#বড়োজা
#Nadia_Afrin
২২
জানেন আপা,এতো কিছু হচ্ছে তাও ওদের লজ্জা হয়না।
ঐদিন রাতে রান্না করবো একটা মানুষ আসেনা।মা আর আমার ওপর সব চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা ঘরে শুয়ে থাকে।
ডাকলে ‘বড়োজা’ বলেন তিনি ক্লান্ত।ওর বোনও নাকি টায়ার্ড।
অথচ তেমন কোনো কাজই করেনি।
রাগ করে আমি নিজেই চুলো ধরিয়ে হালকা পাতলা রান্না করেছি।
রান্নাও শেষ হয়েছে। ওমনি সবার ক্লান্তি দূর হয়েছে।
সুন্দর করে ফোন টিপতে টিপতে ডাইনিং এ এসে বসেছে।
ওপর ওপর খেয়ে খেয়ে এদের অভ্যাস হয়ে গেছে।কাজ করতে চায়না।
আমিও কম কিসে!
দুটো প্লেট নিয়ে দু-মুঠো চাল আর কিছু আনাম সবজি প্লেটে সাজিয়ে দিয়েছে।
ওরা এটা দেখেই চিৎকার করে বলে,এসব কী?খাবার কোথায়?
নাটক হচ্ছে রাত করে?
বললাম,রান্না না হলে খাবেন কী?
এগুলো দিলাম রান্না করে খেয়ে নিন।না’হয় এমনি কাঁচা খান।
বলে,তোমরা খাবেনা?চাল খেয়ে থাকবে তোমরা?মা তো ভাত খাচ্ছে।আমরা কেন এসব খাবো?
‘মা আর আমি রেধে খাচ্ছি।যেই চাল গুলো দিয়েছি ওগুলো ফুটিয়ে খাচ্ছি।আপনারাও তাই করুন।ফ্রিতে কাউকে খাবার দেইনা আমি।আমার কাছে খেতে হলে খেটে খেতে হবে।
আপনাদের কেনা গোলাম আমি নই,যে ফাই-ফরমাশ খাটবো।হাত পুড়িয়ে রান্না করে আপনাদের কেন খাওয়াবো আমি?
সাত দিনের অথিতি হয়ে এসেছি আমি,কাজ করতে এসেছি নাকি?
বাড়ির বউ বিধায় এতোটুকু করলাম।না’হয় হাড়ি উল্টে রেখে দিতাম।
খেতে চাইলে খেটে খান।বয়স্ক মানুষ দিয়ে খাটানো বন্ধ করুন।
‘বড়োজা’ আর রিঙ্কি রেগেমেগে একাকার।
টেবিলে ধাক্কা দিয়ে উঠে গেছে।
আমি আর মা তো সেই হাসি।
নিজেরা পেট ভরে খেয়েছি।আশিক ও খেয়েছে আমাদের সঙ্গেই।
ওদের ছেলে-মেয়েকে খাবার দিয়েছি কিন্তু।বাচ্চাদের সঙ্গে আমার কোনো রাগ নেই।শুধু চাই সঠিক শিক্ষা দিতে।
পরে দেখলাম ওরা খাবার অর্ডার করেছে। ডেলিভারি ম্যান এসে দিয়ে গেছে খাবার আমার হাতেই।
রিঙ্কি ছো মেরে খাবার নিয়ে যায় আর বলে,ছোটলোকদের অধিকার নেই এই খাবার খাওয়ার।
এই অপমানের প্রতিশোধ তো আমায় নিতেই হতো আপা।
ওরা খাবার ঘরে রেখে একজন বাথরুম গেছে।আরেকজন পানি ও থালা আনতে গেছে।
তখনই একটা বিড়ালকে দেখলাম কিচেনের জানালা বেয়ে ঘরে এসেছে।
মা তাড়িয়ে দিতে নিচ্ছিলো।বিড়ালে নাকি রিঙ্কির সমস্যা।মূলত এই বিড়াল একদিন ওদের খাবারে মুখ দিয়েছিল বলে ওরা এই বিড়ালটার দুটো ছানাকে পিটিয়ে মে*রেছে।কতোটা নির্দয় মানুষ!
যেখানে সেখানে খাবার রাখবে।আবার অবলা প্রাণী এসে মুখ দিলেই দোষ।
এ কথা শুনে ভীষণ রাগ হলো আমার।
এবার আমার না হোক,বিড়ালের প্রতিশোধই নেব আমি।
‘বড়োজার’ ঘরের দিকে বিড়ালটাকে ঢুকিয়ে দিয়ে সাইটের জানালা খুলে বেড়িয়ে এসেছি।
বিড়ালটা সুন্দর করে খাবার গুলো খেয়েছে।
‘জা’ এসে এটা দেখে যেই চিৎকার করেছে,বিড়াল ভয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে গেছে।
অবলা প্রাণীটাই খাক।ও খেলে শান্তি আছে।এই অসভ্য মেয়ে মানুষ গুলো না খেয়ে থাকুক।একটা শিক্ষা হোক এদের।
‘বড়োজা’ প্রচন্ড গা*লী-গা*লাজ শুরু করেছে।কে তার ঘরে বিড়াল ঢুকিয়েছে।জানালা কে খুলেছে।
আরো কতো কী!
আমি পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ টিভি দেখছিলাম।
একপর্যায়ে শুনলাম দু-বোনের ঝগড়া লেগেছে।এটাই আমি চেয়েছি।ওদের দিয়েই ওদের মাত দেব।
রিঙ্কি কেন খাবার রেখে বাথরুমে গেল।
‘বড়োজা’ কেন খাবার ফেলে থালা আনতে গেল।
দু-বোনে একে-ওপরকে দোষ দিচ্ছে।
এর মাঝে কোথা থেকে যেন জায়ের মেয়ে এসে বলে,সব দোষ নাকি আমার।
আমায় শাস্তি দিতে।
হয়ে গেল!
দু-বোনে তেড়ে এসেছে।এসেই কানের কাছে চিৎকার করে বলছে,ওদের ঘরে কেন বিড়াল ঢুকিয়ে দিয়েছি?
জানালা কেন খুলেছি?
আমার এতো সাহস কেন?
এবার আমার কী করবে ওরা।
বললাম,সাহস আমার বরাবরই বেশি।এইসব কূবুদ্ধি শিখেছি আপনাদের থেকে।
আর আমি যে বিড়াল আপনাদের ঘরে দিয়ে এসেছি তার প্রমাণ আছে কোনো?
দিয়েও যদি থাকি,কী করবেন?
মামলা করবেন?
কেমন মামলা?
বিড়াল ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার মামলা?
যান যান।নিজেরাই ফাঁসবেন।বিনা কারণে পশু হত্যার দায়ে ফাঁসিয়ে দিয়ে আসবো।
দু-বোনে জেলে বসে দামি দামি খাবার খাবেন।
দু-বোনের মুখটা চুপসে গেছে একেবারে।
আমি গান গাইতে গাইতে ঘরে চলে গেছি।
রাত এগারোটার দিকে দেখি রিঙ্কি রেডি হচ্ছে।শর্ট ড্রেস পড়েছে।গর্জিয়াস মেকআপ নিয়ে বাইরে যাচ্ছে।
যা বুঝলাম,ও কোনো পার্টিতে যাচ্ছে।
যাবে যাক।ব্যক্তিগত ইচ্ছা।
কিন্তু যাওয়ার সময় দেখি মায়ের থেকে জোর করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
মা আকুতির স্বরে বলছে,এ টাকা কটা নিও না।এইগুলো দিয়ে পুরো মাস চলতে হবে।এগুলোও খরচ করলে সারামাস না খেয়ে থাকতে হবে।
আমি অনেক কষ্টে আকাশের থেকে চেয়ে চেয়ে এই কটা টাকা হাতে রেখেছি।বাড়িতে পোয়াতি বউ।একটু বাজার-ঘাট করতে হবে।
মেয়েটা শোনেনা কোনো কথা।একপ্রকার কাড়াকাড়ি,ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়েছে।
আমি যে যাবো তারও উপায় নেই।যা শুরু করেছে।আমায় আহত করে ছাড়বে।
আশিককে ডাকলাম ও আসবেনা।
‘বড়োজাকে’ গিয়ে বললাম,আপনার বোনকে শাষন করুন।এ কেমন অসভ্যতা?
বাড়ির বউ হয়ে এভাবে বাড়ির টাকা নিয়ে উড়ায় নষ্ট পথে।
ইনকাম করেছে রেখেছে নাকি ও?
আর মায়ের সঙ্গে হাত লাগাচ্ছে কোন সাহসে?
তিনি হাসতে হাসতে বলে,এ বাড়িতে এখন অসভ্যরাই থাকে।তুমি এতো ভালো হলে চলে যাও।আটকেছে কে?
সাতদিনের জন্য এসে সব বিষয়ে ঢুকতে যেও না।এটা নিত্যদিনের বিষয়।
থাকতে হলে এসব সহ্য করেই থাকতে হবে।
টাকা ও না ইনকাম করুক।ওর স্বামীতো করে।স্বামীর টাকায় স্ত্রীর হক আছে সম্পূর্ণ।মা নিজেই ওর সঙ্গে তর্ক করছে।টাকা গুলো দিয়ে দিলেই তো হয়।
বয়স্ক মানুষ।শুধু শুধু ব্যাথা পাবে।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
‘টাকা দিলে খাবেন কী সারা মাস?এখন আর সেই অঢেল সম্পদ,টাকা নেই।রমরমা ব্যবসা নেই।একটা ব্যবসা টেকাতেই ধার-দেনা করতে হচ্ছে।যখন তখন কম্পানি নিলামে আসবে।সেই চিন্তা আছে আপনাদের?থাকবে কী করে।আপনারা নিজেরাই তো এসবের জন্য দায়ী।হিসেব করে চলুন সময় আছে এখনো।ভালো হয়ে যান।
উনি মুখ কুচকে বলে,আমাদের খাওয়ার চিন্তা আমাদের করাই আছে।গুষ্টিশুদ্ধ খাওয়াতে পারবোনা।যে যার চিন্তা করো।স্বামীর থেকে টাকা নিয়ে বাজার করে খেও।এই টাকা ওর স্বামীর।তাই ওর ই এটা প্রাপ্য।
আর এতো জ্ঞানের কথা বন্ধ করো।
কাজ না থাকলে ঘরে যেয়ে বসে থাকো।
এরা কোনো প্রতিবাদ করবেনা বুঝলাম।
বাধ্য হয়ে মাকে বললাম টাকাগুলো ছেড়ে দিতে।যা হবে পড়ে দেখা যাবে।
এভাবে টানাটানি করলে লেগে যেতে পারে।
মা তাই করে।
টাকা নিয়ে রিঙ্কি বাইরে চলে যায়।
মা দেখি অশ্রুসিক্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকে আশ্বাস দেই।
যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।কাঁদলেও ফিরে আসবেনা।
ঘরে পাঠিয়ে দিলাম তাকে।রেস্ট দরকার।
আমি নিজেও ঘরে গেলাম।
মিনিট চল্লিশ পরেই রিঙ্কি এসে হাজির।
সবে মাত্র তখন আমার চোখ লেগেছে ঘুমে।বাড়িতে প্রচন্ড হট্টগলের শব্দ।
তাড়াহুড়ো করে বাইরে এসেছি।দেখি রিঙ্কি অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়িতে এসেছে।প্রায় প্রত্যেকের হাতে মদের বোতল,সিগারেট।
বাজে পোশাক,বিশ্রি হাবভাব।
আমি চিৎকার করে বলি,হচ্ছে কী এখানে?
এরা কারা?কেন এসেছে এতো রাতে?
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
রিঙ্কি বলে,আজ এখানে পার্টি করবো।ওরা সব আমার বন্ধু।যেই ডিস্কে আমি পার্টি করবো সেটা আজ কেউ বুক করে নিয়েছে।এজন্য সবাইকে বাড়ি এনেছি।
তুমি চাইলে আমাদের সঙ্গে ইনজয় করতে পারো।
‘এটা একটা ভদ্র বাড়ি।কোনো পার্টি ক্লাব নয়।যে যা ইচ্ছে করবে।এসব বাজে ছেলে-মেয়েদের এক্ষুনি বাড়ি থেকে বের করে দাও।
তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমি।
ওমনি ‘বড়োজা’ এসে বলে,সাহসের দেখেছো কী?
কিছুই জানোনা মনে হয়।বাড়ি আমাদের নামে।তাই আমরা যা ইচ্ছে করতে পারি।
কোর্টে যাবে তো?
যাও।
আজ তো আর যেতে পারবেনা।কাল যেও। আজ পার্টিটা ওরা করে নিক।পরে কী হবে দেখা যাবে।
কতোটা উশৃঙ্খল একটা মহিলা!
মহিলা বললে ভুল হবে।
আস্ত একটা ফালতু!
উপার না পেয়ে মায়ের ঘরে যাই।ভেবেছি সে হয়ত কিছু বলবে।ইতিমধ্যেই ওরা গান লাউড স্পিকারে দিয়েছে।
মায়ের ঘরে গিয়ে দেখি,মা বুকে হাত চেপে ঝুকে বসে আছে।
আমি দ্রুতই তার পাশে বসি।পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলি,কী হয়েছে মা?শরীর খারাপ করছে?
অতিরিক্ত শব্দে বুকে চাপ লাগছে?
মা আমার কানের কাছে বলে,এটা নিত্যদিনের গল্প হয়ে দাড়িয়েছে এ বাড়িতে মা।
খুব কষ্ট করে এই সময়টা কাঁটাই।ওরা আমার একটা কথা শোনেনা।
খুব বেশি সমস্যা হলে রাতেই বাড়ির বাইরে দূরে রাস্তায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকি।
মনে হয় জান বেড়িয়ে যাবে।বুকে চাপ দিয়ে ধরে।অতিরিক্ত শব্দে মাথা ব্যাথা থেকে বমি পর্যন্ত হয়ে যায় আমার।
কিছু বললে তেড়ে আসে মা*রতে।
একটু পর এলাকাবাসী এসে বকতে শুরু করবে।তখন একটু সাউন্ড কমাবে।
যা বুঝলাম,এনার কিচ্ছু করার নেই।
আশিককে ডেকে নিয়ে এলাম।
এ একবার উচু গলায় বলল,বাড়িতে বাইরের ছেলে মানুষ এনে এসব কী হচ্ছে!
‘বড়োজা’ ওর সঙ্গে চোটপাট লাগিয়ে তাড়িয়ে দিল।
ও আর টু শব্দ ও করলোনা।ঘরে শুয়ে পরলো।আমাকেও শুয়ে পরতে বললো।
কেমন পুরুষ!
এভাবে এতো শব্দের মাঝে শুয়ে ঘুমানো যায়?
রিঙ্কি একের পর এক নেশার বোতল খালি করছে।
পুরো ড্রয়িং রুমটা মদ-সিগারেটে ভর্তি করে ফেলছে।দেখে মনে হচ্ছে কোনো বারে দাড়িয়ে আছি।
কিছু সময়ের ব্যবধানে বাড়িটাকে কী বানিয়ে দিল।
আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না।
এক জগ পানি নিয়ে ওদের সাউন্ড বক্সের কাছে গেছি।পড়ে যাওয়ার মতো করে বক্সে পানি ফেলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি।
বলেছি,ভুল করে হয়ে গেল।
পার্টি কী আর গান ছাড়া হয়!
রিঙ্কির তো মাথায় হাত।এবার কী হবে!
ওরা চিৎকার,ঝামেলা শুরু করেছে।আমি আমার মতো সোফায় বসে বসে ফল খাই।
এক ছেলে এগিয়ে এসে বলে,একটা ডিস্ক খোলা পেয়েছি।চল সেখানে যাই পার্টি করে আসি।
মেয়েটা ভীষণ খুশি।
চলে গেছে বন্ধু নিয়ে।যাক গে।বাড়ির পরিবেশ তো বাঁচলো।
‘বড়োজাও গেছে বোনের সঙ্গে পার্টি করতে।
ঘরে গিয়ে আমি শুয়ে পরেছি।
আশিক জিজ্ঞেস করে ঝামেলা মিটেছে কিনা।
আমি বিদ্রূপ করে বলি,মিটবেই তো।পুরুষ মানুষ হয়ে তুমি যে কাজ করতে পারলেনা আমি তা করে দেখালাম।
একটা কাজ করো।
আমার হাতের চুড়ি গুলো নিজে পড়ে বসে থাকো।
আশিক চিৎকার করে বলে,বেশি সাহস হয়েছে নাকি?
অভদ্র মেয়ে।
‘সাহস আছে বলেই সমাধান করতে পারলাম।তোমার তো সেটুকুও নেই।আমার এই অভদ্রতা বাড়ির ভদ্র পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে।
সুতরাং বড়ো বড়ো কথা না বলে নিজের যোগ্যতা দেখো।
ওর মুখে আর কথা নেই।
আমি আমার মতো শুয়ে পড়েছি।রাত তিনটে নাগাদ বাড়ির সদর দরজায় সেইরকম ধাক্কা।
দুই মাতাল বোন নেশা করে বাড়ি ফিরেছে।
দরজা খুলতে বলে।
মা দেখি দৌড়ে বের হচ্ছে।
আমি আটকে দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেই তাকে।শুনেও না শোনার ভান করে দরজায় তালা লাগিয়ে ঘুমোতে চলে গেছি।
বড়োজার মেয়ে এসেছিল চাবি নিতে।
আমি কোনো কথা বলিনি।ঘুমের ভান ধরে পড়েছিলাম।
সকাল যখন সাতটা বেজেছে দরজা খুলেছি।বাড়ির সামনে দেখি ভির।লোকজন জরো করেছে দু-বোনে।
মাতাল দুই মহিলা কপালে হাত দিয়ে বসে আছে।
আমায় দরজা খুলতে দেখে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাড়ির ভেতরে গেছে।
স্বামীর সঙ্গে চিৎকার করছে।কেন ভাসুর দরজা খোলেনি।
একই প্রশ্ন আমারো।বউ-শালি বাইরে,ভাসুর বাড়িতেই ছিল।
একবারো বলেনি দরজা খুলতে।
এসেছি থেকে দেখছি ভাসুর যেন কেমন হয়ে গেছে।আগের মতো আর বউ ভক্ত নেই।বাড়িতে যতোক্ষণ থাকে,চুপচাপ।বাচ্চাদের প্রতিও তার তেমন নজর নেই।
এদিকে রিঙ্কি নেকা কান্না কেঁদে কেঁদে লোকের কাছে আমার নামে বিচার দিচ্ছে।সারারাত ওদের বাইরে রেখেছি আমি ইচ্ছে করে।
হাতে গোনা কজন এসেছে।যারা এসেছে তারা আবার রিঙ্কি টাইপ মানুষ।অন্যের পিছু লেগে থাকে সবসময়।মানে চোরে চোরে ভাই ভাই।
ওরা এসে আমায় বলে আমি অন্যায় করেছে।দুজনেই আমার ‘বড়োজা’।আমি কেন এই কাজ করলাম।
সারারাত বাড়ির বউকে কেন বাইরে রাখলাম।
তার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,উনি যদি আপনার বাড়ির বউ হতো কী করতেন?
বউ বাদ দিন।মেয়ে হলে কী করতেন?
মেয়ে সারারাত পার্টি করে মাতাল অবস্থায় ঘরে ঢুকতে চাইলে দিতেন?
বাড়িতে যদি ছোট ছেলে-মেয়ে থাকতো,পরিবেশ নষ্ট হতো তাহলে দিতেন উঠতে?
মহিলা দেখি চুপ করেছে।
আমি আরো বললাম,আমি যা করেছি উনাদের ভালোর জন্যই করেছি।
বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে উনার।
মাতাল হয়ে বাড়িতে এলে বাচ্চা দেখে কী শিখতো?
মা যদি এমন হয় সন্তান কেমন হবে?
কী শিক্ষা পাবে?
‘তাই বলে তুমি তোমার বড়োজাদের সঙ্গে এমন কাজ করবে?
‘অন্যায় দেখলে বড়ো-ছোট নেই।প্রতিবাদ না করলে হবেনা।
আমি ছোট তোহ কী?
তাই বলে অন্যায় দেখেও চুপ থাকবো?
আজ আমি ছেড়ে দিলে কাল ভবিষ্যৎ প্রজন্মে আঘাত আসতো।
আমার কথা শুনে প্রত্যেকের মুখ কালো।
আরো কজন ঝামেলা দেখে এগিয়ে এলো।
আমার কথা শুনে তারাও আমার পক্ষ নিল।ঠিক কাজ করেছি আমি।ধন্য ধন্য করে সকলে।
আস্তে আস্তে ভির সরে।
রিঙ্কি বাড়িতে ঢুকে অর্ডার করছে আজ যেন চিকেন রান্না হয় বাড়িতে।ও সারারাত জেগে ছিল তাই কাজ করতে পারবেনা।
রাতের মতো নাটক যেন না হয় বাড়িতে।ঠিকঠাক চিকেন রান্না করে ওদের ডাকতে বলে।
অর্ডার শুনে হাসি পায় আমায়।যেন ওদের আমি হাতের চাকর।
রাত কী আমি জাগতে বলেছি নাকি!
ঘরে গিয়ে দু-বোন সেই যে দরজা দিয়েছে।বের হওয়ার নাম নেই।
আমি আমার মতো করে মাকে নিয়ে অল্প কিছু রান্না করলাম।
ওরা তখনও বের হয়নি ঘর থেকে।সম্ভবত ঘুমিয়েছে।
মা খেতে ডাকতে চাইলে নিষেধ করি।
আশিককে ডেকে খাবার টেবিলে বসি খেতে।আকাশ ভাই আর ভাসুর কখনই বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে।
আমরা পেট ভরে খেয়ে সব ধুয়ে সবে টিভির কাছে বসেছি।
‘বড়োজা’ মাকে ডেকে তাদের খাবার ঘরে দিয়ে যেতে বলে।ওদের নাকি মাথা ব্যাথা।
মা আমার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়েছে।খাবার নেই।যা রেধেছি সব শেষ।
অবশ্য শেষ হওয়ারই কথা।সেই মাপ করে রেধেছি আমি।
রান্নাঘরে গিয়ে প্লেট সাজালাম।মার হাতে দিয়ে বললাম,এটা দিয়েই চলে আসবেন।পড়ে কী হবে আমি দেখে নেব।
মা আমার কথা মতো দিয়ে এসেছে।
এসে বসতেও পারেনি।’বড়োজা’ চিৎকার শুরু করেছে।থাল ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে।
আমায় ডাকছে।
আমি ও গেলাম মায়ের সঙ্গে।
উনি তেড়ে এসে বলেন,এসব কী দিয়েছো মেয়ে?
শুকনো চাল আর কাঁচা মুরগির মাংস।এসব খাবো নাকি আমি?
পাগল নাকি তুমি?মাথা খারাপ?
বেশি বাড়ছো নাকি?
কর্তা গিরি শুরু করেছো দেখছি।আমাদের বিষয়ে নাক গলাও কোন সাহসে?
‘রান্না করেছেন?আমি অসুস্থ মানুষ আপনায় রেধে খাওয়াবো নাকি?
আমি নিজের ভাগেরটা করে খেয়ে নিয়েছি।
আপনাদের টা আপনারা করুন।
দু-বোনে ঘর লাগিয়ে শুয়ে আছেন কে রেধে খাওয়াবে আপনাকে?
‘এই তোমার নীতি তাই না!একই পরিবারে থেকে নিজেদের জন্য রান্না করেছো আমি বাদে।
‘পরিবার কথাটা আপনাদের সঙ্গে যায়না।যদি পরিবারই মনে করতেন,অন্তত একটু কদর করতেন।
কাল রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করে দু-বোনের জন্য নিলেন।আমার জন্য নিয়েছিলেন?
পোয়াতি মানুষ আমি।ভেবেছেন আমার কথা?
বয়স্ক শাশুড়ি বাড়িতে।তাকেও দিয়েছেন?
এখন খুব এসেছেন পরিবারের গান গাইতে তাইনা!
‘বড়োজা’ রাগে ফুসতে লাগে।
আমি ঘরে চলে আসি।দু-বোনে অনেকক্ষণ চিৎকার করলো শুনলাম।
তাতে আমার কী!
পেটে তা লাগলে আপনাআপনিই রেধে খাবে।
ও বাবা!
দু-বোনে দেখি রেডি হলো একটু পর।
বাইরে খেতে যাবে।আজ আর রিস্ক নেবেনা।বাড়িতে খাবার আনবে না।
খেয়ে আসবে।
এদের আমি রান্না করিয়েই ছাড়বো।
ওপর তলায় উঠে পা দিয়ে দিয়ে কোনো মতে বারান্দা মুছেছি।
এরপর দাড়িয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
‘বড়োজা’ আর রিঙ্কি যেই নিচে এসেছে ওমনি ওপর থেকে ওদের মাথায় বালতির সব নোংরা পানি ফেলে দিলাম।
রীতিমতো লোক জড়ো হয়ে গেল এই কান্ডে।
কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে।
আমি নিচে এলাম ততক্ষণাৎ।বালতি নিয়েই এসেছি।
এসেই আক্ষেপের স্বরে বললাম,ওহ নো!
পানি পড়েছে আপনাদের গায়ে?
আমি বুঝতে পারিনি।স্যরি স্যরি।
আসলে আপনারা ঘর মেইবি কোনোদিনও মোছেন না।খুবই নোংরা।
তাই ভাবলাম মুছে দেই একটু।
ঘর মুছে পানি বয়ে আর নিচে নামতে পারিনি।তাই ওপর দিয়ে ফেলে দিয়েছি।কে জানতো আপনারা এখানে থাকবেন!
মিসটেক হয়ে গেছে।বাড়ি গিয়ে ভালো মতো গোসল করে নিন।
রিঙ্কি তেড়ে এসেছে।আমায় গায়ে হাত তুলতে হাত উঠিয়েছে।
আমি কিছু বলার আগেই প্রতিবেশি ভাবি এসে ওর হাত চেপে ধরেছে।
ঝাংটা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলেছে,ও তোমার উপকার করেছে ঘর মুছে দিয়ে।আর তুমি কিনা ওকেই মারছো?
পোয়াতি একটা মেয়েকে দিয়ে ঘর মুছিয়ে নিতে লজ্জা করেনা?
বসে বসে খেয়ে খেয়ে তোমাদের শরীরে তেল জমেছে দেখছি।
রিঙ্কি দ্বিগুণ চিৎকার করে বলে,এসব আপনি বলার কে?
বাইরের মানুষ হয়ে কোন সাহসে আমায় এতোগুলো কথা বলেন?
‘বাইরের মানুষের সামনে অন্যায় করলে প্রতিবাদ তো করবেই।
ঘরের বিষয় ঘরে সামলাতে পারোনা?
আমরা মানুষ।অন্যায় হতে দেখলে প্রতিবাদ অবশ্যই করবো।
এবার দুজনে ভেজা বিড়ালের মতো বাড়িতে ঢুকে গেছে।
আমি ভাবিকে ধন্যবাদ দিতে গেছি।তিনি বলেন,তন্নির সময় প্রতিবাদ করতে পারিনি ভয়ে।এবার করবো।তন্নি না টিকলেও তোমায় টিকতে হবে।এদের শায়েস্তার জন্য তোমায় টিকতে হবে এ’বাড়ি।
কোনো প্রয়োজন হলে ডাক দিও।চেষ্টা করবো সাহায্য করার।
ওরা বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়েছে।
রান্না করবে চাল চায়।এতোদিন ধরে সংসার করে।চাল কোথায় আছে সেটাও জানেনা।
আমি বললাম,যেগুলো ঘরে ফেলেছেন সেগুলো
আগে কুড়িয়ে আনুন।ভাতের চাল ফেলতে নেই জানেন না?
ফেলেছেনই যখন এবার ঐ চালই রান্না করে খান।
ঝুকে বসে কুড়িয়ে আনতে পারবোনা আমি।মায়েরও হাঁটু ব্যাথা।
এ’কথা বলে আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম।
ওরা দুজন কী করবে সেটা ওদের বিষয়।
পরে রিঙ্কি চাল এনেছে।জা রান্না করেছে।
এভাবেই এদের শিক্ষা দিয়েছি আমি।
চলবে।