#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৫৩
#Esrat_Ety
“ভাবী শান্ত ভাইয়ার মুখটা দেখো। প্রচন্ড ঘা’বড়ে গিয়েছে।”
উৎকণ্ঠা নিয়ে রিতু নিচের দিকে তাকিয়ে বলে। আলো শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে। আল্লাহ জানেন আজ কি হতে চলেছে। ইয়াসার মির্জার এতো শীতল ভাব তাকেও চিন্তিত করছে।
শান্ত সামিনের দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় তাকে সালাম দেয় শুরুতেই। সামিন সালামের উত্তর দিয়ে তাকে পুনরায় বলে,”তুমি দশমিনিট লেইট।”
_জ্যাম ছিলো রাস্তায় ভাইয়া।
নিচু গলায় বলে শান্ত।
_ঠিকাছে বসো।
শান্তকে বসার নির্দেশ দিয়ে সামিন বসে পরে। অন্যরাও সবাই বসে পরে। শান্ত তার মুখোমুখি বসে থাকা মানুষটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। যতটা বাজে আচরণ করার কথা সে করছে না। কেমন থমথমে হয়ে আছে মুখটা। লিভিং রুমের প্রত্যেকে তাদের পাঞ্জাবি কিংবা শার্টের হাতা গুটিয়ে রেখেছে। কি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা? মারবে নাকি শান্তকে। কিন্তু তার জন্য তো ইয়াসার মির্জা একাই যথেষ্ট। এতো লোকের কি দরকার!
সামিন শান্তর দিকে তাকিয়ে বলে,”পানি খাবে?”
চোখের চশমা ঠেলে শান্ত মাথা নাড়ায়। তৌফ এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় শান্তর দিকে। গ্লাস টা খালি করে শান্ত এদিক ওদিক তাকায়। ইশিতাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না সে। কি করছে এখন সে! বাংলা সিনেমার মতো আটকে রেখেছে নাকি তাকে ঘরে!
সামিন শান্তর দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু কখনোই জানা হয়নি, জেনেছি ভালো পড়াও, মেধাবী এতটুকুই। পুরো নাম কি?”
_সোহানুর ইসলাম শান্ত।
নিচু স্বরে জবাব দেয় শান্ত। সামিনের পাশ থেকে ফুয়াদ বলে ওঠে,”দেশের বাড়ি কোথায়?”
_বরিশাল।
আগের থেকেও নিচু স্বরে বলে শান্ত। জামিল পাশ থেকে চেঁচিয়ে সামিনকে বলে ওঠে,”বরিশাল! ভাই বরিশালের ছেলে! বরিশালের মানুষ চি’টার বাটপার হয় শুনেছি।”
শান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে জামিলের দিকে। সামিন জামিলকে থামিয়ে দিয়ে শান্তকে বলে,”তোমাকে আমি এখন কিছু প্রশ্ন করবো, প্রশ্নের উত্তর গুলো যদি আমার মন মতো হয় তাহলে আমি বিবেচনা করবো আমার বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দেবো কি না।”
শান্ত একটা ঢোক গিলে নেয়। চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে দিতে শেষ, এখন প্রেমিকার ভাইদের কাছেও ইন্টারভিউ!
সামিন ইলহামের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলে কর।”
ইলহাম কপাল কুঁচকে বলে,”আমার কিছু জিজ্ঞেস করার নেই। তুমি যেটা জিজ্ঞেস করবে ওটাই আমার জিজ্ঞাসা।”
সামিন ঘুরে ফুয়াদ আর দলের ছেলেদের দিকে তাকায়,সবাই সামিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সামিন মাথা ঘুরিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই তৌফ বলে ওঠে,”ভাই আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই।”
সবাই তৌফের দিকে তাকায়। সামিন বলে ওঠে,”আচ্ছা কর।”
শান্ত তৌফের দিকে তাকিয়ে আছে। তৌফ কন্ঠে গাম্ভীর্য এনে শান্তকে বলে ওঠে,”আপনার চশমার পাওয়ার কত?”
শান্ত অবাক চোখে তৌফকে দেখতে থাকে। দোতলা থেকে পরী উচ্চশব্দে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। সবাই দোতলার দিকে তাকাতেই আলো পরীর মুখ চেপে ধরে আড়াল হয়ে দাঁড়ায়। পরীর মাথায় গাট্টা মে’রে বলে,”ইয়াসার মির্জা এমনিতেই ক্ষে’পে আছে। এসব করো না।”
ইশমাম মাথা তুলে অবাক চোখে পরীর বাচ্চাসুলভ আচরণ দেখে। শুধু শুধু ঐ মেয়েটাকে সে অস্বাভাবিক বলে না।
সামিন তৌফের এমন বেহুদা প্রশ্নে রাগান্বিত হয়ে তাকায় তৌফের দিকে। সামিনের দৃষ্টি দেখে তৌফ মিইয়ে যায়, মিনমিন করে বলে,”না মানে, চোখের অবস্থা টা জানতে জিজ্ঞেস করেছি ভাই, ভবিষ্যতে কানা হয়ে গেলে আমাদের ইশুর বিপদ।”
শান্ত সবাইকে দেখতে থাকে। আজ এখানে তার ধোলাই হবে কিনা সে নিশ্চিত না কিন্তু এরা সবাই যে তার মানসম্মানের পিন্ডি চ’টকাবে এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
সামিন গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠে,”আমার বোনকে পছন্দ করেছো কেন? সুন্দরী এবং বড়লোক বাড়ির মেয়ে, এই দু’টো কারন বাদে কোনো কারণ থাকলে বলো।”
শান্ত দুমিনিট চুপ করে থেকে বলে ওঠে,”সে খুবই কাইন্ড হার্টেড এবং বোকা।”
সামিন বলে,”এক্সাক্টলি। আমার বোন বোকা। আর তোমাদের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছেলেদের কাছে সুন্দরী, ভালো মানুষ, বোকা বড়লোক মেয়েরা হচ্ছে একটা জ্যাকপট। ঐ যে ওকে দেখছো, ও আমার বন্ধু ফুয়াদ। খুবই বড়লোক পরিবারের ছেলে, ওর বড় আপুও ভালোবেসে তোমার মতো একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করেছিলো। যারা আপুকে সবসময় মই হিসেবেই দেখেছে।”
আলো দোতলার রেলিং ধরে কপাল কুঁ’চ’কে নিচতলার লিভিং রুমে সামিনের দিকে তাকিয়ে আছে। খুবই বিরক্ত হচ্ছে সে তার মেয়র সাহেবের উপরে, এই লোকটা অবিকল বাংলা সিনেমার বড়লোক চৌধুরী সাহেবদের মতো আচরণ করছে। সে ইশিতার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,”তোমার ভাইয়া কি বাংলা সিনেমা দেখতেন প্রচুর?”
পরী বলে ওঠে,”ঠিক বলেছো ভাবী । হয়তোবা দেখতেন। দেখো কেমন গাম্ভীর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চৌধুরী সাহেবদের মতো, শুধু গায়ে স্যুট আর হাতে পাইপ টা নেই। আচ্ছা শান্ত ভাইয়ার এখন কি বলা উচিত ভাইয়াকে? চৌধুরী সাহেব! আমি গরীব হতে পারি কিন্তু লোভী নই। এই ডায়লোগ টা?”
কথাটি বলে পরী নিজেই হাসতে থাকে।
শান্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন বলে ওঠে,”ভেবো না আমি তোমায় অপমান করছি। আমি শুধু আমার ধারণাটা তোমাকে জানালাম। এবং এখন পর্যন্ত কেউই আমার ধারণা ভুল প্রমান করতে পারেনি। তাই আমি আমার বোনকে নিয়ে চিন্তিত।”
_বুঝতে পেরেছি।
শান্ত অস্ফুট স্বরে বলে। সামিন বলে,”আমার বোন চিরকাল তার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে স্বার্থহীন ভালোবাসা পেয়েছে। এবং ও যা অন্যদের দিয়েছে তাও নিঃস্বার্থ সেখানে বড় ভাই হিসেবে যদি দেখি কেউ আমার বোনটাকে ক্যালকুলেট করে ভালোবাসছে তাহলে আমার তাকে মে’রে ফেলতে ইচ্ছে করবে।”
শান্ত নিশ্চুপ। সামিন বলতে থাকে,”আমার বোনটা বাসে চ’ড়তে পারে না….”
_অফিস থেকে লোন নিয়ে বাইক কিনেছি।
সামিনকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে শান্ত।
_আমার বোন একবেলাও মাছ ছাড়া ভাত খেতে পারে না।
_আমি মাছ খাই না। আমার ভাগের টাও আপনার বোনকেই খাওয়ানো হবে।
সামিন চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে ওঠে,”এখন একটা কারন বলো তোমার হাতে আমার বোনকে তুলে দেওয়ার পেছনে। কেনো তোমার কাছে আমার বোনকে বিয়ে দেয়া উচিত। বলো। কেনো তুমিই উপযুক্ত।”
কয়েক মূহুর্ত সময় নিয়ে শান্ত বলে,”শুধুমাত্র আমিই উপযুক্ত এমন কথা আমি বলছি না ভাইয়া। কিন্তু সম্ভবত আপনার আদরের বোনের ওজন সহ্য করার ধৈর্য্য আমাকে সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন।”
সামিন ঘুরে সবার দিকে তাকায়। ফুয়াদ বলে ওঠে,”নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে আমাদের বোন বিয়ে দিতে চাই না কেনো জানো? নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবাদের মানসিকতার জন্য। এদের মনস্তাত্ত্বিক দিকটা অদ্ভুত, এরা মনে করে এরা যেহেতু অতি কষ্টে সন্তানদের বড় করেছে তাই সন্তানদের উপর শুধুই তাদের অধিকার এবং খবরদারি চলবে। সেখানে ছেলের বৌরা বরাবর তৃতীয় পক্ষ তাদের কাছে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দেখে, এবং আস্তে আস্তে এই দৃষ্টিভঙ্গি ভ’য়ং’ক’র বি’ষে পরিনত হয়। তুমি ভেবো না এখানে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার প্রেমিকার ভাইয়েরা সব যুক্তিহীন এবং জাজমেন্টাল কথাবার্তা বলছে, সবটাই আমাদের বোনের জন্য আমাদের ইমোশন। ভাইদের ইমোশন।”
শান্ত কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলে,”আপনাদের কোনো কথা যুক্তিহীন নয়। আমি আপনাদের ইমোশনকে রেসপেক্ট করি। কিন্তু ফ্যাক্ট হচ্ছে আমি এতিম। ছোটো বেলায় আমার বাবা মা’রা গিয়েছেন, মা অনেক কষ্টে আমায় বড় করেছে, এবং ছেলে আর ছেলের বৌয়ের মধ্যে খবরদারি করার জন্য তিনিও রইলেন না, কিছুমাস আগে তিনিও মা’রা গিয়েছেন।”
কথাটা খুবই শান্ত ভাবে বলে শান্ত। সামিন মাথা তুলে শান্তর দিকে তাকায়। লিভিং রুমের সবাই শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে। সবার চোখে মুখে নিমিষেই একটা অ’প’রা’ধবোধ দেখা দিয়েছে,এভাবে একটা লোককে আ’ঘাত করে ফেললো তারা!
আলো প্রচন্ড ক্ষে’পে যায়। বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”এভাবে ডেকে এনে এতো কথা শোনানো হচ্ছে। আজ এই লোকটার সাথে বোঝাপড়া আছে। ”
সামিন ঘুরে সবার দিকে একবার তাকিয়ে শান্তর দিকে তাকায়। তারপর নরম গলায় বলে,”সরি! আমরা জানতাম না আসলে। নয়তো এই প্রসঙ্গ তুলতাম না।”
শান্ত চুপ করে থাকে। সামিন কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে বলে,”এই শহরে কোনো আত্মীয় স্বজন আছে?”
শান্ত মাথা নাড়ায়।
_বন্ধু বান্ধব?
_আছে কিছু।
_তাদের ফোন করে ডেকে নাও। আমি কাজী ডাকছি, একটুপর ইশিতা আর তোমার রেজিস্ট্রি হবে।
শান্তর মনে হলো সামিন তার সাথে মজা করছে। সে বোকার মতো সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
আলো দোতলা থেকে কয়েক মুহূর্ত সামিনের দিকে তাকিয়ে থেকে ঘুরে ইশিতার দিকে তাকায়। ইশিতা থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে এক্ষুনি সে নিচে পরে যাবে। পরী এসে সজোরে একটা চিমটি কেটে দেয় ইশিতাকে। আনন্দিত গলায় বলে ওঠে,”তুমি স্বপ্ন দেখছো না।”
***
সামিন ঘরে ঢুকতেই আলো ছুটে এসে তাকে জরিয়ে ধরে বলে,”থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ মেয়র সাহেব। অনেক থ্যাংক ইউ।”
সামিন হাসে। আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”এতো খুশি হচ্ছো মনে হচ্ছে বিয়েটা তোমার ই।”
আলো মাথা তুলে সামিনের দিকে তাকায়। তারপর বলে,”রাজি কেনো হয়েছেন এতো সহজে বলুন তো? আমার খটকা লাগছে।”
_রাজি কেনো হয়েছি তা নিজেও জানি না, হঠাৎ খুব মায়া হলো, মায়া থেকে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছি, নয়তো আজ উত্তম মধ্যম দিয়ে দিতাম আমার আদরের বোনের দিকে হাত বাড়ানোর অপ’রাধে। আর এমনিতেও ভাই বোনের ভালোবাসার গল্পে ভিলেন হবার কোনো শখ নেই আমার। এটাও একটা কারণ রাজি হবার পেছনে।
আলো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে, ” আচ্ছা ওগুলো কেমন ধরনের প্রশ্ন ছিলো? আর কেমন ধরনের কথা ছিলো ওগুলো? ইশিতা আপু মাছ খায়, বাসে চ’ড়তে পারে না। আপনি একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি হয়ে এসব উদ্ভট প্রশ্ন করছিলেন কেনো? ”
সামিন হেসে আলোর নাক টিপে দেয়, তারপর নরম গলায় বলে,”কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলেই কি মানুষ সম্পর্কে ধারণা করা যায় আছিয়া? আমি প্রশ্নের উত্তর গুলো জানতে প্রশ্ন করিনি। আমি ছেলেটার ধৈর্য্য দেখছিলাম। ইয়াসার মির্জার বোনকে বিয়ে করতে হলে তাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। একেবারে ইয়াসার মির্জার মতো ধৈর্য্য শীল।”
আলো হেসে ফেলে। সামিন বলে,”যাই হোক, কাজী আসছে। তুমি একটু রান্নার দিকটা দেখবে? নতুন জামাইকে ভালোমন্দ না খাইয়ে কিভাবে পাঠাই? ”
_পাঠাই মানে? কোথায় পাঠাবেন?
_বিয়ে পরিয়ে ওর বাসায় পাঠিয়ে দেবো। ইশিতা আমার কাছে থাকবে। একমাস পরে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে ইশিতাকে নিয়ে যাবে।
আলো তাকিয়ে আছে। বিরস মুখে বলে,”অ্যা?”
_অ্যা নয় হ্যা। বিয়েটা পরিয়ে রাখছি। সামনে ইশুর পরিক্ষা, সংসার একমাস পরে করলে কি অসুবিধে? এতটুকু ধৈর্য্য ধরতে পারবে না কেউ? পৃথিবীর সব ধৈর্য্য সামিন ইয়াসার মির্জা একাই ধরবে?
ইশিতা এসে ঘরের বাইরে দাঁড়ায়। সামিন ঘুরে তাকায় বোনের দিকে। ঠান্ডা গলায় বলে ,”কিছু বলবি?”
ইশিতা ছুটে গিয়ে ভাইকে জরিয়ে ধরে।
দুই ভাইবোন চুপ করে থাকে দীর্ঘসময়।
আলো মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে সে দৃশ্য, একটু পরে বলে “ঠিকাছে আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি। আপনারা কথা বলুন।”
সামিন মজার ছলে বলে,”হ্যা যাও। আর শোনো কোনো মাছের আইটেম রেধো না। তোমার ননদাই মাছ খায়না।”
ইশিতা হেসে ফেলে,আলোর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”ভাবী তুমি রেধো। আমি মাছ খাই, ওর ভাগের টাও আমিই খাবো।”
***
“এতো লাফালাফি করছো কেনো? এখন লাফালাফি করার সময়? নেক্সট মান্থে ভেলিভারি। শান্ত থাকো।”
রিতুর হাত দুটো শক্ত করে ধরে ফেলে ইলহাম। ইলহামকে দেখে রিতু ধ’মকের সুরে বলে ওঠে,” কেমন প্রশ্ন করা হচ্ছিলো ওগুলো?”
ইলহাম রিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বলে ওঠে,”আস্তে বলো না। ভ’য় পেয়ে গেলাম যে।”
রিতু বলে,”একটা মানুষকে ডেকে এনে সব ভাইয়েরা মিলে এভাবে ধরেছিলেন, শুরুতে আমি ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।”
_ধরবো না? আমাদের আদরের বোনের দিকে হাত বাড়িয়েছে। এমনি এমনিই দিয়ে দেবো বোনকে?
_হু, নিজের বোনের বেলায় আঁটি শুটি,পরের বোনের বেলায় দাঁত কপাটি! বাংলাদেশের পুরুষদের মানসিকতা।
রিতুর এমন কথায় ইলহাম রিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ক্ষনবাদে বলে ওঠে,”তুমি এখনও আমাকে মন থেকে ক্ষমা করতে পারোনি তাইনা?”
রিতু চুপ করে থাকে। ইলহাম রিতুর দুই বাহু ধরে বলে ওঠে,”শা’স্তি কেনো দিলে না ? বড় ভাবীর চ্যালা হয়েছো, তার কাছ থেকে শিখে নাও দোষীকে শাস্তি কিভাবে দিতে হয়।”
রিতু ইলহামের চোখের দিকে তাকায়, ধরা গলায় বলে,”আলো আলোই, রিতু রিতুই। রিতুরা চাইলেও আলোদের মতো হতে পারে না।
ইলহাম চুপ করে থাকে। রিতু বলে ওঠে,”একটা সত্যি কথা বলবেন? যদি কখনও জুঁই আপনাকে আমার বাচ্চা এ’ব’র’শ’নের কথা না বলতো তাহলে কখনও ওর প্রতি মুগ্ধতা কাটতো আপনার? নিজের বাচ্চাকে মেরে ফেলতে হবে শুনেই তো ওকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন, নয়তো কখনো দিতেন না। আমি এও জানি, আমার এই সন্তান জন্মানোর পরে আপনি আগের বারের মতোই শুধুমাত্র বাচ্চা নিয়েই মেতে থাকবেন। আমি চলে যাবো আমার আগের যায়গায়। সেবিকা, শুধুমাত্র একজন সেবিকা আপনার আমি।”
ইলহাম রিতুর দিকে তাকিয়ে আছে। রিতু চোখ নামিয়ে নেয়। ইলহাম বলে ওঠে,”এটা তুমি একদম ঠিক বলেছো। তোমাকে আমি আমার সেবিকা হিসেবে দেখি। তবে তুমি কি জানো, তোমার মতো সেবিকা দ্বিতীয়টি আমি খুজে পাবো না এই পৃথিবীতে। তোমার বিকল্প কেউ নেই দেখেই আমি তোমার দ্বারস্থ হয়েছি। এখন আমাকে স্বার্থপরও ভাবতে পারো।”
রিতু চুপ করে থাকে। ইলহাম রিতুকে কাছে টেনে নিয়ে নরম গলায় বলে,”শা’স্তি দিতে চাইলে দিতেই পারতে। মাথা পেতে নিতাম।”
চোখ তুলে রিতু ইলহামের দিকে তাকায়। চোখে চোখ রেখে কান্না মিস্রিত কন্ঠে বলে ওঠে,”ওই যে বললাম রিতুরা কখনো আলো হতেই পারে না। চেষ্টা আমিও করেছিলাম আলো হতে। ব্যর্থ হয়েছি। বলতে পারেন রিতুদের আলোদের মতো আত্মসম্মান নেই, কিংবা আত্মসম্মান মায়ার কাছে হেরে যায়।”
***
মাগরিবের পরে ইশিতা এবং শান্তর রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। শান্তর তরফ থেকে শান্তর দুজন বন্ধু সাক্ষী হয়,আর ইশিতার তরফ থেকে তার ভাইয়েরা।
বিয়ে সম্পন্ন হলে সবাই নতুন বিবাহিত দম্পতির জন্য মোনাজাত তুলে দোয়া চায়। ইশিতা সালোয়ার কামিজ পরে আছে, ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা, শান্ত তার অফিসের ফরমাল পোশাকে।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে লিভিং রুমে বাড়ির পুরুষেরা কথা বলতে থাকে।
ইশিতা নিজের ঘরে চুপচাপ বসে আছে। তার এখনও হাত পা কাঁপছে। মনটা এখনও অস্থির। সবটা এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তার।
আলো একটা বাটিতে কিছু ডেজার্ট নিয়ে ঘরে ঢোকে,ইশিতাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলে,”তখন লজ্জায় কিছু খেতে পারোনি, এখন এটা খাও, তোমার পছন্দের ডেজার্ট।”
পরী আর রিতু আলোর পিছু পিছু ঘরে ঢোকে।
ইশিতা লাজুক মুখটা নামিয়ে নেয় । ক্ষনবাদে মিছিমিছি রাগ দেখিয়ে আলোকে বলে,”আমার বিয়ে নিয়ে কত প্ল্যান ছিলো ভাবী জানো, তোমার ঐ পাগল স্বামীর জন্য সব ভেস্তে গেলো, দুম করে বিয়ে পরিয়ে দিলো। সালোয়ার কামিজ পরে বিয়ে করলাম।”
আলো হাসে। রিতু পেটে হাত চেপে ধীরে ধীরে বিছানায় বসে। পরী আলোকে বলে,”এখন কি করবো ভাবী? বাসর সাজাতে হবে না?”
আলো মাথা নেড়ে বলে,”উহু। তোমার ভাইয়া বারণ করেছে । সামনের মাসে অনুষ্ঠান করে তারপর।”
কথাটি বলে আলো ইশিতার দিকে তাকায়। তারপর বলে,”আপত্তি আছে?”
ইশিতা মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। পরী বিরস মুখে তাকায় সবার দিকে, এটা আবার কেমন বিয়ে! ঘটা করে বিয়ে পরানোর কি দরকার ছিলো তবে!
***
শান্তিনীড়ের গেইট থেকে কিছুটা দূরেই একটা চায়ের দোকান। বন্ধুদের বিদায় দিয়ে শান্ত দীর্ঘসময় সেই চায়ের দোকানটাতে বসেছিলো। এর মাঝে চা খেয়েছে চার কাপ। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় সাড়ে দশটা। ইশিতার নাম্বার অনবরত বন্ধ পেয়ে যাচ্ছে সে। বিকেল থেকে তার সাথে যা যা হয়েছে তাতে এমনিতেই সে কথা হারিয়ে ফেলেছে।
শান্তর বেশ মেজাজ খারাপ হচ্ছে সামিন ইয়াসার মির্জার ওপর, যদি বৌয়ের কাছে না-ই যেতে দেবে তবে ঘটা করে বিয়ে কেনো পরিয়ে দিলো? অবশ্য শান্ত অনুমান করেছে, এটা হচ্ছে শান্ত আর ইশিতার শা’স্তি। বুদ্ধিমান ইয়াসার মির্জা খুবই ঠাণ্ডা মাথায় শান্তর থেকে প্রতি’শোধ নিয়েছে। বিরস মুখে দূর থেকে শান্তিনীড়ের গেইটের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে সে বলে ওঠে,”আপনার কোনো তুলনা হয় না ইয়াসার মির্জা!”
চায়ের দোকানের বিল মিটিয়ে উঠে পরে শান্ত। তারপর দোকান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চুপচাপ হাঁটাহাঁটি করতে থাকে। চায়ের দোকানের লোক গুলো খুবই কৌতুহলী হয়ে দেখতে থাকে স্যুট বুট পরিহিত এই সুদর্শন যুবকটিকে।
শেষ বারের মতো শান্ত ইশিতার নাম্বার ডায়াল করে নাম্বার টা বন্ধ পায়। বিরক্তিতে শান্ত কপাল কুঁচকে ফেলে। এই ভাই বোন গুলো তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। খাবার টেবিলে পাতে খাসির আস্ত রান দিয়ে কত জামাই আদর করলো, তারপর “একমাস পরে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে ইশুকে উঠিয়ে নিয়ে যেও” বলে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো। শান্তর কপাল যে বরাবরই ভাঙা, আজ নতুন করে তার প্রমাণ পেলো, শশুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে বৌটার মুখটা পর্যন্ত দেখতে পেলো না!
একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার মিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিশনের নাম “বৌয়ের মুখ দেখা”!
হাতের ফোনটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শান্ত পরীকে ফোন দেয়। ওপাশ থেকে পরী ফোনটা রিসিভ করেই আনন্দিত গলায় বলে,”বলুন দুলাভাই। আমি আপনার ফোনেরই অপেক্ষা করছিলাম। ”
_সবাই ঘুমিয়েছে?
_হ্যা ঘুমিয়েছে।
_তোমার ইশিতা আপুর ফোন বন্ধ কেন?
_আপুও ঘুমাচ্ছে, কি বলুন তো দুলাভাই, গত দু’দিন টেনশনে আপুর ঘুম খাওয়া কিছুই হয়নি। আপনি গেইটের বাইরে এসে গিয়েছেন?
_হ্যা এসে গিয়েছি। এখন কি করবো?
_রিয়াজ ভাই গেইট খুলে দিলে সোজা অন্দরমহলে ঢুকবেন, ফুলির মা সদর দরজা খুলে রেখেছে। তারপর সোজা দোতলায় উঠবেন,আমি সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছি দোতলার।
_আচ্ছা।
অস্ফুট স্বরে শান্ত বলে ফোন কেটে দেয়, তার নিজেকে এখন চোর চোর মনে হচ্ছে।
পরী চুপচাপ সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এখন যদি বড় ভাইয়া কোনো কারনে ঘুম থেকে উঠে পরে তাহলে তার খবর আছে। চ’ড় মেরে পরীর সব দাঁত ফেলে দেবে ইয়াসার মির্জা!
আলো এখনো ঘরে আসছে না দেখে সামিন বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে দোতলার লিভিং রুম সংলগ্ন বেলকোনির দিকে যায়। তার অনুমান ঠিক, আলোকে সেখানেই পাওয়া গিয়েছে। বেলকোনির গ্রিল ধরে ওদিক ফিরে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
সামিন গিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরতেই চ’ম’কে উঠে ফোন টা হাত থেকে ফেলে দেয়। ঘুরে সামিনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা তুলে নিয়ে হিয়ার সাথে কথা বলে কল কেটে সামিনকে বলে,”আপনি!”
_তুমি কি ভেবেছিলে? ভুত?
_না, আমি ভেবেছি পাগল। আমার অনুমান সত্যিই।
_এখানে এসে ফোনে কথা বলার কি আছে?
_আপনি দলের লোকজনের সাথে কনফারেন্স কলে ছিলেন ভাবলাম অসুবিধা হবে।
শান্ত পা টিপে টিপে দোতলায় উঠতেই পরী একটা প্রশ্বস্ত হাসি দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ,”চলুন,আমার পিছু পিছু আসুন।”
শান্তকে নিয়ে ইশিতার ঘরের দিকে উদ্যত হতেই পরী থ’ম’কে দাঁড়িয়ে পরে। তাদের সোজাসুজি লিভিং রুমের বেলকোনি। সেখানে সামিন আর আলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার আত্মা খাঁচাছাড়া অবস্থা। এখন এদের পাশ কাটিয়ে ইশিতা আপুর ঘরে কিভাবে যাবে সে! বিরবির করে বলে ওঠে,”আল্লাহ এই দুজন এই সময়ে এখানে কি করছে!”
সামিন পরীদের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাই পরী আর শান্তকে দেখতে পায়নি। কিন্তু আলো দেখতে পেয়েছে, পরীর সাথে শান্তকে পা টিপে টিপে ইশিতার ঘরের দিকে যেতে দেখে সে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। সামিন আলোকে ভালো করে লক্ষ্য করে বলে ,”কি হলো থম মেরে গেলে কেন?”
_কিছুনা। বলুন।
তোতলাতে তোতলাতে বলে ওঠে আলো। সামিন বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,”বলবো মানে? ঘরে চলো। ঘুমাবে না?”
শান্ত দ্রুত পায়ে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পরে যায়। তার চশমা খুলে দূরে ছিটকে পরে।
আলো চোখ বড় বড় করে ফেলে। পেছনে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ হতেই সামিন মাথা ঘুরিয়ে দেখতে যাবে অমনি আলো দুহাতে তার গাল আগলে ধরে চাঁপা স্বরে চেঁ’চি’য়ে বলে ওঠে,”এই না ওদিকে তাকাবেন না।”
_ওদিকে তাকাবো না মানে?
অবাক হয়ে বলে সামিন।
আলো আমতা আমতা করে বলে,”মানে আমার দিকে তাকান। শুধু আমাকে দেখুন আপনি। আমি কত সুন্দর।”
সামিন অবাক চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে, এই মেয়েটা এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেনো!
পরী শান্তর চশমা এনে হাতে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,”ঘুমিয়ে পরেছেন নাকি মেঝেতে? উঠছেন না কেনো দুলাভাই?”
শান্ত উঠে দাঁড়ায়, এটাই বাকি ছিলো। শ্যালিকার সামনে মানসম্মানের ছিটেফোঁটাও রইলো না। উঠে দাঁড়িয়ে চশমা চোখে দিয়ে পা টিপে টিপে আবারও হাঁটতে থাকে সে।
সামিন আলোকে বলে,”চলো ঘরে চলো। ঘরে গিয়ে খুব ভালো করে দেখবো তোমায়।”
ঘরের দিকে যেতে গেলেই বিপদ। শান্ত একেবারে সামিনের সামনে পরে যাবে।
তাই আলো বলে ওঠে,”এই না,এখন ঘরে যাওয়া যাবে না।”
_এখন ঘরে যাওয়া যাবে না মানে।
_মানে আপনি আমাকে এখানে দেখুন। আমার চোখের দিকে তাকান। আমার চোখের ভাষা পরুন তো মেয়র সাহেব!
সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”আচ্ছা পড়লাম।”
_কি লেখা?
_কিছু গালাগাল লেখা।
ঠান্ডা গলায় জবাব দেয় সামিন।
আলো চুপ করে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরী শান্তকে নিয়ে চুপচাপ ইশিতার ঘরে ঢুকে পরে।
ইশমাম নিজের ঘরের বাইরে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ পরীর কান্ডকারখানা সে খুবই মনোযোগ দিয়ে দেখেছে, সে সেই তখন থেকে নিশ্চুপ হেসে যাচ্ছে । এমন হাসি সে অনেকদিন হাসেনি!
শান্তরা চোখের আড়াল হলেই আলো কপাল কুঁ’চ’কে সামিনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,”চলুন ঘরে চলুন।”
সামিন অবাক হয়ে বলে,”এইমাত্র কত আহ্লাদী গলায় কথা বলছিলে, এর মধ্যে কথার সুর পাল্টে গেলো?”
আলো ভেংচি কেটে দ্রুতপায়ে নিজেদের ঘরে ঢুকে যায়। সামিন বিরসমুখে আলোর পিছু পিছু যায়। মেয়েদের মুড সুয়িং বোঝা তার মতো তুচ্ছ সামিনের সাধ্য নয়।
***
দরজা চাপিয়ে পরী বিছানার কাছে গিয়ে ইশিতাকে ঘুম থেকে তোলে। ইশিতা উঠে বসে চোখ ডলে নিয়ে শান্তকে দেখে প্রথমে হতভম্ব হয়ে যায়, তারপর চাপা স্বরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”তুমি!”
শান্ত এগিয়ে এসে বিছানার একপাশে বসে নরম গলায় বলে,”কিছু সময় থেকেই চলে যাবো। পাক্কা!”
ইশিতার হতভম্ব ভাব কাটছে না। পরী মুচকি হেসে মৃদু স্বরে বলে,”আচ্ছা তোমরা কথা বলো, আমি আসছি।”
পরী চলে যেতেই শান্ত দরজার সিটকিনি তুলে দিয়ে ঘুরে তাকায়। ইশিতা গম্ভীর কন্ঠে বলে,”মতলব কি তোমার?”
শান্ত কিছুক্ষণ ইশিতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”তোমাদের চার ভাইবোনের সবসময় এটা কেন মনে হয় আমি মতলব নিয়ে ঘুরি, আশ্চর্য! আমি গরীব হতে পারি মতলবি নই।”
_ভাইয়া কি বললো শোনোনি? একমাস পরে….!
লজ্জামাখা মুখে বলে ওঠে ইশিতা।
শান্ত ইশিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আমি বৌটাকে দেখতে এসেছি শুধু!”
দোতলার পশ্চিমপাশের টানা বারান্দার দরজা ঠেলে ইশমাম বারান্দায় পা বাড়াতেই থমকে যায়। পরী তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ইশমাম ক্ষনবাদে বলে ওঠে,”ওহহ তুমি। আমি ভেবেছি মারুফা চাচীর ভুত।”
পরী ইশমামের মশকরা গাঁয়ে না মেখে তার হাতের দিকে তাকায়। সামিন ইয়াসার মির্জার ভোলাভালা ছোটোভাইয়ের হাতে সিগারেট! খুবই অবাক করা বিষয়।
ইশমাম পরীর দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পি’ষে দেয়।
পরী চুপচাপ বারান্দা থেকে চলে যেতে নিলে ইশমাম বলে ওঠে,”বুদ্ধিটা ভালো ছিলো। আমার আসলে ভাইয়াকে বলতে লজ্জা লাগছিলো। শান্তকে এনে ভালোই করেছো তুমি, ইশুর ভালো লাগবে।”
পরী দাঁড়িয়ে থাকে কয়েক মূহুর্ত। তারপর চুপচাপ হেঁটে দোতলার লিভিং রুমে গিয়ে বসে পরে। তাকে আরো কিছুক্ষণ পাহারাদার হয়ে থাকতে হবে।
ইশমাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে। পড়াশোনা ছাড়া সবকিছুই করতে দেখা যায় এই মেয়েকে। এ ডাক্তারি পাশ করবে কিভাবে! মুন্না ভাই এমবিবিএস এর ফিমেল ভার্সন।
বিছানার ওপর দু’জনে বসে আছে। একজনের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে রেখে আরেকজন। কেউ কারো মুখ দেখছে না। চুপ করে আছে দুজন। কিছুক্ষণ পরে শান্ত বলে ওঠে,”ঘুমিয়ে পরলে নাকি?”
_না বলো।
ঘুমঘুম কন্ঠে বলে ইশিতা। শান্ত ম্লান হেসে বলে,”আমাকে বিয়ে করতে যতটা আগ্রহী ছিলে বিয়ে করে ততটাই নির্লিপ্ত লাগছে তোমাকে।”
_তো কি করবো? আপনাকে মাথায় উঠিয়ে নাচবো?
কাটকাট বলে ইশিতা।
শান্ত হেসে ফেলে,বলে,”একেবারে ভাইদের মতো হয়েছো। কথাবার্তা শুনলে গলা শুকিয়ে যায়।”
ইশিতা ঠোঁট টিপে হেসে বলে,”দুঘন্টা হয়েছে। এখন যাও। কাল অফিস আছে না? অফিস যেতে না পারলে চাকুরী থাকবে না, চাকুরী না থাকলে কিন্তু বৌও থাকবে না।”
শান্ত মৃদু হেসে হুট করে ইশিতার মুখোমুখি বসে পরে ইশিতাকে আগলে নেয়। ভালোবাসার মানুষের আচমকা স্পর্শে ইশিতা লজ্জায় মিইয়ে যায় । শান্ত নিচু স্বরে বলে,”যাবো। খালি হাতে কিভাবে যাই। বৌকে একটা চু’মু খেয়ে যাবো। নয়তো সারারাত ঘুম হবে না, ঘুম না হলে অফিসে গিয়ে কাজ করতে পারবো না,কাজ করতে না পারলে বস চাকুরী থেকে বের করে দেবে, চাকুরী না থাকলে বৌও থাকবে না।”
কথাটা বলে শান্ত ইশিতার কপালে চু’মু খেতে নেয় তখনই বিকট শব্দে ইলহামের চিৎকার শুনতে পাওয়া যায়।
চলমান……