বসন্ত বিকেল পর্ব-০২

0
21

#বসন্ত_বিকেল
#পর্ব_২
#নবনী_নীলা
“কাল রাতের ব্যবহারের জন্য আপনি আমাকে সরি বলুন। নয়তো আমি আপনার সাথে কোথাও যাচ্ছি না।”,মাহা কঠিন গলায় বলল।

শুদ্ধ একটা ভ্রু তুলে বললো,”তোমাকে সরি বলবো! কিসের জন্য?”,

” আপনি আমাকে স্টুপিড বলেছেন এই কারণে।”, বলেই মাহা নিজের দৃষ্টি সরু করলো।

” আমি ভুল কিছু তো বলি নি। তাই সরি বলার প্রশ্নও উঠছে না।”

মাহা নাকের ডগায় ভাব নিয়ে বললো,” তাহলে আমার ও যাবার প্রশ্ন উঠছে না।”,

” ওকে, উই উইল সী দ্যাট।”, বলেই শুদ্ধ নিজের হাতে থাকা সানগ্লাসটা পরে নিলো।

মাহা আড় চোখে শুদ্ধর চলে যাওয়া দেখছে। মাহা নিজে কি ভাব দেখাবে। শুদ্ধ উল্টো তাকে অ্যাটিটিউড দেখিয়ে চলে গেলো। নিজেকে যে কি মনে করে কে জানে। মাহা রুমের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাঁটাহাঁটি শুরু করলো। মনে হচ্ছে লোকটার সাথে কথা বাড়াবাড়ি করা ঠিক হয় নি। বাসার কারোর কানে গেলে তার আস্ত থাকবে না। যদি নালিশ করে দিয়ে যায়, ভেবেই মাহার কপালে হাত। সব দোষ এই দুলাভাইয়ের তিনি না বললে কি আর সে জানতো কালকের ফোনটা শুদ্ধ করেছিলো। এই দুলাভাই হলো সব নষ্টের গোড়া। এর মাঝেই মাহার ডাক পড়লো। তার মা ডাকছে।

মাহা পা টিপে টিপে রান্না ঘরে ঢুকতেই তার মা তার দিকে তাকালো তারপর বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল,” একি অবস্থা! ছেলেটা গাড়িতে অপেক্ষা করছে। তুই এখনো তৈরি হোস নি?”

এইতো ঠিক জায়গায় এসে আগুনটা লাগিয়ে দিয়েছে। মহা ধূর্তবাজ। মাহা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” আমি একা একা যাবো?”

” না একা যাবে কেনো? পুরো মহল্লা সাথে নিয়ে যাও।”, আয়েশা বেগমের গলার আওয়াজ তাদের বেডরুম পর্যন্ত যেতেই খন্দকার সাহেব বললেন,” আহা, মেয়েটার সাথে রাগারাগি করছো কেনো? ”

“তোমার মেয়ের কথা শুনলে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়।” বলেই মাহার দিকে তাকালো তারপর বলল,” তুমি দাঁড়িয়ে আছে কি করছে। যাও তৈরি হও।”

মাহা হন হন করে নিজের রুমে চলে গেলো। মানছে সে ভুল করেছে। কিন্তু কয়েকটা বিয়েই তো ভেঙেছে, তাও আবার নিজের বিয়ে। ক্ষতি তো যা হবার তার হয়েছে। পাশের বাড়ির কারোর তো ক্ষতি হয়নি। মা তো এমন আচরণ করছে যেনো মায়ের জন্য এসেছিল সেই সব বিয়ের প্রস্তাব। কাউকে তো কিছু বলাই যাচ্ছে না। মুখ বন্ধ করে সব সহ্য করতে হচ্ছে কিন্তু দিন তো আমারও আসবে। পই পই করে হিসাব নিবো সবার কাছ থেকে।

___________________

শুদ্ধ গাড়ি নিয়ে মাহাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে ছিলো। বাড়ি থেকে বিষন্ন মুখে মাহা বের হলো। শুদ্ধকে দেখে তার গায়ে যেনো আগুন জ্বলছে। আগে তো তার একা বাড়ির বাইরে যাওয়াও বারণ ছিলো আর এখন! মাহা শুদ্ধর দিকে না তাকিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো। শুদ্ধ মাহার এই আচরণে মজাই পেলো। একটু আগে নাকের ডগায় রাগ ছিল আর এখন মেয়েটার চোখে মুখে আগুন জ্বলছে।

শুদ্ধ গাড়িতে গিয়ে বসলো। মাহার দিকে তাকাতেই তার কপালে ভাঁজ পড়ল। এইভাবে সামনে দুই হাত ভাজ করে বসে আছে কেনো? মাহা আড় চোখে তাকালো। চোখে এখনো আগুনের ফুলকি উড়ছে।
শুদ্ধ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” এইভাবে হাত গুটিয়ে বসে না থেকে সিটবেল্ট পড়।”

” জানি আমি, আপনাকে বলতে হবে না।”, বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে উঠলো মাহা।

শুদ্ধর বিস্ময়ের শেষ নেই।পৃথিবী এমন অদ্ভুত রকমের মানুষ ও আছে। এই প্রথম সে কোনো মেয়েকে গাল ফুলিয়ে সিটবেল্ট পড়তে দেখলো।শুদ্ধ কয়েক পলক তাকিয়ে দেখলো মাহাকে। পরক্ষনেই মাহার অগ্নিদৃষ্টি তার দিকে ফিরতেই সে সামনে তাকালো। যেই অবস্থা দেখছে এতে করে মেয়েটার মাথা ঠান্ডা না হলে কথা বলাও মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে দেখছি।

মাহার মাথা আস্তে আস্তে নিজেই ঠান্ডা হয়ে গেলো। সে যেমন হুট করে রেগে যায় তেমনি কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলে তার মাথা এমনেই শান্ত হয়ে যায়। মাথা ঠাণ্ডা হলেও শুদ্ধর উপর তার রাগ বিন্দু মাত্র কমেনি।

মাহা শান্ত কিন্তু কঠিন গলায় প্রশ্ন করলো,” আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”

শুদ্ধ ড্রাইভিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলো কিন্তু হঠাৎ মাহার কণ্ঠের পরিবর্তন শুনে সে থমকে তাকালো। কিন্তু মাহার দৃষ্টি সামনে স্থির।

” আমার বাড়িতে।”, কথাটা শুনতেই মাহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,” আপনার বাড়িতে! কেনো?”

শুদ্ধ নিজের দৃষ্টি সামনে রেখে বলল,” মা তোমার সাথে কথা বলবে।”

মাহার চোখে মুখে কিসের একটা ভয়। সে একটা ঢোক গিলে বললো,” কে.নো?” বলেই ভাবনায় পড়ে গেলো সে।

শুদ্ধ আড় চোখে তাকিয়ে বলল,” এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার মা তোমাকে খেয়ে ফেলবে না।”

মাহা নিজের ঠাট বজায় রেখে বলল,” মাহজাবিন কাউকে ভয় পায় না।”

শুদ্ধ এই মেয়েকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। এই মেয়ের মুড তো দেখি মিনিটে মিনিটে পরিবর্তন হচ্ছে। গাড়ি এসে শুদ্ধদের বাড়ির সামনে থামলো। বিশাল দোতলা বাড়ি। আর সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান। বাড়ি দেখে মাহার মুখ হা হয়ে গেলো। পরক্ষনেই সে একটা ঢোক গিলে গাড়ি থেকে নামলো। কোথায় এসে পড়লো সে। তার তো মাথাই কাজ করছে না। বিয়ের আগে কেউ একা একা কোনোদিন শশুর বাড়ি এসেছে? সে তো তার জীবনে এমন কিছু দেখেনি কোনোদিন। এরা মনে হয় বেশি মর্ডান। মাহা নিজের মনে নানা গুল পাকিয়ে যাচ্ছে।

শুদ্ধ গাড়ির চাবি দারোয়ানকে দিয়ে মাহার দিকে তাকালো। একদম স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে সে। শুদ্ধ এগিয়ে গিয়ে বললো,” দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভিতরে যাও।”

মাহা শুকনো গলায় বলল,” আপনি আগে যান।”

” ওকে”, বলে শুদ্ধ হাঁটা দিতেই মাহা তার ঠিক পিছু পিছু আসতে থাকলো।

বাড়িতে ঢুকতেই মাহা সাথে সাথে নিজের মাথায় ওড়নাটা দিয়ে নিলো। বাড়ির যে সাইজ কমপক্ষে পনেরো থেকে বিশ জন তো হবেই। আয়হায় বিয়ের পর কি এতো মানুষের জন্য রান্না বান্না করা লাগবে! তাহলে পড়াশুনা করবে কখন! এইসব ভেবেই তার কান্না পাচ্ছে।

মাহাকে দেখে আফরোজা বেগম হাসিমুখে এগিয়ে আসতেই মাহা সালাম দিল। সালাম নিয়ে আফরোজা বেগম তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,” লক্ষী মেয়ে।”

শুদ্ধ ভ্রু তুলে তাকালো। মাথায় ওড়না দিয়ে লক্ষী সাজাও হয়ে গেছে এর মধ্যে! কাকে কিভাবে পটাতে হয় ভালোই জানে দেখছি। যতটা বোকা ভাবা হয়েছিল ততটা বোকা তো মেয়েটা না।

আফরোজা বেগম মাহাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। শুদ্ধ কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে গ্লাসে ঢালতেই রিধি সেখানে পৌঁছে গেলো।

” কিরে কেমন লাগলো?”বলেই ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।

শুদ্ধ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
” পুরো এটম বোম।”

রিধি ভাইয়ের সাথে যেতে যেতে বলল,” সে তো লাগবেই। কারণ পৃথিবীতে সব মেয়ে ক্লাসি কিংবা রসকষ বিহীন হয় না।”

শুদ্ধ আড় চোখে তাকাতেই রিধি বললো,” সরি! তোর তো আবার এমন মেয়েই পছন্দ ছিল। পছন্দের পরিবর্তন তো হয় নি?”

শুদ্ধ সোফায় বসতে বসতে বলল,” এই ব্যাপারটায় বার বার কথা না বললে হয় না তোর?”

” না হয় না। তুই ভুলে গেলে তো আর আমরা মনে রাখতাম না।”

” আমিও ভুলে গেছি। সো ডোন্ট রিপিট ইট এগেইন এন্ড এগেইন।”

” সেটা সময়ই বলে দিবে।”, বলেই ভাইয়ের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে রিধি চলে গেলো। শুদ্ধ খানিকক্ষণ চুপ করে রইলো।

( চলবে)