#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
পর্বঃ-০৪
#দিপ্তী অরণ্য
লিভিং রুমে বসে আড্ডায় মেতে উঠেছে শুভ্রা,, কাব্যের মা ও বাবা। কথায় কথায় কাব্যের মা জিজ্ঞেস করলো,, আচ্ছা মা তোমার কি পিঠে পছন্দ আর কি খেতে পছন্দ?
আমার তো পাটিসাপটা আর ভাঁপা পিঠা পছন্দ। আর মাংস আর খিচুড়ি একসাথে মিক্স যে রান্না করে না ওটা আমার পছন্দ।
ঠিক আছে আজকের দুপুরে এইটাই রান্না করবো। কাব্যের বাবা তুমি যাও তো অফিসে যাও। আর সন্ধ্যায় ফিরবে আমরা তিন জন মিলে লুডু খেলবো।
শুভ্রা খুব খুশি হয়ে বলে উঠে ইয়ে।
শুভ্রা মা তুমি অনেকক্ষণ হয়েছে এসেছো যাও রুমে গিয়ে রেস্ট করো।
মা আমি আপনার সাথে রান্না ঘরে থাকি।
না একদম ই না তুমি রুমে যাবে রুমে গিয়ে রেস্ট করো। যদি দরকার হয় ডেকে নিবো।
আচ্ছা ঠিক আছে বলে শুভ্রা রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ফোনে গেইমস খেলতে খেলতে কখন যে সে ঘুমিয়ে যায় বুঝতে ই পারে নি।
কাব্যের মা রান্না ঘরে কাজ করছেন। চাল ডাল ধুয়ে নিয়ে তারপর মশলা টা মিক্সারে মিক্স করে নিলো। সুন্দর করে পেঁয়াজ কুঁচি করে নিলো। সব কিছু ঠিকঠাক করে তারপর চুলায় রান্না বসালো।
_______________
শুভ্রা ক্লাসে নেই বলে কাব্যের কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ক্লাসে কেমন যেনো উদাস উদাস ভাব।
কাব্য অনেক কষ্টে নিজের মন কে ধাতস্থ করে তারপর পড়ানো তে আবার মনোযোগ দিলো। পড়াতে পড়াতে একটা ঘন্টা কেটে গেলো। বেল বাজাতে কাব্য ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে শুভ্রার নাম্বারে কল করলো।
হঠাৎ তীব্র রিংটোন এর শব্দে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো চোখ মুখ কুঁচকে ফোনটা বালিশের সাইডে থেকে নিয়ে রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো কে??
আমি তোমার জামাই। কি করো?
ঘুমাছিলাম।
বাহ্ ম্যাডাম তাহলে ঘুমাছিলেন। আমি কি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলাম। সরি মিসেস.কাব্য চৌধুরী আমার ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দিবেন।
শুভ্রা ঘুমে ঘুমে বলে হুম হুম।
ঠিক আছে ম্যাডাম আপনি ঘুমান আমি যাই আর শুনোন দুপুরে ঠিক মতো লাঞ্চ করে নিবেন বলেই ফোন টা কেটে দিলো অথচ শুভ্রা শুনলোই না কান থেকে ফোন টা কখন সড়ে গেলো শুভ্রা আবার গভীর ঘুমের অতলে গহ্বরে তলিয়ে গেলো।
শুভ্রা ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ১ টা বেজে যায়। রুম থেকে বের হয়ে কিচেন রুমে গিয়ে দেখে কাব্যের মা নেই তাই কাজের মেয়ে টি কে বললো,, খালা মা কোথায়??
ওহ্ আফা তো রাইনধা শেইষ কইরা। গোসল করতে গেলো।
ওহ্ আচ্ছা।
শুভ্রা সোফাতে বসে টিভি দেখছিলো সেই সময় কাব্যের মা রুমে থেকে এসে বললো,, শুভ্রা মা এসো আমরা খেয়ে নেই।
শুভ্রা গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। শুভ্রার পাশেই কাব্যের মা বসলো তারপর ওরা খাওয়া দাওয়া করে। মুভি দেখতে বসলো।
চলবে,,
#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
পর্বঃ -০৫
#দীপ্ত অরণ্য
রাত দশটা বেজে যাচ্ছে শুভ্রা এখনো ঘরে আসছে না বলে কাব্য রুমে পা চারি করছে। অবশেষে না পেরে কাব্য গেলো তার মা বাবার রুমে গিয়ে দেখে শুভ্রা গল্পের মশগুল। কাব্য একটু কেশে তার উপস্থিত বুঝালো। কাব্যের কাশি শুনে সবাই দরজার দিকে তাকালো তাকিয়ে দেখলো কাব্য দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য রুমে ঢুকে বললো,, কি করো তোমরা রাত কয়টা বাজে দেখেছো ১০ টা বাজে। যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
কাব্যের বাবা বললো,, তা তোমার সমস্যা কি তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
ঘুমাবো কি করে আমার বউ নামক বিলাইয়ের বাচ্চা টা কে তো তোমাদের কাছে রেখে দিছো এখন আমার বিলাইয়ের মতো নরম তুলতুলে বাচ্চা বউ টা কে ছাড়ো।
কাব্যের এমন কথায় ওর বাবা মার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আর বেচারি শুভ্রা লজ্জায় রাঙা হলো।
কাব্যের বাবা একটু কেশে বললো,, শুভ্রা আমাদের সাথে ই থাকবে তুমি বরং ঘুমিয়ে পড়ো।
কাব্য বললো,, তওবা তওবা আস্তাগফিরুল্লা বউ থাকতে এক কেনো ঘুমাবো। বউ ছাড়া একা ঘুম আসবে না।
কাব্যের বাবা ফের বললেন,,, তা এতো দিন তো বউ ছাড়া ঘুমাইছো। আজ পারবে না। বউ দিয়ে কি কাজ যাও ঘুমাতে যাও।
ছিহ্ ছিহ্ বাবা এইটা তুমি কি বললে,, এতো দিন না হয় বউ ছিলো না তাই একা ছিলাম কিন্তু এখন তো বউ আছে তাই আমার বিলাইয়ের বাচ্চা মতো নরম তুলতুলে বউ কে নিয়ে ঘুমিয়ে যাবো। আর বউ কে কি কাজে লাগবে মানে। প্রতিদিন মা কে তোমার যেই কাজে লাগে আমার বউ কে ও সেই কাজে লাগবে।
শুভ্রা তো পারে না লজ্জায় মাটিতে মিশে যায়। ইশ কি একটা অবস্থা।
কাব্যের বাবা বললো,, আমার ভুল হইছে বাপ তুই যা তোর বউ টা রে নিয়া যায়।
কাব্য শুভ্রার হাত টা টেনে কাব্যের কাছে এনে তারপর পাঁজাকোলে করে নিয়ে যাচ্ছে। আর যেতে তার বাবার দিকে তাকিয়ে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে,, গুড নাইট বলে চলে যাচ্ছে। ওর ভাব টা এমন যেনো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।
শুভ্রা কে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে বললো,,, তোমার দশ টা পাঁচ টা একটা মাত্র বর। কোথায় কাজ করে এসেছি খুঁজ খবর নিবা আমার আশেপাশে ঘুর ঘুর করবা তবেই না বুঝবো আমার ঘরে বউ আছে। বউ বউ ফিলিংস হবে। তা না করে মা বাবার রুমে গিয়ে বসে আছো। এখন এক কাজ করো যাও ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে এসো আমি জায়নামাজ টা বিছিয়ে নেই।
শুভ্রা কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললো কিসের নামাজ এখনো??
এমা মুসলমান হয়েছো আর এইটা জানো না দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নিবো। যাও এখন গো ফাস্ট।
শুভ্রা বসা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলো ততক্ষনে কাব্য জায়নামাজ বিছিয়ে নিলো। শুভ্রা আসতে কাব্য ও গেলো ওয়াশরুমে ওযু করতে। অবশেষে ওযু করে এসে দুই জন নামাজে দাঁড়ালো।
নামাজ শেষ করে কাব্য জায়নামাজ টা গুঁছিয়ে নিয়ে বিছানায় বসলো। শুভ্রা কে ডেকে বসিয়ে শুভ্রার কোলে মাথা রেখে বললো,, একটু টিপে দেও তো।
শুভ্রা তার হাত দিয়ে মাথা টিপে দিচ্ছে। শুভ্রার নরম হাতের স্পর্শে কাব্যের শরীরে যেনো কারেন্ট খেয়ে গেলো। কাব্য চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাঃস নিয়ে বললো,,, তোমাকে কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শুনবা।
শুভ্রা ছোট করে বললো হুম।
❝জানো শুভ্রা আমার জীবনে তোমার আগমন টা ছিলো শীতের আকাশের ঘণ কুয়াশার মতো।
প্রথম দেখায় থমকে গিয়ে ছিলো হৃদস্পন্দ
শিশির যেমন আকাশ থেকে বৃষ্টি ন্যায় পতিত হয়ে সবুজ অরণ্য কে ভিজিয়ে দিয়ে। তার লাবণ্য আরো তুলে ধরে। আমিও ঠিক তেমনই তোমার ভালোবাসার শিশিরে মতো করে ভিজে দিয়েছে আমার মন কে। ধীরে ধীরে আমি তোমাতে আসক্তি হচ্ছি
শুভ্রা তুমি কি জানো এই কাব্য তোমার প্রেমে উম্মাদ হয়ে যাচ্ছে। ❞
তুমি কি জানো শুভ্রা,,তোমাকে #বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে।
তুমি কি আরো জানো শুভ্রা,, স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক টা আল্লাহ্ দেওয়া এক বিশেষ রহমত। স্বামী যদি স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তখন আল্লাহ্ খুব খুশি হয় এবং তার জন্য নেকি লিখে রাখেন।
জানো শুভ্রা তুমি আমার হৃদয়ের রানী। আমি চাই আমাদের সম্পর্ক টা এগিয়ে নিয়ে যেতে আমি চাই আমাদের সম্পর্ক পূর্ণতা পাক। আমরা যত কাছে আসবো তত একের অপরের প্রতি টান বাড়বে আর্কষণ ফিল করবো। আজ মিলন হোক কাব্যের আর শুভ্রার। দুই আত্মা দুই দেহ মিলেমিশে হোক একাকার। তুমি কি বলো?
শুভ্রা চুপচাপ ছিলো। কোন কথা বলছে না কাব্য শুয়া থেকে উঠে শুভ্রার থুতনি টা ধরে উঠিয়ে বললো,, নীরবতাই কিন্তু সম্মতির লক্ষণ। কাব্য শুভ্রার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। তারপর পকেটে থেকে একটা আংটি বের করে শুভ্রার আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে। হাতে ছোট করে চুমু দিয়ে। তারপর শুভ্রা কে শুইয়ে দিয়ে শুভ্রার শরীর থেকে ওরনা টা ফেলে দিলো। শুভ্রার উপর কাব্য তার ভর টা ছেড়ে দিয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো।
কাব্য মেতে উঠলো শুভ্রাতে। কাব্য আর শুভ্রা ভালোবাসার এক অন্য জগৎ এ হারিয়ে গেলো।
চলবে,,,