বসন্ত কন্যা পর্ব-২১+২২

0
368

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২১
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আমি আমার স্বামীকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই। দয়া করে আমাদের দুজনের মাঝখানে আসবেন না। আমি তাকে বিয়ে করে যথেষ্ঠ খুশি। আবসার ভাইয়ের মতো একজন মানুষ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। বলে নিশা ভীর ঠেলে বেরিয়ে গেল।

ফয়সাল পিছন থেকে চিৎকার করে বলল – তুই মিথ্যে কথা বলছিস। তুই আমাকে ভালোবাসিস। ঐ আবসারকে আমি দেখে নেব। তুই শুধু আমার হবি শুধু মাত্র আমার।

______________________

ড্রইং রুমের সোফাতেই বসে ছিলেন সোহেল ইমদাদ। সদর দরজা থেকে ঢুকেই বাবার মুখোমুখি দাঁড়ালো ফয়সাল। চুলগুলো উস্কো খুস্কো, চোখগুলো রক্তিম বর্ন ধারন করেছে , দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভালো নেই। সোহেল ইমদাদ একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল-

– কোথায় গিয়েছিলে ?চেহারার একি হাল করেছো?

– আমাকে শেষ করে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছো চেহারার একি হাল করেছি?

– মানে কি বলতে চাইছো?

– কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছো না? তুমি দাঁড়িয়ে থেকে কাল নিশার বিয়ে দিয়েছো?

– হুম তো তা নিয়ে তোমার কি সমস্যা? তোমাদের তো আরও খুশি হওয়ার কথা ও এ বাড়িতে আর আসবে না।

ফয়সাল চিৎকার করে উঠল, বলল – আমি খুশি হতে পারিনি বাবা , খুশি হতে পারিনি। তুমি বাবা হয়ে কিভাবে আমার সুখ কেড়ে নিলে, কেন আমার এত বড় সর্বনাশ করলে বাবা?

ছেলের চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে ফারজানা বেগম ছুটে এলেন। ছেলের অবস্থা দেখে তার কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠলো। দৌড়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে।

ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন – কি হয়েছে বাবা এমন করছিস কেন?

ফয়সাল হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, বলল – বাবা আমার কাছ থেকে নিশাকে কেড়ে নিয়েছে, ওর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে অন্য কোথাও।

ড্রইং রুমের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে এতক্ষনে বাড়ির সবাই চলে এসেছে।
ফারজানা বেগম জিজ্ঞেস করলেন – হ্যা তো নিশার বিয়ে হয়েছে তাতে তুই এমন করছিস কেন?

– আমি ভালোবাসি নিশাকে, ভীষণ ভালোবাসি।

ফয়সালের কথা শুনে সবাই হতবাক। সবচেয়ে হতবাক সোহেল ইমদাদ। তিনি তো দেখেছে সব সময় মা ছেলে উঠে পড়ে লেগে থাকতো নিশাকে অপমান করার জন্য আজ এসে সেই ছেলে দাবি করছে সে নাকি নিশাকে ভালোবাসে।

ফয়সাল ফারজানা বেগমের হাত দুটো ধরে বলল – দেখো না বাবা আমার কাছ থেকে নিশাকে কেড়ে নিয়েছে তুমি আমার কাছে নিশাকে এনে দেও না, দিবে তো মা?

ছেলের অবস্থা দেখে সোহেল ইমদাদ প্রশ্ন করলেন – তুমি এই কথা আগে বলোনি কেন?

– আগে বলিনি এখন বলছি তো, আমার নিশাকে আমার কাছে এনে দেও।

– তুমি বড্ড দেরী করে ফেলেছো ফয়সাল এখন আর কিছুই করা সম্ভব নয়।

ফয়সাল ফারজানা বেগমের দুই বাহু ঝাঁকিয়ে বলল – মা দেখো বাবা কি বলছে তুমি বলো না নিশাকে আমার কাছে এনে দেবে, তুমি তো আমাকে সব কিছু এনে দেও যখন যা চাই।

ছেলের অবস্থা দেখে ফারজানা বেগমের কলিজা জ্বলে যাচ্ছে, ওরনায় মুখ গুজে কাঁদছে। একটাই ছেলে তার। যদি উপায় থাকতো তাহলে আজ যে করে হোক নিশাকে ধরে বেঁধে ছেলের সামনে নিয়ে আসতো। কিন্তু তারও উপায় নেই। এতদিন টাকা পয়সার অহংকারে অন্ধ ছিল সে, তাই হয়তো আজ ছেলের এমন পরিস্থিতি।

_________________________

সারাদিন ডিউটির পর মাত্রই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল আবসার। কাল সারারাতে ঘুম হয়নি, ট্রেনে ছিল। সকাল সকালই আবার ডিউটি শুরু হয়েছে। সারাদিন মোবাইল ধরার সুযোগও ছিল না। নাহ এখন একটু নিশার খবর নেওয়া প্রয়োজন। বিছানা থেকে উঠে পাহাড়ের গায়ে গিয়ে দাঁড়ালো, কোয়ার্টারের ভিতরে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। হেঁটে হেঁটে নেটওয়ার্ক খুঁজছে। কাল বিয়ে করে সদ্য বিবাহিত বউকে ফেলে এসেছে ডিউটি করতে। আর্মিদের জীবন বুঝি এমনই। বউ, বাচ্চা, ভালোবাসার আগে দেশকে ভালোবাসতে হবে। তাদের প্রথম ভালোবাসা হবে দেশ, দেশের মানুষ। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাটাটা অন করতেই একটা ভিডিও এলো আয়নার আইডি থেকে।

ক্যাম্পাসে ফয়সাল ঢুকতেই আবসারকে কল করেছি আয়না কি হয় না হয় লাইভ দেখাবে কিন্তু আবসার ডিউটিতে থাকায় পুরো ঘটনা ভিডিও করে সেন্ড করেছে আয়না।

আবসার ভিডিওটা ওপেন করতেই রাগে এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে, কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে, চোখ দুটো অসম্ভব রকমের লাল হয়ে রয়েছে। কত বড় সাহস ওর থেকে ওর বসন্ত কন্যাকে আলাদা করতে চাইছে। এই মুহূর্তে ফয়সালকে যদি পেত হয়তো মেরে পুতে দিত। আস্তে আস্তে ভিডিওটা দেখছে আর রাগের জায়গায় এক রাশ প্রশান্তি জায়গা করে নিচ্ছে। ওর বসন্ত কন্যা ওকে ভালোবাসে, এর থেকে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে। ওর বসন্ত কন্যা নিজে বলেছে সে ওকে ভালোবাসে। আবসার মনযোগ দিয়ে নিশার কথাগুলো শুনছে। আবসারের ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠেলো এক চিলতে প্রশান্তির হাসি। মেয়েটা ওর কথা কত ভাবে, ওকে কতটা ভালোবাসে আর ও জানতোই না। ও যেভাবে ওর বসন্ত কন্যার জন্য ছটফট করে ওর বসন্ত কন্যাও ওর জন্য ছটফট করে ভাবতেই বুকের ভিতরটায় কেমন শান্তি শান্তি অনুভব করছে আবসার। ইচ্ছে করছে এখন ছুটে নিশার কাছে চলে যেতে, সামনে বসিয়ে নিশার কাছ থেকে আবার কথাগুলো শুনতে। সারাদিনের ক্লান্তি যেন আজ এক নিমেষেই শেষ। দিনশেষে যদি এমন কিছু অপেক্ষা করে তাহলে আবসার সারা জীবনও ও ডিউটি করতে প্রস্তুত। কিন্তু ফয়সালের শেষ বলা কথাগুলো শুনে আবার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আবসারের তবুও নিজেকে শক্ত নিল নিশার কথা ভেবে। নিশার স্বীকারোক্তির গুলো যে আজ তার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। ইচ্ছে করছে এখন ছুটে নিশার কাছে চলে যেতে, তা তো আর সম্ভব নয় কিন্তু কথা বলতে হবে নিশার সাথে ।‌ না হয় আজ শান্তিই পাবে না আবসার। আর কিছু না ভেবে কল লাগালো নিশার নম্বারে। প্রথমবার রিং হতেই রিসিভ করলো নিশা।

– আসসালামুয়ালাইকুম।

– ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছ?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

– ভালো আর থাকতে দিলে কই?

– খারাপও বা রাখলাম কই?

– এই যে সারাদিনে আমার একটু খোঁজও নিলে না।

– আপনার খোঁজ নিতে আমার বয়েই গেছে।

– সে আমি জানি আমার বউটা যে ভীষণ পাষান। আচ্ছা শোনো বউ….

– কি?

– আমার না এই মুহূর্তে তোমাকে ভীষণ চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। কি কপাল আমার বিয়ে করেও বউয়ের থেকে কতদূরে।

চুপ হয়ে গেল নিশা। লজ্জা লাগছে ভীষণ, এমনি এতক্ষন আবসারের মুখে বউ বউ শুনে লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গিয়েছিল আর এখন আবার কিসব কথা। আবসার মে এতটা ঠোঁটকাটা জানা ছিল না নিশার। একরাশ লজ্জা নিয়েই নিশা বলল –

– আপনি দিন দিন বড্ড ঠোঁটকাটা হয়ে যাচ্ছেন ক্যাপ্টেন সাহেব।

– বউয়ের জন্য হতে হচ্ছে। না হয় বউও যদি অন্যদের মতো ভাবে আমি নিরামীষ।

– রাখছি আমি। আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

– সত্যিই নেই?

– জানি না।

– আচ্ছা ঘুমাও, আমিও বড্ড ক্লান্ত। কাল সারারাত ঘুমাইনি। এসেই ডিউটি শুরু হয়েছে।

– রেস্ট না নিয়ে কল করতে বলেছে কে? শরীর খারাপ করলে ওখানে দেখবে কে শুনি?

হাসি ফুটে উঠল আবসারের মুখে, বলল – বউটা আমার কেয়ার করা শুরু করেছে নাকি?

লজ্জায় মিইয়ে গেল নিশা। এই লোকটা ওকে সব সময় লজ্জা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।

– রাখছি আমি, রেস্ট নিন বলে কেটে দিল কলটা।

________________________

কলেজ ক্লাসরুমেই বসে ছিল নিশা। আজ আর আড্ডা দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। কাল যা হলো এমনি ওকে নিয়ে কলেজে বেশ কানাঘুষা চলছে ভালোই টের পাচ্ছে সে। তাই ক্লাসরুমেই চুপচাপ বসে আছে। আয়না, কাজল , রাকিব, নিলয় ওকে ঘিরেই বসে আছে। সবাই কথা বললেও ও মৌনতাই পালন করছে। হঠাৎ এক স্টুডেন্ট এসে বলল – নিশা তোমাকে ইয়াসিন স্যার ডাকছে।

ইয়াসির স্যার হঠাৎ ওকে ডাকছে কেন? ভ্রু কুঁচকে এলো নিশার। ইয়াসিন স্যার এই কলেজে জয়েন্ট করেছে বেশিদিন হয়নি। ওদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে কমবয়সী স্যার, অনেক মেয়েরাই স্যারের প্রতি ফিদা। সে আবার হঠাৎ ওকে কেন ডাকছে। আর কিছু চিন্তা না করে ব্যাগ নিয়ে গেল ইয়াসিন স্যারের সাথে দেখা করতে।

স্যারের কেবিনে টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো – আসবো স্যার?

– আসুন মিস নিশা স্যরি মিসেস নিশা আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

– কিছু বলবেন স্যার?

– বলার তো অনেক কিছুই আছে তবে এই স্থানটা কথাগুলো বলার জন্য উপযোগী নয়। বাহিরে সময় দিতে পারবেন আমাকে একটু বেশি সময় নেব না জাস্ট ১০ মিনিট।

ভ্রু কুঁচকে এলো নিশার। এই ভদ্রলোক আবার ওকে কি বলতে চায়? দুইজন কি কম ছিল যে আরও একজন এসে হাজির। না না ওর তো ভুলও হতে পারে , স্যার কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কথাও বলতে পারে। নিশা আর কিছু না ভেবে বলে দিল – অবশ্যই, আপনি কখন সময় করতে পারবেন?

– আপনি বললে এখনই।

– আচ্ছা , আমি ফ্রি আছি।

চলবে….

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২২
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

কফি শপে মুখোমুখি বসে আছে নিশা আর ইয়াসিন স্যার। এখানে এসেছে ১০ মিনিট হয়ে গেছে। পুরো সময়টা শুধু ইয়াসিন স্যার একাই কথা বলেছে আর নিশা শুনেছে।

– পুরো কথাটা তো শুনলেন এখন একমাত্র আপনিই পারেন আমাকে সাহায্য করতে এ ছাড়া আর কাউকে আমি ভরসাযোগ্য বলে খুঁজে পাচ্ছি না মিসেস নিশা।

নিশা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল – আপনি একদম ঠিক মানুষের সাথে কথা বলেছেন ইয়াসিন স্যার। আমি অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবো ‌। আরও আগে বললে তো আমি আরও আগেই সাহায্য করতাম।

নিশার এই হাসি হয়তো কারো সহ্য হয়নি তাই ওর সামনে এসে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নিশা ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকাতেই দেখে ফয়সাল ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, চোখে মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। নিশা কিছু বলতে যাবে এর আগেই ফয়সাল উঠে বলল –

– কাল তো খুব বড় বড় কথা বলছিলি তোর স্বামীকে নাকি তুই খুব ভালোবাসিস, তাকে বিয়ে করে তুই খুব খুশি। তা সেই খুশি একদিনের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেল যে আজ আবার নতুন নাগরের সাথে কফিসপে এসেছিস?

রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো নিশার। উঠে দাঁড়িয়ে বলল – কথায় আছে না কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। আপনিও ঠিক তেমনই ফয়সাল ভাই। কোনো দিনও আপনার ঐ বান্দরমার্কা মুখটা মানুষের মতো হবে না। আপনার ঐ মুখ আর ব্যবহারের জন্যই আপনি আজ আমাকে হারিয়েছেন। মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন, নিজের ভালোবাসাকে সম্মান করতে শিখুন ফয়সাল ভাই। মানুষকে সম্মান না করতে পারলে নিজেও অন্যের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার আশাটাও ভুলে যান। আর আমাকে সব জায়গায় ফলো করাও বন্ধ করুন বলে হনহন করে বেড়িয়ে গেল নিশা।

________________________

( রাত ১০ টা )

নিশাকে লাগাতার কল করে যাচ্ছে আবসার। বারবার ওয়েটিং বলছে। মেজাজ এবার বিগড়ে যাচ্ছে। এমনি সারাদিন ডিউটিতে থাকার কারনে নিশার সাথে কথা হয়নি তার উপরে শুনেছে সকালে কোন স্যারের সাথে নাকি কফি শপে গেছে। আর এখন আবার ওয়েটিং । পাগল হয়ে যাচ্ছে আবসার। এমনিতে নিশার উপর তার পূর্ন বিশ্বাস আছে কিন্তু চারিদিকের শত্রুদের যা আনাগোনা। ওর ছোট খাট মুরগির বাচ্চার মতো বউটাকে যদি কেউ আঙ্গুলের মাথায় করে তুলে নিয়ে যায়। জীবনের এই প্রায় ৩১ বসন্ত পেরিয়ে একটা মাত্র বউ হয়েছে ওর তা নিয়েও সারাদিন ভয়ের অভাব নেই। টানা ৩০ মিনিট পর কলটা রিসিভ করল নিশা। কলটা রিসিভ করার সাথে সাথেই কর্কশ কন্ঠে আবসার বলে উঠলো –

– এতক্ষন কার সাথে কথা বলছিলে?

– কলেজের এক স্যারের সাথে।

আবসার বিরবিরিয়ে বলল – ওয়ান মোর এনিমি।

– কিছু বললেন?

– না কিছু না।

– এভাবে কথা বলছেন কেন?

– কিভাবে কথা বলছি?

– কেমন গম্ভীর রাগ রাগ।

– আমার রাগে তোমার কি আসে যায়?

– সত্যিই কি আসে যায়? যাই হোক আপনার সাথে আমার একটা জরুরী কথা বলার আছে।

গাল ফুলালো আবসার, সত্যিই কি তার রাগে কিছুই আসে যায় না নিশার। কন্ঠে গম্ভীরতা এনে বলল – কি কথা?

জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজালো নিশা। অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলল – ইয়াসিন স্যার আয়নাকে ভালোবাসে , বিয়ে করতে চায় ওকে।

হাসি ফুটে উঠল আবসারে মুখে। তো এ ব্যাপার, ইয়াসিন স্যার তাহলে নিশার পিছনে নয় আয়নার পিছনে ঘুরছে।

– তো এই জন্যই আজ সকালে সে তোমাকে কফি শপে ডেকেছিল?

– হুম কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?

– সে আমি যেভাবেই জানি তারপর বলো….

– ইয়াসিন স্যার আপনার বোনকে ভালোবাসে আপনার বোনের মনেও তার জন্য কিছু একটা তো চলছে , কিন্তু ওদের সম্পর্কটাও ঠিক আপনার আর আমার মতো, আয়না ভয় পায় ইয়াসিন স্যারকে তাই থেকে দূরে দূরে থাকে। এখন আপনিই কিছু একটা করুন।

– আচ্ছা বিষয়টা দেখবো আমি, তোমার স্যারের ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে দেখি। একটা মাত্র বোন আমার তাকে তো আর না দেখেই কারো হাতে তুলে দিতে পারি না।

– আমার মনে হয়না ইয়াসমিন স্যার খারাপ। যথেষ্ঠ ভদ্র এবং মার্জিত উনি। একটু কম হাসে আপনার মতো তবে দেখতে খুব সুন্দর। জানেন আমাদের কলেজের কত মেয়ের ক্রাশ উনি?

তেতে উঠল আবসার। গম্ভীর কন্ঠে বলল – এক তারপরে দাঁত ফেলে দেব ফাজিল মেয়ে। স্বামীর সামনে অন্য পুরুষের গুনগান গাইছো কই আমাকে নিয়ে তো কখনও এমন গুনগান করতে শুনিনি।

– আপনি বড্ড হিংসুটে ক্যাপ্টেন সাহেব।

– আমার জিনিস নিয়ে আমি বরাবরই বড্ড হিংসুটে বসন্ত কন্যা।

– আপনি কি জানেন , আপনি দিন দিন বাচ্চাদের মতো হয়ে যাচ্ছেন ক্যাপ্টেন সাহেব?

– শুনেছি প্রেমে পড়লে নাকি সবাই একটু আধটু বাচ্চা হয়ে যায়, আমিও না হয় হলাম ক্ষতি কি?

– আপনার কথা বলাই বেকার।

– তবুও কথা যে আমার সাথেই বলতে হবে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই তোমার।

– বলবো না কথা করবেন কি?

– বাড়িতে ফিরে প্রথম রাতেই বাসরটা সেরে ফেলবো।

আকর্ষিক আবসারের কথায় হতবম্ব নিশা।‌ কোথা থেকে কি? লজ্জায় কান দুটো ঝা ঝা করছে। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। ঐ ঠোঁটকাটা মানুষের সাথে আর কথা বলার শক্তি নেই। ধাপ করে কেটে দিল নিশা। ফোন কাটার সাথে সাথেই হো হো করে হেসে উঠলো আবসার। নাহ এবার অল্পতেই ছুটি নিতে হচ্ছে। বউটার জন্য মনটা বড্ড ছটফট করছে। ইচ্ছে করছে অল্প স্বল্প ছুয়ে দিতে কিন্তু পারছে না। সারাদিন যায় ডিউটিতে আর সারারাত যায় বউয়ের জন্য ছটফট করতে করতে ‌।

________________________

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে মোবাইলা ধরেই আবসারের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তার বউ আজ মেসেজ দিয়েছে ” গুড মর্নিং। ” এই প্রথম তার বউ তাকে মেসেজ দিল, মনের মধ্যে কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে হেলেদুলে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল আবসার।

ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়েই মোবাইল নিয়ে বাইরে চলে গেল আবসার, উদ্দেশ্য নিশাকে ভিডিও কল করা। নিশাও ওয়াশ রুমে থাকায় কলটা ধরলো রিশা। কলটা রিসিভ করেই হাসি হাসি মুখে রিশা বলল –

– কি দুলাভাই কেমন আছেন?

আবসার কাঁদো কাঁদো মুখ করে উত্তর দিল – তোমার বোন আর ভালো থাকতে দিল কই ?

– আমার বোন আবার কি করলো?

– এই যে তার শান্ত শিষ্ট, সুশীল, হ্যান্ডসাম, মার্জিত, অবলা, কিউট সুন্দর জামাইটাকে একটুও পাত্তা দিচ্ছে না।

এর মধ্যেই নিশা ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এক ভ্রু উঁচিয়ে রিশাকে জিজ্ঞেস করলো – কি করে কার সাথে কথা বলছিস?

– এই তো তোর একমাত্র ভোলাভালা জামাইয়ের সাথে বলেই নিশার দিকে মোবাইলটা তাক করলো রিশা।

নিশা হতবম্ব, একবার নিজের দিকে তাকাচ্ছে একবার মোবাইলের দিকে। আবসার ঠোঁট কামড়ে এক দৃষ্টিতে নিশার দিকে তাকিয়ে আছে। সেও মোটেই এই দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আজ রাতে ডিউটি থাকায় সকালেই কল করেছিল নিশাকে। কিন্তু এই সময় কল করে যে বউকে এই অবস্থায় দেখবে জানা ছিল না তার। ঢোক গিলল আবসার। নিশা দৌড়ে গিয়ে একটা ওরনা গায়ে জড়ালো। রাতে টি – শার্ট আর প্লাজো পড়ে ঘুমানোর অভ্যাস নিশার। রাতের ড্রেসেই ছিল সে গায়ে ওরনাটাও ছিল না । কি একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতি । নিশা দ্রুত মোবাইলটা এনেই কলটা কেটে দিল। আবসার এখনও মোবাইলের স্ক্রীনের দিকেই তাকিয়ে আছে। কেমন ঘোর লেগে গেছে আবসারের।

চলবে….