বড়ো আপা পর্ব-২৯+৩০

0
67

#বড়ো আপা
#পর্ব-২৯
#শারমিন আঁচল নিপা

ফাতেমার ব্যাপারে জটলা মুখ খুলেছে। দ্বিতীয় জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণণা করেছে কীভাবে সে ফাতেমাকে খুন করেছে এবং সে সাথে এক জটিল রহস্যের আভাস দিয়েছে। তার ভাষ্যমতে

“ফাতেমা মেয়েটা তেমন ভালো ছিল না। আমার শ্বশুড়বাড়িতে কাজ করত। আমি এবং আমার শ্যালক দুজনের সাথেই তার সম্পর্ক ছিল। একটা মেয়ে নিজে থেকে সব দিলে কোনো পুরুষ উপেক্ষা করতে পারবে বলুন? তাই আমিও পারিনি। ফাতেমা আমার নিকট ভোগের পণ্যই ছিল। একদিন আনজুমান সব জেনে যাওয়ায় তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ফাতেমার সাথে আমার বেশ অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু ফাতেমায় চেয়েছিল আমি আবার যোগাযোগ করি। আমি তাকে উপেক্ষা করতে পারিনি। এরপর আমাদের সম্পর্ক আবার শুরু হয়। সম্পর্কের একটা পর্যায়ে ফাতেমা বাচ্চা সম্ভাবা হয়। আমি সেটা জানতাম না। আমাকে ইচ্ছা করেই জানানো হয়নি। পাঁচমাস পর জানতে পারি। এরপর চাইলেও বাচ্চা নষ্ট করার উপায় ছিল না। ফলবরূপ বাচ্চাটা জন্ম দেয় সে। একটা ফুটফুটে ছেলে হয় ফাতেমার । আমার একটা মেয়ে আছে। এ ছেলেটা হওয়ায় আমার ভীষণ মায়া জন্মায় যখন আমি তার মুখ দেখি। নিজের সন্তান বলে কথা। মায়া তো হবেই। আমি ফাতেমাকে বলেছিলাম বাচ্চার দায়িত্ব আমি নিব তবে বিয়ে করতে পারব না। ফাতেমা তাতে রাজি হয়।

এভাবে কেটে যায় চারটা বছর। কিন্তু নাছোর বান্দা ফাতেমা তা মেনে নিতে পারছিল না বেশিদিন। দিনের পর দিন তার চাওয়া বাড়তে থাকে। সে বারবার বিয়ে করো, বিয়ে করো বলে মাথা খেতে লাগল। ওকে বিয়ে করলে আমি সব কিছু হারাতাম। আরামের জীবনটা আমার নষ্ট হয়ে যেত। তাই বারবার বুঝালাম তাকে। বুঝলো না। এক পর্যায়ে সে আমার শ্বশুড় বাড়িতে উঠে পড়ল। আমি সেদিন কোনোরকম আশ্বাস দিয়ে তাকে বিদায় করি।

এরপর বুঝতে পারলাম বিষয়টি খারাপ দিকে মোড় নিবে। আর সে আমার পথের কাটা। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম পথের কাটাকেই সরিয়ে দিব। তাই তাকে বুঝ দিলাম বিয়ে করলে ছেলের আড়ালে করতে হবে। নাহয় ছেলের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। আর ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে বোর্ডিং এ দেওয়ায় বেস্ট। সে আমার কথায় পটে গেল। আমি বিয়ে করব এটাতেই সে ভীষণ খুশি ছিল।

আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলেকে বোর্ডিং এ দিয়ে আসি। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি ফাতেমাকে খুন করতাম পরদিন। কিন্তু আমি নিজেও জানি না কী হয়েছিল সেদিন। ছেলেকে বোর্ডিং এ দিয়ে রুমে আসার পর লক্ষ্য করলাম ফাতেমা মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। উল্লেখ্য যে আমরা একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। তার মুখটা এব্রোথেব্রো হয়ে গেছে। কেউ হয়তো শক্ত বলিষ্ঠ ধারালো জিনিস দিয়ে আঘাত করেছে। গলায় দাগ দেখে বুঝতে পারলাম গলায় কিছু একটা পেঁচিয়ে তাকে খুন করেছে।

আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। মাথায় শুধু ঘুরছিল কে খুন করলো? কেন করলো? পুলিশকে খবর দেওয়ার সাহসও হলো না। কারণ আমার দিকে আঙ্গুল উঠত। এটা নিশ্চিত খুনটা আমি করিনি। ঐ সময়টায় আমি সেখানে ছিলামেই না। ছেলের বোর্ডিং স্কুলে ছিলাম। নিজেকে বাঁচাতে এবার আমি কোনোরকম লাশটা সুটক্যাসে ঢুকালাম। এত বড়ো একটা মানুষ ছোটো সুটক্যাসে আটকাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে হাড়গুলো ভেঙ্গে সুটক্যাসে ভরি। তারপর এটা নিয়ে রাতের আধাঁরে দূরের একটা নদীতে ফেলে দিই। বাড়িওয়ালাকে বাসার ভাড়া দিয়ে জিনিসপত্র সব দিয়ে দেই। এবং বলি আমরা নিজেদের বাসায় উঠব ঐখানে সকল জিনিসপত্র নতুন কিনব। আর কাপড়চোপড় যা ছিল তা নিয়ে পুড়িয়ে ফেলি জঙ্গলে।

এরপর জানতে পারি পুলিশ তার লাশ পেয়েছে। সেদিন আমার বুক ভীষণ ধুকধুক করছিল। তবে আমি জানতাম ফাতেমার কোনো পরিচিত এখানে নেই। যে পুলিশ স্টেশনে পেয়েছে সেটাও কয়েক থানা পর। তাই একটু চিন্তামুক্ত রাখলাম নিজেকে। এদিকে পুলিশ ফাতেমার লাশকে বেওয়ারিশ ঘোষণা করে দাফন করে দিল।

বিশ্বাস করুন ফাতেমাকে খুন করার পরিকল্পনা ছিল আমার তবে আমি খুন করিনি। কে করেছে আমি জানি না। এখনও সেটার সমীকরণ আমি মেলাতে পারছি না। মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো কোনো আত্মা আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমাদের এভাবে কপোকাঁত করছে।

আনহারির মুখে এ বর্ণণা শুনে আমার মনেও প্রশ্ন জাগল ফাতেমাকে কে খুন করেছে? তাহলে কী এমন কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি আমাদের মাঝে আছে যে আমাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছে কিন্তু আমরা তাকে ধরতেও পারছি না।

এদিকে রাত হয়ে গেল। বাবার লা/শটা কালকে আমাদের হস্তান্তর করা হবে। মাকে বেশ বিষন্ন লাগছে। কিন্তু আমার কেন জানি না একদম খারাপ লাগছে না। মনে হচ্ছে যা হয়েছে হয়তো ভালো হয়েছে। সামনে যা হবে হয়তো ভালোর জন্যই হবে।

এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ ভরে ঘুম চলে আসলো। সকালে ঘুম ভাঙলো পুলিশের ডাকে। পুলিশ এসেই মাকে এরেস্ট করলো। কেন এমন করলো কিছুই প্রথমে বুঝতে পারি নি। হঠাৎ করেই মাকে ধরে নিয়ে থানায় নিয়ে গেল।

এদিকে আমিও পিছু পিছু গেলাম সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য। আর সে তথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে আমার ভেতরে থাকা সকল বিশ্বাস ধুলোয় মিশিয়ে গেল। সত্যি বলতে চোখে যা দেখা যায় তার আড়ালেও অনেক কিছু থেকে যায়। যা আমরা চাইলেও হুট করে দেখতে পারি না। আমার মা তার স্বামীকে আর আমার বাবাকে খুন করেছে। খুনের বর্ণণা আর কারণ যখন বলল সেটা শুনে আমার কেবল যন্ত্রণা বাড়তেই লাগল। মাকে পুলিশ অফিসার আমার সামনেই জিজ্ঞাসাবাদ করে। মাকে প্রথমেই একটা চেয়ারে বসানো হয়। চেয়ারটির এপাশে মা ওপাশে পুলিশ। মাঝখানে একটি টেবিল। টেবিলে একটি গ্লাস রাখা তবুও সেটা অর্ধপূর্ণ। মাকে বসিয়ে তিনি সাধারণ গলায় জিজ্ঞেস করলেন

“আপনার স্বামীকে কেন খুন করেছেন? আর কীভাবে খুন করেছেন?”

মা প্রথমবার সব অস্বীকার করে। কিন্তু পুলিশ অফিসার যখন মাকে কঠোর গলায় আবার জিজ্ঞেস করে মা গড় গড় করে সব বলতে থাকে। মা একটু ভীতু স্বভাবের ছিল সবসময়। এখনও তার প্রতিফলন ঘটল। কোনোরকম গায়ে হাত তুলার আগেই মা সব বলে দিল। মায়ের বয়ান,

“রাত বারোটায় সবসময়ের মতো কাজ শেষ করে আমার স্বামী বাসায় আসে। আমি তাকে রোজকার রুটিনে খাবার দিই। লক্ষ্য করলাম তিনি একটু মনমরা হয়ে বসে আছেন। আমি বিষয়টি খেয়াল করে তার কাঁধে হাত দিতেই তিনি রেগে গেলেন। আমাকে তার মোটেও সহ্য হচ্ছিল না। আমার সাথে এমন কেন করছে এটার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে আমার জীবনের এক গোপন সত্য উদঘাটন করে।”

কথাটা বলেই মা একটু থেমে গেল। পুলিশ অফিসার মাকে আবারও জিজ্ঞেস করলেন,

“কী গোপন সত্য?”

মা আস্তে গলায় বলল,

“আমিই আমার বড়ো মেয়ের খুনে জড়িত ছিলাম। আমার বড়ো মেয়েকে বেশ আশা নিয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম বড়ো ঘরে। ভেবেছিলাম আমাদের অভাব গুচবে। দিনশেষে সেই মেয়েই আমাদের বোজা হয়ে ঘরে ফিরে এলো। এ ভার সহ্য করা অনেক কষ্টদায়ক ছিল। একদিন লক্ষ্য করলাম আমার মেয়ে অনন্যা বের হয়ে কোথায় যাচ্ছে। রাত তখন ৪ টা। আমিও তার পিছু নিলাম।

পিছু নিতে নিতে চলে গেলাম অনন্যার শ্বশুর বাড়ির জাম গাছ তলায়। সেখানে অনন্যা কারও সাথে কথা বলছিল। তবে কার সাথে বুঝতে পারছিলাম না। এক সময় তাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক চলে। আর একটা পর্যায়ে মনে হলো কেউ অনন্যার মুখ চেপে ধরেছে। তবে আমার বুঝায় ভুল ছিল তারা অনন্যার মুখ নয় গলা চেপে ধরেছিল শক্ত দঁড়ি দিয়ে৷ অনন্যার কেনো আওয়াজ না পেয়ে সামনে এগুতেই খেয়াল করি অনন্যা মাটিতে লুটিয়ে আছে। আমি একটা চিৎকার দিতে নিলে অনন্যার ননদের জামাই আমার মুখ চেপে ধরে৷ আমাকে দুটো অপশন দেয়া হয়, এক সবটা লুকিয়ে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নিতে নাহয় প্রাণ বিসর্জন দিতে অনন্যার মতো।

আমি ভীষণ ভীতু প্রকৃতির হওয়ায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এদিকে অভাবের সংসার ছিল, টাকাটার দরকার ছিল৷ লোভ আমাকে ঝেঁকে বসে। ভাবলাম মেয়ে তো আর ফেরত পাব না। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। তাই পাঁচ লাখ টাকার প্রস্তাবটা গ্রহণ করে চলে আসি।

সেদিন আমি আমার মেয়ের খুন হয়েছে জেনেও প্রতিবাদ করিনি। বরং চেপে গিয়েছি।

এটা বারো বছর পর জানতে পেরে আমার স্বামী আমার সাথে বেশ অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং পরদিন পুলিশে গিয়ে সবটা বলে দিয়ে জেল খাটানোর হুমকি দেয়। আমি সেটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারিনি। কারণ পাঁচলাখ টাকা খেয়ে যদি জেলে যেতে পারতাম তাহলেও মানতে পারতাম। যেখানে আমি পাঁচ লাখের পাঁচ আনাও পাইনি। শুধু মাত্র তাদের মিথ্যা আশ্বাসে নিজের সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়েছি। সেজন্য জেল খাটতে হবে শুনে আমার মনটা হঠাৎ হিংস্র হয়ে উঠে। সে সাথে সারাজীবন জেলে পঁচে মরতে হবে এটা ভাবতেও পারছিলাম না। জীবনে অনেক অভাবের কষ্ট সহ্য করেছি। নতুন করে কোনো কষ্ট সহ্য করতে চাচ্ছিলাম না।

আমি তার মাথার পেছনে রুটি বেলার বেলোন দিয়ে জোরে আঘাত করি। সাথে সাথে সে মাটিতে লুটিয়ে যায়। এবং নিস্তেজ হয়ে যায়। পরে খুব কষ্ট করে তাকে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেই।

মায়ের কথা শুনে পুলিশ অফিসার আমির চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ । এ কেইসটা পুলিশ অফিসার আমিরের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। তিনি বলে উঠলেন,

“আপনার স্বামীর মৃত্যু আপনার আঘাতের জন্যই হয়েছে। কী পেলেন জীবনে বলুন। না পেলেন স্বামীকে না পেলেন সন্তানকে। আপনি কী ভেবেছিলেন খুন করে পার পেয়ে যাবেন? পুলিশ কিছুই টের পাবে না? বুঝতে পারবে না? সবটা গোপনেই থাকবে! সত্য কখনও চাপা থাকে না। বারো বছর আগের সত্যও বের হয়ে চলে এসেছে। এবার বুঝুন সত্যের কতটা পাওয়ার। নিজের স্বামীকে খুন করাটা বেশ স্বাভাবিক কেইস। তবে নিজের সন্তানকে খুন করার কেইসটা বেশ মর্মান্তিক। আচ্ছা আপনার বুক কাঁপে নি নিজের সন্তানের খু’নিরা যখন ঘুরে বেড়িয়েছে আর আপনার সন্তান কবরে গিয়েছে।”

সে প্রশ্নের উত্তরে মা যা বলল তা শুনে আমার যন্ত্রণা আরও বাড়তে লাগল। এগুলো শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

#বড়ো আপা
#পর্ব- ৩০
#শারমিন আঁচল নিপা

“অনন্যা আমার স্বামীর মেয়ে না। অনন্যার বাবা ছিল আরেকজন। এ বিয়ের আগে আমার আরেকটা বিয়ে হয়েছিল। সে স্বামী হুট করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তাকে কোনোভাবেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এ পর্যন্ত তার খোঁজ মেলে নি। সে সময়টা অনন্যা পেটে আসে। আমার জীবনটায় যেন অমাবস্যা নেমে আসে। এ বাচ্চা নিয়ে কী করব? কীভাবে চলব? সেটাই অনেক বড়ো চ্যালেন্জ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। মা বাবার একটা মেয়েই আমি ছিলাম। আর আমার একটা ভাই আছে আমার ছোটো। সে বর্তমানে দুবাই থাকে। বেশ আদরে বড়ো হই আমি। সন্তান পেটে আসায় পরিবার সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। সন্তানের পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন উঠার সম্ভবনা ছিল। তাই বাবা,মা, ভাই আমাকে ফিয়নার বাবার কাছে বিয়ে দেয়। ফিয়নার বাবা অনেক দরিদ্র ছিল তাই আমাকে বিয়ে করে। তবে ফিয়নার বাবা আমার সন্তানের ব্যাপারে কিছুই জানত না। আমি তখন দু মাসের অন্তস্বত্ত্বা ছিলাম। বিয়ের এক মাস পরে ফিয়নার বাবাকে বলি বাচ্চা পেটে আসে আমার। সে অনেক খুশি হয়েছিল। প্রথম সন্তান ছেলে বা মেয়ে নিয়ে তার কোনো অসন্তুষ্টি ছিল না। তাই অনন্যার জন্ম নিয়ে তার খুশি অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ফিয়নার জন্মতে সে তেমন খুশি ছিল না। কারণ পর পর দুটো মেয়ে সে মানতে পারছিল না। সংসারের একটা প্রদীপ হিসেবে সে ছেলে আশা করেছিল।

এদিকে সন্তান আগে জন্ম নেওয়াতে তাকে বুঝানো হয় আমার সমস্যার জন্য বাচ্চা আগে হয়ে গিয়েছে। যেহেতু আমার বাচ্চা বাবার বাড়িতে হয় তাই আসল রহস্য সে এখনও উদঘাটন করতে পারেনি। মৃত্যুর আগে অবশ্য তাকে সত্যটা জানিয়ে ছিলাম আমি। কারণ মরে যাওয়ার আগে সকল সত্যি জেনে মরলে তার আত্মা হয়তো শান্তি পাবে। এ ধারণা নিয়েই তাকে সত্যিটা জানিয়েই শক্ত বেলুন দিয়ে আঘাত করি।

যতদিন বাবা, মা ছায়া হয়ে ছিল ততদিন আমি আর্থিক কষ্ট পাইনি। আমার কষ্ট শুরু হয় বাবা, মায়ের মৃত্যুর পর। ভাইও তখন বিয়ে করে পর হয়ে যায়। আমি কখনও এত খাদ্যাভাবে ভুগিনি। সে সময়টায় যতটা ভুগেছি। আর এর মূল কারণ ছিল অনন্যা। অনন্যা পেটে না আসলে আমার জীবনের এ হাল হত না। রঙিন থাকত। অনন্যার জন্যই আমার এমন পরিবারে বিয়ে করতে হয়েছে৷ তাই ছোটো থেকেই অনন্যাকে আদর করলেও আমার ভীষণ ক্ষোভ ছিল তার উপর। সে ক্ষোভের জন্যই হয়তো বিয়ের পর তার কষ্ট দেখে আমার কষ্ট লাগত না। আমার মনে হত আমি যদি তোর জন্য এত কষ্ট ভুগ করে নিতে পারি তুই কেন পারবি না। এ সব মিলিয়েই পূর্বে থেকে জিইয়ে থাকা রাগটা চলে আসে আমার মনে। তাই অনন্যার মৃত্যু আমাকে ততটা আঘাত করেনি। আমার জীবনে স্বচ্ছলতা দরকার ছিল৷ একটু আরামের দরকার ছিল। সেটা আমি পাইনি। এ না পাওয়া আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।

অফিসার আমির মায়ের কথা শুনে বলে উঠল

“এবার জেলে গিয়ে আরাম আয়েশ কইরেন। যতই হোক নিজের সন্তান ছিল। আপনার স্বামী অনন্যার বাবা ছিল না তবুও তার প্রতি কত মায়া ছিল। নিজের মেয়ের মতো কত ভালোবাসত। বেচারা জানতই না অনন্যা তার মেয়ে না। মেয়ের লাশ নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চোখের জল ফেলেছে। এরকম স্বামীকে মাথায় করে রাখা দরকার ছিল খুন করা না। আপনার নিজের ভুলের জন্য একটি নিরীহ প্রাণ কেড়ে নিলেন।”

মায়ের স্বীকারোক্তি শুনার পর আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। অনন্যার প্রতি বাবার যেটা ছিল সেটা হলো মায়ার টান রক্তের টান না। অনন্যার প্রতি আমার যে টান সেটাও মায়ার টান। আর মায়ের ছিল নাড়ির টান। মায়ার টানের কাছে নাড়ির টানটাও ছোটো হয়ে গেল।

আমি কেবল মায়ের কাছে গিয়ে বললাম

“বাবার নামে এত বড়ো বড়ো মিথ্যা কাহিনি সাজানোর সময়ও তুমি বেশ সাবলীল ছিলে। তুমি টাকা লোভী অনেক আগে থেকেই ছিলে। আর দেখো সে টাকার লোভ তোমাকে কত নীচে নামিয়ে দিল। আর আমাকে এতিম করে দিল। বাবার কী দোষ ছিল বলো? কী দরকার ছিল বাবাকে শেষ করে দেওয়ার। সত্য কী চেপে রাখতে পেরেছো? এই অনন্যার জন্য বাবা মানুষের কাছে ভিক্ষা চেয়েছে এক বিন্দু জায়গা শুধু দাফন করার জন্য। দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে কেঁদেছে। এ অনন্যা তোমার জন্য কম করে নি মা। যখন আমাদের সাথে ছিল পড়ার পাশাপাশি তোমাকে সহায্য করত। টিউশন করে যা টাকা পেত তোমার জন্য শাড়ি আনত গহনা আনত। বাবার জন্য আনত না, তেমন। সব ভুলে গেলে মা? টাকার কাছে তুমি অনন্যার প্রাণটা বিক্রি করে দিলে? এতটুকু বিবেকে বাধলো না?”

আমি এসব বলতে বলতেই কেঁদে দিলাম। আমজাদ চৌধুরির আর মালিহার সাথে সাথে বাবার মৃত্যু রহস্যও বের হয়ে আসলো। তবুও রহস্যের সমাপ্তি হলো না। সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে। এখনও ধোয়াশায় আছি আনহারি কে আর অনন্যা কে এটা ভেবে। ফাতেমাকে কে খুন করেছে। পটাসিয়াম সায়ানাইড কে মিশিয়েছে। কে আমাকে পেইন্টিং টা পাঠিয়েছে। সবকিছুই এখনও ধোয়াশায় আছে।

সে সাথে আরও মাথায় ঘুরছে, হেলেন কে? দীপকের সাথে তার কী সম্পর্ক। তৃনার কী হয়েছে? সব মিলিয়ে বেশ অশান্তি কাজ করছে আমার মনে। এ শহরে আর মন টিকছে। পরিবার বলতে আমার আর কেউ রইল না। সব হারিয়ে নিঃশ্ব আমি। দুঃখ আর আমাকে কষ্ট দিতে পারে না। যন্ত্রণা এতই প্রবল যে এখন সব কিছুই সহনীয় মনে হয়।

ঢাকায় এক দন্ড থাকার ইচ্ছা জাগছে না। শরীর ভীষণ কাঁপছে। বুকও ধুকধুক করছে। এ জীবন থেকে একটু মুক্তি চাই। তবুও যেন মুক্তি মিলছে না।

ঢাকা থেকে সেদিনেই কুঁড়গাও যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। আবারও সেই কালো বিড়ালটা দেখলাম যেটা সামনে এসে মিলিয়ে গেল। আমার মথায় সব প্রশ্নরা ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল। জীবনের কোন দিকে আমি যাচ্ছি আমি নিজেও হয়তো জানি না।

ঢাকা থেকে কুঁড়গাওয়ে পৌঁছালাম মাগরিরবের আযানের সময়। দীপকদের বাড়িতে পৌঁছে লক্ষ্য করলাম বাড়িটা একদম চুপচাপ। নিয়ামত চাচাও নেই। দারোয়ান ছাড়া বাড়িটা দেখে প্রথমেই কেমন জানি উদ্ভট লাগলো। আমি সাত পাঁচ না ভেবে সোজা চলে গেলাম বাড়ির ভেতরে। বাড়ির মূল ফটকও খোলা। এবার কেন জানি না আমার কাছে বিষয়টি খটকা লাগলো। আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম। লক্ষ্য করলাম কেউ নেই। শুধু মাত্র আনজুমান আর তার মেয়ে আছে। পিয়ালী বা দীপককে লক্ষ্য করছি না। সে সাথে আনহারিকেও দেখছি না। আমার ভেতরটায় এবার একটু ভয় হতে লাগল। আমি পুরো বাড়িটা খোঁজার আগে আনহারির নম্বরে কল দিলাম তবে খোলা পেলাম না। এবার যেন বিষন্নতা আমাকে ঝেঁকে ধরেছে। আমি পুরো বাড়িটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আনহারিকে পেলাম না।

আমি হাঁপাতে লাগলাম। তাহলে কী দীপক আনহারির কিছু করেছে? পুলিশ স্টেশনে যাওয়া ভীষণ জরুরি হয়ে গেছে। আমি পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার আগে আনজুমানের রুমে গেলাম। আনজুমান তার মেয়েকে নিয়ে বসে আছে। আমি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“আনন্যা কোথায়? আর দীপকেই বা কোথায়?”

আনজুমান আমার দিকে তাকিয়ে বলল

“আমি সেসব কিছুই জানি না ফিয়না। সকাল বেলা অনন্যা আর দীপকের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ওরা একসাথে কোথায় বের হয়েছে আমার জানা নেই। সাথে পিয়ালিও গিয়েছে।”

আমি উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে?”

আনজুমান পাশ থেকে একটা তেলাপোকা আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি ভয়ে পিছু হটে বললাম

“কী করছেন?”

আনজুমান হালকা গলায় বলল

“এটা একটা সেন্সরের তেলাপোকা। তোমার ম্যাডাম অনন্যার। অনন্যা এ সেন্সর তেলাপোকা দিয়েই পায়েসে পটাশিয়াম সায়ানাইড মিশিয়েছে। তেলাপোকাটাকে একটা বিশেষ সংকেত দিলে উড়ে। তরীর আব্বু যখন পায়েস রান্না করেছিল তখন সে এ সেন্সর দিয়েই পায়েসে পটাশিয়াম সায়ানাইড মেশায়। এটা দীপক বুঝতে পারলেও কোনো প্রমাণ তার হাতে ছিল না। এটা নিয়েই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি জানি কাজটা অনন্যায় করেছে। তবে অদ্ভুতভাবে অনন্যা একটা কাগজ দেখালো যেটাতে দেখা গেছে দীপক কানাডা থেকে এটা দুইমাস আগে অর্ডার করেছে। এমন একটা জিনিস দীপু অর্ডার করেছে আমরা জানি না এটা অদ্ভুত না? কিন্তু তথ্য প্রমাণ তো দীপুর বিরুদ্ধে জানান দিচ্ছে। এসব নিয়েই তর্ক বিতর্ক হয়। তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে তারা বাইরে যায়। এরপর দীপুর ফোনও বন্ধ পাচ্ছি। ”

আমি বুঝতে পারলাম পটাশিয়াম সায়ানাইড মেশানোর আসল রহস্য। সবাই বুঝতে পারছে কাজটা আনহারি করেছে তবে তথ্য প্রমাণ সবকিছু বিতলে দিচ্ছে। এটাও আনহারির সাজানো একটা প্ল্যান। এখানে আসার প্ল্যান অনেক আগে থেকেই তার ছিল। আর সে অনুযায়ীই সে সবটা গুছিয়ে রেখেছিল। এখন ভাববার বিষয় তারা কোথায়? আনজুমানকে আবার জিজ্ঞেস করলাম।

“এত কিছু হয়ে গেল আর আপনি এত শান্ত হয়ে বসে আছেন বিষয়টি মাথায় ঢুকছে না।”

আনজুমান এবার শান্ত গলায় বলল

“নিজের স্বামীর জন্য সবসময় স্ট্রাগল করেছি। কিছু ছিল না তার, তবুও তাকে নিয়ে সংসার করেছি। সবসময় তাকে প্রাধান্য দিয়েছি। সে স্বামীর মুখোশ যখন খুলে গেছে তখন আমার ভেতরের আমিটা আর আমিতে নাই ফিয়না। এখন একটু হলে অনন্যার সে কষ্টটা আমি বুঝতে পারি। একজন মেয়ে হিসেবে ন্যায় অন্যায় বিচার করে অনন্যার সাথে ইনসাফ করা দরকার ছিল। তবে পরিবারকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনন্যার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। শুনো অনন্যা মরে যাক এটা কখনও চাইনি। চেয়েছিলাম অনন্যা বেঁচে থেকেও যেন তিলে তিলে মরে। কেন অনন্যার প্রতি এত ক্ষোভ ছিল জানি না। অনন্যা দেখতে সুন্দরী ছিল এ বিষয়টিও আমাকে খুব প্যারা দিত। তাই, না চাইতেও আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। আর এখন নিজের এ পরিস্থিতিতে অনন্যার প্রতি করা অন্যায়ে বেশ অনুতপ্ত। নিজের কৃতকর্মের জন্য আমি অনুতপ্ত। তাই এসব নিয়ে আর কথা বাড়াচ্ছি না। মা ও তার শাস্তি পাচ্ছে, ভাই ও পাবে। আমিও পেয়েছি। আচ্ছা তুমি অনন্যার কে জানি হও?”

“পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট।”

কথাটা বলে আমি রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। আনজুমানের এত ভালো রূপটাও আমি মানতে পারছি না। চুপ হয়ে ভাবছি কোথায় গেল তারা? এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে গেল। রাত গড়িয়ে সকাল হয়ে গেল। তাদের খোঁজ মিলছে না। কলেও তাদের পাচ্ছি না। এবার আমার কাজ থানায় ইনফরম করা।

যে ভাবনা সে কাজ। আমি উঠে গেলাম দ্রূত। এখানে একা থাকতে ভয়ও লাগছে। চারজন মানুষ একসাথে নিখোঁজ। কোথায় আছে কোনো হদিশ নেই। আনজুমানের রুমের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন বিড়বিড় করছে। আমি সেসবে আর পাত্তা দিলাম না। সরাসরি চলে গেলাম অফিসার মাহিদের কাছে। এবার তার কাছে গিয়ে আমার কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। আনহারির চিন্তায় আমার সকল অনুভূতি যেন মরে গেছে। আমি সেখানে যেতেই অফিসার মাহিদ হেসে বললেন

“আবার কী হয়েছে আপনাদের পরিবারের?”

উনার কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত হলেও স্বাভাবিক গলায় বললাম

“বড়ো আপা মানে অনন্যা, দীপক, পিয়ালি, নিয়ামত চাচাকে গতলকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে অনন্যাকে ওরা কিছু করেছে। না হয় কোথায় যাবে ওরা। আনজুমানের ভাব গতিও ভালো ঠেঁকছে না। আপনি দয়াকরে একটা ব্যবস্থা করুন।”

আমার কথা শুনে অফিসার মাহিদ চুপ হয়ে গেল। কাকে জানি কল করছে। কল করে আমাকে বলল

“আনহারির নম্বরও তো বন্ধ।”

অফিসার মাহিদের মুখে আনহারি নামটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। বেশ অগোছালো ভাষায় জিজ্ঞেস করলাম

“আপনি কী করে এ নাম জানেন? আপনি কী উনাকে চেনেন?”

অফিসার মাহিদ আমার দিকে তাকিয়ে বলল

“সে আমার ব্যাচমেটের পরিচিত ছিল। পড়াশোনা একই সাথে ছিল তাদের। মানে স্কুল কলেজ একই সাথে। এরপর আনহারি এডমিট নিল মেডিকেলে আমার ব্যাচমেট নিল ভার্সিটিতে। আমি আনহারিকে চিনি চার বছর আগে থেকে। বেশ কয়েকবার তার সাথে আমার কথা হয়েছে। সে তখন দেশের বাইরে ছিল। দেশে আসে কিছুদিন আগে।”

অফিসারের মাহিদের কথা শুনে আমি থমকে গেলাম, আনহারি একজন ডাক্তার সেটা আমার জানা ছিল না। আমি কৌতুহল গলায় জিজ্ঞেস করলাম

“আনহারি দেশের বাইরে গিয়েছিল কবে? কত বছর সেখানে ছিল?”

অফিসার মাহিদ হালকা গলায় বলল

“আনহারি দেশের বাইরে গিয়েছিল ৪ বছর আগে। আর সেখানেই ৪ বছর ছিল। নানা পরিকল্পনা করেও আসতে পারেনি। ৪ বছর পর কিছুদিন আগে আসলো।”

অফিসারের মাহিদের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। আনহারি যদি দেশের বাইরে থেকে চার বছর পর আসে তাহলে দুই বছর আগে কে মারা গেছে? আর ঐ পরিবারে কে ছিল? আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম

“আনহারি যদি দেশের বাইরে ৪ বছর থেকে থাকে তাহলে দুই বছর আগে তার পরিবারে কে ছিল? দুই বছর আগে কে মারা গিয়েছিল?”

অফিসার মাহিদ কিছু বলতে নিবে এর মধ্যেই অবিনাশ মুখার্জি নামে এক কনস্টেবল খবর নিয়ে আসে নদীতে একটা মেয়ের কাটা লাশ পাওয়া গিয়েছে। এ খবরটা শুনে আমার ভেতরটা চমকে উঠেছে। আনহারি না তো? অফিসার মাহিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে বলল

“আমার এখন ঐদিকে ফোকাস দিতে হবে। আপনি একটা সাধারণ ডায়রি করে যান। আমি লা/শের সন্ধান করে আনহারির খোঁজ নিচ্ছি। আর বাকি তথ্য পরে সময় করে বলব। আপাতত আমি উঠি।”

অফিসার মাহিদ চলে গেলেন। আমি নিখোঁজের একটা ডায়রি করে থানা থেকে বের হলাম। থানা থেকে বের হয়েই আমি সরাসরি লাবনী জোহাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“আন্টি আনহারি দেশের বাইরে কবে গিয়েছিল?”

লাবনী জোহা সাবলীল গলায় উত্তর দিল

” উচ্চ মাধ্যমিকের পর ও দশেের বাইরেই থেকেছে। তার পড়াশোনা সেখানেই। এম বি বি এস কমপ্লিট করে দেশে আসে। কিছুদিন থেকে চার বছর আগে গিয়েছিল এম আর সিপি করতে লন্ডনে। এরপর তার কী যেন সমস্যা হচ্ছিল সেখানে তাই এক বছর থেকে চলে আসে। হঠাৎ এ প্রশ্ন?”

আমি উত্তরে বললাম

“এমনি। বলেই কলটা কেটে দিলাম।”

আমার মাথায় এবার নতুন প্রশ্নের সমাগম হচ্ছে। তাহলে দুই বছর আগে কে মারা গেল? আনহারি যদি দেশের বাইরে থাকে তাহলে আনহারির পরিবারের সাথে কে ছিল? প্রশ্ন যেন আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আনহারি কোথায় আছে এ প্রশ্নটা যেন আমাকে আরও বেশি যন্ত্রণায় ফেলছে ।

আমি পাগলের মতো হাঁটছি। একা একা নিজেকে ভীষণ অসহায় এবং ক্লান্ত লাগছে। আনহারির কিছু হলে আমি লাবনী জোহাকে কী জবাব দিব সেটাই ভাবছি। আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। আমি কী একবার লাবনী জোহাকে বলব বিষয়টি নাকি বলব না। আমার কী করা উচিত আমি বুঝতে পারছি না। এসব ভেবে ভেবেই সামনের দিকে এগুলাম। হঠাৎ করে ইটে পা আটকে সামনের দিকে ঝুঁকে গেলাম। পড়ে যাওয়ার আগেই কেউ আমাকে ধরে নিল। আমি তার মুখ বরাবর তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে। আমি তার হাত থেকে নিজের বাহু দুটো ছাড়িয়ে নিলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল

“কোথাও ব্যথা পাওনি তো ফিয়না?”

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“আপনি আমার নাম জানলেন কী করে? কে আপনি?”

তার উত্তর আসলো

আমি বিভোর। সে সাথে সমাধান হলো কিছু রহস্যের।

চলবে।