বসন্ত কন্যা পর্ব-৩১+৩২

0
365

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_৩১
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

সময় বয়ে চলেছে আপন গতিতে। দিন পেড়িয়েছে, রাত পেড়িয়েছে পবিত্র রমজান মাসেরও শেষের দিকে এখন। দীর্ঘ একমাস রমজানের পরে দেখা মিলে মুসলিমদের প্রিয় উৎসব ঈদের। সকল কর্মজীবীরা নিজেদের কর্মস্থান ছেড়ে পাড়ি জমায় নিজের অস্তিত্বের ঠিকানায়। সারা বছর যে যেখানেই থাকুক এই দিনটি সবাই প্রিয় মানুষদের সাথে কাটানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকে, আর প্রিয় মানুষরাও অপেক্ষায় থাকে তাদের। তবে সবার ভাগ্যে এমন সুখ লেখা থাকে না, বিশেষ করে আর্মিতে যারা যুক্ত আছে। আবসারও এই ঈদে বাড়িতে আসতে পারবে না। নিশার মনটা বড্ড আনচান করছে। কতদিন হয়েছে মানুষটার দেখা মেলেনি আর এখন এমন একটা শুভ দিনেও দেখা মিলবে না। ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে আবসারের কাছে। শেষে লাজ লজ্জা ভুলে বাড়ির সবাইকে বলেই ফেলল ঈদে সে আবসারের ওখানে যেতে যায়।

ঈদের আগের দিন নিশা আর কাজল দুজন মিলে রওনা দিয়েছে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। শাহরিয়ারও আসবে না তাই কাজলও ওর সাথেই যাচ্ছে। আনসার সাহেবও ওদের সাথে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু সারাদিন রোজা রেখে ঈদের আগের দিন সেই চট্টগ্রাম পর্যন্ত গিয়ে ওদের পৌঁছে দিয়ে আবার ফিরে আসবে তাই তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে এসেছে। ট্রেনে উঠেই ফোন বন্ধ করে ফেলেছে দুই বান্ধবী ওখানে গিয়ে ওদের সারপ্রাইজ দিবে।

ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল। কিন্তু সমস্যা হয়েছে সেখানে ঢুকতে গিয়ে। নিশা আর কাজলকে গার্ডরা কিছুতেই সেখানে ঢুকতে দিবে না। তাদের এক কথা যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তাকে কল করুন। কলও করতে পারছে না, নেটওয়ার্ক কানেকশন খুবই দূর্বল। নিশা ক্যান্টনমেন্টের বাইরে অবস্থান করলেও আবসার ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে তাই তার ফোনে কল ঢুকছে না। আর গার্ডরা আবসারের নাম শুনে তো আরও ভিতরে ঢুকতে দিতে চাইছে না। পুরো ক্যান্টনমেন্টের সবাই আবসারকে জমের মতো ভয় পায়। আর তারা চাকরির বয়সে কখনও কোনো মেয়েকে আবসারের সাথে দেখা করতে আসতে দেখেনি, এই প্রথম। এই মেয়েকে যদি ভিতরে ঢুকতে দেয় আর ভিতরে গিয়ে কোনো গন্ডগোল করে তাহলে নির্ঘাত আবসার ওদের গর্দান নিবে। কাজল তো রীতিমত ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে।

এদের এই ঝামেলা দেখে একজন দৌড়ে আবসারের নিকট গেল। আবসার বসে বসে কোনো গভীর চিন্তায় মগ্ন। চোখে মুখে গম্ভীরতা স্পষ্ট। ঢোক গিলে ব্যক্তিটি আবসারকে বলল – স্যার আপনার সাথে একজন মেয়ে দেখা করতে এসেছে।

মেয়ের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে এলো আবসারের। এমনি সকাল থেকে নিশার ফোন বন্ধ থাকায় টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। তার উপর এই উটকো ঝামেলাটা আবার কে? আবসার আর চিন্তা ভাবনা না বাড়িয়ে উঠে হাঁটা ধরলো। গেটের কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো সে। চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার সামনে তাকালো হ্যা তার বসন্ত কন্যাই তো, সে ভুল দেখছে না। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল আবসারের। কতদিন পর তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখটা দেখতে পেয়েছে সে। মনের মধ্যে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। এতদিন পর প্রেয়শীকে দেখে নিজেকে আটকানো দায় হয়ে পড়েছে আবসারের। স্থান, কাল, পাত্র দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো নিশাকে। অস্থির কন্ঠে বলল – কখন এসেছো? আমাকে জানাওনি কেন? আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম। মুখটা এমন মলিন দেখাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে তোমার? আর তোমার ফোন বন্ধ কেন? সকাল থেকে কতবার কল করেছি জানো, টেনশনে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।

নিশা লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। সবাই কেমন ড্যাব ড্যাব করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। উপস্থিত সবাই হতবম্ব, তাঁরা এই প্রথম আবসারকে এতটা অস্থির হতে দেখছে। এমন রাগচটা, গম্ভীর মানুষও যে এত বউ পাগল জানা ছিল না কারোরই।

এতক্ষনে শাহরিয়ারও চলে এসেছে। সে আর কাজল ঠোঁট টিপে হাসছে। কাজল একটা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল – আস্তে দুলাভাই এত প্রশ্ন একসাথে করলে বোন আমার কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবে?

হুঁশ ফিরল আবসারের, নিজের অবস্থান দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। নিশাকে ছেড়ে পাশে দাঁড়ালো। সবাইকে ডেকে হাসিমুখে পরিচয় করিয়ে দিল – সি ইজ মাই ওয়াইফ আর তোমাদের ভাবী।

_____________________________

ইফতারি করেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে নিশা। আবসার আগে থেকেই কোয়ার্টার নিয়ে থাকায় নিশার থাকা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। কাজল আর শাহরিয়ারেরও ব্যবস্থা হয়ে গেছে। বিছানায় শুতেই সারা রাজ্যের ঘুম যেন নিশার চোখের উপর ভর করেছে। রোজা রেখে সারাদিন জার্নি করে বেশ ক্লান্ত সে। আবসার এসে দুইবার ডেকে গিয়েছে মেহেদী পড়ার জন্য। কিন্তু নিশার এক কথা সে এখন ঘুমাবে, কোনো মেহেদী পড়ার দরকার নেই তার।

নিশা এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। আবসার ইউটিউবের ভিডিও ডাউনলোড করে সেই ভিডিও দেখে দেখে নিশার হাতে মেহেদী দেওয়ার চেষ্টা করছে। টানা দুই ঘন্টা পর আবসার সফল। সে সফল হয়েছে তার বউয়ের হাতে মেহেদী দেওয়ায়। মেহেদীর টিউবটা পাশে রেখে নিশার হাত ধরে বসে আছে সে যাতে আবার লেপ্টে না যায়। মেহেদী শুকানোর পর খুব সাবধানে শুকনো মেহেদী হাত থেকে তুলে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি হাসলো আবসার। নিশার পাশে শুয়ে টেনে নিজের বুকের উপর উপর আনলো তাকে, কপালে আলতোভাবে ঠোঁট ছুঁইয়ে নিশাকে জড়িয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো সে।

__________________________

খুব ভোরে উঠে ঢুলু ঢুলু পায়ে ওয়াশ রুমে গেল নিশা। চোখ থেকে ঘুমের রেশ এখনও কাটেনি কিন্তু ঈদের দিন বলে কথা আর ঘুমানো যাবে না। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতেই হাতের দিকে নজর পড়লো তার, হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটে। মেহেদির ডিজাইনের মধ্যে সুক্ষ্ম করে লেখা ” A + N ” । ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকে দেখে আবসার উঠে বসে আছে। নিশা আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল – উঠে গেছেন? ফ্রেশ হয়ে আসুন তাড়াতাড়ি ফজরের নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।

আবসার নিশার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল – আমি তো কাল রাতে কিছু করিনি বউ তাহলে সকাল সকাল উঠে গোসল করলে কেন?

নিশার ভ্রু কুঁচকে এলো, বলল – সব সময় শুধু আজে বাজে চিন্তা। আজ ঈদ ভুলে গেছেন?

আবসার নিশার হাত ধরে টেনে কোলের উপর বসিয়ে দিয়ে নিশার ভেজা চুলে মুখ গুজে দিল।

– আজ একটা জিনিস চাইবো , দিবে বউ?

– আপনি কিছু চাইবেন আর আমি দেবো না, আপনি চাইলে আমার জানটাও যে হাজির।

– মেরে ফেলতে চাইতো আমাকে?

– মানে?

– তোমার জানটা নিয়ে নিলে আমার নিজের জানাটাও যে চলে যাবে।

– বাজে কথা রেখে বলুন কি চাই আপনার?

– আল্লাহ রাস্তে তোমার এই আপনি আপনি করা রাখো, তুমি করে বলো। তোমার মুখে আপনি শুনতে শুনতে কান পচে গেছে আমার।

– আচ্ছা চেষ্টা করবো ।

– চেষ্টা না এখনই বলো।

– আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন।

– না আগে তুমি করে বলো তাঁরপর যাবো।

নিশা আমতা আমতা করে বলল – যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।

আবসার মুচকি হাসি দিয়ে সশব্দে নিশার গালে একটা চু’মু দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।

___________________________

ঈদের নামাজ পড়তে গেছে। রান্নার পাঠ চুকিয়ে বসে আছে নিশা আবসার বের হওয়ার আগে বারবার বলে গেছে নিশাকে শুধু শাড়িটা পড়ে থাকতে আবসার নাকি আজ নিজের হাতে নিশাকে সাজাবে। বাড়িতে ফোন দিয়ে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় সেড়ে ফেলেছে কিন্তু আবসারের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। ঘুম পাচ্ছে ভীষণ এই ফাঁকে একটু ঘুমিয়ে নিবে? যেমন ভাবনা তেমন কাজ বিছানায় শুয়ে পড়েছে নিশা কিন্তু ঘুম আর হলো না। এসে পড়েছে আবসার, নীল একটা পাঞ্জাবি পড়নে , নিশার জন্যও কিনেছে একটা নীল জামদানি নিজের পাঞ্জাবির সাথেই মিলিয়ে। আবসারকে দেখেই নিশা উঠে বসলো। আবসার এগিয়ে এসে নিশার ঠোঁট চট করে একটা চু’মু বসিয়ে দিল, হকচকিয়ে উঠলো নিশা গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে আবসারের দিকে। আবসার অসহায় মুখ করে বলল – তুমি তো আর দিবে না তাই আমার পাওনাটা আমিই নিয়ে নিলাম।
যাও শাড়িটা পড়ে এসো।

– আপনি রুম থেকে বের হন আমি শাড়ি পড়বো।

আবসার অবাক হয়ে বলল – তাতে আমাকে বের হতে হবে কেন?

– ওয়াশ রুমে অল্প জায়গায় শাড়ি পড়া যাবে না এখানে পড়তে হবে।

– তো?

– তো মানে?

আবসার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল – একবার না দুইবার না হাজারবার তোমার সবকিছু দেখা আমার শেষ আর সেখানে তুমি আমার সামনে সামান্য একটা শাড়ি পড়তে লজ্জা পাচ্ছো বউ। তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে আমার স্পর্শ আছে?

নিশা আমতা আমতা করছে। আবসার আঁটসাঁট বেঁধে খাটের উপর বসলো, বলল – শাড়িতো তোমাকে আজ আমার সামনেই পড়তে হবে, কোথাও যাচ্ছি না আমি।

চলবে….

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_৩২
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

দেখতে দেখতে কেটে গেল তিনটি মাস। নিশা এই তিন মাস আবসারের কাছেই ছিল। ছুটিতে নিশাকে বাড়ি নিয়ে এসেছে আবসার , উদ্দেশ্য নিশার কলেজ থেকে কিছু কাগজ তোলা ওকে চট্টগ্রাম ট্রান্সফার করে নিবে। নিশা অনেক চেষ্টা করছে ওকে কলেজে না আনার কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবসার এসেছেই এসেছে। হেড অফ দ্যা ডিপার্টমেন্টের রুমে বসে আছে আবসার আর নিশা। পাশে ইয়াসিনও আছে। হঠাৎ স্যার মুখ খুলে যা বললেন তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না নিশা। বলেছে না যেন ওর মাথায় বোমা ফাটিয়েছে। এসেছে ট্রান্সফার হওয়ার জন্য কাগজ নিতে সেখানে আবার এসব বলার কি দরকার? হঠাৎ স্যার বলল – তা মিস্টার আবসার তাহমিদ, আপনার ওয়াইফ তো গত ইনকোর্স পরীক্ষায় ৩ সাবজেক্টে ফেল করেছে।

আবসার গোল গোল চোখে নিশার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশা লজ্জায় এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে। হারয়ে বেচারা মান সম্মান, এই ভাবে মাটির সাথে মিশে গেল। ফেল করার কথাটা এই ভাবে কেন আবসারের সামনেই বলতে হবে ? নিশার অসস্থি লাগছে।

হনহন করে বাড়িতে ঢুকে গেল আবসার, তার পিছু পিছু চোরের মতো ঢুকছে নিশা। রাস্তায় একটা কথাও বলেনি নিশার সাথে, নিশাও সাহস করে কিছু বলতে পারেনি। এমনি ফেল করার মতো মহাপাপ করে ফেলেছে সে। বাড়িতে ঢুকেই আকাশ কাঁপানো এক ধমক ছাড়লো আবসার। কেঁপে উঠলো নিশা। আজ বুঝি ও শেষ। যে পরিমাণ রেগে আছে আবসার, আজ ওকে মনে হয় মেরেই ফেলবে।

– স্টপ, যেখানে দাঁড়িয়ে আছো ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো আর এক পাও এগোবে না।

নিশা আর সাহস করে এগোলো না। চুপচাপ মুর্তির মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। নড়াচড়া করলেই যেন প্রান যাবে তার। রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এলো আবিদা বেগম।

– বউমাকে ধমকাচ্ছিস কেন বাবা ও কি করেছে?

– কি করেনি বলো। তোমার আদরের বউমা পরীক্ষায় ফেল করেছে তাও এক সাবজেক্ট দুই সাবজেক্ট না তিন তিন সাবজেক্টে।

আবিদা বেগমও গোল গোল চোখে নিশার দিকে তাকিয়ে আছে। শেষে কিনা শ্বাশুড়ির সামনেও মান ইজ্জতের ফালুদা। ইস কেন যে ফেল করতে গেল। নিশা আমতা আমতা করে বলল – ফাইনাল পরীক্ষা না মা ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল।

– এ আর এমন কি ব্যাপার ইনকোর্স পরীক্ষাই তো।

আবসার চোখ ছোট ছোট করে বলল – মা ও তিন সাবজেক্টে ফেল করেছে আর তুমি কিনা ওকে সাপোর্ট করছো?

আবিদা বেগম ভাবলেশহীন ভাবে বলল – এ আর এমন কি ব্যাপার ও তো তাও তিন সাবজেক্টে ফেল করেছে আর তোর বোন তো চার সাবজেক্ট ফেল করেছে।

– ইয়াসিন কিছু বলেনি ওকে?

– সে তোর বোনের সাথে পারে নাকি হাজার হোক তোরই তো বোন। যেমন তুই তেমন তোর বোন।

থতমত খেয়ে গেল আবসার। নিশা ঠোঁট টিপে হাসছে।

– এই তুমি হাসছো কেন? লজ্জা করেনা তোমার? পরীক্ষায় ফেল করে আবার দাঁত কেলিয়ে হাসছো। এত নির্লজ্জ কেন তুমি? তোমার জায়গায় আমি হলে তো এতক্ষনে কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিতাম।

অমাবস্যার ঘন কালো অন্ধকার নেমে এলো নিশার মুখে। এভাবে ওকে বলতে পারলো আবসার? একটুও মায়া করলো না। কি করেছে ও যে ওকে নির্লজ্জ বলেছে, একটু ফেলই না হয় করেছে। তাও তো ওর জনই ফেল করেছে। এমন একটা স্বামী থাকতে স্বামী রেখে কি পড়াশোনায় মন বসে? সারাদিনই তো মন শুধু আবসার আবসার করে এখানে ওর দোষ কোথায়? ভীষণ অভিমান জমেছে আবসারের উপর। কথাই বলবে না তার সাথে। ওকে কিভাবে সে নির্লজ্জ বলতে পারলো?

_______________________________

রাত ১১ টা বেজে গেছে, এখনও বই নিয়ে বসে আছে নিশা। সেই সন্ধ্যায় পড়তে বসেছে এখন পর্যন্ত ওঠেনি। উঠবে না আজ আর ও। এখন থেকে ও সারাদিন রাত ২৪ ঘন্টা শুধু পড়বে। সামনের পরীক্ষায় ক্লাস টপার হয়ে দেখিয়ে দিবে। এর মধ্যে আবসার কয়েকবার এসে নিশার টেবিলের আশেপাশে ঘুরঘুর করে গেছে কিন্তু নিশা পাত্তা দেয়নি। খাবারও আজ রুমে নিয়ে এসে বই পড়তে পড়তে খেয়েছে।

রাত ১২ টা বেজে গেছে নিশার পড়ার টেবিল থেকে ওঠার কোনো নাম গন্ধ নেই। আবসার বারবার গলা খাঁকারি দিয়ে তার উপস্থিতি বোঝাচ্ছে কিন্তু নিশা পাত্তা দিচ্ছে না। আবসার পড়েছে মহা ঝামেলায় তার বউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। কি একটা ইনকোর্স পরীক্ষায় ফেল করার জন্য একটু বকেছে তাই বউ পাত্তা দিচ্ছে না। বউটা দিন দিন বড্ড নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে। এই এত বড় রাতে বউ ছাড়া থাকা সম্ভব, মোটেই না। কিন্তু বউ তো কাছেই আসছে না। আবসার উঠে গিয়ে চট করে নিশার ডান গালে একটা চু’মু খেল। না নিশার কোনো হেলদোল নেই। আবসার আবার চট করে নিশার বাম গালে একটা চু’মু খেল এবারও নিশার কোনো হেলদোল নেই শুধু মাত্র হাত দিয়ে গালটা মুছে নিল। এবার আবার নিশার নাকের ডগায় একটা কামড় বসিয়ে দিল, নাহ এবারও নিশার হেলদোল নেই শুধু একবার কটমট করে আবসারের দিকে তাকিয়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দিল।

নাহ এভাবে আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না , আবসার দ্রুত নিশাকে কোলে তুলে নিল। নিশা দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে কোনো কথা বলছে না। আবসার নিশাকে বিছানায় শুইয়ে নিজেও তার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। নিশা আবসারের বাধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছুটোছুটি করছে কিন্তু হাজার হলেও একজন পুরুষ মানুষের শক্তি বলে কথা তার সঙ্গে কি আর পেরে ওঠা যায়।

– আমার সাথে কথা বলবে না বউ?

নিশা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে, কোনো কথা বলছে না। আবসার নিশার ঘড়ে আলতোভাবে কয়েকটা চু’মু খেল, কেঁপে উঠলো নিশা তবুও কথা বলছে না। এবার সজোরে একটা কামড় দিল নিশার ঘাড়ে। মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলো নিশা।

– কি শুরু করেছো কি ? কামড়াচ্ছো কেন?

– কি করবো বউ আমায় পাত্তা দিচ্ছে না, কথা বলছে না আমার সাথে।

– নির্লজ্জ মেয়েদের সাথে কথা বলার এত শখ কেন?

– নির্লজ্জ মেয়েদের সাথে কথা বলতেই তো মজা, এদের অল্প বললেও সম্পূর্ণ কথা বুঝে ফেলে আবার আদর করতেও সুবিধা হয়।

– একদম বাজে কথা বলবে না। দূরে থাকো আমার থেকে, একদম কাছে আসবে না।

– আসবো একশ বার আসবো কি করবে তুমি?

নিশা আবসারকে দুই হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। আবসার হেসে বলল – এমন‌ পুঁটি মাছের শক্তি নিয়ে আমার মতো বোয়াল মাছের সাথে লাগতে?

– বোয়াল মাছ না ছাঁই বলে ভেংচি কাটলো নিশা।

আবসার নিশার নিচের ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে বলল – আমি বোয়াল মাছ কিনা জানিনা না কিন্তু তুমি পুঁটি মাছ সে বিষয়ে শিওর। এখন বলো রাগ কমেছে?

– কিসের রাগ কোনো রাগ নেই আমার।

– তাহলে আদর করো আমায়।

– পারবো না।

– এর মানে রাগ কমেনি। কাছে এসো একটু আদর করে দেই বউ।

নিশা ভ্রু কুঁচকে বলল – আর কত কাছে যাবো এখন তোমার ভিতরে ঢুকে যাবো নাকি?

আবসার নিজের ডান হাত দিয়ে নিশার গলায় স্লাইড করতে করতে বলল – ইচ্ছে তো করছে তাই কিন্তু তার যে উপায় নেই বউ।

নিশার কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে , না না এই মানুষের কাছে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না তাহলে রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না। কিন্তু আবসারকে ঠেলে উঠিয়েও দিতে পারছে না। কি হাতির মতো শরীর।

আবসার বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলল – আর কতক্ষন রাগ করে থাকবে বউ, এবার কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে।

রাগটা কমে এলো নিশার। সে যে এই মানুষটার কষ্ট একদম সহ্য করতে পারে না। অভিমানী কন্ঠে বলল – তুমি আমাকে তখন নির্লজ্জ বললে কেন?

– বলেছি তো তোমার ভিতরে পড়াশোনার জন্য জিদ বাড়ানোর জন্য, তাই বলে তুমি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেবে?

– দেবোই তো, বলবো না কথা তোমার সাথে।

আবসার নিজের সম্পূর্ণ ভর নিশার উপর ছেড়ে দিয়ে দুই হাতে কান ধরে বলল – স্যরি বউ, এই দেখো কান ধরেছি আর করবো না।

নিশা চিৎকার করে উঠল, বলল – মাফ চাইছো নাকি আমাকে মারার চেষ্টা করছে। মরে গেলাম গো, কোমড়টা গেল গো।

হকচকিয়ে উঠলো আবসার। কান ছেড়ে দ্রুত দুই হাত নিশার দুই দিকে দিয়ে ভর করে বলল – আস্তে কি শুরু করেছোকি? এত রাতে যেভাবে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছো লোকে তো অন্যকিছু মনে করবে। আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি বাঁধবে।

চুপ হয়ে গেল নিশা। মস্তিষ্ক যখন আবসারের কথার মানে জানান দিল লজ্জায় লাল হয়ে গেল নিশা। আবসার দুষ্ট হাসি হেসে বলল – এখন লজ্জা পাচ্ছো কেন? আমার মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি বাধিয়ে এখন লজ্জা পাওয়া হচ্ছে।

– আপনি আসলে একটা লু’চু। সবসময় শুধু বাজে বাজে কথা।

– সে আমি জানি কিন্তু এখন কথা হচ্ছে এই মুহূর্তে আমার ভীষণ আদর আদর লাগছে। একটু আদর করে দেও না।

নিশা আবসারের বুকে ছোট্ট একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলল – যাহ অসভ্য।

আবসার হো হো করে হেসে উঠলো।

____________________________

শীত নেমেছে ধরনীর বুকে। চারদিকে শীতল হাওয়া, কনকনে শীত। পথের ধারে পথচারী, গরীব মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই শীতলতার মাঝেও দুজন ব্যক্তির হৃদয় বড় অস্থির হয়ে উঠছে। বিচ্ছেদের সুর তুলেছে তাদের হৃদয়। বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে কারো প্রিয়তমের। আবসার মিশনে যাচ্ছে দীর্ঘ এক বছরের জন্য। নিশার মনটা বড্ড ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ একটা বছর সে কিভাবে আবসারকে ছেড়ে থাকবে। আবসারও বড্ড অস্থির হয়ে উঠছে, মিশনে যাওয়াটা ক্যানসেল করার কয়েকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। ভাগ্য বুঝি এটাই চাইছে, দুজনকে ক্ষনিকের জন্য আলাদা করতে চাইছে। কিন্তু এই ক্ষনিকের সময়টাই বা কিভাবে তারা একে অপরকে ছেড়ে থাকবে। মিশনে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে কান্নাকাটি শুরু করেছে নিশা। প্রেয়শীর কান্না দেখে নিজেকে সংযত করা দায় হয়ে পড়েছে আবসারের। মনটা বড্ড কু গাইছে।

( আপনারা অনেকেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন আমার পেইজে সমস্যা হয়েছে সেই কারনে হয়তো গল্প দিতে পারবো না। আমার পেইজের সমস্যাগুলো হলো পেইজের কোনো পোস্ট পিন করতে পারি না, সবার কমেন্ট আসে না আর গ্রুপে পোস্ট করতে পারি না, এক প্রকার গ্রুপগুলো শো করে না । এছাড়া পেইজে আর তেমন কোনো সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ গল্পগুলো নিয়মিতভাবে এই পেইজেই পাবেন। এছাড়া আর কোনো সমস্যা হলে বা পেইজে লেখালেখি করতে যদি না পারি তাহলে অবশ্যই সেটা আমি আমার আইডিতে জানিয়ে দেব, তাই ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিটা দিয়ে রেখেছি। তবে আশা করছি পেইজে এমন কোনো সমস্যা হবে না, আপনারা সবাই দোয়া রাখবেন। আর পেইজে লাইক, কমেন্ট , ফলো করুন, গল্পগুলো শেয়ার করে অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করুন। নতুন লেখিকা তো)

চলবে….