বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-০৪+০৫+০৬

0
324

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ০৪+০৫+০৬
_________________
গাড়ির সাথে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান আহিকে। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ তার। আহি তো আদ্রিয়ানের চোখ দেখেই ভয়ে প্রায় শেষ। কিন্তু এবার আর কোনো ভয় পাবে না সে।যথেষ্ট সাহস নিয়েই তাকিয়ে আছে আহি আদ্রিয়ানের দিকে।

|| কিছুক্ষন আগে ||

আহি ভেবেছিল আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে বের হতে হতে সে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে পালাবে কিন্তু তাঁর সেই ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে দিল আদ্রিয়ান। যেই না গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়াতে নিল আহি তক্ষুনি আদ্রিয়ান গিয়ে ধরে ফেললো আহিকে। আহিকে ছটফট করতে দেখে সোজা টেনে এনে গাড়ির সাথে চেপে ধরলো সে। বর্তমানে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আহি আদ্রিয়ানের দিকে সে ভাবেনি হুট করে এমন কিছু হবে। ভয় তো যথেষ্ট লাগছে তার কিন্তু সেটাকে আপাতত দমিয়ে রেখেছে সে। অন্যদিকে আদ্রিয়ান রাগী দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি আমার গাড়ির ভিতর কি করছো?’

‘ আসলে?’

‘ দেখো আমায় রাগাবে না আমি প্যাঁচানো করে কথা বলা একদম পছন্দ করি না কাল নিলয় ছিল বলে বেঁচে গেছো কিন্তু আজ?’

বলেই আশেপাশে তাকালো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে আহিও তাকালো, আশেপাশে দূর দূরান্তে কাউকে দেখা যাচ্ছে না এখান থেকে। প্রায় শহর থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে তাঁরা। এখানে আহিকে মেরে ফেলে চলে গেলেও কেউ খুঁজতে আসবে না কথাটা ভাবতেই ভয়ে ঢক গিললো আহি। কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সে,

‘ কি করবেন?’

‘ এই নির্জন জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে তুমি প্রশ্ন করছো কি করবো।’

এবার আর আহি নিজের ভয়কে দমিয়ে রাখতে পারলো না ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,

‘ প্লিজ আমায় মারবেন না বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে আপনার গাড়িতে উঠি নি,আপনি যাতে আমার মুখ না দেখেন সেই জন্যই উঠেছিলাম।’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান বেশ অবাক হয়ে হাল্কা উচ্চ স্বরে বললো,

‘ হোয়াট?’

আদ্রিয়ানের চেঁচানো শুনে হাল্কা কেঁপে উঠল আহি। তারপরও ভয়ার্ত চেহারা নিয়েই আমতা আমতা করে বললো সে,

‘ আপনি এমন কেন অল্পতেই এত রেগে যান। বললাম তো আমি ইচ্ছে করে উঠিনি আমার মুখ আপনাকে যাতে দেখতে না হয় সেই জন্য উঠেছিলাম কিন্তু এটা যে আপনারই গাড়ি হবে কে জানতো প্লিজ আমায় মারবেন না।’

আহির কথা শুনে আর ওর চেহারার ধরন দেখে আদ্রিয়ানেরও কেন যেন মনে হলো সত্যি কথা বলছে। আদ্রিয়ান আহির হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,

‘ তুমি সত্যি কথা বলছো?’

‘ হুম সত্যি বলছি কালও আমি আপনাকে লাভ লেটার দিতে চাই নি অন্য আরেকজনকে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু বদমাইশ বাচ্চাটা ভুল করে আপনাকে দিয়ে দিয়েছিল। এতে আমার কোনো দোষ নেই বিশ্বাস করুন।’

আহির এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ান তো আরো অবাক কিন্তু কেন যেন এবারের কথাটা সত্যি বলে মনে হলো না আদ্রিয়ানের। হয়তো তার কাছ থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যে কথা বলছে। আদ্রিয়ান কিছুটা শান্ত গলায় বললো,

‘ তুমি এগুলো সব সত্যি বলছো নাকি আমার কাছ থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যে বলছো?’

আদ্রিয়ানের শান্ত গলার কন্ঠ শুনে আহি আদ্রিয়ানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো,

‘ এই তো কি সুন্দর শান্ত গলায় কথা বললেন সবসময় এইভাবে কথা বলতে পারেন না সবসময় শুধু চেঁচান।’

আহির এই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বলা কথা শুনে আদ্রিয়ানের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে প্রায়। আবারো চেঁচিয়ে বললো সে,

‘ তোমায় যেটা বলেছি তার উওর দেও এইমাত্র যা বলছো সব সত্যি?’

‘ আবার রেগে যাচ্ছেন কেন?’

এবার আদ্রিয়ানের রাগ মাথায় উঠে গেছে আহির কাছাকাছি এগিয়ে এসে কড়া গলায় বললো সে,

‘ তোমাকে তো আম’

বলেও থেমে গেল আদ্রিয়ান প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তাঁর কিন্তু এই মেয়েটার ওপর ঠিকভাবে রাগটা দেখাতে পারছে না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান তার রাগকে কন্ট্রোল করে বলে উঠল,

‘ তুমি থাকো এখানে আমি গেলাম।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়ে আহি আদ্রিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ গেলাম মানে আমায় এইভাবে নির্জন জায়গায় একলা ফেলে চলে যাচ্ছেন?’

‘ হুম যাচ্ছি কারন তোমার মতো মেয়ের সাথে আমি কখনোই একসাথে থাকতে পারবো না।’

‘ আপনাকে আমার সাথে থাকতেও হবে না কিন্তু এখন আপাতত আমায় একটু নিয়ে চলুন।’

‘ না নিয়ে গেলে কি করবে তুমি?’

‘ কি করবো?’

‘ হুম কি করবে?’

‘ কি করবো?’

বলেই আশেপাশে তাকিয়ে হাত জড়ো করে আদ্রিয়ানের দিকে ফিরে মিনতির স্বরে বললো,

‘ প্লিজ প্লিজ আমায় নিয়ে চলুন আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কখনো আপনার সামনে আসবো না।’

হুট করে আহির এমন কান্ডে চমকে উঠলো আদ্রিয়ান পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,

‘ ঠিক তো।’

‘ হুম একশো পারসেন্ট ঠিক এবার অন্তত নিয়ে চলুন আমায়।’

উওরে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো আদ্রিয়ান।

‘ ঠিক আছে।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি খুশি হয়ে বললো,

‘ থ্যাংকু থ্যাংকু।’

বলেই সামনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো সে। আদ্রিয়ানও আর বেশি কিছু না ভেবে চললো গাড়ির কাছে। সময়টা বিকেল ছাড়িয়ে গেছে এই মুহূর্তে এইরকম নির্জন জায়গায় থাকাটা ঠিক নয়। আদ্রিয়ান বেশ খানিকটা বিরক্ত নিয়ে বসলো গাড়িতে তবে সেটা প্রকাশ করলো না। চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে চললো সামনে। হঠাৎই কিছুদূর এগোতেই আহি বলে উঠল,

‘ বলছিলাম কি আমার চিঠিটা কি আপনি পড়েছিলেন নাকি ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে…?’

আহির পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই জোরে ব্রেক কষলো আদ্রিয়ান হঠাৎ করে এমনটা হওয়াতে আহি সোজা গিয়ে সিটকে টাক খেলো গাড়ির সামনে থাকা কাঁচের গ্লাসটার সাথে কারন সে সিটবেল পড়তে ভুলে গিয়েছিল। আহি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে বসলো,

‘ ও মা গো আমার মাথাটা ফেটে গেলরে এইভাবে কেউ গাড়ি থামায়?’

আহির কথার শুনে আহির দিকে না তাকিয়েই স্ট্রেট কন্ঠে বললো,

‘ গাড়িতে বসলে সিটবেল লাগাতে হয় জানো না সেটা।’

এতটুকু বলে নিজের গায়ে থাকা সিটবেলটা খুলে বেরিয়ে গেল আদ্রিয়ান। কারন সে ইচ্ছে করে গাড়ি থামায় নি হুট করে গাড়ির নিচে কিছু একটা বাজার ফলে ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে গাড়ি থামিয়ে ছিল সে।

অন্যদিকে আদ্রিয়ানকে বের হতে দেখে আহিও কপাল ডলতে ডলতে বেরিয়ে পড়লো গাড়ি থেকে।’

বিরক্তি আর চোখে মুখে রাগের ছাপ নিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান কারন তার গাড়ির টায়ার পানচার হয়ে গেছে। প্রচন্ড রাগ নিয়ে গাড়িটাকে একটা লাথি মেরে বললো আদ্রিয়ান,

‘ ড্যামেট।’

আদ্রিয়ানের রাগ দেখেও কিছুটা ভিতু কন্ঠ নিয়ে বললো আহি,

‘ আমরা এবার কি করে ফিরবো?’

এমন একটা মুহূর্তে আহির মুখে এমন কথা শুনে আদ্রিয়ান কড়া দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমার মাথায় করে।’

‘ আপনি এমন কেন বলুন তো একটু মিষ্টি করেও তো কথা বলতে পারেন।’

‘ তোমার কাছে এখন মিষ্টি করে কথা বলার সময় বলে মনে হচ্ছে?’

‘ দেখুন এইভাবে বলবেন না দেখুন তো জায়গাটা কত সুন্দর?’

বলেই সামনে থাকা আকাশের দিকে তাকালো আহি। দু’দিকে খোলা মাঠের মাঝখানে একটা সমতল গ্রামীন রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান আর আহি। সূর্য্যিমামা তখন বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে কেবল,ধীরে ধীরে চারপাশের পরিবেশ অন্ধকার ভিড়দের মাঝে হারিয়ে যেতে শুরু করলো সাথে সূর্য্যিমামাও লালচে বর্ন হতে শুরু হতে লাগলো। চারপাশে থাকা গাছ বেয়ে বয়ে আসছে ঠান্ডা বাতাস। চোখ বন্ধ করে জোরে এক নিশ্বাস ফেললো আহি।’

আহির এমন কাজে বিরক্তির একদম শেষ পর্যায়ে চলে গেছে আদ্রিয়ান। হঠাৎই আহির পায়ের কাছে কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখে উঠালো আদ্রিয়ান। এটার উপরেও ‘লাভ লেটার’ লেখা দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল তাঁর। তাঁর মানে কিছুক্ষন আগে আহি যা বলেছিল তা মিথ্যে ছিল। আদ্রিয়ান রেগে বলে উঠল,

‘ এটা কি?’

হুট করে আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি পিছন ফিরে তাকালো আদ্রিয়ানের হাতে নিজের লেখা কালকের লাভ লেটারটা দেখে হকচকিয়ে উঠল সে। ওটা ওখানে গেল কি করে? তাহলে কি হাত থেকে পড়েছিল নাকি।’ ওহ নো এখন কি করি?’ আহি শুকনো ঢোক গিলে বললো,

‘ ওটা আমায় দিয়ে দিন প্লিজ?’

‘ তাহলে এই কারনেই তুমি আমার গাড়িতে উঠেছিলে?’

‘ আপনি আমায় ভুল বুঝছেন।’

বলেই আদ্রিয়ানের কাছে এগিয়ে গিয়ে চিঠিটা নিতে নিলো আহি। আহিকে আসতে দেখে আদ্রিয়ান তার হাত উপরে উঁচকিয়ে বললো,

‘ এইবার আমার কাছে সব ক্লিলিয়ার।’

‘ বিশ্বাস করুন ওটা আপনার জন্য নয় অন্য কারো জন্য কিন্তু কেন যে ওটা বারবার আপনার কাছে চলে যায় বুঝি না।’

‘ আমাকে কি তোমার বোকা মনে হয়?’

উওরে কি বলবে বুঝতে পারছে না আহি। সে সত্যি বুঝে উঠতে পারছে না বার বার কেন এই ভুল বুঝাবুঝি?’

‘ কি হলো এখন চুপ কেন?’ তোমার সাহস দেখে আমি জাস্ট অবাক হয়ে যাচ্ছি, কাল তোমায় কি বলেছি আর আজ তুমি?’

‘ আপনি বুঝতে কেন পারছেন না?’

আহি আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ানের ফোনটা বেজে উঠল উপরে নিলয়ের নাম দেখে আদ্রিয়ান কল রিসিভ না করে আহির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললো,

‘ Stop talking,stupid girl?’

বলেই কলটা তুলে অন্য সাইডে চলে গেল আদ্রিয়ান। এদিকে আদ্রিয়ানের কাজে এবার রাগ হচ্ছে আহির। বার বার এই লোকটা তাকে রাগ দেখিয়ে দমিয়ে রাখে। কালও বলতে চেয়েছিল কিন্তু ইস্টুপিট বলে দমিয়ে রেখে ছিল। কি ভেবেছি কি লোকটা এই আহি ওনার প্রেমে পাগল। মানছি দেখতে সুন্দর কিন্তু তাই বলে সব মেয়েরা যে ওনার প্রেমে পাগল হয়ে যাবে এমনটা তো নয় আর আজকেও কি আমার চিঠিটা নিয়ে চলে যাবে না না এমনটা হতে দেওয়া যাবে না কোনো মতে। আজই এই ভুল বুঝাবুঝি শেষ করতে হবে।

ভেবেই একবুক সাহস নিয়ে এগিয়ে গেল আহি আদ্রিয়ানের দিকে। অন্যদিকে আদ্রিয়ান কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো নিলয়কে,

‘ I want a car in half an hour, Nilay?’

‘ ওকে দেখছি আমি,তুই চিন্তা করিস না।’

এতটুকু বলে ফোনটা কাটলো নিলয়। তারপর চটজলদি গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লো সে।’

____

‘ আর ইউ ক্রেজি?এটা কি করলে তুমি?’

প্রচন্ড ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে কথাটা বললো আদ্রিয়ান আহিকে। কারন কিছুক্ষন আগে রাস্তার পাশে থাকা ধুুলো এনে সব আদ্রিয়ানের গায়ে মেখে দিলো আহি। আদ্রিয়ানের কথায় তেমন পাত্তা না দিয়ে বললো আহি,

‘ যা করেছি বেশ করেছি। নিজেকে কি ভাবেন বলুন তো? মানছি আপনি দেখতে সুন্দর তাই বলে সব মেয়েরা আপনার জন্য পাগল নাকি,প্রত্যেক বার শুধু চিঠির উপরের লেখাটা দেখে রেগে যায় ভিতরের লেখাটা দেখতে পারেন না। কতবার বলবো ওই চিঠিটা আপনার জন্য নয় অন্যকারো জন্য আরে বিশ্বাস না হলে চিঠিটা পড়ে দেখুন প্রথমেই লেখা প্রিয় ‘নীরব ভাইয়া। আর আপনার নাম কি নীরব নাকি প্রত্যেকবার শুধু রাগ দেখিয়ে দমিয়ে রাখে। হনুমান কোথাকার?’

আহির কথাগুলো চুপ করে শুনলো আদ্রিয়ান যেন ঝড় আসার পূর্বাভাস। শেষের কথাটা শুনে তো প্রচন্ড রেগে গিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো আদ্রিয়ান,

‘ তোমার এতো বড় সাহস, এক তো না জিজ্ঞেস করে গাড়িতে উঠেছো তারপরও তোমায় তে আমি?’

বলেই এগিয়ে গেল আদ্রিয়ান আহির দিকে। আদ্রিয়ানকে এগোতে দেখে আহিও বেশি কিছু না ভেবে দৌড় দিল উল্টো দিকে কারন আর যাই হোক সে বুঝতে পেরেছে আদ্রিয়ান ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে।

‘ রাগে রাগুক বার বার শুধু রাগ দেখিয়ে দমিয়ে রাখে আমায় এই বার আমিও দেখিয়ে দিয়েছি আহিকে রাগালে কি হয়?’ যতসব ফাউল লোকজন। সুন্দর বলে বেশি ভাব নেয় হুহ?’

এসব ভাবতে ভাবতে দৌড়াতে লাগলো আহি।আহিকে দৌড়াতে দেখে আদ্রিয়ানও রেগে এগিয়ে গেল আহির দিকে। তারপর শুরু হলো ছোটাছুটি?’

রাস্তার যত ধুলো আছে সব নিয়ে মারামারি শুরু করে দিলো আদ্রিয়ান আর আহি। আর ওদের এই ছোটাছুটির মাঝেই সূর্য্যিমামা ডুবে গিয়ে বানিয়ে দিয়ে গেল দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা । হয়তো কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সন্ধ্যা পেরিয়ে ঘন কালো অন্ধকারে ঢেকে ঘনিয়ে আসবে রাত।’….
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ০৫
_________________

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিলয়, আহি আর আদ্রিয়ানের দিকে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এরা দুজন এইসময় একসাথে ছিল। তারওপর আবার ধুলোবালি মেখে নিজেদের কি অবস্থা করেছে? নিলয় বুঝতে পেরেছে বড়সড় না হলেও ছোট খাটো একটা ঝড় গেছে এদের মাঝ থেকে। নিলয় অবাক হয়ে আদ্রিয়ান আর আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এগুলো কি করেছিস তোরা? আর তুমি এখানে কি করছো,আহি?’

উওরে এখন আহি কি বলবে বুঝতে পারছে না। আর আদ্রিয়ান তো রেগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনকে এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল নিলয়,

‘ কি হলো কথা বলছো না কেন?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠ নিয়েই বলে উঠল,

‘ ও আর কি বলবে ইস্টুপিট মেয়ে কোথাকার?’

‘ এখানে ঠিক কি হয়েছিল এটা আমায় বলবি আগে?’

‘ পরে বলবো আগে চল এখান থেকে এই বদমাইশ মেয়েটাকে একদম সহ্য হচ্ছে না আমার।’

বলেই নিজের মাথা ঝাড়তে ঝাড়তে হন হন করে চলে গেল আদ্রিয়ান। রাগে গা মাথা সব জ্বলে যাচ্ছে তাঁর। আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে বসে পড়লো গাড়িতে। অন্যদিকে নিলয় বিস্ময় নিয়ে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি এখানে কি করছো আর তোমাদের দুজনের এমন অবস্থা কি করে হলো?’

উওরে আহি মাথা নিচু করে পর পর তাদের সাথে হয়ে যাওয়া সব ঘটনার কথা খুলে বললো নিলয়কে। নিলয় তো সব শুনে চরম অবাক, অবাক হয়েই বললো সে,

‘ তাঁর মানে কাল তুমি আদ্রিয়ানকে লাভ লেটার দিতে চাও নি?’

উওরে ‘না’ বোধক মাথা নাড়ালো আহি। আহির মাথা নাড়ানো দেখে হেঁসে উঠলো নিলয়। নিলয়কে হাসতে দেখে বলে উঠল আহি,

‘ আপনি হাসছেন ভাইয়া আর আমার রাগ হচ্ছে,কিছুতেই কিছু বলতে দিচ্ছিল না তাই তো ওইভাবে চুপ করিয়ে সব বলা লাগলো।’

আহির এবারের কথা শুনে তো নিলয় আরো উচ্চ স্বরে হাসতে হাসতে বলে উঠল,

‘ তাই বলে ওইভাবে ধুলো দিয়ে..

নিলয়ের কথা শুনে দাঁত কেলানি হাসি বললো আহি,

‘ ওই একটু আর কি।’

‘ এখানে একটু।’

উওরে আহিও হেঁসে উঠলো।’

অন্যদিকে গাড়ির ভিতর বসে আহি আর নিলয়কে হাসাহাসি করতে দেখে রাগে আরো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান কড়া নজরে ওদের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠল,

‘ নিলয় আমরা কি এখানে থাকতে এসেছি?’ তবে হ্যাঁ তোর যদি থাকার ইচ্ছে থাকে থাকলে তুই থাক আমি গেলাম?’

এতক্ষণ পর নিলয়ের মনে পড়লো আদ্রিয়ানের কথা। নিজের হাসি থামিয়ে বললো সে,

‘ ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম চলো আহি?’

নিলয়ের কথা শুনে আহি কিছুটা বিব্রত ফিল করে বললো,

‘ আপনাদের সাথে যাবো?’

‘ হুম এখানে কোনো গাড়ি পাবে না যে তোমায় নিয়ে যাবে।’

‘ কিন্তু উনি?’

‘ আদ্রিয়ান কিছু বলবে না চলো আর এই নির্জন জায়গায় তোমায় একা ফেলে যাচ্ছি নাকি আমরা?’

নিলয়ের কথা শুনে খুশি হলো আহি মুচকি হেঁসে বললো সে,

‘ থ্যাংক ইউ।’

‘ মোস্ট ওয়েলকাম।’

উওরে মুুচকি হেঁসে গাড়িতে বসলো আহি। আর নিলয় তার সাথে আনা একজন মেকানিককে বললো,

‘ রামু চাচা,ওই গাড়িটা ঠিক করে অফিসে নিয়ে যেও?’

নিলয়ের কথা শুনে মেকানিকও বললো,

‘ ঠিক আছে।’

উওরে নিলয় আর কিছু না বলে চলে গেল তাঁর আনা গাড়ি করে। সামনের সিট দুটোতে একটায় আহি আর একটায় নিলয় বসেছে আর পিছনের সিটে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের রাগ হচ্ছে আহির ওপর কিন্তু কিছু করার নেই আর যাই হোক এইভাবে তো আর একটা মেয়েকে একা ফেলে দিয়ে যাওয়া যায় না। এতটুকু ভেবে নিজের জামাকাপড়ের দিকে তাকালো আদ্রিয়ান। কি অবস্থা হয়েছে তাঁর ভাবতে রাগ হচ্ছে আদ্রিয়ানের।’

অন্যদিকে আহি আর নিলয় হাসাহাসি করতে করতে চললো নিজেদের গন্তব্যে। আদ্রিয়ানের বিরক্ত লাগছে আহি আর নিলয়ের কাজে কিন্তু তারপরও আপাতত কিছু বললো না সে।’

____

বেশ খানিকটা দূর এগোতেই হঠাৎই আহির চোখ পড়লো একটা বাসস্ট্যান্ডের দিকে। আহি সেটাকে দেখেই বলে উঠল,

‘ থামুন, থামুন, থামুন।

আহির তিন বার থামুন থামুন শুনে নিলয়ও চটজলদি ব্রেক কষলো গাড়িতে। তারপর আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি হলো?’

‘ আমি এখানেই নামবো।’

‘ এখানে?’

‘ হুম।’

বলেই নিজের গায়ে থাকা সিট বেলটা খুলে বেরিয়ে পড়লো আহি। তারপর নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,

‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া।’

উওরে নিলয়ও বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,

‘ তুমি এখান থেকে একা একা যেতে পারবে তো?’

‘ জ্বী ভাইয়া টেনশন নিবেন না।’

উওরে নিলয় আর কিছু বললো না। আহি ভাবলো একবার আদ্রিয়ানকে কিছু বলবে কিন্তু আহি আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান রাগ নিয়ে অন্যদিক মুখ করে বললো,

‘ নিলয় ওকে বলে দে,এই সেকেন্ড টাইম বলছি নেক্সট টাইম যেন ও আমার আশেপাশেও না আসে।’

উওরে আহিও একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

‘ হুম ঠিক আছে ঠিক আছে কেই বা যেচে যাচ্ছে আপনার সামনে,আপনার কনফিউশান দূর হয়েছে এতেই আমার চলবে ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।’
‘ লাল চোখওয়ালা হনুমান কোথাকার?’ (নিচু স্বরে)

কিন্তু আহি আস্তে বললেই আদ্রিয়ান আহির কথা শুনতে পেয়ে বললো,

‘ কি বললে তুমি আমায়?’

‘ কিচ্ছু না?’

বলেই একটা এটিটিউড মার্কা ভাব নিয়ে এগিয়ে গেল আহি। আহির এই ভাবটা জাস্ট নিতে পারলো না আদ্রিয়ান। গাড়ি থেকে নামতে নিয়েও আবার নামলো না,কারন সে বুঝতে পেরেছে এই মেয়েটা তার জন্য জাস্ট টাইম ওয়েস্ট’। আহির কথা শুনে হেঁসে ফেললো নিলয়,নিলয়কে হাসতে দেখে রাগ হলো আদ্রিয়ানের কড়া কন্ঠ নিয়ে বললো সে,

‘ তুই হাসছিস কেন? আর বসে আছিস কেন চল এখান থেকে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠল নিলয় তারপর হাসতে হাসতে বললো সে,

‘ হুম।’

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললো নিলয় আদ্রিয়ান তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।’

____

বাস স্ট্যান্ডে বাস আসতেই বাসে উঠে পড়লো আহি। তারপর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সবার পিছনের আগের সিটের জানালার পাশে বসলো সে। আশেপাশের লোকজন তার দিকে প্রায় হা হয়ে তাকিয়ে আছে অবশ্য তাকাবেই বা না কেন নিজের যে অবস্থা হয়েছে তাতে নিশ্চয়ই সবাই তাকে পাগল ভাবছে। আপাতত সেদিকে লক্ষ না দিয়ে চুপচাপ জানালার পাশে মুখ লুকিয়ে মাথাটা নুড়ে দিলো আহি। সারাদিনে কিছুই খাওয়া হয় নি তেমন সেই সকালে ক্যান্টিনে বসে হাল্কা পাতলা নাস্তা করেছিল সে। এখন প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তাঁর বাসায় গিয়েই আগে খেতে হবে তাকে। না জানি মা কতটা চিন্তা করছে ফোনও করতে পারছে না কারন তার ফোনে চার্জ নেই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে ব্যাগের মধ্যে। জোরে এক নিশ্বাস ফেললো আহি। হঠাৎই নীরবের কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল আহির। সে বুঝতে পারছে না বার বার তাঁর সাথেই এমন কেন হয়, সে হয়তো এ যুগে নীরবকে প্রপোজ করতে পারবে না। হঠাৎই আহির ভাবনার মাঝখানে একটা ছেলে এসে বললো,

‘ আমি কি এখানে বসতে পারি,আপু?’

হুট করে কোনো ছেলের কন্ঠ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠল আহি সামনে তাকাতেই একটা ছেলেকে দেখে বেশি কিছু না ভেবে বললো সে,

‘ হুম অবশ্যই।’

উওরে ছেলেটিও মুচকি হেঁসে নিজের কাঁধ থেকে ব্যাগটা বের করে বললো আহিকে,

‘ থ্যাংক ইউ আপু।’

উওরে হাল্কা হাসলো আহি। কেমন যেন এত বড় ছেলের মুখে আপু নামটা শুনতেই আনিজি ফিল হচ্ছে তাঁর। আড় চোখে তাকালো আহি ছেলেটির দিকে। ধবধবে ফর্সা শরীরের,গোলগাল ফেস সমৃদ্ধ ইনোসেন্ট লুকিং এর একটা ছেলে,চোখ দুটো দেখতে একদমই বাচ্চাদের মতো। কেন যেন ছেলেটা বড় হলেও আহির কাছে বাচ্চা বাচ্চা মনে হচ্ছে। ভেবেই আনমনে হেঁসে উঠল আহি। আহিকে হাসতে দেখে ওর দিকে না তাকিয়েই বলে উঠল ছেলেটি,

‘ আপনি হাসছেন কেন আপু?’

হুট করে ছেলেটির এমন কথা শুনে চমকে উঠলো আহি। নিজের মুখের হাসি থামিয়ে বললো সে,

‘ না তেমন কিছু নয়।’

আহির এবারের কথা শুনে সামনের ছেলেটি আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনার কি আমায় দেখে হাসি পাচ্ছে, আপু?’

‘ না না তা হবে কেন আসলে একটা মজার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল তাই হেঁসে ফেলেছি সরি?’

‘ ওহ তাহলে ঠিক আছে ইট’স ওকে আপু।’

বলেই মুচকি হাসলো ছেলেটি। তারপর চুপচাপ বসে রইলো সে তার সিটে।’

কেন যেন ছেলেটির কথা শুনে ভিতরে ভিতরে আনিজি ফিল হতে লাগলল আহির। হঠাৎই আহি নিজেই ছেলেটির দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হাই, আমি আহি।’

আহির কাজে কিছুটা অবাক হয় শুভ। তবে বেশি কিছু না ভেবে সেও মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হ্যালো আপু আমি শুভ।’

‘ আচ্ছা আপনি আমায় আপু বলছেন কেন?’

‘ আসলে এটা আমার অভ্যাস কোনো মেয়েকে দেখলেই আমি আপু বলে ডাকি।’

‘ ওহ কিন্তু আমায় আপু বলেছো বলেছো অন্য কোনো মেয়েকে আবার বলো না,তাহলে কিন্তু..

আহির কথা শুনে হেঁসে ফেললো শুভ তারপর বললো,

‘ সত্যি বলতে কি এর আগে একবার একটা মেয়েকে আপু বলেছিলাম ওহ বাবা সেই মেয়ের কি রাগ বলে আমায় কোন এংগেল থেকে আপনার আপু মনে হয়,আমাকে কি আপুর মতো দেখতে আরো কত কি? আসলে ওই আপুটা আমার থেকে বড় ছিল তাই বলেছিলাম কিন্তু তোমায় দেখে মনে হচ্ছে না তুমি আমার থেকে বড় তারপরও কেন যেন তোমায় আপু বলতে ভালো লাগলো।’

উওরে হাল্কা হেঁসে কিছুটা ভাব নিয়ে বললো আহি,

‘ আমার মতো সবাই থোড়াই ভালো কিনা?’

আহি কথা শুনে উচ্চ স্বরে হেঁসে ফেললো শুভ। এরপর শুরু হলো এটা ওটা নিয়ে দুজনের মধ্যে আড্ডা। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় আটটা পেরিয়ে গেছে। রাতের অন্ধকার আলো পেরিয়েই এগিয়ে চলছিল আহি আর শুভ। পুরো বাসের সময়টা হাসাহাসি করতে করতেই কেটে গেল আহি আর শুভর।

______

মাথা নিচু দাঁড়িয়ে আছে আহি তার মায়ের সামনে। বুঝতে পারছে না এখন কি বলবে সে। আহির মা আহির দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ এত দেরি হলো কেন আর কি অবস্থা করেছিস নিজের এসব কি করে হলো?’

‘ হয়েছে কি মা?’

‘ হুম কি হয়েছে বল,তোকে কতবার ফোন করেছিস দেখেছিস সেটা?’

‘ আসলে মা এক বন্ধুর কাছ থেকে কিছু নোট আনতে গিয়েছিলাম তাই একটু দেরি হয়ে গেছে আর ফোনটায় চার্জ নেই বন্ধ হয়ে গেছে এই জন্য তোমায় ফোন করে জানাতে পারি নি সরি।’

‘ আর এই যে নিজের চেহারার অবস্থা করেছিস এটা কি করে হলো?’

এবাবের কথা শুনে আহি তার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,

‘ আসার সময় ঠ্যাং উল্টে পড়ে গিয়ে ছিলাম রাস্তায়?

‘ তা তো পড়বিই হাঁটার সময় তো চোখ পিছনে নিয়ে হাঁটিস, একটা কানা মেয়ে হয়েছে আমার ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারে না।’

‘ মা এখন তবে আমি আমার রুমে যাই প্রচন্ড খিসে পেয়েছে?’

‘ ঠিক আছে যা।

মায়ের কথা শুনে খুশি হয়ে বললো আহি,

‘ থ্যাংক ইউ লাভ ইউ মা।’

বলেই আহি আর কিছু না ভেবে দৌড়ে চললো নিজের রুমের দিকে। সাওয়ার নিতে হবে তাঁকে,ধুলোতে তাঁর শরীর গিজগিজ করছে পুরো।’…
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ০৬
_________________

টপ টপ শব্দে পানি পড়ছে ঝর্ণার,আর সেই পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ান। চোখে মুখে রাগ বিদ্যমান তার। আদ্রিয়ানের বিশ্বাসই হচ্ছে না একটা মেয়ের জন্য তাকে এই সময়ে গোসল করতে হচ্ছে। আহির ওপর ভিষণ ভাবে রেগে আছে আদ্রিয়ান। নেক্সট টাইম দেখা হলে থাপ্পড়ই না দিয়ে বসে সে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জোরে নিশ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান।’

টানা একঘন্টা সাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে বের হলো আদ্রিয়ান। তারপর ব্লাক রঙের পাজামা সাথে সাদা রঙের ফুলহাতার টিশার্ট পড়ে নিজের চুলগুলো মুছে চার সেকেন্ড আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের রুম থেকে বের হলো আদ্রিয়ান। নিচে নামতেই সোফার ওপর নিলয়কে বসে থাকতে দেখে বললো আদ্রিয়ান,

‘ তুই এখনো যাস নি?’

‘ না তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম,অফিসের ব্যাপারে কিছু কথা ছিল?’

‘ ওহ হুম বল।’

এতটুকু বলে আদ্রিয়ান গিয়ে বসলো নিলয়ের সোজাসুজি সোফাটায়। তারপর নিলয় কিছু পেপার দেখিয়ে কথা বলতে লাগলো আদ্রিয়ানের সাথে,আর আদ্রিয়ান চুপচাপ মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগলো সব। হঠাৎই নিলয় বলে উঠল,

‘ তাহলে কালই নিউজ পেপারে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনটা দিয়ে দেই, আদ্রিয়ান?’

উওরে আদ্রিয়ানও কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ হুম।’

‘ ওকে তাহলে আমি যাচ্ছি কাল অফিসে কথা হবে।’

‘ হুম।’

উওরে নিলয় আর কিছু না বলে চলে গেল তার গন্তব্যে। আর আদ্রিয়ান সেও কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে টেলিফোনটা হাতে নিয়ে খাবার অর্ডার করে উঠে দাঁড়ালো হঠাৎই তার চোখ গেল নিলয়ের রাখা সেই গোলাপি খামের চিঠিটার দিকে। তবে আপাতত বেশি কিছু না ভেবে চলে গেল সে উপরে। এই মুহূর্তে আহির কথা মাথায় আসতেই রাগে গা জ্বলছে তার।’

_______

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হলো আহি। এমন সময় উপরের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল নীরব আহিকে দেখেই বললো সে,

‘ ভার্সিটি যাচ্ছিস?’

আচমকা নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো আহি। পিছন ফিরে নীরবে দেখেই এক দফা ক্রাশ খেলো সে। আকাশী-সাদা মিশ্রিত শার্ট পড়েছে নীরব, সাথে সাদা রঙের জিন্স, হাতে ব্লাক ওয়াচ, চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে সাজানো সাথে গোল ফ্রেমের চশমা এক কথায় অসাধারণ লাগছে নীরবকে। আহিকে নিজের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বললো নীরব,

‘ কোথায় হারিয়ে গেলি তুই?’

নীরবের কাজে হকচকিয়ে উঠল আহি,তক্ষৎনাত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,

‘ হ্যাঁ না মানে হুম ভার্সিটি যাচ্ছি আর তুমি ভাইয়া?’

‘ হুম আমিও যাবো তবে এখন নয় আমার একটা কাজ আছে সেটা সেরে তারপর?’

নীরবের কথা শুনে কিছুটা মন খারাপ নিয়ে বললো আহি,

‘ ওহ!’

‘ হুম তাড়াতাড়ি চল তা না হলে লেট হয়ে যাবি তো?’

‘ হুম।’

বলেই চলে গেল আহি।

‘ ইস চিঠিটা ড্রয়ারে রেখে এসেছি তা না হলে এখন দেওয়া যেত না ধুর ভালো লাগে না।’

বলতে বলতে এগিয়ে গেল আহি। আর নীবর কিছুক্ষন আহির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আহির যাওয়ার উল্টো পথ দিয়ে হাঁটা শুরু করলো।’

____

বাস স্টপের সামনে সাদা সেলোয়ার-কামিজ,খোলা চুলে সাথে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। নতুন শহর,নতুন জায়গা তারপরও বিন্দুমাত্র ভয় কাজ করছে না তার ভিতর। চুপচাপ বুকে একটা বই লুকিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সে বাসের জন্য। হঠাৎই একটা বাস আসায় আশেপাশের সবাইকে আগে উঠতে দিয়ে তারপর উঠলো অথৈ। কারন ভিড়ের মধ্যে তারাহুড়ো করে বাসে উঠতে একদম পছন্দ করে না অথৈ লাগলে দাঁড়িয়ে যাবে তারপরও সবার মাঝ দিয়ে বাসে উঠবে না সে। নিজের চশমাটা ঠিক করে ধীরে সুস্থে বাসে উঠলো অথৈ। সে উঠতেই বাস চালক বাস স্টার্ট দিয়ে চলতে শুরু করলো। হঠাৎই ভিতরে ঢুকতে গিয়েই কিছু একটা দেখে বাহিরে তাকালো অথৈই। বাহিরে তাকাতেই দেখলো সে একটা ছেলে বাসের পিছনে দৌড়াচ্ছে আর বাস থামাতে বলছে।’

.

এদিকে নিজের কাজ শেষ করে বাস স্টপ পর্যন্ত আসতে একটু লেট হয় নীরবের। তাই বাস ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে নীরব। সে দেখেছে একটা মেয়ে তাকে দৌড়াতে দেখেছে আর এটাও আন্দাজ করতে পারছে যে সে যত জোরে চেঁচিয়েছে সেটাও মেয়েটা শুনেছে। নীরব ভেবেছিল হয়তো মেয়েটা তাকে সেই শারুক খান আর দিপাকা পাদুকারের চেন্না এক্সপ্রেসের মুভিটার মতো হাত বারিয়ে সাহায্য করবে কিন্তু তার সেই ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে মেয়েটা একপলক তার দিকে তাকিয়ে আবার ভিতরে ঢুকে গেল। সাথে নীরবের আশার আলো নিভে গেল হয়তো আজ তার ভার্সিটি যেতে সত্যি সত্যি লেট হবে খুব। ভেবেই বাসের পিছনে আর না দৌড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে আর তাকিয়ে রইলো তাকে নিরাশ করে চলে যাওয়া বাসের দিকে। হঠাৎই নীরবকে অবাক করে দিয়ে বাসটা দাঁড়িয়ে পড়লো তাঁর থেকে কিছুটা দূরে। বাসটাকে থামতে দেখে নীরবের আর বুঝতে বাকি রইলো না ওই মেয়েটাই গাড়িটা থামিয়েছে। নীরব প্রচন্ড খুশি হয়ে দৌড়ে গিয়ে উঠলো বাসে। যাক মেয়েটা মুভির মতো না হলেও তার স্ট্যাইলে হেল্প করলো।’

নীরব বাসে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো ঠিক অথৈর পিছনে। কারন সব সিট ভর্তি করে মানুষ বসা। অথৈ নীরব দুজন দুজনের দিকে একপলক তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দুজন দু’দিক ফিরে।’

____

তুমুল বেগে এক্সাইটেড হয়ে করিডোর থেকে দৌড়ে নিজের ক্লাসের দিকে যেতে গিয়ে আচমকা একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় রিনি। ঘটনাক্রমে সামনের ছেলেটি কিছু করার বা বোঝার আগেই সবটা হয়ে যায়। হুট করে এমন কিছু হওয়ার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিল না রিনি। প্রচন্ড ব্যাথা আর রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো সে,

‘ চোখে দেখেন না নাকি এইভাবে কেউ হুট করে সামনে চলে আসে নাকি?’

সামনের মেয়েটির কথা শুনে শুভ বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ আশ্চর্য! আমি কি করলাম? আপনি নিজেই তো দৌড়ে এসে পড়লেন আমার সামনে?’

ছেলেটির কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে বললো রিনি,

‘ আপনি কি করলেন মানে?’ আপনার জন্যই তো পড়ে গেলাম আমি?’

‘ আমার জন্য পড়েন নি আপু?’

শুভর এবারের কথা শুনে রাগে আরো আগুণ রিনি,প্রচন্ড রেগে শুভর কলার ধরে বললো সে,

‘ ওই মিয়া আমায় কোন এনগেল থেকে আপনার আপু মনে হয় হুহ?’

হুট করে রিনির এমন কান্ডে এক প্রকার চমকে আর ঘাবড়ে গেল শুভ। কিছুটা ঘাবড়ানো মুখ নিয়ে বললো সে,

‘ আরে আরে আপু এটা কি করছেন?’

‘ আবার আপু,তোকে তো আমি এমনিতেই পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাইছি তারপর আবার আপু?’

বলেই আরো শক্ত করে কলার চেপে ধরলো রিনি শুভর। রিনির কাজে তো চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম শুভর। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হয় আহি, রিনিকে দেখে আর ওর কান্ড দেখে এগিয়ে এসে বললো আহি,

‘ আরে আরে এটা তুই কি করছিস রিনি?’

এতটুকু বলে তাকালো আহি সামনের ছেলেটির দিকে, ছেলেটির মুখ দেখেই বললো আহি,

‘ আরে শুভ তুমি এখানে?’

আহির কথা শুনে রিনি অবাক হয়ে বললো,

‘ তুই এই আপু পাগলকে চিনিস আহি?’

‘ কি আপু পাগল মানে?’

আহির কথা শুনে রিনি কিছু বলার আগেই শুভ বলে উঠল,

‘ দেখ না আপু হুট করেই কেমন ব্যবহার করছে?’ নিজেই এসে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল আর এখন আমার সাথেই বাজে ব্যবহার করছে এই আপু।’

শুভর কথা শুনে শুভর কলার ছেড়ে দিয়ে বললো রিনি,

‘ ওকে আপু বলতে বারন কর আহি তা না হলে আমি যে কি করবো তার ঠিক নেই?’

এতক্ষণ পর আহি বুঝতে পারলো রিনি এত ভয়ংকর ভাবে রেগে কেন গেল। আহি রিনিকে টেনে এক সাইডে এনে বললো,

‘ শান্ত হ এটা ভার্সিটি সবাই কি ভাবছে বলতো?’

‘ তুই আগে ওই পাগলটাকে আমার সামনে থেকে সরা?’

‘ আচ্ছা দেখছি আমি তুই এখানেই দাঁড়া।’

উওরে কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়ালো রিনি। আর আহি শুভর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ ওর কাজের জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি তোমায় তো কালকেই বলে ছিলাম।’

‘ হুম বুঝতে পারছি আপু,আর ওই মেয়েটার জন্য তোমায় ক্ষমা চাইতে হবে না,এমনিতেও আমি যে কাজের জন্য এসেছিলাম সেটা শেষ তাই এখন চলে যাচ্ছিলাম আর তখনই।’

‘ ওহ।’

‘ হুম ওকে বাই পড়ে কথা হবে।’

‘ঠিক আছে।’

উওরে শুভ আর কিছু না বলে একপলক রিনির দিকে তাকিয়ে চলে গেল। বাবা গো বাবা সামান্য ‘আপু’ ডাকায় কেউ এতটা রেগে যায় যদি ‘আন্টি’ ডাকতাম তাহলে তো মনে হয় খুনই করে ফেললো আমায়।– ভেবেই চলে গেল শুভ।’

আর এদিকে কিছুটা বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো আহি রিনিকে,

‘ এটা তুই কি করলি?’

‘ কি করেছি মানে যা করেছি বেশ করেছি।’

এতটুকু বলে খুব এক্সাইটেড আর উৎসাহের সাথে বললো রিনি,

‘ এখন ওসব বাদ দে আগে বল নীরবভাইয়াকে বলেছিলি? কি বললো সে তোর চিঠি পড়ে। এটা জানার জন্যই তো এক্সাইটেড হয়ে আসতে গিয়ে ওই খাম্বাটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। যাগ গে আগে বলতো বলতে পেরেছিস?

উওরে আহি মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘না’

আহির কথা শুনে রিনি চেঁচিয়ে বললো,

‘ কালও পারিস নি?’

উওরে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোধক মাথা নাড়ালো আহি। আর রিনি আহির মাথা নাড়ানো দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো, যার জন্য সে তার বোনের বউভাতে পোলাও না খেয়ে শুধু মাংস খেয়ে চলে আসলো সেটাই হলো না।’

রিনির রিয়েকশন দেখে আহি কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই সেও চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।’

_____

আচমকা বাস ব্রেক কষতেই পড়ে যেতে নিলো অথৈ সাথে সাথে নীরব তাকে ধরে ফেললো। কিছুক্ষনের জন্য হলেও কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল অথৈ। নীরব অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আর ইউ অলরাইট?’

উওরে অথৈ চটজলদি নীরবের কাছ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো,

‘ হুম থ্যাংক ইউ।’

বলেই আর দু’মিনিট দেরি না করে চটজলদি বাস থেকে নেমে পড়লো সে। আর নীরব জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অথৈর দিকে হঠাৎই নীরবের মনে পড়লো তারও তো এখানেই নামতে হবে ভেবেই চটজলদি নেমে পড়লো সে।’….
!
!
!
!
!
#চলবে…..