বাতাস বলে দেয় পর্ব-১৬

0
18

#বাতাস_বলে_দেয়
#ফারহানা_কবীর_মানাল

১৬.
আজকের বিকেলটা অদ্ভুত রকমের নিস্তব্ধ। চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়লেও যেন একরকম থমকে থাকা সময়। নাইমা নিজের পড়ার টেবিলে বসে আছে। তার চোখ-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। কেসের হিসাব মিলছে না। আরিফ সবকিছুর জন্য দোষী– এ কথা সে মানতে পারছে না। অথচ নাইমা নিজেও জানে এটাই সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে আরিফের চালাকিগুলো বুঝতে পারছে। নাইমা খাতা খুলল। এখন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে সবটা খুব গুছিয়ে লিখল।

প্রথম সন্দেহভাজন আরিফ–
টাকা মা’র হয়ে যাওয়ার কারণে আরিফই সুরভি খু’ন করেছে। কেননা সে বাড়ির দলিলপত্র জমা রেখে লোন নিয়েছিল। এত টাকা শোধ করা তার পক্ষে সম্ভব না। ব্যাপারটা জানাজানি হলে সে নিজের বাবা-মায়ের সামনে মুখ দেখাতে পারত না।

অন্যদিকে সে জানত– সুরভি ওইদিন খু’ন হবে। এজন্য তানজিলাকে যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু তানজিলা তার কথা শোনেনি। সে হিমিকে সাথে নিয়ে সুরভির বাসায় যায় এবং ঝামেলা তৈরি করে।

হিমিকে বাঁচাতে আরিফের গোয়েন্দা ঠিক করারও দু’টো কারণ আছে–
১. ছোট বোনের অবস্থা দেখতে পারছিল না।
২. তার ঠিক করা গোয়েন্দা কখনো তাকে স’ন্দে’হ করবে না।

সবকিছুই পরিকল্পনা মতো চলছিল। কিন্তু পুলিশ তার চালাকি ধরে ফেলে। ছু’রি ছোঁড়ার দক্ষতা, তানজিলাকে যেতে নিষেধ করা, হ’ত্যার কারণ সবকিছু মিলিয়ে স’ন্দে’হ তীর তার দিকেই যায়। আরিফ পুলিশের স’ন্দে’হ বুঝতে পেরে গা ঢাকা দেয়। সুমিকে দিয়ে তানজিলাকে চিঠি পাঠিয়ে পরিবারের লোকদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু ইনান অসুস্থ হওয়ার তার সব পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়। পিতৃত্বের টানে সে ছেলের খোঁজ নিতে আসে।

দ্বিতীয় সন্দেহভাজন সুমি–
সে-ও এই হ’ত্যার সাথে জড়িত। যেহেতু তারও টাকা মা’র গিয়েছে তাই তার এখানে অমত করার কারণ নেই। সে আরিফের কথায় চিঠি দিতে এসেছিল।

তাদের এই পরিকল্পনাটাও বেশ পুরনো। টাকা পাবে না জানার পরই তৈরি করা হয়েছে। এতদিন শুরু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিল।

নাইমা এক হাত দিয়ে নিজের কপাল চেপে ধরল। সরু গলায় বলল, “কিন্তু আরিফ ভাই এসব করলে সুরভি বাসায় তার শার্টের মতো শার্ট কে রাখল? আর কেনই বা রাখল? হ’ত্যাকারী নিশ্চয়ই তার অপরাধের প্রমাণ রাখতে চাইবে না। তাছাড়া ওই শার্ট অর্ডার দিয়ে আনা হয়েছে। মোহন লোকটা মোটা খরচ করে কাজটা করেছে। আবার সে-ও সুরভিকে টাকা দিয়েছে। তবে কি এই কে’সের সাথে মোহন জড়িত? নাকি অন্যকেউ?

সবকিছু এখন পর্যন্ত ঘোলাটে হয়ে আছে। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো। লক্ষ্য স্পষ্ট হচ্ছে না।
নাইমা সময় নিয়ে চিন্তা করল। সন্ধ্যায় নববীকে ডেকে বলল, “ভাবী তোমার সাথে ভাইয়ার কথা হয়েছে? তখন আমাকে নামিয়ে দিয়ে সেই যে গেল তারপর থেকে তো আর বাড়ি ফিরছে না। মাত্রই কল দিলাম কিন্তু মোবাইল বন্ধ।”

নববী বলল, “তোমার ভাই বলেছে তার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তা না করতে।”

“এতটুকু বলেছে?”

“হ্যাঁ এতটুকুই বলেছে।” কথাটা বলে সে কান খাড়া করল বাইকের শব্দ শুনে বলল, “ওই তো তোমার ভাই এসে গিয়েছে।”

নাইমা হাসি-হাসি মুখ করে বাইরে ছুটে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় বলল, “ভাইয়া, মুখ-হাত ধুয়ে জলদি এদিকে এসো। তোমার সাথে কথা আছে। তুমি..”

সে কথা শেষ করতে পারল না। রোহান থেকে চমকে উঠল। দ্রুত হাতে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে বলল, “ভাইয়া তুমি উনাকে কেন নিয়ে এসেছ?”

হাবিব বলল, “তোর কথামতো থানায় গিয়েছিলাম৷ সেখান থেকে ফেরার পথে ওর সাথে দেখা হলো।”

নাইমা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। হাবিব বলল, “এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নামাজ পড়েছিস?”

সে মাথা দোলালো।

“তাহলে নামাজ পড়ে আয়। নববীকে বল আমাদের দু’জনকে খেতে দিতে। রোহান তুমি কি নামাজ পড়বে? তাহলে আমার সাথে পুকুর ঘাটে এসো। ওজু করে নেবে।”

রোহান হাবিবের পেছনে গেল। দু’জনে নামাজ শেষ করে খেতে বসল। নাইমা বলল, “থানায় গিয়ে কি কিছু জানতে পারলে?”

“আরিফ ধরা পড়েছে। বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছিল। পদ্মাব্রিজ পর্যন্ত গেলে সেখানকার পুলিশ ওকে গ্রে’ফ’তা’র করেছে।”

“এসব তুমি কি বলছ? আরিফ ভাই কি কিছু বলেছে?”

“এখনও কিছু জানা যায়নি। যেহেতু এখন পর্যন্ত আরিফ শুধুমাত্র সন্দেহভাজন। তাই ওই থানায় সরাসরি মামলা হবে না। আরিফকে এখানে নিয়ে আসা হবে। হয়তো এতক্ষণে রওনা দিয়ে দিয়েছে৷ কাল সকালে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

“ভাইয়া তোমার কি মনে হয় আরিফ ভাই খু’ন করেছে?”

“আমি এখনও নিশ্চিত নই। তোর কথামতো মোহন, তমাল, সবুজ, প্রদীপ এবং সিমা এদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি।”

“সে-রকম কিছু জানতে পারলে?”

“পেরেছি। খাওয়া শেষে শান্তভাবে বলছি। রোহান তুমি এখন ফিরে যেতে চাও?”

রোহান অল্প হেসে বলল, “আপনি খুব ভালো মনের একজন মানুষ। বহুদিন বাদে এমন ভালো-মন্দ খাবার খেলাম। অনুমতি দিলে আমি এখন ফিরে যেতে চাই। আমার বন্ধু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

“ঠিক আছে তাহলে৷ একা যেতে পারবে নাকি নামিয়ে দিয়ে আসব?”

“সমস্যা নেই আমি যেতে পারব। আপনাদের কিছু লাগলে নিঃসংকোচে বলতে পারেন। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”

নাইমা বলল, “যে কোন কাজ বললেই করবেন?”

“করব। কি করতে হবে?”

“দু’জন লোকের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে দিতে পারবেন?”

হাবিব বলল, “তুই কাদের ব্যাপারে কথা বলছিস?”

“সুরভি এবং তার বাড়ির মালিক।”

“তোর মাথা ঠিক আছে? ও কিভাবে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেবে?”

রোহান বলল, “সমস্যা নেই। আমি পারব। বাড়ির ঠিকানা এবং নাম বললেই হবে।”

নাইমা তাকে মকবুল সাহেবের বাড়ির ঠিকানা দিলো। চিকন গলায় বলল, “সুরভি মা’রা গিয়েছে। আর উনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকত সেই বাড়ির মালিকের নাম মকবুল।”

“ব্যাপার না। এতটুকুই যথেষ্ট।”

নাইমা বলল, “যতটা মনে করছেন কাজটা ততটাও সহজ নয়। ভেবে বলুন আপনি পারবেন?”

“কাল সকাল নয়টায় হাসপাতালের সামনে থাকব। এবং আমার সাথে এই দু’জনের খবরও থাকবে।”

নাইমা শান্ত চোখে তাকাল। হাবিব বলল, “তোর কথা শেষ হলে এখন ওকে বিদায় জানানো উচিত। মেঘ ডাকছে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হতে পারে।”

নাইমা সরে দাঁড়াল। রোহান ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে গেল। সে যেতেই নাইমা বলল, “ভাইয়া, ওই ছেলেটা তোমাকে কি এমন বলেছে যে সোজা বাড়িতে নিয়ে এলে।”

হাবিব শুকনো গলায় বলল, “ছেলেটা এতিম। মা-বাবা কেউ নেই। কথায় কথায় বলল– কখনো নাকি ঘরে তৈরি খাবার খায়নি। তাই নিয়ে এসেছি।”

নাইমা আর কথা বাড়াল না। হাবিবকে সাথে নিয়ে নিজের ঘরে গেল।

হাবিব বলল, “আমি আরিফের অফিসের পিওনের সাথে কথা বলেছি। লোকটা বেশ ভালো। আগ্রহ দেখিয়ে আমার সব কথার জবাব দিয়েছে।”

“কি জানতে পারলে?”

“টাকা হারিয়ে সবার অবস্থা করুণ। তমাল তো প্রায় পা’গ’ল হয়ে গেছে। একদিন অফিসের সবার সামনে সুরভিকে হুমকি দিয়েছিল। বলেছিল– টাকা না পেলে সে সুরভিকে খু’ন করে ফেলবে। কিন্তু তারপর আর কোন ঝামেলায় জড়ায়নি।
আরিফ শার্টের ব্যাপারটা নিয়ে মোহনদের বাড়িতে গিয়েছিল। ওখানে তাদের বেশ ঝামেলা হয়েছে। মোহন পুলিশের কাছে এই নিয়ে অভিযোগও জানিয়েছে।”

“তুমি আর কারো সাথে কথা বলেছ?”

“বলেছি। প্রদীপের সাথে দেখা করেছিলাম৷ সে বলল– এসব খু’নের ব্যাপারে তার কোন হাত নেই। এমনিতেই বউ ছেলে নিয়ে পথে বসেছে। নতুন কোন ঝামেলায় জড়াতে চায় না।”

“তোমার কাউকে স’ন্দে’হ হয়?”

“সিমা নামের মেয়েটাকে আমার বেশ সন্দেহ হয়। শুনেছি সুরভির চাকরির ব্যাপারে সিমা সুপারিশ করেছিল। তাছাড়া আমি কথা বলতে গেলেও বেশি বেশি বলেছে।”

“কে’স শুরুর পর এতদিন হয়ে গেছে মোহন, তমাল, সবুজ, প্রদীপ, সিমা এদের কারো সাথে কখনো দেখা হয়নি।”

“পুলিশ সবার সাথে কথা বলেছে। একবার নয় বহুবার বলেছে। তবে সেদিন ওরা সবাই অফিসে ছিল। সিসিটিভি ফুটেজ আছে। শুধুমাত্র আরিফ এবং সুরভি এরা দু’জনে অফিসে ছিল না। আরিফের প্রতি স’ন্দে’হ এখান থেকেই গাঢ় হয়েছে।”

“বুঝতে পারছি। আবার সেই ছু’রি নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় আরিফ জিতেছিল। সবকিছু মিলিয়ে।”

“আজকে কিছু জানতে পারলে? দারোগা সাহেব কিছু বলেছেন?”

“আরিফকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হবে। তারপর সব জানা যাবে। হিমি কাল জামিন পাচ্ছে।”

“ভাইয়া, তুমি কি খুব ক্লান্ত?”

“এ কথা জানতে চাইছিস কেন?”

“হাসপাতালে যেতে চাই। তানজিলা আপুর সাথে কথা বলতে হবে। এমনিতে তার শরীর ভালো না। আরিফ ভাই গ্রে’ফ’তা’র হয়েছে জানলে পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়বে। তাছাড়া ওই চিঠির ব্যাপারে আমার জানার আছে।”

“দশ মিনিট জিরিয়ে তারপর যাব।”

নাইমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। উজ্জ্বল গলায় বলল, “ধন্যবাদ ভাইয়া। আচ্ছা সুমির ব্যাপারে কিছু জানতে পারলে?”

“পুলিশ তাকেও খোঁজার চেষ্টা করছে। মিষ্টিগুলো ফরেনসিক টেস্টের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকানদারকেও জিজ্ঞেস করা হয়েছে।”

“ঠিক আছে। তুমি একটু বিশ্রাম নাও। আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি।”

ঠিক দশ মিনিট পর নাইমা হাবিবের দরজায় কড়া নাড়ল। হাবিব বলল, “সদর দরজার কাছে দাঁড়া। বাইক বের করি।”

রাতের আকাশে চাঁদ তারা নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাইকে চলছে। নাইমা কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। সারাপথ কোন কথা বলল না।

হামজা হাসপাতালের বারান্দায় বসে বাদাম খাচ্ছে। সে তাদের দেখে উঠে দাঁড়াল। স্বাভাবিক গলায় বলল, “ইনান এখনও আইসিইউতে। দেখা করা যাবে না।”

নাইমা বলল, “ইনানকে দেখতে আসিনি। তানজিলা আপুর সাথে কথা বলব।”

“চারতলায়। বারান্দার শেষ বেডে। খালা আছে।”

“আরিফ ভাই ধরা পড়েছে– কথাটা জানতেন?”

হামজা চমকে উঠল। ব্যস্ত গলায় বলল, “না আমি কিছু জানি না। কখন ধরা পড়েছে?”

হাবিব বলল, “ঢাকায় যাচ্ছিল। পথে ধরা পড়েছে।”

“ওহ আচ্ছা!”

“আরিফ ভাই ঢাকায় যাচ্ছে– কথাটা আপনি জানতেন না?”

“এ কথার মানে কি? আমি কিভাবে জানব?”

“আপনি তদন্ত শুরু করেছেন বেশ অনেকদিন। এর মধ্যে শার্টের ব্যাপার ছাড়া অন্য কোন তথ্যের সন্ধান পাননি। আপনি কি নিজের কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন?”

হামজা কথার জবাব দিলো না। শান্ত চোখে নাইমার দিকে তাকাল।

নাইমা বলল, “সত্যি বলতে আপনি আমাকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবেছেন। আপনার সংগ্রহ করা তথ্য আমাকে জানাতে চাননি। অথচ আপনি জানতেন আমাকে শুধুমাত্র হিমির মন রক্ষার জন্য বলা হয়েছিল।”

হামজা বলল, “ঠিক ধরেছেন। আমি আপনাকে কিছুই বলিনি। কারণ আমার পর অন্যকাউকে ডাকাটা আমার ভালো লাগেনি। তাই কোন কিছু ভাগ করে নিতে চাইনি।”

“আরিফ ভাই নিখোঁজ, ইনানকে বি’ষ দেওয়া হয়েছে তবুও আপনি আমায় কিছুই বলেননি। কারণ আপনিও আমার মতো আরিফ ভাইকে দোষী ভাবছেন।”

হামজা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সে আশা করেনি নাইমা এতকিছু বুঝে ফেলবে। হামজা নিজেও আরিফকে সন্দেহ করে। আরিফ নিখোঁজ হওয়ার পর হামজা সব জায়গায় তার খোঁজ করেছে৷ কোথায় যেত কি করত সবকিছু। খোঁজ নিয়ে জানতে পারল– সুরভি খু’ন হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে থেকে আরিফ প্রতিদিন বিকেলে নদীর পাড়ে একটা ফাঁকা জায়গায় যেত। সেখানে অনেক দূর থেকে সঠিক নিশানায় ছু’রি ছোঁড়া প্রাকটিস করত। সম্পূর্ণ স’ন্দে’হ আরিফের দিকে আসতে এতটুকুই যথেষ্ট।

নাইমা বলল, “কি ভাবছেন?”

হামজা হড়বড় করে বলল, “কিছু না। আমি কিছু ভাবছি।”

“আগামীকাল হিমির জামিন হবে। ও মুক্তি পেলে আমি এই কেস নিয়ে আর মাথা ঘামাব না। তখন আপনি নিজের মতো করে তদন্ত করতে পারবেন।”

হামজা চুপ করে রইল। হাবিব একটু দূরে চেয়ারে বসে আছে। তার চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ।

নাইমা বলল, “তবে কি জানেন? আমার মনে হয় না আরিফ ভাই এই খু’নের সাথে জড়িত। নিজেকে আড়াল করার জন্য সে নিশ্চয়ই তার পরিবারের কাউকে ঢাল বানাবে না।”

“কি বলতে চাইছেন?”

নাইমা অল্প হাসল। তারপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। হামজা তার পেছনে ছুটে গিয়ে বলল, “পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেছে। আরিফ ভাইয়ের কিছু হলে ইনানের জীবন অনিশ্চিত হয়ে যাবে। বাবা ছাড়া বেড়ে ওঠা খুব কঠিন। আমার মনে হয় আমাদের এক হয়ে কাজ করা উচিত। অন্তত ইনানের জন্য হলেও।”

নাইমা হামজা দিকে তাকাল। হামজা বলল, “এভাবে তাকালে আপনার ভাই অন্যকিছু ভাববে। যেহেতু আমি প্রথমে বলেছি তাই আপনার উচিত ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখা।”

“আমি যা জানি তার সবকিছুই আপনাকে বলেছি। কিন্তু আপনি কিছু বলেননি। বলার মতো কিছু থাকলে বলেন। আমার যোগ্যতায় সম্ভব হলে সাহায্য করব।”

“তানজিলা আপার সাথে কথা বলা উচিত।”

“আপনি এখনও বলেননি?”

“না, তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই বিরক্ত করিনি।”

তানজিলা নাইমাকে দেখে বেশ খুশি হলো। নাইমার হাত ধরে বলল, “তুমি এত রাতে আসতে গেলে কেন?”

“সমস্যা নেই। ভাইয়ার সাথে এসেছি। আপনার সাথে কথা বলা জরুরি।”

“কি জানতে চাও?”

“সেদিন সুমির ব্যবহার কেমন ছিল? আপনাদের মধ্যে কি কি কথা হয়েছে?”

“তেমন কোন কথা হয়নি। সুমির ব্যবহারও স্বাভাবিক লাগছিল।”

“যে টবে টাকা আর চিঠি পেয়েছেন সেই টবটা কে এনেছিল?”

“আরিফ এনেছিল। বেশ কিছুদিন আগে অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে এসেছিল। সাধারণ টব ভেবে ছাঁদে রেখে দিয়েছিলাম।”

“কোথা থেকে কিনেছিল কিছু জানেন? বা তেমন কিছু?”

তানজিলা না সূচক মাথা দোলালো। নাইমা রেশমা বেগমের কাছে সেদিম সন্ধ্যার ঘটনা জানতে চাইল। তিনি তাকে সব খুলে বললেন। ঘন্টা খানেক পর হাবিব বলল, “কথা শেষ হলে বাড়িতে চল। রাত হয়ে গেছে।”

রেশমা বেগম বললেন, “বাবা তোমরা তো কিছু খেলে না।”

হাবিব বলল, “আজ থাক। রিজিকে থাকলে নিশ্চয়ই আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনার হাতের রান্না খাবো।”

তানজিলা হামজাকেও বাড়ি চলে যেতে বলল। হামজা কথা বাড়াল না। নাইমাদের সাথেই বেরিয়ে এলো।

নাইমা বলল, “আজ কি আপনার সাথে আরিফ ভাইয়ের দেখা হয়েছিল?”

“মানে? এ প্রশ্ন করছেন কেন?”

“আপনার কাঁধের কা’টা দাগটা নখের আঁ’চ’ড়। আমার ভাইপো বেশ ছোট। প্রায়ই ওর নখ দিয়ে আমায় আঁ’চ’ড়ে দেয়। আমি খুব ভালো করেই নখের আঁ’চ’ড় চিনি৷ তাছাড়া ঠোঁটে কোণায়ও কে’টে গিয়েছে। সেই কা’টা ঢাকতে আপনি তখন পান চিবুচ্ছিলেন।”

“আপনি আমায় মনযোগ সহকারে দেখেছেন? বেশ বিস্ময়কর ব্যাপার!”

“কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবেন না৷ আপনি আরিফ ভাইকে দেখেছেন কি-না সেটা বলেন। অপরিচিত কেউ আ’ঘা’ত করলে আপনি বলতেন। লুকিয়েছেন মানে আ’ঘা’তকারী আপনার পরিচিত। যতদূর জানি এ শহরে আপনার পরিচিত শুধু আরিফ ভাইয়ের পরিবার। অনুমান করা কঠিন কিছু না। তাছাড়া ওই পথে গাছ আছে ঠিক তবে কাঁধের কাছে আ’ঘা’ত লাগবে এমন গাছ চোখে পড়েনি।”

হামজা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। গলার স্বর অনেকখানি নিচু করে বলল, “দেখেছিলাম৷ তবে থামানোর আগে আমায় আ’ঘা’ত করে পালিয়ে গিয়েছে। বলেছে এটাই একমাত্র পথ।”

নাইমা আর কথা বাড়াল না। হাবিবের সাথে বাইকে উঠল।

রোহান রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্যে বসে আছে৷ সাথে তার সমবয়সী একটা ছেলে। মশার কামড়ে ছেলেটা বেশ বিরক্ত।

“রোহান, তোর কাজবাজ হয় না। এত রাতে এখানে কেউ বসে থাকে?”

“আহ! দাঁড়া না। এদিকেই গিয়েছে। এখনি ফিরবে।”

“তখন থেকে বসছিস এদিকে গিয়েছে। কে গিয়েছে?”

“মকবুল সাহেব গিয়েছে। ফেরার পথে উনাকে ধরব।”

“ধরে কি করবি?”

“লোকটার পেটের কথা বের করতে হবে।”

“সে কেন তোকে তার পেটের কথা বলবে?”

রোহান একটা বোতল বের করল। হাসি মুখে বলল, “এটা খেলে সবাই সত্যি কথা বলে।”

“কি এটা?”

“সস্তা নে’শার জিনিস। চুপচাপ দেখ আমি কি করি।”

ছেলেটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। খানিক বাদেই মকবুল সাহেব আসলেন। রোহান তার পেছনে ছুটে গিয়ে বলল, “চাচা আপনার টাকা পড়ে গিয়েছে। আপনার টাকা পড়ে গিয়েছে।”

মকবুল সাহেব দাঁড়ালেন। পেছনে ফিরে লাইট রোহানের মুখে ওপর আলো ফেললেন। তেঁতো গলায় বললেন, “এই ছেলে কি টাকা টাকা করছ? কার টাকা?”

রোহান পাঁচশ টাকার চকচকে দু’টো নোট তার সামনে উঁচু করে ধরল। বিড়বিড় করে বলল, “এক মেয়ের সামনে ভাব নিতে গিয়ে সারামাসের টাকা চলে যাচ্ছে।”

“বিড়বিড় করে কি বলছ?”

রোহান মকবুল সাহেবের হাতে নোট দু’টো ধরিয়ে দিলো। মকবুল সাহেব নোটের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার চোখ দুটো চকচক করছে

চলবে