বাবার ভালোবাসা পর্ব-৩০+৩১

0
329

বাবার_ভালোবাসা
পর্ব:৩০
লেখাঃরাইসার_আব্বু

– অন্যদিকে ডাক্তার কণা রাইসার সাথে কথা বলে যখন রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর দরজায় কে যেন বার বার নর্ক করছে। রাইসা দরজা খুলে দিয়ে দৌড়ে এসে বললো ‘ বাবাই কথা আন্টির বাবা এসেছে।

– আমি কথার বাবাকে দেখে সালাম দিয়ে বললাম’ আঙ্কেল যে তা কি মনে করে? নাকি কোন অপবাদ দেওয়ার বাকি আছে?
– রাজ বাবা আমি তোমার পায়ে পড়ি। কি করছেন আঙ্কেল আপনি আমার বাবার মতো।
– বাবা আমি ভুল করেছি। আমার মেয়েটাকে বাচাঁও। কথা সুসাইড করতে গিয়েছিল এখন হসপিটালে আছে।

– আঙ্কেল মাফ করেন। আপনার মেয়েকে অন্য কোন জায়গায় বিয়ে দেন। আমরা চলে যাবো এখান থেকে। আমাদের জন্য আর কোন সমস্যা হবে না।

– রাজ বাবা এমন বলো না। আমার মেয়ে ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই। ওকে ছাড়া বাঁচবো ক্যামনে বলো? আমি তোমার পায়ে পড়ি বাবা। আমার মেয়েটাকে বাচাও তুমি।

– আঙ্কেল এসব কি বলছেন? আপনার পায়ে আমি পড়ি আপনি আমাদের একটু সুখে থাকতে দেন। প্লিজ চলে যান।

-এইযে আপনি যাচ্ছেন না কেন? বাবাই এর কথা শুনতে পাচ্ছেন না? দেখছেন আল্লাহ কত মহান ঠিক বিচার করছে। আপনার পায়ে ধরে বলেছিলাম আমার বাবাইকে ছেড়ে দেন। দেননি ছেড়ে। বাবাইকে মারতে মারতে মৃত্যুে দোয়ারে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমার কান্না আপনার মন গলেনি। আজ আপনি সেভাবেই কাঁদছেন। কি হলো যান না কেন আপনি? আপনার না অনেক টাকা?
– শুনেন আপনার টাকা যদি এক পাল্লায় তুলেন আর আমার বাবাই এর ভালোবাসা যদি একপাল্লায় তুলেন তাহলে আমার বাবার ভালোবাসায় ভারি হবে।

– কথার বাবা চলে যাচ্ছে। রাইসা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

– কথার বাবা যখন বাড়ি থেকে বের হবে এমন সময় রাইসা বলল’ দাঁড়ান বাবাই যাবে!

– কি বলছো এসব মামনি?
– বাবাই তুমি আন্টিকে সুন্দর করে বুঝিয়ে চলে আসবে।

– আচ্ছা মামনি চলো। রাইসাকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি।

-এদিকে মৌ বাসায় বসে বসে কাঁদছ। চোখের সামনে নিজের কুকর্ম গুলো ভেসে ওঠছে। রাজকে এভাবে হারিয়ে ফেলবে সে ভাবতে পারেনি। নিজের ভুলের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষটিকে হারালো। কি নিয়ে বাঁচবে সে। বুক ফেঁটে কান্না আসছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। এমন সময় দরজায় কে যেন নর্ক করলো!

– মৌ দরজা খুলেই দেখল বাড়িওয়ালা। সালাম দিয়ে বলল’ আঙ্কেল কিছু বলবেন?
-হ্যাঁ বলার জন্যই এসেছি।
– বলেন কি বলবেন?
– তুমি আজকের মধ্যেই বাসা চেঞ্জ করবে। আমরা চায় না তুমি আর এই বাসায় থাকো।
– আঙ্কেল কি বলছেন এসব?
– যা বলছি সত্যিই বলছি । আজ এ মুহূর্তে তুমি তোমার জিনিস পত্র নিয়ে বের হয়ে যাবে।

– আঙ্কেল আমার অপরাধ?
– কেন তুমি জানো না?
– কি জানবো বলেন?
– বাড়িওয়ালার সাথে থাকা একটা ছেলে বলে ওঠলো’ আপনার ভিডিওটা সেই, ! যা দেখিয়েছেন। যা পেশাদার পতিতারাও পারে না। আপনাকে মনে করেছিলাম ভালো। কিন্তু আপনি ছি! আরে পতিতারা দেহ বিক্রি করে পেটের জন্য আর আপনি?আঙ্কেল যখন বাহিরে যায় তখন সবাই বলে, কি চাচা ব্যবসা তো ভালোই হচ্ছে। তাই বলতে চাই আপনি চলে যান। আঙ্কেল আসেন তো।

– মৌ কি বলবে! তার মুখ দিয়ে কোন কথা আসছে না। ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রাস্তায় যে দেখে সেই নোংরা কথা বলে। মানুষের প্রতিটা কথা ঠিক কলিজায় গিয়ে লাগে।একটা পতিতার যে সম্মানটুকু আছে। সে সম্মানটুকু আজ মৌ এর নেই। এ জীবন দিয়ে কি করবে? সে সত্যিই পাপী ভালোবাসার মানুষটিকে ঠকিয়েছে। মরার আগে একবার রাজকে দেখে যেতে পারলে ভালো হতো। রাস্তায় বসে বসে কাঁদছে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কোথাও যাবে। শহরটা যে আজ বড্ড অপরিচিত! সামনে পার্কটা দেখে মনের ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে ওঠলো কত অজস্র স্মৃতি ভেসে ওঠছে। কত প্রহর কাটিয়েছে দু’জন একসাথে। সত্যিই আজ নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। নিজের চেহারা সৌন্দর্য সবসময় থাকে না। আমরা অনেক মেয়েরা তা সহজেই ভুলে যায়। বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা টিকে না। আমি যে আমার নিজের ভালোবাসাকে গলা টিপে হত্যা করেছি। কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবো। না তবুও মরার আগে একবার ওকে দেখে যেতে চায়।

– এদিকে রাজ হসপিটালে গিয়ে দেখে। কথার শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। রাজ বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ঘন্টাখানেক পর ডাক্তার এসে বললো’ রোগীর জ্ঞান ফিরেছে।’রোগী এখন বিপদ মুক্ত আপনারা দেখা করতে যেতে পারেন।

-কথার বাবা বললো’ বাবা রাজ তুমি ভেতরে যাও। ‘আমি আর রাইসা পড়ে যাচ্ছি।

– আচ্ছা আঙ্কেল।

– আমি কথার কেবিনে গিয়ে কথার মাথার পাশে গিয়ে বসলাম।কথা একটু আমার দিকে তাকাল। আমি খেয়াল করে দেখলাম কথার চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি নিজের অজান্তেই কথার মাথায় হাতটা রাখলাম।

– নীরবতা ভেঙে আমিই বললাম’ কেন মরতে গিয়েছিলেন ম্যাডাম?,

– রাজ আমি যে আমার ভালোবাসার মানুষকে ভুল বুঝেছিলাম। যে মানুষটাকে নিয়ে হাজারটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। সে মানুষটাকেই ভুল বুঝেছিলাম। মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলাম। আমি যে আমার নিজের জীবনকে কষ্ট দিয়েছি। জানো রাজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমি তোমাকে জোর করবো না। কারণ তোমাকে জোর করার আমার কোন অধিকার নেই। আমার ভালোবাসা পবিত্র। যে ভালোবাসায় একবিন্দু খুঁত নেয়। জানো রাজ যখন ভালোবাসার মানুষটির সম্পর্কে কেউ জানতে পারে যে তার অন্যকারো সাথে শারীরীক সম্পর্ক আছে। আর সেটা যদি নিজ চোখে কেউ ভিডিও দেখে তখন তার মনের অবস্থা কেমন হবে? আমি তো তোমাকে ভালোবাসতাম।কিন্তু তোমার ইডিট করা ভিডিও দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। আর তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আর কষ্ট দিয়েছি আমার কলিজার টুকরাকে। জানো রাজ তুমি আমার জীবন। আর রাইসা আমার কলিজার টুকরা। আমি ওকে বাজে কথা বলেছি। আমার মেয়েটা আমায় ক্ষমা করবে?

– ম্যাডাম প্লিজ রাইসা আমার মেয়ে। আর আমার মেয়ে কোন বাজারের পণ্য নয় যখন ইচ্ছা কিনে নিবেন। সুযোগ পেয়েছিলেন ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নেবার কিন্তু সেটা পারেননি। তাই আমি অনুরোধ করবো আমার মেয়ের নামটা আপনার মুখেও নিবেন না।

-রাজ তোমার পায়ে পড়ি, এমন শর্ত দিয়ো না। আমি তোমাকে আর রাইসাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমি তো মরতেই চেয়েছিলাম তবে কেন বাঁচালে আমায়?
আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। বড্ডবেশি ভালোবাসি। যখন তোমাকে পাবো না। তখন কিভাবে বেঁচে থাকবো। যখন রাইসার মুখে মা ডাক শুনতে পারবো না তখন কি নিয়ে বেঁচে থাকবো? আর আমি শপথ করেছি তোমায় না পেলে জীবনে বিয়ে করবো না। আমি সত্যিটা জানার পরই অপারেশন করে নিয়েছি। মা হবার ক্ষমতা চিরতরে নষ্ট করে দিয়েছি। রাইসাকে জন্ম না দিলেও কলিজাতে স্থান দিয়েছি। জানি তোমাকে পাবো না। আমি আর কোনদিন মা হতে চায় না। আমি রাইসাকে নিয়েই বাঁচতে চায়। রাজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। জানো রাজ একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় আনন্দের বিষয় হচ্ছে মাতৃত্ব। কিন্তু আমি সেটা আগেই উপভোগ করেছি রাইসার মাধ্যমে। তাই নিজের মা হবার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলেছি। আমার মেয়েটাকে একটু ডাক দিবে?
– রাইসাকে ডাক দিলাম।
– রাইসা এসে আমার পাশে দাড়ালো।
– কথা দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ো বললো’ মা আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তুই একবার আমাকে মা বলে ডাক। আমার কলিজাটা ঠান্ডা কর। আয় মা আয়। আমি যে তোর মা হয়েই বাঁচতে চায়।
– কথা প্লিজ! এসব বন্ধ করো। শোন তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো। আর রাইসাকে যদি মেয়ে হিসেবে ভাবো তাহলে তোমার বাবাকে কষ্ট দিবে। আর সুসাইড করার কথা বলবে না। এটা আমার কসম।
– রাজ প্লিজ এমন কসম দিয়ো না। আমাকে তার চেয়ে বরং গলা টিপে মেরে ফেল!

– সরি, আমরা আসি।

– এই কথা বলে রাজ হসপিটাল থেকে বের হতেই দেখে, মৌ হমপিটালের সামনে দাঁড়ানো। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক করা! মৌ রাজকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। রাজের বুকটা কেমন যেন ছ্যাঁত করে ওঠলো। মৌ রাজকে ছেড়ে দিয়েই বললো ‘আমাকে আর ক্ষমা করা যায় না?’
– মৌ তুমি কি করেছো? তারপরেও এসব বলছো? আমাকে যেতে দাও। প্লিজ।

– রাজকে আকটানোর কোন অধিকার মৌ এর নেই!

– এদিকে নীলয় হসপিটালে কথা আর রাজের সবকথা শুনে ফেলে । নীলয় মনে মনে ভাবছে রাজ বেঁচে থাকলে রাজ্য আর রাজকন্যা দু’টাই হারাবে। তাই রাজকে মেরে মৌকে ফাসিয়ে দেওয়া যাবে।

– এদিকে রাজ বাসায় গিয়ে সবকিছু গুচ্ছাছে। এমন সময় একটা ফোন আসল। ফোন রিসিভ করেই বললো’মি’রাজ মৌ নামে কাউকে চিনেন?
– কথাটা শুনেই রাজের বুকটা কেঁপে ওঠলো!
– কি হয়েছে মৌ এর?

– আপনি এক্ষণি হসপিটালে আসেন।

-রাজ রাইসাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে দেখে মৌ কে ঢেকে রাখা হয়েছে। রাইসা দৌড়ে গিয়ে মা বলে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরল!
– আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেছি। রাইসাকে কি বলবো তার ভাষা নেই। এদিকে একটা মেয়ে একটা চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল’ এটা তার হাতে ছিল।’

– আমি চিরকুট খুলতেই দেখতে পেলাম ‘ খুব সুন্দর করে লেখা,
কি হলো আমাকে না ভালোইবাসো না? তবে কাঁদছো কেন? জানো রাজ আমি সত্যিই অনেক খারাপ সারাটাজীবন তোমাকে কষ্ট দিলাম। তোমাকে কাঁদালাম। আজ বিদায়ের দিনেও তোমাকে কাঁদাচ্ছি। রাজ আমায় একটু বুকে নিবে? তোমার বুকে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। আর সকল মেয়েদের বলতে চাই ভালোবাসায় বিশ্বাস নষ্ট করো না। বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্কই টিকে না। হয়তো নিজের ভালোবাসার মানুষ রেখে অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটানো যায়। কিন্তু এতে আমরা ভাবি না ভালোবাসার মানুষটা কতটা কষ্ট পায়। সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা টাকার মাঝে নয় বিশ্বাসের মাঝে। আর আমি অভাগা সত্যিকার ভালোবাসা বুঝিনি। আর যখন বুঝেছি তখন আমার কিছুই নেই। একটু মজা, একটা লোভ জীবন থেকে শেষ নিঃশ্বাসটুকুও কেড়ে নিল।
আর কি হলো রাজ বুকে নিবে না? ক্ষমা করে দিয়ো।

– চিঠিটা শেষ করেই মৌকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। চোখের পানি কোন বাঁধা মানছে না। রাইসাকে কোন স্বান্ত্বণা দিতে পারছি না। সন্ধ্যা বেলা মৌকে দাফন করে রাইসাকে নিয়ে বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে কাপড় চোপড় ব্যাগে, ভরে রওয়ানাদেয় ততক্ষণে রাত হয়ে যায়। বাসা থেকে বের হতেই সামনে কণা ম্যাডামকে দেখতে পায়।

– ম্যাডাম আপনি?
– হ্যাঁ আমি। তোমরা কোথায় যাচ্ছো?

– এ শহর ছেড়ে।
– আমাকে নিবে না?
– সরি ম্যাডাম। আসি আমরা।
– রাইসাকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।
– এমন সময় কণা ম্যাডাম বললো’ রাইসা মামনি চলেই যাবে আমার ফিস টা দিয়ে যাও। ‘
– রাইসা কণা ম্যাডামের গালে যখন পাপ্পি দিবে এমন সময় রাইসা চিৎকার দিয়ে বললো বাবাই সরো!
– আমি তাকাতেই দেখি একটা মাইক্রোবাসা এসে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলো। রাইসার চিৎকার কানে ভেসে আসছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে

– চলবে””””

#বাবার_ভালোবাসা।

পর্বঃ৩১
লেখকঃ রাইসার_আব্বু

– হ্যাঁ আমি। তোমরা কোথায় যাচ্ছো?

– এ শহর ছেড়ে।
– আমাকে নিবে না?
– সরি ম্যাডাম। আসি আমরা।
– রাইসাকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।
– এমন সময় কণা ম্যাডাম বললো’ রাইসা মামনি চলেই যাবে আমার ফিস টা দিয়ে যাও। ‘
– রাইসা কণা ম্যাডামের গালে যখন পাপ্পি দিবে এমন সময় রাইসা চিৎকার দিয়ে বললো বাবাই সরো!
– আমি তাকাতেই দেখি একটা মাইক্রোবাস এসে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলো। রাইসার চিৎকার কানে ভেসে আসছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কিছুই দেখতে পারছি না। মনে হচ্ছে জীবনের অন্তিম মুহূর্তে পৌঁছে গেছি। রাইসার মুখটা বারবার চোখে ভাসছে।

– এদিকে রাইসা রাজের রক্তমাখা দেহটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল’ বাবাই ও বাবাই কথা বলো বাবাই। আমরা না চলে যাবো। যেখানে কেউ তোমাকে কষ্ট দিবে না সেখানে। ও বাবাই চোখ খুলো বাবাই। কথা বলো।আমাকে ছাড়া তুমি কোথায় যাচ্ছো বাবাই?

– ও ডাক্তার আন্টি দেখ বাবাই কথা বলছে না। কণা কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। নিজের উড়নাটা দিয়ে রাজের মাথাটা বেধে ফেলল। রাস্তায় অনেক লোক তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ ভিডিও করছে। এটা বাংলাদেশের কালচার। কণা রাজকে নিয়ে গাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে আসে।

– রাজের অপারেশন শেষ করে যখন বাহিরে বের হয়। তখন দেখে রাইসা অপারেশন থিয়েটারের দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। রাইসার কান্না কণার কাছে সহ্য হচ্ছে না। একদম বুকে গিয়ে বিঁধছে। কেন জানি বুকের ভেতরটা চিনচিনে ব্যাথা করছে।

– ডাক্তার আন্টি বাবাই আমার সাথে কথা বলবে তো? বাবাই ভালো হয়ে গিয়েছে তো?কি হলো ডাক্তার আন্টি বলেন না কেন?
– কণা কিছু বলতে পারছে না। বুকের ভেতরটা ফেঁটে কান্না আসছে। কেন জানি মনে হচ্ছে রাজ আর রাইসা তার আপন কেউ।

– কি হলো?বলেন না কেন? আমার বাবা আমার সাথে কথা বলবে?
– কণা কিভাবে বলবে, রাইসাকে তার অবস্থা গুরুতর। কিছুদিন আগে মাথায় যেখানে আঘাত পেয়েছিল। এই একসিডেন্টে ঠিক একই জায়গায় ব্যাথা পেয়েছে। বাঁচার সম্ভবনা ক্ষীণ। কিন্তু এ কথাটা কিভাবে বলবে রাইসাকে।

– কি হলো আন্টি তুমি কথা বলছো না কেন? আমার খুব কান্না পাচ্ছে। খুব। তুমি না আমার আন্টি। বলো না বাবাই এর কি হয়েছে?

-কনা রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো’ মামনি আল্লাহ অনেক মহান। তিনি তোমার কাছ থেকে তোমার বাবাইকে কেড়ে নিবে না। তোমার সাথে তোমার বাবা কথা বলবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে তোমার চাইতে হবে। আল্লাহ সব পারে। তুমি আল্লাহকে বলবে তোমার বাবাইকে যেন ভালো করে দেয়।
– হুম আন্টি আল্লাহকে বলবো, বাবাইকে যেন কথা বলতে বলে। আল্লাহ জানে না কি? আমি বাবাইকে ছাড়া বাঁচবো না। বাবাই আমার জীবন। আচ্ছা আন্টি বাবাই এর অপারেশনের জন্য অনেক টাকা দিতে হবে তাই না?
– হ্যাঁ দিতে হবে। তুমি তো দাওনি?
– আন্টি আমার কাছে তো কোন টাকা নেই।
– কে বলছে নেই? তুমি দু’গালে পাপ্পি দাও তাহলেই হবে।

– রাইসা কণাকে জড়িয়ে ধরে দু’গালে চুমু দিয়ে বলল ‘লাভ ইউ আন্টি। ‘
– কণা রাইসাকে জড়িয়ে ধরে বললো’ লাভিউ টু মামনি। ‘কণা যখন অপারেশন শেষ করে তার রুমে বসে আছে। এমন সময় ডাক্তার উম্মে কুলসুম এসে বললো’ কণা তুমি কি কাজটা ঠিক করছো?
– কি কাজ?
– এইযে অপারেশনের সমস্ত খরচের দায়িত্ব নিয়ে নিলে। যেখানে অপারেশন করেও কোন লাভ হওয়ার কথা না। এর আগেও একই রকম করছো। তুমি যা করছো, এটা ঠিক না! লোকটার একটা বাচ্চা আছে।

– তুমি কি বলতে চাচ্ছো আনিশা?
-যা বলতে চাচ্ছি তা বলার আগে বলতে চাই। তুমি কি পেশেন্টকে ভালোবাসো?
– আচ্ছা আনিশা কারো বিপদের দিনে, কারো পাশে দাঁড়ানোই কি ভালোবাসা? আর ভালোবাসা শব্দটাকে আমরা নোংরা করে ফেলছি তাই না। আমরা ভালোবাসা বলতে ছেলে আর মেয়ের ভালোবাসা টাকেই বুঝি। তাই না?
– কণা আমার এক্সপিরিয়েন্স যা বলে তা থেকে বলছি, তুমি পেশেন্টকে ভালোবাসো। অপারেশন শেষ করে যখন তুমি বের হও। তখন তোমার চোখের জল বলছিল তুমি ভালোবাসো। আর এমন একজনকে ভালোবাসো যার বেঁচে থাকার আশা করাটাও বোকামী। তোমাকে কিছু বলতে তুমি নিজেও ডাক্তার। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। আর হ্যাঁ ডাক্তার সিফাত তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি চাইলে বিয়ে করতেও রাজি।

– হুম আমি জানি সিফাত আমাকে পছন্দ করে। আমিও তাকে পছন্দ করি। অপছন্দ করি সেটা না। সে একজন এডুকেটেড পারসন। কিন্তু কি জানো আনিশা সিফাতের প্রতি আমার কোন ফিলিংস কাজ করে না। ভালোবাসা কি সিফাত সেটা বুঝেই না। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা কি জানো আনিশা তুমি যা ভাবছো সেটা ভুল। রাজের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তবে রাজকে আমি ফিল করি।

– আচ্ছা তাই যেন হয়। আর আমি এখন আসি। আর যা বললাম ফ্রেন্ড হিসাবে বললাম। কিছু মনে করো না।

– আরে না।
– আনিশা চলে গেলে। কণা ভাবতে লাগল সত্যিই কি আমি রাজকে ভালোবাসি? কেন রাজের জন্য এতো মায়া হয়। কেন রাইসাকে আপন মনে হয়। এসব কোন কিছুরই হিসাব মেলাতে পারছে না কণা। হঠাৎ কণার বাসা থেকে ফোন আসলো। ফোন পেয়ে কণা বাসায় চলে গেল।

– এদিকে কথা অনেকটা সুস্থ। রাজের কথা খুব মনে পড়ছে। বুক ফেঁটে কান্না আসছে। রাজের চেহারাটা বারবার ভেসে ওঠছে। কথা বালিশে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।

– কথার বাবা কথার রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বুঝতে পারল কথা কাঁদছে। কথার কান্না শুনে কথার রুমে গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বললো’ মারে এভাবে কাঁদিস না আর। ‘

– কথা তার বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললো ‘ বাবা আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবো না বাবা। আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। বাবা আমার রাজকে এনে দাও না। আমি তোমার কাছে কিছুই চায় না।

-মারে, আমিও রাজের সাথে অন্যায় করেছিরে। ছেলেটা বড্ড ভালোরে। শোন না মা তুই রাজের কাছে যা।

– সত্যি যাবো বাবা?
– হ্যাঁ মা। তোর ভালোবাসার মানুষ তোর ভালোবাসা দিয়েই জয় করে নে।

– কথা রাজের বাসায় এসে জানতে পারে রাজ একসিডেন্ট করেছে। রাজের একসিডেন্টের কথা শুনে কথার পায়ের মাটি সরে যাচ্ছে। বাড়িওয়ালার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে কথা হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালে গিয়ে দেখে রাইসা বেঞ্চে বসে আছে।

– কথা গিয়েই রাইসাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা তোমার বাবাই কোথায়? তোমার বাবা কেমন আছো?
– রাইসা কথাকে রাজের কেবিন দেখিয়ে দেয়। কথা দৌড়ে রাজের কেবিনে চলে যায়। কেবিনে গিয়ে দেখে রাজের মাথাটা ফুল ব্যান্ডেজ করা অক্সিজেন চলছে।

– কথার হৃদয় থেকে মনে হয় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রাজকে এভাবে দেখতে পাবে সে কোনদিন কল্পনাতেও ভাবেনি। কথা রাজের পায়ের কাছে বসে বলতে লাগল ‘ রাজ তুমি কথা বলবে না আমার সাথে?’ আমি আর তোমাকে কষ্ট দিবো না। তুমি না আমার কলিজার টুকরা। কলিজা ছাড়া কি কেউ বাঁচে?কথা রাজের পা দু’টি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। রাইসা কথাকে জড়িয়ে ধরে বাবাই বাবাই বলে কাঁদতে লাগল।

– নার্স কথাকে রাজের কেবিনে দেখে বললো’ কি করছেন আপনারা? রোগীর কাছে কথা বলা যাবে না। বের হয়ে যান প্লিজ।

– কথা রাইসাকে নিয়ে বের হয়ে সোজা ডাক্তারের রুমে চলে যায়। ডাক্তার সিফাতের সামনে বসে আছে কথা।
– মিস কথা, কিভাবে যে বলি, উনি এর আগেও গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ও যাত্রায় তার বেঁচে থাকার কিছুটা চান্স ছিল। আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে ওঠে। হয়ত ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটাকে আল্লাহ কষ্ট দিতে চাননি। কিন্তু এবারের একসিডেন্টে ঠিক মাথার আগের জায়গাটাতে আঘাত আনে । তাছাড়া ব্রেনে অনেক আঘাত পাইছে।
– কি হলো আপনি কাঁদছেন কেন?
– এক কাজ করতে পারেন শেষ চেষ্টাটা বিদেশে নিয়ে করতে পারেন।

-আপনি সব রেডি করেন। আমার স্বামীকে কোন ভাবেই মরতে দিতে পারি না।
– স্বামী মানে?
– সেটা আপনার জানতে হবে না।

– এদিকে পরের দিনই কথা রাজকে নিয়ে সিঙ্গাপুর এসে পড়ে।

– সিঙ্গাপুর আনার পর আরেকটা অপারেশন হয়। অপারেশন শেষে ডাক্তার বললো’ আপনারা ঈশ্বরকে ডাকেন। ‘ আমাদের হাতের ক্ষমতা শেষ। তিনি চাইলে সব সম্ভব।

-রাইসা কথাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে মামনি আমি বাবাইকে ছাড়া বাঁচবো না। এদিকে রাজের সাথে, কণাও এসেছে। কণার চোখেও পানি।

– এদিকে অপারেশন ১৪ ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে রাজের জ্ঞান ফিরছে না।
-চলবে”””’