বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-১০+১১+১২

0
253

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ১০
_________________

অফিসের ছাঁদের এক কিনারায় একটা চেয়ারে নীরবে বসে আছে আদ্রিয়ান। খারাপ লাগা, রাগ দুটোই হচ্ছে তাঁর। এমনটা নয় শুভকে কষ্ট দিয়ে তার খুব ভালো লাগছে। নিজের রাগ একদমই কন্ট্রোল করতে পারে না আদ্রিয়ান। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই সে খুব রাগী টাইপের। নিজের জিনিসের ওপর অন্যের হাত দেওয়া একদমই সহ্য করতে পারে না সে। শুভর তখন বেশি বয়স ছিল না আদ্রিয়ানের থেকে দু কি দেড় বছরের ছোট হবে শুভ। শুভ ছোট বেলা থেকেই প্রায় চঞ্চল আর দুষ্ট টাইপের ছিল। আদ্রিয়ানের রাগ থাকলেও সে দুষ্ট কম ছিল চুপচাপ থাকা বেশি পছন্দ করতো আদ্রিয়ান। সেখানে শুভ ছিল একদমই উল্টো। ছোট বেলায় আদ্রিয়ানের জিনিসপত্র ধরতো শুভ আর এটা নিয়ে প্রায় আদ্রিয়ানের সাথে ঝগড়া হতো শুভর। তবে ঝগড়া হলেও শেষে গিয়ে আদ্রিয়ানকে বকা খেতে হতো মায়ের কাছে কারন সে বড়। বাবাও প্রায় বকতো তাকে শুভর জন্য। একদিন তো সব লিমিট ক্রস করে ফেলে শুভ তার প্রিয় একটা খেলনা ভেঙে ফেলে শুভ। সেদিন আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে মারে শুভকে, শুভকে মারার জন্য তার বাবা সেদিন প্রচন্ড রেগে মারে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান সেদিন রেগে গিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আর এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল, না সেদিন সে বাড়ি থেকে বের হতো আর না ভয় নামক অসুখ তাকে গ্রাস করতো আর নাই বা আজ তার বাবা মা তার থেকে এতো দূরে থাকতো।

সেই রক্তের ছাপ, কুকুরের ডাক, গুলির শব্দ সাথে আর ভাবতে পারলো না আদ্রিয়ান। সেসব ভাবলেই যেন এক অস্থিরতা ফিল হয় তার। শক্ত করে নিজের মাথাটা চেপে ধরলো আদ্রিয়ান। আর ভাবতে চায় না সে।

সময়টা তখন প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। চারপাশে রোদ্দুর মাখানো হিমশীতল বাতাস বইছে। ধবধবে সাদা আকাশের মাঝ বরাবর দিয়ে উঁড়ে গেল এক ঝাঁক পাখি। তবে আপাতত সেসব দিকে বিন্দুমাত্র লক্ষ নেই আদ্রিয়ানের। সে তো চুপচাপ নিজের মাথাটা চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। এমন সময় তার কাঁধে মাথা রাখলো নিলয়। কারো হাতের স্পর্শ পেতেই আদ্রিয়ান চোখ তুলে তাকালো সামনেই নিলয়কে দেখে বললো সে,

‘ ও কি চলে গেছে নিলয়?’

উওরে আদ্রিয়ানের পাশে বসে বললো নিলয়,

‘ হুম।’

‘ আমি খুব বাজে তাই না নিলয় সবার সাথেই বাজে ব্যবহার করি?’

‘ কে বলেছে তুই বাজে আমার দোস্ত কখনো বাজে হতেই পারে না।’

উওরে শুকনো হাসলো আদ্রিয়ান তবে কিছু বললো না। আর নিলয় চেয়েছিলো শুভর কথা কিছু বলতে কিন্তু আর বলতে চেয়েও কিছু বলতে পারলো না সে। কিছুক্ষনের জন্য নেমে আসলো তাদের মধ্যে নীরবতা। হঠাৎই আদ্রিয়ান জোরে শ্বাস ফেলে বলে উঠল,

‘ চল যাই?’

‘ হুম তুই যা আমি আসছি।’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে নিজের মতো উঠে দাঁড়িয়ে চলে গেল নিচে। আর নিলয় তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের যাওয়ার পানে। সে বুঝতে পেরেছে আদ্রিয়ান খুবই আপসেট। নিলয় কিছু একটা ভেবে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে একটা কল করলো। প্রথম কলেই অপর পাশের ব্যক্তিটি ফোন তুললো। ফোন তুলতেই নিলয় বলে উঠল,

‘ তুষার সিলেট যাওয়ার একটা টিকিট চাই আমার?’

নিলয়ের কথা শুনে অপর পাশে অফিসের লোকই তুষার। বললো সে,

‘ ওকে কবের স্যার?’

নিলয় কিছুক্ষন ভেবে নিজেই নিজেকে বললো ‘কাল তো একটা মিটিং আছে কাল নয়’ ভেবেই কানের পাশে ফোনটা ঠিক মতো বললো,

‘ হুন পরশুর।’

‘ ওকে স্যার।’

উওরে নিলয় আর কিছু না বলে ফোনটা কাটলো।’

_____

মাঝখানে কাটলো এক দিন।

সকাল প্রায় ৬ঃ০০টা। ঘুমেতে প্রায় টইটম্বুর সবাই। তবে এই মুহূর্তে সবাই বললে ভুল হবে একটু কমলাপুর রেলস্টেশনের একটা প্লাটফর্মে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে নীরব, অথৈ,সোহান,মীরা,সুজন, শরীফ আর আহি। যেখানে সবাই বসে বসে তাকিয়ে আছে রেললাইনের পথের দিকে সেখানে আহি বসে বসে ঘুমিয়ে আছে। পাক্কা দেড় ঘন্টা লেগেছে আহিকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তৈরি করে আনতে। কিন্তু তৈরি করলেও আহির ঘুমটা পুরোপুরি ভাঙাতে পারে নি কেউ। আসার সময় গাড়িতেও পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে সে,আর এখনো ঘুমিয়ে আছে। বিষয়টায় প্রায় সবাই হতাশ। কেউ বুঝতে পারছে না এত এক্সাইটিং এর মধ্যে আহি কি করে এত ঘুমাচ্ছে?’

পাক্কা বিশ মিনিটের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে চলে আসলো ট্রেন। ট্রেন আসার শব্দ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠল আহি। তারপর চটজলদি নিজের ব্যাগটাকে কাঁধে জুলিয়ে বললো সবাইকে,

‘ কি তোমরা সবাই বসে আছো যে যাবে না, ট্রেন তো চলে এসেছে?’

আহির কাজে চোখ বড় বড় করে তাকালো সবাই। নীরব তো ওর মাথায় চাটি দিয়ে বললো,

‘ একক্ষন তো তোকে ডেকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না যেই ট্রেন আসলো ওমনি তোর তাড়া শুরু হয়ে গেল।’

নীরবের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে শুকনো হাসলো আহি। বলতে না বলতেই ওদের সামনে এসে হাজির হলো ট্রেন। ট্রেন থামতেই একে একে সবাই গিয়ে উঠলো ট্রেনে। আহি সবার আগে ওর পিছনে রিনি,তারপর সোহান, শরীফ,সুুজন, মীরা আর সবার পিছনে নীরব অথৈ। যদিও অথৈ সামনে আর নীরব পিছনে। অতঃপর সবাই যে যার বগির সিটে গিয়ে বসে পড়লো। জানালার ধারে চুপচাপ বসলো অথৈ। কথা কম বলা, প্রকৃতি প্রেমিক মিষ্টি একটা মেয়ে। বাকি সবাই পক পক করলেও সে চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ট্রেন তার যাত্রা শুরু করে দিলো। অথৈর সোজাসুজিই বসেছে আহি আর আহির পাশে রিনি। এদিকে অথৈর পাশে বসেছে মীরা। আর তাদেরই অপজিট সাইডে বসেছে নীরব সোহান শরীফ আর সুজন। আটজনই প্রায় হুল্লোড় মাখা মুখ নিয়ে বসে।’

ট্রেনের জার্নি মোটামুটি সবারই ভালো লাগে। আর সকালের জার্নি তো আরো বেশি সুন্দর। কেবল দশ মিনিটই হবে ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে রওয়ানা হয়েছে। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ছয়টা বেজে তেত্রিশ মিনিট,রোদ্দুরের ছিটেফোঁটা নেই একটুও। সকালের ঠান্ডা মৌসুমে,সিদ্ধতায় ঘেরা সূর্য্যিমামা,চারপাশের দু’দিকেই রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য সারি সারি গাছপালা,অথৈই সেগুলোর দিকেই নিশ্চুপে তাকিয়ে আছে। ফ্রেন্ডশীপ ট্যুরে এই প্রথমই যাচ্ছে সে এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে তাঁর ভিতর। অথৈই নীরবেই তাকিয়ে রইলো বাহিরের দিকে,বাহিরের ঠান্ডা শীতল বাতাস এসে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাঁকে। ভিষণই ভালো লাগছে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তাঁর ভাগ্যিস আহি রিনির কথা শুনে এখানে এসেছে সে না হলে এই মুহূর্তটা মিস করতো। যদিও রাজশাহী থেকে ট্রেনেই এসেছিল সে তবে এত সকালে নয়।’

অন্যদিকে হুট করেই নীরবের চোখ যায় অথৈর দিকে। মেয়েটা আসলেই খুব চুপচাপ একদম তাঁর মতো আনমনেই হাসলো সে।’

ধীরে ধীরে কাছের গাছপালাদের দূরে সরিয়ে বড় বড় মাঠের মাঝদিয়ে এগিয়ে গেল তাঁরা। হুল্লোড়, আড্ডা, ভালো লাগা অনেকটা এক্সাইটিং নিয়েই চললো তাঁরা সিলেটের শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে…

____

গায়ে কালো কোট প্যান্ট পড়ে গাড়ি করে চলছে আদ্রিয়ান কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানে না। কিছুক্ষন আগেই হুট করে নিলয় ফোন করে বললো তাঁকে তাড়াতাড়ি তৈরি হতে কোথাও একটা নিয়ে যাবে তাকে?’ কিছুটা হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ আমরা কোথায় যাচ্ছি নিলয়?’

ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছিল নিলয় আদ্রিয়ানের কথা শুনে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো সে,

‘ গেলেই দেখতে পাবি আর আমরা নয় শুধু তুই যাচ্ছিস।’

নিলয়ের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ শুধু আমি মানে কোথাও যাওয়ার কথা ছিল বলে তো আমার মনে পড়ছে না তাহলে?’

‘ তুই না বড্ড প্রশ্ন কলিস বুঝলি, গেলেই তো দেখতে পাবি তাই না।’

উওরে আদ্রিয়ান কিছু বলতে চেয়েও আর বলতে পারলো না চুপ হয়ে গেল সে।’

কিছুক্ষনের মধ্যেই নিলয় গাড়ি থামালো ঢাকা এয়ারপোর্টের সামনে। নিলয়কে এমন একটা জায়গায় গাড়ি থামাতে দেখে বললো আদ্রিয়ান,

‘ এয়ারপোর্টে কেন?’

উওরে নিলয় কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে চলে যায় গাড়ি ডিঁকির কাছে। তারপর গাড়ির ডিঁকি খুলে আদ্রিয়ানের ব্যাগ বের করলো। ততক্ষণে আদ্রিয়ানও গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। নিলয়ের কাজে সে বেশ চমকে গিয়ে বললো,

‘ তুই একজেকলি কি করতে চাইছিস বলতো আর আমার ব্যাগ আনলি কখন?’

‘ এগুলো সব কাল রাতেই গুছিয়ে রেখেছিলাম আমি, এখন আর কথা না বারিয়ে এই টিকিটগুলো ধর আর সিলেট থেকে ঘুরে আয়।’ (পকেট থেকে টিকিট বের করে আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে)

এবার যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেল আদ্রিয়ান, বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,

‘ তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে অফিসে এত কাজ রেখে আমি সিলেট যাবো তাড়াতাড়ি বাড়ি চল।’

বলেই গাড়ি দরজা খুলতে নিলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান দরজা খুলতেই নিলয় চটজলদি গিয়ে গাড়ির দরজা চেপে ধরে বললো,

‘ কাজ আছে বলেই তো সিলেট পাঠাচ্ছি না হলে তো ইতালি পাঠাতাম এখন কথা না বারিয়ে তাড়াতাড়ি যা তো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তোর ফ্লাইট তোর জন্য উইন্ডো সিট বুকিং করেছি। মনটা একটু ফ্রেশ করে আয় তোর জন্য শ্রীমঙ্গলের একটা সুন্দর রিসোর্ট বুক করেছি যেটা তোর জন্য একদম পারফেক্ট!’

বলেই এক প্রকার ধাক্কা মেরে যেতে বললো নিলয় আদ্রিয়ানকে। নিলয়ের কাজে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ কিন্তু অফিস?’

‘ টেনশন নিস না আমি তো আছি দু’ তিন দিন নিরালায় থেকে মনটা ফ্রেশ করে আয় তোর ভালো লাগবে।’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে চলে গেল এয়ারপোর্টের ভিতরে। হয়তো একটু নিরিবিলি জায়গায় থাকলে তার মনটা ফ্রেশ থাকবে আর একদিক দিয়ে তো ভালোই হবে কামছেকাম দু-তিন দিন নিশ্চিত থাকা যাবে ওই বদমাইশ মেয়েটাকে তার দেখতে হবে না। এরকম নানা কিছু ভেবে চলে গেল আদ্রিয়ান। আর নিলয়ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের যাওয়ার পানে।’

অতঃপর, প্লেনে উঠে তিন নাম্বার সারির কিনারায় থাকা উইন্ডো সিটে বসলো আদ্রিয়ান। সিটটা বেশ পছন্দ হয়েছে তাঁর। ধীরে ধীরে লোক সংখ্যা বেড়ে গেল প্লেনের ভিতর সাথে মাইকে এনাউন্সমেন্টও করা হলো আর দশ মিনিটের মধ্যেই প্লেন সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে।’

আর বলতে না বলতেই কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেন তার সিলেট যাওয়ার যাত্রা শুরু করলো।’

ধীরে ধীরে প্লেন জমিন ছেড়ে আকাশের শুন্য হাওয়ায় ভাসতে লাগলো। আদ্রিয়ান চুপচাপ বসে রইলো নিজের সিট দিয়ে। মেঘের কোলে ভাসছে সে, যদিও এইরকম প্লেনের উঠার অভিজ্ঞতা নতুন নয় তার কাছে। তারপরও একরাশ ভালো লাগার শিহরণ নিয়েই চললো সে।’

______

ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় সাড়ে দশটা ছাড়িয়ে গেছে। আহিদের ট্রেন এসে থেমেছে কিছুক্ষনই হলো। একে একে সবাই স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে রওয়ানা হলো হোটেল বা রিসোর্টের উদ্দেশ্যে।’ তারপর সেখান থেকেই ব্রেকফাস্ট সেরে রওয়ানা দিবে ঘোরাঘুরির উদ্দেশ্যে।’

আর অন্যদিকে আরেকজন প্লেন থেকে নামতেই একজন লোক এসে বললো তাকে মিস্টার ‘আদ্রিয়ান মাহামুদ’ উওরে আদ্রিয়ানও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো, আদ্রিয়ানের কথা শুনে লোকটি খুশি হয়ে আদ্রিয়ানের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বললো,

‘ আমাকে নিলয় স্যার পাঠিয়েছে?’

বিনিময়ে আদ্রিয়ান খুশি হয়ে বললো,

‘ ওহ!’

‘ হুম চলুন আমার সাথে ওদিকেই আমার গাড়ি?’

‘ ওকে।’

বলেই আদ্রিয়ান চললো লোকটার সাথে। তারপর গাড়িতে উঠে চললো সে নিলয়ের বুক করা সেই রিসোর্টের কাছে।’…..
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ১১
_________________

শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত এক মাটির তৈরি রিসোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। যার চাল হিসেবে রয়েছে খড়কুটো আর বাঁশ, পুরো রিসোর্টটাই মাটি দিয়ে তৈরি, গোল বৃত্তে ঘেরা ছোট্ট একটা মাটির তৈরি কুঁড়েঘরও বলা যায় কিছুটা। তবে আদ্রিয়ানের কাছে সবচেয়ে বেশি যেটা ভালো লেগেছে সেটা হলো এর চারপাশটা। পুরো জায়গাটার চারপাশ দিয়ে ঘিরে আছে ঘন সবুজের গাছপালায় ঘেরা বাগান। একদম নিরিবিলি আর শান্ত সৃষ্টে ঘেরা। এইবার আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেছে তখন নিলয় কেন বলেছিল তাকে ‘জায়গাটা তোর জন্য পারফেক্ট’। সত্যি জায়গাটা যেন তার জন্যই, আদ্রিয়ান বেশি কিছু না ভেবে জোরে এক নিশ্বাস ফেলে চলে যায় রিসোর্টটির ভিতরে। ভিতরটা আরো সুন্দর, বাড়িটা মাটির তৈরি হলেও ভিতরটা পুরো টাইস আর থাইগ্রাস সমৃদ্ধ। রুমের ভিতর ঢুকতে শুরুতেই যেটা চোখে পড়ে সেটা হলো সেগুন কাঠের তৈরি একটা বেড, তারওপর সাদা বেড সিট,বেডের পাশে ছোট্ট একটা বাঁশের তৈরি টেবিল,আর উল্টো পাশে একটা ছোট্ট বাঁশের তৈরি ড্রেসিং টেবিল। তার কিছুটা দূরত্বে রয়েছে থাইগ্রাস যার বাহিরে রয়েছে ছোট্ট একটা বেলকনি,বেডের ডান দিকে রয়েছে বাঁশের তৈরি সোফা,আলমারি। এইরকম টুকিটাকি জিনিসপত্র দিয়ে ঘেরা রুমটা। আদ্রিয়ানের বেশ পছন্দ হয়েছে রুমটা। আদ্রিয়ান শুধুতেই চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে,যদিও খুব বেশি কষ্টের জার্নি ছিল না তার কিন্তু তারপরও গোসল করে নিজেকে একটু ফ্রেশ করতে চায় সে। এসব ভেবে আদ্রিয়ান তার গায়ের কোটটা খুলে বিছানার ওপর রেখে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।’

_____

ক্লান্ত মাখা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহি,নীরব,অথৈ, রিনি,সোহান, সুজন,শরীফ, আর মীরা তাদের রিসোর্টের সামনে। খুবই সুন্দর একটা রিসোর্ট যার পুরো বাড়িটাই কাট আর বাঁশ দিয়ে তৈরি। পর পর কয়েকটা রুম আর রুমের দরজার সামনেই বারেন্দা। বারান্দার সামনেই ছোট্ট একটা মাঠ,আর মাঠের চারদিকে সুন্দর সুন্দর গাছপালা। বারান্দার গা ঘেঁসেই রয়েছে কিছু রঙ বেরঙের ফুলগাছ। সেই ফুলের পাপড়িতে ভরে আছে বারান্দা আর মাঠের আশপাশ যেন মুগ্ধ করা এক পরিবেশ আর মনোমুগ্ধকর ফুলের গ্রান। সবাই বেশ মুগ্ধ হয়েছে আশপাশটা দেখে। শ্রীমঙ্গল মানেই হলো সবুজে ঘেরার সমরোহ আর চায়ের বাগান। আসার পথেই চা বাগান দেখেছে তারা। হঠাৎই সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বললো নীরব,

‘ এখানে টোটাল চারটে রুম আছে আর আমরা আটজন, তাই একেক রুমে দুজন করে থাকবে ঠিক আছে।’

উওরে সবাই মাথা নাড়ালো। সবার মাথা নাড়ানো দেখে আবারো বললো নীরব,

‘ হুম আর শোন এদিকের দুটোই আমরা ছেলেরা থাকবো আর ওদিকে দুটো তোরা মেয়েরা।’

নীরবের এবারের কথা শুনে রিনি বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে ভাইয়া।’

‘ হুম এখন তোরা যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি আরেকটা কথা এখন আর কোথাও বের হবো না একে বারে লান্সের পর হাম হাম ঝর্ণার উদ্দেশ্যে বের হবো আজকে ঝর্ণা পাহাড় এসব দেখবো আর কালকে পুরো চা বাগানের আশপাশ সাথে মাধবপুর লেক আর পরশু..

নীরব আর কিছু বলার আগেই সোহান বলে উঠল,

‘ হুম জানি তুই তোর বাসায় আর আমরা আমাদের বাসায়।’

‘ হুম তবে এখন যে যার রুমে যা।’

উওরে সবাই মুচকি হেঁসে বললো,

‘ ওকে।’

তারপর একে একে সবাই চলে যায় যে যার রুমে। কথা মতো এদিকের দুটো রুমের একটায় নীরব, সোহান থাকবে আর আরেকটা সুজন, শরীফ। আর ওদিকের দুটোর একটাই আহি, রিনি আর অন্যটায় মীরা অথৈ। অতঃপর যে যার ব্যাগপত্র নিয়ে নিজেদের রুমে ঢুকে পরলো।’

____

বাড়িরটার একদম কিনারার রুমটায় ঢুকলো আহি রিনি। রিনি তো ভিতরে ঢুকেই আগে সটাং হয়ে শুয়ে পড়লো সাদা তুলতুলে নরম বেডে। তারপর কিছুক্ষন শুয়ে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো সে,

‘ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

এতটুকু চলে যায় সে ওয়াশরুমের দিকে। আর আহি নিজের ব্যাগটা এক কিনারায় রেখে পুরো রুমটা দেখতে ব্যস্ত। এখানের জিনিসপত্র বা ফার্নিচারগুলো কাঠের আর বাঁশের তৈরি। একটা ছোট্ট বেলকনি আছে সোফার পাশ দিয়ে, সোফাটা বেলকনির দরজার পাশ দিয়েই আর সোফার সোজাসুজি কাঠের দেয়াল জুড়ে আছে একটা ছোট্ট জানালা। আহি একপা একপা করে এগিয়ে গিয়ে খুলে ফেললো জানালাটা। জানালা খুলতেই এক মৃদু বাতাস ছুঁয়ে দিল আহিকে একরাশ মুগ্ধতা এসে গ্রাস করলো তাঁকে, জানালার বাহিরেও শুধু সবুজ আর সবুজ। এরই মধ্যে দুটো ছেলে এসে দরজায় নক বললো,

‘ আমরা কি আসতে পারি?’

কারো কন্ঠ কানে আসতেই পিছন ফিরে তাকালো আহি, সামনে দুটো ছেলে আর তাদের হাতে খাবার দেখে আহির আর বুঝতে বাকি রইলো না তাঁরা এখানে কেন এসেছে। আহিও বেশি কিছু না ভেবে বললো,

‘ হুম আসুন।’

উওরে ছেলেগুলোও তেমন কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে সোফার সামনে থাকা টেবিলে ওপর তাদের হাতে থাকা খাবারগুলো রাখলো। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আহিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ আপনাদের খাবার?’

উওরে আহিও হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ ধন্যবাদ।’

‘ হুম।’

এতটুকু বলে চলে যায় ছেলেগুলো। আহি ছেলেগুলো যেতেই আবারো তাকালো জানালার বাহিরে এরই মধ্যে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো রিনি টেবিলের ওপর খাবার দেখে বললো সে,

‘ খাবার দিয়ে গেছে?’

রিনির কথা শুনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো আহি,

‘ হুম।’

উওরে রিনি খুব এক্সাইটিং হয়ে গিয়ে বসলো সোফার ওপর। তারপর বলে উঠল,

‘ উফ! খুব ভালো হয়েছে আমার বড্ড খিদে পেয়েছে।’

বলেই হাতের টাওয়ালটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে মেরে খেতে শুরু করলো রিনি। খাবার হিসেবে এই মুহূর্তে দিয়ে গেল ঝাল ঝাল গরুর গোস্ত, গোল রুটি সাথে রং চা আপাতত নাস্তার জন্য এটাই যথেষ্ট। ভেবেই খেতে শুরু করলো রিনি,এক লোকমা খাবার মুখে দিতেই অটোমেটিক মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো তাঁর,

‘ উম্ ইয়াম্মি।’

রিনির মুখে খাবারের প্রশংসা শুনে আহি জানালার কাছ থেকে সরে এসে বলো,

‘ হুম একা একাই খাবি সব?’

আহির কথা শুনে রিনি তার আঙুল চেটে বললো,

‘ তা হবে কেন তুইও আয়?’

‘ হুম আইতাছি।’

এতটুকু বলে আহিও হাতে টাওয়াল নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।’

_____

পরন্ত বিকেলে বেলকনির পাশে বসে হাতে আরমোনিকা নিয়ে চুপচাপ বাজাচ্ছে আদ্রিয়ান। আরমোনিকা বাজানো ছেড়ে দিয়েছে আদ্রিয়ান অনেক আগেই কেন যেন আজ তার বাজাতে খুব ইচ্ছে করছে। কয়েকমুহুর্ত আগে যখন জামাকাপড় খুঁজতে ব্যাগে হাত দিয়েছিল আদ্রিয়ান তখনই এটা চোখে পড়ে তাঁর। হয়তো নিলয় রেখেছিল তার ব্যাগে। এটাও আদ্রিয়ানের ছোট বেলার একাকিত্বের সঙ্গী ছিল বটে। সময়ের সাথে সাথে যেন সবকিছুই হারিয়ে যায়। কিন্তু আজ সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলিকেই একটুখানি কাছে আনলো আদ্রিয়ান।

এক অদ্ভুত ভালো লাগা, আর শূন্যহীন অনুভূতি হচ্ছে তার। তার সামনেই গাছের ডালে বসে আছে কিছু পাখি,তাঁরাও হয়তো আদ্রিয়ানের আরমোনিকার আওয়াজে মুগ্ধ হয়ে চুপচাপ বসে আছে ডালে। যদিও আশেপাশে খুব বেশি লোকজন নেই যেটা আছে সেটা হলো গাছের পাতার হাল্কা ঝিরিঝিরি শব্দ, পাখিদের কলরব,নিঝুম বিকেলের ধমকা হাওয়া যেটা আদ্রিয়ানের চঞ্চল মনটাকে শান্ত হতে করছে বাধ্য। আদ্রিয়ানের বেশ ভালো লাগছে। এই নিরিবিলি জিনিসপত্রই বেশ লাগে আদ্রিয়ানের। এমন সময় হঠাৎই টুং করে একটা মেসেজ আসলো আদ্রিয়ানের ফোনে। মেসেজের শব্দ কানে আসতেই নিজের হাতে থাকা আরমোনিকাটা মুখ থেকে সরিয়ে বাজানো বন্ধ করে নিচ থেকে হাতে ফোনটা নিলো আদ্রিয়ান। উপরেই নিলয়ের মেসেজ দেখে হাল্কা হাসলো আদ্রিয়ান। অতঃপর মেসেজ অপশন চেক করতেই দেখলো সে নিলয়ের লেখা,

‘ কি রে নির্জন জায়গা পেয়ে আমায় ভুলে গেলি নাকি,একটা ফোনও তো করলি না?’

নিলয়ের মেসেজ দেখে বেশ বিস্মিত হয় আদ্রিয়ান সত্যি সে ভুলে গিয়েছিল নিলয়কে ফোন দেওয়ার কথা। আদ্রিয়ান চটপট কিবোর্ডে হাত রেখে লিখতে শুরু করলো,

‘ আমি সত্যি ভুলে গিয়েছিলাম জায়গাটার প্রেমের পড়ে গেছি দোস্ত।’

আদ্রিয়ানের মেসেজ যেতে না যেতেই নিলয় লিখে পাঠালো,

‘ যাক আমার দোস্ত কোনো মেয়ের প্রেমে পড়তে না পারলেও শেষ মেশ জায়গার প্রেমে তো পড়ছে।’

নিলয়ের মেসেজ দেখে অটোমেটিক হেঁসে ফেলে আদ্রিয়ান তবে কিছু বলে না সে। ফোনটা হাত থেকে সরিয়ে আবারো প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আরমোনিকাটা মুখে নিয়ে বাজাতে শুরু করলো আদ্রিয়ান। সাথে সাথে আবারো তাঁকে ঘিরে ধরলো প্রকৃতির মায়া। পাখিরাও যেন নেচে উঠলো আবার এতক্ষণ যেন আদ্রিয়ানেরই অপেক্ষায় ছিল তাঁরা। পরিবেশটা এমনিতেই অনেক সুন্দর এখন যেন আদ্রিয়ানের আরমোনিকার শব্দ পেয়ে আরো মুগ্ধকর আর মায়াবী হয়ে উঠেছে!’

_____

বিভিন্ন ধরনের বাঁশ গাছদের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে নীরব অথৈ আহি রিনি মীরাসহ বাকি সবাই। সবারই এই মুহূর্তে উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত ঝর্ণা যেটা ‘হাম হাম জলপ্রপাত’ নামে বেশি পরিচিত বা জনপ্রিয়। অনেক আগেই তাঁরা দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়েছে হাম হাম জলপ্রপাত দেখার উদ্দেশ্যে। ওদের সাথেই আছে ওদের রিসোর্টের একজন দক্ষ গাইড। এছাড়াও এখানে থাকা অল্প স্বল্প মানুষজন। ওনাদের সাহায্যেই ঝর্ণার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে ওঁরা। এখান থেকে যাওয়ার পথে কিছু কিছু জীবদের দেখতে পেয়েছে ওঁরা এর মধ্যে এক নাম্বার হলো গাছে থাকা বাঁনর এছাড়া পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ তো আছেই। যতই ঝর্ণার কাছাকাছি যাচ্ছে ওঁরা ততই যেন পানির ঝিরিঝিরি শব্দ ভেসে আসছে কানে। কিছুক্ষনের মধ্যেই পাহাড় পেরিয়ে ভেজালো পাথরের মাঝে এসে থামলো সবাই। এরপর একে একে সবাই মিলে পাথরের ঘেরা ছোট্ট জলাভূমি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো ওঁরা। সবার পিছনেই রয়েছে নীরব হাতে আছে তার মুঠো ক্যামেরা যেটা দিয়ে নানান জিনিসের ছবি তুলছে সে অবশ্য স্ব-ইচ্ছে তুলছে বললে একটু ভুল হবে সোহান শরীফ আর সুজনের জোরাজোরি ছবি তুলতে বাধ্য হচ্ছে সে। তবে প্রথম দিক দিয়ে বিরক্ত লাগলেও এখন বেশ ভালো লাগছে তাঁর।’

অবশেষে উঁচু নিচু পথ,বাঁশ গাছদের আগা গোনা, পাহাড় আর ছোট ছোট পাথরদের জলাভূমি পেরিয়ে চলে আসলো হাম হাম জলপ্রপাতের কাছে নীরব, অথৈ,আহি, রিনি, সোহান,মীরা সুজন আর শরীফ। আটজনই প্রায় মুগ্ধ এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য দেখে। বিশাল উঁচুতে থাকা একটা পাহাড় বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ছে পানি। যার ঝন ঝনাঝন শব্দে প্রায় মুগ্ধ সবাই। আঁখি ভরিয়া চাহিয়া রহিল সবাই। ঝর্ণার কাছে কিছুটা এগোতেই মুখে এসে লাগছে স্বচ্ছ পানির ছিঁটে। একে একে সবাই ঝর্ণার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আর নীরবের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হলো ফটোগ্রাফারের কাজ। আর বেচারি নীরব সেও বাধ্য ছেলের মতো ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।’

ঝর্ণার ঠিক মাঝবরারব সমৃদ্ধ খানিকটা দূরত্বে পানির নিচের পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সোহান, সুজন আর শরীফ। আর ওদের ঠিক পিছনেই মেয়েরা। সাধারণত সোহান ওঁরা দাঁড়িয়ে আছে ছবি তোলার জন্য। তিনবন্ধু একসাথে গা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে নীরবকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,

‘ দোস্ত তোল?’

গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেশ নীরবেই দাঁড়িয়ে ছিল নীরব। বন্ধুদের কথা শুনে কিছুটা হকচকিয়ে উঠে তাকালো সে সোহানদের দিকে তারপর বললো,

‘ হুম।’

এতটুকু বলে ক্যামেরাটা চোখের সামনে ধরে ছবি তুলতে লাগলো নীরব। বেশ কয়েকটা ছবি তোলার পর হঠাৎই ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা অথৈর দিকে চোখ যায় নীরবের। ক্যামেরাটাকে হাল্কা নিজের মুখের সামনে থেকে নামিয়ে তাকালো সে অথৈর দিকে মিষ্টি কালার থ্রি-পিচ পড়েছে অথৈ,চুলগুলো সামনে দিয়ে সাজিয়ে বেনুনি করা,চোখে কাজল,হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি,আর ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক এতটুকু সাজেই বেশ আচ্ছন্ন লাগছে অথৈকে। নীরবের তাকিয়ে থাকার মূল কারণ হলো অথৈ চোখ বন্ধ করে ঝর্ণার পানিতে মুখ মাখাচ্ছে তার মুখমন্ডলে। বেশ মুগ্ধতা নিয়েই তাকিয়ে আছে নীরব অথৈর দিকে।’

‘ ওই নীরব কোথায় হারিয়ে গেলি ছবি তোল?’

হঠাৎই সোহান ওদের কথা শুনে নীরব তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো। কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সে,

‘ হুম হ্যাঁ।’

এতটুকু বলে ক্যামেরাটা আবারো চোখের সামনে নিলো সে, তবে এইবার আর সোহানদের ছবি তুললো না আনমনেই অথৈর মুখমন্ডলের ছবি তুলে নিলো নীরব। অথৈর বেশ কয়েকটা ছবি তোলা শেষ হতেই চোখ যায় নীরবের আহি আর রিনির দিকে। রিনি তার মোবাইলে সেলফি তুলতে ব্যস্ত আর আহি চুপচাপ নিচে বসে পানি দেখছে অবশ্য পানি দেখছে বললে ভুল হবে পানির নিচ থেকে ছোট ছোট পাথরগুলোকে হাতে উঠিয়ে দেখছে। আহির কাজে হাসলো নীরব, তারপর পর পর আহির কিছু ছবি তুলে ক্যামেরায় সেগুলোকে একবার দেখে আনমনেই বলে ফেললো সে,

‘ এই মেয়েটা আসলেই একটা পাগলী।’

বলেই আবারো হেঁসে ফেললো নীরব তারপর আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে সোহান,শরীফ আর সুজনের ছবি তুলতে।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ১২
_________________

পরন্ত বিকেলের হাম হাম ঝর্ণা দেখা শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা পেরিয়ে গিয়েছিল নীরব ওদের। সারা বিকালটা বেশ ভালোই কেটেছে সবার। একরাশ সিদ্ধতা, একরাশ মুগ্ধতা আর অভিরাম ভালো লাগার মাঝ দিয়েই চলে গেল সবার।’

ক্লান্ত মাখা শরীর নিয়ে ধপাস করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সোহান, শরীফ ও সুজন। আর এদের অবস্থা দেখে নীরব তার গলা থেকে ক্যামেরাটা খুঁলে টেবিলে উপর রেখে বললো,

‘ কিরে এইটুকুতেই হাঁপিয়ে গেলি?’

নীরবে কথা শুনে সোহান ক্লান্ত মাখা শরীর নিয়ে বললো,

‘ হাঁপাই নি দোস্ত জাস্ট ক্লান্ত লাগছে।’

উওরে নীরব মুচকি হেঁসে বললো,

‘ তা তো দেখতেই পাচ্ছি।’

বলেই চলে যায় সে ওয়াশরুমের দিকে।’ আর বাকি রইলো মেয়েরা তাঁরাও ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে রইলো যে যার রুমে।’

_____

রাত প্রায় তখন দশটার কাছাকাছি। যদিও শহরের হিসেবে এই সময়টাকে গভীর রাত বলা যায় না। কিন্তু গ্রামীণ মাটিতে যেন এর একদমই উল্টো। প্রায় সবাই বেশ ঘুমে মগ্ন তখন। হঠাৎ অথৈদের রুমের দরজা খুলে বাহিরে বের হলো অথৈ। এমনটা নয় সে ঘুমায় নি হুট করেই ঘুমটা ভেঙে যাওয়াতে রুম থেকে বের হয় অথৈ। এমনিতেও রাতের মৌসুম দেখতেও বেশ লাগে তার। অথৈ বারান্দার ধারে রেলিং এ হাত দিয়ে কিছুটা আরাম করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপটি করে। বারান্দায় থাকা লাইটগুলো জ্বল জ্বল করছিল তখন, হয়তো এই লাইটগুলো সারারাতই জ্বালানো থাকে। বেশ খানিকটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অথৈ তারপর তাকালো সে আকাশের দিকে জোৎসা ভরা আলোতে প্রায় সবকিছুই দেখা যাচ্ছে আকাশটাও রয়েছে বেশ চুপচাপ কোনো তাঁরা নেই,হাল্কা হাল্কা মেঘেরা এসে হাতছানি দিচ্ছে আকাশ পানে হয়তো বৃষ্টি হবে আবার হয়তো হবে না। তবে অথৈ যতটা বুঝছে পারছে আকাশ দেখে আজ সারারাত আকাশে মেঘ থাকবে তবে বৃষ্টি না হওয়ার সম্ভাবনাটাই যেন বেশি। প্রকৃতির রূপ এটা কখন কোথায় কিভাবে বদলে যাবে এটা বোঝা বড়ই দায় এটা শুধু আল্লাহই ভালো জানেন। মানুষ তো শুধু আনুমানিক কিছু একটা বলে দেয় তবে এটা যে সবসময় ঠিক হবে এমনটা নয়। কখনো কখনো মানুষের আনুমানিকতা টাই ঠিক হয় আবার কখনো কখনো হয় না। অথৈ তার চোখের চশমা খুলে ফেলেছে অনেক আগেই। বেশ ভালো লাগছে এখন যেন এই চশমাটার জন্য এই রাতের প্রকৃতি দেখতে তাঁর ব্যাঘাত ঘটেছিল। এমন সময় হঠাৎই এক দমকা হাওয়া আসলো পুরো বারান্দা জুড়ে, হাওয়াটা এতটাই তীব্র ছিল যে এক নিমিষেই গাছের পাতা আর ফুলের পাপড়িদের ঝড়ে ফেললো অনেক। সাথে ছিঁটকে আসলো কিছু ধুলো। হুট করে এমনটা হওয়াতে বেশ অপ্রস্তুত ছিল অথৈ যার ফলে কিছুটা ধুলো চলে যায় তাঁর চোখেও। চোখে কিছু গিয়েছে এটা বুঝতে পারার সাথে সাথে চোখে হাত দিয়ে ডলতে শুরু করলো অথৈ।’

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো নীরব। আচমকা তাদের চালের উপর কিছু পরার শব্দ পেতেই ঘুম ভেঙে যায় তার আর-একবার ঘুম ভেঙে যাওয়া মানে আগামী দু থেকে তিন ঘন্টায় তার চোখে ঘুম নেই। নীরব দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই তার থেকে বেশ খানিকটা দূরে অথৈকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় সে। তেমন কিছু না ভেবেই এগোতে থাকে নীরব অথৈ দিকে কারন সে বুঝতে পেরেছে অথৈ ঠিক নেই।’

‘ তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?’

হঠাৎই কারো কন্ঠ কানে আসতেই বেশ খানিকটা চমকে উঠলো অথৈ। তবে বেশি ঘাবড়ালো না কারন এমনটা নয় অথৈ ভয়েসটা আসলে কার এটা বুঝতে পারে নি। অথৈ বেশ বুঝতে পেরেছে এটা নীরবের গলা। অথৈ তার চোখ থেকে হাত সরিয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখতে চাইলো সামনে। কিন্তু চোখ খুলতেই হাল্কা জ্বালা -পোড়া অনুভব করতেই চটজলদি চোখ বন্ধ করে আবারো হাত দিয়ে চোখ ডলতে শুরু করলো সে। অথৈর কাজে নীরবের বুঝতে বাকি নেই অথৈ কেন ঠিক নেই। নীরব অথৈর দিকে আর একটু এগিয়ে এসে ওর হাত চেপে ধরে বললো,

‘ কুল ডাউন আমি দেখছি।’

বলেই অথৈর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ওর চোখে ফুঁ দিতে লাগলো নীরব। নীরবের কাজে শুরুতে একটু চমকে গেলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো অথৈ।’

অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই অথৈর চোখ ঠিক হয়ে গেল কিন্তু হাত দিয়ে ডলার কারনে হাল্কা লালচে বর্ন ধারণ করেছে অথৈর চোখ। নিজের চোখে হাল্কা আরাম ফিল হতেই অথৈই তার চোখের চশমাটা পড়ে নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ থ্যাংক ইউ।’

উওরে নীরবও মুচকি হেঁসে বললো,

‘ ইট’স ওকে! তা এত রাতে এখানে কি করছো ঘুমাও নি?’

নীরবের কথা শুনে অথৈ বেশ সরল কন্ঠে বললো,

‘ আসলে ঘুমাই নি বললে ভুল হবে হুট করেই ঘুম ভেঙে যায় তাই আরকি এখানে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’

‘ ওহ,

‘ হুম তা আপনি ঘুমান নি?’

‘ আমি, আমারও হুট করেই কিছু একটা পড়ার শব্দ পেতেই ঘুম ভেঙে যায়।’

‘ ওহ হয়তো তখন তীব্র বাতাসের কারণে গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল।’

‘ হতে পারে।’

‘ হুম।’

এরপর নেমে এলো দুজনের মাঝে নীরবতা। পাশাপাশি বারান্দায় নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো দুজন। আকাশটা এখনও মেঘাছন্ন,হাল্কা হাল্কা বাতাস বইছে চারপাশে, বাতাসে গাছের পাতাগুলো নড়ছেও বারংবার। অথৈর ইচ্ছে করছিল এখনই সে বলে দিক আহির কথাটা কিন্তু আবার বললো না কে জানে হয়তো এমনটা করলে আহি রেগে যাবে। কিছুক্ষন নীরবতায় কাটিয়ে বলে উঠল অথৈ,

‘ এখন তবে ঘুমাতে যাচ্ছি আপনিও যান,রাত তো অনেক হয়েছে?’

উওরে নীরবও অথৈর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘ হুম।’

উওরে অথৈও আর কিছু বললো না নিজের চোখের চশমাটা একবার ঠিক করে হাউসি দিতে দিতে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। বিছানায় তখন মীরা গভীর ঘুম মগ্ন অথৈ বেশি কিছু না ভেবে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়লো মীরার পাশ দিয়ে।’

অন্যদিকে অথৈই যেতেই নীরব আবারো তাকালো আকাশের দিকে। মুগ্ধ করা মেঘাছন্ন আকাশ, পাশেই গ্রানযুক্ত মুগ্ধ করা ফুলের সুবাস। পুরো বারান্দা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফুলের পাপড়ি, জোরে এক নিশ্বাস ফেললো নীরব বেশ ভালো লাগছে তার তবে ঘুম আসছে না। নীরব কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে তার পাশ দিয়েই দিলো ছিল একটা দোলনা,দোলনাটাতেই ফুলের পাপড়িতে ভর্তি, নীরব বেশি কিছু না ভেবে দোলনার এক সাইডের পাপড়িগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে বসে পড়লো দোলনায়। কেন যেন এই মুহূর্তে অথৈকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে তার?’

_____

ঘড়ির কাঁটায় প্রায় এগারোটা বেজে আটান্ন মিনিট ওই বলতে গেলে প্রায় বারোটা বেজে গেছে। রাত অনেক হলেও চোখে ঘুম নেই আদ্রিয়ানের। এর দুটো কারন এক তার দুঃস্বপ্ন আর দুই আশেপাশে প্রচুর জীবজন্তু ডাকছে যেমন শেয়াল,পেঁচা। বিছানায় চুপচাপ শুয়ে শুয়ে মোবাইলে গেম খেলছে সে আজ সারারাত হয়তো না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে সে। কিন্তু না বেশ বিরক্ত লাগছে আদ্রিয়ানের আদ্রিয়ান তার মোবাইলটাকে বিছানার ওপর ছুঁড়ে ফেলে শোয়া থেকে উঠে বসলো, তারপর চোখ মুখ কিছুক্ষন চেপে ধরে ড্রয়ার থেকে একটা টেবলেট বের করে খেয়ে নিলো সে। কিছুক্ষন যেতে না যেতেই চোখে এসে ভর করলো তার ঘুম নামক প্রশান্তি। কারণ ঘুমের ঔষধ খেয়েছে যে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান নীরবে তার গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। তারপর বিছানার পাশে থাকা সুইচ টিপে রুমের লাইট বন্ধ করে দিতেই পুরো রুম অন্ধকারে ভরে গেল। শুরুতে অন্ধকারে পুরো রুম টুইটুম্বর হলেও কিছুক্ষন যেতে না যেতেই রাতের জোৎসা ভরা আলো এসে ভর করলো আদ্রিয়ানের রুমে। বেলকনির ভিতর থেকে জানালার কার্নিশ বেয়ে সাদা পর্দা ভেদ করে আসছে বাতাস। দূর আকাশে থাকা চাঁদ মামাও আজ জ্বলছে ভিষণ। যদিও আকাশটা কতক্ষণ আগে মেঘে থাকা ছিল কিন্তু এখন মেঘকে আঁড়াল করে সূর্য্যের আলোতে আলোকিত হয়ে উঁকি মারছে চাঁদমামা। তাঁরা নেই আশেপাশে একটাও যেটা আছে সেটা হলো মস্ত বড় আকাশে একটা সুন্দর চাঁদ মামা।’

____

সকাল ৬ঃ০০টা..

নিজের রুমের দরজা খুলে বাহিরে বের হলো আহি। কাল রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়াতে সকালে তাড়াতাড়ি উঠেছে সে। আহি আশেপাশের চারদিকে চোখ বুলালো একবার পাখির কিচিরমিচির ডাকছে খুব। পাখিদের ডাক শুনে মুচকি হাসলো আহি,হঠাৎই রুমের ভিতর ঢুকতে যাবে এমন সময় চোখ যায় আহির নীরবের দিকে। নীরবকে দোলনায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয়ে এগিয়ে আসলো সে নীরবের দিকে। বুকে হাত জড়িয়ে ধরে চোখ চশমা পড়া অবস্থাতেই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে নীরব। নীরবকে দেখেই একরাশ মুগ্ধতা এসে গ্রাস করলো আহিকে। আহি চুপচাপ নীরবের পাশ দিয়ে বসে পড়লো তারপর তাকিয়ে রইলো সে নীরবের মুখের দিকে। বুকে হাত দিয়েই উল্টো দিক ফিরে ঘুমিয়ে আছে নীরব আহি গালে হাত দিয়ে মনে মনে বললো,

‘ তোমায় যে কতটা ভালোবাসি আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না ভাইয়া,কিন্তু এই ভালোবাসার কথা বলতে ভীষণ ভয় লাগে আমার। আচ্ছা আমি তোমায় ভালোবাসি বললে তুমি কি রাগ করবে নাকি তুমিও আমায় ভালোবাসবে। জানো কতবার তোমায় ভালোবাসি বলতে গেছি কিন্তু যতই বারই গেছি ততবারই কিছু না কিছুর কারনে তোমায় বলতে পারি নি। বার বার এমন কেন হচ্ছে বলো তো,এই দেখো না তোমার জন্য লেখা চিঠি আমি আমার ড্রয়ারেই ফেলে এসেছি। বার বার এমন কেন হয় বলো তো? তবে যাই বলো তুমি কি দেখতে একদম কিউটের ডিব্বা, চশমা পড়লে তো তোমায় আরো কিউট লাগে।’ — কথাগুলো মনে মনে ভেবে হেঁসে উঠলো আহি। এরই মধ্যে নীরবের ঘুম ভেঙে যায় সামনেই আহিকে নিজের দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে বলে উঠল নীরব,

‘ কি ব্যাপার তুই হাসছিস কেন?’

আচমকা নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠল আহি কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সে,

‘ না মানে তুমি এখানে কেন ঘুমিয়ে আছো এটা আগে বলো?’

‘ সে তো কাল রাতে হুট করে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় এখানে এসে বসে ছিলাম কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারি নি।’

‘ ওহ আমিও তোমায় এখানে ঘুমাতে দেখে ডাকতে এসেছিলাম।’

‘ ওহ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ আর বাকিদেরও ডাক নাস্তা সেরেই আমরা বের হবো।’

নীরবের কথা শুনে আহিও বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ ঠিক আছে ভাইয়া।’

‘ হুম।’

উওরে আহি আর কিছু না বলে চলে যায় নিজের রুমের দিকে। আর নীরবও কিছুক্ষন আহির যাওয়ার পানে তাকিয়ে দেখে চলে যায় নিজের রুমের দিকে।’

_____

সকালের নাস্তা সেরে আট কি সাড়ে আটটার দিকে সবাই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্য। প্রথমে মাধবপুর লেক আর তার পরে চা বাগান। এই দুটোর মাঝখানে লান্স সেরে একবারে সন্ধ্যার দিকে রিসোর্টে ফিরবে সবাই তারপর কাল সকালে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাবে। এমন চিন্তা ভাবনা নিয়েই রিসোর্ট থেকে বের হলো নীরব,আহি,অথৈ,রিনি,মীরা, সোহান, শরীফ আর সুজন।’ তার পর একসাথে হেঁটে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে বড় গাড়ি করে বের হলো সবাই মাধবপুর লেকের উদ্দেশ্যে।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..