#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
পর্বঃ-০৯
#দিপ্তী অরণ্য
অন্ধকার রুমে কাব্য বসে আছে। আর শুভ্রা শুয়ে আছে বিছানায় অচেতন অবস্থায়। কাব্য চোখ বন্ধ করে আসল রূপে আসলো সাদা কালারের বিশাল আকৃতির একটা সাপ আর সেই সাপের পিঠের উপর দুটো বড় ডানা চোখ দুটো গাঢ় নীল। কাব্য তার লম্বা জিহ্বা বের করে শুভ্রার ঠোঁটে লাগালো। শুভ্রার সব বিষ হরন করছে কাব্য। অবশেষে হরন করা শেষ হলে সে তার মানুষ রূপ ধারণ করে। আয়নার ভিতর দিয়ে ওদের রুমে প্রবেশ করে জেসিকা আর সাকিব। সাকিব কাব্যের কাছে এসে বললো,, ঠিক আছিস তুই?
কাব্য মাথা নেড়ে হা বললো।
জেসিকা ওকে একটা ঔষধ দিয়ে বললো,, এই আংটি টা পড়ে নে আর এই ঔষধ টা শুভ্রা কে খাইয়ে দিস। আগমী আমাবস্যা আগে তুই বা শুভ্রা ঘর থেকে বের হবি না। তোর পাওয়ার কিন্তু কম। আমাবস্যার পর তোর পাওয়ার টা বাড়বে।
সাকিব বললো,,, একটা কথা বুঝতে পারছি না শুভ্রার সুরক্ষা বলয় নষ্ট হলো কি করে??
খুব সিম্পল আমাবস্যা পর্যন্ত ওদের শক্তি বেশি থাকবে। আর আমাবস্যা পর থেকে আমাদের। আর কাব্য তুই কিন্তু আমাদের রাজ্যের রাজা। তোর পাওয়ার কম মানে আমাদের পাওয়ার ও কম। আর ওদের নজর এখন শুভ্রার উপর।
মূহুর্তে কাব্য রেগে হুংকার দিয়ে বললো,,, আমি কাব্য চৌধুরী যত দিন বেঁচে থাকবো ততদিন শুভ্রার কোন ক্ষতি হতে দিবো না।
জেসিকা বললো,, আমি তোর বাড়ির চারপাশে সুরক্ষার বলয় তৈরি করে দিয়েছি। জানিনা কত টুকু কাজে আসবে। ওদের ব্লাক ম্যাজিক টা কেটে গেলেই তোর সম্পূর্ণ শক্তি ফিরে পাবি। আর কেউ তোকে হারাতে পারবে না।
সাকিব বললো,,, চল এখন আমরা যাই। আমাদের সময় হয়েছে যাওয়ার। কাব্য শুভ্রা কখন উঠবে? বিষের প্রভাব তো কেটে গেছে উঠছে না কেনো?
ওর মস্তিষ্ক ক্লান্ত তাই ঘুমের অতলে হারিয়ে গেছে গভীর রাতে উঠবে।
ওহ্ আচ্ছা। এই জেসিকা তারাতাড়ি চল আমরা চলে যাই।
জেসিকা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে কাব্য থেকে বিদায় নিয়ে আয়নার ভিতরে ঢুকে চলে গেলো। ওরা চলে যেতে কাব্য তপ্ত শ্বাঃস ফেলে শুভ্রার দিকে তাকালো। এই মূহুর্তে কাব্যের লম্বা একটা শাওয়ার এর দরকার। কাব্য আলমারি থেকে জামা কাপড় নিয়ে শাওয়ার এ ঢুকলো। লম্বা একটা শাওয়া নিয়ে এসে। শুভ্রার পাশে শুয়ে পড়লো শুভ্রাকে জাপ্টে ধরে। তারপর শুভ্রার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। শুভ্রার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ালো। সারাদিনের ধকলে কাব্য ঘুমিয়ে পড়লো।
মধ্য রাতে শুভ্রার ঘুম ভেঙে যায় তারপর হাত মাথায় চেপে ধরে। মাথা টা যন্ত্রণা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আস্তে ধরে উঠে যেতে টান লাগলো চুলে। মাথা টা একটু উঁচিয়ে দেখলো কাব্যের শার্টের বোতামের সাথে চুল টা পেঁচিয়ে রয়েছে। শুভ্রা ধীরে হাতে চুল টা খুলতে নিলে কাব্য থপ করে চোখটা খোলে বললো,, ছিহ্ বউ আমার ঘুমানোর সুযোগ নিচ্ছিলে কেমন গো একটুও দয়া মায়া হয় না তোমার। ছিহ্ নিরীহ একটা ছেলের ইজ্জত লুটে নিচ্ছো।
তাজ্জব বনে গেলো শুভ্রা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো কাব্যের দিকে। শুভ্রা মুখ ভেঙ্গিয়ে বললো,, এ্যাঁ খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আমার আমি আপনার ইজ্জত লুটে নিবো বরং উল্টো টা হয় আপনি প্রতিদিন লুটে নেন আমায়। আমি মরি আমার ব্যথায় প্রচন্ড মাথায় ব্যথা হচ্ছে মনে হচ্ছে যন্ত্রণায় মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে যাবে। কাব্য দ্রুত শুভ্রার চুলগুলো তারাতাড়ি ছুটিয়ে দিয়ে তার বেড সাইড ট্যাবিলের ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দিয়ে টেবিল থেকে একটা তরল মেডিসিন টা বের করে দিয়ে বললো,,, এইটা খেয়ে নেও ঠিক হয়ে যাবে।
শুভ্রা কোন প্রশ্ন ছাড়া ই খেয়ে নিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে বললো,, ওয়ার্ক কি তেঁতো।
এইটা তেঁতো ই হবে। এখন শুয়ে পড়ো আস্তে ধীরে শরীরে শক্তি পাবে। শুভ্রা চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো কাব্য একটা বাটিতে তেল নিয়ে শুভ্রার চুলে মাখিয়ে দিচ্ছে। শুভ্রা আরামে চোখ বন্ধ করে আছে। যখন কাব্য বুঝলো শুভ্রা ফের ঘুমিয়ে পড়লো তখন চুল টা বেঁধে দিয়ে তেলের বাটি টা রেখে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে বেড সাইড বাতিটা নিভিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।
চলবে
#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
পর্বঃ-১০
#দিপ্তী অরণ্য
অনেক ঝড়ঝাপটা দিয়ে দুটো দিন কেটে গেলো। এই দুটো দিন কাব্য একটু ও শান্তি পাইনি। চোখের সামনে ঘটেছে অনেক অদ্ভুত ঘটনা। এই দুটো দিন যেমন কাব্য এর কাছে একটা ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ ছিলো। সব থেকে বেশি ভয় পেয়েছিলো শুভ্রার জন্য। এই দুইন শুভ্রা কে নিয়ে ছিলো। আজ সেই মহেন্দ্র দিন আজ কাব্য তার সব শক্তি ফিরে পাবে ঠিক রাত তিনটা। তারপর সে প্রতিশোধ নিবে। সবচেয়ে র্নিদয় প্রতিশোধ কাব্য যখন এইসব কথা ভাবছিলো ঠিক তখনই শুভ্রা গোসল করে বের হয় ভেজা জামা কাপড় মেলতে বেলকনিতে যেতে নিলে কাব্য বাঁধা সেঁধে বলে উঠলো,, শুভ্রা তোমায় বেলকনিতে যেতে হবে না। তুমি বরং আমার জন্য একটু খাবার বারো প্রচুর ক্ষিধে পাচ্ছে।
কিন্তু ভেজা জামা কাপড়
আমি আছি তো ভেজা জামা কাপড় মেলে দিবো।
আপনি?
তো কি হইছে আমার বউ এর জামা কাপড় আমি মেলবো তাতে কার বাপের কি? যাও খাবার বেরে দেও।
শুভ্রা চুপচাপ কিচেন রুমে চলে আসলো। আর এই দিকে কাব্য বেলকনিতে এসে শুভ্রার জামা কাপড় মেলে দিতে দেখলো একটা কালো হুডি পড়া একটা যুবক দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু চোখ দুটো ভিষণ কালো। কাব্য ভয় পায়নি বরং কাব্য চোখ বন্ধ করে চোখ রং পাল্টে নীল চোখ করে সেই লোকটি কে তার বিষাক্ত দুই মাথার জিহ্বা বের তাকে শাসায়ি তারপর ওখান থেকে রুমে এসে বারান্দার দরজা টা ভালো করে বন্ধ করে দেয়। তারপর নিচে নেমে এসে দেখে শুভ্রা খাবার বেরে বেরে নিয়ে আসছে কিচেন রুম থেকে। কাব্য চেয়ারে টেনে বসে বললো,, আজ কি কি রান্না করেছো?
শুভ্রা একটু হেঁসে বললো,, মাছ ভাজা,, সবজি,, ডাল আর ভাত।
ওহ্ আচ্ছা।
ম্যানু পছন্দ হয়নি?
হয়েছে হবে না কেনো। বসো খাওয়া শুরু করি।
হুম বলে শুভ্রা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। শুভ্রা যখন এক লোকমা মুখে দিয়ে খাবার চিবুচ্ছে ঠিক তখনই কাব্য শুভ্রার পা এর উপর নিজের পা দিলো। খাওয়ার সময় আকস্মিক বরফ এর মতো ঠান্ডা কিছু পেতেই শুভ্রা ও মাগো বলে চেয়ার ছেড়ে এক লাফে উঠে পড়লো। শুভ্রার অবস্থা দেখে কাব্য ঠোঁট চেপে হেঁসে বললো,, কি হয়েছে?
হঠাৎ পা এর মধ্যে ঠান্ডা কিছু পড়লো। মনে হলো যেনো বরফ এর টুকরো।
আরে দূর এইটা তোমার মনের ভুল।
শুভ্রা ছোট ছোট চোখ করে কাব্যে দিকে তাকিয়ে বললো,,, এই এইটা আপনার কাজ না তো। আজ কাল দেখি আপনার শরীর ঠান্ডা থাকে।
সবসময় আমাকে কেনো আসামী বানাও।
ওমা স্বামী মানে ই আসামী। কারন স্বামী দের মনে মনে একশো টা প্যাঁচ থাকে।
চুপচাপ খেতে বসো।
শুভ্রা চেয়ার ঠিক করে খেতে বসলো। তারপর শুভ্রা কাব্য এর দিকে তাকিয়ে বললো,, এই আপনার মতলব টা কি?
আমার মতলব হচ্ছে,, খাওয়া দাওয়া শেষ করে বউ কে নিয়ে উড়া ধুড়া রোমান্স করা।
ছিহ্ দিন কে দিন আপনি অ”স”ভ্য হয়ে যাচ্ছেন।
আজকে তোমাকে অ”স”ভ্যের লেভের দেখাবো বেবী। বেবী আমার খুব কুল কুল লাগছে একটু হট হট বানিয়ে দেও না বলে কাব্য শুভ্রা কে চোখ মারলো। আর শুভ্রা বড় বড় চোখ করে কাব্য দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খাবার খাচ্ছে। শুভ্রার দিকে না তাকিয়ে কাব্য বললো,, বেবী আমার A to Z তুমি পরে ও দেখতে পারবে আগে খেয়ে নেও। নয়তো পরে আবার কাহিল হয়ে পড়বে। শক্তি নেই বলে এক ইঞ্চি ও ছাড় পারবে না। মূহুর্তে শুভ্রার কাশি পেলো,, খুঁক খুঁক করে কেশে দিলো। কাব্য দ্রুত শুভ্রা কে পানি দিলো। শুভ্রা পানি খেয়ে বললো আর একটা কথাও যদি বলেন আই প্রমিস আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো। চেহারা সুরত তো মাশা-আল্লাহ ভদ্র কিন্তু কথা বর্তা আস্তাগফিরুল্লা ক্যা?
কাব্য কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে পড়লো। আর শুভ্রা খাওয়া শেষ করে সবকিছু কিছু গুঁছিয়ে রুমে গেলো। শুভ্রা রুমে যেতে কাব্য ও টিভি অফ করে রুমে চলে গেলো। শুভ্রা সবে মাত্র কম্বল টেনে শুলো। শুভ্রা কিছু বুঝে উঠার আগেই কাব্য শুভ্রার উপরে শুয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলেয়ে দিলো। শুভ্রা কাব্য কে সাড়াতে চাইলে কাব্য শুভ্রার ওরনা নিয়ে হাত দুটো খাটের সাথে বেঁধে দিয়ে বললো রোমান্সের সময় ডির্স্টাব আমার একদম পছন্দ না সুইটহার্ট। জাস্ট ফিল মাই টার্চ বেবী কথা টা বলে ঘাড়ে শুভ্রার ঘাড়ে নাক ঘষলো তারপর আস্তে আস্তে ঠোঁটা ডিপলি ছোঁয়া দিচ্ছে। আস্তে আস্তে তারা ভালোবাসার অতল গহ্বরে তলিয়ে গেলো।
——————–
শুভ্রা কাব্যের বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তখন সবে মাত্র সন্ধ্যা ৬ টায়। কাব্যের ঘুম অনেকক্ষণ আগেই ভেঙ্গেছে তাও শুইয়ে রয়েছে যাতে করে শুভ্রার ঘুম না ভাঙ্গে। যখন ৬ঃ৩০ বাজে তখন কাব্য শুভ্রার ঘুম ভাঙ্গায়। শুভ্রা বেশ দুর্বল হয়ে গেছে। কাব্য শুভ্রার দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাঃস ফেলে বিছানা থেকে নেমে যায়। শুভ্রা শুয়ে ই থাকে। কাব্য ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যায়। তারপর দুধের বোতল থেকে দুধ ঢেলে চুলায় বসায়। দুধ গরম হতে কাব্য দুটো গ্লাসে দুধ ঢালে শুভ্রা কে যেই দুধের গ্লাসে দুধ দিবে কাব্য সেই গ্লাসে তার চোখের সাহায্যে একটা আলো দিয়ে একটা ওষধ মিশিয়ে নিয়ে যায় রুমে। তারপর শুভ্রাকে ডেকে তুলে ওই দুধের গ্লাস টা দিয়ে বললো এইটা খেয়ে নেও বেটার ফিল করবে।
শুভ্রা ছোট করে হুম বলে হাতে নেয়। কাব্য ও তার জন্য আনা দুধের গ্লাস টুকু নিয়ে খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষ হতে কাব্য শুভ্রাকে বলে যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও।
হুম যাচ্ছি বলে উঠতে নিলে শুভ্রা মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলে কাব্য ধরে নেয়। কাব্য কোন কথা না বলে শুভ্রা কে কোলে নিয়ে ওয়াশ রুমে যায় তারপর শাওয়ার এর নিচে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ভিতরে এসে একটা টপস আর জিন্স নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে শুভ্রা কে চেঞ্জ করে দিয়ে আবার কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফোন চালায়। সময় যখন ৮ টা তখন কাব্য শুভ্রা কে তন্দ্রা বিষ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে একটা সুরক্ষা কক্ষে শুভ্রাকে নিয়ে আসে। এইটা এমন একটা ঘর যেইখানে জানালা বা আয়না কিছুই নেই। চাইলেও কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। কাব্যে তাদের রাজ্যে যেতে হবে। আজ তার শক্তি পাওয়ার দিন। তাই সে সেই শক্তি পেতে তাদের রাজ্যে যাবে কিন্তু শুভ্রা কে তো আর এভাবে রেখে যেতে পারে না। তাই কাব্য তাকে এই সুরক্ষা কক্ষে রেখে দিয়ে যাবে। কাব্য দুজন অদৃশ্য রক্ষী রেখে গেছে যাতে তার অনুপস্থিত এ শুভ্রার খেয়াল রাখতে পারে। শুভ্রা ঘুম থেকে উঠার আগে কাব্য চলে আসবে। কাব্য যাওয়ার আগে শুভ্রার কপালে চুম্বন দিয়ে গেলো অজান্তে ই শুভ্রার ঘুমন্ত চোখে বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। কাব্য সর্নাপনে শুভ্রার চোখের পানি মুছে দিয়ে ওই রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে মায়াবী আয়না টা তে সে প্রবেশ করলো।
চলবে,,,