বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-১৯+২০+২১

0
256

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ১৯+২০+২১
_________________

হুট করেই নীরবকে নিজের দিকে আসতে দেখে কিছুটা ভড়কে যায় অথৈ। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের চশমাটা ঠিক করে চুপচাপ চেয়ারে বসে রইলো সে। নীরব আস্তে আস্তে এদিক সেদিক তাকিয়ে এগিয়ে আসছে অথৈর দিকে। তবে সে বুঝতে পারছে না অথৈর সামনে গিয়ে কি বলবে তাঁকে। তবে অথৈর সাথে কথা না বলতে পারলে তাঁর ভালো লাগবে না। এই দু’দিন নীরবের অথৈর চিন্তায় ঘুম আসে নি তেমন। জোরে নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে নীরব অথৈর দিকে। আর এদিকে অথৈ মুখে কলম নিয়ে বসে বসে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে কারন বেশ কিছুক্ষন যাবৎই একটা বিষয় নিয়ে বিপাকে আছে সে। কিছুতেই যেন এই অংকটার হিসাব তার মিলছে না। কিছুক্ষন বই আর কিছুক্ষন খাতার দিকে তাকাচ্ছে সে। এরই মধ্যে সেখানে হাজির হলো নীরব। নীরবকে দেখে অথৈ তাকালো নীরবের দিকে। অথৈকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে নীরব কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে বলে উঠল,

‘ তুমি কেমন আছো এখন আইমিন পুরোপুরি সুস্থ তো,জ্বর সেরেছে তোমার?’

নীরবের কথা শুনে অথৈ মুঁচকি হেঁসে বললো,

‘ জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’

‘ ওহ তা আহি কোথায় আমি আসলে ওকে খুজতেই এসেছিলাম।’

‘ ওহ কিন্তু আহি তো এখানে নেই। ও তো এখনও ভার্সিটির আসে নি?’

‘ ওহ আর রিনি?’

‘ জ্বী আসছে কিন্তু এখানে নেই একটু বাহিরে গেছে।’

‘ ওহ।’

‘ হুম।’

এতটুকু বলে অথৈ আবারও মনোযোগ দিলো পড়ার দিকে। কিন্তু এবারও ব্যর্থ সে কিছুতেই যেন জিনিসটা মাথায় আসছে না তাঁর। নিজের কাজে নিজেই চরম অবাক অথৈ যেখানে এতদিন এত বড় বড় সমস্যার সমাধান করে সেখানে আজ সামান্য একটা জিনিসের সমাধান করতে পারছে না। অথৈই তার চোখের চশমাটা আরেকবার ঠিক করে তাকিয়ে রইলো নিচের দিকে। বেশ বিরক্ত লাগছে তাঁর। অথৈকে দেখে কেমন একটু লাগতেই নীরব বলে উঠল,

‘ any problem?’

নীরবের কথা শুনে আনমনেই বলে উঠল অথৈ,

‘ হুম।’

‘ কি হয়েছে?’

‘ এই জিনিসটা কিছুতেই আমার মাথায় আসছে না?’

অথৈর কথা শুনে নীরব একটুখানি উঁকি মেরে দেখলো অথৈর খাতা আর বইটা তারপর বললো সে,

‘ এটা তো একদম সহজ।’

নীরবের কথা শুনে অথৈ নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কিভাবে?’

এরপর নীরব অথৈর দিকে তাকিয়ে জিনিসটা বোঝাতে শুরু করলো। নীরবের কথা শুনে অথৈ বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো,

‘ আরে এটা তো আমিও জানি ইস মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিল থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।’

‘ ইট’স ওকে আর কোনো প্রবলেম থাকলে বলতে পারো আমি সল্ভ করার চেষ্টা করবো।’

নীরবের কথা শুনে অথৈ কিছুক্ষন ভেবে বললো,

‘ হুম আরেকটা আছে,

অথৈর কথা শুনে বেশ খানিকটা খুশি হয়ে অথৈর পাশের চেয়ারে বসে বললো নীরব,

‘ কই দেখি?’

নীরবের কথা শুনে অথৈও তাঁর ব্যাগ থেকে কিছু বের করে দেখালো নীরবকে। নীরব কিছুক্ষন বইটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ তোমার খাতা দেখি?’

নীরবের কথা শুনে অথৈও তাঁর খাতাটা এগিয়ে দিল নীরবকে। নীরবও খাতাটা নিয়ে নিজের চোখের চশমাটা ঠিক করে কিছু লিখতে শুরু করলো। আর অথৈই শুধু তাকিয়ে রইলো নীরবের লেখার দিকে। নীরব কিছুক্ষনের মধ্যে তার লেখা শেষ করে বুঝাতে লাগলো অথৈকে আর অথৈও মন দিয়ে নীরবের মুখের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগলো সবটা।’

কে জানে হয়তো এখান থেকেই শুরু হবে নতুন কোনো অনুভূতির সূচনা।’

____

বিকেলে অফিস সেরে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে আদ্রিয়ান। কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানে না মাথায় তাঁর একটাই প্রশ্ন আহির সাথে তাঁর কি কানেকশন আছে বা কি কানেকশন থাকতে পারে?’— এই প্রশ্নের উত্তর যতক্ষণ না সে পাবে ততক্ষণ তাঁর শান্তি মিলবে না। আদ্রিয়ান কথাগুলো ভাবছে আর কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে ড্রাইভ করছে হঠাৎই তাঁর গাড়ির সামনে একটা ছোট্ট বাচ্চা ছেলে আসতেই জোরে ব্রেক কষলো আদ্রিয়ান। একটুর জন্য ছেলেটাকে মেরে দেয় নি সে। আদ্রিয়ান চটজলদি গায়ের সিট ব্লেটটা খুলে দৌড়ে বেড়িয়ে আসলো ছেলেটার কাছে তারপর বললো,

‘ ঠিক আছো তুমি এইভাবে কেউ গাড়ির সামনে আসে।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে ছেলেটি চুপ করে রইলো হয়তো ভয় পেয়েছে খুব। এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো একজন মহিলা হয়তো ছেলেটির মা। উনি তাঁর বাচ্চাকে ধরে বলে উঠল,

‘ কতবার বলেছি এভাবে রাস্তার মাঝখানে দৌড়াবে না, আজ একবার তোমার বাবা আসুক।’

বলেই বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটির মা। আদ্রিয়ান শুধু তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে। মহিলাটার কাজ দেখে আদ্রিয়ানের তার মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। তাঁর মাও এমনভাবে কিছুক্ষন বকে বুকে জড়িয়ে ধরতো। ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো সে। হঠাৎই সামনের মহিলাটির চোখ যায় আদ্রিয়ানের দিকে। সে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি ঠিক টাইমে ব্রেক না করলে হয়তো..

‘ ইট’স ওকে কিন্তু পরের বার থেকে দেখে রাখবেন।’

‘ হুম।’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে চলে যায় তাঁর গাড়ির কাছে তারপর গাড়ির ভিতর ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ডান দিকে চলে যায় সে। কিছুদূর এগোতেই হঠাৎই আদ্রিয়ানের চোখ যায় একটা খেলার মাঠের দিকে সাথে সাথে আবারো জোরে ব্রেক কষলো আদ্রিয়ান। এই খেলার মাঠ থেকেই শুরু হয়েছিল তার দুঃস্বপ্নের সূচনা। আদ্রিয়ান আনমনেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটা শুরু করলো মাঠটার দিকে। আশেপাশে অল্প স্বল্প বাচ্চারা খেলাধুলো করছে। আদ্রিয়ান আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় মাঠের ভিতরে। কিছুদূর এগোতেই আদ্রিয়ানের চোখ যায় একটা বেঞ্চের দিকে। সবকিছু যেন আগের মতোই আছে, আদ্রিয়ান নিশ্চুপেই গিয়ে বসলো বেঞ্চটাতে সাথে সাথে মনে পরলো তার সেদিনের কথা যেদিন রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। সেদিন রাগ করে আদ্রিয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে এইখানে এসেছিল সময়টা ছিল ঠিক দুপুরবেলা। আশেপাশে তেমন কেউ ছিল না তখন আদ্রিয়ান কাঁদতে কাঁদতে এসে বসেছিল এই বেঞ্চটাতে। পুরো জায়গাটাই ছিল একদম নিরিবিলি দুপুরের কড়া রোদ্দুর এসে চারপাশ ভরা ছিল তখন। শুধুমাত্র এই বেঞ্চটাতে একটু ছায়া ছিল তাও একটা গাছের জন্য। গাছের কথা মাথায় আসতেই আদ্রিয়ান তাকালো তার ঠিক বামদিকে। সাথে সাথেই দেখলো সে ইয়া বড় বিশাল একটা গাছ। সেখানেই সেই জায়গায় গাছটা আজও উপস্থিত। আজও ছাঁয়া দিয়ে আছে সে আদ্রিয়ানকে। যদিও খুব বেশি রোদ্দুর নেই এখন। চারপাশের বাতাসে গাছের পাতাগুলো নড়ছে অল্প। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান।’

সেদিন আদ্রিয়ান যখন কাঁদছিল এই বেঞ্চটাতে বসে তখন হুট করেই একটা লোক আসে তাঁর কাছে তাকে কিছু করার বা বলার সুযোগ না দিয়েই পিছন থেকে রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে আদ্রিয়ানের। সাথে সাথে আদ্রিয়ান ভয় পেয়ে যায় আর কিছুক্ষনের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে ডলে পড়ে সে। পুরনো কথাগুলো মাথায় আসতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আদ্রিয়ান একরাশ অস্থিরতা এসে ভর করলো তাঁকে। সাথে পুরনো অতীতগুলো যেন আবারো নাড়া দিলো তাঁকে। এমন সময় হুট করেই তাঁর গায়ের ওপর একটা ফুটবল এসে পড়াতে কিছুটা চমকে উঠে ধরে ফেললো সে বলটা। সাথে সাথে দুটো বাচ্চা ছেলে তাঁর কাছে দৌড়ে এসে বললো,

‘ ভাইয়া বল দিবে আমাদের আসলে,,

বাচ্চাগুলো আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান বলটা ছুঁড়ে মারে তাদের দিকে। তারপর বলে,

‘ আর কিছু বলতে হবে না খেলো তোমরা।’

উওরে বাচ্চাদুুটো খুশি হয়ে বলটা নিয়ে দৌড়ে চলে যায়।’

এরই মধ্যে আদ্রিয়ানের চোখ যায় তাঁর থেকে বেশখানিকটা দূরে থাকা একটা আলিশান বাড়ির দিকে। আদ্রিয়ান আনমনেই পা বাঁড়ায় সেদিকে কেন যেন পুরো জিনিসগুলোকে আবারো মনে করতে চাইছে সে। যে দুঃস্বপ্ন তাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না সেটাকেই আবার জাগ্রত করতে চাইছে আদ্রিয়ান। এমনটা নয় সে সব ভুলে গেছে। তার আবছা আবছা করে সবকিছুই মনে আছে। আদ্রিয়ান আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যায় সেই ভাঙা চোঁড়া বাড়িটার দিকে। একদমই পুরনো একটা বাড়ি খুব একটা কেউ এদিকে আসে না। কিছুটা ভূতুরে টাইপের দেখতে আর কি।’

আদ্রিয়ান আশেপাশে একবার তাকিয়ে আস্তে আস্তে ঢুকে পরলো বাড়িটার ভিতর। বাড়িটার পাশেই ছিল মস্ত বড় একটা বটগাছ। এছাড়াও বাড়ির চারপাশ দিয়ে ঘিরে আছে ছোট বড় অসংখ্য গাছপালা। গাছেদের পাতাগুলোতে পুরো ভরে গেছে আশপাশ। বাড়িটার সিঁড়িতেই জমে আছো পাতা। পুরো জায়গাটা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গাছের পাতারা কতেক পঁচে গেছে আর কতেক পঁচে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আদ্রিয়ান ভিতরে ঢুকে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলো সামনে হঠাৎই একটা জায়গা এসে থেমে গেল সে। এইখানেই একটা দেয়ালের পাশে বেঁধে রাখা হয়েছিল তাঁকে। আদ্রিয়ানের যখন জ্ঞান ফিরে তখন তাঁর হাত পা বাঁধা অবস্থায় ওইখানটাই বসিয়ে রাখা হয়েছিল। সে কতক্ষণ আগে থেকে ওখানে ছিল জানা নেই তাঁর।’

আদ্রিয়ান কিছুক্ষন বসে থাকতেই সেখানে আসলো একজন লোক, লোকটিকে চেনা না আদ্রিয়ান। হাতে পিস্তল নিয়ে এগিয়ে আসছিল সে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান শুধু তাকিয়ে ছিল লোকটার দিকে ভয়ানক এক চেহারা, মুখ ভর্তি দাঁড়ি, চুলগুলো ছিল উষ্ক শুষ্ক। পড়নে ছিল ব্লাক জিন্স সাথে গ্রীন কালার একটা জামা। লোকটি এসেই আদ্রিয়ানের মুখের ভিতর পিস্তলটা ঢুকিয়ে বলে ছিল,

‘ কি ভাবছিস তো তোকে এখানে কেন এনেছি, আসলে তোকে আনার কারন হলো তোর বাবা,বুঝলি তোর বাবার অনেক টাকা। ভাবছি তোর বাবার কাছ থেকে তোর বিনিময়ে সেই টাকার থেকে কিছু টাকা নিয়ে নিবো। ফোনও করেছি হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যে নিয়েও আসবে। এবার বুঝতে পারবে তোর বাবা অফিসে বসে সবার সামনে আমার গালে থাপ্পড় দেওয়ার ফল কি হয়, টাকা যাবে কিন্তু তোকে পাবে না?’

এতটুকু বলে উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো লোকটি। লোকটির হাসি শুনে সেই ছোট্ট আদ্রিয়ান প্রচন্ড ভয় পায় সেদিন। আর সেই মুহূর্তেই একটা ছোট্ট কুকুর ঘেউঘেউ করতে করতে এগিয়ে আসলো তাঁদের দিকে। কুকুরটার ঘেউঘেউ শুনে আদ্রিয়ান আরো ভয় পায় সেদিন। আর লোকটা আদ্রিয়ানের মুখ থেকে পিস্তলটা সরিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। কুকুরটাকে ঘেউঘেউ করতে দেখে প্রচন্ড রাগ হয় লোকটির সাথে সাথে গুলি মেরে কুকুরটাকে মে*রে ফেলে সে। আর সেই কুকুরের রক্তই সিটকে যায় এদিক সেদিক। চারপাশের ফ্লোর জুড়ে রক্তের ছাপ ছাপ পড়ে যায়। এই সবকিছুই হয়েছিল আদ্রিয়ানের চোখের সামনে কুকুরটা নিচে পড়ে তার দিকে তাকিয়েই থরথর করে কাঁপতে ছিল। নিথর দেহটা কিছুক্ষন ছটফট করতে করতে ওখানেই নিশ্চুপ হয়ে গেল। – চোখ বন্ধ করে এসব ভাবতেই একরাশ অস্থিরতা এসে ভর করলো আদ্রিয়ানকে। চটজলদি চোখ খুললো আদ্রিয়ান। আশেপাশে তাকাতেই আবারো সেইসব কিছু ভেসে আসলো তাঁর সামনে সেই কুকুরের ডাক, রক্তের ছাপ, সাথে লোকটার হাসি, ছটফট করা কুকুরের নিথর দেহ। আদ্রিয়ানের মাথা ভনভন করছে সাথে একরাশ অস্থিরতা এসে আঁকড়ে ধরেছে তাঁকে। আদ্রিয়ান তাঁর মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরলো কিন্তু তাতেও যেন শান্তি মিলছে না তাঁর। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলো সে। এমন সময় সেখানে দৌড়ে আসলো কেউ পরনে তারপর গোলাপি কালার টপস আর এস কালার জিন্স চুলগুলো ঝুঁটি করা, মুখটা বোঝা যাচ্ছে না। মেয়েটি দৌড়ে এসে ধরলো আদ্রিয়ানকে তারপর বললো,

‘ আরে আরে কি হলো আপনার ঠিক আছেন আপনি, আবারো ভয় পাচ্ছেন নাকি?’

হঠাৎই আদ্রিয়ানের মনে পড়লো সেদিনও এমন ভাবেই একজন ছোট্ট মেয়ে এগিয়ে আসছিল তাঁর দিকে তবে সে একা ছিল না তাঁর পিছনে ছিল কিছু পুলিশ। মেয়েটির পরনে ছিল গোলাপি রঙের ফ্রক। মেয়েটি দৌড়ে আসলো তাঁর দিকে তারপর বললো,

‘ ভয় পেও না আমি আছি।’

মেয়েটির কথা শুনলেও নিজেকে সামলে নিতে পারছিল না আদ্রিয়ান সে ছিঁটকে পিছিয়ে যেতে লাগছিল মেয়েটির থেকে। মেয়েটি আদ্রিয়ানের কাজে আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ আরে ভয় পাচ্ছো কেন আমি তোমায় বাঁচাতে এসেছি? ওই দেখো পুলিশ মামারা খারাপ লোকটা নিয়ে যাচ্ছে।’

কিন্তু তারপরও যেন আদ্রিয়ানের ভয় কমছিল না। মেয়েটি আদ্রিয়ানের পাশে বসে বললো,

‘ আমায় জড়িয়ে ধরো দেখবে তোমার ভয় কমে যাবে?’

মেয়েটির কথা শুনে মেয়েটির দিকে তাকালো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান তাকাতেই মেয়েটি আবারো বলে উঠল,

‘ আমি যখন খুব ভয় পাই তখন আমার আম্মুকে জড়িয়ে ধরি, তোমার আম্মু তো এখানে নেই তাই আমায় জড়িয়ে ধরো।’

আদ্রিয়ান ছলছল তাকিয়ে রইলো শুধু মেয়েটার দিকে। তারপর কেন যেন তারও ইচ্ছে করছিল মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরতে। সেদিন সেই ছোট্ট আদ্রিয়ান সেই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটার বুকে মাথা দিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার যখন ঘুম ভাঙে তখন সে তার রুমের শুয়ে আছে,পরে বাহিরে বের হতেই আর ভাবতো পারলো না না আদ্রিয়ান।’

পর পর সবকিছু মনে পড়তেই আদ্রিয়ান আস্তে আস্তে তাঁর চোখ খুললো সামনেই আহিকে দেখে অবাক চোখে শুধু তাকিয়ে রইলো সে। আর এদিকে আহি আবারো বলে উঠল,

‘ কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন কি হলো আপনার আর এখানে কি করছেন?’

উওরে আদ্রিয়ান কিছু বলতে পারলো না আহির বুকে মাথা রেখেই চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। আদ্রিয়ানের কাজ দেখে আহি ঘাবড়ে গিয়ে বললো,

‘ কি হলো আপনার?’

কিন্তু উওর যেন মিললো না আর।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২০
_________________

আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে আছে আহি। কি করবে না করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে? আহি বুঝতে পারছে না হুট করে কি হলো আদ্রিয়ানের যে এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেল। হঠাৎই আহির মাথায় বুদ্ধি আসলো সাথে সাথে সে খুঁজতে লাগলো আদ্রিয়ানের ফোন। তারপর অনেক খুঁজে আহি আদ্রিয়ানের পকেট থেকে তাঁর ফোনটা বের করলো কিন্তু আদ্রিয়ানের ফোনের পাসওয়ার্ড তো জানে না ভেবেই নিরাশ হয়ে পড়লো সে। পরক্ষণেই ফিংগার পিনের কথা মনে পরতেই আহি আদ্রিয়ানের আঙুল ছোঁয়ালো মোবাইলের পিছনে সাথে সাথে মোবাইল খুলে গেল। মোবাইল খুলতেই যেন সস্থির নিশ্বাস ফেললো আহি। তারপর খুজতে লাগলো সে নিলয়ের নাম্বার। কিছুক্ষনের মধ্যে পেয়ে গেল প্রথম কল না ধরলেও দ্বিতীয় কল ধরলো নিলয়। নিলয় ফোন তুলতেই বললো আহি,

‘ হ্যালো…

‘ হুম বল আদ্রিয়ান?’

‘ আমি আদ্রিয়ান নই ভাইয়া।

এতটুকু বলে সবকিছু খুলে বললো সে নিলয়কে।
আহির কথা শুনে অপরপাশে নিলয় চিন্তিত মাখা কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,

‘ টেনশন নিও না আমি এক্ষুনি আসছি।’

‘ ঠিক আছে ভাইয়া।’

বলেই ফোন কেটে দেয় আহি। তারপর অপেক্ষা করে সে নিলয়ের জন্য। সময়টা প্রায় তখন ৫ টা ছাড়িয়ে গেছে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। জায়গাটা ভীষনই নিরিবিলি, এতটাই নিরিবিলি যে এখানে মেরে রেখে গেলেও কেউ খুঁজতে পাবে না বা খুজতে আসবে না। সাধারণত আহির এখানে আসার একমাত্র কারন হলো আহির খরগোশ যেটা বর্তমানে তাঁর থেকে কিছুটা দূরে চুপচাপ বসে আছে।’

কতক্ষণ আগেই খরগোশ ছানাকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়ে ছিল আহি। হঠাৎই খরগোশ ছানা আহির কোল থেকে লাফ মেরে নেমে চলে আসে এখানে। ভিতরে ঢুকতেই সামনে আদ্রিয়ানকে মাথা চেপে ধরে দাঁড়াতে দেখে সে দৌড়ে আসে এখানে। সে বুঝে উঠতে পারে না এই খরগোশ ছানার সাথে কি আদ্রিয়ানের কোনো কানেকশন আছে যখনই দৌড়ায় তখনই আদ্রিয়ান সামনে আসে। আহি এইবার পুরো জায়গাটার দিকে ঘুরে তাকালো। পুরো জায়গাটা দেখতেই তাঁর মনে পড়লো তার প্রিয় কুকুর ছানাটা এখানে মারা গিয়েছিল। তবে কুকুর ছানাটার জন্য যতটা না খারাপ লাগছিল তাঁর থেকেও বেশি ভালো লেগেছিল সে একটা বাচ্চা ছেলেকে একটা বাজে লোকের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিল। পুরোপুরি মনে নেই আহির তখন খুব ছোট ছিল কি না। এই রকমই এক দুপুর বেলা সে তাঁর কুকুর ছানাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল হঠাৎই কুকুর ছানাটা দৌড়ে চলে আসে এই বাড়িটার ভিতর। আহিও ছুটতে ছুটতে চলে আসে এখানে হঠাৎই ভিতরে কারো কন্ঠ কানে আসতেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে সে একটা বাচ্চা ছেলের মুখে একটা লোক পিস্তল ঢুকিয়ে কিছু বলছে। সাথে সাথে আহি দৌড়ে গিয়ে রাস্তার একটা লোককে টেনে দেখায়। লোকটি বিষয়টা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে পুলিশকে। কিছুক্ষনের মধ্যে পুুলিশও চলে কিন্তু আহি তাঁর কুকুর ছানাকে বাঁচাতে পারে নি কারণ ওটা হুট করেই দৌড়ে ভিতরে গিয়ে ঘেউঘেউ করা শুরু করে দেয়। ব্যস এরপর আর মনে নেই আহির। এগুলোও মনে থাকতো না যদি না সেদিন মায়ের মুখে শুনতো। কুকুর ছানাকে খুব ভালো বাসতো আহি।’– কথাগুলো ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসলো আহির আজও সেই কুকুরটার জন্য কষ্ট হয় তাঁর। এমন সময় আহির ভাবনার মাঝখানে সেখানে উপস্থিত হলো নিলয়। এক প্রকার দৌড়ে ভিতরে ঢুকলো সে। তারপর আহির সামনে বসে বললো সে,

‘ এসব কি করে হলো?’

‘ আমি জানি না উনি হুট করেই এখানে অজ্ঞান হয়ে গেছেন।’

আহির কথা শুনে আর কিছু না বলে নিলয় তাঁর হাতে করে আনা বোতলটা খুঁলে আদ্রিয়ানের মুখে পানির ছিঁটে দিতে লাগলো। পর পর দু’বার পানির ছিঁটে দিতেও আদ্রিয়ানের হুস না আসলেও তিনবারের বার পানির ছিঁটে দিতেই চোখ খুলে তাকালো সে।’

মিট মিট চোখে তাকালো আদ্রিয়ান আশেপাশে। পরক্ষণেই সামনে নিলয় আর আহিকে দেখে চটজলদি উঠে বসলো সে। এখানে ঠিক কি হয়েছিল সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিল সে। নিলয় আদ্রিয়ানকে উঠতে দেখে বলে উঠল,

‘ কি হয়েছিল তোর আর এখানে কি করছিস তুই? তুই তো বলেছিলি বাড়ি যাবি তবে এখানে কেন আসলি?’

নিলয়ের কথা শুনে পর পর সবকিছু মনে করতে লাগলো আদ্রিয়ান। সব মনে পড়তেই আদ্রিয়ান এক পলক আহির দিকে তেমন কিছু না বলে শুধু বলে উঠল নিলয়কে,

‘ I want to go home, Nilay?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয়ও একবার আহির দিকে তাকিয়ে বেশি জোরাজোরি না করে বললো,

‘ okk’

____

গাড়ির পিছন সিটে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আদ্রিয়ান। মাথা ভন ভন করছে তার,সাথে কয়েক মুহূর্ত আগে কি কি ঘটলো সেগুলোও ঘুরপাক খাচ্ছে চারপাশে। আদ্রিয়ানের মনে পড়েছে তাঁর অতীতের সাথে একটা মেয়েও ছিল যে তাকে সেদিন বাঁচিয়ে ছিল সাথে তাঁর ভয় কমানোর জন্য তাকে জড়িয়ে ধরতে বলছিল। হুট করেই আদ্রিয়ানের মাথায় একটা কথা এসে মাথা বারি মারলো খুব,

‘ তবে কি সেই বাচ্চা মেয়েটা আহি ছিল?’

কথাটা মাথায় আসতেই চোখ খুলে ফেললো আদ্রিয়ান। কেমন যেন এলেমেলো লাগছে সব কিছু।’

অন্যদিকে,

ভাঙা চোড়া বাড়িটার দরজার সামনের চার সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে আছে আহি আর তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে নিলয়। হঠাৎই নিলয় বলে উঠল,

‘ তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তুমি না থাকলে হয়তো…

নিলয়ের পুরো কথা শেষ করার আগেই বলে উঠল আহি,

‘ ইট’স ওকে ভাইয়া আর ধন্যবাদ আমায় নয়,

এতটুকু বলে নিচ থেকে তাঁর খরগোশ ছানাকে কোলে তুলে নিয়ে নিলয়কে দেখিয়ে বললো,

‘ ওকে দিন ওর জন্যই আমি এখানে এসেছিলাম ও যদি দৌড়ে এখানে না আসতো তাহলে হয়তো আমিও এখানে আসতাম না। আসলে এইখানে তেমন কেউ আসে না, কে জানে উনি কেন আসছিলেন। যাগ গে বাদ দিন, আমায় যেতে হবে ভাইয়া সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এরপর বেশি দেরি করলে মা বকবে।’

বলেই খরগোশ ছানাকে কোলে নিয়েই দৌড়ে চলে যেতে নিল আহি। আহিকে যেতে দেখে বলে উঠল নিলয়,

‘ আমি তোমায় গাড়ি করে পৌঁছে দেই?’

‘ ইট’স ওকে আমি যেতে পারবো আর এখান থেকে আমাদের বাসা খুব বেশি দূরে নয় তাই টেনশন নিবেন না আমি যেতে পারবো।’

বলেই চলে যায় আহি। অবশ্য যাওয়ার আগে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিল সে। আদ্রিয়ান তখন অন্যদিক তাকিয়ে ছিল। অতঃপর আদ্রিয়ানের গাড়ি টপকে সামনের দিক দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল আহি। আর অন্যদিকে নিলয় একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে যায় আদ্রিয়ানের কাছে। তারপর বলে,

‘ তাহলে যাওয়া যাক?’

বলেই গাড়ি স্ট্যার্ট দেয় নিলয়। নিলয় গাড়ি স্ট্যার্ট দিতেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ আমার গাড়িটা যে ওখানে আছে?’

‘ চিন্তা করিস না ওটা তোকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিবো।’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু বললো না। আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে নিলয়ও আর কিছু না বলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল নিজেদের গন্তব্যের দিকে।’

_____

খরগোশ ছানাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল আহি তার বাড়ির সামনে। আহি এগোচ্ছে আর বলছে,

‘ আচ্ছা তোর কি ওই রাগী মানুষটাকে খুব ভালো লেগেছে যাঁর কারনে ছুটে ছুটে চলে যাস ওনার কাছে। তবে যাই বল আজকে ওনার সামনে গিয়ে ভালোই হলো।’

বলেই মুচকি হেঁসে চুমু কাটলো আহি তার খরগোশ ছানাকে। এমন সময় বাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে আসছিল নীরব। চোখে কালো চশমা, কালো জিন্স সাথে নেভি ব্লু কালারের টিশার্ট। হুট করে নীরবকে দেখে কিছুটা চমকে উঠলো আহি পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো সে। আর এদিকে নীরবও আহিকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

‘ তুই এই সন্ধ্যা বেলা কোথা থেকে ফিরছিস আর সারাদিন থাকিস কই তোকে তো দেখাই যায় না?’

নীরবের কথা শুনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আহি তারপর বললো,

‘ আসলে হয়েছে কি ভাইয়া একটা হসপিটালে বাচ্চাদের দেখা শোনা করার পার্ট টাইম জব নিয়েছি তাই আর কি?’

‘ ওহ।’

‘ হুম তা তুমি কোথায় যাচ্ছো?’

‘ একটু সামনে কিছু কাজ আছে।’

‘ ওহ যাও তবে পড়ে কথা হবে।’

‘ হুম তুইও যা?’

‘ জ্বী ভাইয়া।’

উওরে নীরবও আর কিছু না বলে এগিয়ে গেল সামনে। আর আহি কিছুক্ষন নীরবের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে খুশি মনে নাচতে নাচতে চলে গেল ভিতরে।’

____

সোফার উপর বসে আছে আদ্রিয়ান। কিছুক্ষন আগেই ঢুকেছে তাঁরা বাড়িতে। নিলয় একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে সামনের টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এনে আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ এটা খা?’

উওরে আদ্রিয়ানও আর কিছু না বলে চটজলদি পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে নিলো সবটা। আদ্রিয়ানের পানি খাওয়া শেষ হতেই নিলয় পানির গ্লাসটা আদ্রিয়ানের হাত থেকে নিয়ে রাখলো টেবিলের উপর তারপর আদ্রিয়ানের পাশে বসে বললো,

‘ এখন বল তো কি হয়েছিল তোর?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান তাকালো নিলয়ের দিকে তবে কিছু বললো না। আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে কিছুটা নিরাশ হয়ে বলে উঠল নিলয়,

‘ কি হলো চুপ করে আছিস কেন এমনিতেও ইদানীং দেখছি তোকে তুই ঠিক নেই। ঠিক মতো কাজে মন দিচ্ছিস না,শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে আসার পর থেকেই কেমন একটা হয়ে গেছিস তুই, বল আমায় কি হয়েছে তোর?’

নিলয়ের এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ান আর চুপ থাকতে পারলো না পর পর সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলো সে নিলয়কে। শ্রীমঙ্গলের সেই বৃষ্টি ভেজা রাতে আহির তার কাছে আসা, সাথে মাঝরাতে তাকে জড়িয়ে ধরতেই চেনা চেনা স্পর্শের অনুভূতি পাওয়া, তারপর মিসেস লিনাকে সব খুলে বলা আর লাস্ট কিছুক্ষন আগে হয়ে যাওয়া সব ঘটনাই খুলে বললো সে নিলয়কে। নিলয় তো সব শুনে চরম অবাক। নিলয় অবাক হয়েই বললো আদ্রিয়ানকে,

‘ তাঁর মানে তোর অতীতের সাথে আহির কানেকশন আছে ও মাই গট এটা তো একদমই আনএক্সপেকটেড বিষয়।’

‘ তোর মতো আমিও খুব অবাক তবে এখনও পুরোপুরি শিওর নই আমি। মেয়ে তো একটা ছিল কিন্তু সেটা যে ওই মেয়েটাই এটা বুঝবো কি করে?’

উওরে নিলয় আর কিছু বললো না। কিছুক্ষনের নীরবতা নেমে আসলো তাদের দুজনের মাঝে। হঠাৎই নিলয় বলে উঠল,

‘ এখন কি করবি তবে, নিবি কি আহির হেল্প?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

‘ i don’t know…

____

পরের দিন ভার্সিটিতে…
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২১
_________________

পা টিপে টিপে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে এগোচ্ছে আহি। কাল হসপিটালে তার প্রথমদিন থাকায় ভার্সিটি আসতে পারে নি সে। কিন্তু এরপর আর প্রবলেম হবে না ভার্সিটি শেষে হসপিটাল যাবে আহি। এই জবটা পাওয়ার একমাত্র কারন হলো রিনি, তাঁর পরিচিত একজন কলিগের সাহায্যে এই জব পাইয়ে দিয়েছে আহিকে। এসব ভাবতে ভাবতেই এগোচ্ছিল আহি। এমন সময় তার দিকে এগিয়ে আসছিল রিনি আর অথৈ। তাঁরা আহির কাছে এগিয়ে এসে বললো,

‘ কি রে কেমন আছিস কাল থেকে তো, তোর কোনো খোঁজই নেই।’

ওদের কথা আহি একটু হেঁসে বললো,

‘ ওই একটু।’

‘ তা কালকের জবের ফাস্ট ডে কেমন কাটলো তোর?’ (রিনি)

‘ হুম খুব ভালো তোরা তো জানিসই বাচ্চাদের আমার কতো ভালো লাগে সেই হিসেবে জবটা পেয়ে আমি খুব খুশি।’

‘ হুম তা তো তোর চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি (অথৈ)

উওরে দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বললো আহি,

‘ ওই আর কি চল ক্লাসে যাওয়ার যাক।’

‘ হুম।’

বলেই তিনজন একসাথে চললো কিছুদূর যেতেই আহি রিনি একদিকে আর অথৈ একা অন্যদিকে চলে গেল।’

অতঃপর আজকের মতো ভার্সিটি শেষ করে যে যার বাড়ি যাবে এখন। অথৈ বাস ধরার জন্য চলে গেল, আর রিনি গাড়ি করে চলে গেল। আর আহি আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছে। এখান থেকে সে সোজা হসপিটাল যাবে তারপর ওখান থেকে সোজা বাড়ি। আজ একবারও নীরবের সাথে দেখা হয় নি আহির এর জন্য মনটা হাল্কা খারাপ তাঁর। আনমনেই নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলতে লাগলো আহি। এমন সময় হুট করেই তাঁর সামনে একটা ইয়া বড় কালো গাড়ি এসে থামলো। হুট করে এমন ভাবে গাড়িটা সামনে চলে আসাতে পুরোই চমকে উঠলো আহি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে গাড়িটার দিকে তাকালো সে। এরই মধ্যে গাড়ি ভিতর থেকে কালো কোট পরিধিত দুটো লোক বেরিয়ে এসে বলে উঠল আহিকে,

‘ ম্যাম আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে?’

হুট করে অচেনা দুটো লোকের মুখে এমন কথা শুনে আহি আশেপাশে তাকালো আসলে সে বুঝে উঠতে পারলো না কথাটা আসলে কাকে বললো লোকগুলো। আহিকে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে আবারো বলে উঠল লোকগুলো,

‘ আমরা আপনাকেই বলছি ম্যাম?’

এবার যেন সত্যি সত্যি আহির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। আহি নিজের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,

‘ আপনারা আমায় ম্যাম বলছেন কেন, আমার মনে হয় আপনাদের কোথায়ও একটা ভুল হচ্ছে, আমি আপনাদের ম্যাম নই।’

আহির কথা শুনে লোকদুটো আবারো একসাথে বলে উঠল,

‘ আমাদের কোনো ভুল হচ্ছে না ম্যাম এই দেখুন আপনার ছবি।’

বলেই আহির সোজাসুজি থাকা লোকটি তার মোবাইলটা দেখালো আহিকে। সত্যি সত্যি এদের হাতে নিজের ছবি দেখে পুরোই চমকে উঠলো আহি। চোখ বড় বড় করে বললো সে,

‘ এটা তো আমারই ছবি।’

‘ জ্বী ম্যাম আপনারি ছবি আপনাকে আমাদের বস আমাদের সাথে যেতে বলেছে।’

লোকটির কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বললো আহি,

‘ যেতে বলেছে মানে এইভাবে হুট করে যেতে বলতেই আমি যাবো না কেন আর আপনাদের বস কে?’

‘ দেখুন ম্যানন নাম বলা যাবে না আপনাকে যেতে বলেছে আর আপনাকেই যেতে হবে।’

‘ আমি যাবো না আপনারা আপনাদের বসকে গিয়ে বলুন আমি যাবো না বলা নেই কওয়া নেই হুট করে যেতে বললেই যাবো নাকি আমি।’

বলেই চলে যেতে নিলো আহি। আহিকে যেতে দেখে লোকদুটো আহির পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ আপনাকে তো এভাবে যেতে দেওয়া যাবে না।’

‘ দেখুন আমি আপনাদের কোনো বসকে চিনি না তাই আমায় যেতে দিন।’

‘ এটা বললে তো হবে না আমাদের বসের অর্ডার ম্যাম পালন তো করতেই হবে।’

‘ দূর এ কোন মুসিবতে পরলাম আমি।’

‘ আপনাকে যেতে হবে ম্যাম বসের অর্ডার।’

লোকগুলোর কথা শুনে বেশ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,

‘ আপনাদের বস কে বলুন তো?’

‘ নাম বলা যাবে না ম্যাম।’

আহি কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে বলে উঠল,

‘ আচ্ছা আপনারা আমায় ধরে নিয়ে মেরে ফেলার ফন্দি আঁটছেন না তো?’

আহির কথা শুনে লোকগুলোর চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম। কিছুটা নিরাশ হয়ে বললো তাঁরা,

‘ না ম্যাম এটা একদমই আপনার ভুল ধারণা।’

‘ তাহলে আপনারা আমায় কেন নিতে চাইছেন বলুন তো?’

এবার যেন আহির কথা শুনে বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেছেন তাঁরা। চরম মার্কার বিরক্ত থাকা সত্বেও ঠান্ডা গলায় আবারো বলে উঠল লোকগুলো,

‘ আপনাকে বস আমাদের সাথে যেতে বলেছে ম্যাম প্লিজ চলুন আপনি গেলেই সবটা বুঝতে পারবেন।’

‘ কিন্তু আমার যে এখন কাজ আছে?’

‘ সেটা নিয়ে ভাববেন না বস দেখে নিবেন আপনি শুধু চলুন আমাদের সাথে।’

লোকগুলোর এবারের কথা শুনে গভীর ভাবনায় মগ্ন হলো আহি। মনে মনে ভাবছে সে__

‘ এখন আমি কি করবো এদের সাথে যাবো নাকি মনে তো হয় না এঁরা আমাকে এমনি এমনি যেতে দিবে। এদের দেখেও তো মনে হচ্ছে না এঁরা খারাপ মানুষ কানে ব্লুটুথ, চোখে কালো চশমা পোশাক আসাক দেখে বোঝাই যাচ্ছে এঁরা কারো গার্ড কিন্তু এঁরা আমায় কেন নিতে আসছে আর বসটাই বা কে? আমার ছবিও বা পেলো কোথায়?

— এরকম নানা প্রশ্ন মাথা ঘুরপাক ঘুরপাক খাচ্ছে আহির। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহির ভাবনার মাঝে আবারো বলে উঠল লোকগুলো,

‘ কি হলো ম্যাম চলুন?’

লোকগুলোর কথা শুনে হাল্কা চমকে উঠলো আহি পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে শেষমেশ বাধ্য হয়ে বললো সে,

‘ ঠিক আছে চলুন গিয়ে দেখা যাক আপনাদের বসটা কে?’

আহি গাড়ি দরজা পর্যন্ত আসতেই একজন লোক গাড়ির দরজাটা খুলে দিলো। এদের কাজ কর্মে বেশ অবাক আহি তবে আপাতত সেসব কিছু না ভেবে আস্তে গিয়ে বসে পড়লো সে গাড়িতে। আহি ভিতরে বসতেই আবারো একজন গার্ড গাড়ির দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বসে পড়লো সামনের ড্রাইভিং সিটে।’

অতঃপর আহিকে নিয়ে চললো তাঁরা তাদের বসের কাছে। গাড়ি চলতেই এক অজানা ভয় এসে গ্রাস করলো তাকে সাথে কিছুটা অস্থিরতাও ফিল হচ্ছে। তারপরও যথারীতি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে চুপচাপ বসে রইলো আহি গাড়িতে।’

_____

একটা বড় বুক শপের দোকানের ভিতর ঘুরে ঘুরে এটা ওটা দেখছে রিনি। একটা সুন্দর গল্পের বই সাথে কিছু রং তুলি আর পেন্সিল কিনবে সে। আঁকা আঁকি করতে ভিষন পছন্দ করে রিনি। ভার্সিটি শেষ করেই আজ বাড়ি না গিয়ে সোজা এখানে এসেছে সে। এমনি সময় আহিকে নিয়ে আসতো কিন্তু আজ কেন যেন একাই চলে আসলো রিনি। অনেক খুঁজে একটা সুন্দর গল্পের বই খুঁজে বের করলো সে। হঠাৎই বইটা নিয়ে ঘুরতে গিয়ে আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেলো সে। ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে দুজনেই চমকে উঠলো বেশ সাথে দু’জনের হাতে থাকা ফোনদুটো ছিঁটকে পড়লো এদিক ওদিক। রিনির হাতে থাকা বইটাও পড়েছে নিচে। রিনি আস্তে আস্তে সামনের ব্যক্তির দিকে তাকাতেই ভার্সিটির সেই ছেলেটি মানে শুভকে দেখে আরো চমকে উঠলো। কিছুটা বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো সে,

‘ আপনি?’

ততক্ষণে শুভও খেয়াল করলো মেয়েটা সেই ভার্সিটির আহির বন্ধু। মেয়েটিকে দেখেই দু’কদম পিছনে চলে গেল শুভ, কারনটা আর যাই হোক কোনোভাবেই আবারো এই মেয়েটার সাথে ঝগড়া করতে চায় না সে। শুভকে পিছনে যেতে দেখে রিনি অবাক হয়ে বললো,

‘ আপনি পিছিয়ে যাচ্ছেন কেন?’

সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো শুভ। তারপর আমতা আমতা করে বললো সে,

‘ না আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনি..

শুভর পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই রিনি চেঁচিয়ে বলে উঠল,

‘ কি ভাবছিলেন আপনি?’

রিনির কথা শুনে যেন হার্ট অ্যাটাক করবে শুভ তৎক্ষনাৎ বুকে হাত দিয়ে বললো সে,

‘ আপনি এমন কেনো বলুন তো সবসময় ঝাঁঝালো কন্ঠ নিয়ে কথা বলুন মিষ্টি করেও তো কথা বলা যায় নাকি।’

‘ দেখুন আপনার থোবড়া দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায় সরুন তো..

বলেই নিচ থেকে বই আর বাম দিকের কালো কভারের মোবাইলটা হাতে নিয়ে উঠতে নিলো সে এরই মধ্যে শুভও নিচে বসে পড়লো তাঁর মোবাইলটাও উঠাতে হবে কি না। সাথে সাথে উপর নিচ করতে গিয়ে দুজনের মাথায় বারি খেলো দুজন। রিনির তো মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসলো,

‘ আউচ।’

সাথে সাথে শুভ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠল,

‘ সরি সরি সরি আপু…

ব্যস হয়ে গেল যাও এতক্ষণ রিনি তার রাগকে কন্ট্রোল করতে পেরেছিল সেটাও শুভর ‘আপু’ ডাক শুনে হয়ে গেল। রিনি রাগী লুক নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠের সাথে বলে উঠল,

‘ কি বললেন আপনি? আপনাকে তো আমি?’

সাথে সাথে শুভ তাঁর মোবাইলটা নিয়ে এক দৌড়। সে বলতে চায় নি মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল। শুভর এমন কাজ দেখে রিনির রাগ যেন সপ্তম আকাশে উঠে গেছে। নেক্সট টাইম পেলে একে যে খুন করবে এটা কর্নফাম। ভেবেই রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো রিনি তাঁর সুন্দর মুড টাকে একদম নষ্ট করে দিলো__

‘ বদমাশ ছেলে কোথাকার?’

বলেই হন হন করে উল্টো দিকে হাঁটা দিলো রিনি।’

অন্যদিকে একটা বুক সেলফের পিছনে লুকিয়ে আছে শুভ। ভয়ে যেন শরীর কাঁপছে তাঁর। এই মেয়েটা আসলেই খুব ডেঞ্জারাস দুু’বার দেখা হলো আর দু’বারই তাঁর দিকে মারার জন্য তেঁড়ে আসলো।’ উফ বাবা গো বাবা মেয়ে না যেন ‘ধানি লঙ্কা’…

ভেবেই জোরে নিশ্বাস ফেললো সে। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে গায়ের শার্টটা সাথে পিছনে থাকা ব্যাগটা ঠিক করে রিনির একদম উল্টো দিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলো সে।’

____

নিজের রুমে বসে আছে আদ্রিয়ান। মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা ভাবনায় মগ্ন সে। এমন সময় তার রুমে ঢুকলো নিলয়। আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে বললো সে,

‘ তাহলে মিটিং রুমে যাওয়া যাক?’

‘ হুম।’

বলেই আদ্রিয়ান তাঁর চেয়ার থেকে উঠে চললো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান যেতেই নিলয় একটা ফোন একটা ফোন করে বললো,

‘ তোমরা কোথায়?’

নিলয়ের কথা শুনে শুনে অপর পাশের লোকটাও বলে উঠল,

‘ এইতো স্যার আর আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছাচ্ছি।’

‘ ঠিক আছে।’

বলেই ফোনটা কেটে জোরে শ্বাস ফেলে চলে যায় সে মিটিং রুমে।’

___

বেশ কিছুক্ষন পর আহিদের গাড়ি এসে থামলো একটা বড় কোম্পানির সামনে। গাড়ি থামতেই সামনের দুজন লোক নেমে আহির সামনের দরজাটা খুলে দিয়ে বললো,

‘ আমরা এসে পড়েছি ম্যাম?’

উওরে আহিও আর বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে বের হলো সে গাড়ি থেকে। তারপর সামনের দিকে তাকাতেই চোখ যেন তাঁর আরই চড়ুই গাছ। কারন কোম্পানিটা আর কারো নয় আদ্রিয়ানের। যেটাতে এর আগেও একবার এসেছিল আহি। সেইদিনের কথা ভাবতেই শুঁকনো ঢোক গিললো আহি তারপর আমতা আমতা করে বললো,

‘ এখানে?’

আহির কথা শুনে লোকদুটোও বলে উঠল,

‘ জ্বী ম্যাম।’

‘ এটা তো আদ্রিয়ান মাহামুদের কোম্পানি।’

‘ এই তো আপনি বুঝতে পেরেছেন তাহলে চলুন ভিতরে আপনার জন্য বস অপেক্ষা করছে।’

সাথে সাথে আহি ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ মাথা খারাপ হয়েছে আপনাদের এখানে আমি যাবো, এইবার সত্যি সত্যি শিওর আপনাদের কোথাও একটা ভুল হচ্ছে?’

বলেই উল্টোদিক ফিরে চলে যেতে নিলো আহি। আহিকে যেতে দেখে আবারো সামনের লোকটি মুখোমুখি দাঁড়ালোর আহির। তারপর বললো,

‘ আপনি এইভাবে যেতে পারবেন না ম্যাম?’

এবার বিরক্তির একদম শেষ পর্যায়ে চলে গেছে আহি। এখন তাঁর নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তাঁর কেন যে সে এখানে আসতে গেল। শেষমেশ আর কোনো উপায় না পেয়ে আহি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আদ্রিয়ানের কোম্পানির ভিতরে।’….
!
!
!
!
!
#চলবে…..