বাঁধিবো প্রণয়ের বাহুডোরে পর্ব-১১+১২

0
17

#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
পর্বঃ-১১
#দিপ্তী অরণ্য

কাব্য প্রবেশ করলো তার রাজ্যে। কাব্য প্রবেশ করতে ই সব সর্প মানব-মানবী কাব্য কে কুর্নিশ জানালো। কাব্য এর সামনে এসে দাঁড়ালো সাকিব। সাকিব বললো,, যাক তুই এসেছিস। শুভ্রা কোথায়?
আছে ওকে সুরক্ষিত স্থানে রেখে এসেছি। চাইলেও কেউ ওর কাছে পৌঁছাতে পারবে না।
জেসিকা এসে বললো,, তোর ক্ষমতা পেতে হলে তোকে তিনটা পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় সফল হলেই তুই তোর সকল ক্ষমতা ফিরে পাবি। আরো এক টা কথা তোকে আমি বা সাকিব কেউ সাহায্য করতে পারবো না। যা করবি বুঝে শুনে করবি। আচার্য এর কাছে তোর সব ক্ষমতা রয়েছে। আর তিনি এ ও বলেছেন তোর পরীক্ষার চলা কালীন ওনি থাকতে পারবে না। তোর পরীক্ষা টা এই রাজ পত্রের মধ্যে লেখা আছে। আর আমি আর সাকিব দাঁড়িয়ে থেকে তোর পরীক্ষা টা দেখবো।
ওদের কথার মাঝে ঘন্টা পরে গেলো। জেসিকা কব্যের হাতে একটা পত্র টা দিয়ে বললো দেখে নে এক নজর। কাব্য ওর হাত থেকে দেখে নিলো পত্রটি তারপর চোখের ইশারায় করে বললো,, ওর পড়া হয়ে গেছে ওকে পরীক্ষার স্থানে নিয়ে যেতে। মহলের শেষের দিকে একটা মাঠ সেই খানে তৈরি করা আছে অগ্নিকুণ্ড আর এই অগ্নিকুণ্ডের উপর তাকে হেটে যেতে হবে। কাব্য স্রষ্টার নাম নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে পা দিলো অগ্নিকুন্ডে। অগ্নির তাপে কাব্যের পা এ ফোঁসা পড়ে যাচ্ছে। তাও কাব্য থেমে থাকছে না সে এগিয়ে যাচ্ছে। অগ্নিরকুন্ডের উপর হেটে ওপার এ আসলো। জেসিকা আর সাকিব খুশি হয়ে বললো,, তুই প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিস।
আরো দুই টো পরীক্ষা রয়েছে। আর এই পরীক্ষা টা হলো তোকে বাজপাখির সাথে যুদ্ধ করতে হবে।
সাকিব শুনেই চমকে গিয়ে বললো বাট ও তো আমাদের শত্রু ও কি ভাবে পাড়বে?
কাব্য হেসে বললো,, সবসময় শক্তি জোড়ে নয় বুদ্ধির জোড়ের ও জিতে হয়। আমি আমার বুদ্ধির জোড়ে জিতবো বলে জেসিকা ইশারা করতে জেসিকা তাকে দ্বিতীয় পরীক্ষার স্থানে নিয়ে গেলো। সেই খানে বন্দী আছে বাজপাখি। কাব্য আসতে ই একজন রক্ষী খুলে দিলো পাখি টি কে। কাব্য ও তার সর্প রূপে আসলো। অর্ধেক সাপ আর অর্ধেক মনুষ্য রূপে। বাজপাখি টি যখন আক্রমণ করতে নিবে কাব্য ঠিক সেই সময় মুখ দিয়ে অগ্নির গোলা বের করে পাখি টির উপর ছুড়ে মারে আকস্মিক আক্রমনে পাখি টি কিছু বুঝতে না পরে অগ্নি এসে লেগে পাখি টির গা এ লাগে আর পাখিটি সেই খানে ই মারা যায় অগ্নিতে ঝলসে।
জেসিকা আর সাকিব এসে বললো,, আর একটা পরীক্ষা সেইটা হলো ওই মায়াবী পুকুরে তোকে নামতে হবে। পুকুরের নিচে যেই মহল টি আছে সেই মহল থেকে তোকে একটা বাক্স নিয়ে আসতে হবে।
সাকিব হেঁসে বললো,, আরে এইটা তো সহজ। তুলি মেরে নিয়ে আসা যাবে।
জেসিকা রাগান্বিত সুরে বললো,,, ঠাটিয়ে দিবো একটা ফাজিল বুঝোস তুই শুনতে যতটা সহজ আসলে ততটাও সহজ নয় এই মহল টা পাহারা দিচ্ছে নেউলে।
কাব্য আর সাকিব এক সাথে বলে উঠলো কিহ্??
জেসিকা অসহায় চোখে করে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,, হুম।
কাব্য বললো ঠিক আছে সমস্যা নাই। আমি নামছি বলে পানিতে ঝাঁপ দিলো৷ পানির একদম নিচে গিয়ে দেখতে পেলো এক সুন্দর মহল। মহল টা স্বর্ণ আর হিরা দিয়ে তৈরি যার কারণে চারোদিকে ঝলমলে করছে। ও যখন ভিতরে প্রবেশ করতে নিবে ঠিক তখন ই একটা নেউলে এসে কাব্য কে আঘাত করলো। কাব্য ছিটকে গিয়ে পড়লো। কাব্যে কাঁধ টা ছিঁলে গেছে। কাব্য ও ক্ষিপ্ত চোখে নেউলে দিকে তাকিয়ে সে তার বিষে ভরা জিহ্বা টা বের করে নেউলে গা এ ছোঁবল দিলো। মূহুর্তে নেউলের শরীর টা নীল হয়ে গেলো। কাব্য মহলের দরজার সামনে দেখলো একটা বাক্স। কাব্য বাক্স টি নিয়ে পুকুরের তল থেকে পুকুরের উপর উঠে আসলো জেসিকা আর সাকিব কাব্য কে জড়িয়ে ধরে বললো আমরা আবার আমাদের শক্তি ফিরে পাবো চল আর্চায এর কাছে। তিনজন মিলে আর্চাযের কাছে গেলো। আর্চায খুশি হয়ে বললো,, আমি জানতাম তুমি পারবে। তুমি গিয়ে সিংহাসনে বসো আমি এই নীল পাথর যুক্ত চেইন টা তোমার মাথায় বেঁধে দিলে তোমার সব শক্তি ফিরে আসবে। আরো একটা কথা শুনো,, যেইদিন তুমি মানব সন্তান জন্ম দিতে পারবে সেই দিন তুমি আরো একটা শক্তি পাবে। সময় চলে যাচ্ছে দেরি করে লাভ নেই যাও তুমি গিয়ে সিংহাসনে বসো।
কাব্য আচার্য কথা মতো গিয়ে সিংহাসনে বসলো তারপর আচার্য কাব্যের মাথায় নীল পাথর যুক্ত চেইন টা পরিয়ে দিতে মূহুর্তে একটা আলো বের হয়ে কাব্যের শরীরে প্রবশে করলো। কাব্যের শরীরে প্রবেশ করতে কাব্য তার শক্তি ফিরে পেলো। কাব্য শক্তি পাওয়ার পর ওর শরীরের ক্ষত গুলো ঠিক হয়ে গেলো। কাব্য শক্তি ফিরে পাওয়াতে মহলে উৎসবের আয়োজন করা হলো। কাব্য রাজা তার একটা দায়িত্ব আছে কিন্তু শুভ্রার কথা মনে পড়ছে শুভ্রার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে মন। কাব্য যেহেতু শক্তি ফিরে পেয়েছে তাহলে কাব্য দেওয়ার লকেট ও শক্তি পেয়েছে। অতএব শুভ্রা সেইফ তাও চোখের দেখা না দেখলেও নয়। আর বেশিক্ষণ বিষের প্রভাবে ঘুমালে ওর ক্ষতি হতে পারে। তাও বাধ্য হয়ে বেশ কিছুক্ষণ থেকে তারপর রাজ্য থেকে বিদায় নিয়ে তারা বের হয়ে গেলো। তিনজন গেলো তিন রাস্তায় কাব্য একটা আয়নার ভিতরে ঢুকতে সে তার রুমে পৌঁছে গেলো। রুমে পৌঁছাতেই সেই ছুটে গেলো সেই সুরক্ষার কক্ষে যেইখানে শুভ্রা আছে। সেই সুরক্ষা কক্ষে যেতেই দেখলো শুভ্রা এখনো ঘুমাছে। কাব্য অদৃশ্য রক্ষী দের বললো চলে যেতে। ওরা চলে যেতে কাব্য শুভ্রাকে নিয়ে রুমে ঢুকে তারপর রুম টা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখলো সব জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে শুভ্রাকে খুঁজছিলো ওরা কিন্তু পাই নি। শুভ্রা কে শুইয়ে দিয়ে। কাব্য তার শক্তি ব্যবহার করে ঘরের জিনিস পত্র ঠিক করে। তারপর শুভ্রার উপর থেকে তন্দ্রা বিষ উঠি নিয়ে কাব্য গেলো ফ্রেশ হতে। কাব্য ফ্রেশ হয়ে আসতে ই দেখলো শুভ্রা নাড়াচাড়া করছে। তারমানে শুভ্রা এখন উঠে যাবে। ফ্রেশ হয়ে এসে শুভ্রা কে জড়িয়ে ধরলো। ঠান্ডা হাত শুভ্রার হাতে পড়তে ই শুভ্রা কেঁপে উঠলো। আধো আধো চোখে কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললো কয়টা বাজে?
১১ টা বাজে। উঠো খাবে।
হুম।
হুম কী উঠো এখনি উঠো যাও ফ্রেশ হয়ে নেও। আমি খাবার দিচ্ছি। শুভ্রা আড়মোড়া দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে যায় কাব্য ও রান্না ঘরে যায়। দুপুরের খাবার গুলো গরম করে টেবিলে রাখতে রাখতে শুভ্রা চলে আসলো। কাব্য শুভ্রার কপালে চুমু দিয়ে বললো ঠিক আছো তুমি?
হুম ঠিক আছি বেশ তো খেয়ে নেও।
কাব্য আর শুভ্রা খেয়ে শুয়ে পাড়লো। অন্য দিকে ওর শক্তি ফিরে পাওয়াতে রাগে ফুঁসছে ওদের শত্রু।

চলবে,,,

#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
পর্বঃ- ১২
#দিপ্তী অরণ্য

আজ পূর্ণিমা রাত্রি আজ কাব্য এক ঘন্টার জন্য হলেও মানুষ থেকে সর্প রূপে আসবে। আজ সব সর্প দের খোলস বদলানোর পালা কাব্যের ও হবে। কাব্যের পাশে শুয়ে আছে শুভ্রা কিন্তু কাব্যের মনে ভয় বিরাজ করছে যদি শুভ্রা ওর সত্যি টা জানতে পেরে ওকে ছেড়ে চলে যায়। সেই ভয়ে ভীত থাকে কাব্য। ঘড়ির ঘন্টা ঢংঢং করে উঠলো সময় টা জানান দিচ্ছে যে কাব্য কে এখন চাঁদের আলোয় যেতে হবে। কাব্য শুভ্রার কপালে গভীর চুম্বন করে তারপর ছাঁদে চলে গেলো। ছাঁদে গিয়ে সে তার সর্প রূপ ধারণ করলো। নীল সাদা মিশ্রিত সর্প হলো পিটে দুটো বড়ো বড়ো ডানা। মাথায় নীল পাথার আর চাঁদের আলো নীল পাথরে পড়তে নীল পাথর থেকে নীল রঙ এর রশ্মি বের হতে লাগলো। সামনের বিষ দাঁত দুটো বড় বড়। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠছে। পুরো শরীরে আলো পড়তে কেমন চকচক করে উঠলো। কাব্য তার ডানার সাহায্যে শূন্যে উঠে গেলো। আস্তে আস্তে কাব্যের শরীরের ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো। মোক্ষম সময় এসে গেছে। শূন্যে থেকে নিচে নেমে কাব্য ছাঁদের ফ্লোরে গড়াগড়ি খেতে লাগলো আস্তে আস্তে তার খোলস বদলাতে শুরু করলো। খোলস বদলানোর পর কাব্য তার মানুষ রূপে আসে কিন্তু পিটে ডানা টা থেকে যায় এখন ডানা টার রঙ পরিবর্তন হওয়ার পালা। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করলো কাব্যে ডানা নীল রঙ এর থেকে হতে লাগলো নীল আর সাদা রঙের কম্বিনেশন এর একটা ডানা। এই ডানা টার জন্য কাব্যের রূপ যেনো আর বেড়ে গেলো। দেখতে দেখতে এক ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেলো। কাব্য ডানা দুটো অদৃশ্য হয়ে যেতেই কাব্য পিছন ফিরে তব্দা খেয়ে গেলো কারন পিছনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রা। কাব্য এক পা দু পা শুভ্রার দিকে এগিয়ে যেতে ই শুভ্রা দৌড়ে ছাঁদ থেকে নেমে এসে রুমে চলে আসতেই দেখলো কাব্য বিছানায় বসে আছে । কাব্য তার পাওয়ার এর ব্যবহার করে শুভ্রার আগে রুমে আসলো। শুভ্রা রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিলে কাব্য সেই রুমের দরজা টা চোখের ইশারায় বন্ধ করে দিলো। এতে শুভ্রা ভয় পেয়ে গেলো।
কাব্য শুভ্রার কাছে গিয়ে হাত টা ধরতেই শুভ্রা বললো,, ছুবেন না আমায় আমার থেকে দূরে থাকুন। ঘৃণা লাগছে আপনার স্পর্শ।
শুভ্রা লিসেন টু মি,, আমার কথা টা তো শুনো।
শুনব না আমি। আমি এতো দিন একজন সর্প মানবের সাথে বসবাস করেছি থেকেছি। ভাবতে ই ঘৃণা লাগছে।
শুভ্রা প্রতি টা কথা কাব্যের বুকে তীর চালানোর মতো। কাব্য এইটা প্রথম দিন থেকেই জানতো শুভ্রা জানলে এমন করবে। কাব্য শুভ্রার দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,,, সো হোয়াট শুভ্রা আমি যদি হই সর্প মানব তাতে কি আসে যায়। তোমার তো কোন ক্ষতি করি নি। বরং তোমাকে পরম যত্নে রেখেছি মনের মনি কুঠরে। তার কি কোন দাম নেই।
আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন। আপনার পরিচয় লুকিয়ে গেছেন তার বেলা। আমি থাকবো না আপনার সাথে আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো। আমি আপনাকে ডির্ভোস দিবো শুনেছেন আপনি।
শুভ্রার মুখে ডির্ভোসের কথা শুনে কাব্য রেগে গেলো শুভ্রার চুলের মুঠি ধরে বললো,, তোর কি মনে হয় এতো কাঠখড় পুড়িয়ে তোকে আমি পেয়েছি আর তোকে আমি ছেড়ে দিবো নো ওয়ে।
আমি থাকবো না আপনার মতো একটা পশুর সাথে।
তুই থাকতে বাধ্য। কারন তুই আমার বিবাহিতা স্ত্রী।
এখন আছি কিন্তু পরে থাকবো না।
শুভ্রার চুলে মুঠি টা ছেড়ে দিয়ে কাব্য তার সর্প রূপ ধারণ করলো,, অর্ধ মানব আর অর্ধ সর্প পিটের দু পাশে দুটো ডানা। মাথায় নীল পাথর। আর সামনে দুটো বড়ো বড়ো বিষ দাঁত। কাব্য শুভ্রা কে তার লেজে পেঁচিয়ে ধরে টেনে তার কাছে নিয়ে এসে বললো,,, তুই ঘৃনা কর বা ভালোবাস তোকে আমার সাথে ই থাকতে হবে। তুই যে আমার প্রাণ ভ্রোমর।
এদিকে শুভ্রা ছটফট করছে ছুটার জন্য। কাব্য শুভ্রা কে শুয়ে দিয়ে নরমাল রূপ নিয়ে শুভ্রা উপর শুয়ে পড়লো।
শুভ্রা রাগে ক্ষোভে বললো,, নামুন আপনি। আপনার ছোঁয়া আমার জন্য পাপ।
মোটেও না বরং আমার ছোঁয়া গুলো তোমার জন্য পবিত্র বিকজ তুমি আমার স্ত্রী। কথাটা বলে কাব্য শুভ্রার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।
শুভ্রা ছুটার জন্য অনেক চেষ্টা করলেও কিন্তু কাব্যের শক্তির কাছে সে এক দম পিঁপড়ে।
আজ কাব্য অনেক টা বেসামাল হয়ে গেছে। নিজের শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে মিলিত হচ্ছে শুভ্রার সাথে। প্রচন্ড ব্যাথায় শুভ্রা চোখ মুখ খিঁচে আছে।

চলবে,,,,