#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
পর্বঃ-১৫
#দিপ্তী অরণ্য
কাব্য পৌঁছে দেখে শুভ্রা আর একটা ছেলে পার্কের বেঞ্চে বসে আছে। কাব্য রাগান্বিত হয়ে শুভ্রার দিকে এগিয়ে যেতেই শুভ্রা কে দেখে থমকে গেলো কাব্য। কি সুন্দর পরীর মতো দেখাছে। লম্বা কালো কেশ। লাল জামদানী শাড়ি পরিহিত এক মায়াবী কন্য তার সম্মুখে। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে কাব্যের বুক। হঠাৎ কাব্য কে পার্কে দেখে অবাক হলো শুভ্রা।
শুভ্রা বললো,, কাব্য আপনি এই খানে?
হুম আমি। কেনো আমি আসাতে কি তোমাদের অসুবিধা হলো?
কাব্যের কথা বলার ধরন টা পছন্দ হলো না শুভ্রার। কাব্য শুভ্রার পাশে থাকা তারা খালাতো ভাই এর দিকে তাকাতে ই রাগ হচ্ছে। রানা ও সেইম দুইজন দুইজনাকে যেনো চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে এমন। কাব্য রানার ঘাড়ের ট্যাটু টা দেখে যা বুঝার বুঝে ফেললো। শুভ্রার হাত ধরে বললো, চলো বাসায় চলো।
রানা বাঁধা দিয়ে বললো,, আরে ভাই কুল এতো হাইপার হচ্ছেন কেনো? আর ওকে নিয়ে কোথায় যাবেন??
কাব্য ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শার্টের কলার টা উপরের দিকে তুলে বলতে লাগলো,, বউ আমার,, সম্পত্তি আমার সো বুঝতে ই পারছো আমার জিনিস আমি নিয়ে যাচ্ছে। তাতে কাউকে কৈফিয়ত দিতে পারবো না।
বুঝলাম কিন্তু খালু কে কি বলবো?
কাব্য ডেভিল মার্কা ফেইস করে বললো,, এতো ইনোসেন্ট ভাব নেওয়ার দরকার নেই তোকে আমি চিনে ফেলেছি। এই পাবলিক প্লেস তাই তুই বেঁচে গেলি। আর রইলো বাকি বাবাইয়ের কথা সেইটা আমি বুঝে নিবো। আমার জিনিস আমি নিয়ে যাচ্ছি টাটা বলে শুভ্রার হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,, এতো দিন যখন আমার সাথে ছিলে তখন তো দেখি নি এমন সাজতে। আজ বাহিরের একটা পুরুষ এর সমানে সেজে এসেছো। বাসায় যেয়ে নেই তারপর তোমার সাজ আমি বের করছি।
এইদিকে রানা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো। তার প্ল্যান টা ফ্লপ হয়ে গেলো।
কাব্য আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই কাব্য দেরি না করে চোখ বন্ধ করে হাত দুটো দুই দিকে মেলে দিতে কাব্যের পিটে ডানা এসে গেলো। এইটা দেখে শুভ্রা ভয়ে পালিয়ে যেতে নিলে কাব্য শুভ্রা কে ধরে নিয়ে কাব্যের বিষ জিহ্বা বের করে শুভ্রার কপালে তন্দ্রা বিষ দিয়ে তারপর শুভ্রা কে পাঁজা কোলে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে উড়ে যাচ্ছে আকাশ পথে।
অন্ধকার একটা রুমে শুয়ে আছে শুভ্রা। শুভ্রা শুয়ে থাকায় অবস্থায় কপাল টা চেপে ধরে আহ্ করে উঠলো। কাব্য শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলো। শুভ্রার আর্তনাতে কাব্য উঠে রুম আলোকিত করলো। বন্ধ রুমে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠাতে চোখ টা কেমন ঝলসে উঠলো। তারপর পিটপিট করে চোখ টা খুলে তাকাতে দেখলো কাব্য খালি গা এ শুধু একটা প্যান্ট পড়া অবস্থায় কোমরে দু হাত দিয়ে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রা চোখ নামিয়ে ফেলে আবার চোরা চোখে কাব্য দিকে তাকাতে কাব্য বলে উঠলো জামাই টা তোমার এতো লুকিয়ে চুরিয়ে দেখার কিছু নাই। এখন প্রশ্নের উত্তর দেও,, তোমার সাহস কি করে হয় অচেনা একটা লোকের সাথে বের হতে??
অচেনা না ও আমার খালাতো ভাই রানা। বাবার সাথে দেশে ফিরেছে। বাবা বলেছে ওকে ঘুরতে নিয়ে যেতে।
সো হোয়াট শুভ্রা তাই বলে ঢেংঢেং করতে করতে পার্কে নিয়ে যাবে। আবার শাড়ি পড়েছো কই আমার সামনে থাকলে কখনো তো শাড়ি পড়তে দেখি নাই। আজ বাহিরে একটা মানুষের সাথে শাড়ি পড়ে সেজে গুছে বের হয়ে গেছো। শুনো শুভ্রা আমি ছাড়া তুমি কারও কাছে সেইফ না ইভেন তোমার বাবার কাছে ও না।
শুভ্রা চারোপাশ টা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো অচেনা লাগছে। শুভ্রা কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললো আমি কোথায়? এইটা তো আমাদের রুম না।
তুমি কোথায় জানো তুমি আমার রাজ্যে। তোমাকে আমি সর্প রাজ্যে নিয়ে এসেছি। যাতে করে তুমি পালিয়ে যেতে না পারো। এখন থেকে তুমি আমার বন্দীনি হয়ে থাকবে।
আমি বাবা যাবো।
এই তোমার না বিয়ে হয়েছে কিসের এতো বাবা বাবা চুপচাপ এইখানে বসে থাকো আমি তোমার জন্য খাবার ব্যবস্থা করি। এইখান থেকে এক পা ও নামাবে না।
শুভ্রা চুপচাপ বসে রইলো। কাব্য গিয়ে শুভ্রার জন্য খাবার নিয়ে আসলো। শুভ্রার ভাবতেই অবাক লাগছে যে সর্প রাজ্যে সে এক মানুষ। কাব্য খাবার নিয়ে এসে শুভ্রার সামনে ধরতেই শুভ্রা খাবার টা নিলো। তারপর চুপচাপ খাবার টা খেয়ে নিলো। কাব্য শুভ্রা কে একটা তরল মেডিসিন দিয়ে বললো এইটা ভেষজ ওষধ খেয়ে নেও খেলে মাথা ব্যাথা কমবে। শুভ্রা নাক মুখ ছিঁটকে খেয়ে নিলো। কাব্য শুভ্রা কে শুইয়ে দিয়ে বললো, তুমি ঘুমাও।
কোথায় যাবেন?
কাজে।
আমার ভয় হচ্ছে।
ভয়ের কিছু নেই। আমি অলওয়েজ তোমার সাথে আছি। এইটা কাব্যের রাজ্য কাব্যের রাজ্যে এসে তোমাকে ক্ষতি করার দূর সাহস কারও নেই। আসি বলে শুভ্রার কপালে গাঢ় চুম্বন করে কাব্য চলে গেলো।
————
কাব্য বসে আছে শুভ্রার বাবার সামনে। শুভ্রার বাবার পাশে বসে আছে রানা। কাব্য বললো তো মিস্টার সরকার,, আপনি তাহলে পিশাচ মানব আর আপনার পাশে বসে থাকা এই মানব টা ও পিশাচ মানব।
ক্রুর হাসি দিলো শুভ্রার বাবা আর রানা। তারপর বলতে লাগলো তাহলে তুই সব জেনে গেছি।
গোটা একটা রাজ্য চালাই আমি। আর আমার চোখে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ না।
যা চাই দিয়ে দেও।
কি মনে হয় আপনাদের আমি আমার রাজ্য আপনাদের দিয়ে দিবো। আজ আপনাদের লোভের জন্য আমি সর্প মানব। পূর্বের প্রতিশোধ তো আছেই।
তন্ময় সরকার বললো,, যদি শুভ্রার ক্ষতি করি তাহলে ও কি দিবে না।
কাব্য শুভ্রার বাবার চোখে চোখ রেখে বললো,, আমি কাব্য চৌধুরী। আর শুভ্রা আমার গোটা দুনিয়া। আর সেই দুনিয়ায় দিকে হাত বাড়াবে তাকে আমার বিষাক্ত ছোঁবলে নীল করে ফেলবো।
বাট কি করে আমরা যে পিশাচ।
কাব্য হেসে বললো,, বাপের ও বাপ থাকে আর তোদের মতো পিশাচদের সাথে কি করবো তোরা কল্পনা ও করতে পারবি না। তন্ময় সরকার তোকে শুভ্রা এতো ভালোবাসে আর তুই নিজের কন্যার ক্ষতি চাস। ছি ছি ছি।
ভাগ্যিস শুভ্রা দেখতে পাই নি নয়তো বেচারি কত কষ্ট পেতো। তোদের দিন শেষ হওয়ার পথে। শুধু অপেক্ষা কর।
তোর কি মনে হয় আমাদের এইখানে এসে এতো তাড়াতাড়ি যেতে পারবি।
তো কি মনে হয় তোরা আমার সাথে পারবি। শুভ্রার বাবা বিরবির করে মন্ত্র পড়ে তারপর একটা অ”স্ত্র নিলো। রানা ও তাই করলো।
আর কাব্য তার সব থেকে ভয়ংকর রূপ ধারন করলো। পাঁচটা মাথা ভয়ংকর বিষাক্ত লম্বা দুটো দাঁত। আর পিটের উপর পাখা। যেই না শুভ্রার বাবা কাব্য কে আঘাত করতে যাবে ওমনি কাব্য শুভ্রার বাবার দিকে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করলো। আর এই দিকে রানা যখন বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করতে যাবে ঠিক সেই সময় কাব্য তার হাত দিয়ে সুরক্ষা বলয় তৈরি করে নিলো।
চলবে,,,,