বড়ো আপা পর্ব-২৫+২৬

0
71

#বড়ো আপা
#পর্ব-২৫
#শারমিন আঁচল নিপা

পায়েসে পটাশিয়াম সায়ানাইড পাওয়া গেছে। এটা সাধারণ কোনো যৌগ নয়। এটা খাবারের সাথে সেবন করলে মৃত্যু ঝুঁকি ৯৫ %। এটি বর্ণহীন। দেখতে লবনের মতো। খুব সহজেই খাবারের সাথে মেশানো যায়। আর মেশানোর পর খাবারের স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। গন্ধহীন হওয়ায় খাবারের ঘ্রাণেরও কোনো পরিবর্ত হয় না। এটা সহজে কেউ পাওয়ার কথা না। যেকোনো দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না। বড়ো বড়ো ঔষধের কোম্পানিগুলোতে এ যৌগ থাকে। অনেক সময় গহনার দোকানগুলোতেও এটা পাওয়া যায়। যে কেউ চায়লেও এটা হুট করে সংগ্রহ করতে পারবে না। আর এটা সেবনের সাথে সাথেই রিয়েকশন হয় না। ৫-১৫ মিনিট সময় নেয়। এরপর অজ্ঞান হয়ে যায় রোগী। এজন্যই আপার শ্বাশুড়ির পায়েস খাওয়ার সাথে সাথে কিছু হয়নি। একটু পর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

এটা অসম্ভব যে জটলা এটা মুহুর্তের মধ্যে সংগ্রহে করে খাবারে মিশিয়েছি। আর আনহারি পুরোটা সময় জুড়ে আমার সামনে ছিল। তাকে আমি রান্না ঘরে প্রবেশ করতে দেখিনি। সুতরাং এতটুকু আমি নিশ্চিত এটা আনহারিও খাবারে মেশায় নি। তবে মিশিয়েছে কে?

জটলাকে আপাতত পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। জটলাকে যখন পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল তখন আনজুমান পুলিশের পায়ে ধরে অনুরোধ করল তাকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। তার মায়ের এ অবস্থার জন্য সে দায়ী নয়। আর তারা কোনো অভিযোগও দায়ের করতে চায় না। দীপকও পুলিশকে একই কথা বলল। তবে আনহারি তার শ্বাশুড়ির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের জন্য একটা মামলা করেছে। যার দরুণ শত চেষ্টার পরও জটলাকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হলো না। পুলিশ জটলাকে ধরে নিয়ে গেলে আনজুমান আনহারির পা চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“আমার স্বামী ছাড়া এ দুনিয়ায় আমার আর কেউ নেই। আমার মেয়ে বাপ ছাড়া হবে। আমার থাকার মতো জায়গা নেই। বাপের বাড়িতে একমাত্র অবলম্বন আমার স্বামী। আমাদের মা, আমরা বুঝব বিষয়টি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা উঠিয়ে নাও প্লিজ। আমি বড়ো হয়ে তোমার পায়ে ধরছি। আমার মাথা গুজার ঠাঁই টা কেড়ে নিও না এভাবে। আমার সন্তানকে বাবা থাকা সত্ত্বেও এতিম করো না। আমি একটা এতিম মেয়ে হয়ে তোমার পায়ে ধরছি। মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের এত বড়ো ক্ষতি করো না দয়াকরে।”

আনজুমানের কথা শুনে আনহারি বেশ হেসে হেসেই বলল

“আপা এক স্বামী গেলে আরও স্বামী পাবেন। আপনার তো খুশি হওয়ার কথা। নতুন নতুন স্বামীর আদর পাবেন। দুনিয়ায় কী একটায় ছেলে! ছেলের অভাব নেই। আরও ছেলে পটিয়ে বিয়ে করে নেন। আপনার বাবা টাকা রেখে গেছে। টাকা ঢালুন অনেক কচি ছেলে চলে আসবে।”

আনহারির কথা শুনে আনজুমান রুষ্ঠ গলায় বলে উঠল

“একজন মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে এসব বলতে লজ্জা লাগছে না? তুমি কী মানুষ?”

আনহারি এবারও হেসে হেসেই জবাব দিল

“মানুষ ছিলাম। তবে অমানুষ তো বানিয়েছেন আপনারা। বারো বছর আগের কথা ভুলে গেছেন? এত সহজে সব ভুলে গেলে হবে? আপনি একজন মেয়ে হয়ে আমাকে এসব বলেছিলেন তখন কী আপনার বিবেকে বাঁধে নি?”

আনহারির কথা শুনে স্মৃতির পৃষ্ঠে চলে গেলাম বারো বছর আগে। আপার নামে শালিস বসেছে। আপাকে শালিসে তালাকনামা দেয়া হয়েছিল। তালাকনামাটা আনজুমানেই আপার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। তখন ঠিক আপা এভাবেই আনজুমানের পায়ে ধরে বলেছিল,

“মারেন কাটেন যাই করেন, স্বামী ছাড়া কইরেন না৷ আমার যে যাওয়ার জায়গা নেই। বাবা মা থাকতেও আমি এতিম। আমি সংসারটা করতে চাই। আপা আপনি তো জানেন আমি খারাপ মেয়ে না। আমার চরিত্রে সমস্যা নাই। এরা সবাই মিথ্যা বলছে আপনিই বলেন আপা। আপনি আমার সংসারটা ভাঙতে দিয়েন না। একটা মেয়ে হয়ে মেয়ের কষ্ট তো আপনি বুঝবেন আপা। দয়া করুন আমার উপর। আল্লাহর ওয়াস্তে আমি কোনো ভুল করলে মাফ করে দেন৷ আমার কলিজায় এভাবে আঘাত কইরেন না আপু৷ আমি আপনার ছোটো বোনের মতো। আমার সাথে এত বড়ো অন্যায় করতে দিয়েন না। দীপক ছাড়া আমার জীবনে কেউ নাই।”

তখন আনজুমান লাথি দিয়ে আপাকে পা থেকে সরিয়ে বলেছিল

“তোর মতো মেয়ের পোলার অভাব হবে নাকি! একটা গেছে আরও পাবি। নতুন নতুন পোলার সঙ্গ পাবি। তোর তো খুশির দিনেই আসছে।”

আপা ঠিক আনজুমানের মতোই অবাক হয়ে বলেছিল।

“একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে এভাবে বলতে খারাপ লাগল না?”

আনজুমান তখন মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল। আজকে যেন সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। শুধু চরিত্রের বিপরীত প্রতিফলন ঘটেছে। কীভাবে যেন আপার অত্যাচারীরা ঠিক আপার মতোই শাস্তি পাচ্ছে। আনজুমানের এ হাল দেখে আজকে মনে ভীষণ শান্তি লাগছে। আনজুমান এবার নড়ে চড়ে বসলো। আনহারির পা ছাড়িয়ে গুটিসুটি মেরে রইল। তারপর আবার বলল,

“আমি সে সময়টায় ভুল করে ফেলেছি। মানুষেই তো ভুল করে অনন্যা। আমি তো ভুল করে ফেলেছি এখন তো চায়লেও শুধরানোর সুযোগও নেই। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি নিজেও তো তাদের হাতে জিম্মি ছিলাম। স্বামীর কিছু ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে বাপের বাড়ি থাকি। এখন যদি মা, ভাইয়ের কথা না শুনতাম তাহলে তো আমাকেও বের করে দিত। নিজের পায়ের মাটি শক্ত করতেই আমি এমনটা করেছি।

আনহারি মাটিতে থুথু ফেলে বলল

” যে স্বামীর আপনাকে খাওয়া পরার ব্যবস্থা করার সাহস নেই। শ্বশুড় বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে বাহাদুরি করে। সে স্বামীর জন্য কাঁদছেন? যে স্বামীর জন্য মা ভাইয়ের বা/ন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে সে স্বামীর জন্য আপনার এত মায়া লাগছে? যার চরিত্রের ঠিক নেই তাকে আপনি বাঁচাতে চাচ্ছেন? তার জন্য আপনার এত মায়া? আর আমি কিছুই করিনি, তখন আমাকে আপনিই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছেন। তখন তো একটা মেয়ে হেয়ে মেয়ের পাশে দাঁড়াতে পারতেন। আপনি নিজেও একজন নিকৃষ্ট মহিলা। আমি এ মামলা তুলব না। আপনার স্বামী ফাতেমাকেও খুন করেছে সেটা আপনাদের আড়াল হলেও আমার আড়াল হয়নি। ”

আনজুমান কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“ফাতেমা খুন হবে কেন? তিনমাস আগেও তার সাথে আমার দেখা হয়েছে।”

“দু মাস আগে আপনার স্বামী ফাতেমাকে খুন করেছে৷ ফাতেমার সাথে আপনার স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক এ পর্যন্ত বহাল ছিল। তাদের ঘরে চার বছরের একটা ছেলে সন্তানও আছে। এতদিন সংসারটা সবার আড়ালে গিয়ে করেছিল। তিনমাস আগে ফাতেমা এসেছিল নিজের অধিকার আদায় করে নিতে। আপনার স্বামী তাকে কোনো রকম বুঝ দিয়ে পাঠিয়েছে। তার সাথে যে ছেলে সন্তান ছিল সেটা আপনার হাসবেন্ডের। ফাতেমা চলে যাওয়ার তিনদিন পর ফাতেমার ছেলেকে আপনার স্বামী বোর্ডিং এ ভর্তি করায় আর ফাতেমার লাশ পাওয়া যায় নদীতে। ফাতেমার পরিচিত এ দুনিয়ায় ঐরকম কেউ না থাকায় ফাতেমার লাশটা বেওয়ারিশ বলে দাফন করা হয়।
এমন একটা মানুষের জন্য কাঁদছেন? যে আপনাকে দিনের পর দিন ঠকিয়েছে।”

আনজুমান বসা থেকে শুয়ে পড়ল। বাচ্চাদের মতো গড়াগড়ি করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল

“আমি এটা বিশ্বাস করি না। এটা কোনোভাবেই সম্ভব না।”

দীপক এবার রেগে গিয়ে আনহারির কাছে এসে বলে উঠল,

“মনগড়া গল্প বলে আপাকে কষ্ট দিচ্ছ কেন তুমি? তোমার নাটক গুলো বন্ধ করবা? ফাতেমাকে যে দুলাভাই মেরেছে তার কী প্রমাণ আছে তোমার? আর ফাতেমার বাচ্চা যে দুলা ভাইয়ের সেটার কোনো ভিত্তি আছে?”

আনহারি অট্ট হাসলো। অট্ট হেসে এবার যা বলল তা শুনে আমার হাত পা রিতীমতো কাঁপছে।

#বড়ো আপা
#পর্ব-২৬
#শারমিন আঁচল নিপা

“বানিয়ে বানিয়ে আমি আরও গল্প বলতে পারব। যেটা কি’না সত্য হয়ে যাবে। আমার আগে আপনার দুটো স্ত্রীর মধ্যে একজনকে কীভাবে খুন করেছেন। এরপর তৃনাকে কীভাবে খুন করেছেন। আর ফাতেমার লাশ গুম করতে কীভাবে সাহায্য করেছিলেন সেটাও কী বর্ণণা করব? সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। আচ্ছা আপনি হেলেনাকে চেনেন তো?”

হেলেনা নামটা শুনতেই দীপকের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল। ভয় ভয় গলায় জিজ্ঞেস করল

“তুমি হেলেনাকে চেনো কী করে?”

আনহারি এবার হেসে জবাব দিল

“ঠিক সেভাবেই চিনি যেভাবে আপনি চেনেন। বেশি কথা বাড়াবেন তো আরও গর্তে পড়বেন। এখানেই থেমে যান। এবার বিশ্বাস হচ্ছে তো আনজুমানকে কোনো মিথ্যা বলিনি। এত সহজে মিথ্যা বলা আমার কাজ না। আমি যা বলি একদম সত্য। আর সত্য দিয়েই আমি সবটা জয় করব।

দীপক এতগুলো খু/ন করেছে এটা শুনতেই আমার কেমন যেন লাগছে। এ মানুষটাকে দেখে অমানুষ লাগলেও খুনী লাগে না। মানুষকে বাইরে দেখে কিছুই বিবেচনা করা যায় না, কে কেমন। আনজুমান ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। আনজুমানের মেয়ে পাশেই বসে আছে। সে যেন কিছুই বুঝছে না। ঠান্ডা পাথরের মতো মায়ের কান্না দেখছে। এ মুহুর্তে তার কী করা উচিত সেটা সে বুঝছে না। আনহারি এবার আনজুমানের কাছে গিয়ে বলল

“দীপক যখন আমাকে ঠকিয়েছিল ঠিক এমন কষ্ট আমারও হয়েছিল। আমি পরে পরে কেঁদেছিলাম। হা হুতাশ করেছিলাম। চিৎকার করেও কেঁদেছিলাম। আপনাদের কাছে এসে কত হাত জোড় করে বলেছিলাম একটু যেন আপনার ভাইকে বুঝান। সেদিন আপনি বলেছিলেন ছেলেরা একটু এমনেই হয়। এতে দোষের কী। ঘরের বউ যদি চাহিদা মেটাতে না পারে তাহলে তো পরের বউয়ের কাছে যাবেই। ছেলেরা এমন না হলে নাকি সে ছেলে, ছেলেই না।

আমার আর্তনাদ সেদিন শুনেননি আপনি। আজকে তো আমিও বলব আপনি হয়তো আপনার জামাইয়ের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারেননি তাই ফাতেমার কাছে গিয়েছিল। পুরুষ লোকের কোনো দোষ হয় না। তাহলে জটলাও খারাপ মানুষ না। আর সকল পুরুষ খারাপও না। তবে আপনার বাড়িতে থাকা সকল পুরুষ জাত খারাপ। আর এটা আপনাদের মানতে কষ্ট হওয়ার কথা না। ছোটো থেকেই তো এসব দেখে আসছেন। আপনার বাবাকে দেখেছেন। আপনার বাবা কীভাবে আপনার মাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছিল। সে ঘরেও তো আপনাদের একটা বোন আছে। সেই মহিলাকে কীভাবে আপনারা অত্যাচার করেছিলেন ভুলে গেছেন? সেদিন তো আপনার বাবাকে শাস্তি দেননি, দিয়েছিলেন সে মহিলাকে। আর সে মহিলা আপনাদের পায়ে হাত দিয়ে জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল, দেননি। তার কী দোষ ছিল বলুন তো? সে তো জানত না আপনার বাবার আরেকটা পরিবার আছে। অথচ তবুও তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে। আপনারা সবসময় নিজের পুরুষের দোষ না দেখে অন্য মেয়ের দোষ দেখেছেন। এখন নিজের বেলায় সেটা কেন মানতে পারছেন না? পরের খারাপ করলে আল্লাহ সেটা কোনো না কোনোভাবে ফিরিয়ে দেন। আর আপনার সৎ বোনের কী হাল সেটা নাহয় আরও পরে বলব। আপাতত এতটুকু শোক সইতে থাকুন। আপনার জীবনের যন্ত্রণা তো কেবল শুরু। আমি অনন্যা যতদিন বেঁচে থাকব আপনাদের আমি তিলে তিলে মারব।”

কথাগুলো বলেই আনহারি রুমে চলে গেল। এদিকে আমার কাছে সব কিছু এলোমেলো লাগছে। কপাল জুড়ে আমার কয়েস্ত ভাঁজ জমেছে। হার্টবিট ক্রমাগত বাড়ছে৷ হাত, পা ও কখন থেকে কাঁপছে। আনহারি এ পরিবারের এত গোপন তথ্য কীভাবে জানে সেটাই জানার জন্য আমার মনটা উদগ্রীব হয়ে আছে। এত অল্প সময়ে এত বিশেষ বিশেষ তথ্য কারও জানার কথা না। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না এটা আনহারি। আমার মন কেবল এটাই বলছে এ অনন্যা। হ্যাঁ এটাই আমার বোন অনন্যা। আমার বোনের সাথে এত মিল আনহারির হওয়ার কথা না। হয়তো বারো বছর আগে আনহারিই মারা গেছে। আর এ বারোটা বছর যাবত অনন্যা আনহারি হয়েই সকল তথ্য সংগ্রহ করেছে। আমি তার জীবনে না আসলেও সে হয়তো এ বাড়িতে এসে প্রতিশোধ নিত। কিন্তু কাহিনিটা রেলগাড়ির বগির মতো চলছে তাই একটা বগি আরেকটা বগির সাথে না চায়তেও জুড়ে যাচ্ছে।

আনজুমানের কান্না যেন থামছেই না। সে মেঝে থেকে উঠে ঘরে গিয়ে হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদছে। কেন জানি না আনজুমানের এ কান্না আমাকে ভীষণ শান্তি দিচ্ছে। আপার কান্না মুখটা যতটা কষ্ট আমাকে দিয়েছিল ঠিক ততটা সুখ আনজুমানের কান্না আমাকে দিচ্ছে। দীপক তার রুমে চলে গেল। পিয়ালি আর এসবের মধ্যে আসেনি। আমি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে আনহারির কাছে গেলাম। আনহারি মেবাইল চাপছে। আমি তার পাশে বসতেই বলল

“কিছু খাবে?”

আমি মাথা নেড়ে না বলে বললাম,

“কে রান্না করবে আপু। রান্না করার মতো কেউ তো নেই। শুকনো খাবার দিয়েই চলে যাচ্ছে। আপাতত কিছু লাগবে না।”

আনহারি হেসে জবাব দিল

“কে রান্না করবে মানে? আনজুমান রান্না করবে। আর তুমি দাঁড়িয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করবে। আমি আনজুমানকে বলছি।”

কথাটা বলেই আনহারি তার রুম থেকে বের হয়ে আনজুমানের কাছে গিয়ে বলল

“যা আছে ঘরে রান্না করুন। আমাদের অনেক ক্ষুধা লেগেছে।”

আনজুমান কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল

“এ অবস্থায় রান্না করব আমি?”

“আপা ভালোই ভালোই বলছি গিয়ে রান্না করুন। এরকম হাজারটা যন্ত্রণা চাপা দিয়ে আপনাদের রান্না করে আমি খাইয়েছি আপনিও পারবেন। এ বাড়িতে বা/ন্দি হয়ে থাকতে পারলে থাকুন নাহয় বের হয়ে চলে যান।”

অসহায় কণ্ঠে আনজুমান বলে উঠল

“আমার তো যাওয়ার জায়গা নেই। কই যাব?”

“তাহলে বা/ন্দি হয়ে থাকুন। যান গিয়ে রান্না করুন। ফিয়না সবটা পর্যবেক্ষণ করবে। তা না হলে কী থেকে কী মিশিয়ে দিবেন বলা তো যায় না।”

আনজুমান আর কথা বাড়াল না। সুরসুর করে উঠে রান্না ঘরে গেল। ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে ভেজালো আর ভাত বসালো। সাথে টুকটাক যা কাটা লাগে সেগুলো কেটে নিল। রান্না করায় পুরোদমে মনেযোগ দিল। বারো বছর পর এমন বিপরীত পরিবর্তন দেখতে পারব কল্পনাও করিনি। আজকে ভীষণ শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে আপার সাথে করা সকল অন্যায়ের প্রতিশোধ আমি নিতে পারছি। আপার আত্মা একটু হলেও শান্তি পাবে।

আনহারি তরীকে কিছু চকলেট দিলো খাওয়ার জন্য। সবার সাথে কঠোর হলেও তরীর প্রতি আনহারি বেশ কোমল। সত্যি বলতে বাচ্চাটার কেনো দোষ নেই। বাবা মায়ের শাস্তি তো বাচ্চাকে দেওয়া যায় না।

রান্না শেষে আনজুমান তার রুমে চলে গেল। আমি, আনহারি আর তরী খেতে বসেছি। তরী আনহারির বেশ ভক্ত হয়ে গেছে। আমরা খেতে বসতেই দীপক আর পিয়ালি এসেছে খেতে। দীপক যখনেই খেতে বসতে নিবে তখনই আনহারি বলে উঠে

“নিজের খাবার নিজে রান্না করে খান। এখানে কেবল আমাদের খাবার। আপনাদের জন্য রান্না হয়নি।”

দীপক এবার ক্ষেপে গিয়ে বলল

“অনন্যা তুমি কিন্তু বেশি বাড়বাড়ি করছো। আমি কিন্তু এসব আর মেনে নিব না। ভীষণ বাজে হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা। সবাই তোমাকে ভয় পেলেও আমি পাই না।”

আনহারি হেসে জবাব দিল

“কাল সকালে আরও বাজে হবে ব্যাপারটা। সকালটা হতে দিন শুধু। ”

আনহারির কথা শুনে আমি ভাবতে লাগলাম সকালে কী এমন চমক তৈরী করে রেখেছে সে, উপর ওয়ালা ভালো জানেন।

আনহারির কথা শুনে দীপক আর কথা বাড়ালো না। নিজের ঘরে পিয়ালিকে নিয়ে চলে গেল। আমরা খাওয়া শেষ করে নিজেদের রুমে আসলাম।

এদিকে জটলাকে অফিসারের মাহিদের সামনে আনা হয়েছে জিজ্ঞসাবাদ করার জন্য। জটলাকে নানান ভাবে অফিসার মাহিদ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আর সে জিজ্ঞসাবাদের জের ধরে এমন তথ্য বের হয়ে এসেছে যা শুনে আমি বিশ্বাসেই করতে পারছিলাম না। সত্যিই কী এমনটা হয়েছে। আনজুমানও স্তব্ধ হয়ে গেল তা শুনে। নিজের স্বামীর এ স্বীকারোক্তি সে মানতে পারছে না। ফেরেশতার মতো স্বামীর এ রূপ দেখবে সে ভাবতেই পারছে না।

এমন সময় মা কল দিল। মায়ের কল ধরতেই মা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল

“তোর বাবা আত্মহত্যা করেছে।”

মায়ের মুখে এমন কথা শুনে আমার বুক কাঁপতে লাগল।

কপি করা নিষেধ

শারমিন নিপা
শারমিন আক্তার