বসন্ত বিকেল পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
28

#বসন্ত_বিকেল
#সমাপ্ত_পর্ব
#নবনী_নীলা

মাহা নিজের পালিয়ে যাওয়ার আয়োজন করছে। আর যাই হোক সব ব্যাপারে তার উপর জোর জবরদস্তি চলবে না। আর পালিয়ে না যেয়ে উপায় কি? ঐ চেঙ্গিস খান যে তাকে বাঁচাতে আসবে তার কোনো ঠিক আছে?দেখা যাবে শেষ মেষ আম যাবে আটিও যাবে। এইদিকে অহনা মাহাকে বারণ করে যাচ্ছে এইসব করতে না। কিন্তু মাহা কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না। অন্যদিকে মাহার মা ডেকেই যাচ্ছে। মাহা বারান্দা দিয়ে নামতে যাবে এই সময়ে তাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। অহনা মাহাকে থামিয়ে বলল,” মনে হয় শুদ্ধ এসেছে তুই এইখানেই থাক। নামবি না বললাম, পড়ে হাত পা ভাঙবে।”

আয়েশা বেগম দরজা খুলে দেখলো শুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। তিনি একটু অবাক হলেন সকাল সকাল তো শুদ্ধ কখনো তাদের বাড়িতে আসেনি। আয়েশা বেগম তড়িঘড়ি করে শুদ্ধকে ভিতরে আসতে আসতে বললেন। শুদ্ধ ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,” মাহা তৈরি হয় নি?”

আয়েশা বেগম ঠিক বুঝতে পারলেন না তাই বললেন,” কোথায় যাওয়ার কথা তোমাদের?”

” জ্বি।”, বলতেই দেখলো অহনা হাজির সেখানে। আয়েশা বেগম অহনাকে ডেকে বললেন,” মাহা কোথায়? এদিকে আসতে বলো।”

অহনা রুমে ফিরে গিয়ে মাহাকে দেখতে পেলো না কোথাও। অহনা ছুটে বারান্দায় গিয়ে দেখলো সেখানেও মাহা নেই। কিন্তু মাহার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে সে। অহনা বারান্দা দিয়ে নিচে তাকাতেই দেখলো। মাহা একতলার বারান্দার সানসেটের
উপর দাঁড়িয়ে আছে। অহনাকে দেখতে পেয়ে মাহা বলল,” আমাকে বাঁচা! আমি নামবো কিভাবে বুঝতে পারছি না।”

” তোকে আমি কয়বার না করেছিলাম? এবার বুঝ মজা। এদিকে শুদ্ধ এসেছে।”

” আমাকে বাঁচা! তারাতারি।”,

অহনা রুমের দরজা হালকা খুলে ড্রয়িং রুমের দিকে তাকালো। শুদ্ধকে বসিয়ে রেখে আয়েশা বেগম রান্না ঘরে গিয়েছে। এই সুযোগে অহনা হাতের ইশারায় শুদ্ধ ডাকলো। শুদ্ধ প্রথমে খেয়াল করেনি কিন্ত পরে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো। অহনা শুদ্ধকে ডেকে বারান্দায় নিয়ে গেলো। বারান্দায় গিয়ে শুদ্ধ মাহার আওয়াজ পেয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই অহনা তাকে নিচের দিকে তাকাতে ইশারা করলো। শুদ্ধ নিচে তাকাতেই মাহাকে দেখলো। শুদ্ধর বিস্ময়ের শেষ নেই। শুদ্ধ বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল,” তুমি এইখানে কি করছো?”

” আস্তে কথা বলুন। মা শুনতে পাবে।”,বলেই শুদ্ধ ইশারা করলো মাহা।

শুদ্ধ রীতিমতন হতভম্ব। শুদ্ধ অহনাকে বাইরে গিয়ে খেয়াল রাখতে বললো যেনো রুমে কেউ না আসে। শুদ্ধ মাহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” আমার হাত ধরো।”

মাহা হাত ধরতেই শুদ্ধ তাকে টেনে তুলল। মাহা রুমে এসে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রইলো। বাপরে! কি শক্তি! তাকে কিভাবে টেনে তুললো। শুদ্ধর রাগী কন্ঠে বলল,” তুমি নিচে কি করছিলে?”

” মার হাত থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু মাঝ পথে আটকে গিয়েছিলাম।”, বিড় বিড় করে বললো সে।

” এইসব আইডিয়া তোমাকে কে দেয়? নাকি নিজের মাথায় এইসব তৈরি হয় তোমার। তোমার ধারণা আছে আজকে কি হতে পারতো?”, বলেই শুদ্ধ চোখ রাঙালো।

__________________

আয়েশা বেগম শুদ্ধকে না দেখে রুমে যাচ্ছিল এমন সময় অহনা তার সামনে এসে পড়ল। আয়েশা বেগম বলল,” ওরা কি চলে গেছে?”

অহনা ভয়ে ভয়ে বলল,” না ওরা রুমে আছে।”

এ কথা শুনে আয়েশা বেগম চলে যাচ্ছিল এমন সময় করুন মুখে মাহা রুম থেকে বের হয়ে এলো। মাহাকে দেখে অহনা একটা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আয়েশা বেগম মেয়েকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় শুদ্ধ রুম থেকে বের হয়ে এলো। অহনা মাহার হাত ধরে অন্যদিকে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,” কি হয়েছে?”

” কি আর হবে? বকেছে।”, গাল ফুলিয়ে বললো মাহা।

” ঠিকই করেছে।”

মাহা আড় চোখে তাকালো। তারপর বলল,” যাই হোক। লোকটা আমাকে এত সাহায্য করছে কেন? বুঝতে পারছি না। ”

” শুদ্ধ তোর প্রেমে পড়েনি তো?”, অহনা প্রশ্ন করতেই মাহা অবাক হয়ে তাকালো। তারপর বলল,” এটা কিভাবে সম্ভব!”

অহনা আর মাহা কথা বলছিল এমন সময় আয়েশা বেগম মাহাকে ডেকে বলল,” শুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে না। যাও।”

মাহা প্রশ্ন সূচক শুদ্ধর দিকে তাকালো। কোথায় যাবে আবার? মাহা গাড়িতে উঠতে উঠতে শুদ্ধকে বললো,” কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

” শপিং করতে যাচ্ছি।”, শুদ্ধর কথা শুনে মাহা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সে আরো কত কি ভাবেছিল।

মাহা আগ্রহ নিয়ে বললো,” আমরা কিসের শপিং করতে যাচ্ছি।”

শুদ্ধ আড় চোখে তাকালো তারপর বলল,” বিয়ের।”

বিয়ের কথা শুনে মাহা তাকিয়ে রইলো। বিয়ের আগে বিয়ে নিয়ে কত কথা বললো। বিয়ে করবে না এই সেই এখন নিজেই বিয়ের শপিং করতে নিয়ে যাচ্ছে। মাহার চোখে মুখে নানা প্রশ্ন। কোনটা রেখে কোনটা করবে সে বুজতে পারছে না। নীরবতা ভেঙে শুদ্ধ বললো,” কি ভাবছো?”

” ভাবছি এটাই যে আপনি হঠাৎ আমার সাথে এতো ভালো হয়ে গেলেন কেনো?” বলেই মাহা শুদ্ধর দিকে তাকালো।

” কারণ তোমাকে এখন আমার ভালো লাগে তাই।”, শুদ্ধ নিজের দৃষ্টি সামনে রাখলো। এত বড় একটা কথা লোকটা কি সাবলীল ভাষায় বললো। মাহা বিশ্বাস করতে পারছে না।

মাহা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,” হঠাৎ আমাকে ভালোলাগার কারণ!”

” ঠিক বলতে পারছি না। তবে অনুভব করছি।”, বলেই শুদ্ধ গাড়ি থামলো।

মাহার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে শুদ্ধর কথা শুনে। মাহা একটা ঢোক গিললো। কি শুনছে সে এসব নিজের কানকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। শুদ্ধ গাড়ি থেকে নেমে মাহার পাশের দরজা খুলে দাঁড়াতেই। মাহা চোখ বড় বড় করে তাকালো। নিজের চোখে যা দেখতে পাচ্ছে সবটা কি সত্যি? মাহা চোখের দৃষ্টি নামিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে এটা তো কোনো শপিং মল না। এটা তো একটা পার্ক। মাহা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল,” এইখানে শপিং?”

শুদ্ধ মাহার প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো।তারপর বলল,” নাহ। শপিংয়ে আরেকটু পর যাবো। চলো এইখানে একটু ঘুরি।” বলেই শুদ্ধ নিজের হাত মাহার দিকে এগিয়ে দিলো। মাহা কি করবে বুঝতে পারছে না। তারপর দ্বিধা না করে হাত বাড়িয়ে দিতেই শুদ্ধ মাহার হাত শক্ত করে ধরে বলল,” এখন আর তোমার পিছনে পরে থাকতে হবে না। আমার সাথে একসাথে হাঁটতে পারবে।”

মাহার মনে অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে। সে বুঝেতে পারছে না এই অনুভূতির নাম কি। শুদ্ধর সাথে এইভাবে ঘুরতে ভালো লাগছে। ঘুরাঘুরি শেষ হতে হতে বিকেল গড়িয়ে এলো। তারা দুজনে একটা বিলের পাশে বসে গোধূলি দেখছে। মাহা হঠাৎ শুদ্ধকে প্রশ্ন করলো,” আপনি হঠাৎ এত ভালো হয়ে গেলেন কেনো বলুন তো?”

শুদ্ধ মৃদু হাসতে লাগলো। মাহা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,” এতোদিনে আমি আপনাকে কখনো হাসতে দেখিনি এই প্রথম দেখলাম।”

বসন্তের ঠান্ডা হওয়া বইছে চারিদিকে। বাতাসে মাহার চুল উড়ছে। শুদ্ধ মাহা চুল কানে গুঁজে দিয়ে বললো,” তোমার কথা শুনে যে কেউই হাসবে।”

” সে তো সবাই হাসে কিন্ত আপনি এই প্রথম হাসলেন।”বলতে বলতে মাহা নিজের ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো। শীতের শেষে বসন্তের এই বাতাসে তার শরীরে মৃদু কম্পন হচ্ছে। শুদ্ধ নিজের জ্যাকেট টা খুলে মাহাকে পরিয়ে দিচ্ছিল এমন সময় মাহা বললো,” সব বৃথা গেলো।”

শুদ্ধ মাহার পাশে বসতে বসতে বলল,” মানে?”

” মানে হলো। আমি কত কি প্ল্যান করলাম সবাই বৃথা। আচ্ছা,আপনি আবার আগের মতন হয়ে যাবেন না তো?”

” আগের মতন বলতে?”

” এইযে রাগী, বদমেজাজি।”,বলেই মাহা শুদ্ধর দিকে তাকালো।

” সে তুমি আবার বিয়ে ভাঙতে গেলে তখন আমিও নিজের আগের রূপে ফিরে যাবো।”,বলেই শুদ্ধ মাহার দিকে তাকালো।

মাহা হাসতে হাসতে বলল,” সে তো আমার কাছে অনেক প্ল্যান আছে। শুনবেন?”

শুদ্ধ রাগ দেখানোর ভান করে বললো,” শাট আপ।”
এইভাবে গল্প করতে করতে কখন বিকেল বিকেল শেষ হতে চলল তাদের খেয়াল রইলো না।

( সমাপ্ত)