#বাতাস_বলে_দেয়
#ফারহানা_কবীর_মানাল
১৪.
ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড গিজগিজ করছে। পা ফেলার জায়গা নেই। বারান্দায়ও ভীড়। বাচ্চা একটা ছেলে বি’ষ খেয়েছে৷ মায়ের সাথে নতুন মোবাইল কেনার টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঘরে রাখা কীটনাশক ফেলেছে। এখন তাকে সমানে পানি পান করিয়ে বমি করানো হচ্ছে। লোকজন ছেলেটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। দু’জন ভদ্রলোক এই জেনারেশন উচ্ছন্নে যাওয়া নিয়ে লম্বা বয়ান দিচ্ছে। পাশ থেকে দু’জন মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে তাদের কথায় সায় দিচ্ছে। হামজা ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে গেল। ডাক্তারের টেবিলে ইনানকে শুইয়ে দিয়ে বলল, “মিষ্টি খাওয়ার পর থেকে বমি করছে।”
নার্সের পোশাক পরা মহিলা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “এখানে শুইয়েছেন কেন? বেডে নিয়ে যান। ডাক্তারের টেবিলে রুগীকে শুইয়ে দিয়েছেন! কাণ্ডজ্ঞান নেই নাকি?”
হামজা তার ঝাড়িতে দমে গেল না। স্পষ্ট গলায় বলল, “বেড ফাঁকা নেই। বাচ্চার অবস্থা ভালো না। ঢিলেমি করার সময় নেই।”
নার্স কিছু বলতে যাচ্ছিল। ডাক্তার সাহেব হাত নেড়ে তাকে থামালেন। কোমল গলায় বললেন, “ওকে আমার রুমে নিয়ে আসুন। এই বেডে শুইয়ে দেন। কতক্ষণ আগে মিষ্টি খেয়েছে? নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে একদম।”
তানজিলা কাঁপা গলায় তাকে সব খুলে বলার চেষ্টা করল। পারল না। তার সব কথা কেমন জড়িয়ে গেল। ডাক্তার সাহেব ইনানের কব্জিতে হাত রাখলেন। এক টুকরো সাদা কাগজে দু’টো ওষুধের নাম লিখে দিয়ে বললেন, “দ্রুত নিয়ে আসুন। মনে হচ্ছে খাবারে কোন সমস্যা ছিল। বি’ষা’ক্ত কিছু পেটে পড়েছে। আইসিইউতে নিতে হবে। আপনাদের একজন আমার সাথে চলুন। কিছু ফর্মালিটি করতে হবে।”
হামজা তার সাথে গেল। তানজিলাও গেল। ইনানকে আইসিইউতে নেওয়ার পর আকরাম সাহেব পুলিশ নিয়ে আসলেন। রেশমা বেগমও এসেছেন। বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছেন। তানজিলা গিয়ে তার হাত ধরল। সে আর দাঁড়াতে পারছে না৷ তার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে। চোখে অন্ধকার দেখছে। মনে হচ্ছে পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। ছেলের এমন অবস্থায় কোন মা’ই নিজেকে স্বাভাবিক এবং শান্ত রাখতে পারে না। শান্ত থাকা বোধহয় কখনো সম্ভবও না।
হামজা বলল, “খালা উনাকে বসিয়ে দেন। মনে হচ্ছে পড়ে যাবে।”
তার কথা শেষ হওয়ার পরপরই তানজিলা মেঝেতে ঢলে পড়ল। রেশমা বেগম শত চেষ্টা করেও তাকে ধরে রাখতে পারলেন না। বরং নিজেও উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন। বারান্দায় দাঁড়ানো অন্য মহিলারা ছুটে এসে তাদের ধরল। উঁচু গলায় নার্সদের ডাকতে লাগল।
নাইমা ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়েছে অনেকক্ষণ। শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঠিক তখনই তার ফোন বেজে উঠল। ফোনের ওপাশ থেকে হামজা বলল, “মনে হয় সুমি ইনানকে বি’ষ দিয়েছে। ইনানের অবস্থা ভালো না। ডাক্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। আইসিইউতে নিয়ে গিয়েছে। অবস্থা আরও খারাপ হলে খুলনা নিয়ে যেতে হতে পারে।”
এতটুকু বলে হামজা কল কেটে দিলো। নাইমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না।
নাইমা শরীরটা ভালো লাগছিল না। মাথার ভেতর নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না বিধায় বেশ অস্বস্তিতে ভুগছে। নিজেকে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে। তবুও সে ফোন রেখে ভাইয়ের ঘরে ছুটল। ব্যস্ত গলায় বলল, “ভাইয়া তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে। না করতে পারবে না৷ যেতেই হবে।”
হাবিব নববীর সাথে গল্প করছিল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে? এত রাতে কোথায় যেতে হবে?”
“ইনান, মানে হিমির ভাইপো হাসপাতালে। সুমি ওকে বি’ষ দিয়েছে। তুমি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলো। ওর অবস্থা ভালো না। আমাকে নিয়ে চলো ভাইয়া। ইনান খুব ভালো। শেষবার ওকে একটু অসুস্থ দেখেছিলাম। জ্বর ছিল। নিয়ে চলো না ভাইয়া। ও আমাকে নাইইইই নাইইই বলে ডাকে। আপিও বলে। কালও ডেকেছে। চলো না ভাইয়া। ভাবী তুমি একটু বলো না ভাইয়াকে।”
কথাগুলো বলতে বলতে তার চোখে পানি এসে গেল।
হাবিব বলল, “তুই একটু শান্ত হয়ে বস। আমি নিয়ে যাব। বাইক বের করছি। মা টের পেলে এত রাতে যেতে দিবে না।
নাইমা নববীর কাঁধে মাথা রাখল। নববী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “ চিন্তা করো না। আল্লাহ সাহায্য করবে।”
হাবিব প্যান্ট বদলে বাইক বের করল। তার বোনটা অন্যরকমের। কারো প্রতি মায়া জমালে তাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তার সামান্য কিছু হলেই ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। বেশ কিছুদিন ধরে ওর এই স্বভাবটা আরও বেড়ে গেছে৷ সে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। রাতের আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছি। মেঘ সরে গিয়ে চাঁদ উঠেছে। হাতেগোনা কয়েকটা তারা দেখা যাচ্ছে।
তানজিলার জন্য বেড পাওয়া যায়নি। মেঝেতে বিছানা পেতে তাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। জ্ঞান নেই, স্যালাইন চলছে। নাইমার তার পাশে গিয়ে বসল। ভেজা চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ম’রা গলায় বলল, “ইনান এখন কেমন আছে? ডাক্তার কি কিছু বলেছে?”
হামজা মাথা দুলিয়ে বলল, “ডাক্তার কিছু বলেনি৷ পুলিশ এসেছিল তাদেরকেও কিছু বলেনি।”
“ওহ আচ্ছা! সুমি বি’ষ দিয়েছিল বললেন– কিভাবে দিয়েছিল?”
হামজা তাকে সব ঘটনা খুলে বলল। রেশমা বেগমও কিছু কিছু বললেন। সব শুনে সে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। সরু গলায় বলল, “সেই চিঠি কোথায়? পুলিশেরা নিয়ে গিয়েছে?”
“না, বাড়তেই আছে। কাল সকালে থানায় দিয়ে আসব।”
“আমি একবার দেখতে চাই।”
“সমস্যা নেই। ওই দেখা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”
হাবিব গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। কথা বলছে না। হামজা তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “হামজা।”
হাবিব অল্প হেসে হাত মেলালো। নিজের নাম বলে আবারও একটু হাসল।
সকাল হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ আগে। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে এবং ক্রমশই তার তাপ বাড়ছে। তানজিলা চোখেমুখেও কিছুটা আলো পড়েছে। সে ভ্রু কুঁচকে চোখ মেলল। পাশে রেশমা বেগম ঢুলছেন।
তানজিলা বলল, “আম্মা, আমি! ইনানের কি অবস্থা? ডাক্তার কিছু বলেছে?”
“ডাক্তার বলেছে– ইনানের অবস্থা ভালো। সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসার কারণে বড় কিছু হয়ে যায়নি।”
“আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তোমার অশেষ রহমত। হামজা কোথায়?”
“তোমার শ্বশুর আর সে ইনানকে দেখতে গিয়েছে। এখন নাকি ভিজিটিং আওয়ার চলে।”
“আম্মা আমাকেও নিয়ে চলেন। আমি ওকে দেখব।”
রেশমা বেগম উঠে গিয়ে একজন নার্সকে ডেকে নিয়ে এলেন। নার্স মেয়েটা অল্প বয়সী। জলপাই রঙের পোশাক পরে আছে। বোঝা যাচ্ছে সে এখনও শিখছে। মেয়েটা তানজিলার হাত ধরল। কোমল গলায় বলল, “আমার সাথে আসুন। আস্তে আস্তে হাঁটবেন। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। ডাক্তার আপনার ছেলেকে দেখাতে বলে গিয়েছে।”
তানজিলা দূরে দাঁড়িয়ে ছেলের মুখ দেখল। ইনানের মুখ শুকনো, চোখের নীচ বসে গিয়েছে। বাচ্চাটাকে খুব ক্লান্ত এবং অসহায় দেখাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে আছে। মনে হচ্ছে সাগরের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। তানজিলার খুব ইচ্ছে করল ছেলের মুখে ঠোঁট ছোঁয়াতে। তবে পারল না। নার্স তাকে নিষেধ করল।
ডাক্তার সাহেব বললেন, “দ্রুত নিয়ে এসে খুব ভালল করেছেন। মনে হয় মিষ্টিতে অ্যন্টিমনি পটাসিয়াম টারট্রেট মেশানো ছিল। এটা এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ। যা শরীরের জন্য মা’রা’ত্ম’ক ক্ষ’তি’ক’র। এই যৌগ শরীরে ঢুকলে ১–২ ঘণ্টায় বমি, পেটব্যথা, ঘাম, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।
তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে হাইড্রেশন ও স্যালাইন না দিলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে চিকিৎসা পেলে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। আপনারা দ্রুত নিয়ে এসে খুব ভালো করেছেন।”
তানজিলা মাথা দোলালো। ডাক্তার সাহেব বললেন, “দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনার শরীরও খুব বেশি ভালো না। চিন্তা করলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”
সে মাথা দোলালো।
বেলা বারোটার দিকে নাইমা আবারও হাসপাতালে এলো। খালি হাতে আসেনি। কলা পেয়ারা কিনে নিয়ে এসেছে। সে প্রথমে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ইনানের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনলো। তানজিলা কাছে গিয়ে বলল, “আপনার শরীর কেমন আছে?”
তানজিলা মাথা দোলালো। তার অর্থ হ্যাঁ হতে পারে আবার না-ও হতে পারে।
হামজা বলল, “আমার মনে কে’সের মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য এই কাজটা করা হয়েছে। মানুষ কত জ’ঘ’ন্য! নিজেদের উদ্দেশ্যে সফল করার জন্য একটা বাচ্চাকেও ছাড় দিলো না।”
নাইমা বলল, “এমনও হতে পারে– সুমি বা যে-ই এই কাজ করুক সে আরিফ ভাইকে নাগালে আনার জন্য কাজটা করেছে। বাড়ির লোক অসুস্থ হলে কেউই গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে না।”
“আরিফ ভাই গা ঢাকা দিয়েছে এমন মনে হলো কেন? হতে পারে সে বিপদে আছে।”
নাইমা কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল, “আপনার কাছে আরিফ ভাইয়ের কোন ছবি আছে? উনাকে খুঁজতে একটু সুবিধা হতো।”
হামজা মোবাইল বের করে আরিফের ছবি দেখালো। সহজ গলায় বলল, “একটা সেলফি তুলেছিলাম। সেখানে আছে।”
“ছবিটা আমাকে দিতে পারবেন?”
“কিভাবে নিবেন? ম্যাসেন্জারে নাকি হোয়াটসঅ্যাপে?”
“ব্লুটুথ দিয়ে দেন। আপনার ছবি কেটে শুধু আরিফ ভাইয়ের ছবিটাই দেন।”
“আমার ছবি রাখলে কি সমস্যা? বারবার করে দেখতে ইচ্ছে করবে নাকি?”
“বাজে কথা বলবেন না। আরিফ ভাইয়ের ছবিটা দেন। আমাকে ফিরতে হবে।”
হামজা নাইমাকে আরিফের ছবি দিলো। অন্যরকম গলায় বলল, “আমি দেখতে আহামরি অসুন্দর নই। আমার ছবিটা নিলে গ্যালারির সৌন্দর্য বাড়ত।”
নাইমা বিরক্তি নিঃশ্বাস ফেলে হাঁটতে শুরু করল। তার মনে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এতক্ষণ তার মনে হচ্ছিল– আরিফ দোষী। অথবা কোন না কোনভাবে এই কে’সের সাথে গভীরভাবে জড়িত।
এখন আবার অন্যরকম লাগছে।
নাইমা চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো। মনে মনে বলল– ‘আরিফ ভাই খু’ন করেছে এবং সুমিও তার সাথে জড়িত। যেহেতু পুলিশ তাকে স’ন্দে’হ করছে তাই সে সুমির হাত দিয়ে ওই চিঠি পাঠিয়েছে। যেন তানজিলা আপু দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারে৷ পরিকল্পনাটা অনেকদিন আগের– আগে থেকেই উপহারের নাম করে টবের মধ্যে টাকা রেখে দিয়েছে। এতে করে সে যে কদিন থাকবে না তানজিলা আপুর টাকার সমস্যা হবে না।
নাইমা অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে হাঁটছে। হঠাৎই সে ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল। নিজেকে সামলে মুখ তুলে দেখল– রোহান দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ অবাক হয়েছে।
রোহান মুখ থেকে বিস্ময়ের ভাব সরালো না। বিস্মিত গলায় বলল, “রোজ রোজ কেন তোমার সাথে দেখা হয়? বিরক্ত লাগে! আবার ভালোও লাগে।”
নাইমা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। বিরক্ত গলায় বলল, “অন্যমনষ্ক ছিলাম তাই আপনাকে খেয়াল করতে পারিনি। দুঃখিত আমি।”
রোহান বলল, “দুঃখিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এখানে কেন এসেছিলে বললে ক্ষমা করে দেব।”
“মানুষ হাসপাতালে কেন আসে?”
নাইমা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে আরিফের ছবি দেখতে লাগল। রোহান বলল, “অনেক কারণেই আসতে পারে। ডাক্তার দেখাতে আসতে পারে, রোগীর সাথে আসতে পারে। প্রেমিকের সাথে ঘুরতেও আসতে পারে। আমার এক বন্ধু ওর প্রেমিকাকে নিয়ে এখানে আসে। হাসপাতালে বসে আড্ডা দেয় যেন কেউ সন্দেহ না করে। তুমিও কি…”
রোহান থেমে গেল। আরিফের ছবি দিকে তাকিয়ে বলল, “কার ছবি দেখছ?”
“ইম! আপনি উনাকে কোথাও দেখেছেন?”
রোহান লাফিয়ে উঠল। উত্তেজিত গলায় বলল, “হ্যাঁ দেখেছি৷ এইতো একটু আগেই এখানে ছিল। এক লোকের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল পরে রিকশায় উঠে চলে গেছে।”
“কোথায় গিয়েছে? কোন দিকে গিয়েছে বলতে পারবেন?”
“এদিকে গিয়েছে। কেন? কে হয় তোমার? এই তুমি এমন করছ কেন?”
নাইমা ব্যস্ততার সাথে একটা অটোরিকশায় উঠে বসল। ব্যস্ত গলায় বলল, “এদিকে চলুন। একটু দ্রুত চালাবেন। একটা রিকশা গেছে ওটাকে ধরতে হবে। ভাড়া নিয়ে ভাবতে হবে না। চলেন।”
অটোরিকশা ছেড়ে দিয়েছে এমন সময় রোহান দৌড়ে গিয়ে নাইমার সামনের সিটে বসল। কৌতুহলী গলায় বলল, “তোমার পরিচিত কেউ?”
নাইমা তার কথার জবাব দিলো না। হাবিবকে কল দিয়ে পুলিশ নিয়ে আসতে বলল। রোহান বলল, “কথা বলছ না কেন? এদিকে ওদিকে কি দেখছ?”
নাইমা শান্ত চোখে রোহানের দিকে তাকাল। রিনরিনে মিষ্টি গলায় বলল, “কি নাম আপনার?”
“রোহান।”
“রোহান! ওহ! বেশ ভালো নাম।”
রোহান একটা ভ্রু উঁচু করে তাকাল। নাইমা বলল, “আমার বোনের ছেলের নামও রোহান। ও অনেক ছোট। নয় বছর বয়স।”
“তাহলে আমিও কি তোমাকে খালা বলে ডাকব?”
“আপনি আমায় দেখে চেনেন কিভাবে?”
“যে মা’র দিয়েছিলে চেষ্টা করেও ভুলতে পারছি না। হা হা হা। তোমার হাতে মা’র খেয়ে মাথার তার ছিঁড়ে গেছে। স্ক্রুও হালকা ঢিলে হয়ে গেছে।”
নাইমা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। তার বুক ধুকপুক করছে। রোহান হাত উঁচু করে বলল, “ওইতো! ওই রিকশায় উঠেছে।”
নাইমা রিকশার দিকে তাকাল। রিকশা তাদের বেশ কাছাকাছি। খুব বেশি আট দশ মিটার দূরে হবে। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাইল। পারল না৷ একরাশ দুশ্চিন্তা তাকে গ্রাস করে আছে। দুশ্চিন্তা কাটাতে পারছে না।
চলবে