#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
#দিপ্তী অরণ্য
পর্বঃ-০১
পাত্র হিসেবে সবচেতে অপ্রিয় স্যার কে দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো শুভ্রা। যেই স্যার কে সব চাইতে বেশি ভয় পায় যেই স্যার কে দু চোখে দেখতে পারে না তার সাথে ই কি না বিয়ে কথা চলছে শুভ্রার ভেবেই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
শুভ্রার বাবা তন্ময় সরকারের সাথে যে কাব্য স্যারের বাবার এতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তা কাব্য কখনই জানতো ই না।
কাব্যের মা সুর্বণ চৌধুরী বললেন,,, ভাই সাহেব মেয়ে তো আমাদের ভারি পছন্দ হয়েছে। আমরা চাইছি আজ ই আমরা আংটিবদল করে নেই। যদি আপনার আপত্তি না থাকে?
কি যে বলেন,, আপা আমার কোন আপত্তি মা ম/রা মেয়েটি আমার আপনার ঘরে গেলে যে ভারি আদরে থাকবে সেইটাই ভালোই বুঝতে পারছি।
কাব্যের বাবা সাজ্জাদ চৌধুরী বললেন,, শুধু আংটি বদল নয় এক কাজ করি ওদের কাবিন টা আজই করে ফেলি। ওর ইন্টার টা কমপ্লিট হলে আমরা না হয় ওকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো।
আলহামদুলিল্লাহ সেইটা হলেই ভালো হয় শুভ কাজে দেরি করতে নেই। আমার মেয়েটা ভাগ্য করে জন্মিয়েছে তাই তো আপনাদের মতো এতো ভালো পরিবার পেয়েছে।
সারা টা সময় শুভ্রা কাঠের পুতুলের মতো বসে রইলো।
এই পৃথিবীতে তারা যে বাবা ছাড়া কেউ নেই। বাবা মায়ের প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করার ফলে তাদের দুই পরিবারের কেউ ই মেনে নেয়নি তাদের তেজ্য করেছে। মা মা-রা যাওয়ার পর থেকে বাবা বড় করেছেন আদর দিয়ে স্নেহ,, যত্ন, ভালোবাসা,,মমতা দিয়ে এখন বাবার খুশিতে বিয়ে তে রাজি হয়েছে।
তন্ময় সরকার একটা ড্রাইভার পাঠায় কাজি নিয়ে আসতে। বেশ কিছুক্ষণ পর কাজি সাহেব চলে আসেন। সব নিয়ম কানুন মেনে পবিত্র কালেমা পড়ে আবদ্ধ হয় পবিত্র এক সম্পর্কে।
দু পরিবার বেজায় খুশি। শুধু খুশি না শুভ্রা কারন কাব্য স্যার কে তার একটু ও পছন্দ না। কি করে সে সারাজীবন এমন মানুষ টার সাথে সেইটা নিয়ে ভাবছে। কাব্য কে দেখে শুভ্রার প্রচন্ড রাগ লাগছে কারন কাব্য সেই যে মাথা নিচু করে বসে আছে তো আছে ই নড়ছে ও না সরছে ও না।
শুভ্রার এইখানে কোন কাজ নেই তাই সে তার রুমে গিয়ে খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশে জ্বলজ্বল করা নক্ষত্রদের দিকে। আজ থেকে তার পরিচয় বদলে গেলো সে শুধু বাবার মেয়ে না সে এখন একজনের স্ত্রী। তবে সেই মানুষ টা কে কি সে ভালোবাসতে পারবে?? এই প্রশ্ন টা বার বার তার মনে উঁকি দিচ্ছে।
চলবে।
#বাঁধিব_প্রণয়ের_বাহুডোরে
পর্বঃ-০২
#দিপ্তী অরণ্য
কলেজের গেট টা পেরিয়ে যেইনা শুভ্রা ক্যাম্পাসে পা দিলো ঠিক সেই সময় শুভ্রার ফ্রেন্ড অনীক,, ফারাবী আর রিমি ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। হুট করে চলার পথে মানুষ সামনে এসে পড়াতে শুভ্রা ক্ষানিক টা হকচকিয়ে গেলো। সামনে ওর বন্ধুদের দেখে স্বস্তি পেলো। ওদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো তোরাও না যদি আমার হার্ট এট্যাক হয়ে যেতো তখন কি করতাম??
রিমি বললো,,আচ্ছা সরি আসলে তোকে দেখে অনেক ডেকেছিলাম কিন্তু শুনিস নাই তাই এমন হুট করে সামনে চলে আসলাম। আয় ক্যান্টিনে গিয়ে বসি।
হুম চল আমার প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে বাসা থেকে খেয়ে আসিনি এখন খাবো।
তাহলে চল।
বন্ধুরা মিলে ক্যান্টিনে গেলো। ওরা খাবার অর্ডার দিলো।
শুভ্রা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো তারপর বললো,, কাল আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এই কথা টা শুনে অনীক,,ফারাবীর,,রিমির চোখ বড় বড় করে ফেললো তারপর তিনজন একসাথে চিৎকার করে বলে উঠলো কিহ্??
উফ্ফ এতো জোড়ে চিৎকার করছিস কেনো? তোরা তো জানিস ই বাবা আমার জন্য পাত্র দেখছিলো। কাল দেখতে এসে একেবারে কাবিন করে রেখেছে ইন্টার টা শেষ হলে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।
অনীক বললো,, মিষ্টি খাওয়া।
ফারাবী বললো,,, চুপ ব্যাটা কিসের মিষ্টি ভোজ হবে।
রিমি বললো,, তোরা চুপ করবি তোদের খাওয়া ছাড়া কি কোন কথা নাই। এই শুভ্রা বলতো তুই কে সেই ব্যক্তি দেখতে কেমন?
শুভ্রা হতাশের সুরে বললো চিনিস তোরা সে হলো আমাদের সবচেয়ে অপ্রিয় টিচার কাব্য চৌধুরী।
এই কথাটি তে ওদের মাথা বাজ পড়লো।
তিনজন ই বললো দোস তুই শেষ। এই হিটলারের সাথে সংসার করবি কি করে??
জানিনারে। এই টেনশনে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। শুধু বাবার জন্য রাজি হয়েছি আর কিছুই না।
রিমি বললো,, বদ দে বুইন। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।তুই লেখাপড়াতে মন দে। ওদের কথার মাঝে খাবার চলে এলো। সবজী ভাজি আর পরোটা।
ওরা খাচ্ছে।
ঠিক সেই সময়ে কাব্য চৌধুরী তার বাইক নিয়ে কলেজের ভিতরে প্রবেশ করে। সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে।
রিমি শুভ্রাকে বললো দোস তোর জামাই আইছে।
শুভ্রা রিমি মাথায় গাট্টা মেরে বললো চুপচাপ খাওয়াতে মন দে ফাজিল।
কাব্য আর কিছু কলিক মিলে ওনারও ক্যান্টিনে গেলো।
কাব্যের সাথে চোখাচোখি হলো শুভ্রার। শুভ্রা সাথে চোখ নামিয়ে ফেলে।
শুভ্রাদের খাওয়া শেষ। ফারাবী গেলো বিল দিতে। এইদিক অনীক আর রিমি ঠোঁট চেপে মিটমিট করে হাসছে। শুভ্রা কিছুক্ষণ পর পর ওদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাচ্ছে।
ফারাবী এসে চেয়ার টেনে বসে বললো হইছে তোদের ওকে ক্ষ্যাপানো বন্ধ কর।
শুভ্রা দিকি বার বার তাকাছে কাব্য। হঠাৎ ই পিছনে বসা দুইটি ছেলেদের কথা শুনে ফেললো ওরা বলাবলি করছে যে সাদা ড্রেস পড়া মেয়েটি কে দেখেছিস,,, কি হ/ট দেখতে। গলার তিল টা খুব জোশ। ইচ্ছে তো করছে উফ্।
এইরকম একটা বাজে কমেন্ট শুনে মূহুর্তে রেগে গেলো কাব্য রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।
শুভ্রা রিমিকে বললো,, দোস তোরা থাক আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি বলে চলে গেলো।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতেই হুট করে হাত টেনে কেবিনের ভিতর নিয়ে গিয়ে দরজা টা লক করে দিয়ে শুভ্রা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো কাব্য। শুভ্রা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
লুক এট মি মিসেস. কাব্য চৌধুরী। শুভ্রা জামার দুই সাইড মোট করে চোখ মুখ খিঁচে আছে। শুভ্রা একদম আমাকে রাগাতে বাধ্য করবি না। খুল চোখ।
ভয়ে ভয়ে চোখে তাকালো কাব্যের চোখে। অসম্ভব লাল হয়ে আছে। দেয়াল থেকে এক হাত নামিয়ে শুভ্রার গাল দুটো চেপে ধরে বললো,,, কলেজে পড়তে আছিস না ফ্যাশন করতে। এই তোর কলেজ ড্রেস কই,, এই তোর ড্রেসের এই অবস্থা কেনো হে,, ওড়না টা ঠিক মতো পিন আপ কেন করিস নেই,,, এই ফিটিং জামা,,, গলার নিচে তিল দিখিয়ে ছেলেদে সি/ডি/উ/স করছিস। থাপ্পড় চিনিস থাপ্পড় দিয়ে দাঁত কপাটি খুলে ফেলবো।
শুভ্রা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
এই চুপ একদম কাঁদবি না। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ এতো কিছু বলি নাই কারন অধিকার ছিলো না এখন অধিকার আছে। আর আমার সম্পদ এর দিকে কেউ তাকাক আমার পছন্দ না। ভুলে যাবিনা তুই একজন বিবাহিতা স্ত্রী। এখন থেকে কলেজ ড্রেস,,,মাথায় হিজাব বেঁধে তারপর আসবি। নয়তো তোর খবর আছে।
শুভ্রা ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদতে নিলে কাব্য এক সেকেন্ড দেরি না করে কাব্যের ওষ্ঠ যুগল মিলিয়ে দিলো চোখের পলকে।
শুভ্রা তো মূহুর্তে ফ্রিজ হয়ে গেলো। ও কি প্রতিক্রিয়া দিবে সেইটা ভুলে গেলো। কিছুক্ষণ পর কাব্য ঠোঁটা ছেড়ে দিলো।
কাব্য শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বললো,, এমন বড় বড় চোখ করে তাকার কিছু নেই। আমরা স্বামী স্ত্রী আমাদের মাঝে কত কিছু হবে। আর এইটা তো সামান্য মৃদু র্স্পশ। নিজেকে প্রিপিয়ার করো আমার অতি মিষ্টি বৌ। বাই দা ওয়ে তোমার ঠোঁটের টেস্ট টা কিন্তু অমৃত। যাও এখন। এইখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আরো কিছু অঘটন ঘটবে।
শুভ্রা আর দেরি না করে কেবিনের দরজা টা খুলে দৌড়ে বের হয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে ওর ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেয়।
চলবে,,,,