#বড়ো আপা
#পর্ব-১৯
#শারমিন আঁচল নিপা
চারপাশের আযানের ধ্বনিতে মুখরিত। গ্রামটা একদম পাল্টে গেছে। আগের মতো কেউ আর গরীব নেই। সবারেই মোটামুটি টাকা হয়েছে। বেশিরভাগ টাকা এসেছে বিদেশে গিয়ে খেটে। আনহারি চারপাশটা তাকিয়ে দেখছে তার চোখগুলো রক্ত বর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কেমন জানি ভুতুরে সিনেমার সিনের মতো লাগছে সবটা। মনে হচ্ছে ডিরেক্টর এই বুঝি কাট বলবে। ধমকা বাতাস চারদিকে বয়ে চলেছে। ঝড় আসবে মনে হচ্ছে। অসময়ে ঝড় ভালো লক্ষণ নয়। আমাকে আর আনাহরিকে ছোটো ছোটো বাচ্চারা গরু নেওয়ার সময় দেখছে। তবে তারা গ্রামের প্রবীণ না হওয়ায় চিনতে পারছে না। তাদের বয়স দশ থেকে পনেরোর মধ্যে হবে। তাই তারা কেউ কোনো কিছু বুঝছে না। এটা নিয়ে এখনও শোরগোল দেখা যাচ্ছে না। (এটেশন পেইজের নামটি লক্ষ্য করুন শারমিন আঁচল নিপা নাম না হলে দয়া করে এ পেইজ থেকে গল্প পড়বেন না। এরা কপিবাজ)
খানিকটা দূরেই দুলাভাইদের ভবন। ভবনটা এখনও সুসজ্জিত। ভবনের রঙ দেখলেই মনে হয় এ বাড়ির ভেতরের মানুষগুলো বেশ ভালোই আছে। আনহারিকে আমি বাড়িটা নির্দেশ করে বললাম
“ঐটায় আমার আপার শ্বশুড় বাড়ি।”
বাড়ির পেছনের জাম গাছটাকে আর দেখতে পেলাম না। হয়তো কেটে ফেলেছে। আমি আনহারিকে পুনরায় বললাম
“পেছনের জাম গাছটা হয়তো কেটে ফেলেছে। বাড়ির পেছনের জাম গাছটাতেই আপা গলায় দড়ি দিয়েছিল।”
আনহারি কিছুক্ষণ চুপ রইল। চারদিকটায় আযানের ধ্বনি থেমে গেল। অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে গ্রামটাও নিস্তব হয়ে গেল।
আনহারি আর আমি আপার শ্বশুড়বাড়ির দিকে এগুচ্ছি। কত বছর পর এখানে আসলাম। ভীষণ ভয় আমাকে গ্রাস করছে। এর মধ্যেই আমিন চাচা সামনে আসলো। বারো বছর আগে কত তাগরা ছিল। এখন একদম নেতিয়ে গেছে। কালো চুলে সাদা পাক ধরেছে।চাচাকে দেখে আমার আগের কথাটা মনে পড়ে গেল। বাবা তখন আপার লা/শ নিয়ে ঘুরছে৷ কেউ আপাকে খাটিয়া পর্যন্ত দেয়নি৷ লা/শ টা বাবা বাশের দাড়ি (গ্রামের ভাষায় এটাকে দাড়ি বলে তবে এটা মূলত বাশ দিয়ে তৈরী পাটি) দিয়ে মুড়ে নিয়ে কবরস্থানে গিয়েছিল করব দিতে। তখন এ আমিন চাচায় বাবাকে প্রথম বাঁধা দেয়। বাবাকে সাফ সাফ করে বলে দেয়
“পেট বা/জায়ছে এমন নষ্ট মেয়ের লাশ এ কবরস্থানে দাফন করা যাইব না। আমার বাপ মা এ কবরস্থানে আছে। আরও অনেক সম্মানীয় মানুষ এখানে আছে। এ কবরস্থানকে তো অপবিত্র বানানো যাবে না। অনেক হাজীদেরও এখানে দাফ/ন করা হয়ছে। সুতরাং তোমার মেয়ের লা/শ এখানে দাফন করা যাবে না।”
বাবা তখন হাত জোড় করে বলেছিল
“ভাইজান আমার মেয়ে এতটাও খারাপ ছিল না। আপনি দয়াকরে আমার মেয়েটাকে কবর দিতে দিন। এ লা/শ আজকে কবর দিতে না পারলে পচে যাবে। দুর্গন্ধ ছড়াবে। চারদিকে শেয়াল কুকুর এসে আমার মেয়েকে খুব/লে খু/বলে খাবে। বাবা হয়ে এ দৃশ্য আমি দেখতে পারব না। আমার মেয়েটাকে দা/ফন করতে দিন দয়াকরে।”
বাবার আকুতি চাচার কানে পৌঁছালেও অন্তরে প্রবেশ করেনি। সে ধমক দিয়ে বাবাকে বলল
” আমি কেন গ্রাম বাসীর কেউ চায় না অনন্যার এখানে দা/ফন হোক। দেখো মিয়া কথা বাড়াইয়ো না। কথা বাড়ায়লে বিষয়টা খারাপ দিকে যাবে। হানাহানির দিকে যাবে। জঙ্গলে ফেলে দাও। এরকম নষ্টা/কে শেয়াল কুকুর খেলেই ভালো। এখান থেকে দূর হও। আলগা পিরীত দেখানোর সময় নাই।”
বাবা অনন্যার লা/শটা ধরে নিয়ে গেল সোজা জঙ্গলে। সেখানে আপাকে খুঁড়ে কবর দিল। পরদিন খবর আসলো আপার কবর শেয়াল খুঁড়ে লা/শ খেয়ে ফেলেছে অর্ধেক। বাবা আর যায়নি সেখানে। হয়তো সে দৃশ্য নিজ চোখে দেখার সাহস তার কুলায়নি। আপার এ কথাগুলো মনে হলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। এ মেয়েটা দুনিয়াতে বেঁচে থেকেও সম্মান পেল না। আবার ম/রে গিয়েও না।
আমিন চাচাকে দেখে আনহারি বলে উঠল
“কেমন আছেন চাচা? ভালো আছেন? চাচী কেমন আছে? বারো বছর পর গ্রামে আসলাম আপনাদের খোঁজ নিতে।”
চাচা আনহারির দিকে তাকিয়ে চুপসে গেল। অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করল
“কে তুমি?”
আনহারি হেসে জবাব দিল
“আরে আমি অনন্যা। চিনতে পারছেন না? গিয়েছিলাম দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে। পড়াশোনা শেষে ফিরে আসলাম। লক্ষ্য করলাম বারো বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। দীপকও নাকি বিয়ে করে নিয়েছে। কিন্তু প্রথম বউ থাকা সত্ত্বে তাকে ডিভোর্স না দিয়ে অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা তো আইনে নেই। এগুলো নিয়েই আলোচনা করব।”
আমিন চাচা “লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” বলে দৌড় দিল। আনহারি একটু উচ্চ স্বরে হাসলো। আনহারির ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে আমিন চাচাকে আগে থেকেই চিনে। আমি মনে কিন্তু নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
“আপনি কি আমিন চাচাকে চিনেন?”
উত্তরে সে বলল
“না। কেন বলো তো?”
“আমিন চাচা আপার দাফ/ন নিয়ে অনেক ঝামেলা করেছিল। হঠাৎ করে উনাকে এভাবে ভয় দেখানোতে মনে হলো চিনেন”
“উনি একটু বয়স্ক মানুষ অনন্যাকে চেনার কথা। তাই একটু মজা করলাম। এ গ্রামের মানুষ ও অনন্যার সাথে অন্যায় করেছে সেটার প্রতিশোধ নেওয়া তো দরকার তাই না?”
আমি কেবল দম ছেড়ে উত্তর দিলাম
“হুম”
আপার শ্বশুড় বাড়ির মূল ফটকে যেতেই নিয়ামত চাচা আটকে ধরলেন। এ বাসার দারোয়ান আগেও নিয়ামত চাচা ছিলেন। এ চাচায় আপার নামে প্রথম দূর্নাম রটায়। আপার পরকিয়া আছে এরকম বার্তা গ্রামবাসীর নিকট এ চাচায় রটিয়ে বেড়ায়ছিল। সেদিনের স্মৃতি আবারও চোখে ভেসে উঠল। আপাকে নিয়ে শালিস বসে। আপা বারবার বলতেছিল আমি সংসার করতে চাই। আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে উনার পরকিয়া আমি মানতে পারছি না। উনাকে বলেন এসব বাদ দিতে। আমার সাথে মন দিয়ে সংসার করতে। তখন আপার জামাই বলেছিল
“আমি এই মেয়ের সাথে সংসার করব না। এ মেয়ে আমার আড়ালে পরপুরুষের সাথে ফস্টিনস্টি করে। আমি তো বোকাসোকা এতদিন ধরতে পারিনি। নিয়ামত নিজ চোখে দেখে আমায় বলেছে। বিশ্বাস না হলে নিয়ামতকে জিজ্ঞেস করেন।”
তখন এ নিয়ামত চাচায় জোর গলায় বলেছিল
“পেছনের দেয়াল দিয়ে এক অপরিচিত ছেলেকে আমি ঢুকতে দেখেছি এ মেয়ের ঘরে। সাহেব একদম সত্যি কথা বলছে।”
আপা শুধু অজোরে কেঁদে তাকে বলেছিল
“চাচা আমার নামে এত বড়ো অপবাদ দিতে আপনার বুক কাঁপলো না? আমি তো এমন কিছুই করিনি। কেন এত বড়ো মিথ্যা বলছেন। নিজের মেয়ে হলে পারতেন?”
তিনি নাক ছিটকিয়ে জবাব দিলেন
“আমার মেয়ে এত বড়ো ন/ষ্টা না। ভুলেও আমার মেয়ের সাথে তুলনা করবে না। একে তো পাথর নিক্ষেপ করে মা/রা দরকার।”
সেদিন শালিসে সবার সামনে আপার পরকিয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে আপার ডিভোর্সের পরোক্ষ কারণ হিসেবে এটা ধরা হয়। এবং এর সাক্ষী হিসেবে নিয়ামত চাচাকে রাখা হয়।
আনহারি আমার পেছনে। আমি সামনে গেলাম নিয়ামত চাচার। আমাকে দেখেই তিনি পথ আটকে বললেন
“কে আপনি কার কাছে যাবেন? অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।”
“আমি ফিয়না। দীপক ভাইয়ার কাছে এসেছি। আমাকে ঢুকতে দিন।”
“উনি অনুমতি না দিলে ঢুকতে দিব না। উনাকে কল করেন।”
ঠিক সে মুহুর্তে আনহারি পেছন থেকে এসে বলল
“নিয়ামত চাচা আমি দীপকের বউ অনন্যা। আমার নিশ্চয় এ বাড়িতে ঢুকতে পারমিশন লাগবে না। ফিয়নাকে হয়তো চিনতে পারছেন না। আমাকে তো চিনতে পারছেন। ভালো করে দেখেন আমাকে। আর গেইটের সামনে থেকে সরেন। অনেক দূর থেকে এসেছি। ভীষণ ক্লান্ত আমি।”
নিয়ামত চাচা আনহারিকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। এক পলকে তাকিয়েই আছে কেবল। কিছুই সে বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সে যে ভীষণ ভয় পেয়েছে সেটা বুঝা যাচ্ছে। আনহারি এবার তার হাতে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল
“সরেন তো…আমাকে ঢুকতে দিন।”
বলেই ঢুকতে নিল আনহারি। সাথে আমিও। ঠিক এ মুহুর্তে বোমার বিস্ফোরণের মতো নিয়ামত চাচা চেঁচিয়ে উঠল। আর এখান থেকে আনহারি আর আমার নতুন লড়াইয়ের শুরু হলো।
কপি করা নিষেধ
#বড়ো আপা
#পর্ব-২০
#শারমিন আঁচল নিপা
নিয়ামত চাচার চিৎকার শুনে ভেতর থেকে সবাই হই হই করে বের হলো। আপার ননদ আনজুমান সবার প্রথম বের হলো। আনজুমানও বেশ নেতিয়ে গেছে। বুড়ি হয়ে গেছে বুঝা যাচ্ছে। তার সাথেই একটা ছোটো বাচ্চা মেয়ে দাঁড়ানো। মেয়েটির বয়স সাত বছরের মতো হবে। হয়তো এটা আনজুমানের সন্তান। আনজুমানের সাথে তার জামাই বের হয়েছে। আপার শ্বাশুড়ি বের হয়েছে পরপরই। আপার শ্বাশুড়ি বেশ বৃদ্ধ হয়ে গেছে। এতটুকু রাস্তা আসতে তার ভীষণ সময় লেগেছে। আগের মতো শক্তি হয়তো তার শরীরে নেই। একটা সময় সবাইকেই এ অবস্থানে যেতে হয়। কিন্তু জোয়ান অবস্থায় এটা সবাই ভুলে যায়। আপার কষ্টের মূল কাহিনি রচনা করেছিল এ মহিলা। সব বৃদ্ধ দেখলে সম্মান আসে না মন থেকে। কিছু কিছু বৃদ্ধ দেখলে বমিও আসে, ঘৃনাও আসে। তার মধ্যে একজন হলো আপার শ্বাশুড়ি। দীপক ভাইয়াও এসেছে সাথে একটি মেয়ে নিয়ে। কম বয়সী মেয়ে। বুঝতে পারছি না এটা কে? দুলাভাই যাকে বিয়ে করেছিল সেটা অন্য মেয়ে ছিল। এ মেয়ে কে এটাই জানার বিষয় এখন। সবাই এসে প্রথমে নিয়ামত চাচার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
“কী হয়েছে এভাবে চেঁচিয়ে উঠলি কেন? ভর সন্ধ্যায় এভাবে চিৎকার করার মানে কী?”
নিয়ামত চাচা ঢুক গিলে আনহারির দিকে ইশারা করল। এবার সবাই আনহারি দেখে চমকে গেল। আনজুমানের স্বামী সেখানেই ফিট হয়ে পড়ে গেল। শ্বাশুড়ি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। দীপক হা করে তাকিয়ে থেকে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল
“অনন্যা তুমি বেঁচে আছো?”
আনহারি হেসে জবাব দিল
“আপনাকে সারপ্রাইজ দিব বলেই বেঁচে আছি। বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। আমি আবার কবে মরলাম?”
“তাহলে জাম গাছে কে গলায় দড়ি দিয়েছিল?”
আনহারির হেয়ালি উত্তর
“সেটা আমি কীভাবে জানব? কে না কে গলায় দড়ি দিয়েছে এ বিষয় নিয়ে আমি তো স্টাডি করিনি। আমি উপস্থিত ও ছিলাম না। জলজ্যান্ত একটা মানুষকে জিজ্ঞেস করছেন বেঁচে আছি কিনা? আসতাম না আপনাদের এখানে। তবে ডিভোর্স যেহেতু হয়নি সেহেতু নিজের প্রাপ্য অধিকার তো আদায় করতে হবেই। নাহয় আপনাদের মতো মানুষদের উপর আমি থুতু মারতাম। যাইহোক অনেক দূর থেকে এসেছি আমি এখন ক্লান্ত। যা কথা বলব রাত দশটার পর। কে জাম গাছে মরে/ ছিল খুঁজে বের করেন। আর সব থেকে বড়ো কথা আমার পরিবারের সাথে এত বড়ো অন্যায় করা হয়েছে এটার জবাবদিহি তো পুরো গ্রাম বাসীকে দিতে হবে। আর কাকে জাম গাছে ঝুলিয়ে হ/ত্যা করেছেন সেটার উত্তর আপনারা পুলিশকে দিবেন। আমি সবকিছুর ব্যবস্থা করে আসব। আমার সাথে যদি আগের মতো একটা অন্যায় করার চেষ্টা করেছেন, আমি একদম ভেঙে গুড়িয়ে দিব। সামনে থেকে সরেন ঘরে যাব।”
কম বয়সী মেয়েটা কথাগুলো শুনে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল
“আপনার বউ মারা গেছে বলেছিলেন। তার নাম তৃনা ছিল। তাহলে এ অনন্যা কী করে আপনার বউ হয়? আমি গরীব ঘরের মেয়ে বলে বাবা, মা বিয়ে দিয়েছে। আর এত বড়ো অন্যায় আমার সাথে করলেন? কত অপমান কষ্ট সহ্য করি আর আমাকে এভাবে ঠকালেন?”
মেয়েটির কথা শুনে দুলাভাই মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগল
“আরে মা/গি চুপ কর। তোর মা/গিগিরি পরে করলেও হবে। এ মেয়ে তো মারা গেছে। বিয়ে তো আমি অনেক গুলো করেছি। তোকে বলেছি একটার কথা। বেশি ইতরামি করলে তোকেই আমি জাম গাছে ঝু/লিয়ে দিব।”
আরও কিছু বলতে নিবে এমন সময় আনহারি দুলাভাইয়ে হাতটা চেপে ধরে ডান দিক থেকে বা দিকে ঘুরিয়ে দিল। হাতটা মটমট করে একটা শব্দ হলো। মনে হচ্ছে হাতটার হাড় ভেঙে গেছে। তারপর জোর গলায় বলল
“কাপুরুষ কোথাকার। মেয়েদের গায়ে হাত তুলে নায়ক সাজতে চাস? কুলাঙ্গার কোথাকার। নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকে দিব। আর একবার যদি কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলতে দেখি হাত ভেঙে দিব। এক বউ থাকতে আরেকটা বিয়ে করার সময় মাথা ঠিক ছিল না? আর তোর বউ সব মারা যায় কেন? এর আগেও আরো দুটো বিয়ে করেছিস আমাকে রেখে। সব জবাব কীভাবে দিবি সেটা রেডি কর। একে তাকে মেরে কালপুরুষ না হয়ে।”
দীপক চুপসে গেল আনহারির কথা শুনে। আনহারির শ্বাশুড়ি শরীরের শক্তি কমে গেলেও গলার জোর কমেনি। সে জোর গলায় বলে উঠল
“তুই বাঁইচা থাকস মন চায় মইরা উইঠা আইছস সেটা দেখার বিষয় না। তোরে তো আমার পুতে তালাক দিছে। তাইলে এ বাড়িতে তোর কোনো জায়গা কেমনে হইব?’
বুড়ি যেন ঠিক জায়গায় পয়েন্ট টা ধরেছে। সকল প্ল্যান কী তাহলে ভেস্তে যাবে? এটাই ভাবতে লাগলাম আমি। আপার ছাড়াছাড়ি গ্রাম বাসীর সামনে হয়। তাহলে তো তালাককৃত বউয়ের কোনো অধিকার থাকে না। তবে আনহারি তার বুদ্ধি দিয়ে উত্তর দিল
“আমাকে ছেড়েছে তার কোনো ডকুমেন্টস আছে? আমার কাছে তো আমার বিয়ের ডকুমেন্টস আছে। ডিভোর্স দিলে তো ডকুমেন্টস লাগে। সেটা কোথায়? আর ডিভোর্স বললাম, দিয়ে দিলাম আর হয়ে গেল? আমাকে বারো বছর গুম করে রাখার অভিযোগ আসবে আপনাদের উপর। আমার সাথে যেদিকেই বাড়বেন সেদিকেই পথ থুবরে পড়বেন। সব কিছু নিয়েই যুদ্ধে নেমেছি। যা করার করেন। আপাতত আমাকে আর বিরক্ত করবেন না।”
এরপর আনজুমানের কাছে যেতেই সে ভয়ে কাঁপতে লাগল। আনহারি তার কাঁপুনি দেখে বলল
“ভয় তো আমার পাওয়ার কথা আপনি পাচ্ছেন যে? যাইহোক পুরনো হিসাব নিকাশ নাহয় পরেই করব। আপাতত নিজের স্বামীর জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করেন আপা।”
এরপর আনহারি আমাকে ডেকে বলল
“ফিয়না আমার সাথে আসো। অনেকক্ষণ জার্নি করে এসেছি আমার মাথাটা বেশ ধরেছে।”
আমি আনহারির সাথে সাথে গেলাম। এখানের কেউ আমাকে চিনেছে বলে মনে হয় না। নিজের পরিচয়টা পরেও দেওয়া যাবে । আপাতত কাহিনি পর্যবেক্ষণ করতে থাকি।
আনজুমানের হাসবেন্ড কে দীপক আর নিয়ামত চাচা ধরে ভেতরে নিল। জ্ঞান ফেরানোর জন্য পানির ঝাপটা দিল। দীপকের বর্তমান স্ত্রীর নাম পিয়ালি। পিয়ালি সোফায় বসে কাঁদছে। আমি যতদূর বুঝতে পারলাম কয়েকদিন পর পর বউ পাল্টানো দীপকের একটা স্বভাব। আর পরিবারও এটাকে বেশ সাপোর্ট করে বুঝা যাচ্ছে। বারোটা বছর কেটে গেল। গ্রামের কত কিছু পাল্টালো তবে পাল্টালো না কেবল এ পরিবারের ব্যবহার। আপার নানী শ্বাশুড়িকে চোখে পড়ল না। হয়তো গত হয়েছেন।
আনহারি আর আমি দীপকের রুমেই প্রবেশ করেছি। আনহারি দীপকের রুমের বিছানাতে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে সে। আমি কেবল ভাবতে লাগলাম এরপর কী হতে চলেছে। এটা কী ইতিবাচক দিকে যাবে নাকি নেতিবাচক দিকে? সে সাথে খুঁজতে লাগলাম সে লোকটিকে যে এ সময় আপার পেইন্টিং করা ছবিটা আমাকে পাঠিয়েছে। সে কী এ গ্রামেই আছে এখনও?
কতশত চিন্তা আমার মনে বাসা বাঁধছে। সে সাথে ভয় তো আছে। আর কিছু প্রশ্নের বেড়াজালেও আটকে যাচ্ছি। সব মিলে কেমন অশান্তি কাজ করছে আমার মনে। তবে আনহারিকে দেখে একদম তা লাগছে না। বেশ রিলাক্স হয়েই সে শুয়ে আছে। কপাল কুচকে চোখ বন্ধ করে রেখেছে সে। আপাও ঠিক এভাবে শুয়ে থাকত। আনহারির সাথে বড়ো আপার কত মিল। অথচ দুজনের জন্ম দুদেশে। দুজনের জন্মদিনেও ১৭ দিনের মতো ব্যবধান। এ দুজন জমজ হওয়া অকল্পনীয়। মাঝে মাঝে মনে হয় আনহারির ভেতরে আপার আত্মা ভর করছে। তবে সেটাও নিমিষে ভুল প্রমাণ হয় বিজ্ঞান এর দিক চিন্তা করলে।
সব মিলে এ বিষয় গুলো নিয়ে আমি যতই ভাবি ততই আমার ভেতরটায় একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে হাজার প্রশ্ন ঝেঁকে বসে।
আধা ঘন্টার মতো কেটে গেল। বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে লাগলাম। আমি কিছুটা অস্থির হয়ে বের হলাম। সাথে সাথে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠল। তাহলে কী আমরা হেরে যেতে চলেছি?
কপি করা নিষেধ।