বাতাস বলে দেয় পর্ব-০৮

0
14

#বাতাস_বলে_দেয়
#ফারহানা_কবীর_মানাল

৮.
ঝাঁ-ঝাঁ রোদের মধ্যে রাস্তায় নামলাম। আরিফের কপালে ঘেমে গেছে। সে পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছল। চিন্তিত গলায় বলল, “পুলিশের ভাব-গতিক ভালো লাগছে না। কাজের প্রতি গুরুত্ব নেই।”

“ওদের কাছে সব কে’স সমান। নানান ঝামেলায় হিমির ব্যাপারটা আলাদা করে দেখবে না। ওকে বের করতে হলে আমাদের অন্য উপায় ভাবতে হবে। উকিলের সাথে কথা বলেছ?”

“বলেছি। কোর্টের তারিখ না পড়লে সে-ও কিছু করতে পারবে না।”

“পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে কোন পথ খুঁজে পাচ্ছি না। কি করব না করব কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“তানজিলা! থানায় চলো। দারোগা সাহেবের সাথে কথা বলতে হবে। আমরা এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।”

আরিফের সাথে থানায় ঢুকলাম। দারোগা সাহেব চেয়ারে বসে কিছু লিখছেন। আমাদের দেখে কলম থামালেন। শুকনো গলায় বললেন, “আপনারা এখানে? কিছু বলবেন?”

আরিফ বলল, “আপনার সাথে কয়েকটা কথা বলতে এসেছি। হিমি বেশ ছোট। ওকে এইভাবে জে’লে রাখতে ভালো লাগছে না।”

“আপনাদের ভালো লাগায় না লাগায় কিছু যায়-আসে না। নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ছাড়া পাবে না।”

আমি বললাম, “তাহলে আপনারা একটু জলদি তদন্ত শেষ করেন। আমি জানি হিমি কিছু করেনি।”

দারোগা সাহেব বরফ শীতল গলায় বললেন, “তাহলে কি আপনি করছেন?”

“নাহ! এর আগে আপনাদের অনেকবার বলেছি আমি তখন বাথরুমে ছিলাম।”

“আমরা আমাদের মতো করে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সময় হলে জানতে পারবেন। তাছাড়া আমাদের আরও অনেক কে’স দেখতে হয়। একটা বিষয় নিয়ে পড়ে থাকার সময় নেই।”

আরিফ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস গোপন করল। তরল গলায় বলল, “আমরা কিছু করতে পারব না?”

“কি করতে চাইছেন? উকিল নাকি প্রাইভেট ডিটেকটিভ নিযুক্ত করবেন?”

“যদি করি, তাহলে কি কোন অসুবিধা হবে?”

“অসুবিধার কিছু নেই। তবে সে আমাদের কাজে কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না।”

“তদন্তের জায়গাগুলো দেখতে হলে?”

“আমাকে বলবেন, নিয়মের মধ্যে যতটুকু পারি সাহায্য করব। যাইহোক একটা কথা বলেন, অফিসের কারো সাথে কি সুরভির কোন ঝামেলা ছিল? কোন ধরনের মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি বা এমন কিছু?”

“না, সে খুব মিশুক মানুষ। তবে বসের সাথে”

“বসের সাথে?”

“বস খুব গম্ভীর স্বভাবের। তেমন কথা বলেন না। সুরভির সাথেও বলতেন না।”

দারোগা সাহেব বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর আর তেমন কথা হলো না। আরিফ আমাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। বাড়িতে ফিরে বলল, “গোয়েন্দা ঠিক করব বললাম। কিন্তু এই ব্যাপারে তো আমি কিছুই জানি না। কার কাছে জিজ্ঞেস করা যায়?”

“আমিও বুঝতে পারছি না। আব্বা আম্মা কিছু জানতেন নাকি, জিজ্ঞেস করে দেখবে?”

সে খাবার টেবিলে কথাটা তুলল। গোয়েন্দা ঠিক করবে শুনে শাশুড়ি মা খুব খুশি হলেন। উজ্জ্বল গলায় বললেন, “নান্নুর ছেলেটা এ ব্যাপারে ভালো বোঝে। শুনেছি আগে-পরে নানান কে’স সমাধান করেছে। ওকে আসতে বললে কেমন হয়?”

শশুর আব্বু ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। হালকা গলায় বললেন, “মন্দ হয় না। নামডাক শুনেছি বটে। তবে তার বেশিরভাগই তোমার মুখে। অন্যকারো কাছে শুনিনি।”

নান্নু শাশুড়ি মায়ের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। বছর তিনেক আগে বাগেরহাটে কি এক কাজের জন্য এসেছিল। কাজ শেষ হলো রাত বারোটায়। কোথায় যাবে কোথায় যাবে করতে করতে শেষ পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে এসেছিল। শাশুড়ি মা তার বেশ যত্ন-আত্তি করলেন। সেই থেকে পরিচয়। যোগাযোগ আছে। শুনেছি তার বড় ছেলেটা অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি শখের গোয়েন্দাগিরি করে বেড়ায়। এর মধ্যেই বেশ ভালো নামডাক করে ফেলেছে। অবশ্য সবই শোনা কথা। কতটা সত্যি জানা নেই!

রাতের রান্না শেষ করে সবে একটু দম ছেড়েছি। সন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে। শাশুড়ি মা বললেন, “তানজিলা, ভালো করে দু-প্যাকেট নুডলস রান্না করো, দু’টো ডিম সেদ্ধ করো। হামজা আসছে।”

“কে আসছে আম্মা?”

“হামজা আসছে। ওই যে তখন বললাম নান্নুর বড় ছেলে গোয়েন্দা। আরিফ বলার পরপরই আমি নান্নুকে কল দিয়েছিলাম। একবার বলাতেই রাজি হয়ে গেল। ছেলেটা বেশ অনেকক্ষণ আগে রওনা দিয়েছে। এসে পড়বে।”

ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছে। তবে উপায় নেই। না বললে হয়তো তিনি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করবেন। আরিফের অবস্থা বুঝতে পারছি, ওকে কোন ধরনের চাপে রাখতে চাই না। পারিবারিক অশান্তি চেয়ে বাজে অনুভূতি আরকিছুই হতে পারে না।

রাঁধতে বেশি সময় লাগল না। সবকিছু গুছিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম। ইনান মেঝেতে বসে আছে। আরিফের সাথে খেলছে। আমি তাদের পাশে গিয়ে বসলাম।

“আম্মা বললেন– হামজা আসছে৷ ওই গোয়েন্দা ছেলেটা।”

“আসুক। দেখি কেমন কি করে, পছন্দ না হলে পরে না হয় অন্য কাউকে খুঁজব।”

“কিছু বুঝতে পারছি না। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসেছে কি-না কিছু জানো?”

“না, দারোগা সাহেব কিছু বলেননি।”

“ভদ্রলোক আমাদের কিছু বলতে চাইছেন না। বোধহয় সন্দেহ করছেন।”

“সন্দেহ করা অন্যায় নয়।”

“আরিফ।”

“হ্যাঁ।

“তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। নানান চিন্তায় ভুলে গিয়েছিলাম।”

“কি কথা? গুরুত্বপূর্ণ কিছু?”

“মনে হচ্ছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সুরভির বাথরুমে আমি তোমার একটা শার্ট পেয়েছিলাম।”

“মানে! আমার শার্ট সুরভির বাথরুমে কিভাবে যাবে? এসব তুমি কি বলছ?”

“সব বলছি। সেদিন আমি..”

আরিফকে সব ঘটনা খুলে বললাম। সব শুনে সে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। চিন্তিত গলায় বলল, “অন্য কারোও হতে পারে। তাছাড়া বাজারে একই রকমের শার্ট কী একটা নাকি!”

“শার্ট হতে পারে কিন্তু তোমার পারফিউম মিলল কিভাবে? আমার মনে হয় কেউ ইচ্ছে করে এমন করেছে।”

“বুঝতে পারছি না৷ শার্ট দু’টো নিয়ে এসো তো।”

উঠে গিয়ে আলমারি খুললাম। শার্ট দু’টো আরিফের হাতে দিয়ে বললাম, “হুবহু এক। কোথায় বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই।”

সে বেশ কিছুক্ষণ শার্ট দু’টো নেড়েচেড়ে দেখল। নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকে বলল, “হতে পারে ব্যাপারটা কাকতালীয়, নয়তো কেউ ইচ্ছে করে এমন করেছে।”

“বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে ঘোর অন্ধকারে আলো খুঁজে বেড়াচ্ছি।”

শাশুড়ি মা ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকলেন। উৎসাহী গলায় বললেন, “হামজা চলে এসেছে। সোফায় বসা৷ তোরা দু’জন এদিকে আয়।”

সোফার এক কোণে পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের এক যুবক বসে আছে। শক্ত-পোক্ত চেহারা এবং বেশ সুদর্শন। কপালের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে চুল ছড়িয়ে রেখেছে। সে আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। গলা টেনে সালাম দিয়ে বলল, “খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে কাজের কথা বলব। আশা করি সমস্যা হবে না।”

শাশুড়ি মা বললেন, “না কোন সমস্যা হবে না। তুমি আগে হাত-মুখ ধুয়ে ঠান্ডা হও। কিছু একটু মুখে দাও। তা বাবা, তোমার বাড়ির লোকেরা ভালো আছে তো?”

“জ্বি খালা, ভালো আছে। কি নিয়ে তদন্ত করতে হবে যদি একটু বলতেন।”

আরিফ গম্ভীর গলায় বলল, “আমার বোন হিমি। খু’নের মামলায় সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রে’ফ’তা’র হয়েছে। পুলিশ ঠিকমতো কাজ করছে না তাই তোমাকে আসতে বলেছি।”

সে সেদ্ধ ডিম কামড় বসাতে বসাতে বলল, “কাজ করছে ঠিকই। আপনাদের বলছে না। পুলিশের এই এক স্বভাব। কথা পেটে পঁচিয়ে ফেলবে তবু বলবে না। সে কথা থাক, কিভাবে কি হয়েছে যদি একটু বর্ণনা দিতে।”

আমি তাকে গোটা ঘটনা খুলে বললাম। শুনে তার কপালে ভাজ পড়ল। সহজ গলায় বলল, “বেশ ঝামেলার কেস। ঘরে কেউ ছিল কি-না জানেন না? বা দেখেননি?”

“কেউ ছিল না। আর যখন খু’ন হয়েছে তখন হিমি তার পাশের চেয়ারে বসে খাবার খাচ্ছিল।”

“অদ্ভুত ব্যাপার! যাইহোক, আপনাদের কাকে সন্দেহ হয়?”

“সন্দেহ করার মতো কেউ নেই। সেখানে কেউই ছিল না যাকে দোষারোপ করা যায়।”

“ঠিক আছে। কাল সকাল থেকে তদন্ত শুরু করব। সুরভির বাসার ঠিকানা দিয়ে রাখবেন। গোড়া থেকে শুরু করতে হবে।”

আরিফ মাথা দোলালো। রাত বাড়ছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বোধহয় বৃষ্টি নামবে। দেরি করলাম না। খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভাঙল ছয়টায়। ভোর রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখনও থামার নাম গন্ধ নেই। ঝমঝম শব্দে চারপাশ মুখরিত হয়ে আছে। আরিফ বলল, “তানজিলা এক কাপ চা বানিয়ে দাও না। এমন বৃষ্টিতে বের হতে ইচ্ছে করে না।”

চুলায় চায়ের পানি বসলাম। হামজা এসে বলল, “আপা, চা বানাবেন? তাহলে আমাকেও এক কাপ দিয়েন। দু’চামচ চিনি দিবেন। এক চামচ উঁচু উঁচু আর এক চামচ সমান সমান। এর চেয়ে সামান্য বেশি কম হলেও আমি সেই চা পান করতে পারি না।”

অল্প হাসলাম, কথা বললাম না। সে দেখল কি-না জানি না। সবজির ঝুড়ি থেকে শশা তুলে খেতে লাগল।

ঘড়ির কাঁটা নয়টার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। বৃষ্টি থামেনি। আরিফ অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বিছানায় বসে আছে। ইনান খাটের ওপর বসে মুড়ি ছড়াচ্ছে। হামজা দরজার কড়া নাড়িয়ে ঘরে ভেতর ঢুকল। স্বাভাবিক গলায় বলল, “সুরভির বাড়ির ঠিকানা দেন তো।”

আরিফ বলল, “এখন ঠিকানা নিয়ে কী করবে?”

“একটু বের হব। খোঁজ খবর করতে হবে।”

“এই বৃষ্টিতে বের হতে হবে না। পরে যেও।”

“সমস্যা নেই। আপনি দেন।”

আরিফ ঠিকানা লিখে দিলো। শ্বশুর আব্বু, শাশুড়ি মা’য়ের শত বারণ শর্তেও হামজা বেরিয়ে গেল। ছাতার নিচে নাড়ি মুড়ি দিয়ে হাঁটছে। বাতাসের ঝাপটায় তার গায়ে বৃষ্টির পানি এসে পড়ছে।

বৃষ্টি থামল বিকেল তিনটার দিক। হামজা এখনও বাড়ি ফেরেনি। শাশুড়ি মা বললেন, “ছেলেটা কোথায় গেল কে জানে! পথঘাট চেনে না। মোবাইল নম্বরও নেই। হারিয়ে গেল কি-না কে জানে!”

“ভয় নেই খালা। এখন আর বাচ্চা ছেলে নই। হারিয়ে যাব না।”

চমকে তাকালাম। হামজা দরজার সামনে কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। ব্যস্ত গলায় বললাম, “ছাতা থাকার পরেও ভিজলেন কিভাবে? এভাবে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

“বৃষ্টি বিলাসের শখ জেগেছিল। সমস্যা নেই। আমার কিছু হবে না। আমি খুব ভিজতে পারি।”

“কোথায় গিয়েছিলেন? এতক্ষণই বা কোথায় ছিলেন?”

“সে অনেক কথা। কাপড় বদলে এসে বলছি। আমায় এক কাপ চা বানিয়ে দেন। চা পান করে হিমির সাথে দেখা করতে যেতে হবে।”

“ঠিক আছে আনছি।”

“আপা! চায়ে চিনির মাপটা মনে আছে?”

ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, “মনে আছে।”

হামজা তৃপ্ত ভঙ্গিতে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। প্রতিবার চুমুক দেওয়া পর বলছে, “খুব ভালো হয়েছে। খুব ভালো হয়েছে। চিনির মাপ একদম ঠিকঠাক।”

“কী করলেন, কোথায় গিয়েছিলেন সে-সব কথা কিন্তু বললেন না।”

“সুরভির বাসার কাছে গিয়েছিলাম। খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম। ভদ্রমহিলা একা থাকলে বেশ অনেক লোক তার সাথে দেখা করতে যেত।”

“মকবুল সাহেব তো এমন কিছু বলেননি।”

“মকবুল সাহেব কে? বাড়িওয়ালা?”

“জ্বি। কিভাবে বুঝলেন?”

“ভদ্রলোক খুব বেশি সুবিধার না। পুলিশের ঝামেলায় পড়ে সে বেশ বিরক্ত। সুরভির কথা জিজ্ঞেস করতে কেমন এড়িয়ে গেল।”

“কি জিজ্ঞেস করেছিলেন?”

“বললাম– আমি সুরভির দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। যদি একটু ডেকে দিতেন। তিনি কঠিন মুখে বললেন– সুরভি নামের কেউ তার বাড়িতে থাকে না। যে ছিল সে মা’রা গিয়েছে। তারপর আর কিছুই বললেন না।”

“এতটুকুই জেনেছেন?”

“আজকের জন্য এ-ই বেশি হয়ে গিয়েছে। চা শেষ। তৈরি হয়ে আসুন। হিমির কাছে যেতে হবে।”

“ঠিকানা বলে দিলে আপনি যেতে পারবেন না? কিংবা আরিফের জন্য অপেক্ষা করুন। ও এসে আপনাকে নিয়ে যাবে।”

“আপনার যেতে খুব বেশি অসুবিধা হলে খালা বলুন। ঝিমিয়ে কাজ করা আমার পছন্দ না।”

“ঠিক আছে চলুন। আম্মাকে বলে দেখছি।”

“হিমি কোথায় এখন? জে’লে?”

“১৮ বছরের কম বয়সী কেউ যদি স’ন্দে’হ’ভাজন হিসেবে আ’ট’ক হয়, তাহলেও তাকে সাধারণ থানার হা’জ’ত বা বড়দের কা’রা’গা’রে রাখার নিয়ম নেই। তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাকে নিরাপদ স্থানে (যেমন: শিশু সহায়তা কেন্দ্র বা কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র) রাখতে হবে।”

“আপনি জানেন দেখছি। যাইহোক বাগেরহাটে এটা কোথায়?”

“পঁচা দিঘির পাড়ে। আমি আম্মাকে বলছি। তৈরি হয়ে নিন।”

“তৈরি আছি।”

শাশুড়ি মা যেতে রাজি হলেন। কিন্তু তিনি আমাকেও সাথে যেতে বলছেন। হিমিকেও দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই আর অমত করলাম না। দু’টো রিকশা নিয়ে রওনা করলাম।

বেশ কাঠখড় পু’ড়ি’য়ে দেখা করতে হলো। গোয়েন্দা ঠিক করা হয়েছে শুনে হিমি তেমন আগ্রহ দেখাল না। হামজা যে-সব প্রশ্ন করছে শান্ত ভঙ্গিতে সে-সব প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগল। শেষে আমায় ডেকে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “নাইমাকে বলতে পারলে না? ও খুব ভালো তদন্ত করতে পারে।”

“তোমার সেই বান্ধবী?”

“হুম। ভাইয়াকে বলবে যেন ওকে আমার কথাটা বলে। আমার মন বলছে পারলে ও-ই পারবে। বিশ্বাস করো।”

“তুমি যাকে ভরসা করো, তাকে বলতে কোন আপত্তি নেই। আমি তোমার ভাইকে বলব। কিন্তু নাইমাকে কোথায় পাব? তুমি কি বাড়ির ঠিকানা জানো?”

হিমির নাইমার এলাকার নাম বলল। তার ভাই এবং বাবার নামও বলল। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা বলতে পারল না। মুচকি হেসে তাকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করলাম। কোমল গলায় বললাম, “তোমার ভাইকে বলব যেন তোমার কথাই রাখে। নাইমা কি রাজি হবে?”

হিমি হতাশ গলায় বলল, “জানি না!”

আকাশের মেঘ কাটেনি। আবারও বৃষ্টি নামতে পারে। বাপের জন্মে দেখিনি বৈশাখ মাসে এত বৃষ্টি হয়।

চলবে