#বড়োজা
#Nadia_Afrin
২৭
‘বিয়ে’ শব্দটিতে শুরু দুটো বর্ণ থাকলেও এর গভীরতা বিশাল।
‘বিয়ে’ নামক বিষয়ে যে জড়িয়েছে,বাস্তবতা তার কাছে পানির মতো সহজ।সুখ-দুঃখের এক সমাবেশ রয়েছে এখানে।
আমার জীবনেও এসেছিল ‘বিয়ে’ নামক সমাধিটা।
এসে আমায় ছন্নছাড়া করে দিয়েছে।
পারভীন আপা সেদিনের পর থেকে এমন পিছে লেগেছে যে বিয়ে ছাড়া কোনো কথাই নেই তার মুখে।
এতিমখানার প্রতিটি শিক্ষককে বলে দিয়েছে বোঝাতে।সকলে মিলে এবার ধরেছে আমায়।
বিয়ে করো,ছেলে দেখি।আরো কতো কী!
আমি শুধু শুনছি সবটা।
এসবের প্রতি কেন যেন আগ্রহ আসেনা তেমন।কাজ নিয়েই মহা ব্যস্ত আমি।
এরই মাঝে বিপত্তি বাধে।
গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষক আপার কাছে আমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন।
আপাই একমাত্র ছিলেন ওখানে আমার ওপর পদের।এবং তার কথাই শুনতাম আমি।মেনে চলতাম বলে তার কাছেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
এবার পেয়ে গেল আরো সুযোগ।
বিয়ে আমায় করতেই হবে।
দিনরাত একই কথা বলে বেড়ায়।বিরক্তই হয়ে গেছি আমি।
ওদের জোড়াজুড়িতে একপ্রকার রাজিই হলাম আমি।
বিয়ে ঠিক করতে বলি।
আপা বাধা সাধে।আমার পছন্দ ছাড়া কিছুতেই বিয়ে দেবেন না তিনি।বিয়ে সারাজীবনের বন্ধন।একবার সংসার ভেঙেছে আমার।দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত খুবই ভেবে চিনতে নিতে হবে।
লোকটার সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে বলেন।তার বিষয়ে জানতে বলেন।একে-ওপরকে চিনতে বলেন।
আমি আগ্রহ দেখাই না।আগের ন্যায় কাজ নিয়েই পড়ে থাকি।
বাধ্য হয়ে আপাই এক শুক্রবারে সব এ্যারেঞ্জ করে।একটা কফিশপে দেখা করতে বলেন আমাদের।দুজনকে ঠিকানা দিয়ে বিকেলে যেতে বলেন দেখা করতে।
এ কথা শুনেই মনের মাঝে অস্থির লাগা শুরু হয় আমার।
একা যেতে চাইনা কিছুতেই।ভয় লাগে কেন যেন।
আপা ভরসা দিয়ে বলেন,”কিছু কিছু বিষয় একাই সামলাতে হয়।মানুষ সবসময় সব পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থাকবে না।
এখন আর আগের তন্নি নও তুমি।
মনকে শান্ত করে দেখা করে এসো।ছেলেটাও পরিচিত।এখানেই থাকে।ভয় নেই।তবুও কোনো সমস্যা হলে কল দিও।”
ভরসা পেয়ে রাজি হই আমি।
ঐদিনই আমার আবার গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ পড়ে।যেখানে না গেলেই নয়।
আপাকে জানাই বিষয়টা।
তিনি বলেন,”সমস্যা নেই।কাজ শেষে সোজা কফিশপে চলে যাবে।ডেট পেছালে ছেলেটা আমাদের মিথ্যাবাদী মনে করতে পারে।
যাও গিয়ে দেখা করে এসো।”
তৈরি হয়ে বের হই আমি।কাজ শেষ করে বেলা সাড়ে চারটা নাগাদ ঠিকানা মত পৌঁছাই।
কফিশপের ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম ছেলেটা এক কোণে বসে আসে।
আমাদের এতিমখানার সামনে দিয়েই যাতায়াত করতো সে।তাই চিনি।
সামনে গিয়ে দাড়াই আমি।সম্মান সূচক উঠে দাড়িয়ে বসতে বলেন।
বসি চুপচাপ।ছেলেটিও বসেছে।পরণে তার ব্লু রঙের পাঞ্জাবি।হাতে ঘড়ি।টিচার টিচারই লাগছে।
দেখতে ভালোই।ফর্সা চেহারায় খোঁচা খোঁচা দাড়ি।লোকটার বয়স যে খুব কম তা কিন্তু নয়।উনিও বিবাহিত ছিলেন।সম্ভবত উনার স্ত্রী ক্যান্সারে মারা গেছেন কবছর আগে।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
লোকটা দু-কাপ কফি অর্ডার করেন।
আমি তখনও চুপ বসে আছি।ভীষণ নার্ভাস লাগছে আমার।এমন পরিস্থিতিতে প্রথম আমি।
কফি এলে দুজনেই হাতে নেই।উনি এক চুমুক দিয়ে বাইরে উকি দেয়।
আমার গাড়ি পার্ক করা ছিল বাইরে।
বললেন,”গাড়িটা আপনার নিজস্ব?”
“জ্বী” সূচক উত্তর দিলাম আমি।
এরপর দুজনেই চুপ।আমি ইতস্তত বোধের চোটে খেতেও পারছিনা।শুধু কাপ হাতে বসে আছি।
হঠাৎ তিনি বলেন,”আপনার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে কতো টাকা আছে?”
একটু ভ্যাবাচেকাই খেয়ে যাই আমি।নিজেকে যথাসাধ্য সামলে নিয়ে সরু গলায় জবাব দেই,”আছে চলার মতো।খুব বেশি নেই।”
লোকটা আবারো প্রশ্ন করলেন,”চলার মতো কতো?কতো লাখ?
আপনি অনেক ভালো পদে আছেন আমি জানি।অনেক গুলো উন্নত কাজের সঙ্গেও জড়িত আছেন।লাখ পেরিয়ে কোটিতে গিয়েছে নিশ্চয় আপনার টাকার পরিমাণ।”
আমি এবারে কোনো জবাব দিলাম না।ভেবেছিলাম আমার চুপ থাকা দেখে লোকটা প্রসঙ্গ পালটাবে।লজ্জা পাবে।
কিন্তু না!
তা হলো না।উনি পুনরায় প্রশ্ন করে,”কটা বাড়ি আছে আপনার?কতো শতাংশ জমি কিনেছেন?”
প্রথম দেখায় এ কেমন প্রশ্ন?
এবার আর চুপ থাকলাম না আমি।
বললাম,”আমার টাকার প্রতি দেখছি আপনার ভীষণ আগ্রহ।বিয়েটা কী আমাকেই করবেন নাকি আমার টাকাকে?”
লোকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে বোধহয়।শুকনো হেসে বলে,”এসব কী বলছেন?
টাকাকে কেও বিয়ে করে?
আপনায় বিয়ে করতে ইচ্ছুক আমি।তাই আপনার বিষয়ে জানতে চাই।”
“আপনি আমার নয়,আমার টাকার বিষয়ে বেশি আগ্রহী।এজন্যই কথার সুত্রপাতই করছেন টাকার এ্যামাউন্ট দিয়ে।”
“কিন্তু টাকাটাও তো আপনারই।আপনার টাকার বিষয়েই তো জানতে চাচ্ছি।বিয়ের আগে জেনে-শুনে নেওয়া ভালো।”
“বিয়েটা আমায় করলে সর্বপ্রথম আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন।টাকার বিষয়ে নয়।
টাকা ক্ষণিকের।আমার আত্মসম্মান,মূল্যবোধ সারাজীবনের।
টাকা কখনোই মানুষের পরিচয় বহন করেনা।”
লোকটাকে দেখলাম মাথা নিচু করে আছে।
আমি ব্যাগ নিয়ে উঠে দাড়ালাম।
কফির দাম দিয়ে ‘আসছি’ বলে চলে আসলাম।
এমন লোকের সঙ্গে আর যাই হোক,বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক গড়তে চাইনা আমি।
ইনি আমায় নয়,আমার প্রতিপত্তিকে চায়।
এতিমখানায় ফিরে আপাকে সবটা বললাম।তিনি রেগে একাকার।আরো দু-তিনটে শুনিয়ে আসা উচিৎ ছিল বললেন।
ভাবলাম,যাক এবার আর কেউ বিয়ে নিয়ে মাতামাতি করবেনা।
সেগুরো বালি হলো!
দুদিনের মাথায় আরেকটি বিয়ের প্রস্তাব এলো।
একজনের সঙ্গে দেখা করেছি এটা পুরো ছড়িয়ে গেছে।তাই যারা পিছে লেগে ছিল,বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে আপার কাছে।
আপা এবারেও বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠিয়ে দিল আমায়।
বলল,”একজন খারাপ হয়েছে বলেই কী সবাই খারাপ হবে!”
ইনি তো বোঝে না,আমার জীবনে যারাই এসেছে নিজ স্বার্থ নিয়ে এসেছে।কেউ এসেছে রুপের জন্য,কেউবা শুধুই পেতে।এখন আবার অর্থের লোভে।
বিনাস্বার্থে ভালোবেসে আসেনি কেউ।
ছেলেটা অবিবাহিত।যখন আমি বিষয়টি জানলাম চরম প্রতিবাদ করলাম।
আমি ডিভোর্সী।দু-বাচ্চার মা।আমি কীভাবে অবিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করতে পারি?
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
“কেন করা যাবেনা?এইকাজ পৃথিবীতে তুমিই একমাত্র করছোনা।কতো লোক বিবাহিত হয়েও অবিবাহিত ছেলে-মেয়েকে বিয়ে করে।বেশিরভাগ ছেলেরাই এখন এমন করে।
তুমি করলে দোষ কোথায়?
ছেলেটা নিজে যেচে এসেছে।তুমি তো যাওনি।তোমায় ভালো লেগেছে বলেই এসেছে।সব জেনে-শুনেই প্রস্তাব দিয়েছে সে।
এছাড়াও একেবারেই অবিবাহিত বলা যাবেনা তাকে।
বিয়ে হয়েছিল সংসার হয়নি।
বউ উঠিয়ে আনার আগেই প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল।তাই রাগে আর ছেলেটা বিয়ে করেনি এঅব্দি।এবার তোমায় দেখেছে।ভালো লেগেছে।তাই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খারাপ কিছু নেই এখানে।পাপ করছো না তুমি।”
যা বুঝলাম,আপাকে বোঝানো অসম্ভব।বিয়ের ব্যাপারে তিনি খুবই কঠোর হয়েছেন।
তর্ক না করে রাজি হই।এছাড়া উপায় নেই আমার কাছে।
এবারে দেখা করতে যাওয়ার সময় আপা গা ভর্তি গহনা পড়িয়ে দিল।সবই তার গহনা।আমার কোনো গহনা নেই।স্বর্ণ তেমন পছন্দ নয় আমায়।তাই বানাই নি।
আপার ছোট্ট গলার হার,কানের দুল,হাতের আংটি,চুড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।
আমি নিষেধ করেছি বহুবার।তিনি শোনেন নি।
বাধ্য হয়ে এসব পড়েই গেলাম।
এবারে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছি।এই ছেলেকে আমি আবার চিনি না।ফোন দিয়ে কনফার্ম হয়ে এসেছি।
ছেলেটা শুরু থেকেই আমার হাত,গলা,কানের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।
বিব্রত হই আমি।হালকা কেশে ধ্যান ভাঙার চেষ্টা করি।লোকটা হুড়মুড়িয়ে ওঠে।
প্রথম প্রশ্ন এবার আমিই করি।
নাম,পরিচয়,ঠিকানা জিজ্ঞেস করি।উনি একটা কম্পানির ম্যানেজার পদে আছেন।
কথাবার্তা শুনে ভদ্রই মনে হলো।
এই ছেলেটার গায়ের রঙ আবার একটু চাপা।তবে আকৃতি সুন্দর।গোলগাল চেহারা।হেসে হেসে জবাব দেয়।
আমার প্রশ্নের পালা শেষ হলে তিনি প্রশ্ন শুরু করেন।
উনার করা প্রথম প্রশ্নটাই ছিল,আমার ডিভোর্স হলো কেন?
প্রস্তুত ছিলাম আমি।ইভেন উনি জিজ্ঞেস না করলেও আমি জানাতাম সবটা।একজনের সঙ্গে জীবন গড়ার চিন্তা করছি।অতীতের সবটাই জানানো উচিৎ।
না’হলে ভবিষ্যতে এই অতীতকে ঘিরেই অশান্তি তৈরি হবে।লুকোচুরির স্বভাব আমার নেই।যা ঘটেছে সবটাই সত্য।
খুলে বলি তাকে আমার অতীত বিষয়ে।
সব শুনে তিনি বলেন,”আপনার কোনো দোষ নেই তাহলে।আপনি চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
আমরা কথা এগোতে পারি।
কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে।সেগুলো শুনে নিন।”
ভ্রু কুচকে তাকাই তার দিকে।
তিনি বলেন,
“১.বিয়ের পর আপনার সব কিছু আমার নামে করে দিতে হবে।ব্যাংক ব্যালেন্স থাকলে সবটাই আমার নামে করতে হবে।জমি থাকলেও সব।
আসলে মেয়েদের কাছে অর্থসম্পদ থাকলে অহংকার বেড়ে যায়।স্বামীকে স্বামী বলে মূল্যায়ন করেনা।স্ত্রীদের সবসময় স্বামীর পদতলে থাকতে হয়।এজন্য স্ত্রীর এতো সম্পদ থাকা ভালো নয়।
২.কাজকর্ম যা করেন ছেড়ে দিতে হবে।মন দিয়ে সংসার করতে হবে।বিয়ের পর আপনার একমাত্র কাজ হবে স্বামী ও শশুর-শাশুড়ি সেবা।
৩.যেহেতু আপনার বাচ্চা আছে তাই ওদের নিয়ে বেশি মাতামাতি করা যাবেনা।মাসে একবার দেখা করতে পারবেন।আপনার কোনো সম্পদ অথবা অর্থের ওপর ওদের কোনো হক থাকবেনা।কারণ ওরা অন্যের ওরশজাত সন্তান।আমার নয়।আমার স্ত্রী হলে আমি কেন্দ্রিক বিষয় ছাড়া কোনো কিছু আপনার থাকবেনা।
বিয়ের পরেই বাচ্চা নিতে হবে।না’হলে পুরোনো বাচ্চা ভুলতে পারবেন না।
এই আমার শর্ত।মানতে রাজি আপনি?”
“ভালোই শর্ত দিয়েছেন আপনি।
একপক্ষের শর্ত যুক্তিসাপেক্ষ হয়না ঠিক।
আমারো কিছু শর্ত আছে।এবার আমার গুলো শুনুন।
১.বিয়ের পর আপনাকে আমার সব কথা শুনতে হবে।আমার কথায় চলতে হবে।আমি উঠতে বসলে উঠবেন,বসতে বললে বসবেন।
এককথায় আমার হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হবে।আমার মন মর্জি মতো চলতে হবে।
২.আমি যেমন আমার সব অর্থবিত্ত আপনায় দিয়ে দেব,তেমনি আপনি আপনার সবকিছু আমায় দেবেন।জমি বাড়ি যা আছে লিখে দেবেন।
মাস শেষে স্যালারি পেয়ে সবটাকা আমার হাতে এনে দিতে হবে।আমার মন মতো খরচ করবেন।
বাড়ি শুধ্ব লোককে আমায় কথায় চলতে হবে।আপনি সহ আপনার মা-বাবা সব্বাইকে।”
৩.বাচ্চা নেব ঠিক আছে।বাচ্চার ওপর শুধু আমার অধিকার থাকবে।
বাচ্চা নিয়ে আপনার পরিবার কোনো জ্ঞান দিতে পারবেনা।
এবার বলুন রাজি আছেন?”
আমার কথা শেষ হয়েছে কী হয়নি লোকটা চেচিয়ে উঠেছে।
উচু গলায় বলে,”ছিহ আপনি কতো নিচ।এজন্যই আপনার সংসার ভেঙেছে।এতোক্ষণ সংসার ভাঙার যে কারণ শোনালেন সবই মিথ্যা।
দোষ আসলে আপনার।আপনার মতো মেয়ে কোনো সংসারেই টিকতে পারবেনা।
বিয়ের আগেই এমন মন-মানষিকতার পরিচয় দিচ্ছেন।না জানি বিয়ের পর কী রুপ দেখাবেন!”
“জ্বী ঠিক বলেছেন।আরো ভয়ংকর রুপ দেখাবো।এটা আপনার প্রাপ্য।বিয়ের আগেই একটা মেয়ের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চান কোন সাহসে?
আমার সবকিছু নিজের নামে নেবেন আর নিজের গুলো দেবেন না?
স্বামীর ও সংসার ধর্ম পালন করা প্রত্যেকটি মেয়ের দায়িত্ব।তাই বলে সব ছেড়ে শুধু এসবই করে যাবো?
আমার মন নেই?ইচ্ছে-অনিচ্ছে নেই?
দাসী নই আমি কারো।
খুব সহজে বলে দিলেন কাজ ছাড়ার কথা।এ জায়গাতে আসতে আমার কতো পরিশ্রম হয়েছে জানেন?আমার ত্যাগ,বিসর্জনের বদলে এই অর্জন।আমার কঠোর পরিশ্রম,অধ্যাবসায় সব ভুলে যাবো আপনার মতো মানুষের জন্য?
আপনার কথায় সব ছেড়ে দেব ভাবলেন কী করে?
আর সন্তান কখনো নতুন-পুরোনো হয়?
আমার জীবনের অংশ ওরা।ওদের জন্যই সব।
খুব সহজে বলে দিলেন আমার কিছুর ওপর ওদের অধিকার থাকবে না।
থাকবেটা কার তাহলে?
আপনার?
ওরা শুধু আমার সন্তান না।ওরা আমার ভবিষ্যত ।ওদের জন্যই আমার সবকিছু।
আমার সংসার ভেঙেছে ঠিক আছে।আপনিও ফ্রেশ নন।আপনার বউ ও ভেগে গেছিলো।সবই জানি আমি।
আসলে প্রেমিকের সঙ্গে নয়,পালিয়েছে আপনার ব্যবহারে।আপনার মতো বদ্ধ উম্মাদ মানুষের কাছ থেকে রেহাই পেতে হয়ত বেচারা পালিয়েছে।প্রেমিক থাকলে হয়ত বিয়ের আগেই পালিয়ে যেত।
আপনার মতো মানুষের কাছ থেকে পালিয়ে জান বাঁচিয়েছে বেচারা।”
লোকটা দ্বিগুণ চিৎকার করে বলে,”যতো বড়ো মুখ নয় ততো বড়ো কথা।
আপনার মতো ডিভোর্সী,দু-বাচ্চার মাকে আমি যে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি এটাই অনেক।”
উনি অভদ্র হলেও আমি হলাম না।মান-সম্মান আছে আমার।নিচু স্বরেই জবাব দিলাম,”আপনার মতো নিচু মনের মানুষের সঙ্গে আমি এখনো যে কথা বলছি সেটা আপনার ভাগ্য।”
উঠে দাড়িয়ে বাইরের দিকে হাঁটা ধরলাম।
ছেলেটা পেছন থেকে তেড়ে এলো আমার নিকট।হাত ধরে বলল,এতো বড়ো স্পর্ধা আপনার।পাবলিক প্লেসে অপমান করেন।
আমি পেছন ঘুরে ঠাস করে ছেলেটার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।
রাগান্বিত চোখে বললাম,”পরেরবার মেয়ে দেখতে যাওয়ার সময় থাপ্পড়টা মনে রাখবেন।”
হনহনিয়ে বেড়িয়ে আসি আমি।ছেলেটা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকে।
বাইরে আসতেই দুজন পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসে আমার নিকট।
এরা আমার পরিচিত।আমার বড়ো কোনো মিটিং এ সঙ্গে গিয়েছে সেফটি দিতে।
উনারা এগিয়ে এসে বললেন,”এ্যানি প্রবলেম ম্যাম?আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।”
জবাব দিলাম না কোনো।গাড়িতে গিয়ে বসলাম সোজা।
এই ছেলের সঙ্গে আকাশের চেহারার ভীষণ মিল আছে।স্বভাবও একই।দুটোই স্বার্থপর।
আর যাই হোক,জীবনে দ্বিতীয় ভুল করবো না আমি।
স্বামী,সংসার করে করে সব হারিয়েছি।দিন শেষে বিতাড়িত হয়েছি।
এবার আমি নিজের জন্য ভাবতে চাই।নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে চাই।
আপনারা হয়ত ভাবছেন আমার দেওয়া শর্তের কথা।
এগুলো আসলে ছেলেটাকে শিক্ষা দিতে বলেছি আমি।
ওমন নিচ মন-মানষিকতা আমার নয়।এতিম আমি।মা-বাবা না থাকার মর্ম বুঝি।বরাবরই চেয়েছি আমার একটা পরিবার হোক।একটা মা-বাবা পাই আমি।
অন্যের ছেলেকে নিজের হাতের পুতুল করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।চাইলে আকাশকে নিজের বশে রাখতে পারতাম আমি।একসময় আমার প্রতি পাগল ছিল সে।
আমি চাই প্রতিটি মানুষের একটা নিজস্ব মূল্যবোধ থাকুক।
অন্যের কথায় মেরুদণ্ডহীন হয়ে বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয়না।
ওমন পুরুষ আমার নিজেরই পছন্দ নয়।পুরুষ মানুষ হবে আলাদা ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন।
এসব ভাবতে ভাবতেই এতিমখানায় পৌঁছে গেলাম।আপা সহ অন্যসব টিচার আমায় দেখেই এগিয়ে এলো।
গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই তারা একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগে।ছেলে কেমন?পছন্দ হলো নাকি?
কী কথা হলো?কী কাজ করে?
আরো কতো কী!
আমি জবাব না দিয়ে ঘরের মাঝে প্রবেশ করলাম।
পারভীন আপাও এলো।সঙ্গে বাকিরাও।ঘরে ঢুকেই ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেলাম।
আমার এমন ব্যবহারে এবার সবার টনক নড়েছে।
অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পারভীন আপা এগিয়ে এসে বলেন,”ভেবো না তন্নি।এটা পছন্দ না হলে সমস্যা কী!
আরো ছেলে আছে।প্রয়োজনে আরো দেখা করিয়ে দেব তোমার সঙ্গে।
দেখবে ঠিক ভালো ছেলে পাবে তুমি।”
ভীষণ রাগ লাগে আমার।মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনা।অনেক ধৈর্য্য ধরেছি।আর পারলাম না।
রক্তচক্ষুতে সামনের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলি,”আমি আপনাদের কাছে বেশি হলে বলে দিন।চলে যাবো আমি অনেক দূরে।কখনো বিরক্ত করবো না।
তবুও আর এসব কাজে যেতে বলবেন না আমায়।”
আমার ব্যবহারে সবাই অবাক।
বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে সব।জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগি আমি।রাগে গা যেন জ্বলছে।
আপা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে।
পাশে বসে মাথায় হাত রাখে।চুপ করে আছি আমি।
সবাইকে চলে যেতে বলেন আপা।
চলে গেলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দিয়ে বলেন,”কী হয়েছে তন্নি?
রেগে আছো কেন বোন?কেউ কিছু বলেছে তোমায়?মন খারাপ?”
তার নরম স্বুরে মনটা গলে যায় আমার।
কান্নায় ভেঙে পড়ি আমি।জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠি।
আপা সময় দেন আমায়।নিজেকে সামলে নেওয়ার সময়।
সব পরিস্থিতিতে মানুষকে প্রশ্ন করতে নেই।
কেঁদে মনটা হালকা হয় আমার।
আপাকে সবটা খুলে বলি।
তিনিও রেগে একাকার।ছেলেটার নামে মানহানির মামলা করতে চায়।
আমি নিষেধ করি।ঝামেলার দরকার নেই।
আপা বলেন,”লাগবেনা ভালোবাসার মানুষ।আমার ভুল হয়েছে।
ক্ষমা করে দাও।ভুলেই গিয়েছিলাম এই দুনিয়া স্বার্থ ছাড়া চলেনা।
তোমায় আমরা সবাই ভালোবাসি।নতুন কারো দরকার নেই।
তোমার কষ্টের পাল্লা নতুন করে ভারী হোক চাইনা।
তুমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে,আমাদের সঙ্গে নিয়েই থাকবে বরং।
সবাই তো স্বামী-সংসার নিয়েই থাকে,আমাদের তন্নি না হয় আমাদের নিয়েও থাকুক।”
আপাকে জড়িয়ে ধরে প্রশান্তি অনুভব করি।
এরই মাঝে খবর পেলাম একটা কম্পানি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে।
মূলত আমাদের এতিমখানার মেয়েদের হাতের কাজ আমি কিছু দোকানে দেখিয়েছিলাম।তারা পছন্দ করেন ওদের কাজ।
তাই ওদের হাতের তৈরি জামার ডিজাইন,ব্যাগ,থ্রি-পিছ তৈরি করে দিত।আমি সেগুলো দোকানে সেল করে দিয়ে টাকা ওদেরকে দিতাম।সেই টাকা দিয়ে কেউ কেউ নিজের পছন্দের জিনিস কিনতো।কেউ বা গুছিয়ে রাখতো।এতে করে ওরা নিজেদের এক্সট্রা চাহিদা গুলো পূরণ করতো।
এক কাজে থাকলে যেমন নতুন কাজের খোঁজ পাওয়া যায়।বিষয়টা হলো তাই।
ধীরে ধীরে ফেব্রিক্স,সুতোর কাজ শুরু করে ওরা।
নিত্যনতুন ডিজাইন করে দিত।ভালো দাম আসতো সেগুলোর।
তবে এসবই ওরা করেছে অবসর সময়ে।খাওয়া,ঘুম,পড়াশোনা বাদে যেটুকু সময় পেত কাজ করতো।এতে করে ওদের ও সময় কেঁটে যেত ভালো।
এই কাজ নাকি একটা কম্পানির চোখে পড়ে।
তারা অর্ডারে জামা নিতে চায় আমাদের থেকে।সব খরচ তাদের।আমাদের শুধু ডিজাইন করে দিতে হবে।
অগ্রিম অনেক গুলো টাকা সহ পাঁচটি সেলাই মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে যায় কাজ করার।
আসলে আমাদের এতিমখানায় একটা মাত্রই মেশিন ছিল।তাও নিজেদের কাপড় তৈরি করার শুধু।
একজন কাজে বসলে অন্য সবাই দাড়িয়ে থাকতে হতো।এতে করে সময় অপচয় হতো বেশ।
এবার একাধিক মেশিন পেয়ে সবাই যে যার খেয়াল খুশি মতো কাজের সুযোগ পায়।
এতিমখানার এতো উন্নতি সবারই নজর কারে।
একাধারে পড়াশোনার একটা ভালো কেন্দ্র যেমন হয়ে উঠেছিল,তেমন প্রতিটি মেয়েই প্রায় সাবলম্বি হয়ে উঠছিল।শুধু এতিমখানার ওপর নির্ভর করে ছিল না কেউ।নিজ নিজ প্রচেষ্টায় নিজেকে সহ এতিমখানার উন্নতিতে সাহায্য করছিল।
নাম,ডাক,যশ,খ্যাতি সবই পেয়েছিলাম আমরা।
এতো সুখের মাঝে দুঃখ হয়ে আসে একটি ঘটনা।জীবন প্রায় তছনছ হয়ে যায় আমার।
চলবে।