#বাতাস_বলে_দেয়
#ফারহানা_কবীর_মানাল
৪.
রিকশা থামল খোলা মাঠের সামনে। মাঠটা বেশ বড়। দু’পাশে জঙ্গল, একপাশে নদী অন্যপাশে রাস্তা। আরিফ রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মেটালো। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কোমল গলায় বলল, “দেখেশুনে নামবে।”
আমি ওর হাত ধরলাম না। সহজ ভঙ্গিতে নেমে এলাম। রিকশাওয়ালা চলে যাওয়ার পর সে বলল, “হাত ধরলে না যে?”
“কিছু না। এমনিতেই নামতে পারতাম।”
“আমাদের দু’জনের মাঝে এই দূরত্বটা ছিল না। এমন হোক তা কখনো আশা করিনি।”
“সবকিছু আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী হয় না।”
“তা ঠিক। চলো ওদিকটায় গিয়ে বসি।”
আমি ওর সাথে হাঁটলাম না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলাম। আরিফ কিছু দূর গিয়ে পেছনে ফিরল। সরল গলায় বলল, “আসবে না?”
আমি ওর দিকে হাঁটতে লাগলাম। মাথার ভেতর নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ বুঝতে পারছি না৷ জায়গাটা বেশ নির্জন এবং শুনশান। কেউ কোথাও নেই।
আরিফ নদীর পাড়ে ঘাসের উপর বসল। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “এমন করছ কেন? তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছ?”
“নাহ! ভয় পাব কেন? ভয় পাচ্ছি না তো। ভয় পাচ্ছি না। ইনানের জন্য চিন্তা হচ্ছে। এতক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারবে না।”
“তোমার চোখ-মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে– তুমি ভয় পাচ্ছ। আমি কি তোমার একটাই দূরের মানুষ হয়ে গেছি? যার সাথে নির্জন জায়গায় বসতেও ভয় পাচ্ছ?”
কথার জবাব দিলাম না। মেকি হেসে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। আরিফ আমার হাত ধরল। অদ্ভুত গলায় বলল, “বহুদিন এভাবে সময় কাটানো হয় না। মাঝেমধ্যে কি মনে হয় জানো? সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে তোমাদের নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারতাম।”
“এখানে থাকার অসুবিধা কি? আমাদের তো কোন কিছুর অভাব নেই।”
“তোমার আমাকে কেমন হয়? আমি মানুষটা কি খুব বেশি খারাপ?”
“সত্যি বলতে তোমাকে চিনতে এখন আমার কষ্ট হয়। তুমি আগের মতো নেই। আগের সেই ব্যক্তিত্ববোধ, দায়িত্ব, ভালোবাসা কোনকিছুই এখন আর তোমার মাঝে খুঁজে পাই না। সংসারেও তেমন মনযোগ নেই। যেন তোমার সব চিন্তা অন্য কোথাও আঁটকে আছে।”
“এর জন্য তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবে না তো?”
আমি একটু হাসলাম। খুব শক্ত গলায় বললাম, “আমাদের সম্পর্কে তোমার তরফ থেকে তৃতীয় কেউ না এলে কখনোই ছেড়ে যাব না। বিয়ের সম্পর্ক এতটা ভঙ্গুর হওয়া উচিত না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তুমি আমাকে অবহেলা করবে, অসম্মান করবে, যা খুশি তাই বলবে।”
“তানজিলা!”
“উুঁ?”
“আমাদের এখন যাওয়া উচিত। ইনান বাড়িতে, হিমি ওকে বেশিক্ষণ সামলাতে পারবে না।”
“একটা প্রশ্ন করি?”
“করো।”
“পহেলা বৈশাখের দিন কোথায় গিয়েছিলে?”
“অফিসে অনুষ্ঠান ছিল। যেতে চাইনি। সুরভি আপা কল দিয়ে বলল– বস সবাইকে ডেকেছে। তাই গিয়েছিলাম।”
মাথা দোলালাম। আরিফ বলল, “জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। সুন্দর তাই না? বসে থাকতে ভালো লাগে।”
“আমাদের এখন যাওয়া উচিত। দুপুরে বেরিয়েছি বিকেল হতে চলল।”
“তানজিলা! আমাদের সম্পর্কটা আর আগের মতো হবে না, তাই না?”
ওর কথা শুনেও না শোনার ভান করে হাঁটতে লাগলাম। সত্যি বলতে আমি অনেক বিরক্ত এবং ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। ছন্নছাড়া জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ। খাপছাড়া জীবন কার-ই বা ভালো লাগে? বেশ বুঝতে পারছি আরিফ কোন একটা ঝামেলায় ফেঁ’সে গিয়েছি। কথাটা আমাকে বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। কোথাও আঁটকে যাচ্ছে।
বাড়িতে ঢোকার পর শাশুড়ি মা বললেন, “ছেলেকে রেখে কোথায় গিয়েছিলে? কেমন মা তুমি? ভরদুপুরে বাইরে কিসের কাজ?”
আমি কিছু বলব তার আগে আরিফ ঘরের ভেতর ঢুকল। শান্ত গলায় বলল, “আমার সাথে গিয়েছিল। ইনান কোথায়?”
শাশুড়ি মা মুখ বেঁকিয়ে বললেন, “হিমির ঘরে ঘুমচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।”
“তানজিলা ঘরে এসো। তোমার সাথে কথা আছে।”
ঘরে ঢুকলাম। আরিফ কিছু বলল না। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করল। ওকে ঘাঁটালাম না। বাথরুমে ঢুকে চোখে-মুখে পানি ছড়িয়ে খানিকক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার চেহারা আর আগের মতো নেই। চোখের নিচে কালচে দাগ পড়ে গেছে। দুশ্চিন্তার ছাপ ত্বকের উজ্জ্বলতা ঢেকে ফেলেছে। আচ্ছা সব মেয়ের জীবনই কী এমন হয়? বিয়ের পর বাচ্চা হয়ে গেলে সংসারের অবস্থা এমন ছন্নছাড়া হয়ে যায়?
বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের করে দিলাম। সবকিছু কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিনই একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠছি, রান্না করছি, সংসারের কাজ শেষ করে রাতে ঘুমতে যাচ্ছি। এইতো! এভাবেই জীবন কে’টে যাচ্ছে।
সময় কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। সে তার নিজের নিয়মে চলে। একে একে সাতটা দিন পার হয়ে গেল। এই সাতদিনে আমার জীবনে আহামরি কিছু ঘটেনি। আগের রুটিনে দিন পার হয়ে যাচ্ছে।
তবে আরিফের মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। আগের মতো ছন্নছাড়া ভাবটা আর নেই। সবার সাথে কথাবার্তা বলছে, ইনানকে সময় দিচ্ছে। তবুও কোথাও যেন একটা সুর কে’টে গেছে।
সকালে ঘুম ভাঙল দেরিতে। উঠে দেখি হিমি আমার মাথার কাছে বসে আছে। তার চোখ-মুখে উৎফুল্ল ভাব। বিস্মিত গলায় বললাম, “কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?”
হিমি বলল, “দাওয়াত আছে। দুপুরে বিরিয়ানি খাব। তড়িঘড়ি করে কাজকর্ম সব শেষ করে নাও।”
“দাওয়াত! কোথায় দাওয়াত? কে দাওয়াত দিয়েছে?”
“ভাইয়ার অফিসের এক কলিগ দিয়েছে। সে নাকি তোমার হাতের বিরিয়ানি খেয়ে ফিদা হয়ে গেছে। সেই সুবাদে আমাদের একবেলা নেমন্তন্ন করে খাওয়াবে।”
“তোমাকে কে বলল?”
“কি যেন নাম! ও হ্যাঁ, মনে পড়ছে। সুরভি। গতকাল উনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। মা’য়ের কাছে দাওয়াত দিয়ে গিয়েছেন। বারবার করে বলেছেন– আমরা যেন যাই।”
আরিফ দূরে বসে মোবাইল ঘাঁটছিল। সে ভীষণ অবাক হলো। আমি নিজেও অবাক হলাম। এসবের কিছুই আমি জানি না। শাশুড়ি মা আজ-কাল অনেক কথাই আমাকে বলেন না। অবশ্য আগেও কখনো বলেননি।
আরিফ বলল, “দাওয়াত দিয়ে গেছে মানেই যে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। যাওয়ার দরকার নেই।”
হিমি মুখ কালো করে ফেলল। আমি বললাম, “তুমি এসবের কিছু জানতে না?”
“কোন সবের কিছু?”
“সুরভি আপা এসেছিলেন। দাওয়াত দিয়ে দিয়েছেন। এসব তুমি জানতে না?”
“বাড়িতে এসেছিল জানি। আমার সাথেই এসেছিল। দাওয়াত দেওয়ার ব্যাপারটা এখন জানলাম।”
ব্যাপারটা আমার কাছে একটুও ভালো লাগল না। গতকাল আমি বাড়িতে ছিলাম না। ইনানকে নিয়ে মা’য়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। শেষ বিকেলে ফিরেছি। সেজন্যই হয়তো উনার সাথে দেখা হয়নি। কিন্তু আরিফ কি আমায় কথাটা বলতে পারত না? হয়তো বলার প্রয়োজন মনে করেনি। তাছাড়া আমি কে– যে সব কথা আমায় বলতে হবে!
হিমি বলল, “আচ্ছা থাক। তোমরা আর নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি করো না। ভাবী, মা তোমায় ডাকছিল।”
হাত-মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম। শাশুড়ি মা বললেন, “হিমিকে তোমাকে কিছু বলেছে?”
“দাওয়াতের ব্যাপারে বলেছে। আচ্ছা আম্মা, উনি কাকে কাকে দাওয়াত দিয়েছেন?”
“আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে। বারবার করে বলেছে।”
“আরিফ যেতে নিষিদ্ধ করেছে আম্মা। বলেছে– দাওয়াত দিলেই যেতে হবে এমন কথা কোথাও লেখা নেই।”
“এই ছেলেটার কথাবার্তা হয় না! মেয়েটা কতবার করে বলে গেল। এখন না গেলে আমাদের কি ভাববে?”
“কি আর বলব! সে যা ভালো মনে করেছে তাই বলেছে।”
শাশুড়ি মা ছোট একটা নিঃশ্বাস গোপন করলেন। তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, “আলুভর্তা ভাত বসিয়ে দাও। কত বেলা হলো সেদিকে কি কোন খেয়াল আছে তোমার?”
ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে নিজের কাজ করতে লাগলাম৷ উনার আমার সবকিছুতেই সমস্যা হয়। এ আর নতুন কি!
দুপুরের রান্না প্রায় শেষ। ডাল বাগার দেওয়া বাকি। রসুন কুঁ’চি করছি। হিমি রান্নাঘরে ঢুকল। নরম গলায় বলল, “মা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না।”
“কেন কি হয়েছে?”
“ওই যে ভাইয়ার কলিগ সুরভি, উনি কল দিয়েছেন। বললেন– উনার সব রান্না শেষ। এখন কেন যাব না বলছি। এত খাবার কে খাবে। তাছাড়া আমরা যাব বলে উনি আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন।”
“কি করব বলো? আমি তো এসবের কিছুই জানতাম না। সকালে তুমি বললে তাই শুনলাম। তাছাড়া তোমার ভাই যেতে নিষেধ করে দিয়েছি। এই মুহূর্তে আমি কি করতে পারি বলো?”
“মা বলছিল– তার শরীরটা ভালো লাগছে না। মাথা ব্যাথা করছে। তাছাড়া বাইরে যে রোদ, রোদে ভেতর গেলে অসুস্থ হয়ে যাবে। ভদ্রমহিলা বারবার করে কল দিচ্ছেন, না গেলে খুব খারাপ দেখায়।”
“আর কি বলেছেন?”
“তোমাকে আর আমাকে যেতে বলেছে। আপাতত ভাইয়াকে জানানোর প্রয়োজন নেই, ভাইয়া ফিরলে মা তাকে বুঝিয়ে বলবে।”
“না রে হিমি। তুমি তো সবটাই জানো। সংসার নতুন কোন ঝামেলা চাই না।”
হিমি মুখ গোমড়া করে ফেলল। মেয়েটা বেড়াতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু শাশুড়ি মা তাকে কোথাও যেতে দিতে চান না, কলেজের বন্ধুদের সাথেও তেমন একটা মিশতে দেন না। এক কথায় উনি বেশ রক্ষনশীল।
হঠাৎই আমার মন পরিবর্তন হয়ে গেল। চাপা রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। হালকা গলায় বললাম, “মন খারাপ করো না। আম্মাকে বলো আমরা যাচ্ছি। ঘরে গিয়ে তৈরি হয়ে এসো।”
হিমির মুখে হাসি ফুটে উঠল। ঝলমলে গলায় বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। এক্ষুনি যাচ্ছি আমি। তুমি ইনানকে রেডি করে দাও।”
সুরভির ভাড়া বাসাটা ছিমছাম। দুটো ঘর, ঘরের সাথে বাথরুম, রান্নাঘর। দোতলার ছোট্ট বারান্দায় কয়েকটা টব রাখা, তার পাশে একটা আরামকেদারা।
দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই সুরভি দরজা খুলে দিল।
“এসেছ! আমি ভেবেছিলাম তোমরা আর আসবে না!”
মিষ্টি হাসিতে মুখ ভরিয়ে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেল। আমি সংক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে হাসলাম। হিমি আগ্রহী দৃষ্টিতে চারপাশে তাকাচ্ছে। ইনান আমার কোলে চুপচাপ।
ঘরজুড়ে চমৎকার খাবারের গন্ধ ছড়িয়ে আছে। খিচুড়ি, রোস্ট, কাবাব, রায়তা, পায়েস–সব কিছুই সাজানো। মনে হচ্ছিল, বিশেষ কোন অনুষ্ঠান চলছে।
সুরভি হাসল। সহজ গলায় বলল, “তোমার হাতের সেই বিরিয়ানি খাওয়ার পর মনে হলো, আজ তোমাদের জন্য আমিও কিছু করি। তাই তোমার শাশুড়িকে বলে এসেছিলাম। তোমাকে বললে তো আর আসতে না। সেজন্য এই ব্যবস্থা”
আমি কৃত্রিম হাসি দিলাম।
“অসংখ্য ধন্যবাদ। এত কষ্ট করলেন।”
“কষ্ট নয়, আনন্দ। তাছাড়া আমি কারো ধার রাখতে পছন্দ করি না।”
আমি একটু চমকে গেলাম। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। হিমি সেটা লক্ষ্য করল কিনা জানি না। সুরভি বুঝতে পারল না, না-কি বুঝেও না বোঝার ভান করল?
খাওয়া-দাওয়া শুরু হলো। সুরভি ইনানকে কোলে নিতে চাইল। ইনান শক্ত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরল। সে সাধারণত ভয়ে কাউকে কোলে যেতে চায় না। আমি কোমল গলায় বললাম, “না না, ও নতুন জায়গায় একটু ঘাবড়ে যায়।”
“ওহ! বুঝতে পেরেছি, আরিফেরও এমন অভ্যাস আছে। খুব আপনজন ছাড়া সহজ হয় না। তবে এখন আর হয় না… মাঝে মাঝে তো এমনভাবে কথা বলে মনে হয় আমি…”
সে হেসে থেমে গেল। কথা শেষ করল না। কিন্তু বাকিটা আমি শুনতে না চাইলেও বুঝে ফেললাম। গলায় খাবার আটকে গেল। কাশতে লাগলাম।
হিমি বলল, “পানি নাও। তুমি ঠিক আছ?”
হিমি পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে গিয়ে খানিকটা পানি আমার গায়ে ফেলে দিলো। তড়িঘড়ি করতে গিয়ে ওর এঁটো হাত আমার কাপড়ে গেলে গেল। কাজটা সে ইচ্ছে করে করেনি। তবুও লজ্জিত গলায় বলল, “দুঃখিত, আমি বুঝতে পারিনি।”
হালকা হেসে বললাম, “সমস্যা নেই। আমি পরিষ্কার করে নিচ্ছি।”
সুরভি বলল, “বাথরুম ওদিকে।”
ইনানকে হিমির কোলে দিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। দরজা বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। চোখে ক্লান্তি আর হালকা বিষণ্ণতা দেখে বুকের ভেতর কেমন একটা করে উঠল। কাপড়ের ঝোল পরিষ্কার করলাম। পানির ছিটায় মুখ ভিজিয়ে যখন একটু স্বস্তি খুঁজছিলাম, তখনই চোখে পড়ল– দেয়ালের হুকে একটা শার্ট ঝুলছে। চমকে শার্টের দিকে তাকালাম। শার্টটা আমার খুব পরিচিত এবং এর গন্ধটাও চেনা।
আর কিছু ভাবতে পারলাম না। তবে কি এজন্যই আরিফ আমাকে এখানে আসতে নিষেধ করেছিল? এখানে এলে ওর সত্যিটা আমার চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে যেত। তাই এতকিছু? একা একটা মেয়ের বাসার বাথরুম আরিফের শার্ট ঝুলছে। এই ব্যাপারটা সে কোন ভাষায় ব্যাখ্যা করবে? কোন অযুহাতে এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হবে?
নিজেকে শান্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে লাগলাম। শার্টটা ভাজ করে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখলাম।
মাথার ভেতর চক্কর দিয়ে উঠছে। হঠাৎই হিমির চিৎকার কানে এলো। ছুটে এসে দেখি– সুরভি মাটিতে পড়ে আছে। তার পিঠে মাঝবরাবর ছু’রি বিঁ’ধে আছে। ক্ষ’তস্থান থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে।
হিমি ইনানকে জড়িয়ে ধরে কাঁপছে।
“এসব কিভাবে হলো?”
হিমি বলল, “জানি না ভাবী। আমি কিছু জানি না। উনি চেয়ারে বসে ছিলেন। হঠাৎই মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন। তুলতে গিয়ে দেখি পিঠে ছু’রি বিঁ’ধে আছে। সত্যি বলছি আমি কিছু করিনি।”
আমার কিছু বলা উচিত। কিছু একট করা উচিত। কিন্তু কি করব? পা দু’টো সীসার মতো জমে গেছে। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।
চলবে