বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে পর্ব-৫০+৫১

0
1131

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৫০
#Esrat_Ety

ঘরের বাইরে থেকে রেহেনা ডেকে যাচ্ছে। এর আগেও তিনবার তিনি ডেকে গিয়েছেন। চতুর্থ বারের মতো দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়, রেহেনা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সামিন নিচু স্বরে সালাম দেয় তার শাশুড়িকে।
রেহেনা সালামের উত্তর দিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই সামিন বলে ওঠে,”আলো ফজরের নামাজ পরে ঘুমাচ্ছে।”

রেহেনা অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে। সামিন ওয়াশ রুমে ঢোকে।
রেহেনা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আলো বিছানায় ঘুমাচ্ছে। রেহেনা এগিয়ে গিয়ে চেঁচাতে থাকে,”এই মেয়ে! এই গাধা মেয়ে! ওঠ!”

আলো পিট পিট করে তাকায়। কপাল কুঁচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বিরক্তির সাথে বলে,”কি হচ্ছে আম্মু? আমি নামাজ পরেছি। চেচিও না।”

_জামাই কখন এসেছে?

_রাত সাড়ে বারোটায়।

_রাত সাড়ে বারোটায় এসেছে, তুই আমাকে ডাকবি না?
হতভম্ব হয়ে যায় রেহেনা।

_ডাকলে কি করতে? দই মিষ্টি খাইয়ে বরণ করতে?

_খেতে কি দিয়েছিলি?
ধমকের সুরে বলে রেহেনা।

_কি খেতে দেবো? উনি তো রাতে খেয়ে এসেছেন।

রেহেনা মেয়ের গা ছাড়া ভাব দেখে প্রচন্ড বিরক্ত হয়। চাঁপা স্বরে চেঁ’চি’য়ে বলে,”তোর বয়স এক দুই করে ছাব্বিশ বছর হয়েছে, তোর মাথায় কি এখনো বুদ্ধি হবে না? হালকা পাতলা নাস্তা দিসনি?”

আলো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,”নাস্তা দেবো মানে? রাত বারোটা নাস্তা করার সময়?”

রেহেনা এবার দাঁত খিচিয়ে মেয়ের দিকে তে*ড়ে যায়। মাথায় গাট্টা মেরে বলে,”হোক রাত তিনটা। তুই আপ্যায়ন করবি না? নতুন জামাই!‌ ”

আলো উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”নতুন জামাই বলে আপ্যায়ন করতে হবে? আর পুরাতন জামাইদের কি করে আম্মু? দরজা থেকে ফিরিয়ে দেয়?”

রেহেনা এইবার রে*গে মেয়ের চুল ধরে। সামিন ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে রেহেনাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। রেহেনা লজ্জা পেয়ে মেয়ের চুল থেকে হাত সরিয়ে নেয়। সামিন বলতে থাকে,”ভালো করে দু’টো লাগিয়ে দিন। আমি দিলে আবার নারীর প্রতি স*হিংসতা রটে যাবে। এই কাজটা আপনিই করুন মা।”

রেহেনা ম্লান হাসে, তারপর দ্রুতপায়ে হেঁটে রান্নাঘরে চলে যায়, জলদি জলদি করে এখন জামাইয়ের জন্য নাস্তা বানাতে হবে। তার এখন দম ফেলবার সময় নেই।

সামিন আলোর কাছে এসে বলে,”শেষমেশ একজনকে পেলাম, যে আলো রানীর চুলের মুঠি ধরার ক্ষমতা রাখে! বাহ বাহ! যখন যখন তোমাকে শা*স্তি দিতে ইচ্ছে করবে, তখন এ বাড়িতে নিয়ে আসবো ভাবছি।”

স্টাডি রুমে সামিনের মুখোমুখি বসে আতাউর আলম তার জীবনে অর্জিত সকল মেডেলের বিশদ বিবরণ দিচ্ছে। খুবই উৎসাহের সাথে নিজের জীবনের সাহসিকতার দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করছে। সামিন মাথা ঘুরিয়ে সবকিছু দেখে হাতে একটা আর্টি*কেল তুলে নেয়। আতাউর আলম বলে ওঠে,”ওটাও আমার লেখা।”

কাগজটায় চোখ বুলিয়ে সামিন বলে ওঠে,”আপনি বই বের করলেই পারতেন। আপনার লেখায় সাহিত্যিক একটা টাচ আছে। অবশ্য আমি এসব কম বুঝি। পলিটি*ক্যাল সাইন্স নিয়ে ঠেলে ঠুলে মাস্টার্স শেষ করেছি। পড়াশোনায় বরাবর অমনযোগী ছিলাম। এসব পলি*টিক্সই আমাকে টানতো বেশি। বাকিটা তো বাবাকে দেখেই আগ্রহ পেতাম।”

আতাউর আলম ম্লান হেসে বলে,”তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ধ্বস কিন্তু আমার জন্য নেমেছিলো। জানো তুমি?”

_না, এটা ভুল কথা। বাবার পিঠ পিছে তার ভাইয়ের কু-কীর্তি আর ইলহামের জন্য বাবা তার পজিশন খুইয়েছে,আমি বরাবর এটাই মেনে এসেছি। আপনি সাংবাদিক, আপনার কাজই তো সত্যি তুলে ধরা।

আতাউর আলম বলে,”আসল কথায় আসি। সরকারি ফান্ড সিন্ডি*কেটের আর্টিকেল টা আমি লিখেছি, ছাপিয়েছি। এই ব্যাপারে কি তোমার কোনো আপত্তি আছে?
সামিন আতাউর আলমের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপত্তি কেনো থাকবে? আপনি কি ভাবছেন সিন্ডি*কেটের সাথে আমি জড়িত? মেয়ে জামাই হিসেবে ছাড় দিতে চাচ্ছেন?

_ঠিক তা নয়।
আমতা আমতা করে বলে আতাউর আলম।

সামিন ঠান্ডা গলায় বলে,”পুলিশ তদন্ত করবে, উপর মহল থেকে লোক আসবে, সত্যিটা সামনে আসবে। তেরো কোটি টাকা জনগণের জন্য ছিলো, আমার দলের কর্মীদের জন্য নয়। আমিও চাই এর একটা সুরাহা হোক।”

***
“আসতে গেলে কেন? আমি কি বাচ্চা? পথ চিনে আসতে পারিনা?”

ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ইশমাম। সামিন চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ফেলে বলে,”আমি তোদের তেমনটাই মনে করি!”

ইশমাম চুপ করে বসে থাকে। সামিন বলে,”আমিও তখন খুব ছোটো, মাকে দেখতাম তোদের ডায়াপার চেঞ্জ করে দিতে। আমি দুদিন ভালো করে লক্ষ্য করলাম, তারপর নিজেই চেষ্টা করলাম। সেই থেকে তোর আর ইশুর ডায়াপার চেঞ্জ করেছি। আমার কাছে এখনও মনে হয় তোরা অমনই।”

সামিনের কথায় ম্লান হাসে ইশমাম। তারপর বলে ওঠে,”বাড়িতে কে কে আছে এখন ?”

_তোর বড় ভাবী, মেজো ভাবী, ইহান। ইলহাম চিটাগাং গিয়েছে, ইশিতা ইউনিভার্সিটিতে।

_গাড়ি ডানে ঘোরাও ভাইয়া।

সামিন অবাক হয়ে বলে,”কেনো?”

_আগে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাবো।

দুই ভাই চুপচাপ। ইশমাম বলে ওঠে,”বাবা বলতেন,আমি যেন তার জা*নাজায় অন্তত থাকি। সেটাও তো হয়নি। আমি কিন্তু বাবার অপদার্থ ছেলেই প্রমানিত হলাম ভাইয়া। বাবা খুব একটা মিথ্যা বলতেন না।”

সামিন কোনো জবাব দেয়না। গাড়ি ঘুরিয়ে তারা গ্রামের বাড়ির দিকে যায়। সেখানে দুই ভাই গোটা সকালটা কাটিয়ে আসে, তাদের বাবার সাথে।

গাড়ি শান্তিনীড়ের গেইট দিয়ে ভেতরে ঢোকে। কলিং বেল টিপে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আলো এসে দরজা খোলে, ইশমাম নিচু স্বরে আলোকে সালাম দিলে আলো সালামের উত্তর দেয়।

সামিন হাসতে হাসতে আলোকে বলে,”রান্না বান্না হয়েছে?”

আলো মাথা নাড়ায়।

_রান্নায় লবণ হয়েছে কিনা দেখেছো?

মাথা নাড়িয়ে আলো অস্ফুট স্বরে বলে,”দেখেছি।”

সামিন বলে,”ঠিকাছে,ও ফ্রেশ হলে ওকে খেতে দিও। প্লেনে কিছু খায়নি।”

আলো মাথা নাড়িয়ে ইশমামের দিকে তাকায়। ইশমাম চুপচাপ সোজা হেটে সিঁড়ির কাছে যায়।

আলো রান্নাঘর থেকে সবকিছু নিয়ে এসে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখে। অনেক সময় নিয়ে সে এসব রান্না করেছে।

হুট করে সামিন তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে। আলো চ’ম’কে ওঠে, নিচু স্বরে বলে,”ইহান বাড়িতে ছোটাছুটি করছে।”

সামিন হেসে আলোকে ছেড়ে দিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করায়। তারপর আলোর চোখে চোখ রেখে বলে,”আজ তোমাকে একটু একটু গিন্নিদের মতো লাগছে।”

_একটু একটু? পুরোপুরি নয় কেনো?

সামিন হেসে আলোর আঁচল টেনে মাথায় তুলে দিয়ে বলে,”কারন,এটা ছিলো না।”

***
“আমি আজ ও বাড়িতে একটু যেতে চাচ্ছি আবার। কিছু ঘন্টা থেকে চলে আসবো। জরুরি কিছু কাজ আছে।”

সামিন পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে আলোর দিকে তাকায়। আলো বলতে থাকে,”বিজনেস যেটা শুরু করেছিলাম সেটা আম্মুকে বুঝিয়ে দিয়ে আসবো। আরো দুজন লোক নেওয়া হয়েছে।”

_আমার শাশুড়ি হবে কোম্পানির নতুন ব্যাবস্থাপনা পরিচালক? বাহ , বেশ ভালো!

আলো হাসে। তারপর বলতে থাকে,”টিউশনি টা ছেড়ে দিয়ে খারাপ লাগছে খুব। দিদিমণি আজকেও ফোন দিয়েছিলেন।”

সামিন আলোর দিকে এগিয়ে আসে। জরিয়ে ধরে বলে,”খুব উপার্জন করতে ইচ্ছে করে?”
_হু।
আলো মৃদু স্বরে বলে। তারপর বলে ওঠে,”কতগুলো টাকা বেতন পেতাম জানেন? সাড়ে ছয় হাজার টাকা।

সামিন অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে,”সাড়ে ছয় হাজার টাকা? বাবা! এতগুলো টাকা!”

আলো বুঝতে পেরে যায় সামিন তাকে খোঁচা মারছে, সে মুখ ভার করে বলে,”আপনার কাছে সাড়ে ছয় হাজার টাকা কিছু না কিন্তু আমার কাছে অনেক কিছু। সপ্তাহে পাঁচদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ছোটো ছোটো বাচ্চাদের পড়িয়ে মাস শেষে যখন টাকাগুলো পেতাম, তখন অন্যরকম একটা আনন্দ হতো মনে। ঐ সাড়ে ছয় হাজার টাকায় ভাই দুটোকে কত কি যে কিনে দিতাম! আব্বু তো ওদের এক একটা সাবজেক্টের টিউশন ফি দিতে দিতেই হিমশিম খেয়ে যেত, ওদের শখ পূরণ করতো কখন! ”

সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। কপালের কাছে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলে,”আমার কাছে একটা চাকরির অফার আছে। একটা এজেন্সি চালাতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে-রাত আটটা বসলেই হবে। বেতন আট হাজার টাকা। করবে চাকুরী টা? নতুন এজেন্সি তাই মালিক এর থেকে বেশি বেতন দিতে পারবে না।”

আলো অবাক হয়ে তাকায় সামিনের দিকে। তারপর বলে,”এজেন্সি?কি এজেন্সি? কোথাকার এজেন্সি?”

সামিন মৃদু হেসে তার ল্যাপটপ নিয়ে বসে, আলোকে কাছে টেনে পাশে বসিয়ে বলতে থাকে,”একটা এজেন্সি খুলেছি নতুন। প্রতিবন্ধী ও বিধবা নারীদের উন্নয়নে কাজ করবে। এছাড়াও গরীব স্টুডেন্ট যারা তুখোড় মেধাবী কিন্তু যাদের মেডিকেল কোচিং, ভার্সিটি কোচিং করার সামর্থ্য নেই তাদেরকে সাহায্য করা হবে। প্রাথমিক ভাবে এই দুটো প্র*জেক্ট হাতে নিয়েছি। এর বাইরে সামর্থ্য কিংবা অর্থায়ন নেই।”

আলো অবাক হয়ে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েক মূহুর্ত সময় নিয়ে বলে,”এসব কখন করলেন?”

_এই দুদিন এসব নিয়েই ছোটাছুটি করেছি।

আলো তাকিয়ে থাকে। সামিন হেসে বলে,”আট হাজার টাকার বেশি কিন্তু দিতে পারবো না। যদি অফারটা পছন্দ হয় তবে আমাকে তোমার সিভি দিও।”

_এতোকিছু কিভাবে ম্যানেজ করবেন? পারিবারিক ব্যাবসার টাকা তো আপনার একার না। আপনার ভাই বোনদের ও । এমনিতেই বেশ কিছু এজেন্সিতে দিচ্ছেন টাকা, এতিমখানা চালাচ্ছেন। নিজেকে কি রাজা রাম মোহন রায় ভেবে বসে আছেন?

সামিন হেসে ফেলে। তারপর হাসি থামিয়ে বলে,”কে বলেছে আমি সব টাকা দেবো। আমিও দেবো, তবে সামান্য। বাকিটা তুমি ম্যানেজ করবে।”

_আমি কিভাবে?

_প্রত্যেক মাসে এজেন্সি থেকে ক্যাম্পেইন করা হবে বিভিন্ন যায়গায়। কলেজ, ইউনিভার্সিটি তে। সেখান থেকে লোকজন যা দেবে, সেটাই ব্যায় হবে ।

আলো সবটা বুঝতে পেরে চুপ করে থাকে। সামিন বলে,”করবে চাকুরী টা? আমি বিশ্বস্ত আর পরিশ্রমী একজন কর্মী চাচ্ছি।”

_কিন্তু এভাবে সরাসরি নিজের বৌকে চাকুরী দেওয়া কি ঠিক? অন্যান্য বেকারদের তো হক আছে।

_স্বজনপ্রীতি করলাম। মাঝেমাঝে মেয়র একটু দূর্নীতি করবে না? একেবারে সৎ থাকলে কেমন দেখায়?

আলো হেসে ফেলে, তারপর বলে, “নাম কি আপনার এজেন্সির? আমি কাল সিভি জমা দেবো।”

সামিন কয়েক পলক আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”এজেন্সির নাম ইয়াসার-আলো ফাউন্ডেশন।”

আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিন তার স্ত্রীর হাতে চু*মু খেয়ে বলে,”শাহজাহানের মতো স্ত্রীর জন্য তাজমহল তো গড়তে পারবো না। আমি একটা চাকুরী দিলাম। তুমি খুশি আছিয়া?”

***
খাবার টেবিলে চার ভাইবোন মিলে হাসাহাসি করতে করতে খাচ্ছে। কতদিন পরে আবার তারা এক সাথে খেতে বসেছে।

আলো রান্নাঘর থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে। তার ইচ্ছে করছে না ভাই বোনদের মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ঢুকতে। ভাইবোনদের নিজেদের কত কথা থাকতে পারে। সে বরং সবার খাওয়া হয়ে গেলেই খাবে।

সামিন আশেপাশে তাকিয়ে আলোকে ডাকতে থাকে। আলো ধীরপায়ে এগিয়ে যায়। ইশিতা মাথা ঘুরিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি রান্নাঘরে ঘাপটি মে’রে আছো কেনো ভাবী? এখানে আমরা কত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছি। তুমি শুনবে না?”

আলো কিছু বলতে যাবে তখন সামিন বলে,”বসো এখানে, রিতু খেয়েছে, আমরাও খাচ্ছি। তুমি অপেক্ষা করছো কিসের?”

আলো বাধ সাধতে যাবে তখন সামিন একটা চেয়ার টেনে বলে,”বসো।”

আলো বসে পরে। ইশমাম খাবার নাড়াচাড়া করতে থাকে। হঠাৎ সামিন সবার মুখের দিকে তাকিয়ে খেতে খেতে বলে ওঠে,”এখানে সবাই যখন আছি তাহলে আমি কথাটা বলি। তোদের সবাইকে তো সবসময় পাওয়া যায় না।”

আলো মাথা তুলে তাকায়। এই লোক এখন কি বলবে! ইশমামের বিয়ের কথা নাকি! তাহলে তো এখানে আবার ঠান্ডা যু*দ্ধ লেগে যাবে! আলো অনুমানের উপর ভিত্তি করে সামিন কে থামিয়ে দিয়ে বলে,”খাওয়া শেষ করে বলুন।”

সামিন আলোর কথা গায়ে না মেখে বলতে থাকে,”আমি আর ইলহাম একটা মেয়ে পছন্দ করে রেখেছি ইশমামের জন্য।”

ইশমাম খাওয়া থামিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়। ইশিতা আনন্দিত গলায় বলে,”তাই নাকি! ঐ ফিহা বলে মেয়েটা তাই না? সি ইজ ঠু মাচ কিউট ভাইয়া। বেশ মানাবে ওদের।”

সামিন খুশি খুশি গলায় বলে,”হ্যা তোর বড় ভাবীও ওকে পছন্দ করেছে।”

ইশমাম আলোর দিকে তাকায়। আলো মাথা নিচু করে ফেলে। চোখ ঘুরিয়ে ইশমাম বড় ভাইয়ের দিকে তাকায়। সামিন ঠান্ডা গলায় বলে,”কি? এভাবে দেখছিস কি? গ্লাস ভেঙে হাত কা*টবি?”

একটা গ্লাস ইশমামের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”নে, এটা ভেঙে ফেল।”

ইশমাম ঠান্ডা গলায় বলে,”কেনো? আমাকে নিয়ে পরেছো কেনো? ভাইয়া, ইশিতা মেয়ে, ওর বিয়ের ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে আমাকে নিয়ে পরেছো কেনো?

ইশিতা চেঁচিয়ে ওঠে,”তুই নিজে বাঁচতে আমার কথা ওঠাচ্ছিস কেনো ভাই? আমার সাথে তোর কোন জন্মের শ*ত্রুতা?”

_তো তুই এতো খুশি কেনো আমার বিয়ে নিয়ে? তোর এতো আনন্দ কিসের?

মুহুর্তেই ঝ*গড়া লেগে যায় দুজনের মধ্যে। আলো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এরা এখনো এভাবে চুলো*চুলি করে! কি অদ্ভুত!

ঝগড়ার এক পর্যায়ে ইশমাম ইশিতাকে বলে ফেলে,”এখনো তো তুই বেকার বেকার ভাইদের ঘাড়ে খাচ্ছিস। না চাকরির চেষ্টা করছিস! না বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিস! তুই আমার লাইফ নিয়ে এতো মাথা ঘামাচ্ছিস কেন!”

সামিন ইশমামকে ধ*মক দিয়ে থামিয়ে দেয়। ইশিতা কিছুক্ষণ ইশমামের দিকে তাকিয়ে থেকে পানির গ্লাস উঠিয়ে ইশমামের মুখে ছুড়ে দেয় পানি। তারপর গটগট করে হেঁটে দোতলায় উঠে যায়। ইশমাম চুপচাপ খেতে থাকে ভেজা অবস্থাতেই। তারপর খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায়, ইশমামের পিছু পিছু উঠে চলে যায় ইলহাম। খাবার টেবিলে বসে থাকে আলো এবং সামিন।
আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”কি দরকার ছিলো?”

সামিন হাত ধুয়ে উঠে পরতে পরতে বলে,”আমি হাল ছাড়বো না।”

টেবিল পরিষ্কার করে আলো দোতলায় উঠে দেখে ইশমাম আর ইশিতা বসে বসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছে! আলো বেশ অবাক হয়। এই মাত্রই তো দুটোতে হাতা*হাতি, মারা*মারি করছিলো! এরই মধ্যে মিল হয়ে গেল!
এরা চার ভাইবোন খুবই অদ্ভুত!

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলো ঘরে চলে যায়। বিছানায় বসে বই টা মাত্র হাতে নিয়েছে একটা ড্রামায় চোখ বুলাবে বলে, তখনই সামিন বারান্দা থেকে এসে আলোর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। চোখ দু’টো বন্ধ করে রেখেছে সে। আলো নাক কুঁ’চকে বলে,”সিগারেট খেয়েছেন? বাহ! এই চমৎকার গুন সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না!”
_রা’গ করলে? বছরে দুই টা খাই। এই আজ একটা খেয়েছি, আরেকটা ছয়মাস পরে খাবো।

আলো ঠান্ডা গলায় বলে,”না রাগ করবো কেনো? আমার তো এতো খুশি লাগছে, এতো খুশি লাগছে যে খুশিতে ইচ্ছে করছে আপনাকে ঘর থেকে বের করে দেই।”

সামিন মৃদু হেসে বলে,”মাথার চুল টেনে দাও।”

_মামার বাড়ির আবদার গুলো করতে বেশ পারেন মেয়র সাহেব।

_আবদার নয়, স্ত্রী হবার এগারো তম শর্ত। নাও, চুল টেনে দাও‌। বত্রিশ বছর হয়ে গিয়েছে আমার, আর দু’বছর পরেই টাকলা হতে শুরু করবো। তখন স্বামীর চুল টেনে দেওয়ার জন্য মেঝেতে শুয়ে গড়াগড়ি করে কাদলেও চুল পাবে না। এখন মন ভরে টেনে রাখো বৌ !

***
কমলা রঙের শাড়িটার দিকে তাকিয়ে থেকে আলো মুচকি হেসে শাড়িটা হাতে তুলে নেয়। লোকটা একটা আস্ত পাগল। আলমারি ভর্তি শাড়ির প্রায় অর্ধেক শাড়িই কমলা রঙের। কি পেয়েছে এই রঙটাতে সে! আর কোনো রঙে বুঝি আলোকে মানায় না!

আঁচল গাঁয়ে জরিয়ে নিয়ে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়। সামিন বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কিছু টাইপ করছিলো। আলো সামিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মৃদু আওয়াজ করে গলা খাঁকারি দেয়। সামিনের কোনো হেলদোল নেই। সে একমনে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখছে। আলো মাথা থেকে তোয়ালে খুলে ফেলে বলে,”শুনছেন। আমাকে কেমন লাগছে?”

সামিন আলোর দিকে না তাকিয়েই ল্যাপটপে টাইপ করতে করতে অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলে ,”হু, সুন্দর লাগছে।”

_আরে দেখে বলুন না!

_ব্যস্ত আলো। পরে দেখবো, যাও।

আলো মাথা ঘুরিয়ে সামিনের দিকে তাকায়। তারপর কন্ঠে এক রাশ অভিমান মিশিয়ে বলে ওঠে,”এমনটা তো আমি শুরুতেই আন্দাজ করেছিলাম। বাংলাদেশের ছেলেদের এটা একটা নীতি, শখের নারী প’টে গেলে তখন আর পাত্তা দিতে ইচ্ছে করে না।”

সামিন কিছুক্ষণ কিবোর্ডে টাইপ করে আলোর দিকে না তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আমি পাত্তা দেয়া শুরু করলেই তো বলে দেবে, ছাড়ুন ছাড়ুন তরকারি পু’ড়ে যাচ্ছে, ইহান আসছে, জাপানে টর্নেডো হচ্ছে, পৃথিবী উল্টে যাচ্ছে। এখন ড্রামা না করে যাও। আমি সত্যিই ব্যাস্ত আছিয়া!”

আলো শীতল চোখে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিন আলোর দিকে না তাকিয়েই বলতে থাকে,”স্ত্রী হবার বারো তম শর্ত হচ্ছে, স্বামী ব্যস্ত থাকলে তার জন্য চমৎকার এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসে তাকে দেওয়া। তার পাশে বসে তার কাঁধে মাথা রাখা, এবং অবশ্যই মুখে তালা লাগিয়ে রাখা যাতে স্বামীর কাজে কোনো অসুবিধা না হয়।”

আলো বিরস মুখে রান্নাঘরে ঢুকে কফির জন্য পানি গরম করতে থাকে। সিতারা অবাক হয়ে বলে,”কি হয়েছে ভাবী? মুখ শুকনো কেনো আপনার? কিছু হয়েছে?”

আলো কপাল কুঁচকে বলে,”বলো তো সিতারা পৃথিবীতে সবথেকে পল্টিবাজ প্রানী কোনটা? মানে দ্রুত রং বদলায় কারা?”

সিতারা বলে,”গিরগিটি ভাবী।”

আলো মাথা নাড়িয়ে বলে,”হয়নি।”

সিতারা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,”তবে কি বাংলাদেশের নেতা-খাতারা?”

_হয়নি,তাদের থেকেও পল্টিবাজ।

সিতারা বলে,”বুঝতে পারছি না ভাবী। আপনি বলেন।”

_সেই প্রানীর নাম হলো স্বামী। এরা প্রথম প্রথম একরকম থাকে, পরে রূপ বদলে ফেলে।

সিতারা মাথা ঝাঁকিয়ে আলোকে সমর্থন করে বলে,”ঠিক বলেছেন ভাবী,এরা মিনিটে মিনিটে পল্টি নেয়। ঘরভর্তি মানুষের সামনে বৌকে ধ’ম’ক দিয়ে বীরপুরুষ সাজে আর রাত বারোটার পরে এসে বৌয়ের হাত পা ধরে মাফ চায়। আমি ভুক্তভোগী ভাবী!

আলো শুকনো মুখে বলে,”হু, আমারো সেদিন আসতে চলেছে সম্ভবত!”

***
অফিস ঘর টা বেশ পছন্দ হয়েছে আলোর। সামিন সম্ভবত তার জন্যই এতোটা শৌখিন ভাবে সাজিয়েছে ঘরটাকে। নয়তো লোকটা তো পুরো অগোছালো একটা লোক।

সপ্তাহে তিনদিন তাকে এজেন্সির এই অফিসে বসতে হয়। রবি,মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার, এই তিনদিন হচ্ছে তার অফিস টাইম। আলো প্রথমে বেশ অবাক হয়েছিলো। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আটটা কোনো অফিস টাইম নাকি! পরে জেনেছে সামিন তারজন্য এমন একটা নিয়ম করে রেখেছে। যাতে সে ইউনিভার্সিটি যেতে পারে এবং অফিসেও থাকতে পারে। বড় কথা হচ্ছে সামিন নিয়মিত আলোকে এজেন্সি থেকে নিয়ে যায়।
আপাতত চারজন ছাত্র ছাত্রীকে মেডিকেলের এডমিশন যু*দ্ধে অংশ নিতে কোচিং করার যাবতীয় খরচ দেওয়া হয়েছে, সবাই চাষাভুষা পরিবারের, ঠিকমতো খেতে পারে না। এবং এটা সম্পূর্ণ সামিন দিয়েছে। তাদের ফান্ডে এখনো দানের অর্থ জমা হতে শুরু করেনি।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আলো উঠে দাঁড়ায়। প্রায় রাত আটটা বেজে গিয়েছে। সামিনের এখনো আসার নাম নেই। হয়তো কোনো কাজে আটকে গিয়েছে। সামিনের পার্টি অফিস থেকে এজেন্সির দূরত্ব পায়ে হেঁটে দশ মিনিট। আবাসিক এলাকা তাই জায়গাটা একটু নির্জন। অফিসের সহকারী মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে আলো দাড়োয়ান চাচাকে বলে তালা লাগিয়ে দেয় অফিস ঘরটিতে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ সে গিয়ে সামিনকে চ’ম’কে দেবে পার্টি অফিসে। ছাতা হাতে নেমে পরে আলো, বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন নেই কোন রাস্তায়। দূরে একটা মাইক্রো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আর মাঝে মাঝে দুয়েকটা ট্রাক চলে যাচ্ছে।

আলো এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনে দুই পা বাড়াতেই হঠাৎ মৃদু গোঙানির আওয়াজ শুনতে পায়। মনে হচ্ছে কারো মুখ চেপে ধরা হয়েছে। হঠাৎ আলোর ভেতরটা কেমন কেঁ*পে ওঠে। ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে ভালো করে দেখতে থাকে সে। কোথাও কিছু নেই একটা মাইক্রো গাড়ি ছাড়া। হঠাৎ একটা যাত্রীবাহী অটোরিকশা চলে গেলো আলোর সামনে দিয়ে। আলো ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিয়ে ঘুরে আবারও সামনে পা বাড়ায়। আবারও সেই গোঙানির আওয়াজ শুনতে পায় সে।
থেমে যায় আলো, মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে কোথা থেকে একজন লোক ছুটে এসে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রো গাড়িতে উঠে পরে। ল্যাম্পোস্টের ঘোলাটে আলোতে একপলকের জন্য আলো লোকটার মুখটা দেখতে পেলো। কিছু একটা অনুমান করার আগেই গাড়িটা সাই সাই করে আলোর সামনে দিয়ে চলে যায়। তখনই কোনো মেয়েলি কন্ঠের কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় সে।

আলো হতভম্ব হয়ে তাকায় সেদিকে। মাথা কাজ করছে না তার। ফোন বের করে গাড়িটার নাম্বার প্লেটের ছবি তুলে এদিকে ওদিক তাকিয়ে লোকজন ডাকতে থাকে আলো। খুব কাছেই কুরিয়ার সার্ভিসের একটা অফিস। সেখান থেকে দাড়োয়ান সহ বেশ কিছু কর্মচারী ছুটে আসে।

আলো কাউকে পুরো ব্যাপারটা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয় না। হাল ছেড়ে দিয়ে অটোতে উঠে সামিনের পার্টি অফিসে চলে যায়।

সামিন ইয়াসারের পার্টি অফিসে সালিশ বৈঠক বসেছে আজ। দু’টো ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে সালিশ বিচারের বৈঠক।

আলো গেইট থেকে দ্রুতপায়ে বৈঠক খানা হয়ে সোজা সামিনের মুখোমুখি দাঁড়ায়। সামিন সালিশ রেখে উঠে দাঁড়িয়ে আলোকে নিয়ে নিজের ঘরটাতে আসে, ধ’ম’কে’র সুরে বলে,”সাহস ভালোই তোমার। বলেছি না আমি না যাওয়া পর্যন্ত বের হবে না একদম। এতো তা*ড়া ছিলো ফোন দিতে গাড়ি পাঠিয়ে দিতাম।”

_আমি ফোন দিয়েছি আপনি ফোন ধরছিলেন না।

সামিনের মনে পরে যায় সে সালিশের জন্য ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছিলো। তারপর বলে ওঠে,”তো? ইশমামকে ফোন দিতে, ও এসে নিয়ে যেতো।”

আলো সামিনের কথার জবাব না দিয়ে বলে ওঠে,”বাদ দিন। আমার কথা এখন মন দিয়ে শুনুন। আমার সাথে একটু থানায় যাবেন চলুন।”

সামিন অবাক হয়ে বলে ,”থা*নায় কেনো?”

আলো সব ঘটনা খুলে বলে সামিনকে। সব শুনে সামিন পাত্তা দেয়না প্রথমে, মজার ছলে বলে,”হয়তো কোনো অদ্রিতা আলোকে কোনো সামিন ইয়াসার তুলে নিয়ে গেছে। ”

আলো রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামিনের দিকে। চেঁচিয়ে উঠে বলে,”আমি মজা করছি না, এই দেখুন গাড়ির নাম্বার প্লেট।”

সামিন আলোর ফোনে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে,”এটা তো জাবিরের গাড়িটা,ও এই গাড়িটা ব্যাবহার করে।”

আলো চাঁপা স্বরে চেঁ’চি’য়ে ওঠে,”হ্যা হ্যা। আমার মনে পরেছে। ঐ লোকটার মুখ আমি দেখেছি। ঐ লোকটা জাবির ছিলো। জাবিরই ছিলো।”

সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আলো বলতে থাকে,”চলুন মেয়র সাহেব। আমার মনটা কেমন কু গাইছে। আমি স্পষ্ট শুনেছি সেই নারীকন্ঠের আর্তনাদ!”

চলমান……

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৫১
#Esrat_Ety

“কি’ড’ন্যা’পিং কেইস মনে হচ্ছে?”

আলো সমীর দত্তের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলে,”জি। আমি স্পষ্ট শুনেছি। একটা মেয়ের চাঁপা আর্তনাদ।”

সমীর সামিনের দিকে তাকায়। সামিন বলে,”গাড়িটা জাবিরের।”

সমীর দত্ত চিন্তায় পরে যায়‌ । কপাল কুঁচকে বলে,”কিন্তু আমাদের কাছে না কোনো মিসিং ডায়েরি এসেছে, না অন্যকোন অভিযোগ। এভাবে আন্দাজের বশে কাউকে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা, তাও কবীর আলমগীরের ভাগ্নে! তোরা মানহানির মা’ম’লা খেয়ে যাবি! ”

সামিন মাথা নেড়ে বলে,”বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা! আমি শুধু তোকে ব্যাপারটা ইনফর্ম করতে এসেছি।”

সমীর দত্ত মাথা ঝাঁকিয়ে জবাব দেয়,”বেশ করেছিস! বিষয় টা মাথায় থাকলো। তেমন কিছু টের পেলে আমি অবশ্যই এ’ক’শন নেবো।”

থানা থেকে রাত সাড়ে নয়টায় বের হয় সামিন এবং আলো। আলো মাথায় শাড়ির আঁচল তুলেছে। গাড়ির কাছে এসে সামিন আলোর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক’ট’ম’ট দৃষ্টি দেয় আলোর দিকে। আলো ঘা’ব’ড়ে যাওয়া মুখ করে বলে,”কি হয়েছে? আমি আবার কি করলাম? এখন আমাকে চোখ রা’ঙা’চ্ছে’ন কেন?”

_আর যদি কখনও আমি দেখি বেশী পাকনামি করে আমাকে না বলে অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি খুব রেগে গিয়েছি তোমার উপর আলো‌। আমি ছাড়া অফিস থেকে একপাও বাইরে দেওয়া যাবে না। এমনটা কথা ছিলো না? সব সময় একটু বেশি বুঝতেই হবে?

আলো বলে,”আমি তো আপনার দেরী হচ্ছিল দেখে!”

সামিন প্রচন্ড রে’গে গাড়িতে উঠে বসে। আলো চুপচাপ পাশে বসে সামিনের দিকে তাকায়। মানুষ টা অস্বাভাবিক রে’গে গিয়েছে। এখন কিভাবে রা’গ ভাঙাবে তার!

বাড়িতে এসেও প্রচন্ড গম্ভীর হয়ে থেকেছে সামিন। খাবার টেবিলে চুপচাপ খেয়ে উঠে গিয়েছে। আলোর এবার খুবই বিরক্তি লাগছে। সামান্য অ’প’রা’ধের এমন শা’স্তি হতে পারে না!

বিছানায় বসে কিছু কাগজপত্র দেখছিলো সামিন। আলো সামিনের রাগ ভাঙানোর জন্য এসে তার পাশে বসে কাঁধে মাথা রাখে। সামিন কোনো কথা বলে না। আলো নরম গলায় বলে,”সরি! আর করবো না এমন পাকনামি!”

_সরি বলার কিছু নেই। কাল থেকে এজেন্সিতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যা টাকা লাগবে আমাকে বলবে, ঐ টাকা দিয়ে ইচ্ছামত ভাইদের এটা সেটা কিনে দেবে।

আলো সামিনের দিকে তাকায়। সামিনের গালে হাত রেখে মুখটা আলোর দিকে ঘুরিয়ে বলে,”আচ্ছা সে দেখা যাবে। আগে আপনি মুড ঠিক করেন প্লিজ! এভাবে দেখতে ভালোলাগছে না আপনাকে!”

সামিন আলোর দিকে তাকায় ঠিকই কিন্তু মুখটা এখনও গম্ভীর করে রেখেছে। আলো একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে নিচু স্বরে বলে,”রাগ কিভাবে কমবে? কি করতে হবে?”

সামিন চুপচাপ তাকিয়ে থাকে আলোর দিকে। আলো মাথা নিচু করে বলতে থাকে,”বলুন? কি করতে হবে? কমলা রঙের একটা শাড়ি পরে আসলে রা’গ কমবে?”

সামিন কয়েক মুহূর্ত চুপ করে আলোর দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,”কমবে।”

***
শান্তিনীড়ের পরিবেশ টা থমথমে হয়ে আছে। একটা বড় সর ঝড় চলে গেলে প্রকৃতি যেমন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, ঠিক তেমনি হয়ে আছে পরিবেশ। ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে দোতলার লিভিং রুমে, ইশমাম নিজের ল্যাপটপে প্র’জেক্ট নিয়ে কাজ করছিলো। সামিন এসে তাকে জানায় আজ বিকেলে একজন মেয়ের সাথে দেখা করতে যেতে হবে তাকে। রেস্টুরেন্টে টেবিল বুক করে রেখেছে সে। ইশমাম কিছু না বলে উঠে যেতে নিচ্ছিলো তখনই সামিন রাগের মাথায় এটা ওটা ভা’ঙচুর শুরু করে দেয়। ভাইয়ের প্রতি পাল্টা রা’গ দেখাতে না পেরে ঘরে ঢুকে নিজেও জিনিস পত্র ভাঙতে শুরু করে ইশমাম। সামিন চেঁচিয়ে যাচ্ছে,”তোর সমস্যা কোথায় আমি দেখেই ছাড়বো। আজকে তুই যাবি রেস্টুরেন্টে। যাবিই।”

দুই ভাই তাদের নিজেদের ঘরে বসে মে’জা’জ দেখাচ্ছে। আলো এবং বাকিরা দোতলার লিভিং রুমে দাড়িয়ে আছে অপ্রয়োজনীয় রেফারি হয়ে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আলো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। সামিন শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে,”বলে দিও তোমার দেবরকে। বিকাল চারটায় দেখা করতে হবে। মেয়ের সাথে মেয়ের বড় ভাই আর ভাবী থাকবে। আর ইশমামের সাথে তুমি আর ইশিতা যাবে। আমি কিছুক্ষণ পরে জয়েন করবো সময় বের করে‌। আমি ওনাদের ফোন করে ফাইনাল করে দিচ্ছি।”

আলো আমতা আমতা করে বলে,”এভাবে ওর পারমিশন ছাড়াই ফাইনাল করে দেবেন? ও যদি না যায় তাহলে তো আপনার সম্মান ন’ষ্ট হবে।”

_যাবে, ওর ঘাড় যাবে।

আলো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে,”বলছিলাম। আমি একটু কথা বলে দেখবো?”

সামিন ওয়ালেট আর ফোন হাতে তুলে নিয়ে আলোর গালে হাত বুলিয়ে যেতে যেতে বলে,”দেখতে পারো। তবে ওকে বলে দিও। যেতে কিন্তু হবেই!”

***
আপাতত কোনো ভাঙচুরের শব্দ শোনা যাচ্ছে না। আলো পা টিপে টিপে ইশমামের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়। দরজা ভেজিয়ে রাখা। হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা চাপিয়ে দেয় সে। ইশমাম কপালে একটা হাত রেখে ইজি চেয়ারে আধশোয়া হয়ে ছিলো। কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে ঘুরে তাকাতেই আলোকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। আলো ইশমামের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশমাম চেঁচিয়ে ওঠে,”স্বামীর হয়ে ওকালতি করতে এসেছো? যাও এখান থেকে!”

আলো চলে যায় না। একটা চেয়ার টেনে বসে পরে, ইশমামের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইশমাম রাগী গলায় বলতে থাকে,”শোনোনি আমার সিদ্ধান্ত? যাও, তোমার স্বামীকে গিয়ে বলে দাও।”

_কেন করছো এমন?
আলো ঠান্ডা গলায় জানতে চায়। ইশমাম কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে,”বিয়ে করতে আগ্রহী নই। কতবার বলবো?”

_তোমার ভাইয়া তোমার ভালো চায় ইশমাম।

_ভাইয়া ভালো চায়,তুমি ভালো চাও,ইশু ভালো চায়,মেজো ভাইয়া ভালো চায়, মেজো ভাবী ভালো চায়। তোমরা সবাই ভালো চাও? শুধু আমিই আমার ভালো চাই না তাইতো? এটাই বলতে চাইছো?

_সেরকমই মনে হচ্ছে। নয়তো বিয়েতে আপত্তি করার কোনো কারণ দেখছি না।

ইশমাম আলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে ,”একটা মেয়েকে চিনিনা জানিনা হুট করে তাকে বিয়ে করে নেবো? এটা ২০২৩ অদ্রিতা…….সরি ভাবী।”

আলো কয়েক মূহুর্ত চুপ থেকে বলে,”তো? চিনবে, জানবে, এজন্যই তো দেখা করতে বলা হচ্ছে। আগে কথা বলে দেখবে তারপর ভালো না লাগলে জানিয়ে দেবে, অন্য মেয়ে দেখা হবে।”

_পারবো না। আমার ইন্টারেস্ট নেই।

_পারবে। তোমার ভাইয়ার জন্য পারতে হবে।

_ভাইয়ার জন্য? ভাইয়ার খুশির জন্য আমি মনের বিরুদ্ধে একটা কাজ করবো?

_কেন? ভাইয়ার খুশির জন্য এর আগে তো অনেক কিছুই করেছো। তাহলে এখন এতো নাটক করছো কেনো?

কথাটা বলে আলো থামে, তারপর বলে ওঠে,”মেয়ের ফ্যামিলিকে আজ দেখা করার কথা জানিয়ে দিয়েছে তোমার ভাইয়া। বিকেলে তৈরি থেকো। আমি আর ইশিতা যাবো তোমার সাথে।”

_যা মন চায় করো।
কথাটা বলে ইশমাম হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরীর দিকে যায়।
পরী ছুটে আসছিলো, এবং কাকতালীয় ভাবে ইশমামের সাথেই ধাক্কা খেয়ে যায়। চোখ তুলে ইশমামকে দেখে একটা ঢোক গিলে নেয় পরী। তার কপাল এতোটা খারাপ কেন?

ইশমাম প্রচণ্ড রে’গে বলে ওঠে,”চোখ দুটো নিজে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারো না। ওই দু’টো দান করে দিলেই তো পারো কোনো অ’ন্ধকে!”

“কি হচ্ছে কি ইশমাম।”
পেছন থেকে ইশিতা ধ’ম’কে ওঠে। আলোও এসে সেখানে দাঁড়ায়। ইশমাম কাউকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ চলে যায় সেখান থেকে। পরী দাঁড়িয়ে থাকে বোকার মতো। আলো এসে বলে,”ছুটছিলে কেনো? সবসময় এতো ছোটাছুটি করো কেন?”

_আমি ছাদে ছিলাম, বাবা তার কটেজ থেকে ডাকছিলো, ছুটে আসতে গিয়ে ধাক্কা লাগলো। বুঝতে পারিনি রামগরুরের ছানা বাড়িতে আছে, নয়তো ভুলেও দোতলায় উঠতাম না ভাবী।

মুখ কাঁচুমাচু করে বলে পরী। আলো মেয়েটিকে দেখে, অতিমাত্রায় সুন্দরী একটা মেয়ে। এমন সুন্দরী মেয়ে সে এই শহরে খুব কমই দেখেছে। পুরো কাশ্মীরের মেয়েদের মতো গাঁয়ের রং। সবদিক থেকে পারফেক্ট। শুধু একটু সরল আর ভীতু প্রকৃতির। আচ্ছা একে ইশমামের পাশে কেমন লাগবে?
কথাটি ভেবে আলো নিজেই নিজেকে শুধরে নেয়। তার মনে হওয়াতে কি যায় আসে! ইশমামের ভাইয়েরা আছে ইশমামের জন্য। তার আগ বাড়িয়ে এসব ভাবার দরকার কি!

***
ওয়েটার এসে অর্ডার নিয়ে চলে যায়। আলো তার মুখোমুখি বসে থাকা মেয়েটিকে দেখতে থাকে। ইশমাম মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। মেয়ের ভাই আর ভাবী নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
ইশিতা আলাপ চারিতা সহজ করার জন্য মেয়েটিকে বলে ওঠে,”তোমার সাবজেক্ট কি ফিহা?”

ফিহা বলে মেয়েটি মাথা তুলে তাকায় না। মাথা নিচু করেই অস্ফুট স্বরে জবাব দেয়,”ইকোনমিক্স!”

_ইকোনমিক্স? আমিও তো ইকোনমিক্সের ছাত্রী!

আলো মেয়েটির থেকে চোখ সরিয়ে ইশমামের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,”কিছু জিজ্ঞেস করো।”

ইশমাম চোখ তুলে আলোর দিকে তাকায় ‌। কোনো জবাব না দিয়ে আবারও মাথা নিচু করে বসে থাকে।

দীর্ঘসময় ধরে মেয়ের ভাই আর ভাবীর সাথে আলো এবং ইশিতা গল্প করতে থাকে। না ইশমাম মেয়েটিকে দেখছে না মেয়েটি ইশমামকে দেখছে। এমন সময় সামিন চলে এসে তাদের সাথে জয়েন করে। মেয়ের ভাই ভাবীর সাথে আড্ডা দিচ্ছে সে।

রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে দিয়ে সামিন ফিহার ভাই সুমনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার মনে হচ্ছে ওদের দুজনের নাম্বার এক্সেঞ্জ করা উচিৎ।”

_হ্যা অবশ্যই।
সুমন মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

দু’জনের নাম্বার এক্সেঞ্জ করা হয়ে গেলে ফিহাকে নিয়ে তার ভাই ভাবী উঠে চলে যায় সামিনদের থেকে বিদায় নিয়ে।
কিছুক্ষণ পরে সামিনরাও উঠে পরে।
গাড়িতে সবাই প্রথমে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। নীরবতা ভেঙে ইশিতা আলোকে বলে ওঠে,”ছবিতে যতটা মনে হচ্ছিল ততটা সুন্দর না তাই না বড় ভাবী?”

_তুমি এমন পাশের বাড়ির আন্টিদের মতো কথা বলছো কেনো ইশিতা আপু?
শুকনো গলায় আলো বলে ওঠে।
ইশিতা চুপ হয়ে যায়, আলো বলতে থাকে,”তেমন হলে তো আমিও সুন্দরী নই। গাঁয়ের রং তোমার ভাইয়ার মতো সুন্দর নয় আমার। আমাকে কিভাবে মেনে নিলে?”

সামিন ড্রাইভ করতে করতে আলোর দিকে তাকায়। ইশিতা চেঁচিয়ে ওঠে,”মোটেই না। আমার বড় ভাবী সুন্দরী। ভাইয়ার থেকেও সুন্দর তুমি।”

আলো ম্লান হাসে। সামিন, ইশিতা, আলো গাড়িতে ফিহা মেয়েটির সম্পর্কে টুকটাক আলোচনা করতে থাকে। ইশমাম গাড়ির জানালার বাইরে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে চুপচাপ। তার ভীষণ মাথা ব্যথা করছে!

***
দোতলার লিভিং রুমের বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে আলো দৃষ্টি বাইরের দিকে দিয়ে রেখেছে। বাগানের ফুলগাছে ফুল ধরেছে, এখান থেকে বেশ লাগছে দেখতে। বাগানের উত্তর পাশের বিশাল আম বাগানে সব বারোমাসি আমগাছ। আমের মুকুল ধরেছে গাছগুলোয়।

হঠাৎ কোমরে পুরুষালি হাতের উষ্ণতা পেয়ে গোলগাল মায়াবী মুখখানা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। আলো পেছন ফিরে না তাকিয়েই অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”কি চাই?”

কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে সামিন নরম গলায় বলে ওঠে,”পাত্তা দিতে চাই বৌকে।”

আলো বলে ওঠে,”কিন্তু বৌ এখন পাত্তা চাচ্ছে না।”

সামিন মৃদু হেসে আলোকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয়। লজ্জা পেয়ে আলো সামিনের শার্ট খামচে ধরে । অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”ইহান…..”

_ইহান গার্ডেনে পোনা চাচার সাথে বল খেলছে, চুলায় কোনো তরকারি বসিয়ে আসোনি, জাপানে টর্নেডো হচ্ছেনা, পৃথিবীও উল্টে যাচ্ছে না।
আলোকে থামিয়ে দিয়ে বলে সামিন।

আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে,সামিন আলোকে নিয়ে ঘুরে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতেই থ’ম’কে যায়। লিভিং রুমে ইশমাম,ইলহাম , ইশিতা,পরী চারজন খেলা দেখবে বলে বসেছিলো। তারা চারজন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে সামিনের দিকে। সামিন ভাই বোনদের সামনে থতমত খেয়ে আলোকে কোল থেকে ফেলে দেয়। মেঝেতে পরে মৃদু আর্ত*নাদ করে ওঠে আলো।

ইলহাম আর ইশমাম মাথা নিচু করে দুজনে দুদিকে চলে যায়। সামিন এদিক ওদিক তাকিয়ে আলোকে টেনে তোলে। আলো কাতরাচ্ছে। ইশিতা পরী এগিয়ে আসে আলোর কাছে। সামিন চুপচাপ ঘরের দিকে চলে যায়।

ইশিতা কন্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”ব্যা*থা পেয়েছো ভাবী?”

লজ্জামাখা এবং যন্ত্র*নায় ফ্যাকাশে মুখটা তুলে ইশিতার দিকে তাকায় না আলো। মাথা নাড়িয়ে ঘরের দিকে যায়।

ইশিতা আর পরী একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উচ্চশব্দে হেসে ফেলে।

আলো ঘরে ঢুকতেই সামিন একটানে আলোকে আগলে নিয়ে ঘরের সিটকিনি তুলে দিয়ে নরম গলায় বলে,”ব্যা*থা পেয়েছো?”

আলো এক ঝটকায় সামিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে*মেগে বলে,”না আমি খুব আরাম পেয়েছি, ছাড়ুন আপনি।”

সামিন আহ্লাদী গলায় বলে,”সরি।”

আলো কোমরে হাত রেখে কাতরাচ্ছে। সামিন চিন্তিত মুখে আলোকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,”সব ওদের কারনে, আমার ভাইবোন গুলোর কোনো কান্ডজ্ঞান নেই বুঝলে, দুপুর টাইমে কেউ টিভি দেখতে আসে? দুপুরে সবাই নিজেদের ঘরে একটু বিশ্রাম নেবে তা না!”

আলো চাঁপা স্বরে চেঁ’চি’য়ে বলে ওঠে,”ওদের কান্ডজ্ঞান নেই নাকি আপনার কান্ডজ্ঞান নেই? আচ্ছা আপনি কি এই প্রথম আমাকে কোলে তুলেছেন ওদের সামনে? এভাবে ফেলে দিলেন কেন ঢং করে।”

কা’তরাচ্ছে আলো। সামিন আমতা আমতা করে বলে,”আগেও কোলে তুলেছি তবে তখনকার সিচুয়েশন অন্য ছিলো। তখন তো রোমান্টিক হয়ে কোলে তুলিনি!”

আলো ক’ট’ম’ট দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে সামিনের দিকে। সামিন নরম গলায় বলে,”রাগ করো না প্লিজ। আমি হট ওয়াটার ব্যাগ নিয়ে আসছি।”

***
হন্তদন্ত হয়ে জাবির তার মামা কবীর আলমগীরের কক্ষে প্রবেশ করে। কবীর আলমগীর তখন খাদ্যমন্ত্রীর সাথে ফোনালাপে ব্যাস্ত ছিলো।
জাবির গম্ভীর মুখে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। জাবির এবং জুঁই নিঃসন্তান কবীর আর তার স্ত্রীর খুবই আদুরে।
কবীর জাবিরকে খেয়াল করেছে। খাদ্যমন্ত্রীর সাথে দীর্ঘ ফোনালাপ শেষ করে কবীর জাবিরের দিকে তাকায়। গম্ভীর কন্ঠে কি হয়েছে তা জানতে চায়। জাবির চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”মামা তোমার পোষ্য সামিন ইয়াসার কি শুরু করেছে এসব? আমার মাথা গরম হয়ে গেলে কিন্তু ওর খুব খারাপ অবস্থা করে ছাড়বো ওকে বুঝিয়ে বলো।”

_কি করেছে?
ঠান্ডা গলায় জানতে চায় কবীর আলমগীর।

_কি করেছে? থানা থেকে এসআই নুরুল ফোন দিয়েছে, ও আর ওর বৌ গিয়েছিলো থানায় আমার নামে অভিযোগ করতে আমি নাকি কোন মেয়েকে তুলেছি আমার মাইক্রোতে।

_হোয়াট!
কবীর আলমগীর উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
জাবির বলতে থাকে,”ঐ সমীর দত্তের কাছে গিয়েছিলো। মামা তোমাকে শুরু থেকে বলে এসেছি ওকে বের করো বের করো,তুমি শুনলে না, এখন ওর শশুর তোমার কাছা ধরে টান দিচ্ছে আর ওর বৌ আমাকে ফাঁসাতে চাইছে। তুমি ঐ সামিন কালসাপটাকে কেন এখনো গলাধা*ক্কা দিয়ে বের করছো না পার্টি থেকে।

কবীর আলমগীর চুপ করে থাকে। জাবির চেঁচাতে থাকে,”মেয়র মাই ফুট! ওকে বের করো, গতবার দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের পরে যখন ওর পার্টি থেকে বের হবার কথা ছিলো তখন সবাই দরদ দেখিয়ে রেখেছিলে,এখন বোঝো। বোঝো ঠ্যালা!

_আচ্ছা বুঝবো, আগে বলো তুমি এমন কিছু করোনি তো?

জাবির থতমত খায়, চেঁচিয়ে বলে, “মামা প্লিজ!”

_আচ্ছা ঠিকাছে যাও! আমি দেখছি।

***

“আজ এতো তাড়াতাড়ি ফিরলেন যে।”

আলোকে পেছন থেকে আগলে ধরায় সামিনের উদ্দেশ্যে আলো বলে ওঠে। আলোর কানের কাছে মুখ নিয়ে সামিন অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”হঠাৎ খুব চাঁদ দেখতে ইচ্ছে করছিলো বাড়িতে এসে।”

_কিন্তু এখন তো অমাবশ্যা, চাঁদ কোথায় পেলেন?

আলোর কথা শুনে সামিন হেসে ফেলে, আলোর নাক টিপে দিয়ে বলে,”তোমার ঐ স্টুপিড ধূসর রঙের চাদ দেখার আমার কোনো আগ্রহ নেই, আমি যে চাঁদের কথা বলছি তার নাম আলো, আমার আছিয়া।”

আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”ইশশশ! এসব নব্বই দশকের বস্তা*পচা ডায়লোগ গুলো মুখস্থ করে রেখেছেন। আপনার ফ্লার্টিং স্কিল নেই বললেই চলে মেয়র সাহেব।”

_ভদ্র ভাবে প্রেম নিবেদন করেছি। একজন মেয়র কি সরাসরি বৌকে বলে দেবে আমি বৌটাকে চু*মু খেতে এসেছি ? এভাবেই তো বলবে। ভদ্রভাবে, মার্জিত ভাবে।

আলো লাজুক মুখটা নামিয়ে রাখে। সামিন থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে বলে,”বিশ্বাস করো। তোমাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখলে আমার বুকে সূক্ষ্ম যন্ত্রনা হয়। আমি ম*রে যাই এক অদ্ভুত অনুভূতিতে।”

আলো প্রসঙ্গ পালটে বলে,”আজ জামিল ভাই আমাকে একটা শাড়ি পাঠিয়েছে ওনার ছেলেকে যে উপহার দিয়েছিলাম তার রি*টার্ন গিফট হিসেবে।”

_বেশ ভালো।

আলো একটু থেমে বলে ওঠে,”আপনি আমাকে কতকিছু দেন। আমি আপনাকে কিছুই দিতে পারি না। খারাপ লাগে।”

সামিন হেসে ফেলে, তারপর বলে,”দিও কিছু একটা কিনে, দিতে ইচ্ছে করলে ‌! ”

_টাকা জমাচ্ছি আপনাকে উপহার কিনে দেবো বলে, স্বস্তা কিছু দেবো না।

_দামী কিছু দিতে চাও?
সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। আলো মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “হু। আপনার পছন্দ মতো কিনে দেবো, কি দেবো বলুন।”

_কত টাকা জমিয়েছো এখন পর্যন্ত?

_আড়াই হাজার টাকা।

_কিন্তু আমার যা লাগবে তা তো এই টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। অনেক দামী।

আলো অবাক হয়ে সামিনের দিকে তাকায় , তারপর বলে,”অনেক দামী কিছু? কি সেটা?”

সামিন তার স্ত্রীকে আগলে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,”একটা বাচ্চা।”

আলো মাথা নিচু করে রেখেছে। দীর্ঘসময় ধরে সে চুপচাপ। সামিন আলোর দিকে ঝুঁকে আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”দেবে? অনেক দামী কিন্তু। বলো দেবে?”

লজ্জায় লাল হয়ে আলো শাড়ির আঁচল চেপে ধরে। সামিন আলোর কপালে একটা চু*মু খায়। তারপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠে,”স্ত্রী হবার তেরো তম শর্ত স্বামী এমন আবদার করলে তা আমলে নেওয়া। আশা করি আপনিও আমলে নেবেন।”

আলো ছুটে যেতে চাইলেও পারেনা। সামিন তার বলিষ্ঠ হাতে আলোকে ধরে রেখেছে ‌। মৃদু স্বরে বলে,”লজ্জা পাও, আমার সামনে পাও। তোমার এই লাজুক মুখটা শুধু আমিই দেখবো।”

হঠাৎ সামিনের ফোন বেজে ওঠে , পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে সমীর দত্ত বলে ওঠে,”একটু থানায় আসতে পারবি ভাবীকে নিয়ে?”

_এখন? কেনো কি হয়েছে?
অবাক হয়ে জানতে চায় সামিন।

_আগে আয় তারপর বলছি।
সমীর ফোন কেটে দেয়। সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”চলো। থানায় যেতে হবে আমাদের।”

***
সমীর দত্তের কক্ষে ঢুকে অবাক হয়ে আলো আশেপাশে তাকায়। দুজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা বসে আছে। ভদ্রমহিলা শাড়ির আঁচল মুখে চেপে ধরে কাঁদছে। সমীর সামিন আর আলোকে বসতে বলে। সামিন বসে সমীরের দিকে তাকিয়ে বলে,”কি হয়েছে?”

_ওনারা এসেছে মি*সিং কম্প্লেইন করতে, ওনাদের মেয়ে কাল সন্ধ্যা থেকে মিসিং।

আলো আ’ত’ঙ্কিত মুখে ভদ্রমহিলার দিকে তাকায়। এই ভদ্রমহিলার মনের উপর দিয়ে কি বয়ে যাচ্ছে সে বেশ বুঝতে পারছে।

সামিন আলোর দিকে একপলক তাকিয়ে সমীরের দিকে তাকায়। সমীর বলতে থাকে,”ওনার মেয়ে তোর এজেন্সির পশ্চিমে বয়েজ কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের গোপাল স্যারের কাছে টিউশন নিতে যেতো, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা।”

সামিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”আলোর ধারণা কি তবে ঠিক বলে মনে হচ্ছে?”

সমীর মাথা নাড়িয়ে বলে,”এখনো বলতে পারছি না। এভাবে অনুমানের ভিত্তিতে কিছু করাও যায়না। তবে ঐ মেয়ের বান্ধবীর থেকে একটা ক্লু পেয়েছি। জাবির মেয়েটাকে বিরক্ত করতো। আমার খুব রাগ উঠছে সামিন, জাবির আমাদের বয়সী। আর ঐ মেয়েটা, নাম অন্তরা, ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের মেয়ে। বাচ্চা বয়সী! ”

আলো কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আমি একটু মেয়েটার ছবি দেখতে চাই।”

সমীর ছবি দেখায়। আলোর বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে, এই মেয়েটা ছিলো তবে! বাঁচার জন্য আকুতি করছিলো এই মেয়েটা! কী ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে!

অন্তরা নামের মেয়েটির মা কেঁদে যাচ্ছে। আলো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না শান্তনা দেওয়ার।

সমীর সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোরা বাড়ি যা। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করবো এখন। তবে ভাবীকে আসতে হতে পারে আবারও। আমি কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস গেইটের সিসিটিভি ফু’টেজ চেক করেছি, ভাবী সত্যি বলছে ,ফু’টেজে ভাবীর মধ্যে অস্থিরতা দেখতে পেয়েছি। তবে মাইক্রো গাড়িটাতে কেউ ছিলো কিনা বোঝা যায়নি। মেয়েটাকে সম্ভবত গলির ভেতর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে!”

সামিন মাথা ঝাঁকায়,বলে,”এনি টাইম! তুই শুধু ফোন দিস!”

***
সামিন আড়চোখে আলোর দিকে তাকায়। মেয়েটা পুরো রাস্তায় বিষন্ন থেকেছে। ঘরে এসেও চুপচাপ। আলোকে টেনে কাছে নিয়ে সামিন নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। আলো কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”খুব খারাপ লাগছে মেয়র সাহেব।”

_বুঝতে পেরেছি আমি।
আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সামিন বলে।

_ওনাদের মনের মধ্যে এখন কি বয়ে যাচ্ছে বলুন তো!

সামিন চুপ হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতির স্বীকার তো আলোও হয়েছিল, মেয়েটা হয়তোবা সেদিনের কথা মনে করে ভয়ে আরো তটস্থ হয়ে আছে।

পরম স্নেহে আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”দোয়া করো তুমি মেয়েটির জন্য। কিছু হবে না।”

মনটা কেমন অশান্ত হয়ে আছে আলোর। সামিন বাতি নিভিয়ে দিয়ে আলোকে নিয়ে শুয়ে পরে। একটা অচেনা মেয়ের জন্য আলোর অস্বাভাবিক উৎ’কণ্ঠা দেখে তারও কষ্ট হচ্ছে খুব। মনে মনে সেও প্রার্থনা করছে মেয়েটির যাতে কিছু না হয়।

সমীর দত্তের মুখোমুখি বসে আছে কবীর আলমগীর। তার সামনে একটি চায়ের কাপ। সমীর ফাইল দেখতে দেখতে বলে,”কোনো প্রমাণ যে নেই এমনও তো না তাই না? প্রমান আছে। মেয়েটিকে আপনার ভাগ্নে বিরক্ত করতো, উ’ত্যক্ত করতো,হু’মকি দিতো। আর তাছাড়া একজন সাক্ষী পাওয়া গিয়েছে, যার চোখে কি’ড’ন্যাপিং এর আলামত ধরা পরেছিল।”

_কে সামিন ইয়াসারের বৌ? ওই মেয়েটা একটা উ’ন্মাদ তুমি জানো সমীর? কতটা প্রতি’হিংসা পরায়ণ একটা মেয়ে। ওর বাপ আমার পিছু লেগেছে আর ও অযথা ফালতু কথা র’টিয়ে যাচ্ছে। আর এতে মদদ দিচ্ছে আমার পোষ্য সামিন‌। হাহ, সামিন! কতবড় বেইমান। ওকে তো আমি পরে দেখে নেবো আগে তোমাকে কিছু কথা বলি সমীর। সামিনের কথায় তোমাকে আমি এই থানায় এনেছি। আমার মাথা গরম হয়ে গেলে কিন্তু তোমাকে সুদূর বান্দরবান ট্রান্স’ফার করে দেবো!

সমীর হালকা হাসে, তারপর বলে,”ভগবানের কৃপায় এ পর্যন্ত এসেছি আংকেল! তিনি যদি চান আমার নেক্সট পোস্টিং বান্দরবান হবে তাহলে আমি খুশি খুশি চলে যাবো। কিন্তু এখন আমাকে আমার কাজ করতে দিন। সমীর দত্ত এসবে ভ’য় পায় না।”

গভীর রাত। নিস্তব্ধ গোটা কলোনি। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই সামিন চোখ খোলে। বুকের ওপর থেকে আলোর মাথাটা সরিয়ে বালিশে রেখে হাত বাড়িয়ে বেড সাইডের বাতি জ্বেলে দেয়। ড্রয়ারের ওপর থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে দেখে আতাউর আলমের ফোন। ফোনটা রিসিভ করতেই আতাউর আলম বলে ওঠে,”এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। কিন্তু জরুরি কথা ছিলো‌।”

_বলুন।
সামিন নিচু স্বরে বলে।

_আমার ধারণা ঠিক, পালের গোদা কবীর আলমগীর। নিজের পকেটে পুরেছে সাড়ে পাঁচ কোটি।

_প্রমান?

_হাতে আছে আমার। সামলে রেখেছি। তুমি বললে থা’নায় পাঠিয়ে দেই? কিংবা উপরমহলে?

_না, ওগুলো আপনার কাছে রাখুন। আমি সময় মতো চেয়ে নেবো।

আতাউর আলম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”আমার মেয়েটা কেমন আছ?”

_কেমন রেখেছি বলে মনে হচ্ছে?

আতাউর আলম হাসে। তারপর বলে,”একেবারে ভুলে গিয়েছে আমাদের। খুব হিংসা হচ্ছে। আচ্ছা রাখছি, ঘুমাও।”

আতাউর আলম ফোন কেটে দেওয়ার পাচ মিনিটের মধ্যে কবীর আলমগীরের ফোন আসে সামিনের ফোনে। আলোর মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে যায় , রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কবীর আলমগীর বলে ওঠে,”দেখিয়ে দিলে অওকাদ। পেছন থেকে ছু’রি মারা। কিন্তু আমার আফসোস হচ্ছে সামিন, আমার পিঠে ছু’রি মারতে তোমাকে তোমার শশুর এবং বৌকে ব্যবহার করতে হচ্ছে। ”

_ভুল বললেন আংকেল। আমি কাউকে ব্যবহার করে আপনার পিঠে ছু’রি মারিনি। ওটা আপনিই করেছেন। তেরো কোটি থেকে কয় কোটি পেয়েছেন ভাগে বলুন তো।

_শাট আপ সামিন‌ । তোমার জন্য আমাকে টানা তিন ঘণ্টা থা’নায় কাটাতে হয়েছে, তোমার ঐ স্টুপিড বৌয়ের অযথা কৌতুহলের জন্য আমার ভাগ্নেকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।

আলো কখন ঘুম থেকে উঠে সামিনের পেছনে দাঁড়িয়েছে সামিন টের পায়নি। সামিনের হাত থেকে ফোনটা কে’ড়ে নিয়ে লাউড স্পিকার অন করে দেয় আলো। কবীর আলমগীর বলতে থাকে,”সবসময় তোমাকে একটা সুযোগ দিয়ে এসেছি আমি। আজকেও দিতে চাচ্ছি। তোমার আন্টি তোমাকে খুব পছন্দ করে তাই। শোনো, কাল সকালে বৌ নিয়ে এসে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে। এবং থানায় গিয়ে তোমার বৌয়ের জবানবন্দি উঠিয়ে নেবে। নয়তো সামিন মনে রেখো খুব খারাপ হতে চলেছে সামনে। এবং প্রমিজ করছি, আই উইল ডেস্ট্রয় ইওর হোওল পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার। মেয়র তুমি পাঁচ বছরের জন্য, তারপর? দল ছাড়া ভাত পাবে কোথাও? কোথাও পাবে না। রাজনীতি একটা নোংরা নর্দমা সামিন। এখানে নামলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, বেশি নড়াচড়া করলে গন্ধ ছড়ায়, বিষাক্ত গন্ধ।”

আলো হুট করে ফোনটা কে’টে দিয়ে সামিনের দিকে তাকায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”তো? মেয়র সাহেব কি সিদ্ধান্ত নিলেন? বৌকে নিয়ে মাফ চাইবেন? দলে নিজের পজিশন টিকিয়ে রাখতে কত নেতা তো নিজের বৌকে বড় নেতার বিছানায় পর্যন্ত পাঠায়। আপনি না হয় মাফই চাইবেন।”

_আলো।
ধ’মকে ওঠে সামিন।

আলো কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”সকালের অপেক্ষায় আছি আমি। একটু একটু করে যার প্রতি আস্থা জন্মেছে আমার মনে । যাকে নিজের অনূভুতির রক্ষক ভাবতে শুরু করেছি, আমিও দেখতে চাই সে কি স্টেপ নেয়। তার কাছে নিজের পজিশন বড় নাকি একটা অসহায় তুচ্ছ নির্দোষ মেয়ের ন্যায়বিচার। দেখতে চাই আমি!

চলমান……