেড়ে।
আমার নাকি অহংকার বেশি।পড়ালেখা জানি বলে মানুষকে মানুষ মনে করিনা।
তার ছেলেকে তাড়িয়ে দিয়েছি নিজের অহংকারের প্রতিফলন হিসেবে।
আর বাচ্চাদের মায়েদের ডেকে ডেকে এমন কথা বলেন।
বস্তির মানুষ এরা।তিল কে তাল বানায়।একজনের কথায় সবাই নাচে।ছাড় দিয়ে চলতে পারেনা।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এদের ভালোই লাগে।
লাগেনা শুধু আমার।যা তা ভাষা শুনে মনে হয় শিক্ষার এই জীবনে কোনো সম্মান,মূল্য নেই আমার।
এখানে আর থাকতেই ইচ্ছে করেনা।
ছেলে-মেয়ে না থাকলে কবেই ক্ষয়ে যেতাম।
কোনোদিকেই শান্তি পাইনা আমি। কোনঠাসা করে তুলেছে সব কিছু।
আমার ছোট ছেলেকে সেদিন দেখছি কাগজ মুড়িয়ে সিগারেট করে আগুন জ্বালিয়ে টান দিচ্ছে।ও একা নয়।সঙ্গে আছে আরো অনেকে।ওদের কাছে এটা খেলা হয়ত।আমার কাছে নিকৃষ্ট কাজ।
মাথায় রক্ত উঠে গেছে আমার।
ছেলেকে একটানে উঠিয়ে গায়ে সপাসপ তিন চর বসিয়েছি।
কেঁদে উঠেছে চিৎকার দিয়ে।
লতা আপা,চাচি এগিয়ে এসে ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে।
চাচি আমায় বকছে।এতো জোড়ে বাচ্চাকে মারা উচিৎ হয়নি।
রাগ সামলাতে না পেরে আমি নিজেই চিৎকার করে কান্না শুরু করেছি।
‘এদের মানুষ করতে এতো কিছু করছি আমি?
এই আমার প্রাপ্য?
নিজে খেয়ে না খেয়ে,নিজের চিন্তা না করে ছেলে-মেয়ের পেছলে খাটছি।শেষ পর্যন্ত কিনা এরাই আমার কোনো মূল্য দিচ্ছেনা।যে পথে যেতে নিষেধ করি,সে পথেই যায়।
এই বাচ্চার জন্য এতো কষ্ট করে কী লাভ হচ্ছে?
বাবা ছেড়ে দিয়েছে যেমন আমিও দিলে অনাহারে পড়ে কোথায় কী হয়ে যেত!
জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছি ওদের মানুষের মতো মানুষ করতে।
কিন্তু না!
এরা আমার কথাই শোনেনা।
জীবনটাই বৃথা লাগে আমার।
দোষ আমার জানিই।আমি বেঁচে আছি এটাই দোষ।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
বাচ্চাদুটোকেই বাইরে রেখে ঘরে দরজা আটকে বসেছিলাম অনেকক্ষণ।
বসে বসে কেঁদেছি।
মেয়ে আমার কাছে আসার জন্য কান্না করেছে।তবুও খুলিনি দরজা।চরম অশান্তিতে ভুগেছি।
চাচি,লতা আপা ডেকেছে বহু।
আমিও মানুষ।আমার ও অনুভূতি আছে।আমার কদর কেউ করে না।কেউ বোঝেনা আমায়।
দরজা খুলেছি ঘন্টা খানিক পর।
মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে।
ছেলেকে লতা আপা নিয়ে গেছে।
চাচির থেকে মেয়েকে নিয়ে ঘরের দিকে আসছিলাম।
পেছন পেছন চাচি বহু জ্ঞান দিচ্ছিলো আমায়।
যেমন,একটুতেই ভেঙে পরলে চলবেনা।আরো শক্ত হতে হবে।ধৈর্য্য ধরতে হবে।ছেলে ছোট।ভালো মন্দ বোঝেনা।বোঝাতে হবে।
উনি এতোগুলো কথা বলেছে,কিন্তু বিশ্বাস করুন, একটা কথাও আমার মস্তিষ্কে পৌঁছেনি।কানে গেছে ঠিকই।
মস্তিষ্ক আমার জ্যামে পড়েছে।
মেয়ে নিয়ে ঘরে শুয়েছি।কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝিই নি।
হঠাৎ পায়ের কাছে একটি নরম কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করি।
পিটপিটিয়ে চোখ মেলে দেখি ছেলে আমার পায়ের কাছে শুয়ে আছে।
মায়া হয় বড্ড।
উঠে বসি।
বাচ্চাটার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে একদম।
প্রচন্ড খারাপ লাগে।ডুকরে কেঁদে উঠি।
এবার কাঁদছি দুঃখে,কষ্টে,মায়ায়।
খালি মাথায় পায়ের কাছে এসে শুয়েছে ছেলেটা।
মাথার নিচে বালিশ দিয়ে গালে চুমু খেলাম।
ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছি।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
সেই খালাকে দেখলাম বস্তা হাতে কোথায় যেন যাচ্ছে বস্তির মাঝে দিয়ে।
কৌতুহলবশত একটু এগিয়ে যাই আমি।
খালা মুখ বেধে পাতা-লাকড়ি কুড়াচ্ছে।
ঠাঁঠা রোদের মাঝে পাতা কুড়াচ্ছে দেখে একটু অবাকই হলাম।
কতো বড়ো বাড়ি এনার।সুখের সংসার ছিল।
টাকা-পয়সার অভাব ছিল না।
খালা উঠে দাড়িয়ে বস্তা গুছাতে নিল।
হঠাৎ দেখলাম হেলে গেলেন তিনি।গাছের সঙ্গে হেলান দিলেন।
আমি দৌড়ে গিয়ে ধরলাম তাকে।
হয়ত রোদে মাথা ঘুরে গেছে।
আমার ওপর ভর দিয়ে বসলেন তিনি।ঘেমে একাকার।
ধীরে ধীরে ধরে ঘরে নিয়ে এলাম।
ফ্যানের নিচে বসিয়ে পানি খাওলাম।
কিছুক্ষণ চোখ বুজে রইলেন তিনি।
আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,”ঠিক আছেন খালা?
অসুস্থ লাগছে?
মাথা ঘুরছে?”
সে ধীরে ধীরে তাকিয়ে বলেন,”ঠিক আছিরে মা।
এখন এসব আমার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
ছেলে বউ নিয়ে দেশে এসেছে।
এসেই আগে আমায় ঘর ছাড়া করেছে।
যে ঘরে তুমি থাকতে সে ঘরে আমার ঠায় হয়েছে।বিল্ডিং ঘরে ঠিক মতো ঢুকতে পর্যন্ত দেয়না।
সারাটাদিন কাজ করায়।
ঘরের কাজ শেষ হলে পাতা-ডাল কুড়িয়ে আনো,সবজি চেয়ে আনো এসব বলে।
মানে বসে থাকতে দেবেনা দু-দন্ড।
ছেলেও আমার পক্ষে নেই।বউ যা বলে তা ই শোনে।
আমি নাকি ওদের জীবন,ক্যারিয়ার নষ্ট করেছি।
অবশ্য দোষটা আমারই।যেই আমি ছেলের বউকে এক নখের ওপর রেখেছি,সে এখন ওদের ঝী হয়ে গেছি।চাকর হয়ে গেছি।দিলে খাই,না দিলে নাই।
নিয়তি আমায় ছাড়লো না তন্নি।
ঠিক আমার প্রাপ্যটা আমায় বুঝিয়ে দিয়েছে।”
খালার চোখ-মুখে উপচে পড়া হতাশ।
হওয়ারই কথা।
এক কালের বাদশা,এখনকার ফকির!
আমার ঘরে সে-বেলা খাবার খেলেন তিনি।
খেয়ে বস্তা নিয়ে চলে গেলেন।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
আমি বিছানাতে উদাস মুখে বসে রইলাম।
ছেলে ঘুম থেকে উঠলো বিকেল করে।
উঠে দেখি আমার আশপাশ দিয়ে ঘোরে।কথা বলার সাহস পায়না।শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
নিজ থেকেই ওকে কাছে ঢাকলাম।
জড়িয়ে ধরে আদর করলাম।বোঝালাম।
সে সুন্দর মাথা নাড়লো।এমন কাজ আর করবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করলো।
ও কী করেছে ও নিজেও জানেনা।ও জানে এটা খেলা একধরনের।
সবাই খেলতে বলেছে তাই খেলছে।
সন্ধ্যার আগ দিয়ে ছেলে বায়না ধরে প্যানকেক খাবে।ঐ বাড়িতে প্রায় প্রায় বানিয়ে খাওয়াতাম।
ভীষণ প্রিয়।আমার ও প্রিয় বটে।
কিন্তু ঘরে নেই কিছুই।ডিমটা অব্দি নেই।এদিকে বাচ্চার আবদার না মেটাতে পারলে মনে শান্তি লাগছেনা।
এমনিতেই আজ গায়ে হাত তুলেছি।
বুদ্ধি খাটিয়ে চিনি আর আটা পানি দিয়ে নরম করে মেখে নিলাম।ঘরে আমার এ-দুটো উপকরণই ছিল।
ছেলেকে পাশে বসিয়ে চুলো জ্বালিয়ে তেল গরম করে পিঠার মতো করে ভেজে দিলাম।
খেয়ে ছেলে আমার মহা খুশি।পার্থক্যই বোঝেনি।
খুশি মনে কাজ করছিলাম,এমন সময় এলো আমার বড়োভাই।
হন্তদন্ত হয়ে আমার সামনে দাড়ালো।
হাপাতে হাপাতে বললো,”তুই এখানে থাকিস?
বহু খুঁজে তোর খোঁজ পেলাম।
সারাটাদিন আজ তোকে খুঁজতেই গিয়েছে।”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”তা আমার এতো প্রয়োজন পরলো যে হঠাৎ?
কী মনে করে আমার খোঁজ করছো?”
ভাই একগাল হেসে বলে,”না মানে এমনিই।
তা কেমন আছিস তুই?
ছেলে-মেয়ে কেমন আছে?
সব ঠিক আছে তো?”
“ভালোই আছি।যেখানেই আছি,যেমনই আছি ভালো আছি।ছেলে-মেয়ে দুজনেই ভালো আছে।”
ভাইকে দেখলাম চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
ঘরে গিয়ে বসতে বলি তাকে।
দুটো পিঠে বানিয়ে সামনে দেই।
এর নিশ্চয় কোনো মতলব আছে।শুধু শুধু আমার খোঁজ করার মানুষ ইনি নয়।
আগ বারিয়ে কিছুই বললাম না আমি।দেখিই না কী হয়!
ভাই ঘরে এসে আমার ছেলের হাতে একটা বিস্কুটের প্যাকেট দিল।
দশটাকার প্যাকেট।
এতোদিন পর এসেছে তাও দশটাকার বিস্কুট।যাক গে।
তবুও তো দিয়েছে।ভালোবেসে দু-টাকার জিনিস দিলেও অনেক।
ভাই পিঠা একটা খেয়ে পানি খেয়ে বলে,”তোর নাকি স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে?”
“হ্যা।হয়েছে বেশ আগেই।”
ভাই হালকা কেশে বলেন,”যা হওয়ার হয়েছে।ভালোই হয়েছে।
তা কাবিনে কতো লাখ ছিল তোর?
বড়ো ঘরে বিয়ে হয়েছে অনেক টাকাই দিয়েছে হয়ত।
টাকা গুলো ছাড়া যাবেনা।ছাড়লে অন্যায় হয়।পাপ হয়।
টাকা নিয়েছিস নিশ্চয়।
খালি খালি হাত ছাড়ার পাত্রী তো নস তুই।
টাকা গুলো কোথায়?
হাতে থাকলে আমায় দিয়ে দে বোন।
আমি ভীষণ ঋণে পড়েছি।
ভীষণ দরকার টাকার।কোথাও থেকে পাচ্ছিনা।
তুই ই আমার আশা,ভরসা সব কিছু।”
“অদ্ভুত কথা কেন বলো তুমি ভাই?
আমি টাকা কোথায় পাবো?
মানে ডিভোর্স হয়ে টাকা এনে আমি তোমায় দেব নাকি?
এছাড়াও আমি ওসব টাকা-পয়সা নেইনি।”
ভাই ততক্ষণাৎ আমার কাছে এসে বলে,”নিস নি তোহ কী?
নিবি এবার।ওটা তোর অধিকার।
বোকা নাকি যে টাকা নিবিনা!
চেয়ে আন।প্রয়োজনে মামলা কর।
আমি তোর সঙ্গে আছি।টাকা এনে আমাকে দে বোন।
খুবই বিপদে পড়ে এসেছি আমি।তুই আমার প্রাণের বোন,জানের বোন।আমার একমাত্র ভরসা।
তোকে ছাড়া আমার উপায় নেই বোন।তোকে মানুষ করেছি।পেলে-পুষে বড়ো করেছি।আমার কাছে ঋণ তুই।
এবার সময় এসেছে ঋণ শোধ করার।
টাকার ব্যবস্থা করে দে বোন।”
আমি চড়া গলায় বলি,”কোন ঋণের কথা বলো তুমি?দু-মুঠো খাবার দিয়ে গাধার খাটুনি খাটিয়ে নিয়েছো।ওটাকে বড়ো করা বলেনা ভাই।ঘরে অব্দি থাকতে দিতেনা আমায়।সব ভুলে গেলে?কোনোদিন বোন বলে মনে করেছো?যখন বিপদে পড়লে তখন বোন আমি তাই না?
এতোকাল এই বোনের কথা মনে ছিল না?
কতো বিপদ একা পার করেছি আমি।জেনেও না জানার ভান ধরে থেকেছো।কোনোদিন খোঁজ নিয়েছো?ভালো দুটো কথা বলেছো আজ পর্যন্ত?
বোন বলে এখন খুব সহজেই ডেকে দিলে।কিন্তু এই বোন কথাটার মর্ম রেখেছো তুমি?
অন্যায় অত্যাচার ছাড়া কিচ্ছু পাইনি তোমার থেকে।সারাটাজীবন তোমার ও তোমার বউয়ের কটু কথা শুনেছি।অন্যায় না করেও অপরাধি হয়েছি।
নির্দোষ থেকেও কতোই না পাপ সহ্য করেছি।সামান্যতম করুণা করোনি আমায়।
মানুষ বাড়িতে পোষা প্রাণী পাললেও নাকি মায়া হয়।
সেখানে ঐ বাড়িতে ছোট থেকে বড়ো হয়েছি আমি।তবুও তোমরা আমার প্রতি একটু সদয় হওনি।
কাজের লোকের সঙ্গেও মানুষ এতোটা অন্যায় করেনা।যা তোমরা করেছো আমার সঙ্গে।
এখন বিপদে যেই পড়েছো ওমনি আমার প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করলে তাই না।
এতোই প্রয়োজন হলে নিজের লোকেদের থেকে নাও।আমি তো তোমার কেউ না।”
“কে বলেছে তুই আমার কেউ না?
আগের কথা মনে রাখতে নেই।অতীতে অনেক কিছুই হতে পারে।
সব কী আর ধরতে আছেরে বোন?
ভাই আমি তোর।
আমার উপকার করলে সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়ে তোকে আরো সংসার ও ডিভোর্স দেবেন।
অনেক টাকা পয়সা হবে জীবনে।
এছাড়াও আমি তো তোর টাকা সব ফিরিয়ে দেব এককালে।
দু-তিন বছরে না দেই বিশ বছর পর হলেও দেব।
তোর খুব বেশি প্রয়োজন হলে হাজার খানিক করে করে ফেরত দেব।
চল বোন আমার,পুলিশের কাছে যাই।
তুই শুধু মাথা নাড়বি।সব ব্যবস্থা আমি করবো।
এছাড়াও ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা খরচ পাবি।সেই টাকাটাও দিস আমায়।
তোকে দোয়া করে দেব।
বেশি টাকা পয়সা দিয়ে বাচ্চা মানুষ করলে বাচ্চা মানুষ হয়না।”
“আমার বাচ্চা কিসে কীভাবে মানুষ করবো সেটা আমার ব্যাপার।
আমি ছোট লোকের মতো কাজ করতে পারবো না।
ঐ টাকা নিয়ে নিজেকে ভিখারী প্রমাণ করতে পারবো না।আমার যথেষ্ট মান-সম্মান আছে এখনো।ডিভোর্স হয়েছে বলেই যে তুচ্ছ হয়ে গেছি তা নয়।
তোমার প্রয়োজনে আমি কেন আমার আত্মসম্মান বিসর্জন দেব?
সামান্য কটা টাকা নিয়ে নিজের অস্তিত্ব বেঁচে খাবো নাকি?
ঐ টাকা নিয়ে আমি আমার সম্মান বেঁচে খাবোনা।
যে সংসারে আমার কোনো স্থান নেই,সেখান থেকে দু-পয়সা নিয়ে নিজেকে কেন ছোট করবো?
ঐ টাকায় সারাজীবন চলে যাবে আমার?
দান সাদকা হিসেবে দিয়ে দিয়েছি।
ওদের ওটাই প্রাপ্য।”
আমার ছাকা জবাবে ভাইকে দেখি থমথমে মুখে বসে আছে।
আমার বুঝে আসেনা কোন লজ্জায় ইনি আমার কাছে টাকা চাইতে এসেছে।
সামান্য ঘৃণা,লজ্জাও কী নেই?
নাকি সব বেঁচে খেয়েছে।
আসলেই কিছু মানুষের লজ্জা বলতে একটা বিষয় কোনোদিনই থাকে না।
ভেবেছিলাম আমার উত্তর পেয়ে ভাই চলে যাবে।অপমানেই চলে যাবে।
অন্তত উনার জায়গায় আমি হলে তাই ই করতাম।
তবে আমি নিজে এতোটাও ছ্যাচড়া স্বভাবের নই।
ভাই না গিয়ে থম মেরে কিছুক্ষণ বসে থেকে বলে,”তোর এখানে পরিচিত কেউ আছে?
মানে একটা বস্তিতে একা একা থাকছিস কী করে?
অবশ্যই পরিচিত কেউ আছে।
তাই না?”
“তা তোহ থাকবেই।সবার সঙ্গে খুব বেশি পরিচয় নেই।কথা হয় এমনিতেই।
এ বাড়ি এক চাচির।
উনি ভীষণ ভালো মানুষ।তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো।এক দোকান আছে উনার।উনিই আমায় আশ্রয় দিয়েছে এই কঠিন পরিস্থিতিতে।
আর এক আপা আছে।নাম লতা আপা।ভীষণ মিশুক তিনি।
বিপদে-আপদে আমায় সাহায্য করে।
বড়ো বোনের মতো।আগলে রেখেছে আমায়।
তুমি এসব জানতে কেন চাচ্ছো?
কী দরকার?”
“যা বলার সোজাসুজিই বলি।ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলার স্বভাব আমার নেই।
তোকে তো বললামই টাকার ভীষণ প্রয়োজন।
তুই আমার একমাত্র অবলম্বন।
তোর ঐ আপা ও চাচির বিষয়ে শুনে যা বুঝলাম তাতে তোকে খুবই ভালোবাসে।
তাহলে তাদের বল তোর উপকার করতে।
পঁচিশ পঁচিশ করে পঞ্চাশ হাজারের ম্যানেজ করে দে।
ওদের বল তুই খুব বিপদে পড়েছিস টাকার দরকার।
চাইলেই দেবে।
তুই একবার চেয়ে দেখ।”
আমি মুখ কুচকে বলি,”পাগল হয়েছো?
সারাদিন ঘুরে ঘুরে মাথায় স্ক্রু ঢিলে হয়েছে?
আমি কেন তাদের থেকে টাকা নিয়ে তোমায় দেব?
কোন ভিত্তিতে আমার কাছে টাকা চাও তুমি?
এছাড়াও ওরা টাকা পাবে কোথায়?
বস্তি মানে বোঝো না?
ধনীরা এখানে থাকেনা।দিন মজুরে,খেটে খাওয়া মানুষের বাস এখানে।
এদের কাছে পঁচিশ হাজার টাকা মানে লাখ টাকার সমান।
দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ এতো টাকা পাবে কোথায়?
লতা আপা বাসা বাড়ি কাজ করে।স্বামী রিক্সা চালক।ইনকাম যা করে তাতে পেট চালানোই দায়।
চাচির ছোট্ট একটা দোকান মুদিখানার।
সারাদিনে দুই-দেড়শ যা বিক্রি হয় তা দিয়ে কোনো মতে চলে সে।
আমি এতোগুলো টাকা চাইবো ভাবলে কী করে?
তোমার মতো পাগল হয়েছি নাকি আমি?
বিবেক আছে আমার।মেরুদন্ডহীন নই।
উনারা আমার ছায়া হয়েছে বিপদে।আশ্রয় দিয়েছে।
না’হয় বাচ্চা নিয়ে পথে পথে ঘুরতে হতো আমার।সেদিন তুমি ভাই ও আমার খোঁজ নাওনি।আজ যেই আমার প্রয়োজন পড়েছে ওমনি আমি বোন।
এতো কথা বলতাম না তোমায়।বলছি বোঝানোর জন্য।অপমান করতে পারিনা আমি।বোঝানোর মাধ্যমে বিদায় করতে চাই।”
“এভাবে কেন বলছিস তন্নি?আমি বদলে গেছি।তোর কথা এখন খুব মনে পড়ে।
এজন্যই সাহায্য চাইতে এসেছি বোন।
তুই একবার চেয়েই দেখ না টাকা।যারা তোকে ভালোবাসে তারা অবশ্যই তোকে দেবে।
মানুষ মাত্রই ভুল করে।আমিও করেছিলাম।এখন শুধ্রে গেছি বোন।
তোর মর্ম এখন আমি বুঝি। দেরি করে হলেও কিন্তু বুঝেছি তোর মর্ম।
দে না টাকাটা ম্যানেজ করে।টাকাটা দিলে আমাদের ভাই-বোনের সম্পর্ক মজবুত হবে আরো।তুই কী এটা চাসনা?
আমার প্রতি কী তোর একটুও মায়া হয়না?
ও বোনরে দে টাকা।
দোয়া করে দেব তোর জন্য।ভালো আরেকটা বিয়ে হবে।”
“আমার কোনো বিয়ে,সংসারের প্রয়োজন নেই।ভাইয়ের ও প্রয়োজন নেই।
টাকা নিয়ে বোনের সম্পর্ক মজবুত করতে এসেছো না?
লোভী কোথাকার!
তোমার মতো ভাই আমার চাইনা।তোমার চেয়ে বস্তির এই সাধারণ নিম্নবিত্ত পর মানুষগুলোই আমার ভালো।আপন তারা।
তুমি ভাই হয়ে যা না করেছো,তারা পর হয়ে তার চেয়ে বেশি করেছে।
তুমি ভাই আমার প্রয়োজনের সঙ্গী।খারাপ সময়ে তোমায় পাওয়া যায়না।
সুতরাং তুমি মুখে মধু,অন্তরে বিষ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলোনা।
হাস্যকর লাগছে।দুটো লোকে শুনলে তোমায় নিয়ে মজা নেবে।”
ভাইয়ের মুখাকৃত দেখলাম পরিবর্তন হলো মূহুর্তেই।
হয়ত বুঝে গেছে এখানে তার কার্যসাধন হবেনা।
গাল-মুখ কুচকে বলে,”ডদ্রভাবে কথা বল তন্নি।ছোট হয়ে খুব বড়ো বড়ো কথা শিখেছিস।ছোট-বড়ো মান্য নেই দেখছি।
যা পারছিস বলছিস।সাহস তো কম নয়।থাপড়ে তোর ভদ্রতা শিখিয়ে দেব।
অসভ্য মেয়ে!”
আমিও তীব্র চেচিয়ে বলি,”ভদ্রতা নিজে বজায় রাখো।লজ্জা করেনা হাত পাততে?
ছোট লোকি স্বভাব তোমার আজও গেল না।
হাত পেতে খেয়ে খেয়ে স্বভাবটাই হয়ে গেছে এমন।এতো কেন নিচ তুমি?
গায়ে মানুষের চামড়া আদৌ আছে?
মনে তো হয়না।
আমার এখানে এসে আমার সঙ্গেই চিৎকার করো কোন সাহসে?
বাড়ি বয়ে এসে হুমকি দিচ্ছো নাকি?
ওতো সহজ নয় সবকিছু।ভাই বলে তোমায় ডেকে ভাই শব্দটার অপমান করতে ইচ্ছে করছেনা।
বুঝিয়ে তাড়ানো যাবে না তোমায়।বোঝার মতো মস্তিষ্কই নেই যে।গায়ের চামড়া হয়েছে মোটা।
আর শোনো,আগের সেই ভোলাভালা তন্নি আমায় ভেবো না।
এই তন্নি আলাদা।জীবনের মারপ্যাচে আমি বদলে কঠোর থেকে কঠোর হয়েছি।
একটা বললে দুটো শোনার প্রস্তুতি নিয়ে আসবে এবার থেকে।
এই মূহুর্তে আমার ঘর থেকে বের না হলে তোমায় ছেড়ে কথা বলবোনা আমি।
ইট ছুড়লে পাটকেল খেতে হবে।মনে রেখো।”
ভাই উঠে দাড়ায়।বিরবির করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
আমি ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিদ্রূপ করে হাসি।মনে শান্তি লাগছে চূড়ান্ত অপমান করে।
এটা ওনার প্রাপ্য ছিল।
(পরের পর্বে তটিনী প্রতিশোধ নিতে চলেছে বড়োজার ওপর।সবাই রেডি থাকুন।চূড়ান্ত প্রতিশোধ পর্ব আসবে।