বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
266

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ১৬+১৭+১৮
_________________

সকালের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙলো আদ্রিয়ানের। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা মনে করতেই এক প্রকার লাফ মেরে উঠে বসলো সে। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় দশটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। আদ্রিয়ান আহির কথা মনে করে আশেপাশে তাকিয়ে চোখ বুলালো একবার। না আহি নেই কোথাও,কাল রাতের তাঁর পাশে থাকা বিছানার চাঁদরটাও ভাজ করে সোফার উপর রাখা। খরগোশ ছানাটাকেও দেখতে পাচ্ছে না আদ্রিয়ান। ‘তাহলে কি আহি চলে গেছে’– কথাটা মাথায় আসতেই আদ্রিয়ান বিছানা থেকে নেমে পড়লো। তারপর আর বেশি কিছু না ভেবেই চলে গেল সে ওয়াশরুমে। কিছুক্ষন পর বেরিয়ে টাওয়াল হাতে নাক- মুখ মুছে বসলো সে বিছানার ওপর। হঠাৎই আদ্রিয়ানের চোখ যায় তাঁর বিছানার পাশে টেবিলের ওপর থাকা একটা ভাঁজ করা সাদা কাগজের দিকে। আদ্রিয়ান বেশি কিছু না ভেবেই কাগজটা হাতে নিলো। কাগজটা খুলতেই উপরে লেখা,

‘ চলে যাচ্ছি আমি। কাল রাতে আমাকে সাহায্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার এই উপকারের কথা আমি কোনোদিনও ভুলবো না। আপনার কথা মতো আপনার ঘুম ভাঙার আগেই আমি চলে যাচ্ছি আর হ্যাঁ আপনার শার্টটাও আমি ধুয়ে বেলকনিতে মেলে দিয়েছি শুকিয়ে গেলে গুছিয়ে নিবেন।’

এই কথাটা পড়তেই আদ্রিয়ান তাকালো বেলকনির দিকে। বাতাসে হাল্কা নড়ছে শার্টটা, আদ্রিয়ান কাল রেগে এমনি বলেছিল শার্টটা ধোঁয়ার কথা কিন্তু আহি যে সত্যি সত্যি শার্টটা ধুয়ে দিয়ে যাবে এটা ভাবে নি আদ্রিয়ান। আনমনেই মুচকি হাসলো সে। আদ্রিয়ান আবারো তাকালো কাগজটার দিকে সেখানে আরো লেখা,

আপনার দেওয়া শার্ট আর জিন্সটা নিয়ে যাচ্ছি আমি আসলে আমার জামা কাপড়গুলো শুকায় নি তাই বাধ্য হয়েই নেওয়া লাগলো প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আর এমনিতেও আমার মনে হয় না এই জামা কাপড়গুলো আর আপনি পড়বেন তাই সাথে করেই নিয়ে গেলাম। আরো কিছু কথা, জানি না কাল রাতে হুট করে আপনার কি হয়েছিল তবে যতটুকু বুঝলাম আপনি কোনো কারনে খুব ভয় পাচ্ছিলেন। শুনুন বেশি ভয় পাবেন না আপনার মতো রাগী মানুষের সাথে ভয়টা ঠিক মেচ করে না। তবে আপনি মানুষটা রাগী হলেও মন থেকে কিন্তু খুব ভালো। অবশেষে বলবো, ‘ভালো থাকবেন’

‘ইতি আপনার অপ্রিয় একজন মানুষ’

‘আহি’

পুরো লেখাটা পড়ে আনমনেই হাসলো আদ্রিয়ান। হঠাৎই তাঁর মনে পড়লো কাল রাতের কথা। কালকে ঘুমের রেশটা একটু বেশি থাকায় ঘুমের ঔষধ খেতে ভুলে গিয়েছিল সে। কিন্তু কাল রাতে ধীরে ধীরে সব কিছু আদ্রিয়ানের মনে পড়ে গেল। আহিকে জড়িয়ে ধরেছিল বিষয়টা মাথায় আসতেই কেমন একটু লাগলো আদ্রিয়ানের।’

‘ কিন্তু কাল রাতে ওঁকে জড়িয়ে ধরতেই কিছু একটা ফিল হচ্ছিল আমার যেন চেনা কেউ তবে কি আহির সাথে এর আগে আমার কোথাও দেখা হয়েছিল?’

কথাটা মাথায় আসতেই এক প্রকার অবাক হয় আদ্রিয়ান। কিন্তু তাঁর তো মনে পড়ছে না এর আগে কখনো সেইভাবে আহির সাথে মিট হয়েছিল প্রথম মিট তো বিয়ে বাড়ি,সেকেন্ড মিট গাড়ি আর থার্ড মিট অফিস কিন্তু এর মাঝখানে কোনোটাতেই তো জড়িয়ে ধরার মতো কিছু হয় নি। আর ওকে জড়িয়ে ধরতেই অস্থিরতা কেন কমে যাচ্ছিল আমার? কি কানেকশন থাকতে পারে আমার ওই মেয়েটার সাথে?’

একের পর এক কথা এসে মাথায় বারি মারছিল আদ্রিয়ানের কিন্তু উওর যেন মিলছে না কোনোভাবেই। এমন সময় আদ্রিয়ানের ফোনটা বেজে উঠলো উপরে নিলয়ের নাম্বার দেখে ফোনটা তুলেই নিলয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠল সে,

‘ আসছি আমি।’

বলেই ফোনটা কেটে দেয় আদ্রিয়ান। তাঁর মাথায় এখন অনেক প্রশ্ন? আর এই প্রশ্ন নিয়েই ফিরবে সে ঢাকায়।’

_____

নীরবদের রিসোর্টের সামনে এসে থামলো একটা গাড়ি। সেই গাড়ি থেকে কিছুটা এলোমেলোভাবে বের হয় আহি। আদ্রিয়ানের ওয়াইট টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স পড়েই রিসোর্টের সামনে এসে এক প্রকার জোরে নিশ্বাস ফেললো সে। শেষমেশ আসলো সে রিসোর্টের কাছে। আহি ড্রাইভারকে একটু দাঁড়াতে বলে চলে যায় ভিতরে। সেই সকালেই আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে আহি। সারারাত আদ্রিয়ান তাকে জড়িয়ে ধরেই ছিল সেই ভোরের দিকে আহি আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে উঠে পরে তারপর আদ্রিয়ানের শার্টটা খুব সুন্দর মতো ধুয়ে শুকাতে দেয় বেলকনি। হঠাৎ টেবিলের নিচে কলম আর কাগজ দেখে আহিও চিঠি লিখে চলে আসে এখানে। যদিও একটু কষ্ট হয়েছে ওখান থেকে বের হতে মানুষকে জিজ্ঞেস করতে শেষমেশ এসে পৌঁছালো সে রিসোর্টের কাছে। না জানি তাকে না পেয়ে সবাই কতটা দুশ্চিন্তা করছে। এসব ভাবতে ভাবতে আহি দৌড়ে চলে যায় ভিতরে। একহাতে ছোট্ট একটা ব্যাগ আর অন্য হাতে খরগোশ ছানাটাকে নিয়ে এগোচ্ছে সে।’

নীরবের রুমে, রিনির কাঁধে মাথা দিয়ে বসে বসে ঘুমিয়ে আছ অথৈ। শরীর তাঁর বড্ড ক্লান্ত, ওদের পাশে সোফাতে ঘুমিয়ে আছে মীরা। আর খাটের তিনদিকে ঘুমিয়ে আছে সোহান,সুজন আর শরীফ। আর নীরব খাটে ওপর মাথা দিয়ে নিচে বসে ঘুমিয়ে আছে। এঁরা সবাই কাল শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎই নীরবের আহি কথা মনে পড়তেই এক প্রকার লাফ মেরে উঠলো সে। তারপর চটজলদি নিজের চোখের চশমাটা ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো সে। আহিকে খুঁজতে হবে যে। এই ভেবে একে একে সবাইকে ডাকলো সে।

শুরুতে আহি চলে যায় তাঁর রুমের ব্যাগের কাছে ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে হবে কি না। আহি ড্রাইভারের টাকা মিটিয়ে আশেপাশে চোখ বুলালো একবার কিন্তু আশেপাশে কোথাও কাউকে দেখতে পাচ্ছে না হঠাৎই নীরবে রুমে উঁকি মারতেই সবাইকে একসাথে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে ভিতরে ঢুকে পড়ে সে। আহি নীরবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই খুশি মনে বললো সে,

‘ ভাইয়া।’

আচমকা আহির কন্ঠ কানে আসতেই পিছন ঘুরে তাকালো নীরব সত্যি সত্যি আহিকে দেখে প্রচন্ড খুশি হয়ে এগিয়ে আসে সে আহির দিকে। তারপর উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো সে,

‘ কোথায় হারিয়ে গেছিলি তুই? , জানিস কাল থেকে কতটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম আমরা।’

নীরবের কথা শুনে হাল্কা হেঁসে বললো আহি,

‘ সরি ভাইয়া আসলে কাল আমি চা বাগানে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম তারপর হুট করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়াতে আমি আর বের হতে পারি নি।’

‘ একটা ফোন তো করতে পারতি আমি না হয় তোকে গিয়ে নিয়ে আসতাম।’

‘ আসলে ভাইয়া আমার ফোনটা নিচে পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাই আর কি?’

‘ তোর টেনশনে সারারাত ঘুমাতে পারে নি আমি।’

নীরবের কথা শুনে আহি হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ সরি ভাইয়া।’

এতটুকু বলে তাঁর পিছনে থাকা খরগোশ ছানাকে নীরবের সামনে এনে বললো,

‘ সারপ্রাইজ ভাইয়া, দেখো তো এটা কেমন আমার নতুন বন্ধু?’

উল্টোদিক ফিরে ছিল নীরব হঠাৎই আহির কথা শুনে তাকালো সে। সামনেই আহির হাতে খরগোশ ছানা দেখে পুরোই চমকে উঠলো নীরব পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,

‘ এটা কোথায় পেলি?’

‘ চা বাগানে এটার জন্যই তো কাল হারিয়ে গিয়েছিলাম।’

‘ কি?’

এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো সবাই। আহির কন্ঠ কানে আসতেই সবার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।
আহিকে দেখে সবাই বেশ খুশি মনে বললো,

‘ আহি কোথায় গিয়েছিলি তুই?’

উওরে আহি কাল রাতে হয়ে যাওয়া সব ঘটনা বলে। শুধু আদ্রিয়ানকে বাদ দিয়ে। ওর কথা শুনে সবাই বেশ রাগ নিয়ে বললো,

‘ তোর কি আর কোনো কাজ ছিল না যে একটা খরগোশ ধরতে গিয়েছিলি। তোর জন্য কাল সারারাত আমাদের ঘুম হয় নি (রিনি)

রিনির কথা শুনে আহি হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ সরি রে আমি বুঝতে পারি নি।’

এতটুকু বলে আহি সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ তোমাদের সবাইকেও সরি বলছি, আমি সত্যি বুঝতে পারি নি এমনটা হবে সরি ভাইয়া,সরি মীরা আপু, সরি সোহান ভাইয়া এভাবে একে একে সবাইকেই সরি বললো আহি। হঠাৎই নীরব বলে উঠল,

‘ হইছে আর কিছু বলতে হবে না এখন সবাই যে যার রুমে গিয়ে রেডি হ আমাদের যেতে হবে।’

উওরে সবাই মাথা নাড়ালেও অথৈ বেশি কথা বললো না। আস্তে আস্তে এগোতে নিলো সে সামনে। প্রচন্ড খারাপ লাগছে তার, চোঝ জ্বলছে সাথে মাথা ঘুরাচ্ছে। কাল রাতে বৃষ্টিতে ভেজার কারনে জ্বর এসেছে তাঁর। এই একটা সমস্যা হলো অথৈর অল্প একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই তাঁর জ্বর চলে আসে। আর এই কারণে বৃষ্টি নামক জিনিসটা খুব একটা পছন্দ করে না অথৈ। সবার পিছনেই ছিল সে হঠাৎই মাথা ঘুরানোটা তীব্রভাবপ বেড়ে যেতেই পড়ে যেতে নিলো সে। তাঁর পিছন দিকেই ছিল নীরব হুট করে অথৈকে পড়ে যেতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ধরলো সে। অথৈও নিজেকে সামলাতে না পেরে ফেললো নীরবকে।’

হুট করে কিছু ঘটার আলাপ পেতেই পিছন ফিরে তাকালো সবাই অথৈকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে সকলেই এগিয়ে আসলো তাঁর দিকে।’

অন্যদিকে অথৈকে ধরতেই এক প্রকার চমকে উঠলো নীরব। কারন অথৈর গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। নীরব কিছুটা চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ ওর তো জ্বর এসেছে?’

এতটুকু বলে নীরব আস্তে আস্তে অথৈকে ধরে বসিয়ে দেয় খাটে। অথৈ বসতেই রিনি গিয়ে ধরলো তাকে তারপর,

‘ তোর জ্বর কি করে আসলো?’

রিনির কথা শুনে স্লোলি কন্ঠে বললো অথৈ,

‘ আসলে কাল রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম না তাই আর কি, আর কাল রাতে আহি টেনশনে তেমন কিছু খাওয়া হয় নি তাই দূর্বল হয়ে পড়ে গেছি বাট ডোন্ট ওয়ারি আমায় নিয়ে টেনশন করার মতো কিছু হয়নি আমি ঠিক আছি।’

অথৈর কথা শুনে বেশ খারাপ লাগলো আহির তার জন্যই অথৈর জ্বর এসেছে আহি অথৈর পাশ দিয়ে বসে মাথা নিচু করে বললো,

‘ আই এম সরি আমার জন্য তোর..

আহি আর কিছু বলার আগেই অথৈ বলে উঠল,

‘ আর কিছু বলতে হবে না আমি ঠিক আছি।’

বলেই উঠতে যেতেই আবারো পড়ে যেতে নিলো সে। সাথে সাথে আহি এসে ধরলো তাঁকে। তারপর বললো,

‘ তুই তো হাঁটতেই পাচ্ছিস না, বাড়ি যাবি কি করে?’

আহির কথা শুনে নীরব বলে উঠল,

‘ আজকে দিনটা কি তবে এখানে থেকে যাবি?’

নীরবের কথা শুনে অথৈ নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ না না তার প্রয়োজন হবে না।’

অথৈর কথা শুনে আহি বলে উঠল,

‘ কিন্তু?’

অথৈই ছলছল চোখে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কোনো কিন্তু নয় কিছু হয় নি আমার। আমায় ধর আর চল, বাড়ি ফিরতে হবে তো নাকি?’

অথৈর কথা শুনে আর জোর করলো না কেউ তারপর আহি রিনি তাকে ধরে চললো তাদের নিজেদের গন্তব্যের দিকে।’

এইবার আর ট্রেন নয় বাসে করে ঢাকাতে ফিরবে তাঁরা।’
অতঃপর সিলেটের শ্রীমঙ্গলের মায়া ত্যাগ করে চললো সবাই।’

বাসে বসে আছে আহি,অথৈ,নীরব,রিনি,মীরা, আর সুজন। বাকি দুজন গেছে একটু বাহিরে।
আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তাদের বাস ছাড়বে। আহির কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে অথৈ। শরীর প্রচন্ড খারাপ তার। যদিও আসার সময় সে ঔষধ খেয়ে ছিল। এরই মধ্যে সেখানে হাতে সাত রঙের চা নিয়ে হাজির সোহান আর শরীফ। এটা আনতেই তাঁরা গিয়েছিল বাহিরে। সিলেট আসলো কিন্তু সাত রঙের চা খেলো বিষয়টা মটেও মানাচ্ছে না। সোহান সবার হাতে এক কাপ করে চা দিলো,অথৈকেও দিলো। তারপর আর কি বাসের মধ্যে বসেই ক্যাফের মজা নিয়ে নিলো তাঁরা।’

কিছুক্ষনের মধ্যে বাস তাদের চলতে শুরু করলো আপন গতিতে। বাস চলতেই যে যার নিজেদের সিটে বসে রইলো চুপচাপ। বেশ মজাই করেছে তাঁরা এই দুজন। সেই স্মৃতি নিয়েই ফিরবে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে। তবে এসবের মধ্যে নীরবের নজর শুধু অথৈর দিকেও মেয়েটা এমনিতেই চুপচাপ কিন্তু এখন যেন বেশি চুপচাপ লাগছে নীরবের। ভালো লাগছে না তাঁর?’

_____

প্লেনের জানালার পাশে বসে আছে আদ্রিয়ান মাথার তাঁর একটাই প্রশ্ন__

‘আহির সাথে কি এমন কানেকশন থাকতে পারে তাঁর যার কাল রাতে ওঁকে জড়িয়ে ধরতেই সব অস্থিরতা চলে যাচ্ছিল তাঁর। আর ভাবলো না আদ্রিয়ান। মাথা কাজ করা একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর, সাথে কেমন অগোছালো লাগছে নিজেকে। এমন সময় তাঁর ভাবনার মাঝখানে একটা মেয়ে এসে বললো,

‘ এক্সকিউজ মি, আপনি কিছু মনে না করলে আপনার উইন্ডো সিটে কি আমি বসতে পারি?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ১৭
_________________

কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান সামনের মেয়েটির দিকে। মেয়েটি তাকে কি বললো ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না আদ্রিয়ান। আসলে সে আহিকে নিয়ে এতটাই ভাবনায় মগ্ন ছিল যে সামনের মেয়েটির কথা কথা ঠিক মতো শুনতে পায় নি। আদ্রিয়ানকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল মেয়েটি,

‘ আপনি হয়তো আমার কথাটা ঠিকভাবে বুঝতে পারেন নি?’

মেয়েটির এবারের কথা শুনে কিছুটা বিষন্নতা নিয়ে মাথা নাড়ালো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে মাথা নাড়াতে দেখে কিছুটা নিরাশ হয়ে বললো মেয়েটি,

‘ আসলে আমার না উইন্ডো সিট ছাড়া বসতে প্রচুর প্রবলেম হয় কিন্তু আজ সবগুলো উইন্ডো সিট ফুল হয়ে গেছে তাই বলছিলাম আপনি কিছু মনে না করলে আপনার সিটে আমি বসতে পারি,আপনার পাশের সিটটাই আমার।’

এরই মধ্যে মাইকে এনাউন্সমেন্ট করা হলো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেন ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে আকাশ পথে। এনাউন্সমেন্ট শুনতেই আরো ঘাবড়ে গেল প্রীতি বেশ অনুরোধের স্বরে বললো সে,

‘ প্লিজ আমায় একটু হেল্প করুন না, আপনি আমার সিটে বসুন আর আমি আপনার সিটে,প্লিজ প্লিজ বসুন না।’

সামনের মেয়েটিকে এত উত্তেজিত হতে দেখে আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেছে তাঁর মতো হয়তো এই মেয়েটারও বিশেষ কোনো প্রবলেম আছে। আদ্রিয়ান বেশ নীরবতার কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ কুল ডাউন মিস। এত উত্তেজিত হওয়ার মতো কিছু হয় নি বসুন আমার সিটে।’

এতটুকু বলে আদ্রিয়ান তাঁর সিট থেকে উঠে বসে পড়লো পাশের সিটে। আদ্রিয়ান বসতেই মেয়েটি খুশি হয়ে বললো,

‘ থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।’

বলেই তাড়াতাড়ি বসে পড়লো সে। তারপর সিট বেল লাগিয়ে হাতে একটা লেবু নিয়ে বসে রইলো আর কিছুক্ষন পর পর বোতল দেখে পানি খেতে লাগলো সে। মেয়েটির এমন কাজ দেখে আদ্রিয়ানের বেশ মজা লাগছিল। আনমনে হেঁসে ফেললো সে। আদ্রিয়ানকে হাসতে দেখে বলে উঠল প্রীতি,

‘ একদম হাসবেন না আমার একটু প্রবলেম আছে তাই আর কি?’

বলেই উল্টোদিক ঘুরে তাকিয়ে রইলো মেয়েটি। মেয়েটির কাজে আদ্রিয়ান আর বেশি কিছু না ভেবে উল্টোদিক ফিরে রইলো সে।’

এরই মধ্যে প্লেন আকাশ পথে চলতে শুরু করলো। প্লেন উপরে উঠতেই ‘প্রীতি’ ঘাবড়ে গিয়ে আদ্রিয়ানের হাত ধরে বসলো। আচমকা কারো হাতের স্পর্শ লাগতেই কিছুটা চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। পাশে তাকাতেই সামনের মেয়েটার চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক আদ্রিয়ান। তবে কিছু বললো না সে, কেন যেন কাল রাতের কথা বার বার মনে পড়ছে তাঁর। সাথে৷ বার বার তাঁর মাথায় বারি মারছে আহির লেখা সেই কথা__

‘ শুনুন বেশি ভয় পাবেন না আপনার মতো রাগী মানুষের সাথে ভয়টা ঠিক মেচ করে না। তবে আপনি মানুষটা রাগী হলেও মন থেকে কিন্তু খুব ভালো।’

আনমনেই হেঁসে উঠল আদ্রিয়ান তারপর তাঁর পাশে থাকা মেয়েটির হাতে দু’বার টাচ করে বললো,

‘ ডোন্ট ওয়ারি কিছু হবে না।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে যেন প্রীতির হাল্কা ভয়টা কমে আসলো। আস্তে আস্তে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো সে। প্লেনে উঠতে ভীষণ ভয় প্রীতির সে চাইনি আজ এই প্লেনে যেতে কিন্তু তার ভাইয়ের জোরাজোরিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই এসেছিল সে।’

বলতে বা বলতেই প্লেন আকাশ পথে ভাসতে শুরু করলো। প্লেন আকাশ পথে ভাসতেই ধীরে ধীরে প্রীতি নিজেকে সামলে নিল তক্ষৎনাত সে যে আদ্রিয়ানের হাত ধরে আছে বিষয়টা মাথায় আসতেই ছিটকে দূরে সরে গেল সে। তারপর মাথা নিচু করে বললো,

‘ সরি এন্ড থ্যাংক ইউ।’

মেয়েটির কথা আর কাজ দেখে হাল্কা হেঁসে বললো আদ্রিয়ান,

‘ ম্যানশন নট।’

বলেই নিজেকে ঠিক করে বসলো সে। প্রীতি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তারপর আর বেশি কিছু না ভেবে মুচকি হেঁসে তাকালো সে বাহিরের দিকে। সাদা মেঘেদের মাঝে যেন ভাসছে উরন্ত ভেলা। আনমনেই হাসলো প্রীতি।’

হঠাৎই আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো সে,

‘ হ্যালো,আমি প্রীতি।’

____

বাসে জানালার পাশে বসে আছে আহি। মাথার ভিতর আদ্রিয়ানের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বার মনে পড়ছে তাঁর। এতদিন মনে মনে কতই না গালাগালি করতো সে আদ্রিয়ানকে কিন্তু কাল বুঝলো সে যতটা খারাপ ভেবেছিল তার একটুও খারাপ সে নয় হয়তো একটু রাগী কিন্তু মানুষটা খুব ভালো। আনমনেই হেঁসে উঠল আহি। হঠাৎই পাশে অথৈ হাল্কা নড়ে উঠতেই নিজের ভাবনা থেকে বের হলো আহি। অথৈর মাথাটা আর একটু নিজের কাঁধের ওপর রেখে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো সে বাহিরের দিকে।’

কয়েক ঘন্টা পর আহিদের বাস এসে থামলো ঢাকা বাসস্ট্যার্টের সামনে। বাস থামতেই একে একে নামতে লাগলো সবাই। সেই মুহূর্তেই আহি ডাকলো অথৈকে পুরো রাস্তাটা সে আহির কাঁধে ঘুমিয়েই কাটালো। হঠাৎই আহির কন্ঠ কানে আসতেই আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকালো অথৈ। তারপর নীরব কন্ঠে বললো সে,

‘ আমরা কি চলে এসেছি?’

‘ হুম।’

অতঃপর সোহান আর রিনি তাদের গাড়ি করে অথৈকে পৌঁছে দিল তাদের বাড়িতে। আর সুজন,মীরা,শরীফ একসাথে গেল। আর আহি নীরব একসাথে। যদিও পুরো রাস্তা জুড়ে নীরব তার নীরবতা নিয়েই কাটিয়ে ছিল। কেন যেন অথৈর জন্য প্রচন্ড খারাপ লাগছে তাঁর।’

____

এয়ারপোর্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান, প্রীতিসহ আরো অনেক লোকজন। কিছুক্ষন আগেই তাদের প্লেন এসে থামলো এয়ারপোর্টের সামনে। পুরো প্লেনের সময়টা জুড়ে প্রীতির বকবক শুনেই কেটে গেল আদ্রিয়ানের। প্রচন্ড বিরক্ত লাগলেও সে কিছু বলতে পারলো না। কেন যেন এই মেয়েটার কাছে নিজেকে রাগী প্রমানিত করতে চাই নি আদ্রিয়ান। এরই মাঝে প্রীতির ফোনটা বেজে উঠল গাড়ি চলে এসেছে তাঁর। প্রীতি তার ফোনটা কেটে আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ আদ্রিয়ান এন্ড নাইস টু মিট ইউ আমাকে যেতে হবে আমার গাড়ি চলে এসেছে।’

উওরে হাল্কা হেঁসে বললো আদ্রিয়ান,

‘ সেইম টু ইউ এন্ড বাই।’

উওরে প্রীতি আর কিছু না বলে মুচকি হেঁসে চলে যায় সে। প্রীতি যেতেই আদ্রিয়ানের ফোনটাও বেজে উঠল সেও কানে ফোনটা তুলে বললো,

‘ হ্যালো।’

___

কলিং বেল বাজতেই আহির মা এসে দরজা খুলে দিল। আহিও ঝাপটে তাঁর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ কেমন আছো মা?’

‘ হুম ভালো তুই?’

‘ হুম ভালো, আমি আমার রুমে গেলাম। আমায় এক ঘন্টার আগে ডাকবে না আমি ঘুমাবো?’

‘ কেন কাল সারারাত ঘুমাস নি নাকি?’

মায়ের কথা শুনে আহির মনে পড়ে গেল কাল রাতের কথা তবে আপাতত সেটা নিয়ে বেশি না ভেবে মায়ের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চলে যায় সে তাঁর রুমে। তারপর ব্যাগটাকে কোনোরকম টেবিলের উপর রেখে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো আহি। এতক্ষণ সবাই তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে এখন সে কোলবালিশকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে। ভেবেই ঘুমিয়ে পড়লো আহি। রৌদ্রময়ী দুপুরে কড়া রোদ্দুরে চিক চিক করছে চারপাশ। সাথে চারদিক দিয়ে বয়ে আসছে অল্প স্বল্প বাতাস। মাথার উপর গোল হয়ে ঘুরছে সিলিং ফ্যান। সাদা জানালার সাদা পর্দাগুলোও উড়ছে বারংবার। আজ আবার যেন জীবন্ত হলো সবকিছু। আহির দুদিনের শুন্যতায় এঁরা যেন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল একদম।’

এসব এর মাঝে আহির রুমের ঘুর ঘুর করছে আহির আনা সেই ছোট্ট খরগোশ ছানা। হয়তো নতুন পরিবেশে নিজেকে সাজাচ্ছে সে।’

____

‘ why she?’

অফিসে নিজের রুমে বসে আনমনেই কথাটা বলে উঠল আদ্রিয়ান। কতক্ষণ আগেই সে এসেছে অফিসে সে আসতেই নিলয় হাতে ল্যাপটপ নিয়ে তার রুমে এসে কিছু বলছিল তাঁকে। কিন্তু আদ্রিয়ান সে তো এখন মগ্ন আহির সাথে কাটানো কাল রাতটাকে নিয়ে।’

হঠাৎই নিজের কথার মাঝখানে আদ্রিয়ানের কথা শুনে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো নিলয়,

‘ কী?’

নিলয়ের কথা শুনে চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সে,

‘ হুম হ্যাঁ কিছু না তুই কি বলছিলি?’

‘ এটাই প্রজেক্ট প্রায় কমপ্লিট আদ্রিয়ান এখন তুই সবটা দেখে নিলেই ভালো হয়।’

‘ ওহ, আমার দেখার কি আছে তুই যখন দেখেছিস সবটা।’

‘ কিন্তু আদ্রিয়ান?’

‘ কোনো কিন্তু নয় শোন আজকের কাজগুলো সব তুই দেখে নে মাত্র জার্নি করে আসলাম ভালো লাগছে না ঠিক। আমি কাল সব দেখে নিবো…!

বলেই পাল্টা নিলয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল সে। আর নিলয় আদ্রিয়ানের কাজে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো,

‘ হঠাৎ কি হলো ওর?’ strange.!’

মাঝখানে কাটলো ২ দিন….

এই দু’দিনের একদিনও ঘুম হয় নি আদ্রিয়ানের। এক প্রশ্নই তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাঁকে ‘ তার সাথে আহির কি কানেকশন থাকতে পারে?’

হসপিটালে মিসেস লিনার চেম্বারে বসে আছে আদ্রিয়ান। আর তার সামনেই মিসেস লিনা বসে বসে আদ্রিয়ানের বলা কথা শুনে বেশ অবাক হলো। কারন আদ্রিয়ান তার আর আহির কথা সব বললো মিসেস লিনাকে। হঠাৎই আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ ওই মেয়েটার সাথে আমার কি কানেকশন থাকতে পারে আন্টি?’ ওকে জড়িয়ে ধরতেই কেন আমার অস্থিরতা চলে যাবে। সেদিন রাতে ওকে জড়িয়ে ধরতেই ‘I was feeling something’ যেন এর আগেও আমি ওকে জড়িয়ে ধরেছি চেনা স্মেল, চেনা স্পর্শ তুমি বুঝতে পারছো তো আমি কি বলতে চাইছি, এটার কি কানেকশন থাকতে পারে বলো না আমায়? আমি কিছু বুঝতে পারছি না..

আদ্রিয়ানের কথা শুনে মিসেস লিনা হেঁসে বললো,

‘ Because you’re in love, Adrian?’

মিসেস লিনার কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,

‘ What?’

হেঁসে ফেললেন মিসেস লিনা।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ১৮
_________________

‘ Are you crazy Aunty?’ তোমার মাথা ঠিক আছে ওই মেয়েটার সাথে আমি।’

প্রচন্ড অবাক আর বিষন্ন ভরা কন্ঠ নিয়ে কথাটা বলে উঠল আদ্রিয়ান মিসেস লিনাকে। আর আদ্রিয়ানের কথা শুনে মিসেস লিনা মুখ চেপে হেঁসে উঠলেন। মিসেস লিনাকে হাসতে দেখে আদ্রিয়ান সিরিয়াসভাবে বলে উঠল,

‘ তুমি আবারো হাসছো আন্টি?’

‘ হাসবো না তো কি করবো তুমি যেভাবে বলছো তাতে তো সেটাই মনে হচ্ছে।’

‘ তুমি আমার বিষয়টা বুঝতে পারছো না আন্টি?’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে মিসেস লিনা তার চেয়ার থেকে উঠে আদ্রিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ তুমি বুঝতে পারছো না আদ্রিয়ান। তুমি তো সেইভাবে কখনো কোনো মেয়ের সংস্পর্শে আসো নি তাই হয়তো প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি হচ্ছে?’

‘ তোমার মাথা খারাপ ওই মেয়েটার সাথে আমার এমন কোনো কিছুই নেই।’

‘ এক কাজ করো আদ্রিয়ান মেয়েটাকে বিয়ে করে নেও আইথিংক মেয়েটাকে বিয়ে করলেই তোমার রাতের সমস্যা কেটে যাবে।’

‘ তুমি আমার সাথে মজা নিচ্ছো আমি আর বিয়ে তাও আবার ওই মেয়েটাকে। আমার এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে, থাকো তুমি এখানে আমি যাচ্ছি?’

‘ আরে আদ্রিয়ান রেগে যাচ্ছো কেন আমি তো মজা করছিলাম তবে এখন কিছু সিরিয়াসভাবে বলছি তুমি যেভাবে বলছো তাতে আমার মনে হয় তোমার প্রবলেমের সমস্যার সমাধানটা ওই মেয়েটাই করতে পারবে।’

‘ কিন্তু সেটা ওই মেয়েটাই কেন,আন্টি?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে মিসেস লিনা বলে উঠল,

‘ এর পিছনে দুটো কারন থাকতে পারে,আদ্রিয়ান।’

আদ্রিয়ান বেশ খানিকটা সিরিয়াসভাবে বলে উঠল,

‘ সেটা কি রকম?’

‘ one you love her or two তোমার ছোটবেলার সেই ভয়ংকর অতীতের সাথে কোনোভাবে মেয়েটা জড়িত।’

‘ এখন আমার কি করা উচিত,তবে?’

‘ আপাতত বেশি কিছু নয় ওর সাথে মেশো কথা বলো দেন জানতে চেষ্টা করো ঠিক কি ভাবে মেয়েটা তোমার সাথে জড়িত।’

‘ But Aunty i don’t like her?’

‘ সেটা তো তুমি অন্য কোনো মেয়েকেও লাইক করো না, তুমি যদি তোমার সমস্যার সমাধান চাও তাহলে ওই মেয়েটার হেল্প তোমার লাগবে আদ্রিয়ান?’ আইথিংক তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো।’

উওরে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ ওকে আন্টি, আজ আমায় যেতে হবে বাকি কথা পড়ে হবে।’

‘ ওকে মাই সান।’

উওরে হাল্কা হেঁসে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আদ্রিয়ান। তারপর আস্তে আস্তে চলে গেল সে। এই মুহূর্তে আদ্রিয়ান কোনো কিছুই ভাবতে পারছে না আর। ‘আহির হেল্প লাগবে তার’– কথা ভাবতেই কেমন লাগছে আদ্রিয়ানের।’

‘ সে এটাই বুঝতে পারছে না আহিই কেন আন্টি কথা যদি ধরি তবে প্রথমটা লাভ এটা হওয়ার চান্স একদমই নেই কারন সে মটেও আহিকে ভালোবাসে না এটা নিতান্তই মনের ভুল আন্টির আর সেকেন্ড তবে কি আহি কোনো ভাবে আমার অতীতের সাথে জড়িত।’– এমন সময় আদ্রিয়ানের ভাবনার মাঝখানে ফোনটা বেজে উঠল তার উপরে নিলয়ের নাম্বার দেখে বলে উঠল সে,

‘ হ্যালো।’

আদ্রিয়ানের হ্যালো শুনে অপরপাশে নিলয় বলে উঠল,

‘ কোথায় তুই?’

‘ কেন কি হয়েছে?’

‘ কি হয়েছে মানে মিস্টার আশিকের সাথে আজ যে আমাদের মিটিং আছে ভুলে গেছিস তুই?’

নিলয়ের কথা শুনে সত্যি বিষম খায় আদ্রিয়ান কারন সে সত্যি ভুলে গিয়েছিল। আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে নিলয় বেশ বুঝতে পেরেছে আদ্রিয়ান সত্যি সত্যি ভুলে গিয়েছিল। নিলয় বেশ খানিকটা বিষন্নটা নিয়ে বলে উঠল আদ্রিয়ানকে,

‘ ইদানীং তোর কি হয়েছে বলতো, শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে আসার পর থেকেই কেমন একটা হয়ে গেছিস তুই?’

‘ আরে কিছুই হয় নি?’

হঠাৎই আদ্রিয়ানের চোখ তার সামনে থাকা বাচ্চাদের ওয়ার্ডের দিকে। কারন তাঁর মনে হলো এইমাত্র সে আহিকে দেখলো। আদ্রিয়ানকে আস্তে আস্তে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।’

আর এদিকে আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল নিলয়,

‘ কি হলো আবার কথা বলছিস না কেন?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান তাঁর ফোনটা ঠিকভাবে কানের পাশে ধরে বললো,

‘ তোর সাথে আমি পরে কথা বলছি,

বলেই ফোনটা কেটে দেয় আদ্রিয়ান আর নিলয় দু’বার হ্যালো হ্যালো করে নিরাশ হয়ে ফোনটা রেখে দেয় তার প্যান্টের পকেটে তারপর হাঁটতে লাগলো সে মিনিং রুমে উদ্দেশ্যে। তবে সে ভেবে নিয়েছে আদ্রিয়ানের সাথে দেখা হলে আজ জেনেই ছাড়বে ‘কি হয়েছে তাঁর?’

এসব ভাবতে ভাবতে চলে যায় নিলয়।’

___

হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান আহির দিকে। কারন তাঁর সামনেই পাঁচ সাত বছরের কিছু ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে বসে হাসি ঠাট্টা করছে আহি। তবে আদ্রিয়ান আশেপাশের বাচ্চাদের দেখে যা বুঝলো এঁরা সবাই সিক। হয়তো আহি এই বাচ্চাদের ওয়ার্ডে পার্ট টাইম জব নিয়েছে। আহি হাতে একটা গল্পের বই নিয়ে পড়ছে আর বাচ্চাগুলো মন দিয়ে তাঁর কথাগুলো শুনছে। মাঝে মধ্যে গল্পের আলোকে হাসাহাসিও করছে তাঁরা। আদ্রিয়ানের বেশ লেগেছে বিষয়টা আনমনেই মুচকি হাসলো সে। হঠাৎই তাঁর পাশে এসে হাতে ব্যান্ডেজ করা একটা ছোট্ট মেয়ে এসে ধরলো আদ্রিয়ানের আঙুল। আচমকা কারো হাতের স্পর্শ পেতেই কিছুটা চমকে উঠলো আদ্রিয়ান পরক্ষনেই পাশ ফিরে একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে দেখে নিচে বসে পড়ে সে। আদ্রিয়ান বসতেই বাচ্চা মেয়েটি বলে উঠল,

‘ তুমি কে?’

আদ্রিয়ান মেয়েটির কথা শুনে মেয়েটির গালে হাত দিয়ে বললো,

‘ আমি আদ্রিয়ান আর তুমি?’

‘ আমি আরুশি।’

‘ ওহ খুব সুন্দর নাম তো তোমার।’

‘ তুমিও কি আমার মতো ব্যাথা পেয়ে এখানে এসেছো?’

উওরে আদ্রিয়ান হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ হুম।’

‘ তাহলে তোমার হাতে এটা নেই কেন (হাতের ব্যান্ডেজটাকে দেখিয়ে)

‘ কারন আমি হাতে ব্যাথা পায় নি।’

‘ তাহলে তুমি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো, জানো পাশের রুমে একটা বড় ডাক্তার আছে আমায় ইয়া বড় বড় ইনজেকশন দেয়।’

‘ সত্যি?’

‘ হুম জানো এই মাত্র আমাকে দিতে চেয়েছিল আমি দৌড়ে পালিয়ে এসেছি।’

মেয়েটির এবারের কথা আদ্রিয়ান একটু উচ্চস্বরে হেঁসে ফেললো। মেয়েটা দেখতে যতটা ছোট কথাগুলো যেন পাকা বুড়ি একজন। আদ্রিয়ানকে হাসতে দেখে মেয়েটি ঘোমড়া মুখ করে বলে উঠল,

‘ তুমি হাসছো কেন?’

‘ তোমার কথাগুলো এত মিষ্টি যে আমার খুব হাসি পাচ্ছে।’

‘ তুমিও না খুব সুন্দর আমায় বিয়ে করবে?’

মেয়েটির এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ানের চোখ বড় বড় হয়ে যায় অবাক হয়ে বলে সে,

‘ কি?’

‘ আমার কথা বুঝো নি?’

আদ্রিয়ান বেশ মজা করে বলে উঠল মেয়েটিকে,

‘ তুমি তো আমার থেকে খুব ছোট,

‘ তাতে কি হয়েছে আমি যখন বড় হয়ে যাবো তখন তোমায় বিয়ে করবো?’

আদ্রিয়ান মেয়েটির কথা শুনে হাসতে হাসতে মেয়েটির গাল টেনে বলে উঠল,

‘ এত পাকা পাকা কথা কোথায় শিখেছো তুমি?’

এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো একজন নার্স সাথে একজন মহিলা হয়তো আরুশির মা। আরুশির মা দৌড়ে এসে বললো আরুশিকে,

‘ তুই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস চল আমার সাথে।’

মায়ের কথা শুনে আরুশি দৌড়ে গিয়ে আদ্রিয়ানের পিছনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ না না আমি যাবো না গেলেই আবার আমায় ব্যাথা দিবে।’

মেয়ের কাজে কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলে উঠল আরুশির মা আদ্রিয়ানকে,

‘ প্লিজ কিছু মনে করবেন না ও আসলে..

আরুশির মা আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ ইট’স ওকে।’

এতটুকু বলে ঘুরে আরুশির দিকে তাকিয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ এত ভয় পেলে চলে জানো তো আমি যখন তোমার মতো ছোট ছিলাম তখন আমিও ইনজেকশনের ভয়ে এখানে ওখানে পালাতাম।’

‘ সত্যি।’

‘ হুম তা নয় তো কি? কিন্তু জানো পরে আমার ব্যাথা জায়গায় আরো অনেক ব্যাথা করতো তারপর আমার মা আমায় বুঝিয়ে সুজিয়ে ইনজেকশন দিয়ে দিতো। আর ইনজেকশন দিলেই আমার ব্যাথা কমে যেত।’

‘ না তুমি মিথ্যে বলছো,

এবার আদ্রিয়ান মেয়েটির কানে কানে বলে উঠল,

‘ তুমি তখন আমায় বলেছিলে না আমি তোমায় বিয়ে করবো কি না, এখন তুমি যদি ইনজেকশন দিয়ে সুস্থ না হও তাহলে আমি তোমায় কি করে বিয়ে করবো।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে মেয়েটি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমি ইনজেকশন দিলে তুমি আমায় বিয়ে করবে?’

‘ অনেকগুলো চকলেট দিবো।’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে মেয়েটি খুশি হয়ে বললো,

‘ সত্যি দিবে।’

‘ হুম তুমি গিয়ে ইনজেকশন দেও আমি তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসছি।’

‘ তুমি সত্যি আনবে চকলেট, প্রমিজ।’

বলেই নিজের ডান হাতের শেষের আঙুলটা এগিয়ে দিল আরুশি আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানও মেয়েটির কাজ দেখে মুচকি হেঁসে নিজের আঙুল লাগিয়ে বললো,

‘ প্রমিজ।’

সাথে সাথে মেয়েটি দৌড়ে তাঁর মায়ের কাছে গিয়ে বলে,

‘ চলো তাড়াতাড়ি আমি ইনজেকশন দিবো।’

মেয়ের কথা শুনে আরুশির মা হাল্কা হাসলো আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে তারপর বললো,

‘ থ্যাংক ইউ!’

উওরে আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ কোনো ব্যাপার না ওকে নিয়ে যান।’

উওরে মহিলাটাও আর কিছু না বলে মেয়েকে কোলে নিয়ে চলে গেল। আরুশি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আনবে কিন্তু?’

উওরে আদ্রিয়ানও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হুম।’

অল্প কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান ছোট্ট শ্বাস ফেলে একপলক তাকালো আহির রুমে দিকে। উল্টোদিক ফিরেই আগের মতো হাসাহাসি আর গল্প পড়তে ব্যস্ত আহি। আদ্রিয়ান আর বেশি কিছু না ভেবে বেরিয়ে যায় হসপিটাল থেকে।’

আদ্রিয়ান যেতেই আহি তার পড়া বন্ধ করে দিয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের যাওয়ার পানে। অনেক আগে থেকেই আহি দেখেছে আদ্রিয়ানকে যখন আদ্রিয়ান বাচ্চা মেয়েটার সাথে কথা বলছিল সাথে এতক্ষণ আদ্রিয়ানের কাজগুলোও দেখেছে সে। আহি ভেবেছে আদ্রিয়ান হয়তো তাকে দেখে রেগে যাবে তাই সে চায় নি আর আদ্রিয়ানের দিকে। তবে আদ্রিয়ানের কাজ দেখে যেন সে মুগ্ধ প্রায়।’

কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরো হসপিটালের বাচ্চাদের জন্য চকলেট পাঠালো আদ্রিয়ান। সাথে ওই মেয়েটাকে আলাদাভাবে কিছু চকলেটের প্যাকেট দিয়ে আবারো বেরিয়ে যায় সে। কারন নিলয় তাকে আবারো ফোন করে বলেছে সে যেন দয়া করে হলেও অফিসে আসে। তাই তাকেও ইচ্ছে না থাকা সত্বেও যেতে হচ্ছে?’ পুরোটা সময় আহি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে আদ্রিয়ানকে যেটা আদ্রিয়ান খেয়াল করে নি।’

____

লাইব্রেরিতে বসে আছে অথৈ। আজ প্রায় দু’দিন পর ভার্সিটি এসেছে সে। এখনও হাল্কা হাল্কা জ্বর আছে তাঁর। এমন সময় সেখানে আসলো নীরব…
!
!
!
!
!
#চলবে…..