#বসন্তপবনে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
২৮.
‘কোথায় ছিলে কাল রাতে?’
আজিম খানের মেঘমন্দ্র কণ্ঠস্বরে আদর থেমে দাঁড়ালো। উত্তর দিতে যাবে সেই মুহূর্তে আবারো ধমকানোর ন্যায় আজিম খান বলে চললেন,
‘তোমাকে তো পাওয়াই যাচ্ছে না ইদানীং! কখন আসছো, যাচ্ছো কিচ্ছু টের পাচ্ছি না। বিয়ে যে করেছো সেটাও ভুলে বসে আছো। বউকে সময় দেও নাকি শুধু হসপিটাল আর নিজের জেদ নিয়েই পরে থাকছো? বেয়ারা ছেলে! রাতে বাড়ি আসার কোনো খবর নেই আবার এসেই সকাল সকাল ছুটছো। কোথায় ছিলে কাল রাতে?’
আদর ঘুরে তাকালো। গম্ভীরমুখে জবাব দিলো, ‘আমার বউয়ের কাছে।’
আজিম খান একটু থতমত খেলেন। মনোয়ারা খান ছেলের জন্য বিটরুটের জুস বানিয়ে নিয়ে এলেন। আদর তা এক চুমুকে শেষ করে মাকে নরম করে জড়িয়ে ধরে বাবার উদ্দেশ্যে বলল,
‘খুলনা যাচ্ছি দশ দিনের জন্য।’
আজিম খান নিজের গুরুগম্ভীর স্বরটা বজায় রেখে বললেন, ‘বেশ যাচ্ছো যাও। টিকলিকে নিয়ে যাও।’
আদর কপাল কুচকে অত্যাশ্চর্য হয়ে তাকালো। বিস্ময়ে বলল,
‘আমি সেখানে হানিমুনে যাচ্ছি না, বাবা। কাজে যাচ্ছি। উনাকে নিয়ে যাবো মানে? আর উনাকে বললেই উনি যাবে?’
‘যাবে না তো জোর করে নিয়ে যাবে। তা নাহলে পুরুষ কীসের তুমি?’
আদর ক্লান্ত শ্বাস ছাড়ে, ‘এসব বাচ্চামো বিহেভিয়ার করলেই হবে না, বাবা। আমার ক্যাম্প আছে সেখানে। আমি বিজি থাকবো। উনাকে সময় দিতে পারবো না তখন উনার ঝাড়ি কে শুনবে?’
আজিম খান পরোয়ানাবিহীন কণ্ঠে বললেন,
‘বউয়ের ঝাড়ি হজম করতে না পারলে কীসের পুরুষ তুমি?’
আদর আর একটি বাক্যও ব্যয় করলো না। চোখ উলটে বুক ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে চলে এলো হন্তদন্ত হয়ে। তার তাড়া আছে। অলরেডি সকাল দশটা বেজে গেছে।
,
“বৃষ্টিশেষে লাজ ভাঙা মুখে উঠবে হেসে,
ঘোমটা তুলে দেখবো আমি মুগ্ধ চোখে।
তোমার কোমড় দোলানো লম্বা চুল,
প্রেমছন্দ বাজিয়ে দেয় এ হৃদয়কূল।”
টিকলির হাতে একটি চিরকুট। সেই চিরকুটে গোটা গোটা অক্ষরে লেখাগুলো পড়তেই টিকলির কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেলো। ঠোঁটে ফুঁটে উঠলো মুচকি হাসি। আদর তো ডাক্তারদের নাম খারাপ করে দিলো! বরাবর শুনে এসেছে ডাক্তারদের লেখা হয় কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং! অথচ আদরের লেখা এতো সুন্দর… টিকলির খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ভেবে টিকলি জোরে জোরে হাসলো। আদর ওকে কখনো তুমি করে ডাকেনি। আনাড়ি হাতের ছন্দে তুমি ডাকটা ওর হৃদয় নাড়িয়ে দিলো। চিরকুটে ঠোঁট ছুঁয়ালো। কাল রাতের মন খারাপ মিশে গেলো প্রভাতের রৌদ্রঝাঁজে।
আজ সকালেও আদর না বলে টিকলি ঘুমের মাঝে থাকতেই চলে গিয়েছে। টিকলি চিরকুট বুকের সাথে মিশিয়ে ভাবলো, যদি কিছু নাই বলার থাকে তবে এই ঘটা করে আসা কেনো? কদিনের জন্য ঢাকার বাইরে চলে যাবে বলে টিকলিকে দেখতে পাবে না এরজন্য এহেন বার্তাহীন আসার মতো সম্পর্ক তো ওদের মাঝে তৈরি হয়নি। তবে….? আদর কি অনুতপ্ত? কিছু বলতে চেয়েও নিজের আত্মগরিমার কবলে পরে বলতে পারলো না! টিকলি উপরে তাকিয়ে হাসে। লজ্জায় লালাভ হয়ে চোখ ঢাকে। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখে ডান গালে জিব ঠেকিয়ে ভাবে,
‘ডাক্তার বাদর কি রৌনা দিয়েছে? টায়রাকে একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করবো? না থাক! ওকে জিজ্ঞেস করলে পরে টিকলিকে আবার মক মরবে।’
প্ল্যান ক্যান্সেল! তবে কি করা যায়? ইশশ… টিকলির সময় কাটছে না। টিকলি পা নাচিয়ে বিছানায় মুখ ঠেসে ধরে। ভাবে, এরপর আদর এলে আদরের গলা চেপে ধরে জিজ্ঞেস করবে, ‘আপনার এতো দম্ভ কেনো? একবার সরি বললে কি আপনার জাত যেতো?’ টিকলি অপেক্ষা করে। তার তর সয় না।
.
বাবার প্রতি আদরের ধারণার জন্য যেমন টিকলি আগ বাড়াতে পারছে না। আদরও তেমনি সেদিনকার সেই ব্যবহারের লজ্জায়, অনুতাপে টিকলিকে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করতে বলতে পারছে না। মধ্যে থেকে ওরা হাজারবার চাইছে একে অন্যের সাথে মিশে যেতে অথচ কেউ কারোর কাছ ঘেঁষছে না।
,
তখন জৈষ্ঠ্যমাসের শেষ দিকের এক বিকেলবেলায় ভ্যাপসা গরমের তান্ডবে ত্যাক্ত শহর। বিকাল সাড়ে পাঁচটা অথচ সূর্য মামা তার তাপ বিকিরণ করে যাচ্ছে উল্লাসে। টিকলি অফিসের বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তিনদিন পর একটা বিয়ের ইভেন্ট আছে। সেই ইভেন্ট নিয়ে মিটিং ছিলো। মিটিং তাড়াতাড়ি শেষ হলো বলে দিনের আলো থাকতে থাকতে টিকলি বেরুতে পারলো। টিকলি বুঝে না এই গরমে কাদের বিয়ে করার শখ জাগে? কোন নর-নারীর ভারী সাজসজ্জা দিয়ে… কেজি কেজি কাপড়চোপড় পরে বিয়ে করতে বসবে? ওদের মাথায় ঘিলু নেই? আরে বাপু, এতো তাড়া কীসের? আর ক’টা দিন পর বর্ষাকাল! ঠান্ডা ঠান্ডা দিন দেখে ডেট ফিক্সড করে তিন কবুল বলে বিয়ে করে চলে আসবি। ওই স্টেজে সঙের মতো সেজে কলের পুতুলের ন্যায় বসে থাকতে তোদের খুব ভালো লাগে বুঝি!
টিকলি ভাবতে ভাবতে হাটছিলো। একটা রিক্সা নেই রোডে। কি মুসিবত! গরমে টিকলির মাথা ঘুরাচ্ছে। হিট স্ট্রোক মোক করে বসলে তখন তাকে কে দেখবে? ডাক্তার বরটাও তো নেই যে চিকিৎসা করবে। টিকলি একটা দোকান পেয়ে জুস কিনে নিয়ে খেতে খেতে আবার হাটা ধরলো। আচমকা পথ আটকে একটা গাড়ি এসে থামলো। টিকলি পিলে চমকে উঠে। গাড়ি থেকে আরাফকে নামতে দেখে বুকে হাত রেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’
‘ওহ, সরি।’
টিকলি আবার মিষ্টি করে হাসে। সেই হাসির দিকে মিনিট খানিকক্ষণ চেয়ে রয় আরাফ। টিকলি বলে,
‘কেমন আছেন, আপনি? সেই যে বিয়েতে এলেন আর কোনো খোঁজখবর-ই নেই আপনার।’
আরাফ মাথা ঝাঁকিয়ে হাসে। সৌজন্যপূর্বক কিছু কথাবার্তা বলে কাঙ্ক্ষিত বাক্যে ফিরে। টিকলির দিকে একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ইউ আর কর্ডিয়ালি ইনভাইটেড।’
টিকলি কার্ড খুলে দেখে। ভেতরটা পড়ে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,
‘আপনার বিয়ে? কবে, কীভাবে ঠিক হলো?’
আরাফ সলজ্জে হাসে। বলে, ‘মা অনেকদিন থেকেই মেয়ে দেখছিলো। আমিই পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। এবার মা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরতেই রাজি হলাম।’
টিকলি উচ্ছ্বাসে বলে, ‘ওহ, দারুন! আমরা তবে আবার সিলেট যাচ্ছি আপনার বিয়ে খেতে।’
আরাফ হাপুস নয়নে টিকলির আমোদপূর্ণ মুখখানা দেখে যায়। বস্তুত, মা পছন্দ করে রেখেছিলো টিকলিকে। কিছুদিন আগে হঠাৎ ফোন দিয়ে বলল, টিকলির বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে চায়। আরাফ তখনো মাকে জানায়নি টিকলির বিয়ে হয়ে গেছে। পরবর্তীতে মাকে জানাতেই তিনি ভীষণ মনঃক্ষুন্ন হলেন। নতুন উদ্যমে আরাফের জন্য সুন্দর একটি মেয়ে খুঁজে বের করলেন। এবার আর সেই না করার মতো বল আরাফের মধ্যে ছিলো না। কেনো কে জানে! হয়তো ক্ষণিকের পরিচিত এই মেয়েটিকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলো বলে! অল্প-বিস্তর দুর্বল হতে গিয়েও পরক্ষণের পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে উঠেছিলো বলে!
আরাফ চোখ সরায়। কন্ঠ নরম করে আরো দুটো কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘টিকলি, আর্দ্র আর রাহুলের হাতে এই দুটো কার্ড দিয়ে দিও। ওদের সবাইকে আসতে বলো। ওহ.. দাড়াও।’
পকেট থেকে আরেকটা কার্ড বের করে দিয়ে বলে,
‘নিরবকেও দিয়ো। আসলে আমিই দিতাম। কিন্তু সময় পেলাম না। সবকিছু এতো দ্রুত হচ্ছে!’
টিকলি মাথা নেড়ে সায় দেয়। আরাফ বলে, ‘আদর তো খুলনাতে। ও ফিরে আসলে ওকে আমি পার্সোনালি দাওয়াত করবো। তুমি কিছু বলো না। আফটার অল তোমাদের বিয়েতে আদর আমাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে নিয়ে গিয়েছিলো। আমার থেকেও একটা সারপ্রাইজ পাওনা ওর।’
টিকলি হাসলো একটু শব্দ করে। ওর সাথে সাথে আরাফও হাসলো। টিকলি জিজ্ঞেস করলো, ‘আদর আর কি কি বলেছিলো?’ আরাফ বললো সব। টিকলি মুখে হাত দিয়ে হাসে। রৌদ্রময় সোনালি ঝলকানিতে তাকে ভারী সুন্দর দেখায়! সেই মুহূর্তে আরেকটি গাড়ি এসে থামে। অপ্রত্যাশিত ভাবে গাড়ি থেকে আদরকে নামতে দেখে টিকলির হাসি চওড়া হলো। কিন্তু আদর এগিয়ে এলো ভ্রু কুচকে। আরাফ হাসি দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল,
‘তুমি না দশদিনের জন্য গেলে? আটদিনের মাথায় যে চলে এলে?’
টিকলির দিকে চোখ রেখে আদর উত্তর দেয়, ‘জলদি কাজ শেষ হলো তাই চলে এলাম।’
টিকলির হাসি সংকুচিত হয়ে এলো। আদরকে ভালো করে পরখ করে বুঝতে পারলো তার দৃষ্টিজোড়া অন্যরকম। কেমনতর যেনো!
চলবে❤️
#বসন্তপবনে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
২৯.
গাড়িতে পিনপিনে নিরবতা। গাম্ভীর্যতায় আদরের চোয়াল ঝুলে পরেছে। দৃষ্টি সামনের দিকে কাট কাট। তার চোখে, মুখের এই দৃঢ়তার কোনো কারণই ঠাওর করতে পারলো না টিকলি। খানিক বাদে টিকতে না পেরে প্রশ্ন করেই ফেললো নিচু স্বরে,
‘কিছু হয়েছে? ক্যাম্প ভালোভাবে সম্পন্ন হয়নি?’
আদরের চিকন ভ্রু’দ্বয় কুঁচকানো। তার এই এক স্বভাব। সবসময় ভ্রু কুঁচকে থাকা। আদরের থেকে উত্তর না পেয়ে টিকলি বিরক্ত নিয়ে দু’আঙ্গুল দিয়ে আদরের কপালে স্পর্শ করে বলল,
‘ভ্রু সোজা করুন। কপাল থেকে ভাঁজ সরান।’
আদর মুখ ঘুরিয়ে তাকালো। আরাফের সামনে থেকে একপ্রকার জোর করেই টেনে এনেছে টিকলিকে। আরাফ বলছিলো আদরের সাথে কথা আছে। কিন্তু আদর শুনতে নারাজ। টিকলি আবার বলে,
‘ডাঃ আরাফ কি বলে শুনতেন একবার!’
আদর ভ্রু খানা আবার বেঁকে বসে। ক্ষুব্ধ, ত্যাড়া কণ্ঠে বলে উঠে,
‘শুনে কি হবে? নিজের বউ বিকিয়ে দেবো শুনে?’
টিকলি যারপরনাই অবাক হলো। অবুঝ অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে কোনোমতে বলল,
‘হু? কি?’
আদর টিকলির হাত’টা চেপে ধরে। বোধহয় এই প্রথম.. টিকলিকে ব্যথা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গায়ে হাত দিলো আদর। টিকলি বিস্মিত হয়ে গেলো। আদরের চেপে ধরা হাতের দিকে মিনিট দুয়েক চেয়ে থেকে রক্তচক্ষু মেলে আদরের দিকে তাকালো,
‘এতোদিন ভার্বালি টর্চার করতেন! খুলনা গিয়ে ফিজিক্যাল টর্চার শিখে এসেছেন?’
আদরের চোয়াল শক্ত হয়। নিজের সিট থেকে এগিয়ে এসে আরো খানিকটা টিকলির দিকে ঝুঁকে। টিকলির ফর্সা হাতে রক্ত জমাট বেধে দাগ বসে যাচ্ছে। ব্যথা পাচ্ছে! তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে আদরের দিকে কঠোর চোখে চেয়ে রইলো।
আদর গলায় ক্রোধ নিয়ে শুধায়, ‘আমি আপনাকে কবে টর্চার করেছি?’
টিকলি ওর চোখের দিকেই টানা তাকিয়ে আছে। একটা বার চোখের মনি নড়াচ্ছে না। ওর স্পর্ধা, অবাধ্যতা দেখে আদরের মাথায় রাগ’টা আরো চেপে বসলো।
‘তাহলে চর’টা কি এমনি এমনি খেয়েছিলেন?’
‘পুরোনো কাসুন্দি ঘাটবেন না একদম। জানে মেরে ফেলবো।’
টিকলির মাথায় যেনো আকাশ চুড়চুড় করে ভেঙে পরছে। পরিস্থিতির এক অক্ষরও বুঝতে না পেরে একটু নরম হলো। ভাবলো হয়তো কোনো ব্যাপারে আদর ডিস্টার্ব। পরিশ্রম তো আর কম করে না লোকটা! তাই নির্মল, আদর আদর গলায় জিগালো,
‘এতো রেগে আছেন কেনো? কি হয়েছে?’
টিকলির কোনো কথায় আদর কর্ণপাত করে না। বরং বলে যায়,
‘নিজের বাবার দোহাই দিয়ে আমাকে ছেড়েছেন মেনে নিয়েছি কিন্তু অন্য পুরুষের জন্য আমায় উপেক্ষা করবেন আর আমি তা চেয়ে চেয়ে দেখবো?’
টিকলি ঠোঁট উলটে অসহায় নেত্রে চাইলো। আরে আশ্চর্য পুরুষ মানুষ তো!
‘সেই সিলেট থেকে দেখে আসছি আপনাকে। ওই আরাফের মধ্যে কি আছে?’
টিকলি এবার বুঝলো। বুঝে একটু নড়ে বসলো। আদরের দিকে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
‘অন্নেক কিছু আছে।’
ঘা এর উপর লবণ ছিটা! আদরের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। দাঁত কিড়মিড়িয়ে সে বলে,
‘আপনি বুঝেন না ও আপনাকে পছন্দ করে? ওকে বিয়েতে এমনি এমনি ডেকেছিলাম আমি? আপনি তবুও ওর সাথে দেখা করেন। হুয়াই? আর এতো কীসের হাসি-ঠাট্টা? কই আমার সাথে তো এতো হাসি আসে না আপনার। পরকিয়া করছেন আপনি?’
প্রথম দিকে আদরের কথায় মজা পেলেও শেষের দিকে টিকলির চাপা শক্ত হলো, ‘বেশি বেশি বলছেন এবার। তার সাথে আমি ইন্টেনশনালি দেখা করিনি।’
আদরের গলা চড়ে গেলো। ওদের সম্পর্কের পর টিকলির সাথে এই প্রথম কোনো ছেলে নিয়ে ক্যাচাল লাগলো।
‘তাহলে কীভাবে দেখা করেছেন? একবার রাহুলের সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়। আরাফ আপনাকে পছন্দ করে। আমার সামনেই ফোনে কথা বলেন আপনারা। নিরব আপনার পেছন পেছন ঘুরে। হোয়াট দ্যা ফা*ক! দুনিয়ার সবার নজর আপনার দিকেই কেনো?’
টিকলি এক্সপ্লেইন করতে চাইলো। কিন্তু বলতে গিয়ে ভাবলো কি এক্সপ্লেইন করবে এই লোকের সাথে? সবকিছু নিজের মতো করে বানিয়ে সেই বানোয়াট বিষয়াদি যে নিজের মনে গেঁথে নেয় তার সাথে আলোচনায় বসা যায় না। সন্দেহর বীজ একবার যার মনে গেঁথে যায় তার সাথে এক্সপ্লেইন করা মানে অযুহাত দেওয়া। টিকলি বলতে গিয়েও থেমে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
‘ফরগেইট ইট! দুনিয়ার সবার নজর আমার দিকে শুধু আপনার নজর আমার দিকে নেই। শুধুমাত্র আপনি বুঝেও বুঝেন না আমি কি চাই। আপনি রাগের মাথায় কথা বলতে গেলে দিশা হারিয়ে ফেলেন। আপনি বুঝতে পারেন না আপনি ঠিক কি বলছেন, কি ভাষায় আমার সাথে কথা বলছেন।’
বলে টিকলি দরজা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। আদর স্টেয়ারিং এ ঘুষি মেরে গাড়ি থেকে নেমে ক্ষুব্ধ গলায় রাস্তা কাঁপিয়ে বারংবার টিকলির নাম ধরে ডেকে যায়।
‘টিকলি, আমার কথা শেষ হয়নি। দাড়াঁন। টিকলি… টিকলি। স্টপ দেয়ার। টিকলি!’
আদরের ধমকানোতে পা থামায় না টিকলি। পথ মাড়িয়ে চলে আসতে আসতে তার চোখ দুটো ক্রমশ ভিজে উঠে। হাতের ব্যাগ’টার ভেতর এখনো আদরের জন্য ফিরতি চিরকুট’টা পরে আছে। টিকলি বেশি ভেবে ফেলেছিলো। আদর কখনো শুধরানোর নয়। সে কক্ষনো তার কৃতকর্মের জন্য সরি বলবে না। বরংচ বারবার ভুল করে যাবে অথচ অনুতপ্ত হবে না। অনুতপ্ত হবে তো দূর সে তো বুঝেই না সে কী বলছে, কী করছে। অথচ তার বুঝা উচিত। কথা বলার সময় নিজেকে সংযত রাখা উচিত। পরকিয়ার মতো ঘৃণ্য কাজ টিকলি করতে পারে বলে আদরের ধারণা কীভাবে হলো? ছিহ! টিকলির মরে যেতে ইচ্ছে করছে। চোখ দুটো মুছতেই আবার ভিজে উঠলো। টিকলি ঘুরে এলো। আদর ভ্রু কুঁচকে চেয়ে দেখলো তা। আদরের কাছে এসে ব্যাগ থেকে ছোট্ট কাগজ’টা বের করে ওর বুকের উপর ছুড়ে টিকলি আবার দ্রুত, ত্রস্ত পায়ে চলে গেলো।
নিচে পরে যাওয়া চিরকুট’টা হাতে তুলে আদর দেখলো তাতে খুব যত্ন মাখিয়ে লেখা দু’ লাইন,
“আপনি আমার বসন্তের নির্মল পবন,
যার স্নিগ্ধ প্রেমে রাঙিত আমার ভুবন।”
লেখাটা পড়ে আদর টিকলির যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইলো। দ্রুত কাজ শেষ করে নির্ঘুম রাত জেগে দু’দিন আগেই ড্রাইভিং করে এসেছে আদর কার জন্য? টিকলির জন্য। ভীষণ ধকল গিয়েছে এই ক’দিন তার উপর। খাওয়া নেই, নাওয়া নেই, ঘুম নেই। যাচ্ছেতাই অবস্থা! এসে ভেবেছিলো কোথায় বউয়ের হাতে একটু আদর-যত্ন খাবে, শক্ত করে একবার টিকলিকে জড়িয়ে ধরে ওকে মানিয়ে নিবে তা না উলটে একটা সিনক্রিয়েট হলো। ক্লান্তিতে যখন পথিমধ্যে আরাফের সাথে টিকলিকে দেখতে পেলো আদরের মাথা ঠিক রইলো না। খুব স্ট্রেসে ছিলো সে! আদর হতাশ শ্বাস ফেলে। বেশি বেশি করলো? এতোটা রেগে যাওয়া উচিত হয়নি। আগে টিকলির কথা শোনা উচিত ছিলো। এরমাঝে আরাফ ফোন করলো। আদর ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে নামটার দিকে চেয়ে বিরবির করলো,
‘শালা, তোর জন্য আমার সংসারে আগুন লাগলো।’
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন ধরতেই আরাফ রাতে একবার আদরের সাথে দেখা করতে চাইলো।
_________________________
আর্দ্রর BJS (Bangladesh Judicial Service) পরীক্ষার রিটেন এর রেসাল্ট বেরিয়েছে। পাশ করেনি। ফেল করেছে। এই নিয়ে আর্দ্রর মেজাজ খারাপ আজ বিকাল থেকে। অথচ টায়রা হেসে কুটিকুটি। প্রিলিতে টিকে আর্দ্র বেশ ভাবসাবে গদগদ হয়ে কল্পনার গোফে তা দিতে দিতে বলেছিলো,
‘আপনি তো আগামীর জজের বউ হয়ে যাচ্ছেন। গর্ব করুন আমায় নিয়ে। আপনার ত্যাড়া বাপ পারতো কোনো জজের সাথে আপনাকে বিয়ে দিতে? অথচ প্রথম প্রথম আমার দিকে এমন ভাবে তাকাতো যেনো আমি বখাটে স্টুডেন্ট।’
সেই কথা ভেবেই টায়রার পেট ফেটে হাসি আসছে। আর্দ্র বিরক্তি নিয়ে চাইলো,
‘স্বামীর দুঃসংবাদে যে কোনো স্ত্রী এতো খুশি হতে পারে তা কস্মিনকালেও আমার জানা ছিলো না। আপনি তো স্ত্রী সোসাইটির ইজ্জত একদম কমোডে ফ্লাশ করে ফেলেছেন।’
এই কথা শুনে টায়রা আরো ঘর কাঁপিয়ে হাসে। আর্দ্র অতিষ্ঠ হয়ে ঘর ছেড়েই বেরিয়ে আসে। তখন আবার দেখা হয় আজিম খানের সাথে। আজিম খান ছেলের দিকে দুঃখী চোখে চেয়ে দেখান ভান করে বললেন,
‘একটু যদি নির্লজ্জ স্বভাব’টা কমাতি তাহলে জজের বাপ হতে আমার আর দেরি ছিলো না।’
তার কথার অর্থ এই দাড়ালো যে, ‘যদি এতো বাসর বাসর করে সময় নষ্ট না করতি।’ মনোয়ারা খানের ভাষায় মধ্যাকথা কি জানেন? নির্লজ্জ বাপের বেহায়া পোলা। আর্দ্র বাচ্চাদের মতোন বলে,
‘ধুর ভাল্লাগে না। কেউ একটু সান্ত্বনা দিচ্ছে না। উলটে খোঁচাচ্ছে। মা….।’
পায়ে ধুপধাপ শব্দ তুলে আর্দ্র মায়ের কাছে যায়। তার কীর্তিকলাপ গুলো ঠিক যেনো বারো বছরের কোনো ডানপিটে বালকের।
চলবে❤️
#বসন্তপবনে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
৩০.
নিশুতি কালো রাত! আকাশে চাঁদ নেই। জটলা বাঁধা অন্ধকারের দশ ঘটিকায় আদর আরাফের সাথে দেখা করলো হসপিটালের নিচের টং দোকানে। আরাফ অফার করেছিলো রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কিন্তু আদর ব্যস্ততার অযুহাত দিয়ে না জানিয়ে দিলো। দোকানের বাশেঁর বেঞ্চিতে ওরা বসলো। মামা দুই কাপ লাল চা দিলেন। পাশেই তিন-চারটা কুকুরের খাবার নিয়ে কামড়াকামড়ি লেগেছে। তাদের গলা তুলে ঘেউ ঘেউ শব্দে কানে তালা লেগে যাবার কথা অথচ আদর নির্বিকার মুখে চায়ে চুমুক দিলো। আরাফ কার্ড বের করে আদরের হাতে দিলো। ভ্রু কুঁচকে চেয়ে কার্ড হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলো আদর। আরাফ বলে,
‘বিকালে এতো তাড়াহুড়ো করে এসে পরলে যে কিছু বলতেই পারলাম না। শুনো, বিয়েতে তোমাদের সবার দাওয়াত রইলো। টিকলি নিশ্চয়ই তোমাকে কিছু বলেনি? ওকে বলতে না করেছি আমি। তোমাকে পার্সোনালি দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো ট্রিট সহ।’
আদর উপরে মুখের ভাবভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে প্রশ্ন করলো, ‘ট্রিট সহ?’
‘হ্যাঁ। তোমার জন্যই তো এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা আমার কপালে জুটলো। নয়তো আরো দুই তিন বছর পেরিয়ে যেতো।’
আদর এক ভ্রু উঁচু করে। আদরের জন্য? আরাফের বিয়েতে আদর কীভাবে হেল্প করলো? আদরের বদমাশ অবচেতন মনটা ঘণ্টা বাজিয়ে উত্তর দিলো, ‘আরে বুঝিস না? টিকলিকে বিয়ে করে রে গাধা।’
আদর মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, ‘সময় পেলে অবশ্যই যাবো, ভাইয়া।’
‘যেতেই হবে। টিকলির কাছে আর্দ্র, রাহুল, নিরবের জন্যেও কার্ড পাঠিয়েছে তবুও তুমি একবার ওদের বলো। টায়রা, নিভাকে বলবে, আমার বউ সাজাতে ওদের আসা মাস্ট।’
আদর মাথা দোলায়। এরপর দুই মিনিট ওদের মাঝে নিরবতা বিরাজ করলো। চায়ের কাপ খালি হয়েছে। আদর তা একপাশে সরিয়ে রাখলো। আরাফ অন্যমনস্ক কণ্ঠে বলল,
‘আমি জাফলং গিয়েই বুঝে ফেলেছিলাম সামথিং ইজ ফিশি। তোমাদের মাঝে কিছু একটা আছে।’
আদর এবার অবাক না হয়ে পারলো না। সেই অবাকতা ফুটে উঠলো চেহারায়। না আরাফ বুঝেছে এরজন্য নয়। আদরের সাথে এই ব্যাপার নিয়ে কথা তুললো এরজন্য। আরাফ হেসে বললো,
‘আর্দ্র,রাহুল যে ড্রাইভিং পারে তাও জানি।’
আদর শূন্যে চেয়ে রইলো। আরাফ আবার বলে, ‘টিকলি খুব মিষ্টি মেয়ে। এই মিষ্টি মেয়ে তোমার গাম্ভীর্যে কীভাবে ডুবলো?’
আদর মাথা নেড়ে বলে, ‘জানি না।’
‘তুমিই বা কীভাবে ডুবলে?’
‘তাও বলতে পারছি না।’
‘আজ তোমার আর টিকলির প্রেম কাহিনী শুনলাম। তোমার যে এতো জেদ তা তো জানতাম না, আদর।’
আদর মাথা নিচু করে হাসে। আরাফ ওর কাধ চাপরে বলে,
‘You should be proud. মেয়েটা তোমাকে এতো ভালোবাসে। তোমার নাম শুনলেই লজ্জায় গলে যায়। তোমাদের মাঝখানে ছাড়াছাড়ি কেনো হয়েছিলো?’
আদর বুঝতে পারলো ও ছোট হয়ে যাবে কিংবা ওকে দোষী সাব্যস্ত করে এমন কোনো বাক্যই টিকলি বলেনি। তবে এসব নিয়েই হাসাহাসি করছিলো? আদর মাথা চুলকে উত্তর করে,
‘ওই যে আমার জেদ বেশি! আবার সে শান্ত কিন্তু একবার অশান্ত হলে গালে কয়েকটা চর থাপ্পড়ও পরতে পারে।’
আরাফ, আদর একযোগে হাসলো। আরাফের সাথে কথা শেষ করে আদর আর হসপিটালে ফিরে গেলো না। টিকলিকে ফোন করতে করতে কদম ফেললো। বিকেল থেকে ইতিমধ্যে তেরোটা কল করেছে। ত্যাড়া মেয়ে একটা ফোন রিসিভ করেনি। আদর তবুও ধৈর্য্য নিয়ে কল করে গেলো। উনিশ বারে গিয়ে ফোন ধরা হলো।
‘হ্যালো।’
ওপাশ থেকে শীতল স্বরে জবাব এলো, ‘ফোন কেনো করেছেন?’
‘আমি আসছি, টিকলি।’
‘খবরদার। একদম আসবেন না।’
‘আমার আসার অধিকার রয়েছে।’
‘কীসের অধিকার? স্বামীর অধিকার? হাহ! হাসবেন্ড হিসেবে কোন দায়িত্বটা পালন করেছেন আপনি? একদম আমার বাসায় পা রাখবেন না। এলে… এলে কিন্তু সিনক্রিয়েট হবে। আমি দরজা খুলবো না। আপনি এলে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো।’
বলেই টিকলি ফোন কেটে দিলো। কান থেকে ফোন নামিয়ে অসহায় চোখে আদর ফোনের দিকে চেয়ে রইলো। সবকিছুর জন্য দায়ী সে! রাগ রাগ রাগ! এই রাগের জন্য বারবার টিকলিকে হারাতে হচ্ছে। ধ্যাৎ! আদর গাড়িতে উঠে বসে সোজা চলে যায় খান বাড়িতে। এ বেলা আর টিকলির এপার্টমেন্টে গেলো না। একা গেলে রিস্ক আছে বলে মনে হচ্ছে। কাল টায়রা-আর্দ্রকে সাথে নিয়ে যাবে। নিজের ভাবনাতে আদর নিজেই হতভম্ব হলো। দুশমন মন খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে বলল, ‘বাপরে! বউকে এতো ভয় পাস?’
________________________
রৌদ্রে পুড়ে জারুল আর সোনালুর মাধুর্য গায়ে মেখে টিকলি বিষন্ন পায়ে হাটছিলো। হেলেদুলে অফিস থেকে ফিরছে। মনে, শরীরে কোথাও এক বিন্দু জোর নেই। কাল রাত থেকে না খাওয়া। মাথায় হেটে বেড়াচ্ছে ‘আদর’ নামক মানুষ’টা। একটা মানুষ কতটা নির্লজ্জ হলে নিজের কথার জন্য অনুশোচনা বোধ করে না। এই যে কাল রাতে ফোন দিলো… যতই টিকলি রাগ দেখাক… লোকটার উচিত ছিলো না ওসব বাজে কথা বলার জন্য লজ্জায় মিইয়ে গিয়ে ভুল স্বীকার করা? টিকলি যতবার বারন করুক… ফোন কেটে দিক.. সে এলে কি টিকলি দোর থেকে তাড়িয়ে দিতো? তার ভুলের পরিমাণ কমা তো দূর উলটে বাড়ছে তো বাড়ছেই। অসভ্য লোক!
উদাস, বিমর্ষ পায়ে হেটে যাওয়ার কালেই কোথা থেকে একটা শব্দ তুলা মোটরসাইকেল উড়ে এলো। ক্লান্ত, বলহীন টিকলি নিজেকে সামলাতে না পেরে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পরে যাওয়ার কালেই একটা পুরুষশালী হাত এসে ওকে জড়িয়ে ধরে সরে দাঁড়িয়ে বাঁচিয়ে দিলো। টিকলি বিস্ফোরিত চোখে তাকালো পথের দিকে। আদর গলার আওয়াজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘পাগল হয়ে গিয়েছেন? রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটছিলেন কেনো?’
টিকলি অবিশ্বাস্য চোখে আদরের দিকে তাকালো। সেই পুরুষের চোখ দুটো তখন আতংকে ভরপুর। টিকলি ঠোঁট উলটে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আদর ওর মাথা চেপে ধরলো বুকের সাথে। পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে আদুরে গলায় শুধালো,
‘ভয় পেয়েছিলেন?’
টিকলির কান্নার জোর বাড়ে। আদর আশেপাশে তাকায়। ইতিমধ্যে আর্দ্র-টায়রা গাড়ি থেকে নেমে এসেছে। ওদের নিয়ে আদর টিকলির ফ্ল্যাটের অভিমুখেই রৌনা দিয়েছিলো। টিকলি আদরের বুকের শার্টটুকু খামচে ধরে। আদর টিকলিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুলের ভাঁজে চুমু খায়। উদ্বিগ্ন স্বরে বলে,
‘আই এম সরি, টিকলি। সবকিছুর জন্য সরি। কাল রাতে আপনার কাছে না যাওয়ার জন্য সরি। সেদিন রাতে আপনার বাবাকে নিয়ে সেই কথাগুলো বলার জন্য সরি। আপনাকে কাঁদানোর জন্য সরি। আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি, বউ। যতটা ভালোবাসলে আর ভালোবাসা যায় না।’
টিকলি মাথা তুলে। কান্নার ধমকে কথা বলতে পারে না তবুও আদরের বুকে কিল-ঘুষি মেরে বলে,
‘আপনি কাল এলেন না কেনো?’
‘এখন যাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম আজ আপনার রাগ পরে যাবে।’
‘রাগ করলে রাগ ভাঙাতে হয় জানেন না?’
‘জানি। কিন্তু এবার যদি দা-বটি নিয়ে মেরে বসেন তাই আর গেলাম না। রাগ কমানোর জন্য একটু সময় দিলাম।’
আদর হেসে টিকলিকে বুকের সাথে চেপে ধরে পা আগায়। টিকলি ব্যথায় ককিয়ে উঠে। আদর নিচু হয়ে চেয়ে দেখে বাম পা ছিলে গেছে। ব্যস্ত রাস্তায় জনসম্মুখে আদর টিকলিকে কোলে তুলে নিলো। আদর এগিয়ে যায়। আর্দ্র ভাইয়ের দেখাদেখি টায়রাকে জড়িয়ে ধরে ওদের পেছন পেছন আসতে আসতে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
‘ভাইয়া, তোমার তো কষ্ট হচ্ছে। দাও, বাকিটুকু আমি কোলে নিয়ে যাই।’
ওদের ঠাট্টামো কণ্ঠস্বর টের পেলো আদর-টিকলি। ওদের দিকে না তাকিয়েই আদর জবাব দেয় গুরুগম্ভীর স্বরে,
‘আমার বউ আমি বহন করবো।’
আর্দ্রর দাঁত কেলানো মুহূর্তের মাঝে বন্ধ হয়ে গেলো। বড় বড় চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,
‘দেখেছো, নির্লজ্জ নাকি শুধু আমি একাই? বউ আর সুযোগ পেলে নির্লজ্জ হতে কেউ ছাড়ে না।’
টায়রা শব্দ তুলে হাসে। টিকলি লজ্জায় আদরের গলাটা আরেকটু শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে। সোজা সামনের দিকে চোখ তাক করা আদরের ঠোঁট বন্ধ বাঁকা হাসি চোখে পরে।
চলবে❤️