বাতাসে প্রেমের ঘ্রাণ পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
2

#বাতাসে_প্রেমের_ঘ্রাণ
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম
#শেষ_পর্ব

সারা’র সামনে থাকা পাত্র কে দেখে অবাক হয়ে বলে,

“- আপনিিিি?

পাত্র ও সারাহ কে দেখে অবাক হয়ে বলে,

“- তুমিি? তুমি এখানে কিভাবে?
সারা’র ও সেম প্রশ্ন। দু’জনার রিয়াকশন দেখে উপস্থিত সকলেই অবাক। সারাহ’র বাবা রাশেদ সাহেব বলেন,

“- সারাহ মা তুই ছেলে কে চিনিস? সারাহ মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।

পাত্রের মা পাত্র কে বলেন,

“- ইহসান বাবা তুই কি মেয়ে কে চিনিস? ইহসান ও মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে।

দু’পক্ষের লোকজন একই সাথে বলে,

“- কিভাবে তোমরা একে অপরকে চেনো? আমাদের একটু বলবে প্লিজ?

সারাহ চুপ করে রয়। ইহসান সারাহ’র দিকে তাকিয়ে ফের সকলের দিকে তাকিয়ে বলে,

“- আসলে সারাহ যে ভার্সিটিতে পড়ে আমিও সেম ভার্সিটিতে পড়ি। সারাহ আমার জুনিয়র। সেই সুবাদে ভার্সিটিতে মাঝে মধ্যে কথা হতো। তাই ছাড়া আর কিছু না মা।

সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। ইহসানের মা বলেন, তাহলে তো খুব ভালোই হলো। দু’জন দু’জন কে আগে থেকেই চিনিস। তাহলে আর প্রবলেম কোথায়? মেয়ে আমার পছন্দ। আপনাদের কি আমার ছেলেকে পছন্দ হয়েছে?

রাশেদ সাহেব হালকা হেঁসে বলেন,ছেলে ও আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আর যেহেতু সারাহ মা ইহসান বাবা কে আগে থেকে চেনে তাহলে আর না করার প্রশ্নই আসে না। তবে দু’জন কে একটু আলাদা কথা বলার দরকার। দু’জনের মতামতের ও তো একটা গুরুত্ব আছে। সারাহ মা তোরা ছাদে গিয়ে কথা বলে আয়। সারাহ ইহসান কে নিয়ে ছাদে আসে।

*******

ছাদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। দু’জনের কেউ কথা বলছে না। সারাহ কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে। শেষমেষ ভার্সিটির সিনিয়র ভাই য়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক হলো। তার বান্ধবী রা শুনলে তাকে খোঁচা দিয়ে কথা বলবেই। ইহসান দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

“- কখনো কি ভাবছিলে আমাদের দু’জনের এভাবে হুট করে দেখা হবে। দু’জনের বিয়ে ঠিক হবে।

“- সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছেই হয়। জন্ম মৃত্যু বিয়ে এই তিনটা জিনিস আল্লাহ তায়ালার হাতে।

“- হ্যাঁ।তা ঠিক বলছো। তো এখন তোমার মতামত কি? আমাকে কি বিয়ে করবে নাকি..?

ইহসান সারা’র দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সারাহ বলে,

“- আপনার মতামত কি? আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?

“- পছন্দ না হলে এতক্ষণ কি গল্প করতাম।
ইহসানের কথায় মুচকি হাসে সারাহ। সারাহ কে হাসতে দেখে বলে,

“- হাসলে না ফাঁসলে। তারমানে তুমিও আমাকে পছন্দ করো? সারাহ মাথা নিচু করে নেয়। ইহসান আর প্রশ্ন করে না। সারা’র নিরবতায় তার উত্তর।

দু’জনে ছাদ থেকে নেমে আসে। দুই পরিবার ঠিক করে একসপ্তাহ পর তাদের বিয়ে।

___________________________

দুদিন কেটে যায়। সারাহ আর ইহসান বিয়ের কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছে। সারা’র সাথে তার বাবা আর ইহসানের সাথে তার বোন। গ্রাম থেকে শহরে যেতে অনেকটা পথ। চার জনে অটোতে করে গেছে। মেইন রাস্তা য় গিয়ে বাসে উঠবে। যেতে এক ঘন্টার বেশি লাগে। জ্যাম না থাকায় একটু দ্রুত পৌঁছে। সারাহ আজ প্রথম এখানে এসেছে কেনাকাটার জন্য। ঢাকাতে থাকায় সবসময় ওখান থেকে কিনতো। সবকিছু তার অচেনা। ইহসান চাকরির সুবাদে তিনবছর ঢাকা তে শিফট করেছে।

তারা প্রথমে চলে আসে এই শহরের সবচেয়ে বড়ো কাপড়ের শপে। প্রথমে তারা বিয়ের জন্য শাড়ি কিনে তারপর বরের শেরওয়ানি কেনে। এভাবে একটার পর একটা জিনিস কিনতে থাকে। কিনতে কিনতে তারা চলে যায় থ্রি পিস কিনতে। সারাহ থ্রি পিস পছন্দ করে বলে,

‘- ম্যাম এটাই প্রাইজ কত? সারা’র চোখ থ্রি পিসে আবদ্ধ। শপে থাকা মহিলা বলেন,

“- ম্যাম এটার প্রাইজ ২৫০০। আপনি কি নিতে চান?

কন্ঠস্বর পেয়ে সারাহ চোখ তুলে তাকায়। সামনে থাকা মহিলাকে দেখে চমকে ওঠে। হাত কাপতে কাপতে হাত থেকে কাপড় টা পড়ে যায়। মহিলা আবার বলে,

“- ম্যাম আর ইউ ওকে?
সারাহ কাপাকাপা কন্ঠে বলে,

“- ইয়াহ, আই এম ওকে।

পিছন থেকে রাশেদ সাহেব বলতে বলতে আসেন, সারাহ মা তোর থ্রি পিস কেনা হলো? রাশেদ সাহেবের চোখ আঁটকে যায় সামনে থাকা মহিলা কে দেখে। আপনাআপনি মুখ হা হয়ে যায়। মহিলার ও সেম অবস্থা। পিছনে সারা’র বাবা কে দেখে চমকে যান

সারাহ বাবা’র দিকে তাকিয়ে বলে,

“- বাবা চলো তুমি? এখানের কালেকশন আমার পছন্দ হচ্ছে না।

“- হ্যাঁ মা চল।

তখনই ইহসান আসে। দু’জন কে ফিরে আসতে দেখে বলে, আঙ্কেল চলে আসছেন কেন? সারাহ বলল ওর একটা থ্রি পিস পছন্দ হয়েছে আর সেটার দাম শুনতেই এখানে এসেছে। রাশেদ সাহেব থেমে বলে,

“- বাবা তুমি নিয়ে এসে সারাহ মামণির শরীর টা ভালো লাগছে না।

“- কি হয়েছে ওর। সারাহ তুমি ঠিক আছো? তোমার চোখে পানি কেন?

সারাহ হালকা হেঁসে বলে,

“- ও কিছু না। চোখে পোকা গেছে তাই আরকি পানি পরছে।

“- আচ্ছা তুমি আঙ্কেলের সাথে নিচে যাও আমি থ্রী পিস নিয়ে আসছি।

দোকানে থাকা মহিলাটা আর কেউ নয়। তিনি সারা’র সেই মা। যিনি আট বছর বয়সে সারাহ কে ছেড়ে চলে গিছিলেন। সারা’র মা’য়ের চোখে পানি, তিনি খুব অনুতপ্ত। অনুশোচনায় তাকে শেষ করে দিচ্ছে। দুজন চলে যায় কিন্তু তাদের সাথে কোনো কথা হয় না। তার সেই ছোট্ট মেয়েটা যে অনেক বড় হয়ে গেছে।

ইহসান মহিলার কাছে এসে বলে,

“- আন্টি সারাহ যে থ্রি পিস টা নিয়ে এসেছিল ওটা প্যাক করে দিন।

মহিলা ইতস্তত বোধ করে বলে,

“- বাবা কিছু মনে না করলে একটা কথা জিগাইতাম?

“- জ্বি আন্টি বলুন।

“- মেয়েটা তোমার কি হয়?
“- আপনি সারা’র কথা বলছেন? ও আমার উডবি ওয়াইফ। আর কিছু দিন পর আমাদের বিয়ে।

“- তুমি ওকে খুব ভালোবাসো তাই না।

“- জ্বি আন্টি।

“- ওকে খুব ভালো রেখো। মেয়েটা খুব ভালো।

“- জ্বি।

“- আরেকটা কথা বলব বাবা?
“- জ্বি বলুন।

“- ওর মা কোথায়? মানে তিনি আসেননি?

“- আসলে ওর মা নেই। সারা’র যখন আট বছর বয়স তখন ওর মা মারা গেছে। তারপর থেকে ও ঢাকায় ওর বাবা-র সাথে থাকতো। এখনো ঢাকাতেই থাকে।

সারা’র মা হয়তো সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা টা এবার পায়। সে তার মেয়ের কাছে মৃত। নিজের ভুলের জন্য আজ তাকে এত ভুগতে হচ্ছে। ইহসান থ্রি পিস নিয়ে শপ থেকে বেড়িয়ে আসে। আর সারা’র মা অশ্রুসিক্ত চোখে সেদিকেই তাকিয়ে আছে৷

__________

সারাহ বাবা’র কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে বাসের ভিতর। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। রাশেদ সাহেব বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী কে এতদিন পর দেখে একটা কথাও বলতে পারেননি। বলার পরিস্থিতি ই তাদের নেই। তার স্ত্রী বহু বছর আগে তার কাছে মারা গেছে। সারাহ বাবা’র দিকে তাকিয়ে ভাবে। এই তো জীবন! কখন কোথায় কিভাবে কার সাথে দেখা হবে কেউ জানে না। এতদিন পর মায়ের সাথে দেখা হলো কিন্তু তাকে একটু জড়িয়ে ধরে বলতে পারল না। আই মিস ইউ মা। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি! খুব মিস করি তোমাকে।

মনের মধ্যে জমিয়ে থাকা কথা গুলো না বলায় থেকে গেলো। কখনো হয়তো বলা হবে না। কখনো হয়তো একটু জড়িয়ে ধরতে পারবে না মা তোমার আদর গুলো খুব মিস করি । কারণ তার কাছে মায়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। আর না আছে মায়ের ভালোবাসা। সারাহ তার মা কে খুব ভালোবাসে৷ কারণ মায়ের মতো কেউ হয় না। কিন্তু যতটুকু ভালোবাসে তার থেকে বেশি ঘৃণা করে। এটাই হয়তো তাদের নিয়তি ছিল। সবটা নিয়তির উপর ছেড়ে দিছে। পৃথিবীর সবাই ভালো থাকুক। সবাই তার মতো মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত না হোক। সবাই মায়ের ভালোবাসা পেয়ে বড় হোক।

[সমাপ্ত]