#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_২৯
#Esrat_Ety
আলো সামিনের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। সামিন একবারও আলোকে দেখছে না। একমনে কিছু কাগজে সই করে যাচ্ছে। কিছু সময় চলে যেতে আলো দৌড়ে সামিনের অফিস রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ছুটতে ছুটতে গেইটের কাছে আসতেই সবাই অবাক হয়ে আলোকে দেখে। রাহাত চেঁচিয়ে বলে,”ভাবী কিছু হয়েছে?”
আলো দাঁড়ায় না। ছুটতে থাকে। হিয়া গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো। আলোকে ধরে বলে,”কিরে ছুটছিস কেন?”
আলো কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আমি বাড়ি যাচ্ছি।”
_কেন ক্লাস করবি না?
আলো কিছু না বলে একটা রিকশা থামিয়ে উঠে পরে। হিয়া আর শ্রাবনী একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাহাত সামিনের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকটা জড়তা নিয়ে বলে,”ভাবীর কিছু হয়েছে ভাই? কেমন ছুটতে দেখলাম।”
সামিন রাহাতের সেকথার জবাব না দিয়ে বলে,”লিখন দাস আর সৃজন দাসকে বিকেলে আমার এখানে নিয়ে আসবি। এখন সবাই যা। আমি কিছুক্ষণ একা থাকবো।”
রিকশায় উঠে ওড়নার কোনা কপালে চেপে ধরে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকে। তারপর কপালের যে স্থানে সামিন ঠোঁ’ট ছুঁইয়েছে,সে স্থান ঘ’ষ’তে থাকে। তার ঠোঁ’ট কাঁপছে। বাড়ির সামনে রিকশা দাঁড় করিয়ে কোনো মতে ভাড়া মিটিয়ে বাড়িতে ঢোকে। বসার ঘরে থাকা সবাইকে উপেক্ষা করে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। ব্যাগটাকে বিছানার উপরে ছুঁড়ে মেরে ওয়াশ রুমে ঢুকে ঝর্না ছেড়ে দিয়ে ওয়াশ রুমের মেঝেতে বসে পরে আলো। একটু পর পর সেই দৃশ্যটা আলোর চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কেনো সে প্রতিবাদ করতে পারলো না এহেন কাজের! নিজের প্রতি প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে তার।
***
“স্টুডেন্ট লোন!”
_জ্বি ভাই। বিদূষী কল্যান সমিতিতে এপ্লাই করেছে।
সামিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রনি বলে,”ওনারা তো গ্রাহকদের ডিটেইলস বলে না। আমার এক বন্ধু আছে ওখানে জব করে। তার থেকে জানলাম। ভাবী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের একটা ব্যাবসা শুরু করবে সম্ভবত। উনি ওখান থেকে বছর খানেক আগে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো।”
সামিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”খুব আত্মপ্রত্যয়ী মেয়ে। প্রথম প্রথম ফ’ট’কা আর ফাঁকা কলসিই মনে হতো। যত দিন যাচ্ছে অবাক হচ্ছি। দম আছে আমার বৌয়ের।”
রনি চুপ করে থাকে। সামিন বলে,”লোনটা কি পেয়েছে?”
_না। তাকে দেওয়া হচ্ছে না ভাইয়া।
সামিন বলে,”ঠিকাছে। যা। ওখানকার ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের সাথে আমার কথা বলিয়ে দিবি।
_ভাই, ভাবী জানতে পারলে কিন্তু আবার সিনক্রিয়েট করবে।
সামিন ম্লান হেসে বলে,”জানতে যদি পারে,তবে। আর শোন, সাগরকে সুবিধার মনে হয়না। ইশিতা আর আলোর দিকে একটু খেয়াল রাখবি।”
রনি মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। সামিন ফোনে আলোর একটা ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। ছবিটা আলোর কলেজের অনুষ্ঠানে আলো যখন উপস্থাপনা করছিলো তখনকার। আলোর কলেজের ফেসবুক পেজে দেখতে পেয়ে সেইভ করে রেখেছে ফোনে। ছবিটা জুম করে আলোকে ভালো করে দেখতে থাকে। মনে পরে যায় সেদিনের কথা , ব্যাজ পরাতে গিয়ে সামিনের বুকে সেইফটি পিন ফুটিয়ে দিয়েছিলো ঐ মেয়েটা। সামিন আনমনে হেসে ফেলে। আলোর ছবিটার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে,”কখনো কি দরদ দিয়ে আমাকে দেখবেই না বাঘিনী?”
***
“কিরে কাজ হয়েছে?”
হিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আলোর দিকে। আলো শুকনো মুখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
হিয়া নরম বলে,”হয়নি তাইনা? তুই যে সামিন ইয়াসারের বৌ এই ইনফরমেশন টা সেদিন দেওয়া উচিত হয়নি। ঘে’টে গিয়েছে সবটা।”
আলোর মুখে হাসি ফোটে। সে হাতের কাগজটা উঁচুতে তুলে ধরে বলে,”পেয়ে গিয়েছি। কাল টাকা হাতে পেয়ে যাবো ইনশাল্লাহ!”
হিয়া খুশি হয়ে যায়। আলো বলে,”টাকা টা হাতে পেয়ে গেলেই কাঁচামাল আর মেশিন কিনে ফেলবো। পিছু ফিরে দেখার সময় নেই আমার আর। খুব ব্যাস্ত থাকতে চাই আমি।”
হিয়া বলতে থাকে,”ভাইয়া খুব সাপোর্টিভ তাই না?”
আলো চোখ মুখ শক্ত করে হিয়ার দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে,”সবসময় ভাইয়া ভাইয়া করবি না। এতোই যখন পছন্দ ভাইয়াকে। তুই নিয়ে নে।”
হিয়া হতভম্ব হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”এসব কি বলছিস তুই? আচ্ছা ভাইয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই তুই এমন হয়ে যাস কেনো? তোদের মধ্যে কি কিছু হয়েছে?”
আলো কঠিন গলায় বলে,”না। কিছু হয়নি। তবে হবে।”
_কি ?
_ডি’ভো’র্স।
ঠান্ডা গলায় বলে ওঠে আলো।
হিয়া অবাক চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
***
কলেজের গেইটের বাইরে পা রেখে নৌশিন এদিকে ওদিকে তাকায়।হাতে তার দুটো বই। লাইব্রেরী থেকে নিয়েছে বই দুটো। কলেজের সামনের ব্যাস্ত রাস্তাটা পুরো ফাঁকা। কলেজ দেড়টায় ছুটি হয়, কিন্তু আজ সে লাইব্রেরীতে গিয়েছিলো তাই আধাঘণ্টা দেরী হয়েছে নামতে। চোখের চশমাটা ঠিক করে সামনে দু’পা ফেলতেই থ’ম’কে দাঁড়িয়ে যায়। ডানদিক থেকে দুটো বাইক বাজপাখির মতো এসে তার সামনে থামে। নৌশিন এদিক ওদিক তাকিয়ে পালানোর পথ খোঁজে। রাস্তায় কোনো লোকজন নেই। এখন কি হবে!
সামনের বাইক থেকে একটা লম্বা,ঝাঁকড়া চুলের ছেলে নেমে নৌশিনের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায়। নৌশিন ভয়ে একটা ঢোক গিলে নেয়।
_ফোন ধরবে না? সম্পর্ক রাখবে না আমার সাথে? তাই না? বলো।
ছেলেটা ধ’ম’কে ওঠে। নৌশিন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,”দেখো সৈকত। তুমি এমন করতে পারো না। তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।”
সৈকত নৌশিনের হাত ধরে ফেলে। নৌশিন কেঁদে দেয়। সৈকত দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে,”ছাড়বো না। তুই কি করবি? একবছর কেনো প্রেম করেছিস আমার সাথে তবে?”
_তুমি একটা ড্রা’গ এ’ডি’ক্ট সৈকত। আমি কোনো ড্রা’গ এ’ডি’ক্টে’র সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা। প্লিজ লিভ মি!
কাঁদতে কাঁদতে বলে নৌশিন।
“ছাড় ওকে।”
সৈকত নৌশিনের হাত ছেড়ে দিয়ে পেছনে তাকায়। আলো তার দিকে তাকিয়ে আছে। সৈকত হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করে বলে,”তোমার কথায়?”
_হ্যা। আমার কথায়। ও কি বললো শুনতে পাসনি? একটা মেয়ে যখন “না” বলে তখন সেই “না” টাকে গ্রহণ করতে শেখ জা’নো’য়া’র ।
চেঁচিয়ে ওঠে আলো। সৈকত আলোর দিকে এগিয়ে যায়। হিয়া ঘা’ব’ড়ে গিয়ে আলোকে বলে,”আলো চল। ওদের ব্যাপার। ওরা বুঝবে।”
আলো হিয়ার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে সৈকতের চোখে চোখ রাখে। সৈকত আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,”আমি জা’নো’য়া’র? তা তুই কোন দেশের সতী সাবিত্রী এসেছিস? সামিন ইয়াসারের দুই মাসের লীজ নেয়া বৌ।”
আলো চ’ম’কে ওঠে কথাটা শুনে। সৈকত সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বলে,”শোন মেয়রের দুই মাসের বৌ। এখান থেকে কেটে পর। এটা ওর আর আমার ব্যাপার।”
আলো মাথায় আগুন ধরে যায় “মেয়রের দুই মাসের বৌ” কথাটা শুনে। পায়ের জুতা খুলে হাতে নিয়ে ইচ্ছামত পে’টা’তে থাকে সৈকতকে। নৌশিন ভয়ে তটস্থ হয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
রনির নাম্বার দেখে সামিন ফোনটা রিসিভ করে বলে,”ব্যস্ত আছি রনি।”
_ভাই। ভাবী।
_কি হয়েছে আলোর?
_কিছুনা ভাই। আমাদের ভাবী আগের ফর্মে ফিরেছে।
_মানে?
_মানে ছক্কার উপর ছক্কা। একজনকে পে’টা’চ্ছে।
সামিন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। চেঁচিয়ে বলে,”মানে? কাকে?”
_সৈকত। সাগরের ছোটো ভাই। কেইসটা কি গিয়ে দেখছি। আপনি রাখেন।
_ওকে থামা। আমি আসছি।
ফোন কেটে রনি লম্বা লম্বা পা ফেলে হট্টগোলের দিকে এগিয়ে যায়। আলো জুতা রেখে চ’ড় থা’প্প’র মারতে থাকে সৈকতকে। সৈকত একসময় আলোর হাত ধরে ফেলে। ক্ষ্যা’পা কন্ঠে বলে,”মেয়ে মানুষ বলে চুপ করে আছি আলো।”
রনি গিয়ে একটা ঘু’ষি মেরে দেয় সৈকতকে। নাক বেয়ে র’ক্ত ঝরছে সৈকতের। রুমাল চেপে ধরে রনির দিকে তাকিয়ে আলোকে বলে,”তোর কন্ট্রাক্টের স্বামী দেখছি তোর পেছনে বডিগার্ডও লাগিয়ে রেখেছে।”
আলো আবার তে’ড়ে যায় সৈকতের দিকে। পেছন থেকে হিয়া জাপটে ধরে রাখে তাকে। সৈকত একবার রনি, একবার আলো, একবার নৌশিনের দিকে তাকায়। তারপর নৌশিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,”খুব ভুল করলে তুমি নৌশিন।”
লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছে রাস্তাটায়। রুমাল দিয়ে নাক মুছে র’ক্তা’ক্ত রুমালটা ছুঁ’ড়ে মারে রাস্তায়। তারপর বাইকে উঠে চলে যায় সেখান থেকে।
রনি আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাবী। ও কি আপনাকে ডিস্টার্ব করছিলো?”
_আমাকে ডিস্টার্ব করার জন্য আপনার ভাই রয়েছে রনি। ও নৌশিনকে ডিস্টার্ব করছিলো। জো’র’পূ’র্ব’ক নৌশিনের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় ও। ঠিক আপনার ভাইয়ের মতো।
রনি চুপ করে থাকে। আলো আশেপাশে তাকিয়ে লোকজনকে বলে,”আপনারা যান। প্লিজ যান।”
লোকজন চলে যায়। আলো রনির দিকে তাকিয়ে বলে,”এই পুরুষ গুলো নারীর ইচ্ছার ধার ধারে না কেন বলতে পারেন রনি?”
হঠাৎ সেখানে সামিনের গাড়ি থামে। তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে আলোর দিকে তাকিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”কি হয়েছে আলো? ওরা কি করেছে তোমাকে?”
আলো মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তারপর রনির দিকে তাকিয়ে বলে,” আপনাদের যদি কেউ হায়ার করে থাকে আমাকে দেখেশুনে রাখার জন্য। তাহলে জেনে রাখুন, আমার কোনো বডিগার্ড লাগবে না। তাকে বলে দিবেন।”
আলো সামিনের দিকে না তাকিয়ে চলে যায়। রাস্তাটা পুরোপুরি খালি হয়ে যায়। সামিন একবার রনির দিকে তাকিয়ে বলে,”ওর কোথাও লাগেনি তো?”
রনি মাথা নাড়িয়ে বলে,”শরীরে কোথাও লাগেনি। তবে মনে লেগেছে ভাই। ভাবীকে আপনার দুই মাসের লীজে নেয়া বৌ বলেছে ওই সৈকত।”
***
বাড়ি ফেরার তাড়া নেই কোনো তার। আগে ইশিতা সামিনের একটু দেরী হলেই ফোন দিয়ে দিয়ে ব্যস্ত করে ফেলতো। তারপর আলো আসার পর থেকে সামিন ইচ্ছে করেই আগেভাগে বাড়িতে ফিরতো। গিয়ে দেখতো একটা ছোটোখাটো, দেখতে ভারি মিষ্টি কিন্তু তেজী মেয়ে বিড়ালছানার মতো তার বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে। এখন তো কিছুই নেই সামিনকে তাড়াতাড়ি বাড়ি টেনে নেয়ার, না আছে আলো, না ইশিতার ফোন। ভাইয়ার সাথে ঠান্ডা যু’দ্ধ চলছে বোনের। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
পার্টি অফিসের সামনে গাড়িটা পার্ক করে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে থাকে সে। মনটা ভারি হয়ে আছে তার। আলোকে আজ তার জন্য মানুষের বাজে কথা শুনতে হচ্ছে। সবকিছুর জন্য সে দায়ী। মস্ত বড় একজন অ’প’রা’ধী সে। সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার কাছে। না পারছে আলোর প্রতি জন্মানো অনূভুতিকে দমিয়ে রাখতে,না পারছে আলোর মনে যায়গা করে নিতে। এসব জোর জ’ব’র’দ’স্তি ভালোবাসা দেখিয়ে কোনো মেয়ের হৃদয় পাওয়া যায়না সামিন জানে। কিন্তু সে কি করবে?
কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরে সামিন। তারপর একটা রিকশা থামিয়ে উঠে পরে।
***
বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে এপাশ ওপাশ করছিলো। তারপর উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকায়। রাত বারোটা সাতাশ মিনিট। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পরছে সম্ভবত। উঠে গিয়ে জানালার কাচ টেনে দেয়। পুনরায় এসে বিছানায় বসে পরে। পুরো মহল্লা নিস্তব্ধ হয়ে আছে। রাত গভীর। আলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। তারপর নিজেকে ভালোভাবে দেখতে থাকে। শ্যামলা মেয়েদের এই একটা সুবিধা। চোখের নিচে কালি পরলে সহজে ধরা পরেনা। বেশ মানিয়ে যায়। আলো আজ একটা শাড়ি পরেছে। গোলাপি জমিনে সাদা রঙের সুতার কাজ। বেশ মানিয়েছে আলোকে শাড়িটায়। হঠাৎ ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দ হতেই ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা তুলে নেয়। সামিনের ফোন। অন্যসময় হলে কপাল কুঁ’চ’কে ফেলতো কিন্তু এখন আলোর কোনো ভাবান্তর নেই। সে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে স্ক্রিনে। সামিন দ্বিতীয় বারের মতো ফোন দিলে আলো ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে চুপ করে থাকে, ওপাশ থেকে সামিনের বেহায়া কন্ঠস্বর শোনা যায়।
“কি করছিলে আছিয়া?”
_আপনার মৃ’ত্যু কামনা।
কাটকাট জবাব দেয় আলো।
সামিন ম্লান হেসে বলে,”তুমিই আমার নীলনদ আছিয়া। এই ফেরাউন তোমাতেই ডুবে ম’রে গিয়েছে। কার মৃত্যু কামনা করছো তুমি?”
আলো চুপ করে থেকে বলে,”কেনো পিছু ছাড়ছেন না আমার?”
_বেহায়া, নি’র্ল’জ্জ তাই।
আলো একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”আপনি আমার জীবনের একটা অভি’শাপ জানেন?”
_জানলাম। এখন দরজাটা একটু খোলো আলো। ভিজে যাচ্ছি আমি।
আলো অবাক হয়ে বলে,”মানে?”
_মানে আমি তোমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
আলো দ্রুতপায়ে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে কাচ সরায়। সামিন বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আলো চাপা স্বরে চেঁচিয়ে বলে,”চলে যান এখান থেকে। এখানে কি এতো রাতে?”
_তোমার কাছে এসেছি। জরুরি দরকারে। নিচে এসে দরজা খোলো।
_পারবো না। আপনি চলে যান। কোনো দরকার নেই আপনার সাথে আমার।
_ডি’ভো’র্সের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি আলো। দরজা টা খোলো না।
আলো মুখে চ কারন্ত শব্দ করে বলে,”যা বলার ফোনে বলুন।”
সামিন বলে,”ফোনে এতো কথা বলা যাবে না। আর তাছাড়া নেটওয়ার্কে ঝামেলা হচ্ছে খুব। হ্যালো….হ্যালো…. হ্যা আলো, কিছু বললে? আমি শুনতে পাচ্ছি না। দেখলে আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না। তুমি দরজা খোলো।”
হুট করে ফোন কেটে দিয়ে সামিন গেইটের ভেতরে ঢুকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। আলো কিছুক্ষণ ঘরে থম মে’রে দাঁড়িয়ে থেকে ঘর থেকে বের হয়। তারপর সোজা হেটে সদর দরজার কাছে যায়।
দরজা খোলার শব্দ হতেই সামিন মাথা তুলে তাকায়। তার সামনের নারীটিকে দেখে তার হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে যায়। আলো তার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে। সামিন কিছু সময় আলোর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে ঘরের ভেতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।
আলো নিষ্প্রাণ গলায় বলে,”বলুন কি? কতদূর এগিয়েছে?”
সামিন এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,”বলবো। আগে এক গ্লাস পানি খাওয়াও।”
আলো দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন বলে,”পানি চেয়েছি আলো। তৃষ্ণার্ত ব্যাক্তিকে পানি খাওয়ানো সওয়াবের কাজ।”
আলো একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে এক গ্লাস পানি এনে দেয় সামিনকে। সামিন সবটুকু পানি খেয়ে গ্লাসটা আলোর হাতে দেয়। আলো বলে,”বলুন এবার।”
সামিন গা ছাড়া ভঙ্গিতে বলে,”খিদে পেয়েছে খুব। আজ সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। খালি পেটে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আমি করতে পারি না। আগে কিছু খেতে দাও। ভাত থাকলে ভাত দাও।”
আলো অসহায়ের মতো এদিক ওদিক তাকায়। আ’প’দ টাকে বাড়িতে ঢুকিয়ে সে ভুল করেছে। এখন কতক্ষন জ্বা’লি’য়ে মারবে কে জানে!
সামিনের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলে,”ভাত আছে। তরকারি নেই। সব শেষ। তাড়াতাড়ি ডিভোর্সের কথা বলে আপনি আপনাদের বাড়িতে গিয়ে খান।”
সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”তো? তরকারি শেষ হয়েছে তো কি হয়েছে? একটা ডিম ভেজে দাও। এতটুকু সাংসারিক বুদ্ধি নেই?”
_আমি এখন আপনার জন্য ডিম ভাজবো?
_হ্যা।
_কেন? কোন দুঃখে?
_আমি তোমাকে আমাদের বাড়িতে ভালো ভালো খাইয়েছি সেটার শোধ দাও। যাও একটা ডিম ভেজে আনো।
আলো সামিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,”যাচ্ছি। চুপচাপ খেয়ে,আসল কথা বলে বিদায় হবেন।”
সামিন দাঁড়িয়ে থাকে। আলো রান্নাঘরে চলে যায়।
গরম তেলে ডিমটা ছেড়ে দিতেই তা শব্দ করে ফুলে ফেঁপে ওঠে। আলো একদৃষ্টে সেদিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছিলো ডিমের মধ্যে এক থা’বা লবণ ঢেলে দিতে। কিন্তু নিজের বাড়িতে আসা কোনো অভুক্তকে এভাবে নাজেহাল করতে আলোর বিবেকে বাধা দিয়েছে। ডিম ভাজা হয়ে গেলে টেবিলে একটা প্লেটে ভাত বেড়ে বসার ঘরের দিকে যায়। সামিনের দিকে না তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,”খেতে আসুন।”
সামিন উঠে দাঁড়ায়। আলোর পিছু পিছু তাদের ডাইনিং রুমের দিকে যায়। নিচু স্বরে আলোকে বলে,”শাড়ি পরেছো কেনো? তুমি জানতে আমি আসবো?”
আলো দাঁড়িয়ে পরে। সামিনের দিকে একপলক তাকিয়ে খাবার টেবিলের দিকে তর্জনী আঙ্গুল তাক করে বলে,”চুপচাপ খেতে বসুন।”
সামিন কোনো কথা না বলে চেয়ার টেনে বসে পরে। আলো চলে যেতে নিলে সামিন নরম গলায় বলে,”যেওনা প্লিজ। আমি একা একা খেতে পারিনা। আগে মা তিনবেলা আমার পাশে বসে থাকতো আমি যখন খেতাম। মা মারা যাওয়ার পরে ইশিতা অথবা রিতু কেউ না কেউ থাকতো।”
আলো কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন চুপচাপ একটা ডিম ভাজি দিয়ে ঠান্ডা খরখরে ভাতটা খেয়ে নেয়। প্লেটে হাত ধুয়ে টিস্যু পেপার খুঁজতে থাকে হাত মুখ মুছতে। আলো ঘুরে দাঁড়ায় , সামিন টিস্যু পেপার না পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আলোর আঁচল টেনে ধরে। আলো থ’ম’কে দাঁড়িয়ে যায়। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে সামিন তার আঁচলে নিজের হাত মুছে নিচ্ছে।
নিজের আঁচল ছাড়িয়ে নিয়ে তিনলাফে আলো পিছিয়ে যায়,চাপা স্বরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”ছিঃ নোংরা লোক!”
সামিন আলোকে কিছু না বলে সোজা হেটে আলোর ঘরের দিকে যেতে থাকে। আলো চেঁচিয়ে ওঠে,”ওদিকে কি? কোথায় যাচ্ছেন?”
_তোমার ঘরে।
_কেন?
_বিশ্রাম নিতে।
_খাওয়া হয়ে গিয়েছে,এখন জরুরি কথা বলে বের হন ইয়াসার মির্জা।
সামিন হাঁটতে থাকে। আলো পিছু পিছু যেতে যেতে বলে,”বাড়াবাড়ি করছেন। লোক ডাকবো?”
_ডাকো।
সামিন সোজা আলোর ঘরে ঢোকে। আলো বলে ওঠে,”আপনি কিভাবে জানলেন এটা আমার ঘর?”
সামিন গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আমি গন্ধ শুঁকে বলতে পারি কোনটা কার ঘর। এই ঘর থেকে তোমার ইগো, আত্মসম্মান, রাগ, ঘৃ’ণার তীব্র গন্ধ আসছিলো। তাই বুঝে গেলাম।”
সামিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আলো। তারপর সামিনকে ঠেলতে ঠেলতে ঘরের দরজার কাছে নিয়ে যায় আলো,”বের হন। এক্ষুনি বের হন বলছি। যা বলার বসার ঘরে বসে বলবেন।”
সামিন বাঁকা হাসে। তারপর খানিক বাদে কাঁচুমাচু মুখ করে বলে,”বৃষ্টি পরছে বাইরে আলো। দেখছো না তুমি? এভাবে বের করে দেবে বাড়ি থেকে? এতো রাতে? আমি গাড়ি আনিনি সাথে।”
আলো সামিনের চোখে চোখ রেখে বলে,”ডিভোর্সের কথা বলুন।”
_ও হ্যা। আসল কথা বলতেই ভুলে গিয়েছি। দুই সপ্তাহ দেরী হবে।
_কেন? দেরী কেন হবে?
_তা তো আমি জানি না। তিনজন উকিলের কাছে গিয়েছিলাম। তিনজনই একই কথা বলছে। এটা একটা লম্বা প্রসেস।
আলো দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”আমি অশিক্ষিত? আমাকে মুর্খ মেয়ে মনে হয়? এসব সম্পর্কে আমার কিছুটা হলেও ধারনা আছে। আপনি মিথ্যা বলছেন।”
_এতো মাথা ঘামাচ্ছো কেনো ডিভোর্স নিয়ে? এই বিয়েটাই তো তুমি মানো না। সেখানে ডিভোর্স হলো কি হলো না তাতে কি যায় আসে?
_যাতে আপনি কখনো ঝামেলা না করেন বিষয়টা নিয়ে।
আলো তেজী কন্ঠে বলে।
_ঠিকাছে। তাহলে তুমি গিয়ে কথা বলো উকিলের সাথে।
ঠান্ডা গলায় জবাব দেয় সামিন।
আলো সামিনের কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হয়। সেটাই ভালো হবে। কাল সে যাবে উকিলের কাছে।
সামিন ঘরের এদিক ওদিক তাকায়। আলো বলে,”কি দেখছেন?”
সামিন মনে মনে বলে,”আমার বাচ্চাদের নানা বাড়িটা সুন্দর।”
মুখে বলে,” ঘুমাবো আমি। প্রমিজ। কাল সূর্য ওঠার আগে চলে যাবো। পাক্কা। প্লিজ এতো রাতে বের করে দিও না। একটু দয়া করো।”
আলো সামিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,”ঠিকাছে। আপনি ঘুমান।”
কথাটা বলে আলো ঘর থেকে বের হয়ে যেতে নেয়। সামিন আলোর হাত টেনে ধরে বলে,”কোথায় যাচ্ছো?”
আলো তার হাতের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আমার দাদীর ঘরে।”
সামিন আলোর হাত ছেড়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে,”এই গভীর রাতে একটা বৃদ্ধা মানুষকে বিরক্ত করা ঠিক আলো? তুমি এখানেই থাকো।”
_এক বিছানায়? আপনার সাথে? খুব শখ তাই না?
সামিন লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায় তারপর বলে,”আমি মেঝেতে ঘুমাবো।”
আলো দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,”বুঝতে পেরেছি। তুমি ভাবছো তুমি আমার সাথে এক ঘরে থাকলেই আমার প্রেমে পরে যাবে। সেই ভয়ে পালাচ্ছো। তাই না?”
_এমন কিচ্ছু না।
আলো চেঁচিয়ে ওঠে। সামিন বলে,”বেশ তাহলে থাকো এই ঘরে। প্রুভ দাও।”
সামিন কথাটি বলে বিছানা থেকে একটা চাদর উঠিয়ে নিয়ে মেঝেতে বিছিয়ে নেয়। তারপর একটা বালিশ নিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পরে। আলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পরে সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”এই বৃষ্টির মধ্যে আমাকে বের করে দিলে নির্ঘাত মা’রা পরতাম আমি।”
আলো নিচু স্বরে বলে,”ভালোই হতো। আমি বেঁচে যেতাম।”
সামিন আলোর দিকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে ওঠে,”বেঁচে যাওয়ার চান্স কিন্তু সামনে আছে আছিয়া। বললাম না আমার জন্য তুমি নীলনদ? তুমি দিন দিন যেভাবে আমাকে ডুবাচ্ছো। দেখবে একদিন আমি মা’রা পরবো।”
চলমান…..
#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৩০
#Esrat_Ety
সামিনের কথার কোনো জবাব না দিয়ে আলো ধীরপায়ে হেটে গিয়ে নিজের বিছানায় বসে পরে। সামিন উঠে বসে। তারপর আলোর দিকে তাকায়। নরম গলায় বলে ওঠে,”আমার ম’রা’র কথা শুনে হার্ট হয়েছো আছিয়া?”
_বাজে কথা বন্ধ করুন। ঘুমান।
সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। আলো রেগেমেগে বলে,”এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। চোখ সরান।”
সামিন চোখ সরিয়ে নিয়ে মৃদু হেসে বলে,”তোমার আসলে ভ’য় হচ্ছে আমার চোখে চোখ পরলে তুমি প্রেমে পরে যাবে তাইনা?”
আলো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই লোকটা সত্যি ই অসহ্যকর পর্যায়ের ধৈর্যশীল বেহায়া।
কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে আলো বলে ওঠে,”আমার একজনের সাথে গভীর প্রনয় ছিলো ইয়াসার মির্জা। গভীর বোঝেন? তীব্র অনুভূতি। সে আমার সাথে মিথ্যাচার করেছিলো বলে তাকে আমার মন ও মস্তিষ্ক থেকে ঝে’ড়ে ফেলতে সময় নিইনি আমি। আমি মেয়েটাই এমন ইয়াসার মির্জা। আর আপনি ভাবছেন আপনি এমন ছ্যা’চ’ড়া’মি করবেন আর আমি পটে যাবো? এতো সোজা? আমার প্রাক্তন ছলনা করে আমাকে পেতে চেয়েছিলো আর আপনি জো’র করে চাচ্ছেন। দুটোই আমি ঘৃ’ণা করি। কাজ হবে না।”
সামিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আলোর থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। আলোর কথার জবাবে সে কিছু বলে না। বাইরে ঝড়ের বেগ বাড়ছে। বজ্রপাত হচ্ছে। কিন্তু আলোর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। চুপচাপ বসে আছে বিছানায়। সামিন এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে ওঠে,”ওগুলো কি?”
আলো মাথা ঘুরিয়ে ডানপাশে তাকায়। তারপর সামিনের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,”এগুলো আমার বিজনেসের কাঁচামাল।”
_বিজনেস?
_একটা বিজনেস শুরু করতে যাচ্ছি। হোমমেড আচার,হেয়ার ওয়েল এবং মশলার।
_বক্সগুলোতে কি?
_মেশিনপত্র।
সামিন অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকায়। তারপর বলে,”একা একা এতকিছু কিভাবে করবে?”
_লোক নিয়েছি। দুজন তৃতীয় লিঙ্গের আপু রয়েছে, একজন বিধবা রয়েছে আর আমার দুজন বান্ধবী। আপাতত আমাদের বাড়িতে থেকেই কাজ টা করবো। তারপর ধীরে ধীরে একটা স্টোর নিতে চাচ্ছি।
সামিন আলোর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার মুগ্ধতার রেশ কাটছে না। সামিনের চোখে আলোর চোখ পরতেই সামিন চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর আমতা আমতা করে বলে,”বাহ। বেশ ভালো। হেল্প লাগলে বলবে আমাকে।”
_আপনার হেল্প কেনো লাগবে? আপনি ছাড়া কেউ চলতে পারে না ভেবেছেন? সংস্থা আমাকে লোন দিয়েছে।
সামিন চুপ হয়ে যায়। আলো বলতে থাকে,”বকর বকর না করে ঘুমান। আর আমি আপনাকে এতো কথা বলছি কেনো। আশ্চর্য। শুনুন ফজরের নামাজ পরতে পাড়ার চাচারা বের হবার আগে আপনি কেটে পরবেন। আমি গিয়ে কাল উকিলের সাথে কথা বলবো।”
কথাটা বলে আলো গাঁয়ে চাদর টেনে ওদিক ফিরে শুয়ে পরে। সামিন জেগে থাকে। দীর্ঘ সময় সে আলোর পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সামিন সত্যি সত্যি কেউ উঠে পরার আগেই উঠে চলে যায়। এর ভিতরে এক মিনিটের জন্য সে দু’চোখ বন্ধ করেনি। অপলক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত আলোর দিকে তাকিয়ে ছিলো।
রেহেনার চেঁ’চা’মে’চি তে আলোর ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য উঠে রেহেনা দেখতে পায় বাড়ির সদর দরজা লক করা নেই। শুধু ভেজিয়ে রাখা। চোর এসেছিলো ভেবে চেঁ’চামেচি করতে থাকে রেহেনা। আলো উঠে বসে ঘরের এদিক ওদিক তাকায়। সামিন চলে গিয়েছে। চাদরটা ভাজ করে পায়ের কাছে রেখেছে আলোর। বালিশটাও ঠিক যায়গায় রাখা। আলো মাথা ঘুরিয়ে দেখে তার বিছানার মাথার কাছে একটা কাগজ। সে হাত বাড়িয়ে কাগজটা হাতে নেয়।
“রাতের দয়াটুকুর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে এইবার ধন্যবাদ তোমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিইনি। মন থেকে দিয়েছি। যতটা নি’ষ্ঠু’র তোমাকে ভেবেছি। অতটা নি’ষ্ঠু’র মেয়ে তুমি নও।”
আলো কিছুক্ষণ চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থেকে চিঠিটা দলা পাকিয়ে ঝুড়িতে ছু’ড়ে মারে। তারপর গায়ের চাদর সরিয়ে রেহেনার কাছে যায়। রেহেনা আজান আয়াতকে ধমকাচ্ছে। আলো গিয়ে বলে,”ওদের ধমকাচ্ছো কেন? দরজা আমি খুলেছি কিছুক্ষণ আগে। ছাদে গিয়েছিলাম। পরে আর লাগাইনি। চিন্তা করো না,চোর আসেনি।”
***
সামিনকে দেখে রিতু এগিয়ে যায়। উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”কাল রাতে বাড়িতে আসেননি ভাইয়া। আপনার ফোন বন্ধ ছিলো। কোথায় ছিলেন?”
সামিন ধীরপায়ে হেটে সিড়ির কাছে যেতে যেতে বলে,”শশুর বাড়ি রিতু।”
রিতু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সামিনের দিকে। সামিন সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে। ইলহাম সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে। সামিনকে দেখে মাথা নিচু করে নেয়। সামিন বলতে থাকে,”ঠিক ঠাক মতো অফিসে বসবি। তোর বৌ বাচ্চা আমি খাওয়াতে পারবো না।”
কথাটা বলে সামিন মৃদু হেসে ঘরে চলে যায়। সারারাত নির্ঘুম ছিলো তাই মাথাটা বেশ ব্যাথা করছে। একটু কফি খেতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু কাউকে ডেকে বলতেও ইচ্ছে করছে না। সামিন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরে। তার ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
***
“মানে টা কি তুই আসতে পারবি না? এসব কি বলছিস। আজ কাজ শুরু করবো আমরা। প্রথমদিনেই অনুপস্থিত?”
আলোর মে’জা’জ গরম হয়ে গিয়েছে। হিয়া ফোনের ওপাশ থেকে আমতা আমতা করে বলে,”ওর সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি। চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছে ও।”
আলোর বিরক্তিতে কপাল কুঁ’চ’কে যায়। হিয়া বলে,”প্লিজ রা’গ করিস না। আজকে তোরা ম্যানেজ কর। আমি কাল থাকবো। প্লিজ প্লিজ।”
আলো ফোন কেটে দিয়ে সবার দিকে তাকায়। ওদের দলের শেফালী বলে ওঠে,”আপু রা’গ করো না। চলো আমরা কাজ শুরু করি। এসো।”
অয়নের কাঁধে মাথা রেখে হিয়া বসে আছে। অয়ন হিয়ার একটা হাত ধরে চু’মু খায়। হিয়া মন খারাপ করে বলে,”আবার কবে আসবে তুমি?”
_ভার্সিটি বন্ধ দিলেই।
হিয়া চুপ করে বসে থাকে। কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বলে না । তারপর অয়ন বলে,”এখন উঠতে হবে হিয়া। জায়গা টা ভালো ঠেকছে না। আজেবাজে ছেলেরা আসছে। চলো ওঠো।”
হিয়া ওঠে না। অয়নকে ধরে বসে থাকে সে।
“ভাই দেখেছিস। ওখানে কি হচ্ছে?”
হিয়াদের থেকে কিছুটা দূরেই একদল বসে ই’য়া’বা খেয়ে বুদ হয়ে পরে ছিলো। তাদের মধ্যে ছিলো সৈকত। রিয়াদ নামের ছেলেটার কথায় মাথা তুলে অয়ন আর হিয়াকে দেখে। তারপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জরানো গলায় বলে,”দুটোকে ধরে এখানে নিয়ে আয়।”
হাসি মজার ছলে বেশ ভালোই চলছিলো আলোদের প্রথম দিনের কাজ। আজ তারা শুধুমাত্র আচার বানানোর কাজে হাত দিয়েছে। বাকি দু’টো কাজের বেশ কিছু অর্ডার করা কাঁচামাল এসে পৌঁছায় নি। সবাই মিলে গল্প করছে। নিজেদের জীবনের গল্প। আলোদের বাড়ির ছাদের ঘরটাকে আলো তার কাজের জায়গা হিসেবে ঠিক ঠাক করে নিয়েছে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই আলো হাত মুছে উঠে ফোনটা হাতে নেয়। স্ক্রিনে হিয়ার নাম্বার টা দেখে আলো রিসিভ করে কানে ধরে। ওপাশ থেকে হিয়ার কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আলো উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”কি হলো?”
হিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে,”আমাকে আটকে রাখা হয়েছে আলো।”
_মানে?
চেঁচিয়ে ওঠে আলো।
হিয়া বলতে থাকে,”যেখানে ঘুরতে এসেছিলাম সেখানের একটা গ্যাং আমাকে আর অয়নকে এসে হ্যা’রা’স করে। পরে অয়নের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ওকে চ’ড় থা’প্প’র মে’রে ওর থেকে টাকা চায়। ওর কাছে টাকা নেই দেখে আমাকে আটকে রেখে ওকে বলে টাকা নিয়ে আসতে। অয়ন এখনো ফেরেনি আলো। আমার খুব ভয় করছে। ওরা খুব বাজেভাবে আমার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ওদের দলের লিডার সৈকত। সবকটা নেশা করে আছে আলো।
আলোর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে। সে ঘামছে,হিয়াকে বলে,”আংকেল কে ফোন করে বলি?”
_না আলো। বাবা আমাকে মেরেই ফেলবে। তুই প্লিজ দশ হাজার টাকা নিয়ে আয়। প্লিজ। তাহলেই ছেড়ে দেবে ওরা।
আলো চিন্তায় পরে যায়। এখন আর কোনো উপায় নেই। এই লোকাল গ্যাং গুলো বেশ ভ’য়ং’ক’র। একবার পুলিশের কথা মাথায় আসে আলোর। পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত পাল্টে নেয়। হিয়ার বাবাকে সে চেনে। জ’ল্লা’দ একটা। এসব জানাজানি হয়ে গেলে একেবারে পুঁ’তে ফেলবে মেয়েকে।
নিজেদের ব্যাবসার ক্যাশ থেকে দশহাজার টাকা নিয়ে আলো বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।
সৈকত হিয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে থাকে। হিয়ার প্রচন্ড ভ’য় করছে। ঘোর লাগা কন্ঠে সৈকত বলে,”কেমন বয়ফ্রেন্ড তোর? তোকে বাঘের মুখে ফেলে দিলে পালিয়েছে। তোরা সতী সাবিত্রী মেয়েরা খুজে খুজে এসব বা’ঞ্চো’দ কোথায় পাস?”
হিয়ার চোখ বেয়ে পানি পরে। অয়নের থেকে এটা আসা করেনি সে। কষ্টে বুকটা ফে’টে যাচ্ছে।
রিয়াদ সৈকতকে বলে,”সতী কাকে বলছিস? সতী হলে কেউ বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঝো’পে ঢোকে? চল এটাকে খে’য়ে ছে’ড়ে দেই।”
হিয়া আ’ত’কে ওঠে। ঝরঝর করে কেঁ’দে দেয়। সৈকত রিয়াদকে বলে,”না। আমার ওর বান্ধবীটাকে লাগবে। সেদিন আমাকে জুতাপেটা করেছিলো। আজ আসুক। কত ধানে কত চাল দেখিয়ে দেবো।”
***
“আপনার কাছে শুধু রিকোয়েস্ট থাকবে এসব কথা ঘুনাক্ষরেও যেনো অদ্রিতা আলো জানতে না পারে। প্রত্যেক মাসে লোনের টাকা পরিশোধ করতে এলে চুপচাপ নিয়ে নেবেন। তারপর আমার একাউন্টে পাঠিয়ে দেবেন।”
বিদূষী কল্যান সমিতির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অতীশ পালের দিকে তাকিয়ে সামিন গম্ভীর কন্ঠে বলে।
অতীশ পাল মাথা নাড়িয়ে বলে,”অবশ্যই। অবশ্যই। বুঝতে পেরেছি আমি। আপনি চিন্তা করবেন না।”
সামিন উঠে দাঁড়ায়। তার আজ কিছু জরুরী কাজ রয়েছে উকিলের কাছে,তাকে সেখানে যেতে হবে এখন।
“হিয়া”
আলোর কন্ঠস্বর শুনে হিয়া দেহে প্রান ফিরে পায়। দৌড়ে গিয়ে আলোকে জরিয়ে ধরে। আলো হিয়াকে সরিয়ে দিয়ে সৈকতের দিকে তাকায়। সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছে সে বসে বসে। আলো এগিয়ে এসে ভদ্রভাষায় বলার চেষ্টা করে,”তোদের টাকা এনেছি। এখন ওকে ছাড়।”
সৈকত গা ছাড়া ভঙ্গিতে বলে,”টাকা দে আগে।”
আলো পার্স ব্যাগ থেকে টাকাটা বের করে সৈকতের দিকে এগিয়ে দেয়। সৈকত টাকা টা গুনে নিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই যা। তোর বান্ধবী আমাদের কাছে থাকুক।”
আলো দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”মানে?”
সৈকত হাসে। বলে,”আমার ভাইয়া আসুক। মানে টা পরে বোঝাবো।”
এমন সময় অয়ন এসে পরে সেখানে। হিয়া রেগেমেগে বলে ওঠে,”দেরী করছিলে কেনো?”
_টাকাটা ম্যানেজ করতে দেরী হয়েছে!
_সামান্য দশ হাজার টাকা ম্যানেজ করতে চৌদ্দ বছর লাগে ই’ডি’য়’ট?
সৈকত হেসে ওঠে। অয়নের দিকে তাকিয়ে বলে,”দে, টাকা টা দে।”
অয়ন টাকা টা দিয়ে দেয়। তারপর সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলে,”এখন আমাদের যেতে দিন।”
সৈকত আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বলে,”তোরা যা। আলো এখানে থাকবে।”
অয়ন ঘা’ব’ড়ে যায়। আলো ক’ট’ম’ট দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে সৈকতের দিকে। সৈকত বলে,”চোখ নামা। আমার ভাইয়া আসছে এখানে। সেদিনের মা’রে’র জবাব আজ তোকে দেবো।”
অয়ন আর হিয়া আলোকে ছেড়ে যায়না। তারাও বসে আছে।
কিছু সময় পরে সেখানে সাগরের গাড়ি থামে। সৈকত এগিয়ে যায়। চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ফেলে সাগর বলে,”কি হয়েছে এখানে?”
_সামিনের বৌ টাকে বাগে পেয়েছি। আজ এমন শিক্ষা দেবো। ও পা ধরবে আমাদের। সেটা সামিনকে ভিডিও করে পাঠিয়ে দেবো।
সৈকতের মুখে আলোর কথা শুনে সাগর আলোর দিকে তাকায়। তারপর পা থেকে মাথা পর্যন্ত আলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। সাগরের দৃষ্টি দেখে আলো নিজের ওড়না ঠিক করে নেয়।
আলোকে দেখে সাগর একটা পৈশাচিক হাসি দেয়। নাহ, সামিনের টেস্ট বরাবরই বেশ ভালো। সত্যিই ভীষণ সুন্দরী!
সৈকত বলে,”সেদিন কি মারটাই না মেরেছে আমাকে।”
সাগর সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলে,”নে’শা করেছিস তুই? আচ্ছা এখন শোন, যেটা চাইছিস সেটা ভুলেও করিস না। সামিন জিন্দা ক’ব’র দিয়ে দেবে। আমি ওকে চিনি। ওদের ছেড়ে দে। প্রতিশোধ পরে নেয়া যাবে।”
সৈকত ক্ষেপে গিয়ে বলে,”না। আজ একটা হেস্তনেস্ত করবে তুমি। আমার ভাইয়া এতো ভী’তু জানতাম না।”
তারপর আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই এখন আমার আর আমার ভাইয়ার পা ধরবি। নাকে খত দিবি। তারপর তোদের ছাড়বো।”
_আর যদি এসব কিছু না করি?
_তাহলে তোর বান্ধবী আর বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ডের চু’ম্মা’চা’টির ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবো।
আলোর মুখটা শুকনো হয়ে যায়। হিয়া কাঁ’দ’তে শুরু করে। অয়ন ভীত চোখে তাকিয়ে আছে সৈকতের দিকে।
সাগর সৈকতের হাত টেনে নিয়ে ওপাশে নিয়ে যায়,ধ’ম’কের সুরে বলে,”মাথা ঠান্ডা কর। ও সামিন। যে সে কেউ না।”
_কি করবো? ওর বৌকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? তুমি ওর থেকে প্রতিশোধ চাও না?
_চাই। এভাবে না। এভাবে ফে’সে যাবো। সময় আসুক।
তারপর নিজের ফোনটা বের করে সাগর বলতে থাকে,”যা হয়েছে এ পর্যন্তই। আজ শুধু সামিনকে একটু ভয় দেখাই। ওর বৌকে কিছু করিস না। ঠিকাছে?”
সৈকত চুপ করে থাকে। সাগর আলোর দিকে আরো একবার তাকিয়ে সামিনের নাম্বারে ফোন লাগায়। ওপাশ থেকে সামিন ফোনটা রিসিভ করতেই সাগর বলে ওঠে,”সামিন ইয়াসার!”
_ফোন দিয়েছিস কেনো আমাকে?
_তোর একটা জিনিস আমার কাছে। এসে নিয়ে যাবি না?
_মানে? কি বলতে চাইছিস?
_তোর বৌ। আমার কাছে এসেছে। নিয়ে যা এসে।
_মুখ সামলে কথা বল।
_বিশ্বাস হয়না? শোন তোর বৌয়ের গলায় একটা চমৎকার তিল আছে দেখলাম, তুই তো ভালো করেই জানিস সেকথা।
সামিন উঠে দাঁড়িয়ে যায়। সাগর বলতে থাকে,”আধাঘণ্টার মধ্যে দিঘির পাড়ে এসে নিয়ে যা। নয়তো উল্টো পাল্টা কিছু হয়ে গেলে আমায় দোষ দিবি না। আর হ্যা, টু টা সাউন্ড করবি না কোনো।”
ফোন কেটে দিয়ে সামিন পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তার মাথা কাজ করছে না।
***
আলো থা’বা মেরে সৈকতের ফোনটা নিয়ে হিয়ার ভিডিওটা ডিলিট করতে চেষ্টা করে। সৈকত ফোনটা নিয়ে নিতে যায়।
সাগর আলোকে দেখতে থাকে,সামিনের বৌ একেবারে সামিনের মতোই ক্ষ্যা’পা। ক্ষ্যা’পা মেয়েরা সাগরকে বরাবরই মুগ্ধ করে।
সৈকত চেঁচিয়ে ওঠে,”তোর বি’ষ কমবে না তাই না?”
রিয়াদ এসে পেছন থেকে আলোকে ধরে হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়। রিয়াদের স্পর্শ পেয়ে আলো প্রচন্ড ক্ষে’পে গিয়ে ঘুরে রিয়াদের তলপেটের খানিকটা নিচে লা’ত্থি বসিয়ে দেয়।
বিকট চিৎকার দিয়ে রিয়াদ বসে পরে। তারপর গো’ঙা’তে থাকে।
সাগর হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আলোর দিকে।
সৈকত বলে,”দেখেছো ভাইয়া? তেজ দেখেছো?”
আলো সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলে,”ফোন দে কু’ত্তা।”
“আগে তোমার স্বামী আসুক।”
আলোর দিকে তাকিয়ে সাগর ঠান্ডা গলায় বলে।
ত্রিশ মিনিটের রাস্তা দশ মিনিটে পাড় করেছে। দিঘির পাড়ে গাড়ি থামিয়ে দ্রুতপায়ে সামিন এগিয়ে যায়। সে তার নার্ভ ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে।
সাগর সামিনকে দেখে একটা পৈশাচিক হাসি দেয়। সামিন এগিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”ম’র’তে চাস তুই? ম’রা’র শখ হয়েছে আমার হাতে? তাহলে বল এখানেই গে’ড়ে দিয়ে যাই!”
সাগর সামিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”তোর বৌ একটা জিনিস। একে তুই সামলাতি কিভাবে? দারুন। আমি ইমপ্রেসড!”
সামিন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। সাগর জোরে বলে,”আচ্ছা শোন,মাইন্ড করিস না। ভাবীর প্রশংসা করলাম। নিয়ে যা।”
সামিন আলোর দিকে তাকায়। আলো তার দিকে তাকিয়ে আছে। সৈকত হিয়া এবং অয়নকে বলে,”তোরা কে’টে পর।”
হিয়া কেঁ’দে দিয়ে বলে,”ভিডিও টা!”
সামিন সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলে,”কোন ভিডিও? কিসের ভিডিও?”
_তোর বৌয়ের বান্ধবী আর তার বয়ফ্রেন্ড এখানে অ’নৈ’তি’ক কাজ করছিলো। তার ভিডিও। তোর বৌ এসেছিলো টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নিতে।
সামিন আলোর দিকে ক’ট’ম’ট দৃষ্টি দিয়ে একপলক তাকায়। তারপর সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে,”ওদের টাকা ওদের ফেরত দে!”
সাগর সৈকতকে ইশারা করতেই সৈকত টাকা গুলো দিয়ে দেয়।
সামিন ঠান্ডা গলায় বলে,”ভালোয় ভালোয় ভিডিওটা ডিলিট কর। এক্ষুনি।”
সাগর সৈকতকে বলে,”ঐ মেয়েটার কাছে দে ফোন।”
সৈকত হিয়ার হাতে ফোন তুলে দেয়। হিয়া দ্রুত ভিডিওটা ডিলিট করে চোখের পানি মোছে।
সাগর বলে,”তুই আমাকে যতটা খারাপ ভাবিস সামিন,আমি অতটাও খারাপ না। বুঝলি? ভাবীকে অনেক সম্মান দিয়ে কথা বলেছি। জিজ্ঞেস কর তোর বৌকে।”
সামিন সাগরের সাথে কোন কথা না বলে ঠান্ডা গলায় আলোকে বলে,” তোমরা তিনজন গাড়িতে ওঠো।”
_আমরা যেতে পারবো।
_আমি বলছি গাড়িতে ওঠো বে’য়া’দ’ব মেয়ে।
বিকট শব্দে চেঁচিয়ে ওঠে সামিন। তার চিৎকারে যেন সবার কানে তালা লেগে গেলো।
হিয়া অয়ন ভয় পেয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। আলো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর ভাইকে সাবধান করে দে। ও অনেক বার বেড়েছে , একদিন দেখবি খবরে হেডলাইন আসবে “পুলিশের সাথে ব*ন্দু*ক যু*দ্ধে সাবেক মেয়র শমশের ভুঁইয়ার ছোট ছেলে সৈকত ভুঁইয়া নি*হ*ত।”
এবং সেই ব্যাবস্থাও আমি করবো।”
সাগর সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিন ওদের দৃষ্টি উপেক্ষা করে আলোর কাছে গিয়ে খ*প করে আলোর হাত ধরে ফেলে। তারপর আলোকে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বসিয়ে দেয় সামনের সিটে। দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে সে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে পরে।
এদিক ওদিক না তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে সোজা হাই ওয়ে তে ওঠে। সবাই চুপচাপ,মাঝে মাঝে হিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁ*দে উঠছে। সামিন কপাল কুঁচকে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে গম্ভীর কন্ঠে অয়ন আর হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,”তোমাদের কোথায় নামিয়ে দেবো?”
_রেডিও কলোনির মোড়ে ভাইয়া।
সামিন হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”শুরুতেই আমাকে ফোন দিলে পারতে। এতটা সা*ফা*র করতে হতো না।”
হিয়ার কান্নার বেগ বাড়ছে। অয়ন হিয়াকে শান্তনা দেবার জন্য তার হাতের উপরে একটা হাত রাখে। হিয়া অয়নের হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”ছোবে না আমাকে ভীতুর ডিম কোথাকার। আরেকটু হলে আমি দম আটকে মরে যেতাম।”
অয়ন বেলুনের মতো চুপসে যায়। সামিন আড়চোখে আলোর দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়। আলো ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে চুপচাপ। রেডিও কলোনির মোড়ে এসে সামিন গাড়ি থামিয়ে দেয়। অয়ন হিয়াকে নিয়ে নেমে পরে।
সামিনের গাড়ি আবারো চলতে শুরু করে। দু’জনেই চুপচাপ। কিছুদূর যেতেই একটা নির্জন যায়গা দেখে সামিন ব্রেক ক’ষে দেয়। আলো মাথা ঘুরিয়ে সামিনের দিকে তাকায়। আলোর দিকে না তাকিয়ে সামিন গম্ভীর কন্ঠে বলে,”যেখানেই ঝামেলা সেখানেই আলো নাকি যেখানেই আলো সেখানেই ঝামেলা? মাথার ঘি’লু কি বাসায় রেখে এসেছো? কমনসেন্স নেই? একা একা চলে যাচ্ছো ড্রা*গ এডি*ক্ট*দের কাছে। কোনো রকম প্রটেকশন ছাড়া! নিজেকে কি ভাবো তুমি?”
_আমি নিজেকে একটা মানুষ ভাবি। আমার বান্ধবীর বিপদ,তাই চুপ করে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
_চুপ করে বসে থাকতে কে বলেছে? পু’লি’শ ছিলো না?
_পু’লি’শকে দিয়ে ব্যাপারটা সামলাতে গেলে জানাজানি হতো। যেটা হিয়ার জন্য মঙ্গলজনক নয়। আর পুলিশের ওপর আমার ভরসাও নেই,নয়তো কবেই আপনার নামে কম্প্লেইন করতে থানায় ছুটতাম।
সামিন আলোর দিকে তাকায়। আলো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”আপনি আমাকে এতটা ব্রেইনলেস মেয়ে মনে করেন! আমি কি আ’হা’ম্মক নাকি একা একা চলে যাবো নে’শা’খো’র’দের কাছে। আমার ইজ্জতের ভ’য় আছে। আমি লোক ঠিক করে রেখে গিয়েছিলাম। তারা চলে যেতো সময় মতো।”
সামিন অবাক হয়ে বলে,”কোন লোক?”
এমন সময় আলোর ফোন বেজে ওঠে,আলো ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে বলে,”হ্যা শেফালী আপু। না,আসতে হবে না আপনাদের। আমরা ঠিক আছি। হ্যা বাড়ি যাচ্ছি।”
ফোন কেটে দেয় আলো। সামিন বলে,”শেফালী কে?”
_আমার সাথে কাজ করে। তৃতীয় লিঙ্গের আপু। ও সময় মতো ওর পুরো গ্যাং নিয়ে চলে আসতো। উলটো ঐ সৈকতের ই’জ্জ’ত লুট করে নিয়ে যেতো আজ।
সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। সে অনেক কষ্টে তার হাসি চাপিয়ে রেখেছে আলোর কথা শুনে।
আলো সামিনের দিকে তাকায়। সামিন মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তারপর কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিক গলায় বলে,”বেশ বুদ্ধিমতি তুমি। ভালো লাগলো। তা নিজে ওখানে কি কি করেছিলে? ঐ সৈকতের চামচা টা ওভাবে কা’ত’রা’চ্ছিল কেন? কোথায় মে’রে’ছো ওর?”
_যায়গা মতো।
ঠান্ডা গলায় বলে আলো।
সামিন হতভম্ব হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে ওঠে,”তুমি সত্যিই অ’মা’ন’বি’ক।”
আলো চুপ করে থাকে। সামিন বলতে থাকে,”তোমার কারাতে দেখা হলো না। এতো এ’গ্রে’সি’ভ তুমি আমার বেলায় কখনো হওনি। আমার সৌভাগ্য। আমাকে ভয় পেতে বুঝি! আমি ওদের থেকেও ভ’য়’ঙ্ক’র?
_হ্যা। কারন ওরা কেউ আমার ভাইদের গলায় ছু’রি ধরেনি। তাই আমার মনোবল ভাঙেনি।
সামিন আলোকে দেখতে থাকে। কপালের কাছে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে মেয়েটার। মুখটা লাল হয়ে আছে। গায়ের ওড়নাটা চাদরের মতো করে জরিয়ে রেখেছে। মেয়েটার এই ব্যাপারটা সামিনের বেশ পছন্দ। শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ যাই পরুক না কেনো, খুবই শালীন ভাবে পরবে। শরীরের ভাজ সম্পর্কে অবগত হওয়ার সাধ্যি কোনো পুরুষের নেই। যখন শাড়ি পরতো আঁচল টেনে সবসময় ডান কাঁধে তুলে রাখতো। নিজেকে মোহনীয় করে উপস্থাপন করার প্রয়াস নেই তার। সে আদর্শ নারীর না’রী’ত্বে ব’লী’য়া’ন।
কিছু সময় চুপ করে থেকে সামিন গাড়ি স্টার্ট করে। তারপর ড্রাইভ করতে করতে ঠান্ডা গলায় বলে,”আর কখনো এমন সিচুয়েশনে পরলে এতো পা’ক’না’মি করবে না। ভুলে যাবে না তুমি একটা মেয়ে, যতই নিজেকে শক্তিশালী ভাবো না কেনো, পুরুষালি শক্তির সাথে পেরে উঠবে না তুমি। তাই যা করবে ভেবে চিন্তে করবে, হটকারীতায় না।”
আলো কপাল কুঁ’চ’কে থাকে। সামিনের এতো জ্ঞান সে হজম করতে পারছে না। কিছুক্ষণ পরে সামিন বলে ওঠে,”শ্রাবনীদের বিষয়টা দেখে দিয়েছি । আশা করছি আর কোনো প্রবলেম হবে না।”
_ধন্যবাদ।
কাটকাট বলে দেয় আলো।
সামিন মাথা ঘুরিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”এতো শুকনো ধন্যবাদ?”
আলো কপাল কুঁ’চ’কে সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভেজা ধন্যবাদ কিভাবে দেয়?”
সামিন কোনো জবাব দেয়না। একমনে ড্রাইভ করতে থাকে। আলো বলে,”আমার কপাল। যেদিন থেকে আপনি আমার জীবনে এসেছেন। ঐদিন থেকে শনির দশা কাঁ’ট’ছে না। কবে আপনার থেকে পিছু ছাড়াতে পারবো কে জানে!”
চলমান…….