#বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে
শেষ পর্ব
#দিপ্তী অরণ্য
প্রচুর লড়াই চলছে। কাব্যের রাজ্যে সব সর্প মানব চলে এসেছে শুভ্রাদের বাসায়। এইদিকে পিশাচ রাজ্যের সব পিশাচ রা ও উপস্থিত। দুই জাতের লড়াই চলছে। ভয়ংকর এক লড়াই চলছে। কাব্য একে একে সকল পিশাচ সেনাদের হ”ত্যা করছে। কাব্য এক সাথে পাঁচ টা কাব্য হয়ে গেলো। পাঁচ টা কাব্য দেখে কোনটা আসল কাব্য রানা আর তন্ময় সরকার বুঝতে ও পারছে না। কাকে ছেড়ে কাকে ধরবে সেটাই ভাবছে কাব্য সেই সুযোগ টা ই কাজে লাগিয়েছে। কাব্য একটা তরল পদার্থ ওদের শরীরে ছিটিয়ে দিতে ওদের শরীর টা জ্বলতে শুরু করলো ওরা ছটপট করতে শুরু করলো আস্তে আস্তে ওরা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ওরা মাটিতে লুটিয়ে পড়তে কাব্য ইশারাতে ওর রক্ষী রা ওদের দুজন কে বন্দী করে নিয়ে যায় সর্প রাজ্যে। তন্ময় সরকার আর রানার পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হয় পিশাচ রাজ্য। ওদের পরাজয়ের সাথে সাথে বাকি পিশাচ সেনারা ধ্বংস হয়ে যায়।
এতো কিছু হয়ে গেলো শুভ্রা ঘুনাক্ষরে ও টের পেলো না আসলে কাব্য পেতে দেয়নি। কাব্যরা ফিরে আসে ওদের রাজ্যে। কাব্য ফিরে এসে সবার আগে তার রুমে যায় গিয়ে দেখে শুভ্রা বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। কাব্য একটু হাসলো তারপর শুভ্রার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে শুভ্রার পাশে শুয়ে পড়লো শুভ্রা কে জড়িয়ে ধরে।
মধ্য রাতে শুভ্রার ঘুম ভাঙ্গে ঘুম ভাঙ্গতে নিজেকে আবিস্কার করে কাব্যের দৃঢ় বাঁধনের। শুভ্রা নিজেকে ছাড়াতে চাইলে কাব্য আরো জোড়ে চেপে ধরে তারপর ফিসফিস করে বলে,, সমস্যা কি চুপচাপ থাকতে পারো না এতো ছটপট কিসের?
ছাড়ুন ভালো লাগে না।
কাকে আমাকে না আমার স্পর্শ কে??
দু’টো ই।
তোমাকে আজ একটা গল্প বলি চুপচাপ শুনো কোন কথা বলো না। একটা হ্যাপি ফ্যামেলি ছিলাম আমরা। আমি মা বাবা আর ভাই কত সুন্দর একটা পরিবার হাসি খুশিতে ভরা একটা সুখের পরিবার। আমি ছিলাম ছোট তাই বরাবর সাবার চোখের মনি ছিলাম সবাই আমাকে অনেক আদর করতো। কিন্তু একদিন কালবৈশাখির ঝড় এসে সব লন্ড ভন্ড করে দিলো। সেই দিন ছিলো আমার বড় ভাই এর জন্মদিন। আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ উঠেছে সেই চাঁদের আলো পুরো পরিবেশ আলোকিত হয়েছিলো। আমাদের গাড়ি টা হঠাৎ ই খারাপ হয়ে যায়। আর এমন জায়গায় খারাপ হয় যেইখানে দুই পাশে বন আর বন পাহাড় ঘেরা। সাহায্য চাওয়ার মতো কেউ ছিলো না। হঠাৎ ই দূর পাহাড়ের উপর একটু আলোর চিহ্ন দেখা যায়। সেই আলোর দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম আমরা। আচমকা গিয়ে ই থমকে যাই। ওখানে ব্লাক ম্যাজিক চলছিলো। আর তাদের থেকে দূরে একটা বড়ো খাঁচায় বন্দী সর্প রাজা। আর যেই সব লোকেরা ব্লাক ম্যাজিক করছিলো তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে কিছু পিশাচ সেনা। এই রকম একটা পরিস্থিতি তে আমরা সকলে থমকে যাই। দুটো লোক সেই খাঁচাটা খুলে সর্প রাজা কে নিয়ে এসে বলির স্থানে নিয়ে আসে। সর্প রাজা ছিলো খুবই আহত তাই তিনি ওনাদের সাথে লড়াই করতে পারছিল না। ওনাকে শুয়ানো হলো বলির জন্য। ওনার হাত পা বাঁধা। ওনি চাইলেও কিছু করতে পারছিলো না। যেই মূহুর্তে ধারালো এক রা”ম”দা এনে যেই মূহুর্তে ওনাকে মারতে যাবে ঠিক সেই সময় আমার বাবা চিৎকার করে উঠে। হঠাৎ মানুষের চিৎকার পেতে ওনারা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আমরা চারজন। আমার বাবাকে সহ আমাদের ধরে ওনাদের সামনে নিয়ে আসা হয়।
আমার বাবা বলে উঠলো এইটা অন্যায় এইটা ঠিক না৷
ওদের মধ্যে একজন তান্ত্রিক বলে উঠলো ঠিক ভুল তুই আমাদের শিখাবি। জানিস এইযে দেখছিস এইখানে পড়ে রয়েছে আহত অবস্থায় এ কোন সাধারন মানুষ এ একটা সর্প মানব। ওর ক্ষমতা অনেকে। ওর কাছে মনি আছে যার ক্ষমতা বলে প্রকাশ করা যাবে না।
আমার বাবা তখন বলে উঠলো লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু আমার বাবা যখন ওদের সাথে কথাতে ব্যস্ত তখন সেই সময় আমি একটা কাজ করি। ছোট থেকেই আমি খুব দুষ্ট আর ডানপিটে ছিলাম। ভাইয়া বরাবরই শান্ত ছিলো। আমি গিয়ে ওই রাজা টার বাঁধা খুলে দেই। ওরা আমার বাবার কথা তে এতো টাই মগ্ন ছিলো আমার দিকে কেউ লক্ষ করে নি। ওই রাজা টা অস্ফুটে স্বরে বললো,,, কে তুমি?
আমি কাব্য চৌধুরী।
আমাকে একটা সাহায্য করতে পারবে??
কি সাহায্য বলুন?
ওই যে দেখতে পাচ্ছো পাত্র টা ওটাতে পানি আছে। ওই পানি আমার গা এ ছিটিয়ে দিলে আমি আমার সব শক্তি ফিরে পাবো।
আমি তৎক্ষনাৎ সবার অলকে পাত্র টি নিয়ে পানি ছিটিয়ে দিলাম। রাজা আস্তে আস্তে তার শক্তি ফিরে পেতে শুরু করলো ঠিক সেই সময় একটা পিশাচ সেনা আমাদের দেখে নেয়। আর সেই সেনা টা চিৎকার করতে সবাই আমাদের দেখে নেয় তান্ত্রিক টা আমাদের আক্রমন করতে গেলে বাবা যজ্ঞের কুন্ড থেকে একটা আগুনের লাঠি উঠিয়ে তান্ত্রিক এর দিকে ছুঁড়ে মাড়তে তান্ত্রিক এর গা এ আগুন লেগে যায় আর তান্ত্রিক মারা যায়। তান্ত্রিক মারা যেতে পিশাচ সেনারা ক্ষেপে যায় কারন পিশাচ সেনাদের ভরসা তান্ত্রিক ছিলো। ততক্ষণে রাজা টা সুস্থ হয়ে যায় সে তার সর্প রূপ ধারণ করে একে একে সকল কে মারতে থাকে কিন্তু ওদের মধ্যে থেকে তিনজন পিশাচ সেনা আমার বাবা মা আর ভাই কে পিছন থেকে ছু”রি মে”রে হ”ত্যা করে। আমাকে মারতে পারে নি কারন আমাকে সেফটি তে রেখে রাজা যুদ্ধ করছিলো। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলো না কারন ওরা ওনাকেও বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করেছিলো সেইটা এতো টা বিষাক্ত আর ধারালো ছিলো রাজা কাবু করে ফেলো। তিনি বুঝতে পেরেছিলো বেশিক্ষণ ওনাদের সাথে পারবে না আর ওনি একটা নীল পাথর বের করে দিয়ে একটা মায়াবী আয়না ডেকে উঠাতে একটা ধাক্কা দিয়ে আমাকে সেইটার ভিতর পাঠিয়ে দেয়। তারপর কি হলো মনে নেই যখন জ্ঞান ফিরলো তখন এই রুমে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। একটা আর্চায বসে আছেন আমার মাথার কাছে। আমার জ্ঞান ফিরতে দেখে তিনি বললেন। রাজ আর নেই আর ওনার সব শক্তি তোমাকে দিয়ে গেছেন। তুমি আর আর কোন সাধারণ মানুষ নও তুমি একটা সর্প মানব। আমাদের নতুন রাজা এইটা বলে তিনি আমাকে আমার মাথায় সেই নীল পাথর যুক্ত চেইন টা পরিয়ে দেয়। আর তখন থেকে আমি সর্প রাজা। আরেক টা কথা কি জানো তোমার বাবা আর তোমার কাজিন ওরা পিশাচ। ওদের কাছে থাকলে তোমার ক্ষতি হতো তাই তোমাকে নিয়ে এসেছি।
আপনি মিথ্যা বলছেন আমার বাবা কখনো ই এমন পাপা কাজের সাথে যুক্ত হবেন না।
না সত্যি বলছি। তোমার বাপ ভাই বন্দী আছে কাল সকালে জেনে নিয় সবটা।
আপনার মা বাবা যদি মারা ই যায় তাহলে ওরা কারা যাদের কে আমি চিনতাম।
কেউ শুধু তোমার বাবার পরিচিত ছিলো তাই তাদের কে ভয় দেখিয়ে মিথ্যা বলিয়ে তোমাকে বিয়ে করে নিয়েছি যাতে করে তোমাকে আমার কাছে রাখার লাইসেন্স রাখতে পারি। অনেক কথা হলো আসেন মহারানী আপনাকে একটু আদর করি। আপনাকে শাড়ী পড়ায় আবস্থাতে ভিষণ সুন্দর লাগে ইচ্ছে করে একদম বুকের ভিতর লুকাইয়া রাখি৷ কথা টা বলে কাব্য শুভ্রাকে কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলেয়ে দিলো। কাব্যের মাতাল করা স্পর্শে শুভ্রা ও মাতাল হয়ে যাচ্ছে ওরা ডুব দিচ্ছে ভালোবাসার এক সমুদ্রে।
পরের দিন সকালে শুভ্রা গেলো সেইখানে যেইখানে তার বাবা কে বন্দী রাখা হলো। শুভ্রা কেঁদে দিয়ে বললো,, বাবা তুমি পিশাচ সিদ্ধ।
লোকটি মুখে কোন অনুতাপ নেই তিনি বললেন,, বাবা কে তোর বাবা। আমি তোর বাবা নই না তুই আমার মেয়ে। তোকে আমি পালক এনেছি তোর মা এর কারণে। আমাদের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান হচ্ছিল না তাই তোকে পালক নেই।
শুভ্রা তার বাবার কথায় কেঁদে দিলো।
তিনি আরো বললেন,, তোর মাকে আমি নিজের হাতে খু”ন করি কারন ও সব টা জেনে গিয়েছিলো। আমার যখন কুমারী মেয়ের দরকার ছিলো তখন ভাবলাম তোকে ব”লি দিবো ঠিক তখনই কাব্য তোকে নিয়ে যায়। আর আমাকে বন্দী করে রাখে। কিন্তু আটকে রাখতে পারে নি আমি ছুটে আসি। এসে তোকে নিয়ে যায়। কাব্য কে কাবু করতে কিন্তু ও এতোটা চালাক যে ঠিক বুঝে গিয়ে তোকে সড়িয়ে নিলো কথাটা বলে তিনি খাঁচার ভিতর থেকে এক হাত বের করে শুভ্রার গলা টা চেপে ধরে। শুভ্র সেইটা ছাড়ানোর জন্য ছটপট করতেই সেই সময় কাব্য একটা ধারালো তলোয়ার নিয়ে হাত কে”টে ফেলে শুভ্রা কে নিয়ে যায়। শুভ্রা এতোটা ভয় পেয়েছিলো যে শুভ্রা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
রাজ চিকিৎসক ডাকা হলে রাজ চিকিৎসক হেসে বললো,, সুখবর আছে সুখবর আছে রাজা। আমাদের রানীমা মা হতে চলেছে।
কাব্য একবার অচেতন থাকা শুভ্রার দিকে তাকায় তো আবার রাজ চিকিৎসক এর দিকে তাকিয়ে বললো,, সত্যি।
জ্বী রাজা।
কাব্য বললো আলহামদুলিল্লাহ।
আমি ওকে নিয়ে বাড়ি যাবো। আর সর্প রাজ্যে উৎসবের আয়োজন করো আমি পরে আসবো বলে কাব্য শুভ্রা কে কোলে নিয়ে আয়নার ভিতরে প্রবেশ করে তাদের বাড়িতে চলে এলো। সবার আগে শুভ্রাকে শুইয়ে দিলো। কিচেনে গিয়ে শুভ্রার জন্য পায়েস রান্না করা শুরু করলো।
ঘুম থেকে উঠে শুভ্রা দেখে সে তার বাড়ি। সে অবাক হয়ে আশেপাশে দেখতে লাগলো। কাব্য ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলতে লাগলো যাক তোমি উঠেছো। তাহলে তো ভালোই হলো ফ্রেশ হয়ে নেও।
আমি এইখানে কখন এলাম।
পরে বলবো সবটা আগে জলদি ফ্রেশ হয়ে নেও। একটা কথা বলবো।
কি কথা?
আগে ফ্রেশ তারপর সব কথা। কাব্যের কথায় শুভ্রা ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বসতেই শুভ্রার মুখের সামনে এক চামচ পায়েস তুলে দিয়ে বললো খেয়ে নেও।
শুভ্রা চুপচাপ খেয়ে নিলো। কাব্য শুভ্রার কপালে ডিপলি কিস করে বললো,, শুভ্রা আমরা দুইজন মা বাবা হতে যাচ্ছি। তোমার এই ছোট পেটে আরো একটা ছোট প্রাণ যত্নে থাকবে তুমি। আজকের দিনে সেরা উপরহার। সব অশুভ শক্তিকে হারিয়ে আমরা জিতে গেছি।
শুভ্রা খুশিতে কেঁদে দিলো কাব্য কে জড়িয়ে। তারপর বললো আমাদের ভালোবাসার প্রতীক ও। আমাদের অংশ।
কাব্য ঘাড় কাত করে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বললো,, আমাকে ভালোবাস তোমি?
হুম বাসি।
তাহলে এমন করেছিলে কেনো তুমি?
আপনি সত্যি টা লুকিয়ে ছিলেন তাই।
কাব্য দু হাতে শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে বললো,, বলেছিলাস না #বাঁধিবো_প্রণয়ের_বাহুডোরে।
হুম টিচার সাহেব উফস্ সরি সরি টিচার না সর্প মানব সাহেব আপনার প্রণয়ের বাহুডোরে বাঁধা পড়েছি। ভালোবাসি আপনাকে কাব্য।
আমিও ভালোবাসি তোমাকে।
সমাপ্ত।