#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৪৭
#Esrat_Ety
” সা’র্জা’রি করাবে না? এসব কি বলছো সামিন? মজা করছো?”
_না আন্টি।
রুবির কথার জবাবে সামিন বলে। রুবি হতভম্ব হয়ে যায়। ফোনটা বা কান থেকে ডান কানে ধরে বলে,”কেনো?”
_আন্টি, ওর ঐ ক্ষ’ত নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার মধ্যে কোনো দ্বি’ধা নেই। আমি ওকে বোঝাতে চাচ্ছি ঐ ক্ষ’ত নিয়েও ও আমার কাছে নিখুঁত। তাই চাচ্ছি না।
রুবি হেসে ফেলে। পর পর বলে ওঠে,”তোমার ছেলেমানুষীকে আমি সাধুবাদ জানাতে পারলাম না সামিন। এটা ওর ভালোর জন্য করা হবে। সেটা তুমিও জানো। ও তোমার চোখে নিজেকে দেখবে সেকথা ঠিক, কিন্তু কখনো কখনো তো নিজেও নিজেকে দেখবে তাই না?”
সামিন চুপ করে থাকে। রুবি হাসতে হাসতে বলে,”তোমাকে দেখলে অবাক হতে হয় সামিন। একটা মেয়ে তোমাকে এভাবে দখল করে নিয়েছে! সত্যিই মেয়েটির মধ্যে কিছু তো আছে! ”
একটু থেমে রুবি বলতে থাকে,”সিঙ্গাপুর গিয়েছো, সব রেডি, এখন সা’র্জা’রি টা করিয়ে ভালোয় ভালোয় ফিরে আসো। বোকা বোকা কথা বলে নিজেকে মহাপুরুষ সাজানোর প্রয়োজন নেই। তুমি তাকে ভালোবাসো,তার ক্ষ’ত নিয়ে তোমার আপত্তি নেই তাই বলে একটা মেয়ে শরীরে ক্ষ’ত নিয়ে ঘুরবে? বোকা ছেলে। রাখো এখন! ”
রুবি ফোন কেটে দেয়। সামিন খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আশেপাশের দৃশ্য উপভোগ করতে থাকে। এখন দুপুর। তার চোখের পাতা এক মিনিটের জন্যও লাগেনি।
ঘাড় ঘুরিয়ে রুমের ভেতরে বিছানায় ঘুমন্ত আলোকে দেখে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আলো। ধীরে ধীরে আলোর বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে একপাশে চুপচাপ বসে। তারপর আলোর মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে কপালে একটা চু*মু বসাতেই যাচ্ছিলো তখনই আলো চোখ খুলে পিটপিট করে তাকায়।
সামিন থতমত খেয়ে যায়, আলো ধীরে ধীরে উঠে বসে আশেপাশে তাকায়। সামিন বলে,”দুপুর হয়ে গিয়েছে তাই ডাকতেই যাচ্ছিলাম তোমাকে, খিদে পেয়েছে খুব।”
আলো চোখ ডলে সামিনের দিকে তাকায়। মানুষটা সম্ভবত এই মাত্র গোসল সেরেছে, চুলগুলো ভেজা।
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে ওঠে,”আমাকে একটু সময় দিন। আমি রেডি হচ্ছি।”
চোখ থেকে এখনো ঘুম সরে যায়নি আলোর, উঠে দাঁড়াতে গিয়ে টলতে থাকে। সামিন শক্ত করে ধরে ফেলে। মাথা ঘুরিয়ে আলো তাকায় সামিনের দিকে, তারপর ওয়াশ রুমে ঢোকে।
আলোর লাগেজ থেকে একটা শাড়ি বের করে বিছানার উপর রেখে সামিন নিজেও রেডি হয়ে নেয়।
মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই আলোর চোখ চলে যায় বিছানার উপরে রাখা শাড়িটার দিকে। মাথা ঘুরিয়ে সামিনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় সে। হাতঘড়িটা হাতে পরে নিয়ে সামিন বলে,”ঐ শাড়িটা পরো।”
আলো এগিয়ে গিয়ে শাড়িটা হাতে তুলে নিয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,”কমলা আমার অপ্রিয় একটি রং।”
_আমারও অপ্রিয়, কিন্তু কমলা রঙের শাড়িতে তুমি আমার প্রিয়।
আলো শাড়ি হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন বলে,”তৈরি হয়ে থাকো। আমি নাফিসা আন্টির কাছে যাচ্ছি কথা বলতে। একটু পর এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।”
সামিন চলে যায় দরজা লক করে। আলো নিজেকে জরিয়ে নেয় কমলা রঙের সিল্কের শাড়ি টাতে। বুকে আঁচল তুলে সে বুঝতে পারলো সামিনের কথা মিথ্যে নয়, এই রংটাতে তাকে মানায়, শ্যামলা ধাঁচের মেয়েদের উচিত এই রঙটা পরে দেখা। নিজেরাই নিজেদের মুগ্ধ হয়ে দেখবে।
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলে আলোর ঘোর কেটে যায়। ওটা সামিনের ফোনের রিংটোন। ফোনটা ফেলে রেখে গিয়েছে ওই লোকটা।
রিংটোন বাজতে বাজতে কে’টে যায় প্রথমবার। আলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। পরক্ষনেই আবার বেজে ওঠে রিংটোন।
অনেকটা দ্বিধা নিয়ে সে ফোনটা হাতে তুলে দেখতে পায় ইশমামের ফোন। চোখে মুখে অস্বস্তি ছেয়ে যায় তার। ফোনটা রেখে দেয় সে। কিন্তু ইশমাম অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। শেষমেশ আলো সংকোচের সাথে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে। ওপাশ থেকে ইশমাম বলে ওঠে,”ভাইয়া!”
_আমি।
আলো অস্ফুট স্বরে বলে। ইশমাম কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলে,”ভাইয়া কোথায়?”
_একটু বাইরে গিয়েছেন।
_আসলে বাবার ডে’থ সার্টি*ফিকেটটা দরকার ছিলো। মেজো ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিলাম, সে আউট অব দ্যা সিটি, ইশিতা ভার্সিটিতে। আমার জানামতে ভাইয়ার ল্যাপটপে কপি আছে। একটু বলে দেবে ভাইয়াকে? ইটস্ আর্জেন্ট!
_আচ্ছা আসলেই বলবো।
দু’জনেই চুপচাপ হয়ে যায়। ক্ষনবাদে ইশমাম বলে ওঠে,”ওখানে ঘুরতে যাওনি কোথাও?”
_নিয়ে গিয়েছিলেন উনি কাল সেন্তোসা আইল্যান্ড।
_ছবি তোলোনি দুজন?
_না।
_আচ্ছা আজ ছবি তুলবে, ভাইয়াকে বলবে আমাকে পাঠিয়ে দিতে। আমার বন্ধুরা তোমাদের দেখতে চেয়েছে।
আলোর অস্বস্তি হচ্ছে, ফোনটা রাখতেও পারছে না। ইশমাম খুবই আগ্রহ নিয়ে কথা বলছে।
সামিন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে আলো তার ফোন কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আলোর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”কে ফোন দিয়েছে?”
আলো ফোনটা এগিয়ে দিতে দিতে বলে,”আপনার ভাই।”
_কে ইলহাম?
_না ইশমাম।
ফোনটা নিয়ে সামিন কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে ল্যাপটপ নিয়ে বসে, তারপর তার বাবার ডে*থ সার্টি*ফিকেটের কপি ইশমামকে পাঠিয়ে দেয়।
আলো আমতা আমতা করে বলে,”আপনার পারমিশন না নিয়ে আপনার ফোন ধরেছি, আসলে ও বারবার ফোন দিচ্ছিলো। আপনি কি মাইন্ড করলেন?”
সামিন অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠান্ডা গলায় বলে,”অবশ্যই মাইন্ড করেছি। এতো মাইন্ড করেছি যে আমার তো রাগে তোমাকে চু*মু দিতে ইচ্ছে করছে!”
আলো বুঝতে পেরে যায় সামিন মজা করছে, সে ঘুরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে খোঁপা বেঁধে নেয়।
সামিন উঠে দাঁড়িয়ে আলোর কাছে চলে যায়, পেছন থেকে আলোকে জরিয়ে ধরে আয়নায় আলোর প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক। আলোর কাঁধে থুতনি ঠেকাতেই পুরুষালি রুক্ষ গালের স্পর্শে আলো শি*উরে ওঠে, চোখ নামিয়ে নেয়। জানালা দিয়ে রোদ এসে আলোর মুখে পরেছে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে চিনামাটির কোনো পুতুল। সামিন মুগ্ধ হয়ে তার স্ত্রীকে দেখতে থাকে। ঘোর লাগা কন্ঠে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,
“বধূ কোন আলো লাগলো চোখে,
বুঝি দ্বীপ্তি রূপে ছিলে সূর্যলোকে!”
আলো একপলক সামিনের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলে,”খেতে যাবেন না?”
সামিন আলোকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”ভালো কথা মনে করালে, ভুলেই বসেছিলাম। চলো, নাফিসা আন্টিরা ওয়েট করছে , তাদের সাথে লাঞ্চের ইনভিটেশন রয়েছে আমাদের।”
আলো সামিনের পিছু পিছু রুম থেকে বের হয়। দরজা লক করে ঘুরে দাড়িয়ে সামিন আলোকে দেখতে থাকে। আলো সামিনের থেকে চোখ সরিয়ে নিজেকে দেখে, তারপর আবার সামিনকে বলে,”কিছু কি অসুবিধে হয়েছে?”
সামিন ম্লান হাসে, তারপর আলোর আঁচল টেনে ডান কাঁধে তুলে দিয়ে বলে,”এইবার ঠিকাছে!”
***
চামচ নাড়ার টুং টাং আওয়াজ হচ্ছে। আলো প্লেটের খাবারটা নাড়াচাড়া করতে করতে বারবার সবার দিকে তাকাচ্ছে। সামিন নাফিসা কালাম এবং তার হাজবেন্ডের সাথে গল্প করছে।
আলো নাফিসা কালামকে দেখে, ভদ্রমহিলা শার্ট প্যান্ট পরেছেন। গলায় একটা স্কার্ফ পেঁচিয়ে রেখেছে ।
তারা গল্প থামিয়ে তিনজনই আলোর দিকে তাকায়। নাফিসা বলে,”কি ব্যাপার, চুপচাপ যে? বোর হচ্ছো নাকি?”
আলো মাথা নাড়ায়, বিনয়ের সাথে বলে,”না আন্টি। আমি খেতে খেতে কথা বলতে পারি না।”
_খাচ্ছো কই?
সামিনের প্রশ্নে আলো তার দিকে তাকায়। সামিন আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে দৃষ্টি নামিয়ে তার প্লেটে রাখে। তারপর আলোর প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিতে দিতে নাফিসার সাথে কথা বলতে থাকে।
আলো নিজের প্লেটের দিকে বিরস মুখে তাকিয়ে আছে। এতো খাবার সে কিভাবে খাবে! সে কি রাক্ষস নাকি!
তারা এসেছে বে সংলগ্ন একটা ফাইভস্টার রেস্টুরেন্টে। কিছুক্ষণের মধ্যে নাফিসা কালামের বেশ কিছু চাইনিজ এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু এসে তাদের সাথে অংশ নেয়। নাফিসা কালাম তাদের আলো আর সামিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে,”কোনো অসুবিধা হচ্ছে?”
আলো মাথা নাড়ায়। খেতে খেতে চুপচাপ দেখতে থাকে সামিনকে। যথেষ্ট সামাজিক একজন লোক। যেভাবে বিদেশিদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে কে বলবে এই লোক পেশায় একজন পলি*টিশিয়ান! কেমন ফুরফুরে মেজাজে কথা বলছে সবার সাথে।
“আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”
দলের থেকে পিছিয়ে পরায় সামিনের দিকে তাকিয়ে আলো প্রশ্ন করে। সামিন বলে,”আর্ট মিউজিয়াম সেখান থেকে আরো বেশ কয়েকটি যায়গা। কেন, অসুবিধে আছে?”
আলো মাথা নাড়ায়। সবাই হাঁটছে জোড়ায় জোড়ায়। স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের কোমর জড়িয়ে হাঁটছে। ওসব দেখে আলোর মুখটা লজ্জায় টকটকে লাল হয়ে যাচ্ছে। তাদের থেকে কয়েক গজ সামনে হাঁটছে নাফিসা কালাম এবং তার হাজবেন্ড। তার হাজবেন্ড তাকে যেভাবে জরিয়ে ধরে হাঁটছে তাতে মনেই হয়না তাদের বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। পোশাকে,চাল চলনে খুবই আধুনিক এই জুটি।
হাঁটতে হাঁটতে সামিন আড়চোখে একপলক আলোকে দেখে। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে নিজের ডানহাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে আলোর বা হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল জরিয়ে রাখে। আলো চ’ম’কে উঠে তাদের হাতের দিকে তাকায়। তারপর ধীরে ধীরে সামিনের চোখের দিকে তাকায়। সামিন সামনের জুটিদের দিকে তাকিয়ে আলোকে বলে,”ওটা সুন্দর।”
তারপর নিজেদের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,”তবে এটা বেশি সুন্দর!।”
আলো চুপ করে হাঁটতে থাকে। আড়চোখে বার বার নিজেদের হাতের দিকে তাকাচ্ছে, মনে মনে বলে ওঠে,”এটা আসলেই সুন্দর, এটা সবথেকে সুন্দর মেয়র সাহেব!”
আর্ট মিউজিয়াম পৌঁছে যে যার বেটার হাফকে নিয়ে আলাদা হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে সবকিছু।
সামিনের পাশে আলো চুপচাপ হাঁটছে। হঠাৎ একটা স্ট্যাচুর পাশে সামিন দাঁড়িয়ে পরে। আলো মুখ তুলে সামিনের দিকে তাকায়। আলোর দিকে তাকিয়ে সামিন বলে,”এখানে দাঁড়াও।”
_কেন?
_ছবি তুলবো তোমার।
আলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন আলোর ছবি তুলতে তুলতে বলে,”ইশিতা পাগল বানিয়ে ফেলেছে তোমার ছবি দেখবে বলে। কই, হাসো!”
আলো মুচকি হাসে। সামিন তখনই আলোকে ক্যামেরা বন্দী করে ফেলে। তারপর সেলফি ক্যামেরা অন করে বলে,”চলো আমরা ছবি তুলি, ইশমাম চেয়েছে আমাদের দুজনের ছবি। ওর বন্ধুরা দেখবে।”
আলোর গোটা মুখে অস্বস্তি ছেয়ে যায়। সামিন আলোর ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে দুজনের একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলে নেয়। তারপর বলে ওঠে,”এক্ষুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি ওকে। ইশমাম তোমাকে খুবই পছন্দ করে। তুমি জানো না, যখন তোমার সাথে আমার শত্রুতা ছিলো তখন ফোন করেই বলতো, ভাইয়া মেয়েটাকে শাস্তি দিওনা, মেয়েটাকে কিছু করো না। ”
আলোর অস্বস্তি বাড়ছে,সে প্রসঙ্গ পালটে বলে,”ঐ দিকে নিয়ে যান আমাকে। ঐ দিকটা ঘুরে দেখবো।”
সামিন হেসে আলোর হাত ধরে। তারপর সামনে এগিয়ে যায়।
***
ঘোরাঘুরি শেষ করে সবাই এসেছে শপিং মলে। সামিন আলোকে একপলক দেখে বলে,”যাও। ঘুরে দেখো, কিছু পছন্দ হলে আমাকে বলবে। আচ্ছা থাক, তুমি বরং কার্ড টা নিয়ে যাও।”
আলো অবাক হয়ে সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি কি কিনবো? আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই আর। গতকালই তো কতকিছু শপিং করলেন! ”
_বিদেশে মানুষ রোজ রোজ আসে না আলো। যাও দেখো কিছু পছন্দ হয় কিনা, আর নিজের জন্য না হলে বাড়ির সবার জন্য দেখতে থাকো, তোমার আমার উভয়ের শশুর বাড়ির জন্য, খালি হাতে দেশে ফিরলে ইশু আমাকে ছাড়বে না, আর আমার শ্যালক দুটো মনে মনে ভাববে ওদের দুলাভাই কিপ্টে ।”
আলো হাসে,নিচু স্বরে বলে,”ঠিকাছে আপনিও আসুন।”
সামিন আ’ত’ঙ্কি’ত গলায় বলে,”ক্ষেপেছো? মহিলা পার্টির মধ্যে আমি ঢুকবো না!”
আলো ঘাড় ঘুরিয়ে নাফিসাদের দিকে তাকায়, তারা আলোর জন্য দাড়িয়ে আছে। সামিন বলতে থাকে,”ওনাদের সাথে গিয়ে দেখো সবকিছু আমি এখানে বসে কফি খেতে থাকি।”
আলো মাথা নেড়ে ধীরপায়ে চলে যায়। নাফিসা কালাম এবং তার বান্ধবীদের সাথে ঘুরে ফিরে সবকিছু দেখতে থাকে।
একটা লেডিস শপে ঢুকে সবাই পোশাক দেখতে থাকে। এখান থেকে নেওয়ার মতো আলো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না, এমন ধরনের পোশাক তাদের বাড়ির কেউ পরে না, ইশিতা আপু এতো বড়লোক বাড়ির মেয়ে হয়েও এগুলো কখনো পরে না। এখান থেকে কি কিনবে সে! তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। নাফিসা কালামের একজন বান্ধবী যার নাম লি শিনতা সে একটা না*ইটি পছন্দ করে নিজের গায়ে রেখে মিররে নিজেকে দেখছে মানাবে কি না। আলোর হঠাৎ খুব হাসি পাচ্ছে, সে কিছুতেই নিজের হাসি চেপে রাখতে পারছে না। লি শিনতা আবার তার অন্য একজন ইন্ডিয়ান বান্ধবী শামা পোদ্দারের দিকে তাকিয়ে বলে,”দেখো তো আমাকে মানাবে কি না?”
শামা পোদ্দার কপাল কুঁ’চ’কে দেখতে থাকে শিনতাকে। আলো হেসে ফেলে। সবাই অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। নাফিসা কালাম বলে,”তুমি হাসছো কেনো? এসো। দেখো এখানে কিছু পছন্দ হয় কিনা!”
আলো হাসি থামিয়ে নিচু স্বরে বলে,”এখানে পছন্দ করার মতো কিছু নেই আন্টি।”
_নেই মানে? এতো ভালো ভালো কালেকশন। এই না*ইটি গুলো দেখো, এখান থেকে একটা নাও।
আলোর কান গরম হয়ে যায়। নাফিসা বলে,”এসব পরো না? বেডরুমেও কি এভাবে চাচী আম্মাদের মতো শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে থাকো? সামিন আপত্তি করে না?”
আলোর যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে এক্ষুনি সে মেঝে ফাক করে ঢুকে যেতো নিচে। কিন্তু তার সেই ক্ষমতা নেই, তাই সে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ!
নাফিসা কালাম এবং তার বান্ধবীরা এগিয়ে আসে আলোর দিকে, নাফিসা জ্ঞান দেওয়ার মতো করে বলতে থাকে,”শা*লীনতা এক জিনিস । তুমি পুরো দুনিয়ার কাছে থাকো শালীন। কে নিষেধ করেছে? তাই বলে হাসবেন্ডের কাছে নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলবে না? বেডরুমে পরবে এসব। আজকালকার ছেলেদের এসব চাচী আম্মাদের মতো লুক মনে ধরে? তোমাকে আসলে গ্রু*মিং করাতে হবে। তুমি বাংলাদেশ ফিরে গিয়ে অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই আমার সাথে যোগাযোগ করবে, আমার বোনঝি আছে। তার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেবো।”
আলোর এতো অস্বস্তি হচ্ছে। সে পালাতেও পারছে না। লি শিনতা একটা টকটকে লাল রঙের নাইটি এনে আলোর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”এটা নাও, আজকে তোমার হাজবেন্ডকে চ’ম’কে দাও!”
আলো হাত থেকে নাইটি টা ফেলে দেয়। লজ্জায় তার মুখ ফ্যা*কাশে হয়ে আছে। নাফিসা হেসে বলে,”ঠিকাছে। পরতে হবে না এসব। অন্তত আঁচল পেঁচিয়ে থেকো না প্লিজ।”
আলোর ডান কাঁধ থেকে নাফিসা শাড়ির আঁচল টেনে নামিয়ে দেয়। শামা পোদ্দার একটা মেরুন রঙের নাইটি এনে বলে,”আলো তুমি এটা ট্রাই করে দেখতে পারো, এটা ম্যাক্সি টাইপ, তোমার টাইপ, শালীন নাইটি হা হা হা।”
আলো আর দাঁড়াতে পারে না, ছুটে ঐ শপটা থেকে বেরিয়ে যায়। নাফিসা তার বান্ধবীদের সাথে হাসতে থাকে।
“এভাবে ছুটছো কেনো?”
সামিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আলোর দিকে। আলো থ’মকে যায়। সামিন বলতে থাকে,”মনে হচ্ছে কেউ তাড়া করেছে তোমায়। এভাবে ছুটছো কেনো?”
_এমনি , আলো অস্ফুট স্বরে বলে।
সামিন আলোকে কয়েক পলক দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়, এবং আবারও তার আঁচল টেনে ডান কাঁধে উঠিয়ে দেয়। আলো সামিনকে দেখছে। সামিন নিচু স্বরে বলে,”আন্টি আর তার বান্ধবীরা কোথায়?”
আলো আঙুল তুলে ইশারা করে সামিনকে দেখিয়ে দেয়,”ঐ দোকান টাতে।”
_তো তুমি এখানে কেনো? যাও ওখানে! কিছু পছন্দ করো।
আলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন বলে,”আমার যেতেই হবে? আচ্ছা চলো যাচ্ছি।”
সামিন উদ্যত হয়, আলো সামিনের হাত টেনে ধরে বলে,”এই না! ওখানে আপনার যাওয়ার দরকার নেই।”
সামিন আলোর দিকে তাকায়। আলো আমতা আমতা করে বলে,”চলুন অন্য কোনো শপে ঢুকি!”
“এক্সকিউজ মি!”
ঘুরে দাঁড়ায় সামিন আর আলো। একজন তেইশ-চব্বিশ বছর তরুণী তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। সামিন আর আলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটি সামিনকে একটি উড়ন্ত চু*মু দিয়ে বলে,”এটা আপনার জন্য হ্যান্ডসাম।”
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে সামিন আর আলো। বিদেশি মেয়েটি আরো কাছে চলে আসে, মেয়েটির বান্ধবীরা এসে তাদের ঘিরে ধরে। মেয়েটি চেঁচিয়ে বলে,”ইয়েস! আমি জিতে গিয়েছি।”
সামিন ঘাবড়ে গিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে। আলোও তাকায় তার দিকে, চোখ মুখ শক্ত করে ফেলেছে সে।
বিদেশী মেয়েটি সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। এটা ডেয়ার ছিলো, ঐ যে দেখছেন ক্যামেরা হাতে লোকটি! উনি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং ব্লগার। শপিং মলে সবাইকে কিছু না কিছু টাস্ক দিচ্ছে, জিততে পারলে ১০ ডলারের একটি শপিং কার্ড পেয়ে যাবো। আমার টাস্ক ছিলো এখানের সবথেকে সুদর্শন কোনো পুরুষকে তার স্ত্রীর সামনে ফ্লাইং কি*স দেওয়া। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড!”
সামিন কি বলবে কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছে না। সে মনে মনে প্রার্থনা করছে আলো যাতে চুপ থাকে। কিন্তু তার প্রার্থনা কেউ শোনে না। আলো চেঁচিয়ে বাংলায় বলে ওঠে,”চুলের মুঠি ধরে একটা চট*কনা মারবো শাকচুন্নীর দল।”
সামিন চোখ বড় বড় করে আলোর দিকে তাকায়। বিদেশী মেয়েটি কৌতুহলী হয়ে আলোর দিকে তাকায়। তারপর সামিনকে বলে,”কি বলছে আপনার স্ত্রী? সে কি রা*গ করেছে?”
_না , আমার স্ত্রী বলছে ইটস ওকে। আমরা কিছুই মনে করিনি। আপনারা যান।
মেয়েটি কৃতজ্ঞ চোখে আলোর দিকে তাকায়,বিনয়ে মাথা নুইয়ে বলে,”থ্যাংক ইউ ম্যাম। থ্যাংক ইউ সো মাচ!”
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এগিয়ে এসে বিদেশি মেয়েটির হাতে তার পুরস্কার তুলে দেয়। সামিন দাঁড়িয়ে আছে বোকার মত,আলো দাঁড়িয়ে আছে কঠিন হয়ে।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সামিনদের দিকে তাকিয়ে মুখ ভর্তি প্রশ্বস্ত হাসি দিয়ে বলে,”হ্যালো! আমার ইউ টিউব চ্যানেলের নাম বেস্ট এভার সিঙ্গাপুর। আপনারা কি আমার সাথে একটি খেলা খেলতে চান? জিতলে আপনাদের জন্য থাকছে একটি ১০ ডলারের শপিং কার্ড আর……..”
আলোর ইচ্ছে করছে ঐ উ*ল্লুক টার মাথাটা দেওয়ালে ঠেকিয়ে দিতে। নিজেকে সংযত করে উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করে। সামিন তার পিছু পিছু চলে যায়।
ব্লগার পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলতে থাকে,”ম্যাম আপনাদের খুব সোজা টাস্ক দেবো,ঘাবড়াবেন না দাঁড়ান।”
আলো চোখ মুখ অন্ধকার করে হাঁটছে । সামিন আড়চোখে আলোর দিকে একপলক তাকিয়ে নরম গলায় বলে,”আলো……”
_এটা ফরেইন কান্ট্রি। এখানে এগুলো স্বাভাবিক। জানি, নতুন কিছু বলুন।
ঠান্ডা গলায় জবাব দেয় আলো। সামিন বলতে থাকে,”আমার সাথে খচ*খচ কেনো করছো? আমি কি মেয়েটিকে বলেছি এসো এসো আমাকে উড়ন্ত চু*মু দিয়ে যাও?”
_কোনো রিয়াক্ট কেনো করলেন না? আমি করলাম,সেটাও ছাপিয়ে গেলেন। খুব সুখ সুখ লেগেছে তাইনা? বজ্জাত পুরুষ লোক!
সামিন থতমত খেয়ে বলে,”আলো এভাবে কেনো বলছো? অনেক বার মাফ চেয়েছে তো! এখন কি আমি থানা পুলিশ করবো?”
আলো কোনো উত্তর দেয়না, হাঁটতে থাকে। সামিন বলে,” ঠিকাছে ঐ মেয়েটার চু*মুটা ওকে ফেরত দিয়ে আসছি দাঁড়াও।”
সামিন ঘুরে উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করে। আলো পেছন থেকে সামিনের হাত টেনে ধরে।
সামিন নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,”ঐ মেয়েটার মুখের উপর ছুড়ে দিয়ে আসছি চু*মু টা। কতবড় সাহস আলো রানীর স্বামীকে উড়ন্ত চু*মু দেয়!”
আলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে,সামিন আলোর হাত মুঠি করে ধরে বলে,”রিয়াক্ট কেনো করলাম না তার জন্য যা শাস্তি দেবে সব মাথা পেতে নেবো, এখন চলো এখান থেকে, ঐ যে দেখো আরো দুজন ব্লগার। পালাও!”
আলো হেসে ফেলে। সামিন আলোকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। আলো অস্ফুট স্বরে বলে,”চলুন।”
দু’জনে পাশাপাশি হাঁটছে, নীরবতা ভেঙে সামিন বলে,”আমি ভেবেছি বাংলাদেশেরই অলিতে গলিতে ব্লগার। সেদিন দেখলাম একজন ব্লগার একটা ছেলেকে টাস্ক দিচ্ছে, ভিড়ের মধ্যে থেকে সাদিয়া নামের কাউকে খুঁজে বের করে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে হবে, তাহলেই পাঁচশ টাকা, এক রিকশা ওয়ালা মামাকে টাস্ক দিচ্ছে তার স্ত্রীকে ফোন করে বলতে হবে সে দ্বিতীয় বিবাহ করেছে, তাহলেই পাঁচশ টাকা!
এখানে এসে দেখছি বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এখানে পরপুরুষ কে চু*মু দেবার টাস্ক দেওয়া হয়।”
আলো হেসে ফেলে, তারপর বলে,”ঠিকাছে। চলুন, আন্টিদের বলে হোটেলে ফিরি। এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
রাতের ডিনার শেষ করে তারা একটি ক্যাব নিয়ে নেয়। হোটেলের কিছুটা দূরেই ক্যাব থেকে নেমে দু’জনে হাঁটতে থাকে। চমৎকার একটা মুহূর্ত। সামিন কিছুসময় যেতেই ধীরে ধীরে আলোর একটা হাত ধরে। আলো মাথা নিচু করে মুচকি হাসে। সামিন আশেপাশে তাকিয়ে বলে,”ক্যাব থেকে নেমে পরা উচিত হয়নি আলো!”
_কেন? আপনিই তো বললেন হাঁটতে চান।
_হ্যা চেয়েছি, কিন্তু এখন বৃষ্টিতে ভিজতে হবে!
কথাটা বলে সামিন শেষ করতে পারে না। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরতে শুরু করে। সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে তার আঁচল টেনে মাথায় তুলে দিয়ে বলে,”চলো। দ্রুত।”
দু’জনে এক ছুটে হোটেলের লবিতে পৌঁছে হাঁপাতে থাকে। ততক্ষণে বৃষ্টি তাদের অনেকটাই ভিজিয়ে দিয়েছে। রুমে ঢুকে আলো তোয়ালে বের করে নিজের মাথা মুছে নিতে থাকে। সামিনের ফোনে তখন ফোন আসে এনজির ক্লিনিক থেকে। ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে থাকে সামিন। আলো তোয়ালে হাতে দাঁড়িয়ে থাকে সামিনকে তোয়ালে টা দেবে বলে। ক্লিনিকে কথা বলে ফোন কে*টে দিতেই রাহাতের ফোন আসে। সামিন পুনরায় কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পরে। আলো তোয়ালে টা দিতে গিয়েও দেয়না। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আলো জড়তা কাটিয়ে নিজেই সামিনের মাথা মুছে দিতে থাকে।
সামিন ফোন কে*টে অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। দু’জনের চোখাচোখি হতেই আলো চোখ সরিয়ে নেয়। সামিন অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”বাবা! কেয়ারিং ওয়াইফ!”
আলো লজ্জা পেয়ে যায়। সামিন আলোর হাত ধরে তোয়ালে টা নিয়ে নেয়। আলোকে কাছে টেনে আলোর হাতে চুমু খেয়ে বলে,”তখন শপিং মলে শুধু শুধু আমার ওপর ক্ষে*পেছিলে কেন?”
_আমি ঐ মেয়েটিকে বকা দিতে চাইলাম, আপনি আমাকে থামিয়ে দিলেন কেন?
_বকা দেওয়ার অনেক ধরন থাকে। তুমি আরো ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেই হতো।
আলো কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে ঠান্ডা গলায় বলে,”ওখানে আজ যদি ঐ মেয়েটা না হয়ে কোনো ছেলে হতো, আর আমাকে উড়ন্ত চু*মু দিয়ে যেতো তাহলে আপনিও আমার মতো রিয়াক্ট করতেন।”
_না, করতাম না।
ঠান্ডা গলায় বলে সামিন।
আলো অবাক হয়ে বলে,”করতেন না?”
সামিন আলোর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলে,”রিয়াক্ট কেনো করতাম? আমিতো ছেলেটাকে পুঁ*তে ফেলতাম।”
আলো চ’ম’কে ওঠে। সামিন বাঁকা হাসি হাসে। পরক্ষনেই আলোকে ক্ষে*পানোর জন্য বলে,”কি হয়েছে মেয়েটা আমাকে একটা উড়ন্ত চু*মু দিয়েছে তাতে? তুমি তো কখনো দেবে না, অন্য কেউ দিলেও এতো সমস্যা হচ্ছে কেন? আমি তো ভাবছি সিঙ্গাপুর যে কটা দিন আছি প্রতিদিন একবার করে ঐ মলে যাবো। এই ব্লগার গুলো আমাদের মতো অসহায় পুরুষদের কপাল খুলে দিচ্ছে!”
আলো চুপ করে থাকে। সামিন ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,”শুধরে যাও মেয়ে। নয়তো সত্যিই যাবো কিন্তু।”
লজ্জায় আলো মাথা নিচু করে রাখে, কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে ওয়াশ রুমে ঢোকে। সামিন একা একা হাসতে থাকে,এই মেয়েটা যতটা চঞ্চল,তেজী, ঠিক ততটাই লাজুক। বাড়াবাড়ি পর্যায়ের লাজুক!
***
আলো কপাল কুঁচকে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। একজন সিস্টার তার চুলে বেনী করে দিচ্ছে। সামিন কেবিনের ভেতরে অন্য একজন সিস্টারের সাথে কথা বলছে। হেসে হেসে কথা বলছে। সিস্টার অল্পবয়সী এবং সুন্দরী।
আলো চোখ মুখ কঠিন করে তাকিয়ে আছে সেদিকে। এতো কথা বলছে কেন ঐ সিস্টারের সাথে!
সামিন আলোর দিকে তাকায়। আলোর দৃষ্টি দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বাংলায় বলে,”কি হয়েছে?”
_কি বলছেন ওর সাথে? এতো রসিয়ে রসিয়ে কি বলছেন?
সামিন অবাক হয়ে যায় আলোর কথা শুনে, তারপর ঠান্ডা গলায় বলে,”তোমাকে সা*র্জারির পরে পাঁচদিন এখানে থাকতে হবে, তাই ঐ সিস্টারের নাম্বার নিচ্ছিলাম। আমি হোটেলে ফিরে একা একা কি করবো? ওকে ফোন করে কথা বলবো। সেও ইন্টারেস্টেড…..”
আর কিছু বলতে পারে না সামিন, তৎক্ষণাৎ আলো বেডের কুশন উঠিয়ে সামিনের মুখের উপর ছুড়ে মারে।
কেবিনের মধ্যে থাকা সিস্টার দুজন হতভম্ব হয়ে যায়। সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আলো এদিক ওদিক তাকিয়ে আরেকটা কুশন উঠিয়ে সামিনের গায়ে ছুড়ে মারে। সামিন নার্স দুজনকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই তারা চলে যায়। তারপর সে আলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে বসে, আলো মুখ ভার করে রেখেছে। সামিন আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার মাথার স্ক্রু যখন তখন খুলে পরে যায়, রেঞ্জটাকে সাথে করে নিয়ে আসা উচিৎ ছিলো।”
আলো চুপ করে থাকে। সামিন বলে,”তোমার সা’র্জারির ব্যাপারেই টুকটাক ইনফরমেশন জেনে নিচ্ছিলাম।”
_এতো হেসে হেসে জিজ্ঞেস করছিলেন কেন?
_কারন আমার কান্না আসছিলো না তাই।
ঠান্ডা গলায় বলে সামিন।
আলো তাকিয়ে আছে সামিনের দিকে। সামিন হুট করে আলোর কপালে একটা চু*মু দিয়ে দেয়। তারপর গালে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলে,”ভয় হচ্ছে?”
আলো মাথা নাড়ায়। সামিন বলে,”এটা খুবই সাধারন একটা সা*র্জারি। কোনো রিস্ক নেই। থাকো তুমি। আমি বাইরেই আছি।”
সামিন চলে যেতে নিলে আলো সামিনের হাত টেনে ধরে। সামিন ঘুরে তাকায় আলোর দিকে। আলো মৃদু স্বরে বলে,”ধন্যবাদ। ধন্যবাদ সবকিছুর জন্য!”
সামিন তাকিয়ে আছে। আলো আশেপাশে তাকিয়ে লাজুক মুখটা নিচু করে রেখে সামিনের ডানহাতের পিঠে কাঁচ ঢুকে যাওয়া ক্ষ*তর দাগটার উপরে চু*মু খায়। তারপর নিচু স্বরে বলে,”আমি এতো টাও অকৃতজ্ঞ নই মেয়র সাহেব!”
চলমান…….