বাতাস বলে দেয় পর্ব-১৭

0
16

#বাতাস_বলে_দেয়
#ফারহানা_কবীর_মানাল

১৭.
নাইমা ঠিক আটটা পয়তাল্লিশে হাসপাতালের সামনে নামল। গত রাতে বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার পাশে পানি কাঁদা জমে আছে৷ সে একপাশে সরে গিয়ে খুব সাবধানে পা ফেলতে লাগল। রোহান বলল, “পানি কাঁদার মধ্যে গিয়ে ভাব না নিয়ে পরিষ্কার রাস্তায় হাঁটতে কি খুব সমস্যা হয়?”

নাইমা চমকে তার দিকে তাকাল। বিস্মিত গলায় বলল, “ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না।”

“তোমরা ভাবনা তাহলে ভুল হলো বলো।”

“হতেই পারে। যাইহোক, কি জানতে পারলেন?”

“অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। এতটা জেনেছি যে শুনলে চমকে উঠবে।”

“কিভাবে বুঝব আপনি সত্যি বলছেন?”

রোহান অল্প হাসল। হালকা গলায় বলল, “জানি আমার কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। তাই রেকর্ড করে নিয়ে এসেছি। তোমার এই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সারারাত মশার কা’ম’ড় খেতে হয়েছে।”

“আমি আপনাকে এত কষ্ট করতে বলিনি।”

“কেমন মেয়ে তুমি? তোমার জন্য এতকিছু করলাম আর তুমি সামান্য ধন্যবাদটুকু দিতে চাইছ না। এটা কি ঠিক হ্যাঁ?”

“আপনি কি খোঁজ নিয়ে এসেছেন সে কথা এখনও জানি না।”

“রাস্তায় দাঁড়িয়ে জানবে? নাকি কোথাও বসবে? চার ঘন্টার পরিশ্রম দু-এক মিনিটে শেষ হবে না।”

হাসপাতালের সামনে সিঁড়ি বাঁধানো পুকুর। নাইমা রোহানের সাথে সিঁড়িতে গিয়ে বসল। নরম গলায় বলল, “এবার বলুন। কি জানতে পারলেন?”

“সুরভি মানে সে মহিলা খু’ন হয়েছে তার সাথে বুড়ো মকবুলের অন্যরকম সম্পর্ক ছিল।”

“এ কথার মানে? অন্যরকম মানে কেমন?”

“অন্যরকম মানে বুঝতে পারছ না। আরে ওই রকম সম্পর্ক ছিল। উনিশ-বিশ যাকে বলে আর কি।”

“ছিঃ! এসব কি বলছেন?”

“আরে বাবা ওই বুড়ো আমায় নিজেই বলেছে। সে সুরভিকে পছন্দ করত। ভাড়ায় ওঠার পর থেকেই সুরভিকে নাকি ওর ভালো লাগত। বেশ কয়েকবার লাইন মা’রার চেষ্টা করেছে।”

নাইমা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল। রোহান তার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল, “এখনও তব্দা খাওয়ার মতো কিছু বলিনি। মকবুল বুড়োই পছন্দ করত শুধু। একতরফা। সুরভি নাকি কখনও রাজি হয়নি।”

“ওহ আচ্ছা! তারপর?”

“সেজন্যই ওই বুড়ো সুরভিকে নজরে নজরে রাখত। সুরভি বাসায় থাকলে ওর ফ্লাটের আশেপাশে ঘুরঘুর করত। মানে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করত আর কি। শুনেছি মাসখানেক ধরে দু’জন লোক প্রায়ই সুরভির বাসায় আসত। কথাবার্তা বলে চলে যেত। ওই বুড়ো নাকি নিজের চোখে দেখেছে।”

“কে আসত? সে ব্যাপারে কিছু বলেছে?”

“নাহ! মকবুল বুড়ো ওদের চিনত না। সুরভিকে জিজ্ঞেস করার বলেছে অফিসের লোক। কাজে আসে। ওই লোকদের জিজ্ঞেস করলেও একই কথা বলেছে।”

“তাদের দেখতে কেমন সে ব্যাপারে কিছু বলেছে?”

“না, সে কথা বলেনি। তবে অন্য একটা ব্যাপারে বলেছে। সুরভি একদিন খুব সাজগোজ করে কোথাও বের হচ্ছিল। সাথে বিশাল বড় দু’টো লাগেজ। বুড়োর সন্দেহ হয় সুরভি নতুন বাসায় চলে যাচ্ছে। তাই সে-ও তার পেছনে যায়। ওইদিন সুরভি নদীর পাড়ে উত্তর দিকে যে বিশাল বড় বাড়িটা আছে সেই বাড়িতে গিয়েছিল। পরে যখন ফিরিছে তখন সাথে লাগেজ ছিল না। বুড়ো পরে জিজ্ঞেস করায় ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে।”

নাইমা চমকে রোহানের দিকে তাকাল। সরু গলায় বলল, “আর কিছু জানতে পেরেছেন?”

“না আর কিছু বলেনি। বললেও কাজের মনে হয়নি।”

রোহান পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা মেমোরি কার্ড বের করল। নাইমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “সবকিছু রেকর্ড করা আছে। সময় করে শুনে নিও। আর একটা কথা, আমার মনে হয় মকবুল বুড়ো কে’সের ব্যাপারে অনেক কিছু জানে। শুধুমাত্র ঝামেলা এড়াতে সে-সব কথা চেপে যাচ্ছে।”

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। তবে মকবুল সাহেব এসব কথা আপনাকে বলল কেন?”

“সস্তা নে’শার প্রভাবে। ভালোমতো মালপানি খাইয়ে কথা বের করেছি। বি’শ্রী রকমের লোভী একটা লোক। আমার পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে বললাম চাচা আপনার টাকা পড়ে গেছে। ওমনি ছো মে’রে টাকাগুলো নিয়ে গেল।”

“কত টাকা দিয়েছেন?”

“হাজার খানেক।”

“সামান্য খবর জোগাড় করতে গিয়ে আপনার অনেক টাকা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আপনি চাইলে টাকাগুলো আমি দিয়ে দিতে পারি।”

রোহান কথার জবাব দিলো না। শান্ত চোখে খানিকক্ষণ নাইমার দিকে তাকিয়ে রইল। নরম গলায় বলল, “আর একটা কথা। আমি কোন ছিনতাইকারী নই। ওদিন বাজি ধরে ওই মহিলার ব্যাগ নিতে গিয়েছিলাম।”

নাইমা তার কথার জবাব দিলো না। রোহান ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস গোপন করল। তারপরই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উঠে চলে গেল। নাইমা তাকে ডাকতে গিয়েও ডাকল না। হাসপাতালের ভেতরে চলে গেল।

ইনানের অবস্থা ভালো। আইসিইউ থেকে বের করে তাকে নরমাল বেডে দেওয়া হয়েছে। তানজিলার শরীরের অবস্থা স্বাভাবিক হলেও তার মন অশান্ত। তখন থেকে ছেলের হাত ধরে বসে আছে। নড়াচড়া করছে না। রেশমা বেগম বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার জায়গায় তানজিলার মা এসেছে। ভদ্রমহিলা মুখ কালো করে একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

নাইমা বলল, “আপু, কেমন আছেন? আপনার শরীর এখন কেমন?”

তানজিলা ম’রা গলায় বলল, “শরীর ভালো আছে। নিঃশ্বাস নিচ্ছে।”

“দুশ্চিন্তা করবেন না। আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“শুনেছি পুলিশ নাকি আরিফের খোঁজ পেয়েছে। দুপুরের পর আমাদের সবাইকেও থা’নায় যেতে বলেছে।”

নাইমা চোখ-মুখে কৃত্রিম উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে বলল, “এটা তো খুব ভালো খবর। এ ক’দিন যে দুশ্চিন্তায় গিয়েছে!”

তানজিলা হাসতে চেষ্টা করল। তার মা বললেন, “ইনানের এ অবস্থার কথা তুই আমাকে জানতে পারতি না? তোর শ্বশুর শাশুড়ি কেউই আমাদের কিছু জানায়নি। আর আজ কত কথাই না শোনাল।”

নাইমা সব শুনেও না শোনার ভান করে বলল, “আপু আমার ক্লাস আছে। কলেজে যেতে হবে। বিকালে থানায় যাব। তখন দেখা হবে।”

তানজিলা হেসে তাকে বিদায় জানাল। নাইমা বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে যাওয়ার আগে ইনানের গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল। নাইমা বেরিয়ে যাওয়া তানজিলা তার মায়ের সাথে খেঁকিয়ে উঠল। তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “ওর সামনে তোমার এসব কথা তুলতে হবে? তুমি কি একবারও খোঁজ নিয়েছ? আমাদের নিয়ে তোমার চিন্তার কথা আমি জানি। কাজেই কোন ভনিতা করো না।

সরিফা চুপ করে গেলেন। মেয়েকে নিয়ে তার খুব একটা চিন্তা নেই। যত চিন্তা সব ছেলেদের নিয়ে। বেশ কয়েকদিন ধরে তার বড় ছেলে অসুস্থ। ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছিল। তাই এদিকের খোঁজ খবর করেননি। গতকাল রাতে মেয়ের অবস্থা শুনে সকালেই চলে এসেছেন। তবুও তাকে কত কথা শুনতে হচ্ছে। সরিফা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

আরিফ দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে৷ তার চোখ-মুখে ক্লান্তির ছাপ। দারোগা সাহেব হাঁটু গেড়ে তার সামনে বসলেন। গম্ভীর গলায় বললেন, “সুরভিকে কেন খু’ন করেছেন? টাকা পাবেন না এজন্য?”

সে কথার জবাব দিলো না। দারোগা সাহেব কঠিন মুখে বললেন, “ভদ্রভাবে কথা বলছি। তাই ভদ্রতার মর্যাদা দিতে শিখুন। চুপ করে থাকলেই আপনি রেহাই পাবেন না।”

“হিমির জামিন হয়েছে?”

“হয়েছে। এতক্ষণে হয়তো আপনার বাবার সাথে বাড়িতে চলে গিয়েছে।”

“আমার ছেলে ইনান। ওর কি অবস্থা? সুস্থ আছে তো?”

“সে-ও ভালো আছে।”

আরিফ চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো। খুব ক্লান্ত এবং অসহায় গলায় বলল, “কনস্টেবল বলল– বিকেলে নাকি সবাইকে ডাকা হয়েছে তখন না হয় একবারে বলব। আমি খুব ক্লান্ত৷ একটু ঘুমতে চাই।”

দারোগা সাহেব দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল। একজন কনস্টেবল এগিয়ে এসে বলল, “স্যার কি কিছু বুঝতে পারলেন?”

“এখনও বুঝতে পারছি না। দেখি বিকেলে কি বলে তারপর সিদ্ধান্ত নেব।”

“একটা ব্যাপারে আমার খুব খটকা লাগছে৷ আরিফ যখন ধরা হয় তখন সে বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল। যে লোকটা পালিয়ে যাচ্ছে সে কি করে ঘুমুতে পারে? তাছাড়া উনারা বললেন– ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছিল কেউ ঘুমের ওষুধ বা এমন এমন কিছু খাইছে।”

“বলতে চাইছ আরিফকে কেউ ফাঁসাচ্ছে?”

“হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে ছি’ন’তা’ইকারীর পাল্লায় পড়েছিল। পানির সাথে কিছু মিশিয়ে খাইয়ে দিয়ে টাকাপয়সা যা ছিল নিয়ে গিয়েছে।”

“দেখি বিকেলে কি বলে। তারপর অন্য চিন্তা করা যাবে। সুমি নামের মেয়েটা ধ’রা পড়েছে? ওই থানা থেকে কি কিছু জানিয়েছে?”

“পড়েছে। তাকেও এখানে নিয়ে আসছে। বিকেলের মধ্যে চলে আসবে।”

“মকবুল সাহেব আর ওই দু’টো মহিলাকেও আসতে বলো। আজ সব ভাঙাচোরা হয়ে যাবে।”

“ঠিক আছে স্যার।”

কনস্টেবল বেরিয়ে গেল। দারোগা সাহেব চিন্তিত মুখে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। পানির গ্লাস হাতে নিয়ে খুব ধীরে ধীরে পানি পান করতে লাগলেন। তার শরীর ঘেমে গেছে। ফ্যানের বাতাসে কাজ হচ্ছে না। যে গরম পড়েছে, বাংলাদেশকে সৌদি আরব মনে হচ্ছে।

নাইমা ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছে। সে কলেজ মাঠের এক কোণায় বসে মকবুল সাহেবকে কথা শুনছে। রোহান বেশ কাজের ছেলে৷ খুব ভালো করে রেকর্ড করেছে। প্রতিটা কথা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। মকবুল সাহেব এলোমেলোভাবে কথা বলছেন, তবে তার কথা বোঝা যাচ্ছে। রোহান তার সাথে বেশ কয়েকটা ছবিও তুলেছে।

নাইমা হেসে ফেলল। মনে মনে বলল, “মকবুল সাহেবকে অন্যকেউ ভাবতে পারি তাই ছবিও তুলে রেখেছে!”

সে সবকিছু গুছিয়ে ব্যাগে ঢোকাল। ঠিক করল নদীর পাড়ের ওই বাড়িটায় যাবে। সেখানে গেলে নিশ্চয়ই কোন সূত্র পাওয়া যাবে। এমনও হতে পারে সুরভি ওই লাগেজ ভরে টাকা নিয়ে গেছিল। তারপর ওই বাড়িতে গিয়ে কাউকে দিয়ে এসেছে। যতদূর শুনেছে লোকটা পলাতক। পুলিশ তাকে খুঁজছে৷ তবুও তার মনে খচখচানি দূর হলো না। অটোরিকশায় উঠে নদীর পাড়ে গিয়ে নামল। আশেপাশের লোকদের জিজ্ঞেস করতেই তারা বাড়িটা দেখিয়ে দিলো। দু’জন তো বিস্মিত গলায় বলেই বসল– “ওই বাড়িতে তো কেউ থাকে না। ওখানে গিয়ে কি করবে?”

সে সহজ গলায় বলল, “পুরনো বাড়ি তাই দেখতে এসেছি৷ কলেজের এসাইনমেন্টের জন্য লাগবে।”

নাইমা শান্ত পায়ে বেশ খানিকটা পথ হাঁটল। হেঁটে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। গাছপালায় ঘেরা বিশাল বড় বাড়ি। আকাশে মেঘ জমেছে তাই খানিকটা অন্ধকার দেখাচ্ছে। সে বাড়ির ভেতরে ঢুকল। সদর দরজায় তালা লাগানো। তালার অবস্থা দেখে মনে হয় বেশ পুরনো। কেমন যেন মরিচা ধরে গিয়েছে। বাড়িটাও বেশ অপরিষ্কার। চারদিকে গাছের পাতা পড়ে আছে। সে বাড়ি ঘুরে দেখতে লাগল।

সরল চোখে দেখলে মনে হয় পরিত্যক্ত বাড়ি। বহুদিন ধরে এখানে কেউ থাকে না। তবে খুব সূক্ষ্ম নজরে দেখতে বোঝা যায় এই বাড়িতে লোকের যাতায়াত আছে। দেয়ালের পাশ থেকে সরু রাস্তার মতো চলে গিয়েছে। সেখানকার পাতাগুলো দেখলে মনে হয় কেউ নিয়মিত এর ওপর দিকে হাঁটাহাঁটি করে। নাইমা মোবাইল বের হাবিবকে নিজের লোকেশন পাঠাল। তারপর সেই পথ ধরে এগিয়ে গেল। খানিকটা যেতেই সে থমকে দাঁড়াল। তার নাকে হালকা মিষ্টি গন্ধ আসছে। পারফিউমের গন্ধ। সে জানলা দিয়ে ঘরের ভেতরে উঁকি দিলো। ভেতরে আলো জ্বলছে। অর্থাৎ এখানে কেউ আছে। নাইমা আরও কিছু দেখতে যাবে। তার আগেই কেউ একজন তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “কে তুই? এখানে কি করছিস?”

নাইমা চমকে তার দিকে তাকাল। শক্ত-পোক্ত চেহারার এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে কালো কাপড় বাঁধা। চোখ দেখে মনে হয় এখনই সব ভস্ম করে দেবে।

নাইমা বলল, “কিছু না। আসলে কলেজের এসাইনমেন্টের জন্য পুরনো বাড়ির বিবরণ লাগবে। তাই দেখতে এসেছি।”

“আমাকে বোকা মনে হয়? ইন্টারনেটের যুগে তুই বাড়ি ঘুরে এসাইনমেন্ট তৈরি করতে এসেছিস?”

“দেখুন। পড়াশোনার ব্যাপারে আমি খুব সিরিয়াস। ইন্টারনেট ঘেঁটে লিখতে তো সবার লেখা এক হয়ে যাবে। তখন আমি আর ফাস্ট হতে পারব না।”

লোকটা তার কথা বিশ্বাস করল না। দাঁত চিবিয়ে বলল, “শেষবারের মতো বলছি। কেন এসেছিস সত্যি করে বল।”

তার চিৎকার শুনে আরও দু’জন লোক বেরিয়ে এলো। তাদের মুখে মাস্ক পরা। সাদা শার্ট গায়ে দেওয়া লোকটা বলল, “কি হয়েছে? কার সাথে ঝামেলা করছিস?”

“আরে বস, দেখেন তো এই মেয়েটা এখানে এসে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করতে বলছে– কলেজের এসাইনমেন্টের জন্য পুরনো বাড়ি দেখতে এসেছে।”

নাইমা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল। অন্য লোকটা বলল, “ভাই এই মেয়েটা যে সে কেউ না। গোয়েন্দাগিরি করে। খবর নিতে এখানে এসেছে।”

কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা লোকটা বিদ্যুৎ গতিতে নাইমার গলা চে’পে ধরল। হিসহিসিয়ে বলল, “তদন্ত করতে এসেছিস? এত সাহস তোর?”

নাইমা শান্ত ভঙ্গিতে দুই হাত উঠিয়ে নিজের হিজাবের ওপর রাখল। দ্রুত হাতে পিন খুলে লোকটার হাতে বসিয়ে দিলো। আচমকা আ’ক্র’ম’ণে সে ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল। গলা ছেড়ে দিয়ে এক পা পেছনে যেতেই নাইমা তার দুই পায়ের মাঝখানে সর্বশক্তি দিয়ে লাথি মা’র’ল। লোকটা বসে পড়ল। নাইমা এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে দৌড়াতে শুরু করল৷ অন্য লোক দু’টো নাইমার পেছনে ছুটল। একজন তো প্রায় তাকে ধরে ফেলেছিল। কিন্তু সে তার হাতে পিন বসিয়ে টান মা’র’লো। লোকটা চামড়া ছি’লে গেল। সে অন্য হাত দিয়ে নিজের হাত চেপে ধরল।

নাইমা প্রাণপণে ছুটছে। হঠাৎই হামজা তার পেছন থেকে বাইক চালিয়ে এসে বলল, “ধরা পড়তে না চাইলে উঠে আসেন৷”

নাইমা বাইকে উঠল। কৌতুহলী গলায় বলল, “আপনি এখানে কি করে?”

হামজা তার কথার জবাব দিলো না। খুব জোরে বাইক চালাতে লাগল।

চলবে