#বাতাস_বলে_দেয়
#ফারহানা_কবীর_মানাল
২০.
চায়ের দোকানটা নদীর পাড়ে। বন্ধ দোকান। কয়েকমাস ধরেই ফাঁকা পড়ে আছে। ভেতরেও কিছু নেই। তক্তা খুলে নিয়ে গিয়েছে কয়েকটা। চাঁদের আলোয় নদীর পানি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। জলজ শীতল হাওয়া বইছে। তারা চারজন দোকানের বেঞ্চিতে বসে আছে৷ দারোগা সাহেব খানিকক্ষণ আগে মজলিস ভেঙে দিয়েছেন। জরুরি কোন কাজে তাকে বাইরে যেতে হয়েছে। আরিফ, মোহন, সুমি এদের তিনজনকেই জে’লে ব’ন্দী করে রেখেছেন। বাকিদেরকেও শহরের বাইরে যেতে নিষেধ করছেন। আগামীকাল এই কে’সের মিমাংসা। কাল সবকিছুর সমাধান না হলে সবার বিরুদ্ধে মামলা হবে। এরপর সবাই আদালত প্রাঙ্গণে চক্কর দিয়ে দিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।
হামজা বলল, “এখানে এভাবে চুপচাপ বসে থাকার কোন মানে হয় না। কাজের কথা শুরু করা উচিত।”
রোহান বিরক্ত চোখে হামজার দিকে তাকাল। নাইমা বলল, “আমি আপনাকে জোর করিনি। স্বেচ্ছায় এসেছেন।”
“নদীর পাড়ে বসে চাঁদনী রাত উপভোগ করতে ডেকেছেন? তাহলে আমি একটা গান গাই। এতে করে ব্যাপারটা আরও উপভোগ্য হবে।”
হাবিব বলল, “হামজা কিছু ভুল বলেনি। রাত বাড়ছে। চুপচাপ বসে থাকার কোন মানে হয় না। আলোচনা শুরু করা উচিত।”
হামজা বলল, “মিস নাইমা, শুরু করুন। কোন ব্যাপারে আপনার খটকা লেগেছে?”
“সব ব্যাপারে খটকা লেগেছে। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি ওই বাড়ির সামনে আপনাকে দেখে। তা-ও বাইকে। যতদূর জানি আপনার বাইক নেই। বাইক কোথায় পেয়েছেন?”
“জানতে চাইছেন তাই বলছি। আসলে ওটা ভাড়ার বাইক। এক ঘন্টার জন্য এক হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করেছি। কলেজের সামনে থেকে একটা রিকশা নিয়ে আপনার পিছু করে ওই বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলাম। যখন বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন তখনই বুঝেছি এখানে ঝামেলা হবে। তাই সময় নষ্ট না করে পালানোর বন্দবস্ত করে রেখেছিলাম। শত হলেও আমি একজন গোয়েন্দা। এ-সব পরিস্থিতি বুঝতে পারি।”
“সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ। এখন কে’সের ব্যাপারে বলুন। সবকিছু দেখে আপনার কি মনে হয়েছে? কে আসল অপরাধী?”
রোহান বলল, “ওই মকবুল বুড়োটাই সব কাজের মূল। শালার নিশ্চয়ই কোন ধান্ধা আছে।”
“সে কেন এসব করবে? আর কিভাবে করবে?”
হাবিব বলল, “প্রতিটা পয়েন্ট শান্ত মাথায় সাজিয়ে দেখলে উত্তর পাওয়া যায়।”
“ঠিক বলেছ ভাইয়া। আরিফ ভাই সত্যি কথা বলছে না। কথা পেঁচিয়ে নিজেকেই দো’ষী প্রমাণিত করতে চাইছে। অন্যদিকে ওই মোহন হুট করে সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে নিলো। সুমি বলছে– আরিফ ওকে চিঠি দিতে বলেছে।
মোহন বলছে– সে আরিফ ভাইকে বলেছিল সুমিকে দিয়ে তানজিলার কাছে চিঠি পাঠাতে। ইনান অসুস্থ হয়ে পড়ায় আরিফ ভাইয়ের মনে ভয় ঢুকে যায় তাই সে সুমিকে ওই চিঠি লিখে দেয়।
এই কথার মানে কি? চিঠি দিতে গিয়ে সুমি যে-ই মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিল সেই মিষ্টি খেয়ে ইনান অসুস্থ হয়েছে।”
হামজা বলল, “ঠিক ধরেছেন। চিঠি দেওয়ার পর ইনান অসুস্থ হয়েছে। তাহলে তারপর আরিফ ভাই কি করে ইনানের অসুস্থতার কারণে চিঠি লিখে দিয়েছে?”
রোহান বলল, “ধূর কচু! কিছুই বুঝতে পারছি না। কে খু’ন করেছে কেন খু’ন করেছে৷ কিচ্ছু না।”
নাইমা বলল, “আরও একটা ব্যাপার। মোহন নিজের জায়গাজমি বন্ধক রেখে সব টাকা সুরভিকে দিয়ে দিয়েছে। তাহলে সে মকবুল সাহেবকে দেওয়ার জন্য ওই সত্তর হাজার টাকা কোথায় পেল? তাছাড়া শুধুমাত্র প্রতিশোধ নিতে কেউ এত টাকা কেন খরচ করবে?”
“জানি না বাপু। এসব প্যাঁচ আমার মাথায় আসে না। আমি বরং এখানে একটু ঘুমাই। খোঁজ খবর জোগাড় করতে আমাকে বলো। করে দেব।”
সত্যিই রোহান চোখ বন্ধ করে হাবিবের গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসল। হাবিব তাকে কিছু বলতে গিয়েও বলল না। নাইমা বলল, “এর বাইরে ওই স্পাই বাগ ডিভাইস, ওটাও বেশ দামী। ভালো মানের হলে এগারো হাজার পর্যন্ত দাম হতে পারে। এসব খরচ শুধুমাত্র একটা খু’নের জন্য তা-ও যেখানে কোন লাভ নেই!”
হামজা বলল, “চিঠির ব্যাপারটা ভুলে গিয়েছেন। টবের ভেতরের টাকা এবং চিঠির কথাও। আরিফ ভাই টবটা অনেক আগে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল।”
“সুরভি, সুমি, সিমা, মোহন, আরিফ ভাই এরা সবাই এই কে’সের সাথে গভীরভাবে জড়িত। এমন কেউ একজন আছে যে এদের সবাইকে ব্যবহার করছে। কারণ এরা কেউ পরিষ্কার করে গুছিয়ে কোন কথা বলতে পারছে না। বলতে চাইছি লজিক মেলাতে পারছে না।”
হাবিব বলল, “কিন্তু এমন কে আছে যে এদের সবাইকে ব্যবহার করছে? অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে সবাই সেই লোকটার কথা শুনছে। অথচ তারা ইচ্ছে করলেই পুলিশকে সব সত্যি বলে দিতে পারে।”
নাইমা বলল, “অফিস! হ্যাঁ অফিস! এরা সবাই একটা কানেকশনে যুক্ত। তার সেটা হচ্ছে অফিস। আমি যদি ভুল না করি তাহলে ওই অফিসের উচ্চপদস্থ কোন কর্মচারী এই কাজ করছে। হতে পারে সে ওই অফিসের বস।”
হামজা বলল, “হতে পারে। কিন্তু এই কথার কোন প্রমাণ নেই। শক্ত-পোক্ত যুক্তিও নেই।”
“আপনার মনে পড়ে– চিঠি দেখে বলেছিলাম ওটা প্রায় মাসখানেক আগের লেখা, তানজিলা আপু কথামতো আরিফ ভাই ফুলের টবটা মাসখানেক আগে এনেছে৷ টাকা মা’র গিয়েছে কথাটা জানা গিয়েছে মাসখানেক আগে। সুরভি ওই বাড়িতে গিয়েছে মাসখানেক আগে। অর্থাৎ মাসখানেক আগে থেকে সবগুলো হয়েছে।”
“বলতে চাইছেন সবকিছুর সাথে ওই বাড়ির কানেকশন আছে?”
“ঠিক ধরেছেন। আমাদের এখন অনেকগুলো কাজ করতে হবে। প্রথমে জানতে হবে ওই বাড়ির মালিক কে, কারা ওই বাড়িতে থাকে। দ্বিতীয়ত ওই টবের খোঁজ করতে হবে। আরিফ ভাইকে সব সত্যি বলতে জোর করতে হবে। আর সবথেকে বড় কাজ হচ্ছে আরিফ ভাইয়ের অফিসের বসের ব্যাপারে সব খোঁজ নিতে হবে। সে কে, কি নাম, ব্যবসা বানিজ্য। সবকিছু।”
খোঁজ নেওয়া কথা তুলতেই রোহান হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল। ব্যস্ত গলায় বলল, “কার খোঁজ নিতে হবে? শুধু একবার বলো। সবার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আসব।”
নাইমা বলল, “হাতে সময় খুব কম। আমার স’ন্দে’হ ভুল না হলে বস সাহেব আজকে রাতের মধ্যে পালানোর চেষ্টা করবে।”
হাবিব বলল, “আমাদের উচিত পুলিশকে সব জানিয়ে দেওয়া। তাহলে ওরাই সব ব্যবস্থা নিতে পারবে।”
হামজা বলল, “পুলিশ আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না। ভাববে আবারও আমরা আরিফ ভাইকে বাঁচানোর জন্য চাল চালছি।”
“তাহলে এখন কি করব?”
নাইমা বলল, “আমাদের দু’টো দলে ভাগ হতে হবে। আমি আর ভাইয়া টবের ব্যাপারে তদন্ত করব। আপনারা দু’জনে ওই বাড়ি এবং আরিফ ভাইয়ের বসের ব্যাপারে খোঁজ করবেন। প্রথমে বাড়ির খোঁজে যাবেন৷ কাজ শেষে আমরা আবার এই জায়গায় মিলিত হব। রোহান ভাই এই শহর ভালো চেনে। উনি আপনাকে চিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।”
ভাই কথাটা শুনে রোহান তার চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলল। হয়তো কিছু বলতেও বসত। হাবিব সামনে থাকায় বলতে পারল না। মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল। হামজা চরম অস্বস্তি স্বত্তেও রোহানের সাথে গেল। নাইমা ভুল কিছু বলেনি৷ এই ছাড়া অন্য উপায় নেই। যা করার রাতের মধ্যেই করতে হবে। দিনের আলো ফুটতে অনেক দেরি। সবে মাত্র রাত দশটার মতো বাজে। শহরে রাত দশটা তেমন বড় ব্যাপার নয়।
হাবিব নাইমাকে সাথে নিয়ে আরিফদের বাড়িতে আসলো। নাইমা টবটা হাতে নিয়ে বলল, “পুলিশের এটা নিতে চায়নি?”
রেশমা বেগম জানালেন, “চেয়েছিল। নিতে লোকও পাঠিয়েছিল। তবে উনি ভুল করে অন্য একটা টব দিয়ে দিয়েছিলেন।”
নাইমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে টবটাকে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। সে বেশ মনযোগ সহাকারে দেখছে।
হাবিব বলল, “টবের গায়ে কিছু লেখা আছে?”
“আছে ভাইয়া। এই দেখো। এই যে টবের তলায় একটা মার্ক করা আছে। মনে হচ্ছে এটা কোন দোকানের লোগো। ইন্টারনেটে সার্চ করে বের করা যাবে।”
হাবিব মোবাইল বের করল। মিনিট দশেক খোঁজাখুঁজি করার পর বলল, “ঠিক ধরেছিল। এটা এখানকার সবচেয়ে বড় নার্সারির লোগো। ওরা নিজেরাই মাটি দিয়ে টব তৈরি করে। তারপর তাতে গাছ পুঁতে বিক্রি করে।”
“নার্সারিতে যেতে হবে ভাইয়া। হাতে সময় নেই৷ রাত বাড়ছে। দেরি হলে দোকান বন্ধ হয়ে যাবে।”
হাবিব মাথা দুলিয়ে বাইকে গিয়ে বসল। নাইমা এক হাত দিয়ে শক্ত করে ভাইয়ের কাঁধ চেপে ধরল। অন্যহাতে টব ধরে আছে। হাবিব খুব জোরে বাইক চালাচ্ছে। সে এত জোরে কখনো বাইক চালায় না। ত্রিশ মিনিটের পথ প্রায় বারো মিনিটে পৌঁছে গেল।
আজ তাদের ভাগ্য ভালো। নার্সারি খোলা আছে। দোকানের ভেতর লাইট জ্বলছে। নাইমা দৌড়ে দোকানের ভেতরে ঢুকল।
দোকানদার বলল, “কি হয়েছে? কোন সমস্যা? কেউ আপনাকে বিরক্ত করছে?”
নাইমা মাথা দোলালো। লম্বা শ্বাস নিয়ে শান্ত গলায় বলল, “এই টবটাকে দেখুন। এতে আপনাদের দোকানের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।”
দোকানদার টবটা হাতে নিয়ে খুব খেয়াল করে দেখল। স্বাভাবিক গলায় বলল, “হ্যাঁ, এটা আমাদের দোকানের। টবে কোন সমস্যা হয়েছে?”
“এই টবটা কে কিনেছিল বলতে পারবেন?”
“প্রতিদিন অনেক টব বিক্রি হয়। আলাদা করা বলা সম্ভব না।”
“এটা মাসখানেক আগের কেনা। আপনাদের কোন রেজিস্ট্রার নেই? যেখানে হিসাবপত্র লিখে রাখা হয়। দেখুন না যদি কিছু বলতে পারেন।”
দোকানদার নাইমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। হাবিব তাকে খুন সংক্ষেপে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল। সব শুনে দোকানদার একটা মোটা খাতা বের করল। অনেক ঘেটে দেখে বলল, “টবে কি ধরনের গাছ ছিল বলতে পারবেন? তাহলে খুঁজতে সুবিধা হত।”
নাইমা বলল, “গোলাপ। হ্যাঁ গোলাপের চারা ছিল।”
দোকানদার আবারও খাতার পাতায় ডুবে গেল। বেশ খানিকক্ষণ ঘাটাঘাটি করে বলল, “মাসখানেক আগে আমাদের এখানে ভালো কোন গোলাপের চারা ছিল না। একটা সমস্যার কারণে কলম তৈরি করতে পারছিলাম না।”
“আপনি কি বলতে চাইছেন এটা আপনাদের এখান থেকে কেনা হয়নি?”
“টবটা আমাদের দোকানের সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সারা শহরের কোন নার্সারিতে এ ধরনের টব ব্যবহার করা হয় না।”
“তাহলে আপনি কি বলতে চাইছেন?”
“আপনার কথা মতো আমি সবকিছু খুঁজে দেখেছি। হ্যাঁ মাসখানেক আগে একজন আমাদের এখানে এসেছিল। চারাগাছের মান খারাপ জানার পরেও সে টবটা নিয়েছিল। আমরা কিছু টাকা কম রেখেছিলাম।”
“কে নিতে এসেছিল? আপনি কি তার নাম বলতে পারবেন?”
“ইম.. একটা মেয়ে নিতে এসেছিল। নামটা ঠিক জানি না। আসলে আমরা কখনো ক্রেতাদের নাম জিজ্ঞেস করি না।”
“মেয়েটা দেখতে কেমন? আপনি তার চেহারা মনে করতে পারছেন?”
দোকানদার অনেক ভেবে ভেবে যে বর্ননা দিলো তা সুমির সাথে মিলে যায়। নাইমা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলো। হাবিব বলল, “তুই কি ঠিক বলছিস? সুমি এই কাজ করেছে?”
“ঠিক বলছি। আমাদের এখন সুমির ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে।”
“কিন্তু এত রাতে সুমির ব্যাপারে কার কাছ থেকে কী জানব?”
“সেই বলবে যে ওই অফিসে সবার ব্যাপারে জানে। অফিসে কোন আয়া বা দারোয়ান। এদের কাছে সব খোঁজ থাকে।”
“তুই এদের কোথায় পাবি?”
নাইমা তার কথার জবাব দিলো না। মোবাইল বের করে তানজিলা কল দিলো। তানজিলা আরিফের অফিসের ব্যাপারে বেশ ভালোই জানে। সে দারোয়ান এবং আয়া দু’জনের কথাই বলতে পারল। শুধু নাম নয়। আয়ার বাসার ঠিকানাও বলতে পারল।”
হাবিব বলল, “এখন কার বাসায় যাবি? দারোয়ানের বাড়ির ঠিকানা খোঁজ করব?”
“প্রয়োজন নেই ভাইয়া। আমরা আয়ার বাসায় যাচ্ছি। কিছু মহিলা অন্যের ব্যাপারে ভালো খোঁজ খবর রাখতে পারে।”
“ঠিক আছে৷ বাইকে ওঠ।”
“কাঁচা বাজারে যেতে হবে ভাইয়া। তোমার কাছে টাকা আছে?”
“কত?”
“হাজারখানেকের মতো?”
“আছে। কিন্তু কি কিনবি?”
“এক কেজি গরুর গোশত কিনব। আর কিছু ফলমূল।”
হাবিব ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। নরম গলায় বলল, “তোর জমানো টাকা থেকে পাঁচশ দিবি।”
“ঠিক আছে।”
নাইমা বাইকে উঠল। মঞ্জুরি খাতুন সবে রাতে খাওয়ার আয়োজন করছিল। অতিথি পেয়ে সব ফেলে দরজা খুলল। নাইমা গলার স্বর অনেকখানি নিচু করে বলল, “ভাইয়া তুমি মোবাইল ধরে রাখবে। যেন মনে হয় আমরা ভিডিও করছি। এতে করে ব্যাপারটা আরও বিশ্বাসযোগ্য হবে।”
“কি বোঝাতে চাইছিস?”
“মাঝরাতে ঘরে ঢুকে কিছু খাইয়ে লুটপাট করা নতুন কিছু না। ক্যামেরা থাকলে ওরা আমাদের বিশ্বাস করবে। ভাববে আমরা মানবিক ভিডিও তৈরি করছি।”
নাইমা কথাই ঠিক হলো। মঞ্জুরি ক্যামেরা দেখে আবেগে গলে পড়ল। কাঁদো কাঁদো গলায় তার দুঃখের কথা খুলে বলতে লাগল। নাইমা বলল, “আপনি রান্না চড়ান৷ আজ রাতে সবাই একসাথে খাবো।”
মঞ্জুরি রান্না চড়াল। নাইমা তার পাশে বসে গল্প করতে আরম্ভ করল। কথার ছলে সে তার প্রয়োজনীয় সব তথ্য বের করে নিলো। রান্না শেষে কোন রকমের নাকে-মুখে গুঁজে বেরিয়ে পড়ল।
রোহান বলল, “বেশ ভালোই! নিজেরা দু’জন খেয়ে এসেছে।”
হাবিব বলল, “কাজের জন্য খেতে হয়েছে। সে যাইহোক, তোমরা কোন তথ্য পেলে?”
হামজা বলল, “পেয়েছি। ওই বাড়িটা শহিদুল আলম নামের কোন ব্যক্তির নামে। তবে সে ওই বাড়িতে থাকে না। তবে আরিফ ভাইয়ের বসের ব্যাপারে কোন তথ্য পাইনি। নাইটগার্ড কোন কথা বলতে রাজি না। সে নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছে। আশেপাশের দোকানগুলোও বন্ধ। তাই আর কিছু জানতে পারিনি।”
রোহান বলল, “শালা নাইটগার্ড! বোধহয় নেশা করেছে। ঘুমে চোখ মেলতেই পারল না। টাকা দিতে চাইলাম। তা-ও নিলো না। বসের নাম পর্যন্ত বলল না। গেটের ভেতরেও ঢুকতে দিলো না। তাহলে হয়তো নামের ব্যবস্থা করা যেত।”
নাইমা চমকে উঠল। ব্যস্ত গলায় বলল, “আরিফ ভাইয়ের অফিসের বসের নামও শহিদুল আলম। এসবের পেছনে তাহলে উনার হাত আছে। ভাইয়া, এক্ষুণি আমাদের থানায় যেতে হবে। মঞ্জুরি আপা বলেছে– তাদের বস কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছে। আগামীকাল রাত দশটার ফ্লাইট।”
“মঞ্জুরি আপা কে?”
“আরিফ ভাইয়ের অফিসের আয়া। ভাইয়া, হাতে সময় নেই। আমি যদি ভুল না করি তাহলে কাল সকালেই উনি ঢাকায় চলে যাবে। এমনকি রাতেও যেতে পারে।”
তারা চারজন থানায় ছুটল। দারোগা সাহেব হুট করেই তাদের কথা বিশ্বাস করলেন না। তাকে সবকিছু গুছিয়ে বলতে বলতে রাত তিনটে বেজে গেল। হামজা বলল, “হাতে সময় নেই। যা করার এখনই করতে হবে। আপনি কিছু না করলে আমরাও কিছু করতে পারব না। ভদ্রলোক বেশ পাওয়ারফুল।”
দারোগা সাহেব অল্প হাসলেন। আস্বস্ত গলায় বললেন, “তোমরা বেশ কাজের এবং বুদ্ধিমান। ব্যাপারটা নিয়ে আমিও ভাবছিলাম। মোহন, আরিফ, এদের কারো কথা আমারও বিশ্বাস হয়নি।”
তিনি কনস্টেবলকে ডেকে গাড়ি বের করতে বললেন। রাত তিনটে পয়তাল্লিশে সময় বিলাসবহুল বাড়ির নিচে গাড়ি থামল। বাড়িটা শহিদুল আলমের। কিন্তু তিনি বাড়িতে নেই। বাড়ির সদস্যদের জিজ্ঞেস করেও কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। নাইমা হতাশ গলায় বলল, “এসবকিছু বৃথা যাবে!”
রোহান তার দিকে তাকাল। মেয়েটার চোখে একরাশ ক্লান্তি এবং অসহায়ত্ব এসে ভীড় জমিয়েছে। তাকে দেখে ভীষণ মায়া লাগছে।
চলবে