বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে পর্ব-৪০

0
1177

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৪০
#Esrat_Ety

বসার ঘরের সর্বত্র শৌখিনতার ছোঁয়া। আলো মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখছে। বোঝাই যাচ্ছে বসার ঘরটি যে সাজিয়েছেন সে বেশ রুচিশীল একজন ব্যক্তি। দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘরের সবটা দেখছে আলো আর সামিন দেখছে আলোকে। একসময় দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেলে সামিন চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজের ফোন ঘাটতে শুরু করে । আলো গম্ভীর কন্ঠে বলে,” সাত সকালে কোথায় এনেছেন আমায়?”

_আমার পরিচিত এক লোকের বাসায়। বন্ধু হয়।

_এখানে আমার কাজ কি?

_তুমি আমার স্ত্রী। তাই আমার সাথে এসেছো।

আলো আবারো কক্ষ পরিদর্শনে মনোযোগী হয়। হঠাৎ দেয়ালের একটা পেইন্টিং -এ চোখ পরতেই আলো চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে। পেইন্টিং-এ চুম্বনরত এক প্রেমি যুগলের অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছে শিল্পী তার রং তুলির কারসাজি দিয়ে। এতক্ষণ বাড়ির মালিককে আলো মনে মনে যত প্রশংসা করেছিলো‌ তার রুচিবোধ নিয়ে, পেইন্টিং টা দেখে সাথে সাথে সব ফিরিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে আলো বলে,”অ’স’ভ্য।”

সামিন আলোর পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পেরে ঠোঁট টিপে হাসে।‌ আলো চুপচাপ বসে থাকে। ভেতর থেকে একজন পঞ্চাশোর্ধ লোক এসে সামিনের সাথে হ্যান্ডশেক করে কিছু সৌজন্য আলাপ করতে থাকে। আলো লোকটাকে ভালো করে লক্ষ্য করে, লোকটার মাথার সমস্ত চুল সাদা হয়ে গিয়েছে কিন্তু চেহারায় এখনো তারুণ্য ধরে রেখেছে বেশ।

লোকটা আলোর মুখোমুখি বসে আলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইংরেজিতে আমেরিকান উচ্চারণে বলে,”হ্যালো আলো, আমি ফজলে রাব্বী। তোমার হাসবেন্ডের বন্ধু।”

আলো বেশ অবাক হয়। এতো বুড়ো লোক ইয়াসার মির্জার বন্ধু!কপাল কুঁ’চ’কে লোকটার হাতের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,”আসসালামুয়ালাইকুম।”
সামিন মুগ্ধ চোখে তার বৌকে দেখে দেখতে থাকে। সে আবারো নতুন করে তার বৌয়ের প্রেমে পরে গিয়েছে।

আলোর আচরণে লোকটার ঠোঁট প্রশ্বস্ত হয়ে যায় হাসিতে। নিজের হাত ফিরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,”ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

আলো সামিনের দিকে তাকায়। সামিন তাকে কেনো এখানে এনেছে বুঝতে পারছে না সে। কিন্তু সে প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে।
লোকটা মৃদু স্বরে বলে ওঠে,”তুমি ভীষণ সুন্দর একজন মেয়ে আলো। সামিন খুবই লাকি।”

আলো চোখ বড় বড় করে লোকটাকে দেখে, পেইন্টিং টা দেখেই বাড়ির মালিকের চরিত্র সম্পর্কে ধারণা হয়েছিলো তার। এখন তো দেখছে সত্যিই এই লোকের ছুক ছুক ভাব আছে।
আলো বিড়বিড় করে বলে,”বুড়ো ভাম।”

সামিন চ’ম’কে উঠে আলোর দিকে তাকায়। ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,”স্টপ আলো। এখানে শুরু হয়ে যেও না।”

লোকটা ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমরা নিজেরা নিজেরা কি বলছো? দেখো রো’মা’ন্স করতে চাইলে আমাকে বলতে পারো আমি তোমাদের প্রাইভেসির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”

আলো লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়, চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”আপনি এসব কি বলছেন?”
সামিন আলোর হাত টেনে ধরে বসিয়ে দেয়। লোকটা মৃদু হেসে “আলিজা” সম্বোধনে কাউকে ডাকতে থাকে। ভেতর থেকে একজন চল্লিশোর্ধ বিদেশি মহিলা বেরিয়ে আসে। ফজলে রাব্বী তার দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে বলে,”তোমাকে বলেছিলাম না হানি আমার বন্ধু সামিনের কথা? ও হচ্ছে সামিন এবং ও তার সহধর্মিণী আলো।”

আলিজা নামের ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে আলোর দিকে তাকিয়ে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”হ্যালো এ্যালো।”

সামিন ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,”মিসেস রাব্বী ওটা এ্যালো নয়, আলো। আলো মানে লাইট।”

আলিজা নিজেকে শুধরে নিয়ে আবারো আলোর সাথে কুশল বিনিময় করে। ফজলে রাব্বী আলোকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আলো,এই হচ্ছে আমার সহধর্মিণী আলিজা। আমেরিকা থেকে যাকে চুরি করে এনেছি আমি।”

আলিজা রাব্বির গাল টেনে দুষ্টুমির সুরে বলে,”ওও হানি, কি যে বলো না তুমি।”

আলো আর সামিন দুজনে চোখ বড়বড় করে রাব্বী আর আলিজা দম্পতির লুতু পুতু আলাপচারিতা দেখতে থাকে। এতো বুড়ো বয়সেও দুজনে কত রোমান্টিক । ফজলে রাব্বী সামিন আর আলোর দিকে তাকিয়ে একটা প্রশ্বস্ত হাসি দেয়। তারপর আলোকে বলে,”সামিনের সাথে আমার কিছু কথা আছে আলো। অনেক দিন পরে দেখা তো, তুমি বরং আলিজার সাথে যাও। ও তোমাকে আমাদের গার্ডেন টা ঘুরিয়ে দেখাবে।”

আলো ভাবে,সেটাই ভালো। এখানে থাকার চেয়ে‌। তাই সে আলিজার সাথে চলে যায়।

সামিনকে সোফায় বসার নির্দেশনা দিয়ে ডক্টর ফজলে রাব্বী নিজেও বসে পরে। সামিন চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,”ওর সাথে আলাদা করে কথা…..”

_প্রয়োজন হবে না।

_তাছাড়া বুঝবেন কিভাবে সমস্যা?

_বুঝে ফেলেছি।

সামিন অবাক হয়। ডক্টর ফজলে রাব্বী বলে,”যখন ফোনে তুমি সমস্যার কথা জানিয়েছিলে আমি তখনই ধরে ফেলেছি।”

_তাহলে ওকে নিয়ে আসতে বললেন যে?

ডক্টর ফজলে রাব্বী মৃদু হেসে বলে,”আমি আর আলিজা রুবির মুখে তোমার এতো এতো প্রশংসা শুনেছি যে, আমাদেরও খুব ইচ্ছে হলো ঐ ভাগ্যবতীকে দেখার যে সামিন ইয়াসার মির্জার মন চুরি করেছে। তাই তোমাদের দুজনকে ডেকে নিলাম!”

সামিন ম্লান হাসে। ডক্টর ফজলে রাব্বী বলে,”শোনো সামিন,অযথা চিন্তা করবে না। তোমাকে যেটা করতে হবে তা হলো তোমার স্ত্রীকে জীবনমুখী করতে হবে।”

_জীবনমুখী?

_ওকে বোঝাতে হবে ও কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। প্রতি মুহূর্তে ওর গুরুত্ব ওর চোখে দেখিয়ে দেবে তুমি। বুঝতে পেরেছো আমার কথা?

সামিন কিছুক্ষণ ডক্টর ফজলে রাব্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ায়।

***
“এখানে কেনো এনেছিলেন? এখানে কি কাজ?”

সামিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আলো। সামিন ড্রাইভ করতে করতে বলে,”একটা বিশেষ কাজে। আমার ঐ বন্ধুটি একজন সোস্যাল এক্টি/ভিস্ট। সে একটা এজেন্সি খুলতে চাচ্ছে নারীদের কল্যাণে সে ব্যাপারেই কথা বলতে। ভাবলাম তুমি গৃহবন্দী হয়ে পরে আছো তোমাকে কোথাও নিয়ে যাই। তা গার্ডেন কেমন লাগলো? বসে বসে দোল খাচ্ছিলে দোলনায় দেখলাম।”

_ভালো লেগেছে।
শুকনো গলায় জবাব দেয় আলো। সামিন বলতে থাকে,”একজন পঞ্চাশোর্ধ বুড়ো আমার বন্ধু কিভাবে হলো, অস্বাভাবিক লাগছে না তোমার কাছে বিষয়টা?”

_না।
আলো ঠান্ডা গলায় বলে।
সামিন বলে,”কেনো?”

_কারন আপনিও তো বুড়ো।

সামিন হুট করে গাড়ির ব্রেক কষে দেয়। আলো ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। সামিন হতবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি বুড়ো?”

_হ্যা। বত্রিশ বছর কি কম নাকি? বুড়োই তো। আপনার আর আমার বয়সের ব্যবধান জানেন? ছয় বছর। আমার বার্থ সার্টি/ফিকেটের বয়স ধরলে আটবছর।

_ছয় বছর কোনো ব্যাবধান না। এটা পারফেক্ট।
সামিন দৃঢ় ভাবে বলে।

_তাই না ছাই। আপনি বুড়ো, আর আমি এখনো ছয় বছর পর বুড়ি হবো। ব্যাবধান না? অনেক ব্যাবধান।

সামিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”তোমার কোন এ্যাং/গেল থেকে মনে হয়েছে আমি বুড়ো? আমার চুল পেকেছে? আমার শ্বাস/কষ্ট রোগ আছে? আমার স্কিন কুঁচকে গিয়েছে? তুমি জানো এখনো ক্লাস ইলেভেনের মেয়েরা আমাকে সপ্তাহে দুটো প্রেমপত্র পাঠায়। তোমাদের কলেজেরই তো ওগুলো।”

আলো সরু চোখে সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”খুব আনন্দ হয় তখন তাই না? নিজের পুরুষ মন গর্বে ভরে যায়? শুনুন,ঐ সব মেয়েদের রুচিতে সমস্যা।”

সামিন হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছে। সব মেনে নেয়া যায় কিন্তু সামিন বুড়ো এটা সে কোনোভাবেই মানবে না। এতো বড় কথা বলে অপমান করে দিলো এই মেয়েটা! বুকে সুক্ষ্ম যন্ত্রনা হচ্ছে সামিনের। মুখ ভার করে স্টি/য়ারিং-এ হাত দিয়ে বসে আছে।

আলোর এখন বেশ হাসি পাচ্ছে সামিনের অবস্থা দেখে। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে।

বরাবরের মতো অপমান হজম করে নিয়ে সামিন গাড়ি স্টার্ট করে। আলো কিছুক্ষণ ঠোঁট টিপে হেসে নিয়ে হুট করে বলে ওঠে,”পাঁচ বছরের ব্যাবধান। ভুল বলেছি।”

সামিন কপাল কুঁচকে ড্রাইভ করতে থাকে। এতো বড় অপমান করে এখন সেধে সেধে কথা বলতে এসেছে।

আলো মনে মনে ভাবে,লোকটা হয়তো বেশিই অপমানিত হয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”চার বছরের ব্যবধান।”

সামিন নিশ্চুপ। আলো বলতে থাকে,”না না, তিন বছরের ব্যাবধান, না দুই বছরের ব্যাবধান, আরে না না এক বছরের!”

সামিন চুপ করেই থাকে। আলো বলে ওঠে,”আরে কোনো ব্যাবধানই নেই। আমার বয়সও বত্রিশ বছর।”

সামিন আবারো ব্রেক কষে আলোর দিকে তাকায়। আলো চুপচাপ বসে থাকে। সামিন গম্ভীর কন্ঠে বলে,”চুপ করে বসে থাকবে একেবারে। ঐ ঠোঁট নেড়ে আর একটা কথা বলে আমাকে কষ্ট দিলে আজ ভয়ংকর কিছু হয়ে যাবে।”

অন্যসময় হলে আলো মুখে মুখে উত্তর দিয়ে দিতো, কিন্তু এইমাত্র সামিনের কথায় সে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছে। তাই চুপচাপ বসে থাকে। সামিন গম্ভীর মুখে আবারো গাড়ি স্টার্ট করে।

***
সকাল থেকেই বৃষ্টি। আলো বৃষ্টি খুব একটা পছন্দ করতো না কিন্তু এখন বৃষ্টিময় দিন তার খুব একটা খারাপ লাগেনা। সারাদিন শাড়ি চুড়ি পরে ঘরেই তো পরে থাকে সে। জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে তার বেশ লাগে।

“ভাবী আসবো?”
সিতারা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, আলো ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,”এসো।”

সিতারা একটা ঝুড়ি নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাইজানের জামাকাপড় কি কি ধুতে হবে দিন ভাবী। ওয়াশিং মেশিনে দেবো।”

আলো অবাক হয়ে বলে,”তোমার ভাইজানের কি কি ধুতে হবে তা আমি কিভাবে জানবো?”

সিতারা আলোর থেকেও বেশি অবাক হয়ে যায়। আলোকে সে দায়িত্ব জ্ঞানহীন স্ত্রী হিসেবে জানে কিন্তু স্বামীর প্রতি এতোটাই উদাসীন যে সামান্য তথ্য টুকুও দিতে পারছে না।
ইশিতা ঘরে ঢোকে। একবার সিতারা আর একবার আলোর দিকে তাকিয়ে সবটা বুঝতে পেরে সিতারা কে বলে,”ভাইয়ার যা ধুতে হবে তা ডানপাশের আলমারিতে রাখে। ভুলে বসে আছো নাকি?”

সিতারা সামিনের জামাকাপড় নিয়ে যায়। আলো দাঁড়িয়ে আছে। ইশিতা আলোর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”ভাইয়া স্বামী হিসেবে তোমার মন জয় করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে, আর এদিকে তুমি নিজেকে কারো বিবাহিতা স্ত্রীই ভাবছো না। ভাইয়া একা একা সম্পর্কটাকে কি সুন্দর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কতটা যত্ন করে তোমাকে।আমি আমার ভাইয়াকে নিয়ে গর্ব করি।”

আলো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুকনো গলায় বলে,”আচ্ছা কাল থেকে তার জামাকাপড় আমি ধুয়ে দেবো।”

ইশিতা কিছুক্ষণ আলোর দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায়।
আলো বিছানায় চুপচাপ বসে থাকে,”আসলেই কি সে ভুল করছে?”

কবির আলমগীরের বাস ভবনে পার্টির মিটিং বসেছে আজ। পার্টির সভাপতি কবির আলমগীর সবার সাথে আলোচনা শেষ করে এসে সামিনের সামনে বসে। সামিন তার দিকে তাকিয়ে আছে। কবির আলমগীর বলে,”তুমি কি বুঝতে পেরেছো কতটা নাকানিচোবানি খাইয়েছো তুমি আমাদের। তোমার মতো একজনের কাছ থেকে এমন অপেশাদারের মতো আচরণ আশা করিনি সামিন।”

সামিন চুপ করে থাকে। অন্যরাও সবাই চুপচাপ। কিছুক্ষণ পরে গম্ভীর কন্ঠে সামিন বলে ওঠে,”দলে আমার স্থান আছে কি নেই সেটা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হোক। এমনিতেও আমার কাছে দেশের সেবা করাটা মূখ্য বিষয় কোনো দলের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকাটা নয়।”

কবির আলমগীর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”দল তোমাকে রেখেছে। তোমার মতো ডেডিকেটেড লোক কজনই বা আছে!”

সামিন চুপ করে বসে আছে, কবির আলমগীর বলতে থাকে,”এসব কি বৌয়ের জন্য হয়েছে তোমার? আতাউর আলমের মেয়ে? আমাদের বৌমার জন্য?”

সামিন কোনো কথার জবাব না দিয়ে তাকিয়ে আছে শুধু, কবির আলমগীর বলে,”মেয়ে মানুষকে দুর্বল প্রজাতি ভাবা সামিন ইয়াসারের এহেন পরিণতি খুবই অবাক করছে আমাকে। বৌয়ের প্রতি অল্প কদিনেই বেশ দুর্বল হয়ে গিয়েছো দেখছি! বেশ বৌ পাগলা হয়েছো।”

সামিন ম্লান হেসে বলে,”সবকিছু আপনাদের দেখেই তো শিখেছি আংকেল!”

কবির আলমগীর থতমত খেয়ে যায়। সামিন সালাম জানিয়ে উঠে দাঁড়ায়। পার্কিং লটে এসে দেখা হয়ে যায় কবির আলমগীরের ভাগ্নী জুঁইয়ের সাথে। খুবই ছোটোখাটো একটা পোশাক পরে উ/শৃঙ্খল ভাবে হেঁটে আসছে। সামিন কপাল কুঁচকে চোখ সরিয়ে নেয়, রিতুর পায়ের নখের যোগ্যতা নেই এই মেয়েটার। ফালতু মেয়ে!

দুপুরে সামিন কাকভেজা হয়ে বাড়িতে ফেরে। ঘরে ঢুকে আলমারি থেকে তোয়ালে বের করে মাথা মুছতে থাকে। আলো দাঁড়িয়ে যায়। সামিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমতা আমতা করে বলে,”গাড়ি থাকতে এতো ভিজেছেন কিভাবে?”

সামিন আলোর প্রশ্ন শুনে অবাক হয়, এ আবার আগ বাড়িয়ে সামিনের কথা জানতে চাইছে কেনো! সূর্য কোনদিকে উঠেছে আজ! সারাদিন তো এমন ভাব করে যেন সামিনকে সে দেখতেই পায়না, সামিন অদৃশ্য কেউ!

স্বাভাবিক গলায় সামিন বলে,” আজ বৃক্ষ রোপন কর্মসূচী ছিলো। দলের সাথে ভিজে ভিজে গাছ লাগিয়েছি শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে। ”

আলো চুপ করে থাকে। সামিন নরম গলায় বলে,”খেয়েছো?”

আলো মাথা নাড়ায়। সামিন হাঁচি দিতে দিতে তোয়ালে রেখে ওয়াশ রুমে ঢোকে।

বিকেলের দিকে বৃষ্টি চলে গিয়েছে, আকাশ টা ভীষণ সুন্দর হয়ে উঠেছে। আলো বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের ঐ সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে।

সামিন অসময়ের বৃষ্টিতে যখন ভিজছিলো তখনই বেশ বুঝতে পেরেছিলো গায়ে জ্বর আসতে চলেছে। সামিনের ধারণা ঠিক, তার গায়ে বিকেলের দিকে জ্বর এসেছে। আজ বিকেলে পার্টি অফিসে মিটিং ছিলো, সে যেতেই পারেনি। বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে বসে, আলোকে কোথাও দেখতে না পেয়ে সামিন বিছানা থেকে নামে। খুবই বিরক্তিকর এই বৌটা। সামিনকে এড়িয়ে থাকতে পারলেই যেন বাঁচে। কেন? সামিন কি তাকে খেয়ে ফেলবে নাকি?

শরীর কাঁপছে। চোখ জ্বালা করছে, নাক দিয়ে গরম নিঃশ্বাস বের হচ্ছে। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার থেকে একটা প্যারাসিটামল বের করে খেয়ে নেয়। ইশিতা বাড়িতে নেই! রিতুকে ডাকবে? কিন্তু মেয়েটা নিজে অসুস্থ হয়ে কতদিক সামলাবে!

হঠাৎ করে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলে সামিনের হাত থেকে গ্লাস টা পরে যায় নিচে।

মেঝের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সামিন ঝুঁকে বসে, নিজেই পরিস্কার করতে থাকে কাঁচের টুকরো গুলো।

আলো কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ শুনেও দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর কি মনে করে হন হন করে ঘরের দিকে যায়।

বারান্দার দরজা থেকে আলোর আকস্মিক আগমনে সামিন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ততক্ষণে আলো কাঁচের টুকরাতে পা দিতেই যাচ্ছিলো।
হঠাৎ মৃদু আর্তনাদ শোনা যায়।
কয়েক মূহুর্ত কেটে যায়। আলো চোখ বড় বড় করে সামিনের দিকে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। যন্ত্রনায় ফরসা মুখ টা নীল রঙের হয়ে গিয়েছে সামিনের। ধীরে ধীরে আলো বুঝতে পারে তার পা সামিনের হাতের উপর। মেঝের দিকে তাকিয়ে কাঁচের টুকরো গুলো দেখতে পেয়ে লাফিয়ে পিছিয়ে যায় আলো।

সামিন নিজের ডান হাতের পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁচের টুকরো ঢুকে ক্ষত/বিক্ষত হয়ে গিয়েছে হাত টা। র/ক্ত ঝরছে খুব। আলো যখন কাঁচের টুকরোতে পা দিতে যাচ্ছিলো তার আগে সামিন নিজের হাত‌ রেখে দেয়। আলোকে সতর্ক করার সময়টুকু যে তখন ছিলো না।

বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ আলো। সামিন গায়ে জ্বর নিয়ে টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায়।

আলোর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে,”জংলি বিড়ালের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে হাটো তুমি আছিয়া।”

আলো এগিয়ে আসে, হতভম্ব হয়ে সামিনের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে দীর্ঘক্ষণ। তারপর নরম গলায় বলে,”আমাকে সতর্ক করলেই তো পারতেন!”

_সময় দিয়েছো?

_তাই বলে নিজের হাত রেখে দেবেন? কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন বলুনতো।

সামিন চুপ করে থাকে। আলো আলমারি থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে সামিনকে বলে, বিছানায় বসুন।

সামিন চুপচাপ বাধ্য ছেলের মতো বিছানায় বসে। তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে তার হাতে। আলো সামিনের ক্ষতটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”আমার মনে হচ্ছে একজন ডক্টর ডাকলেই ভালো হবে।”

সামিন কিছু বলছে না, বলতে পারছে না, যন্ত্রনার তীব্রতা বাড়ছে বেশ।

আলো উঠে গিয়ে রিতুকে ডেকে আনে। ইলহাম ততক্ষণে বাড়িতে ফিরেছে। খুব কাছে থেকে একজন ডক্টর ডেকে আনলে সে এসে সামিনের হাত ড্রে/সিং করিয়ে দিয়ে চলে যায়।

ইশিতা এসে ভাইয়ের এমন ক্ষ/ত দেখে উৎকণ্ঠা নিয়ে কিছুক্ষণ চেঁচামেচি করে। তারপর আলোর সামনে এসে দাড়িয়ে নিচু স্বরে বলে,”তুমি করোনি তো কিছু ভাবী?”

আলো অবাক হয়ে বলে,”আমি একজনের হাতে কাচের টুকরো ঢুকিয়ে দেবো?”

_দিতেও পারো, তোমাকে বিশ্বাস নেই, আমার ভোলাভালা ভাইটা মুখ ফুটে কিছু বলবেও না।

আলো খুব বিরক্ত হয় ইশিতার এমন বাচ্চাসুলভ কথা বার্তায়। ইদানিং বেশ কোল টেনে কথা বলে ভাইয়ের, বাংলার তথাকথিত ননদ গুলোর রূপ ধারণ করেছে, কোনদিন না জানি আলোর চুলের মুঠি ধরে!

ইশিতা গিয়ে একটা প্লেটে ভাত এনে তার আদরের ভাইয়াকে খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে চলে যায়। আলো দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে সেসব। একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে ভাবে, সব দোষ ভাইয়ার আদরের বোন তার ঘারেই ফেলতে চাইলো! তার কি দোষ? সে কি বলেছিলো ইয়াসার মির্জাকে হাত রাখতে? আর এই বদ লোকটা সবসময় মাসুম প্রমানিত হয় সবার কাছে। যত দোষ শেষে হয় আলো ঘোষের।

***
রাত তখন দেড়টা ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃদু কোনো আওয়াজে আলোর ঘুম ভেঙ্গে যায়। অন্ধকারে কিছু বুঝতে না পেরে সুইচ টিপে বেড সাইডের টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে দিয়ে উঠে বসে। পাশে ফিরে সামিনের দিকে তাকাতেই থ’মকে যায় সে। লম্বা মানুষটা কেমন গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। কিছু একটা বিড়বিড় করছে। আলো কিছুক্ষণ সামিনের দিকে তাকিয়ে থেকে সংকোচের সাথে বলে ওঠে,”শুনছেন! কোনো সমস্যা?”

সামিন কোনো সাড়া দেয়না। বিড়বিড় করতে থাকে। আলো অনেকটা জড়তা নিয়ে ধীরে ধীরে হাত টা বাড়িয়ে এক আকাশ সমান সংকোচ দমিয়ে রেখে সামিনের কপালে রাখে। মুহুর্তেই চ’মকে ওঠে সে, আগুনের থেকে কম নয় তাপমাত্রা। কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে ঘরের দরজা খুলে ইলহামের ঘরের দিকে যায়।

দরজা খুলে রিতু অবাক চোখে আলোকে দেখে। আলো নরম গলায় বলে,”ওনার গায়ে অনেক জ্বর।”

রিতু চুলে খোপা করতে করতে সামিনের ঘরে যেতে যেতে বলতে থাকে,”বিকেলেই অনেক জ্বর ছিলো। যখন হাত কে/টেছে তখনই বুঝেছি জ্বরের বাপ আসতে চলেছে।”

থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে রিতুর চক্ষু চড়কগাছ ‌। আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”কি সাংঘাতিক!”

আলো কিছুটা ঘা’বড়ে গিয়ে সামিনের মুখের দিকে তাকায়। রিতু ছোটাছুটি করে একটা বাটি এনে সামিনের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে। কন্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,
“এই বডি দেখলে ভেবো না এরা শক্তপোক্ত। এরা সব ভাই-বোন খুবই নাজুক। জ্বর হলে খুব সহজেই কাবু হয়ে যায়, পুরো বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়। আমাদের শাশুড়ি মা/রা যাওয়ার পরে প্রত্যেক বার এক একজনের জ্বর হলে আমি হিমশিম খেয়ে যাই, আমি কত যে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বাচ্চাদের মতো সামলাতে হয় এদের।”

আলো চুপচাপ রিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি খুব ভালো মেয়ে রিতু। একেবারে মহীয়সী । ”

রিতু লজ্জা পেয়ে যায়। ইশিতা ঘুম ঘুম চোখে সামিনের ঘরে ঢুকে আলোকে বলে,”মেজো ভাবীকে দিয়ে এসব করাচ্ছো কেন? স্বামী টা কার?”

আলো চুপ করে তাকিয়ে থাকে ইশিতার দিকে। তারপর বলে ওঠে,”তুমি ইদানীং আমার সাথে এমন কেনো ব্যবহার করো ইশিতা আপু?”

ইশিতা হাসি চাপিয়ে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে,”সম্পর্ক টা ভুলে গিয়েছো? ননদ হই তোমার।”
তারপর রিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,”ইহান উঠে গিয়েছে ঘুম থেকে। কাঁ/দছে। তুমি যাও মেজো ভাবী। বড় ভাবী করবে এসব।”

রিতু কিছুক্ষণ আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায়। ইশিতা ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আলোকে বলে,”ওখানে কে শুয়ে আছে জানো? আমার মা,বাবা। তুমি তার প্রতি একটু দরদ দেখাও। আমি তোমাকে আজীবন মাথায় তুলে রাখবো ভাবী।”

ধীরপায়ে ইশিতা চলে যায়। আলোর ঘরের দরজা বন্ধ করে বিছানায় কিছুক্ষণ বসে থেকে সামিনের দিকে তাকায়। তখনও প্রলাপ বকে যাচ্ছে সামিন। একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে আলো তার দিকে এগিয়ে যায়। মাথার কাছে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে বসে সামিনের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে। এইবার বেশ ভালো করে সামিনকে লক্ষ্য করে আলো। বেশ সুদর্শন লোকটা, ক্লাস ইলেভেনের মেয়েরা এমনি এমনি লাভ লেটার দেয়না তাকে। অবশ্য এরা চার ভাই বোনই দেখতে শুনতে ভালো। এদের মধ্যে ইশমাম একটু বেশি সুন্দর। ইশমামের কথা মনে পরতেই আলোর চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
সামিনের মুখের দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থেকে ভাবে, এই লোকটা তার ভাইবোনদের নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে, জান বের করে দেয় ভাই বোনদের জন্য। এই লোক যদি কখনো জেনে যায় সে তার আদরের ছোটোভাইয়ের প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে তাহলে নিশ্চয়ই বেশ কষ্ট পাবে লোকটা, আলোর হঠাৎ খুব আফসোস হচ্ছে সামিনের কথা ভেবে।
জলপট্টি দিতে দিতে সামিনকে ভালো করে দেখতে থাকে আলো। লোকটা যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক না কেনো একটা কথা আলোর স্বীকার করতেই হবে,লোকটা একজন পারফেক্ট ফ্যামিলি ম্যান। এতো অল্পবয়সেই একটা সংসারের সবার নিরাপত্তা, নির্ভরতার যায়গা। এদের ভাই বোনদের বন্ডিং সত্যিই প্রশংসনীয়।

সামিন বিড় বিড় করে কিছু বলছে, আলো কৌতুহল বশত একটু ঝুঁকে যায় সামিনের দিকে। সে স্পষ্ট শুনতে পায় সামিন বিড়বিড় করে তার মাকে ডাকছে।
আলো বেশ অবাক হয়, এতো বড় একজন লোক অথচ এখন মনে হচ্ছে এর বয়স আট বছর।
চোখ ঘুরিয়ে আলো সামিনের হাতের ব্যান্ডেজের দিকে তাকায়। লোকটা অমন কান্ড করে তখন কি প্রমাণ করতে চাইলো আলো জানে না, আলোর যায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে তখনই সামিনের প্রেমে পরে যেতো।
হুট করে কিছুটা সংকোচ নিয়ে আলো সামিনের ব্যান্ডেজের ওপর দিয়ে হাত ছুঁয়ে দিতেই সামিন জ্বরের ঘোরে আলোর হাত আকরে ধরে।
আলো চ’মকে উঠে তাকায় সামিনের দিকে। লোকটা কি স্বাভাবিক তবে?
সামিন স্বাভাবিক না, আলোর হাত নিজের বুকের সাথে আকরে ধরে বিড়বিড় করে যাচ্ছে‌। ভাবছে হয়তো মায়ের হাত আঁকড়ে ধরেছে।

আলো হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে সামিন ছাড়ে না। কিছুক্ষণ সামিনের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে খানিকটা ঝুঁকে আলো অস্ফুট স্বরে বলে,”শুনছেন। আমি আপনার মা নই। হাতটা ছাড়ুন।”

সামিন ছাড়ে না। আলো দেখতে পায় জ্বরের তীব্রতায় সামিনের বন্ধ চোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোঁটা তরল গড়িয়ে পরছে।

হঠাৎ কেন জানি আলোর নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে মন সায় দিলো না। সামিনের উত্তপ্ত শরীরের উষ্ণতায় আলোর হাত গরম হয়ে গিয়েছে। তবুও আলো চুপচাপ বসে রইলো সামিনের মুখের দিকে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”আপনি আসলে কেমন লোক ইয়াসার মির্জা? আমার কি আপনাকে আগ্রহ নিয়ে জানা উচিত?”

***
ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সামিন ধীরে ধীরে উঠে বসে। শরীরের অসহ্য যন্ত্রণা শেষ হয়েছে। কাল রাতের জ্বরে বেশ কাহিল লাগছে শরীরটা। গায়ে এখন আর জ্বর নেই। তবে হাতের যন্ত্রনাটা বেরেছে। খুব কষ্ট দিচ্ছে সামিনকে ব্যাথাটা, তবে আছিয়ার থেকে কম কষ্ট দিচ্ছে।

ঘরের মধ্যে আলো নেই। মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে বেড সাইডের টেবিলে জলপট্টি দেওয়ার বাটি রাখা। নিশ্চয়ই ইশিতা নয়তো রিতুর কাজ ওসব।
বিছানা থেকে নেমে ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে টি শার্ট পালটে ক্লান্ত শরীরে বারান্দায় চলে যায় সে। সকালের রোদে স্নান করে নিতে হবে।

আলো ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে সামিনকে দেখতে না পেয়ে ভাবলো বারান্দায় গিয়েছে। একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে সামিনের আলমারির দিকে এগিয়ে যায় । কিছুক্ষণ আগে ইশিতার সাথে আলোর একটা ঠান্ডা যু/দ্ধ গিয়েছে। রিতু মাঝখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে ছিলো রেফারি হয়ে। যুদ্ধের কারন আলোর সামিনের প্রতি উদাসীনতা। কেনো আলো সামিনের জামাকাপড় ওয়াশিং মেশিনে এনে রাখে না, কেনো যত্ন করে না!
আলোর বিরক্ত লাগছে খুব। এই ইশিতা আপু কি এখন আলো আর রিতুর শাশুড়ির যায়গা নিতে চাইছে? ইদানিং হাবভাব দেখলে তো তাই মনে হয়। কি হবে সামিনের জামাকাপড় ধুলে? সামিনকে রাতারাতি পতি দেবতা ভাবতে শুরু করবে? এতো তাড়াতাড়ি? আরে বাবা একটু সময় দে সবাই! আলোরানী তো আর ম’রে যাচ্ছে না, এরা জোর জবরদস্তি করে সংসার সংসার খেলিয়েই ছাড়ছে আলোকে দিয়ে।
আজ আলো সামিনের জামাকাপড় ধোবে। সবার কলিজা ঠান্ডা করে দেবে আলো। সবাই তো এই টেনশনে খাবার খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে যে কেনো আলো তাদের ভোলা ভালা কলিজার টুকরা চোখের মনি বড় ভাইয়ার জামা কাপড় ধোয় না!

আলো আলমারি খুলে একটানে সামিনের ব্যবহৃত জামাকাপড় বের করতে গিয়ে সব ফেলে দেয় নিচে।
মুখে চ কারন্ত শব্দ করে সবকিছু একটা একটা করে তুলতে থাকে সে । হঠাৎ করে সামিনের ব্যাক্তিগত ছোটো প্যান্ট দেখে চোখ বড় বড় করে লাফিয়ে দুই পা পিছিয়ে যায় আলো।
বড় বড় দু’টো নিঃশ্বাস ফেলে সে। অসম্ভব,ওসব আলো ধুতে পারবে না। বেঁচে থাকতেও না, ম’রে গেলেও না। কারো আলোকে শূলে চ’ড়ানোর থাকলে এসে চ’ড়াক।
ওসব আলো ধরতে পারবে না। কখনোই না।
কিছুক্ষণ ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁচুমাচু মুখ করে আপন মনে বলে ওঠে,”এ আমাকে কোথায় ফাঁ’সিয়ে দিলে আব্বু আম্মু! স্বামী নামের পুরুষের ওসব ছোট প্যান্ট ধোওয়ার জন্যই কি একটা মেয়ের জন্ম হয়েছে? ”

“তোমাকে ওসব ধুতে হবে না।”

সামিন ক্লান্ত শরীরে আলোর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আলো চ’ম’কে উঠে ঘুরে তাকায়।

সামিন তার দিকে তাকিয়ে আছে, স্বাভাবিক গলায় বলে,”স্বামী নামের পুরুষের ওসব ধোওয়ার জন্য একটা মেয়ের অবশ্যই জন্ম হয়নি। তুমি ওসব রেখে নিজের কাজ করো।”

_তা কি করে হয়, আপনার বোন তো আমাকে কাঁ’চা খেয়ে ফেলবে।

_তুমি তো কাউকে ভয় পাও না। তাহলে এতো মাথা ঘামাচ্ছো কেনো? ইশিতা আপুর চোখে এতো ভালো হবার প্রয়োজন কি? সাফ সাফ জানিয়ে দাও এসব তুমি পারবে না।

আলো চোখ ঘুরিয়ে সামিনের দিকে তাকায়। তাইতো,সে সাফ সাফ জানিয়ে দিলেই তো পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে আপত্তি জানাতে পারছে না, সে কেনো আপত্তি জানাতে পারছে না? কেনো? কোথাও তার অবচেতন মনও কি এটা ভাবে এগুলো স্ত্রী হিসেবে তার কর্তব্য? ঐ একটা কাগজের জন্য হলেও তার এসব করা উচিত? এমন কিছু কি?

চলমান……