বসরাই গোলাপের ঝাড় পর্ব-১২

0
385

#বসরাই_গোলাপের_ঝাড়
#ফারহানা_কবীর_মানাল

১২.
নববী তিন জনের জন্য ভাত রেঁধেছিল। মহিউদ্দিন সাহেব সকালে না খেয়ে বেরিয়েছেন। বলেছেন- খিদে নেই। দুপুরে ফিরবেন না। হাসপাতালে যাবেন। সে ভালো মন্দ কিছু বলেনি। চুপচাপ মাথা নেড়েছে। হাবিব এখনও ফেরেনি। খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে এমন আশাও নেই। নাইমা বলল, “ভাবী, খেতে দিবে?”

“রান্না শেষ হয়ে গেছে। বসো, নিয়ে আসছি।”

“ভালো লাগছে না। ভোররাতে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি। এসব ঝামেলায় না জড়ালেই বোধহয় ভালো করতাম।”

নববী কিছু বলল না। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। নাইমা দুই গ্রাস মুখে দেবার পরপরই উঠে গেল। বলল, “খেতে ইচ্ছে করে না। মাথা ব্যাথা করছে। তুমি খেয়ে নাও।”

দুপুর হয়ে এসেছে প্রায়। বারোটা বাজাতে সামান্য কিছু সময় বাকি। সে চুলার পাশে বসে আছে। চোখে-মুখে বিভ্রান্তির ছাপ। নতুন ঝামেলা ভালো লাগছে না। ছেলে হারানোর শোক কা’টি’য়ে উঠতে না উঠতেই নতুন বিপদ হাজির হয়েছে। বারবার মনে হচ্ছে মৃ’ত্যুর খেলা শুরু হয়েছে। আনিস সহজ মানুষ না। কাউকেই ছেড়ে কথা বলবে না। নববী ডাল নামিয়ে রাখার পরপরই হাবিব ঘরে ঢুকলো। ক্লান্ত গলায় বলল, “এক গ্লাস পানি দাও, নববী।”

নববী পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে হাবিবের কপালে হাত রাখলো। বিস্মিত গলায় বলল, “ঘেমে গেলে কিভাবে?”

“রোদের তাপ খুব বেশি। জোরে হেঁটেছি সেজন্যই হবে হয়তো। নাইমা কোথায়? ডেকে নিয়ে এসো। জরুরি কথা আছে।”

নাইমা পাশেই ছিল। বলল, “কি হয়েছে ভাইয়া? দুলাভাই কিছু করে বসেনি তো?”

“না, সে কিছু করেনি। জানিসই তো দু’টো হীরে সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম। আমার এক বন্ধু- জহুরি। তার কাছে গিয়েছিলাম। বলল – একটা হীরে আসল, একটা নকল।”

“আসল-নকল মিলিয়ে ব্যবসা করে বোধহয়।”

“তোকে একটা কাজ করতে হবে।”

“কি কাজ করব?”

হাবিব নববীর দিকে তাকালো। নববী এগিয়ে গিয়ে জালানার পর্দা টেনে দিলো, দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বলল, “যা-ই করবে, খুব সাবধানে।”

হাবিব তার কাঁধে হাত রাখল। নাইমার মুখে ভয়ের ছাপ নেই। শান্ত এবং স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে আছে। এমন সাহসী ক’জনই বা হয়! লাখে একজন!

রোহানের জ্ঞান ফিরেছে। দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। আনিস হাসি মুখে থাকার চেষ্টা করছে, পারছে না। কেমন যেন উসখুস করছে। মহিউদ্দিন সাহেব বললেন, “কোন সমস্যা?”

আনিস মেকি হাসি হাসল। সরু গলায় বলল, “রোহানের জন্য চিন্তা হচ্ছে।”

“ডাক্তার সাহেব আসেননি?”

“এসেছিলেন। বললেন, ‘অবস্থা ভালো। আল্লাহ নিজের হাতে রহমত করেছেন। না হলে এমন রোগী এত তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে না।”

মহিউদ্দিন সাহেব নাতির পাশে গিয়ে বসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “কেমন আছো নানা ভাই?”

রোহান মাথা দোলালো। শরিফা বেগম বললেন, “হাবিবকে কল দিয়ে দেখো তো, কতদূর এসেছে। ওরা আসলে আমি বাড়িতে যাব। গোসল শেষ করে বিকেলের দিকে আসব।”

কনক বলল, “হাসপাতালেও গোসল করা যায় মা। দোতলায় একটা ভালো বাথরুম আছে। বারান্দার কোণায় ওই আপা সকালেই বলল- বেশ ভালো বাথরুম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পানির ব্যবস্থা ভালো।”

শরিফা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। কনকের মনের অবস্থা বুঝতে পারছেন। তবে তার এখানে থাকতে ইচ্ছে করে না। সামনের বিছানায় রোগীর এক লোক ক্রমাগত শব্দ করে নাক ঝাড়ছে। মাঝেমধ্যে এর ওর দিকে তাকিয়ে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চাটছে। দেখলেই গা গুলিয়ে ওঠে।

মহিউদ্দিন সাহেব বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে বসে রইলেন। হাবিব খাবার নিয়ে ঢুকলো একটার পর। নাইমাও এসেছে। কনক বলল, “কি এনেছিস?”

“দেশি মুরগি বাচ্চা দিয়ে লাউয়ের তরকারি, পাবদা মাছ ভাজা। ভাবী এক বোতল দুধ গরম করে দিয়েছে। রোহানকে দিতে বলেছে।”

কনক মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আনিস বলল, “ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট আনতে বলেছিলেন। আমি যাই, ওদিকটা দেখে আসি।”

নাইমা মাত্রই বসেছিল। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমিও যাব।”

মহিউদ্দিন সাহেব সরু চোখে তাকলেন। নাইমা সেদিকে গুরুত্ব দিলো না। আনিসের পেছনে বেরিয়ে গেল। কনক বলল, “আব্বা, রোহানকে একটা ভালো ডাক্তার দেখালে হয় না? এই জায়গা আমার কাছে ভালো ঠেকছে না।”

“দেখানো যায়। কোথায় দেখাবে?”

“বিভাগীয় শহরে নিয়ে যেতে পারলে সব থেকে ভালো হয়। এখানে আর কিছুদিন থাকুক। তারপর না হয় নিয়ে যাব। আপাতত যদি একটা কেবিনের ব্যবস্থা করে দিতেন।”

“সমস্যা নেই। কতৃপক্ষের সাথে কথা বলছি।”

শরিফা বেগম হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। উজ্জ্বল গলায় বললেন, “কেবিনে গেলে নিজেরা নিজেরা থাকা যাবে। কনক একটা কাজ কর। রোহানকে খাইয়ে দে। ডাক্তার সাহেবের কাছে শুনে নিয়েছিলাম- সব খাবার খেতে পারবে।”

কনক খাবার-দাবার দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেল। হাবিব বলল, “আমাকে যেতে হবে। কাজ আছে।” বলেই বেরিয়ে গেল।

নাইমা আনিসের পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে। আনিস চেয়ার টেনে আর একটু কাছে এগিয়ে এলো। নিচু গলায় বলল, “কি বলতে চাও?”

“আমার কথার কি ভাবলেন?”

“দেখ নাইমা, তোমার বয়স অল্প। জীবনের দীর্ঘ সময় বাকি পড়ে আছে। এখন এসব ঝামেলায় না জড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”

“মেয়ে মানুষ বুদ্ধিমতী হয় দুলাভাই। তাছাড়া অল্প বয়সে সফল হলে দোষের কি? এসব কথা থাক, কি ভাবলেন সেটা বলুন।”

“এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছি না। জিনিসগুলো ফেরত দিয়ে দাও। তোমার ভালোর জন্যই বলেছি।”

“আপনি কবে থেকে আমার ভালো ভাবতে শুরু করলেন?”

“ধরে নাও এই মুহুর্ত থেকে। যা বলছি শোনো। আশা করছি এই ব্যাপারটা তোমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।”

“এখনও আছে। তবে কতক্ষণ থাকবে সে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। প্রস্তাবে রাজি না হলে আমিও অন্যরকম ভাবতে বাধ্য হব।”

আনিস ভ্রু কুঁচকে ফেলল। কর্কশ গলায় বলল, “কি করবে তুমি?”

“অনেক কিছুই করতে পারি। যেমন ধরুন পুলিশের কাছেই বলে দিতাম।”

“ভুল করো না নাইমা। কথা শোনো। তোমার যা প্রয়োজন আমি দেখব। জিনিসগুলো ফেরত দিয়ে দাও।”

“কখনোই না। কেন আপনার কথা শুনব? আমায় মে’রে ফেললেও আপনার কথা শুনব না।”

“বোকামি করছ তুমি!”

“ওই হীরে-জহরতের রহস্য আমার সাথেই ক’ব’রে চাপা পড়ে যাবে। আবার ভেবে দেখুন। গোটা লাভ হারাবেন নাকি পঞ্চাশ শতাংশ!”

নাইমা উঠে চলে গেল। মেয়েটা শান্ত ভঙ্গিতে হাঁটছে। যেন সবকিছু স্বাভাবিক। আনিস সেদিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে কানে চেপে ধরল। লোকজনের ভীড় বাড়ছে। এখানে কথা বলা যাবে না। সে একটু দূরে সরে গেল।

নববী বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করল। কথা ছিল হাবিব খুব দ্রুত ফিরে আসবে। সে আসেনি। কিছু জানায়নি পর্যন্ত। বেলা পড়ে এসেছে। সূর্য পশ্চিম আকাশে র’ক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে হাবিব বাড়ি ঢুকলো। তরল গলায় বলল, “চা বানিয়ে দাও নববী। মাথা ব্যাথা করছে। দু’টো টাফনিল খেয়েছি। কাজ হয়নি।”

নববী বিরক্তবোধ করল। তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “দু’টো টাফনিল খেয়েছ কেন? ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যে কোন ওষুধের ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষ’তিকর হতে পারে।”

“জানি। উপদেশ সবসময় অন্যের জন্য বরাদ্দ থাকে নববী। নিজের বেলায় কেউই মনে রাখে না।”

“হেয়ালি করছ কেন?”

“সত্যি কথা বললাম। এমনিতেই নানান দুশ্চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে আছে।”

“কি হয়েছে? দুলাভাই কিছু স্বীকার করেননি?”

“কখনোই করবে না। ভেবেছিলাম নাইমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবে।”

নববী ভ্রু কুঁচকে ফেলল। সরু গলায় বলল, “হয়নি?”

“এখনও পর্যন্ত না। আজ সন্ধ্যায় দেখা করতে বলেছে। সেখানেই নাকি বাকি কথা শেষ করবে।”

“কোথায় দেখা করতে বলেছে?”

“জায়গার ব্যাপারে জানা নেই। পরে জানিয়ে দেবে।”

“তোমার পুলিশ বন্ধুর সাথে কথা বলেছ?”

“থানায় গিয়েছিলাম। কথা হয়নি। কাজে ব্যস্ত আছে। পরে কথা বলে নেবে।”

“এখন আমরা কি করতে পারি?”

“সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। দেখা যাক কি হয়।”

“আমার মনে এসব পদক্ষেপ ভুল। আগেই পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।”

“হবে হয়তো। চা বানিয়ে আনবে? ভালো লাগছে না কিছু।”

নববী চুলায় চায়ের পানি চাপালো। দু’টো তেজপাতা ছিঁ’ড়ে পানিতে দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল। পানি ফুটতে শুরু করেছে। সে হাবিবের পরিকল্পনা বুঝতে পারছে না। সবকিছু জেনে-বুঝে নাইমাকে বিপদে ঠেলে দেবার মানে কি? সে কি বুঝতে পারছে না আনিস খারাপ লোক! চাইলেই নাইমার ক্ষ’তি করে দিতে পারে।

সন্ধ্যা নেমে গেছে। অন্ধকার গাঢ় হতে শুরু করেছে। আনিস রোহানের পাশে বসে ছিল। সে বলল, “সন্ধ্যায় খাবার জন্য কিছু নিয়ে আসলে মন্দ হয় না। চটপটি খাবে?”

কনক মাথা দোলালো। তার অর্থ হ্যাঁ হতে পারে আবার না-ও হতে পারে। শরিফা বেগম বললেন, “ভাজাপোড়া খেলে গ্যাস হবে। বাদাম বা ফল জাতীয় কিছু নিয়ে এসো।”

নাইমা বলল, “আমি চটপটি খাবো।”

কনক বাঁকা চোখে তাকালো। সরু গলায় বলল, “হাসপাতালের ভেতর এসব নিয়ে আসা যায় নাকি? কত মানুষজন এখানে!”

“তাহলে আমিই বাইরে গিয়ে খাবো। নিয়ে যাবেন দুলাভাই?”

“এসো। চাদর নিয়ে নাও। শীত পড়ে গেছে। বাইরে ঠান্ডা বাতাস।”

নাইমা গায়ে চাদর জড়িয়ে নিলো। সিঁড়িতে আনিস বলল, “এসব ঝামেলায় না পড়লে কি খুব বেশি অসুবিধা হতো?”

“ঝামেলা নয় অ্যাডভেন্সার মনে হচ্ছে।”

আনিস ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। নিঃশ্বাসের শোনা গেল স্পষ্ট। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। লোকজন নেই বললেই চলে। হাসপাতালের দক্ষিণ কোণার দিকে বেশ অনেকখানি জায়গা নিয়ে চটপটির দোকান। আশেপাশে চেয়ার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। আনিস দুই প্লেট চটপটি অর্ডার করল। দু’জনে গিয়ে সবথেকে কোণায় চেয়ারে বসল। অন্ধকারে কোন কিছুই পরিষ্কার দেখা যায় না। দু’জনে মুখোমুখি দু’টো চেয়ারে বসল। নাইমা বলল, “কি ভাবলেন?”

“ভাবার সুযোগ নেই। ব্যবসাটা আমার একার নয়। আমি শুধু আনা-নেওয়ার কাজ করি।”

“আপনার কথা কিভাবে বিশ্বাস করব? কি করেছেন ভুলে গেছি ভাবছেন।”

“আমি কিছুই করিনি।”

“নিজের নামে আর কত সাফাই গাইবেন? আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। আপনাকে জে’লের ভাত খাওয়াব।”

“হুমকি দিচ্ছো আমায়?”

“ঘাবড়ে গেলে হুমকিই ধরে নিতে পারেন।”

আনিস বেশ জোরালো গলায় বলল, “কেন বুঝতে চাইছ না তুমি? নিজেকে কি মনে করছ? এটা”

নাইমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আনিস তার চেয়ার ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। নাইমা অনেকখানি দূরে ছিটকে পড়ল। নিঃশব্দে দু’টো বু’লে’ট এসে আনিসের বুকে বিঁ’ধ’ল। সে ব্যাথা কুঁকড়ে উঠল। নাইমা তড়িঘড়ি করে আনিসের কাছে এসে বলল, “কি হয়েছে আপনার? ঠিক আছেন?”

ব্যাথায় বি’ষে দাঁতে দাঁত চেপে আছে আনিস। তার বুক থেকে তাজা র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। নাইমা তার গায়ে হাত রাখল। করুণ গলায় বলল, “চিন্তা করবেন না। ঠিক হয়ে যাবেন। কাছেই হাসপাতাল। সময় লাগবে না।”

আনিস নাইমার হাতে ওপর হাত রাখল। গলা টেনে বলল, “সবাই নিজের কর্মফল ভোগ করে। জীবনে অনেক খাবার কাজ করেছি, এটা তার ফল। শেষ মুহুর্তে না হয় একটা ভালো কাজ করে গেলাম।”

“এসব কি বলছেন? কি ভালো কাজ?”

“বু’লে’ট দু’টো তোমার জন্য বরাদ্দ ছিল। আমিও ম’র’তা’ম তবে সবার শেষে।”

“কে এসব করেছে? কেন করেছে?”

“আমার হাতে খুব অল্প সময় আছে। সব ঘটনা বর্ণনা করা সম্ভব নয়।”

“কিছু একটা তো বলেন।”

আনিস একপলক দূরে তাকিয়ে দেখল। একঝাঁক মানুষ দৌড়ে আসছে। পতঙ্গের মতো ছুটছে যেন। আ’গু’নের আকর্ষণ তাদের টেনে নিয়ে আসছে। হাবিব আনিসের গায়ে হাত রাখল। ব্যস্ত গলায় বলল, “এখনও বসে আছিস কেন? হাসপাতালে নিয়ে চল।”

এতক্ষণে নাইমার হুঁশ ফিরল। আলোর গতিতে ছুটে গিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগল। তিনজন লোক আনিসকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আবছা আলোয় স্পষ্ট বোঝা যায় তার বুক চুইয়ে র’ক্ত ঝরছে। হাবিব নাইমার কাঁধে হাত রাখল। বলল, “তুই ঠিক আছিস?”

নাইমা কথা বলতে পারছে না। ভয়ে তার হাত-পা অবশ হয়ে গেছে। ঠোঁট কাঁপছে ক্রমাগত।

আনিসকে মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে। ডাক্তার সাহেব বললেন, “পুলিশ না আসলে এই রোগীর গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। কেউ থানায় কল দাও। দ্রুত আসতে বলো। অক্সিজেন নিয়ে এসো। শ্বাস নিতে পারছে না।”

মধ্যে বয়সী একজন নার্স ছুটে গেলেন। তিনি কারোর নাম ধরে ডাকছেন। আনিস হাতের ইশারায় নাইমাকে কাছে ডাকল। নাইমা নিচু হতেই ফিসফিসিয়ে বলল, “সবুজ রঙের একটা ডাইরি আছে। আমার বাড়িতেই রাখা”

আনিস কথা শেষ করতে পারল না। আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রইল। হাসপাতালের সবার কানে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এমন খবর বাতাসের আগে ছড়িয়ে পড়ে। কনক ছেলেকে ফেলে ছুটে এসে আনিসের পায়ের কাছে বসে পড়ল। গলা ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “কে আমার এমন ক্ষ’তি করল? ইয়া আল্লাহ! কে করল? নাইমা, বোন, তুই তো সাথে ছিলি। দেখিসনি কে করেছে?”

নাইমা হাবিবের গায়ের সাথে লেপ্টে আসে। হাত পা কাঁপছে। সে মাথা দোলালো এবং প্রায়ই সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ল। মেঝেতে পড়েনি। হাবিব ধরে ফেলেছে। দারোগা সাহেব আসতে বেশ দেরি করলেন। তবে তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন- চিকিৎসা শুরু করো। যেন বেঁচে থাকে।

চলবে