বাবার ভালোবাসা পর্ব-৩৬+৩৭

0
270

বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩৬
লেখাঃরাইসার_আব্বু

” কি বলছেন ডাক্তার আন্টি? মম আমার বাবাইকে রেখে বিয়ে করতে পারে না। আমাকে নিয়ে যাবেন আমি মমকে বুঝিয়ে বলবো।
” কণা রাইসাকে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যায়। কথাদের বাড়িটা নানা রঙের আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। কথা লাল শাড়ি পড়ে কনের আসনে বসে আছে। রাইসা কথাকে দেখেই মম বলে দৌড়ে গেল।
” কথা রাইসাকে দেখেই বললো,” দেখ তো এই মেয়ে কে?
” এই মেয়ে তুমি কে? আর ম্যাডামকে মম বলছো কেন? ”
” এ্যা আসছে উকিল গিরি করতে। মমকে মম ডাকবো না তো কি ডাকবো?”
”আচ্ছা তোমার মম কোনটা?
” কেন ওই যে সুন্দর করে সেজে স্টেজে বসে আছে উনি আমার মম। আমার মম অনেক ভালো। ”
” কি বলছো? ম্যাডামের তো বিয়েই হয়নি। তুমি মম ডাকো ক্যামনে?”
” আরে মশায় আপনি তো অনেক বড় পাজি। আপনি কেন এমন করছেন? আমি বলছি উনি আমার মম। বিয়ে হতে হয় লাগি মম হতে? আর বিয়ে না হলে বাবাই এর সাথে বিয়ে হবে।”
” লোকটি হাহা করে হেসে দিয়ে বললো। কি বলছো এসব? মনে হচ্ছে পাগলী।”
” সরেন তো মম এর কাছে যায়। রাইসা লোকটাকে সরিয়ে দিয়ে কথার কাছে চলে যায়। কথা রাইসাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।”
” মম তুমি বাবাই এর সাথে কি মজা করছো? ”
” তুমি কে মামনি? এখানে কেন?
” হিহি মম বুঝতে পারছি তুমি মজা করতেছো আমারর সাথে। ডাক্তার আন্টি দেখ মম আমার সাথে মজা করছে। ”
” কণা বারবার রাইসাকে চুপ করতে বলছে। বাট রাইসা চুপ করছে না। ”
” কথা মনে মনে ভাবছে, রাইসা যদি এখানে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে দেখা যাবে বাবার মান সম্মানে আঘাত লাঘবে। তাই রাইসাকে না চেনার ভান করছে।”
” কি হলো মম তুমি মজা করছো আমার আে বাবাই এর সাথে ঠিক বলছি না? ”
”না মামনি আমি তোমাকে ঠিক চিনতে পারছি না। এছাড়া তুমি কে মামনি তোমার বাবা -মা কোথায়? তাদের কি দাওয়াত দেওয়া হয়েছে? নাকি তুমি একাই এসেছো?
” এই যে ডাক্তার কণা আপনার তো কোন সেন্স আছে। এখানে মেয়েটা পাগলামী করলে কি হতে পারে জানেন তো? প্লিজ ওকে নিয়ে যান।
” এদিকে সবাই বলতে লাগল বর এসেছে। কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখলো বিয়ে বাড়িতে সাতটা গাড়ি উপস্থিত হলো। একটা গাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো। সাজানো গাড়ি থেকে বর বের হতেই চমকে উঠলো কনা। এতো নীলয়। শেষ পর্যন্ত নীলয়কেই কথা বিয়ে করতেছে।
” ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলি?”
‘ হ্যাঁ বলো।
” নীলয়কেই বিয়ে করছো শেষ পর্যন্ত?”
” হ্যাঁ নীলয়কেই বিয়ে করছি। কারণ ওর পাপের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। ও ভালো হয়ে গেছে। আর বাবা ওর সাথে ছোট বেলাতেই ঠিক করে রেখেছে তাই না করতে পারি নি। ”
” রাইসা ততক্ষণে বুঝে গেছে তার মমের সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। রাইসা এবার কান্না করে দিয়ে বললো ” মম তুমি না বলেছিলে বাবাইকে বিয়ে করবে তুমি। ” তুমি না বাবাইকে ভালোবাসতে। তাহলে অন্য বেডারে কেন বিয়ে করো? মম তুমি বিয়েটা করো না। ”
” রাইসা মামনি চলে যাও। বাবা দেখলে তোমাকে বকা দিবে। ”
” মম তুমি বাবাইকে ছেড়ে যেয়ো না। ” রাইসা এবার কথার হাতটা ধরে বললো, ‘ মম আমার বাবাই ছাড়া আর কেউ নেই। তুমি যদি আমাদের ছেড়ে যাও আমি কাকে মম ডাকবো? তুমি না মম আমাকে অনেক ভালোবাসতে। রাইসার চোখের পানি কথার হাতের উপর টপটপ করে পড়ছে। কিন্তু কথার কোন কর্ণপাত হচ্ছে না। মম তুমি বিয়েটা করো না প্লিজ। না করে দাও, দেখবে বাবাই তোমাকে অনেক ভালোবাসবে? বাবাই কথা বলতে না পারলে কি হবে, আজ তোমার বিয়ের কথা শুনে বাবার চোখে পানি দেখছি। মম তুমি দেখো আমার। বাবাই আবার ঠিক হয়ে যাবে। দেখো আল্লাহ আমাকে আর কাঁদাবে না। মম তুমি চলো তো। কথা রাইসার কাছ থেকে হাতটা টান দিয়ে সরিয়ে নেয়।
” কণা আপনি প্লিজ কথাকে নিয়ে এখান থেকে যান তো। আপনি কি বিয়ে ভাঙার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন? ”
” কি বললেন ম্যাডাম বিয়ে ভাঙা? আরে না ম্যাডাম তবে একটা জিনিস দেখে গেলাম ভালোবাসা কিভাবে রং পাল্টায়। আপনি না বলেছেন আপনি আপনার মাতৃত্ব নষ্ট করছেন রাইসার জন্য। আর আজ সে রাইসাকেই দূরে সরিয়ে দিলেন। আহা ভালোবাসা। গিরগিটি লজ্জা পাবে আপনাদের ভালোবাসা দেখে। কারন আপনারা যেভাবে ভালোবাসা পাল্টান গিরগিটি সে ভাবে মনে হয় রং ও পাল্টাতে পারবে না ।
” মিস কণা বেশি হচ্ছে কিন্তু? একটা কথা মনে রাখবেন যে মানুষটার সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যে মানুষটা বাঁচবে কি না বাঁচবে তার কোন সিউর নেই। যে মানুষটা নিজ থেকে দাঁড়াতে পারে না। যে মানুষটা প্যারালাইজড। যে মানুষটার একটা মেয়ে থাকার পরও কিভাবে তাকে বিয়ে করি? কিভাবে একজন বাবা তার মেয়েকে তুলে দেয়? আমি আবেগ আর বাস্তবতার পার্থক্য দেরিতে হলেও বুঝতে পারছি। ”
” এমন সময় নীলয় আসলো রুমে। নীলয় রুমে এসেই বললো কি হয়েছে কথা। ”
” কথা নীলকে সব বললো। নীলয় সব শুনে কণাকে বললো ‘ ডাক্তার ম্যাডাম আপনাকে কিছু বলায় নেই। রাইসাকে নিয়ে চলে যান। প্লিজ বিয়েটা ভালোভাবে হতে দেন। আর রাইসা মামনি সরি। তুমি খেয়ে যেয়ো। ”
” রাইসা এবার হিচকি দিয়ে কান্না শুরু করে দিলো। দু’হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলতে লাগল” সরি আপনাকে মম বলেই ডাকি। মম আপনাকে কিছু বলবো না। আপনি বাবার জন্য অনেক কিছু করছেন। আমাদের বাড়ি ভাড়া, আমার স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া আমার বাবাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করানো। আপনার কাছে ঋণী। শুনেছি আল্লাহর কাছে সম্পদের অভাব নেই। আল্লাহ যদি আমাকে টাকা দেয় তাহলে তোমাকে টাকা দিয়ো যাবো। আর আঙ্কেল আমার মমকে কষ্ট দিবেন না। মম আসি, তোমাকে কষ্ট দিলাম।
” আন্টি চলো, চোখ মুছতে মুছতে রাইসা কণাকে নিয়ে বের হয়ে এলো। কনা পারছে না চোখের পানি ধরে রাখতে।
‘ কনা রাইসাকে নিয়ে বাসায় এসে রান্না করে রাইসা আর রাজকে খাইয়ে চলে যায়।
” রাতে রাইসা রাজের বুকে শুয়ে শুয়ে মম মম বলে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়।
” এদিকে কণা সারারাত ঘুমাতে পারে না। বারবার রাইসার কথাগুলো কানে ভাসতে থাকে। কণা তার মাকে কথা দিয়েছে। তার মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে। হাতে এখানো অ্যাংগেজমেন্টের আন্টি। দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে ।
” ফজরের আযান শুনে রাইসার ঘুম ভেঙে যায়। রাইসা নামায শেষ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তার বাবাকে যেন সুস্থ করে দেয়।
” সামনে বৈশাখ উপলক্ষে স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। রাইসাকে ম্যাম বলেছে গান গাইতে। তাই পরের দিন রাইসা সেজেগুজে তারর বাবাইকে খাইয়ে স্কুলে চলে যায়। এদিকে স্টেজে রাইসাকে গান বলতে বললে ‘ রাইসা ধীরে ধীরে স্টেজে গিয়ে মাইক্রো ফোনটা হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করে ‘
কলিজা তুই আমার
তুই যে নয়ন এর আলো।
লাগে না তুই ছাড়া লাগে না তো যে ভালো
রূপকথা তুই তো আমারি
জীবনের চেয়ে আরো দামী।
গানটা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। এতো সুন্দর কারো কন্ঠ হতে পারে নাকি। মনে হচ্ছে সুরের জাদুকর। গানটা শেষ হতেই সবাই হাত তালি দেয়। রাইসা স্টেজ থেকে নামতেই অধরা ম্যাম রাইসাকে জড়িয়ে ধরে। কারণ অধরা লক্ষ করছে রাইসা যখন গান গাচ্ছিল তখন তার চোখের কোণে পানি জমছিল।
” রাইসা স্টেজ থেকে নামলে অধরাকে এক ভদ্র লোক বললো, ম্যাডাম আমি বিজনেস ম্যান রোহান বলছি। আমি চাচ্ছিলাম রাইসাকে দিয়ে মিউজিক ভিডিও বানাতে।
চলবে””””

#বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ ৩৭
লেখাঃরাইসার_আব্বু

গানটা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। এতো সুন্দর কারো কন্ঠ হতে পারে নাকি। মনে হচ্ছে সুরের জাদুকর। গানটা শেষ হতেই সবাই হাত তালি দেয়। রাইসা স্টেজ থেকে নামতেই অধরা ম্যাম রাইসাকে জড়িয়ে ধরে। কারণ অধরা লক্ষ করছে রাইসা যখন গান গাচ্ছিল তখন তার চোখের কোণে পানি জমছিল।

” রাইসা স্টেজ থেকে নামলে অধরাকে এক ভদ্র লোক বললো, ম্যাডাম আমি বিজনেস ম্যান রোহান বলছি। আমি রাইসাকে দিয়ে মিউজিক ভিডিও বানাতে চাই। মেয়েটার কন্ঠে সত্যিই জাদু আছে। এই নেন আমার কার্ড।

”আচ্ছা ধন্যবাদ আপনাকে। আমরা আপনাকে জানাবো। ”

” লোকটি চলে গেলে, রাইসাকে অধরা অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে বললো,’ রাইসা তুমি গান বলার সময় কাঁদছিলে কেনো? ‘
‘ আমার তো মা নেই ম্যাম। মার কথা খুব মনে পড়ছিল। ”

” ওহ্ আচ্ছা। ‘তোমার বাবা আসলো না আজ? এতো সুন্দর গান করো তুমি এটা তো আগে জানতাম না।”

” ম্যামের কথা শুনে রাইসা কাঁদতে লাগল। ”

” অধরা রাইসার কান্না দেখে খানিকটা অবাক হয়ে গেল। মেয়েটা বাবার কথা শুনেই কাঁদছে। অধরা রাইসার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,’ মামনি কি হয়েছে তোমার বাবার কথা শুনে কাঁদছো কেন? ”

” ম্যাম আমার বাবা অসুস্থ। বাবাই সে জন্য আসতে পারেনি। ” ম্যাম সন্ধ্যা হয়ে যাবে আমি আসি। ”

” রাইসা অফিস থেকে বের হয়ে সোজা বাসার দিকে রওয়ানা হলো। তার খুব খারাপ লাগছে, সকালে বাবাইকে খাইয়ে আসছে। দুপুরে খায়নি বাবাই। এসব ভেবে রাইসার খুব কান্না পাচ্ছে। ” হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন বললো মামনি রিক্সায় ওঠো।”

” রাইসা পিছনে তাকিয়ে দেখে অধরা ম্যাম। ”

” কি হলো মামনি এসো। ”

” রাইসা রিক্সায় উঠে পড়লো। অধরা এটা-সেটা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে রাইসা শুধু হু, হ্যাঁ জবাব দিচ্ছে। ‘
” রাইসা আইসক্রিম খাবে মামনি?”

” না ম্যাম, খাবো না। ”

” এই মামা দাঁড়ান তো। রিক্সাওয়ালা দাঁড়ালে অধরা পাশের ব্রেকারি থেকে আইসক্রিম আনতে চলে যায়। রাইসার হঠাৎ চোখ যায় পাশের শপিংমলের দিকে। শপিংমলের দিকে তাকাতেই নীলয় আর কথাকে দেখতে পায়। নীলয়ের হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ। রাইসা নিজের অজান্ততেই মম বলে ডাক দিয়ে ফেলে।
নীলয় রাইসার মুখে মম ডাক শুনে অনেকটা রেগে যায়। রাইসার কাছে এসে বলে, এই মেয়ে রাস্তায় যাকে তাকে দেখেই মম মনে হয়। এই যে কথা এসব ছোটলোকরা তোমাকে মম ডাকলে কিছু বলতে পারো না।
” না স্যার, আসলে না বুঝে বলে ফেলছি। আসলে উনার মতো একজন মম ডাকতে বলেছিল তো। কিন্তু সে হারিয়ে গেছে বুঝতে পারি নি।

” নাটক তো ভালোই শিখেছ। আরেকবার আমার বউকে যদি মম ডাকতে শুনি এক থাপ্পরে গাল লাল করে দিবো। ”

– কথা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। নীলয় কথাকে নিয়ে চলে গেল। কথা রাইসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাইসাকে একবার পড়ক করে দেখে চলে গেল। রাইসার খুব কান্না পাচ্ছে। কথা তো অনেক ভালোবাসতে আজ সেও নেই । এসব ভাবতে ভাবতে রাইসার চোখে জল এসে যায়। এমন সময় অধরা আইসক্রিম নিয়ে রিক্সায় উঠে দেখে রাইসা কাঁদছে। মামনি তুমি কাঁদছো কেন? বাবার কথা মনে পড়ছে? কান্না করো না এই নাও আইসক্রিম।

” রাইসা নিতে চাচ্ছিল না। তারপরও ম্যামের কথা ফেলতে পারলো না। আইসক্রিম খেতে খেতে রাইসা বলল, ‘ম্যাম বাসায় এসে গেছি।

” মামা দাঁড়ান। ”

” রিক্সা দাঁড়ালে রাইসা রিক্সা থেকে নেমে, অধরাকে বললো,” ম্যাম বাসায় আসেন আমাদের।’

”রাইসার কথা শুনে অধরা কিছু না ভেবেই বাসায় আসলো। ” রাইসা ভাবছে কি করবে ম্যামের জন্য। ম্যামকে কি খেতে দিবে। এসব ভাবতে ভাবতে রুমে প্রবেশ করে।

” অধরা রুমে প্রবেশ করেই দেখে বাসাটা ছোট্ট হলেও খুব পরিপাটি। হঠাৎ অধরার চোখ গেল বিছানার দিকে। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে একজন শুয়ে আছে। গলা পর্যন্ত চাদরে আবৃত্ত। রাইসা রুমে ঢুকেই লোকটির কপালে চুমু দিয়ে দিল।
” অধরা বুঝতে পারল, বিছানায় শুয়ে থাকা লোকটায় রাইসার বাবা।”

রাইসা একটা চেয়ার টেনে দিয়ে অধরাকে বললো ‘ ম্যাম বসেন আপনি। আমি একটু আসছি। ‘

‘ অধরা চেয়ারে বসতেই রাইসা কিচেনে চলে গেল।’

‘ অধরা ঘরে বসে থেকে পড়ক করে রুমটা দেখচ্ছো। আর ভাবছে ক্লাস ফ্লাইভে পড়া একটা মেয়ে কি করে এতটা সামলে নিচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে রাইসা এসে বললো’ ম্যাম চা নেন? ‘

” অধরা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো , ‘ বেশ তো তুমি আমার চেয়ে ভালো’ চা ‘ বানাতে পারো। শোন রাইসা রোহান সাহেব তোমার গান রেকডিং করতে চায়। তুমি কি চাও? ‘

” ম্যাম আমি রাজি, আপনি স্যারকে বলে দিয়েন। ”

” অধরা চা টা শেষ করে বললো, মামনি এখন তাহলে আসি। ‘

” অধরা চলে গেলে, রাইসা খাবার এনে তার বাবাইকে খাইয়ে দিচ্ছে আর বলছে। বাবাই আজ তোমার খুব কষ্ট হয়েছে তাই না? আমারো খুব কষ্ট হয়েছে। আইসক্রিম ছাড়া কিছুই খায়নি বাবাই। জানো বাবাই আজ না আমি সবার সামনে গান করেছি। সবাই হাততালি দিয়েছে। তুমি থাকলে অনেক মজা হতো। মম থাকলেও খুশি হতো। রাইসা কথা বলছে আর রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাইসা খাচ্ছে না।

” রাজের খুব করে ইচ্ছে করছে রাইসাকে খাইয়ে দিতে। রাইসা সারাদিন কিছুই খায়নি, সেই সকালে যে খেয়েছিল। রাজের খুব কান্না পাচ্ছে। হাতটা তোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে। মনে মনে বারবার আল্লাহকে বলছে’ হে আল্লাহ তুমি আমার ডান হাতটা ভালো করে দাও আমার আর কিছুই চাই না। আমার কলিজার টুকরাকে যেন নিজ হাতে খাইয়ে দিতে পারি। কিন্তু পারছে। শুধু পারছে চোখ দিয়ে পানি ঝরাতে।

”বাবাই তোমাকে কিন্তু বকা দিবো, তুমি কাঁদছো কেন? তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয় জানো না? এবার হা করো আর মেডিসিনটা খাও। এমন সময় মাগরিবের আযান হয়ে যায়। রাইসা মাগরিবের নামায শেষ করে খেয়ে পড়তে বসে। রাতে এশার নামায পড়ে শরীরটা খারাপ লাগলে, তার বাবাই এর পাশে শুয়ে পড়ে। রাজের কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, ‘বাবাই দেখো তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। কেউ আমাকে মারতে চাইবে না। জানো বাবাই এই পৃথিবীতে তুমি ছাড়া কেউ আপন না। সবাই ছেড়ে যায়। তুমি যেয়ো না বাবাই। জানো বাবাই আজ মম আমাকে চিনেনি। অথচ মম কতো ভালোবাসত। কত চকলেট দিতো মম ডাক শোনার জন্য। এসব বলতে বলতে রাইসা কখন যে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই।

” এদিকে তিনদির পর অধরা ম্যামের সাথে রোহান চৌধুরী আসে রাইসার সাথে কথা বলতে। রাইসাকে বলে যায় সামনে ফ্রাইডে রেকডিং হবে। ফ্রাইডে সকালে তোমাকে নিতে আসবো। ”

” আচ্ছা ঠিকআছে।”

” রোহান চৌধুরী বাসা থেকে বের হয়েই আকাশ -প্রাণে তাকিয়ে বললো’ এই ছোট্ট মেয়ের মাঝে যে সুরের যাদু দেখেছি, তা আমার জীবনে আর দু’টা দেখতে পারবো কি না সন্দেহ আছে।”

” রোহান চৌধুরী চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অধরা ও চলে যায়। সন্ধ্যায় রাজের কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে। রাইসা কণাকে ফোন করে আসতে বলে। কণা ফোন পেয়ে রাতেই আসে। কিছু মেডিসিন দিয়ে বলে, ‘ মামনি কোন চিন্তা করো না। ” সব ঠিক হয়ে যাবে। এবার আমার ফিসটা দিয়ে দাও। আমি চলে যায়। ”

” রাইসা কণাকে জড়িয়ে ধরে দু’গালে পাপ্পি দিয়ে দেয়। কনা রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলে, মামনি এবার আমাকে যেতে দাও। ”

” আচ্ছা ডাক্তার আন্টি। ”

” কণা চলে গেলে, রাইসা ঘুমিয়ে যায়। ”

সেদিন ভালো কাটলেও দু’দিন পর রাইসার মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় খারাপ স্বপ্ন দেখে। রাইসা তাড়াহুড়া করে তার বাবাই এর পাশে যায়। লাইট অন করতেই দেখে তার নাক দিয়ে ব্লাড বের হচ্ছে। রাইসা ব্লাড দেখে চমকে যায়। তার বড্ডবেশি ভয় হচ্ছে যদি তার বাবাইকে হারিয়ে ফেলে। তাড়াহুড়া করে নাকের রক্ত মুছে। রক্ত মুছার পরও আবার রক্ত আসছে। চোখ দুটি জ্বলন্ত কয়লার মতো লাল হয়ে গেছে। রাইসার বুক ফেটে কান্না আসছে। রাইসা বালিশের নিচে থেকে ফোন বের করে কণার কাছে ফোন দেয়, কিন্তু নাম্বারটা সুইচটপ দেখাচ্ছে। রাইসার তখনি মনে পড়ে যায়। বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকতে। তড়িগড়ি অযু করে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। সূরা ঠিকমতো পড়তে পারে না, কান্নার জন্য। নামাযের মধ্যেই কান্না আসতেছে। রাইসা দু’রাকাত নামায শেষ করে, মোনাজাতে দু’হাত তুলে ফুপিয়ে কান্না করে দেয়। আর বলতে লাগে হে পরওয়ার দেগার, তুমি আমার বাবাইকে কেড়ে নিয়ো না,আমি কাকে খাইয়ে দিবো কাকে বাবাই ডাকবো? কাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবো বলো তো? ও আল্লাহ দেখ আমার বুকের ভেতরটা কেমন করছে। তুমি আমার হায়াত নিয়ে আমার বাবাইকে ভালো করে দাও। ভালো করে দাও না। বাচ্চা কান্না করলে মা থাকতে পারে না। দৌড়ে এসে কুলে নেয়। আমার তো বাবা মা কেউ নেই। কে নিবে আমাকে? ও আল্লাহ দুনিয়ার মা তার সন্তানকে কান্না করতে দেখলে বুকে জড়িয়ে নেয়। তুমি তো দুনিয়ার মা -বাবার চেয়ে তোমার বান্দাকে কোটি কোটি গুণ বেশি ভালোবাসো। দেখ আমি কান্না করছি। তুমি না রহিম। তুমি না রহমান। রহম করো। আমাে বাবাকে সুস্থ করে দাও। আমিকে আর কত কাঁদাবে? আমার চোখের জল আর কত চাও? বলোতো আমি ছোট্ট মানুষ সবাই আমাকে মারতে চাই। কেউ আমার কথা শুনে না। ছোট্ট বলে কি তুমি আমার কথা শুনবে না? তুমি আমার বাবাইকে ভালো করে দাও আল্লাহ। ভালো করে দাও। রাইসা মোনাজাত শেষ করে। তার বাবাই এর কাছে গিয়ে দেখে নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আর কপালে হাত দিয়ে দেখলো সত্যিই জ্বর নেই। রাইসা মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো। আল্লাহ তার ডাক শুনছে ।

‘ এদিকে পরের দিন সকাল বেলা রাইসার গান রেকর্ড হয়। তিনদিন পর গান রিলিজ হওয়ার কথা।

””””” চলবে”””’