বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-২২+২৩+২৪

0
286

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২২+২৩+২৪
_________________

ভয়ে জড়সড় হয়ে আদ্রিয়ানের রুমে বসে আছে আহি। কি হবে না হবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। কিছুক্ষন আগেই বলা হয়েছে তাঁকে আদ্রিয়ান মিটিং রুমে আছে আর সে যেন তাঁর জন্য এখানে বসে অপেক্ষা করে। আহির মাথাতে কিছুতেই আসছে না আদ্রিয়ান তাঁকে কেন ডাকলো? তাঁর যতদূর মনে পড়ে তাদের সাথে গত কদিনে কোনো ঝগড়া হয় নি। আর কাল তো সে তাকে বাঁচিয়েছে তবে কি আদ্রিয়ান তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ডেকেছে। কিছুই যেন মাথাতে আসছে না আহির মাথাটা তাঁর ভনভন করছে সাথে অস্থিরতাও ফিল হচ্ছে। আহি জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে বসে রইলো চেয়ারে। তাঁর সামনেই কিছু খাবার আর পানি রাখা। পানির গ্লাস টাকে হাতে নিয়ে ঢকঢক করে সব পানিটা খেয়ে নিলো আহি। তারপর অপেক্ষা করতে লাগলো সে আদ্রিয়ানের জন্য।’

____

অন্যদিকে কিছুক্ষনের মিটিং শেষ করে কিছুটা ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বসে আছে আদ্রিয়ান আর সামনেই নিলয় তাকে কিছু বোঁঝাচ্ছে। একটা লোকের খামখেয়ালির জন্য আজকের প্রজেক্টটা ঠিক টাইম মতো দিতে পারে নি আদ্রিয়ান। পাঁচ মিনিট লেট হয়েছে তাদের যদিও ক্লাইন্ট কিছু বলে নি আদ্রিয়ানকে তাঁরপরও আদ্রিয়ানের রাগ হচ্ছে। আর তার রাগ কমানোর জন্যই নিলয় তাকে কিছু বলছে। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো শুভ। মিটিং রুমের দরজার সামনে এসে বললো সে,

‘ ভাইয়া আসবো?’

হুট করেই শুভর গলা শুনে আদ্রিয়ানের রাগান্বিত মুখটা আরও রেগে গেল। অন্যদিকে শুভ দৌড়ে এসে একটা সুন্দর গিফট বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ হেপি বার্থডে ভাইয়া?’

মুহূর্তের মধ্যে আদ্রিয়ানের মেজাজ চরম বেগে বিগড়ে গেল। এক আদ্রিয়ান তাঁর জন্মদিন পালন তো দূরে থাক উইস করা পর্যন্ত পছন্দ করে না। কারন এই দিনেই তাঁর সঙ্গে ঘটেছিল সেই ভয়ানক ঘটনা। আদ্রিয়ান একপলক শুভর হাসিমাখা মুখ আর একবার গিফটের বক্সটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল নিলয়কে,

‘ ও আবার এখানে কেন এসেছে নিলয়?’

‘ আদ্রিয়ান আমার কথাটা একটু শোন?’

‘ তুই ওঁকে এক্ষুনি এখান থেকে চলে যেতে বল?’

‘ আদ্রিয়ান প্লিজ আজকের দিনটা অন্তত রাগারাগি করিস না।’

নিলয়ের কথা বলা শেষ হতেই শুভ বলে উঠল,

‘ প্লিজ ভাইয়া আমায় ক্ষমা করে দেও এই দেখো আমি তোমার পছন্দের সেই জিনিসটা এনেছি যেটার ভাঙার জন্য তুমি আমার সাথে কথা বলো না, অনেক খুঁজে এটাকে আমি পেয়েছি দেখো?’

এই বলে শুভ টেবিলের উপর রাখা তাঁর আনা বক্সটা খুলে দেখালো আদ্রিয়ানকে। একটা সুন্দর কাঁচের তৈরি শোপিচ, একদম হুবহু তাঁর ছোট বেলার শোপিচটার মতো কিন্তু এটা দেখে আদ্রিয়ান মোটেও খুশি হয়নি বরং আরো রেগে গেছে কারন এটার জন্য আজ তাঁর এতো সমস্যা। আদ্রিয়ান শোপিচটার দিকে তাকিয়েই উঠে দাঁড়ালো তারপর নিলয়কে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ ওঁকে এসব নিয়ে চলে যেতে বল নিলয়? আমার মাথা এমনিতেও গরম আছে তারপর উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলবো যেটা মটেও ভালো হবে না।’

বলেই চলে যেতে নিলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে যেতে দেখে শুভ গিয়ে হাত ধরে বসলো আদ্রিয়ানের তারপর বললো,

‘ প্লিজ ভাইয়া এইবার অন্তত আমায় মাফ করে দেও?’

শুভর স্পর্শ পেতেই যেন পুরনো অতীত তাঁকে আরো গভীরভাবে ধরতে আসলো বাবা মায়ের সেই মৃত্যু দেহ খুব গভীর ভাবে মনে পড়ছে আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে একটা ধাক্কা মারলো শুভকে সাথে সাথে শুভ ছিঁটকে গিয়ে পড়লো টেবিলের কাছে। টেবিলের কোঁনায় কপাল লেগে হাল্কা কেটে যায় তাঁর। সাথে সাথে নিলয় দৌড়ে গিয়ে বলে উঠল,

‘ শুভ?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ানও পিছন ফিরে তাকায় শুভর কপালে রক্ত দেখে ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে তাঁর কিন্তু শুভর দিকে এগিয়ে না গিয়ে স্ট্রিট গলায় বলে সে,

‘ ওকে এখান থেকে চলে যেতে বল নিলয়?’

বলেই হন হন করে বেরিয়ে যায় সে। রাগে তাঁর মাথা ফেটে যাচ্ছে।’

আর আদ্রিয়ানের যাওয়ার পানে শুভ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ তুমি কি আমায় কোনোদিনও ক্ষমা করবে না ভাইয়া?’

শুভর কথা শুনে ভিষন খারাপ লাগে নিলয়ের। নিলয় শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আয় আমি তোর কপালে মলম লাগিয়ে দেই?’

‘ তাঁর দরকার নেই ভাইয়া, আমি ঠিক আছি।’

বলেই চলে যায় শুভ। শুভর যাওয়ার পানে প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে তাকিয়ে থাকে নিলয়। তাঁরপর কিছুক্ষন টেবিলের উপর থাকা শোপিচটার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই তার মনে পড়লো ভিতরে আদ্রিয়ানের রুমে আহি আছে আর আদ্রিয়ান এখন রেগে আছে ওহ শিট ভেবেই শোপিচটা হাতে নিয়ে এক দৌড় দিল নিলয়।’

____

‘ তুমি এখানে কি করছো?’

প্রচন্ড রাগি মুড নিয়ে কথাটা বলে উঠল আদ্রিয়ান আহিকে। কিছুক্ষন আগে নিজের রুমে ঢুকে আদ্রিয়ান। আর ভিতরে ঢুকেই আহিকে দেখে রেগে গিয়ে উপরের কথাটা বলে সে। আদ্রিয়ানের ধমকের স্বরের কথা শুনে আহি ভয়ার্ত মুখটা কেঁপে উঠে। আহি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ আসলে?’

‘ get out of my room?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে ভয়ের সাথে সাথে প্রচন্ড রাগ হয় আহির নিজেই আসতে বললো আবার নিয়েই তাড়িয়ে দিচ্ছে?’ আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল আদ্রিয়ান,

‘ কথা কি কানে যাচ্ছে না তোমার বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে প্রচন্ড রাগ নিয়ে আহি আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নিজেই আসতে বলেছেন আবার নিজেই রাগ দেখাচ্ছেন?’

আহির কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ হোয়াট?’

‘ দেখুন বেশি হোয়াট হোয়াট করবেন না আপনার জন্য আমার জবের দ্বিতীয়দিনই অফ গেছে, একই তো নিজে ডেকেছেন তার ওপর আবার রাগ দেখাচ্ছেন, একটু রাগটা কমান বুঝলেন বেশি রাগ স্বাস্থ্য মন কোনোটার জন্যই ভালো নয়। আল্লাহই মালুম আপনার বাবা মা আপনার সাথে কিভাবে থাকে?’ হয়তো আপনার রাগ দেখেই তাঁরা চুপ হয়ে থাকে।’

আহির এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ানের রাগ যেন মাথায় উঠে গেছে আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে আরো ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো,

‘ কি বললে তুমি?’

এমন সময় আদ্রিয়ানের রুমে ঢুকলো নিলয় সে এগিয়ে এসে বললো,

‘ আদ্রিয়ান ওর কোনো দোষ নেই ওকে আমি ডেকেছি?’

নিলয়ের কথা শুনে আহিকে আর কিছু না বলে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ তুই? তুই ওঁকে কেন ডেকেছিস?’

‘ আসলে আদ্রিয়ান?’

‘ আসলে কি, তুই জানিস না এই মেয়েটাকে আমি দু চক্ষে সহ্য করতে পারি না আর আমায় জিজ্ঞেস না করে ওকে কেন ডেকেছিস?

‘ আমি চেয়েছিলাম আদ্রিয়ান?’

‘ তোকে এত চাইতে কে বলেছে তবে আমি বেশ বুঝতে পেরেছি তুই ওকে কেন ডেকেছিস কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখিস আমি সারাজীবন আমার অসুখ নিয়ে থাকবো তারপরও এই মেয়েটার হেল্প নিবো না, এখন তুই আর ওই মেয়েটা দুজনই বের হ আমার রুম থেকে?’

‘ আদ্রিয়ান আমার কথাটা তো একটু শোন?’

‘ আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না বেরিয়ে যা সাথে ওই মেয়েটাকেও নিয়ে যা?’

এই বলে আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বললো,

‘ গেট আউট?’

আদ্রিয়ানের ধমক শুনে কেঁপে উঠলো আহি তক্ষৎনাত সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কি ঘটলো তাঁর সাথে এতক্ষণ সব যেন তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল। আহি যেতেই আদ্রিয়ান গিয়ে বসে পড়ে চেয়ারে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তাঁর। কতকিছু শোনালো মেয়েটি তাঁকে। এদিকে নিলয় কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো আদ্রিয়ানের দিকে তারপর শুভর আনা শোপিচটা আদ্রিয়ানের সামনে টেবিলের উপর রেখে বললো সে,

‘ আমি জানি আদ্রিয়ান তুই এখন প্রচন্ড রেগে আছিস? একটা কথা কি জানিস তোর সব ঠিক আছে কিন্তু শুভর সাথে তোর কাজগুলো ঠিক নেই। আমি মানছি আদ্রিয়ান আজ আঙ্কেল আন্টি না থাকার কারনেই তোর এত রাগ শুভর উপর কিন্তু একটা কথা মাথা রাখিস দোষটা শুভর চেয়ে তোর বেশি তুই যদি সেদিন রাগ করে বাড়ি থেকে না বের হতিস তাহলে এইসব কিছুই হতো না৷ না তোর দুঃস্বপ্ন তোকে তাড়া করে বেড়াতো আর নাই আজ তোর সাথে শুভর এই দ্বন্দ থাকতো, দেখ আদ্রিয়ান শুভ সেইসময় অনেকেই ছোট ছিল। ছোট থাকা সত্বেও ও বার বার তোর কাছে আসে ও তো এটাও জানে না ওর ভুলটা আসলে কোথায় ছিল? মানুষ মাত্রই তো ভুল হয় ও ভুল করে ফেলেছে আদ্রিয়ান আইথিংক তোর বড় ভাই হিসেবে ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত ছিল। অনেক দিন আগে থেকেই এই কথাগুলো তোকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলতে পারি নি আজ বলে দিলাম পারলে একটু ভেবে দেখিস একটা কথা মাথায় রাখিস শুভর কিন্তু আপন বলতে তুই ছাড়া আর কেউ নেই আর তোরও শুভ ছাড়া পরম আপন কেউ নেই আর রইলো আহির কথা ওকে আমি ডেকেছিলাম যাতে তোর প্রবলেমের সমাধান হয় তুই রাতে আরামে ঘুমাতে পারিস কিন্তু তুই যখন না করেছিস আর ডাকবো না আর একটা কথা আহির সাথে অকারণেই রাগারাগি করলি তুই আজকে ওর কোনো দোষ ছিল না। আমিই ওকে তোর নাম করে এখানে এনেছিলাম আই এম সরি। আজ আর অফিসে আসবো না হাফটাইম ছুটি নিলাম..

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় নিলয়। আর আদ্রিয়ান চুপচাপ তাকিয়ে রইলো নিলয়ের যাওয়ার পানে। চাইলে অনেককিছুই বলতে পারতো কিন্তু কিছু বললো না আদ্রিয়ান। চুপচাপ তাকিয়ে রইলো সে তার সামনে থাকা শোপিচটার দিকে। চারদিক ঘুরিয়ে গোল কাঁচের বন্দী করা একটা শোপিচ ভিতরে রয়েছে একটা সুন্দর সবুজে ঘেরা গাছ আর গাছের নিচে বসে থাকা বই হাতে একটা ছোট্ট ছেলে পুতুল। এই শোপিচটার বিষেসত্ব হলো এটা লাল নীল লাইট জ্বলে যেটা অন্ধকার রুমে আরো বেশি সৌন্দর্যকর। আদ্রিয়ান আনমনেই শোপিচটা হাতে নিলো। শোপিচটার নিচে থাকা ছোট্ট সুইচটা টিপ দিতেই লাল নীল লাইট জ্বলে উঠলো সাথে ঘুরতে লাগলো চারদিকে। সাথে ছোট্ট সাদা গোল গোল ফোমগুলো বৃষ্টির মতো জড়ছে গাছটার চারপাশ দিয়ে এক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ান শোপিচটার দিকে। হঠাৎই মনে পড়লো তার সেই ছোট বেলার কথা।’

এইরকমেরই একটা শোপিচ গিফট করে ছিল আদ্রিয়ানের আম্মু আদ্রিয়ানকে। খুব শখের ছিল আদ্রিয়ানের এটা। রোজ রাতে এর আলোকিত লাল নীল আলো দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়তো আদ্রিয়ান। এভাবে চলছিল দিন তারপর হুট করে ঘটে গেল সেই ঘটনা সেদিন যখন আদ্রিয়ানের জ্ঞান ফিরে নিজের রুম থেকে বের হয়। তখনই পুরো বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল পড়েছিল আদ্রিয়ানের বাবার কলিগরা সাথে টুকিটাকি আত্মীয়স্বজনের। আদ্রিয়ান বেশ অবাক হয়েই আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রুম থেকে বের হতেই পাশাপাশি নিচে বাবা মাকে শুয়ে থাকতে দেখে শরীরটা যেন আরো আঁতকে উঠলো আদ্রিয়ানের। মুক্তি পণের টাকা নিয়ে গাড়ি করে যখন যাচ্ছিল আদ্রিয়ানের বাবা মা তখন আদ্রিয়ানের দুঃশ্চিন্তায় খুব স্পিডেই গাড়ি চালাচ্ছিল আদ্রিয়ানের বাবা আর তখনই একটা মোড়ের মাথায় যেতেই বাম দিক দিয়ে একটা ট্রাক এসে মেরে দিয়ে চলে গেল ওনাদের সাথে সাথে দুজন গাড়ি উল্টে ছিঁটকে পড়লো এদিক সেদিক। সেদিন এত কষ্ট হচ্ছিল আদ্রিয়ানের যা বলার একদমই বাহিরে সেই কষ্ট এখনো হয় আর সবচেয়ে বাজে যেটা ছিল সেটা হলো সেদিন তার জন্ম দিন ছিল। আর আজও তাঁর জন্ম দিন।’

কথাগুলো ভাবতেই চোখে আপনাআপনি পানি চলে আসে আদ্রিয়ানের। কষ্টে যেন বুক ফেটে যাচ্ছে তার। শুভর দোষ এতটুকুই ছিল তার জিনিসটা ভাঙা আর আদ্রিয়ানের দোষ হলো রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া। এমনটা নয় আদ্রিয়ান ভালোবাসে না শুভকে বা শুভর উপর তাঁর ভিষণ রাগ আছে। না শুভর ওপর তার কোনো রাগ নেই রাগ হলো নিজের ওপর। শুভকে দেখলেই নিজেকে কেমন অপরাধী মনে আদ্রিয়ানের তাঁর জন্যই অল্প বয়সে বাবা-মার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে শুভ। নানা কিছু ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান। ভিতরে ভিতরে খুবই গিলটি ফিল হচ্ছে তার।’

____

মাঝখানে কাটলো দু’দিন।’

এই দু’দিনে আহির সাথে আর দেখা হয়নি আদ্রিয়ানের।’

আজ দু’দিন পর আবার হসপিটালে এসেছে আদ্রিয়ান তবে এবার আর কোনো সমস্যার জন্য আসে নি। তাঁর সমস্যার সমাধান তো পেয়েই গেছে শুধু কারনটা অজানা। এইবার আদ্রিয়ান এসেছে একটা বিশেষ কারনে সেটা হলো আহিকে সরি বলা। কারন সেদিন সত্যি আহির কোনো দোষ ছিল না। আদ্রিয়ান আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় সেই ওয়ার্ডটার দিকে যেখানে আহিকে সে দেখেছিল। আদ্রিয়ান চুপচাপ ভিতরে ঢুকে আশেপাশে তাকালো বাচ্চারা চুপচাপ বসে আছে কিন্তু আহিকে না দেখে বেশ খানিকটা হতাশ হয়ে এগিয়ে গেল সে বাচ্চাগুলোর দিকে। তারপর ওদের সামনে বসে বলে উঠল,

‘ হ্যালো তোমাদের এখানে যে একটা মেয়ে আসতো সে আসে নি এখনও?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে একটা ছেলে বলে উঠল,

‘ না তুমি কে?’

‘ আমি আদ্রিয়ান আর তুমি?’

‘ আমি হাসান।’

এরপর একে একে সবার সাথে পরিচিত হয় সে। কিছুক্ষনের মধ্যে আদ্রিয়ান এদের সবার বন্ধু হয়ে যায়। এমন সময় একটা ছোট্ট ছেলে এসে আদ্রিয়ানের হাতে একটা আরমোনিকা দিয়ে বললো,

‘ এটা তুমি বাজাতে পারবে জানো এটা আমার আম্মু আমায় কিনে দিয়েছে?’

ছেলেটির কথা শুনে আদ্রিয়ান ছেলেটির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

‘ খুব সুন্দর।’

‘ হুম। তুমি বাজাতে পারবে নেও বাজাও জানো তো ওই আহি আপুকে বলেছিলাম বাজাতে কিন্তু আপু পারে নি তুমি পারবে।’

ছেলেটির কথা শুনে আদ্রিয়ান ছেলেটির হাত থেকে আরমোনিকাটা নিয়ে বললো,

‘ দেখি চেষ্টা করে..

এরপর আদ্রিয়ান তাঁর মুখের সামনে আরমোনিকাটা নিয়ে বাজাতে শুরু করলো। আর বাচ্চাগুলো হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের মুখের দিকে।’

এরই মধ্যে এক প্রকার দৌড়ে রুমে ঢুকে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠল আহি,

‘ সরি সরি বাচ্চারা আজ আমার একটু লেট হয়ে…

আর কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় আহি সামনেই আদ্রিয়ানকে দেখে চরম প্রকার অবাক হয় সে। অন্যদিকে আহিকে দেখেই আদ্রিয়ান তাঁর আরমোনিকা বাজানো থামিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান বাজানো থামাতেই বাচ্চাগুলো বলে উঠল,

‘ তুমি থেমে গেলে কেন?’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে আবারো বাজাতে শুরু করলো। আর সবাই চুপচাপ বসে দেখতে লাগলো আদ্রিয়ানকে আর শুনতে লাগলো আদ্রিয়ানের বাজানো আরমোনিকা। আহিও বেশ মুগ্ধ আদ্রিয়ানের আরমোনিকা বাজানো শুনে।’

কিছুক্ষন পর…

পাশাপাশি বসে আছে আদ্রিয়ান আর আহি। সামনেই বাচ্চাগুলো খেলছে। হঠাৎই আহি বলে উঠল,

‘ আপনি এখানে কেন? আবারো কি কোনো কারনে রাগ দেখাতে এসেছেন?’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে উঠল,

‘ আই এম সরি।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে তাঁর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না আদ্রিয়ান তাঁকে সরি বললো। আহি অবাক চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি?’

‘ আসলে সেদিন আমি ভিষণই রেগে ছিলাম তারপর হুট করেই তোমায় সামনে দেখে আই এম সরি সেদিন তোমার কোনো দোষ ছিল না আসলে নিলয় আমায় কিছু বলে নি সেদিন তোমার ব্যাপারে।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললো আহি,

‘ ইট’স ওকে আর আমিও সেদিনের জন্য সরি।’

আহির কথা শুনে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ কেন?’

‘ আসলে আমিও সেদিন রেগে গিয়ে আপনার বাবা মা নিয়ে কথা বলেছিলাম সত্যি আমি জানতাম না আপনার বাবা মা আর বললো না আহি।’

কারন এসব কথা সেদিন নিলয় তাঁকে বলেছিল। সেদিন যখন আহি অফিস থেকে বেরিয়ে যায় তখন নিলয়ও দৌড়ে যায় আহির কাছে তারপর ওর কাছে সরি বলে। আর তখনই কথার তালে তালে জানতে পারে আহি যে আদ্রিয়ানের বাবা মা নেই। ভিতর থেকে ভিষণই খারাপ লাগে আহির সে চেয়েছিল আদ্রিয়ানকে একবার সরি বলতে কিন্তু সাহস হয়ে উঠে নি তাঁর।’

আদ্রিয়ান আহির কথা শুনে হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ ইট’স ওকে।’

উওরে আহিও মুচকি হাঁসলো এমন সময় তাদের সামনে দুটো ছেলে মেয়ে আসলো। একজন আদ্রিয়ানের হাত আর অন্যজন আহির হাত ধরে বললো,

‘ চলো না কিছু খেলি।’

ওদের কথা শুনে আদ্রিয়ান আহি দু’জনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে এগিয়ে গেল ওদের সাথে। তারপর পুরো রুম জুড়ে বাচ্চাদের সাথে হুড়োহুড়ি আর হাসাহাসি করতে লাগলো আহি আর আদ্রিয়ান। যেন তাঁরাও বাচ্চা হয়ে গেছে।’

হঠাৎই ছোটাছুটি করতে গিয়ে আহি আদ্রিয়ান মুখোমুখি হয়ে গেল। দু’মিনিটের জন্য হলেও একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয় দুজন। এরই মধ্যে আচমকা আদ্রিয়ানের ফোনটা বেজে উঠল। আদ্রিয়ানও বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা তুলে বললো,

‘ হ্যালো।’

আদ্রিয়ানের ‘হ্যালো’ শুনে অপর পাশে একটা লোক চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,

‘ স্যার লাস্ট দু’দিন যাবৎ শুভ স্যার বাসা থেকে একদমই বের হচ্ছেন না। হসপিটালেও ফোন করে ছিলাম যে উনি কোনো ছুটি নিয়েছেন কি না কিন্তু ওনারা বললেন এমন কোনো বিষয় নিয়ে শুভ স্যারের সাথে কথা হয় নি ওনারাই উল্টো জিজ্ঞেস করলেন শুভ স্যার হসপিটালে কেন আসছেন না। ফোনও নাকি করেছিলেন কিন্তু শুভ স্যার ধরেন নি?

লোকটির কথা শুনে আদ্রিয়ান বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ হোয়াট?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২৩
_________________

চিন্তিত মুখ নিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে রিনি। কারন আজ দু’দিন যাবৎ সে তাঁর নিজের মোবাইলটা হাতে পাচ্ছে না। সেদিন বুক শপে শুভর সাথে ধাক্কা লেগে যখন তার মোবাইলটা পড়ে গিয়েছিল তখন রিনি নিজের মোবাইলের বদলে শুভর মোবাইল নিয়ে আসে কারন দুজনের পিছনের কাভারটা প্রায় সেইম ছিল। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারে তখন নিজের ওপর নিজেরই রাগ হয় তাঁর। রিনি সেদিনই কল করেছিল শুভর কাছে শুভ তো তখন বুঝতেই পারে নি পরে ফোনটা দেখে বুঝতে পারে সে। রিনি বলেছিল তাকে সে যেন পার্কে এসে তাঁর ফোনটা দিয়ে যায় শুভও বলেছিল ঠিক আছে। আর কথা মতো সেদিন বিকেলেই রিনি যায় পার্কে কিন্তু শুভ আসে নি এরপর যতবারই রিনি ফোন করে শুভকে শুভ ফোন ধরে নি। লাস্ট দু’দিন যাবৎ শুভর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে রিনি কিন্তু পাচ্ছে না। অন্যদিকে শুভের ফোনেও বার বার কল আসতে থাকে কিন্তু কার না কল এটা ভেবে রিনি আর ধরে নি শেষমেশ বাধ্য হয়ে ফোনটা বন্ধ করে দেয়। বিরক্তির চরম সীমানা নিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে রিনি। এমন সময় বিছানার ওপর থাকা তাঁর আরেকটা ফোন বেজে উঠল। তক্ষণাৎ ফোনটা গিয়ে তুললো সে উপরে তাঁর এক ফ্রেন্ডের নাম দেখে তাড়াতাড়ি ধরে বললো,

‘ হ্যালো লোকেশনটা কি পেয়েছিস?’

রিনির কথা শুনে ওপর পাশের ব্যক্তিটাও তার কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল,

‘ হুম তোর নাম্বার ট্রেক করে তোর মোবাইলটা কোথায় আছে সেটা জানতে পেরেছি।’

‘ খুব ভালো এড্রেসটা বল আমি গিয়ে নিয়ে আসি?’

‘ হুম আমি তোর এই নাম্বারে টেক্সট করে দিচ্ছি।’

‘ ওকে থ্যাংক ইউ দোস্ত।’

‘ ইট’স ওকে।’

উওরে রিনি আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল। তারপর বলতে না বলতেই টুং করে তাঁর মোবাইলকে মেসেজ আসলো। রিনিও বেশি কিছু না ভেবে তাঁর বন্ধুর দেওয়া এড্রেস মতো বেরিয়ে পড়লো।’

____

হসপিটালে চুপচাপ বসে আছে আহি সামনেই বাচ্চারা খেলছে। কিছুক্ষন আগেই আদ্রিয়ান চলে গেছে হুট করে আদ্রিয়ানের চিন্তিত মাখা মুখ দেখে বেশ বিষম খায় আহি। পরক্ষণেই সে জিজ্ঞেস করেছিল আদ্রিয়ানকে ‘কি হয়েছে?’–

কিন্তু আদ্রিয়ান তেমন কিছু না বলেই চলে যায়।’ এই জন্যই বেশ চিন্তিত আহি। এমন সময় আহির দিকে একটা বাচ্চা ছেলে একটা বল ছুঁড়ে দিয়ে বললো,

‘ চলো আপু খেলি?’

আহিও আর বেশি কিছু না ভেবে বাচ্চাদের সাথে আবারও মিলিত হলো। আবারো জুড়ে হাসি ঠাট্টা আর আনন্দ।’

সময়টা তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় বিকেল চারটার ছুঁই ছুঁই।’

______

একটা বিশাল সাদা রঙের দু’তলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিনি। তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ভিতু কুমার এত বড় বাড়িতে থাকে। আশেপাশে বড়বড় গাছপালা রয়েছে সামনেই সবুজে ঘেরা মাঝারি সাইজের মাঠ। চারপাশ দিয়ে সুন্দর হাওয়া আসছে। রিনি বেশি কিছু না ভেবেই কলিং বেল চাপ দিল কিন্তু কারোই যেন কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। এভাবে বেশ কয়েকবার কলিং বেল বাজানোর পরও কেউ দরজা না খোলাতে বেশ হতাশ হয় রিনি। আরেকবার মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে সামনেই দেয়ালটার দিকে তাকালো সেইম টু সেইম লেখা। বাড়িটার সামনেই বড় বড় অক্ষরে লেখা শুভ মাহমুদ। নামটা দেখে সে বেশই বুঝতে পারছে এটা শুভরই বাড়ি কিন্তু দরজা কেউ খুলছে না কেন এটাই বুঝতে পারছে না রিনি। সামনেও তো তালা ঝুলানো নেই রিনি বেশ বুঝতে পারছে ভিতরে কেউ না কেউ আছে। রিনি এবার আর কলিং বেল না বাজিয়ে দরজায় একবার নক করলো দুটো বার নক করতেই দরজা আপনাআপনি খুলে যায় এতে বেশ ঘাবড়ে যায় রিনি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে উঁকি ঝুঁকি মারতে থাকে সে। কিন্তু আশেপাশে কাউকে না দেখে বেশ হতাশ হয়ে ভিতরে ঢুকলো সে। তারপর আশেপাশে তাকাতে তাকাতে এগোতে থাকে সে। পুরো বাড়িটাই বিশাল আর বিভিন্ন আসবাবপত্রে ঘেরা রিনি বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। উপরে উঠতেই পাশাপাশি কয়েকটা রুম চোখে পড়লো রিনির। প্রত্যেকটাতেই চোখ বুলালো সে কিন্তু আশেপাশে কাউকেই না দেখে এবার রিনির ভয় হতে লাগলো এত বড় বাড়িটা ফাঁকা আবার দরজাও খোলা ভূত টূত আছে নাকি ভেবেই ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিললো রিনি। এমন সময় হঠাৎই তাঁর সামনের থাকা একটা রুম থেকে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ পেতেই ভয়ে আঁতকে উঠলো সে। কিন্তু দৌড়ে না পালিয়ে সামনে এগোতে লাগলো রিনি। সামনের দরজার কাছে গিয়ে উঁকি মারতেই নিচে কাউকে পড়ে থাকতে দেখে রিনি দৌড়ে গিয়ে দেখলো তাঁকে সামনেই শুভকে দেখে আরো যেন অবাক হয় রিনি। রিনি শুভর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ কি হয়েছে আপনার?’

উওরে শুভ কোনো সাড়াশব্দ করলো না শুভকে চুপচাপ থাকতে দেখে রিনি ধরলো শুভকে। শুভকে ধরতেই পুরো কেঁপে উঠলো রিনি। জ্বরে পুরো গা পুড়ে যাচ্ছে। রিনি শুভকে ধরে বলে উঠল,

‘ আপনার তো গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে আপনার বাড়িতে আর কেউ নেই নাকি?’

হুট করেই কোনো মেইলি কন্ঠ আসতেই মিটমিট চোখে তাকালো শুভ। আজ দু’দিন যাবৎ শুভ জ্বরের কারনে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। সেদিন আদ্রিয়ানের অফিস থেকে বাসায় ফিরতেই গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে শুভর। আর জ্বরের কারনেই শুভ সেদিন বিকেলে যেতে পারে নি পার্কে। শুভকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল রিনি,

‘ কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন, আর কেউ নেই বাড়িতে আপনি একাই থাকেন নাকি এখানে?’

উওরে মাথা নাড়ায় শুভ। শুভর মাথা নাড়ানো দেখে বেশ অবাক রিনি এত বড় বাড়িতে নাকি উনি একা থাকে। এরপর রিনি আস্তে আস্তে শুভকে ধরে উঠে দাঁড়ালো তারপর ধীরে ধীরে শুভকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,

‘ আমি আসলে আমার ফোনটা নিতে এসেছি আপনাকে কতবার কল করেছি আমার ফোনে আপনি ধরেন নি কেন?’ মানুষ তো একবার ফোনটা তুলে বলে আমি অসুস্থ এখন যেতে পারবো না। আপনি জানেন আপনার জন্য সেদিন কতক্ষণ অপেক্ষা করতে ছিলাম আমি?’

এতক্ষণ পর যেন শুভর মনে পড়লো রিনির ফোনটার কথা। সেদিন রিনির সাথে ফোনে কথা বলে সেটাকে যে ড্রয়ারের ভিতর রেখেছিল সেটা সেখানেই আছে এখনো। শুভ একপলক রিনির দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,

‘ আসলে জ্বরের ঘোরে আপনার ফোনটার কথা একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, সরি আ…

আর কিছু বলার আগেই রিনি শুভর মুুখ চেপে ধরলো। হুট করে রিনির এমন কাজে চোখ বড় বড় হয়ে যায় শুভর। রিনি শুভর চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,

‘ আমি এখানে আপনার সাথে ঝগড়া করতে আসে নি সো বি কেয়ারফুল।’

রিনির শীতল ভেজা কন্ঠ শুনে যেন এক শিহরণ বয়ে গেল শুভর ভিতর দিয়ে। সে শুধু মিটমিট চোখে তাকিয়ে রইলো রিনির মুখের দিকে। আজ যেন এক অন্যরকম ভালো লাগার মুখশ্রী ফুটে উঠেছে রিনির চেহারায়। অন্যদিকে রিনির হঠাৎই চোখ যায় তাঁর শুভর কপালের দিকে কপালের ডান দিকটায় লালচে হয়ে আছে যেন দু’দিন আগের ক্ষততে কিছুই করা হয় নি। রিনি শুভ মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,

‘ কপালে কি হয়েছে?’

বলতে না বলতেই রিনির আবার চোখ যায় শুভর বাম হাতের তালুর দিকে অনেকখানি কেটে গেছে। রিনি তো এতক্ষণ খেয়ালই করি নি বিষয়টা। রিনির শুভর কপাল এবং হাতটা দেখিয়ে বললো,

‘ আপনার এই কপাল এই হাত এগুলো কাটলো কি করে?’

বলেই রিনি তাকালো নিচে ফ্লোরের দিকে নিচে কিছু কাঁচ ভাঙা পড়ে আছে। এরই মধ্যে শুভ বলে উঠল,

‘ আসলে তখন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাই তখন সামনে ওই কাঁচের ফুলদানিটা হাতে লেগে পড়ে যায় নিচে আর তখনই হয়তো কাঁচের ওপর হাত লেগে কেঁটে যায়।’

‘ ওহ আর কপালের টা?’

কপালের কথা শুনতেই সেদিনের আদ্রিয়ানের অফিসের কথা মনে পড়ে গেল শুভর। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো সে,

‘ ওটা দুদিন আগে ওয়াশরুমে পড়ে গিয়েছিলাম আর কি?

‘ আশ্চর্য আপনি কি চোখে দেখেন না কি,এত বড় হয়েও ওয়াশরুমে পড়ে যান।’

উওরে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠল শুভ,

‘ আপনার ফোনটা আমার ওই সামনের ড্রয়ারের মধ্যে আছে দেখে নিন?’

উওরে রিনি আর কিছু না বলে এগিয়ে যায় ড্রয়ারের দিকে তারপর আস্তে আস্তে নিচের ড্রয়ার খুলতেই নিজের ফোনটা দেখতে পেল সে। ফোনটা পেতেই মুখে যেন হাসি ফুটে উঠলো রিনির। যেখানে দু’মিনিট ফোন ছাড়া থাকতে পারে না রিনি সেখানে আজ দু’দিন পর নিজের ফোনটা হাতে পেল সে। এরই মধ্যে ড্রয়ারের মধ্যে ফার্স্ট এইড বক্স আর একটা ফটো দেখতে পেল রিনি। রিনি বেশি কিছু না ভেবে দুটোই হাতে নিলো কারন ছবিটা আর কারো নয় আদ্রিয়ানের। রিনি বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ এই ছবিটা তো?’

রিনির কথা শুনে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো শুভ,

‘ ওটা আমার বড় ভাই আদ্রিয়ানের ছবি।’

শুভর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে শুভর দিকে এগোতে এগোতে বললো,

‘ উনি আপনার বড় ভাই।’

উওরে মাথা নাড়ায় শুভ। শুভর কথা শুনে রিনি বলে উঠল,

‘ ওনাকে চিনি আমি। আমার বড় আপুর বিয়ের সময় উনি আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন।’

‘ ওহ।’

‘ হুম। আপনার হাত দেখি?’

হুট করে রিনির এমন কথা শুনে শুভ চমকে বলে উঠল,

‘ কি?’

‘ আপনার হাত?’

এই বলে ফার্স্ট এইড বক্স থেকে স্যাভলন আর তুলো বের করে শুভর হাতটা ধরে পরিষ্কার করতে লাগলো রিনি। রিনির কাজে শুভ পুরোই অবাক হুট করে হাতে একটু জ্বলা অনুভব হতেই পুরো চমকে উঠলো সে। মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসলো তাঁর,

‘ উফ।’

শুভর কাজে রিনি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে শুভর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ সরি সরি

বলেই শুভর হাতে ফু দিতে লাগলো রিনি। আর শুভ জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রিনির মুখের দিকে। যেন আজ এক নতুন রিনিকে দেখছে সে। খোলা চুল,হাতে সাদা রঙের চুড়ি, পড়নে হাল্কা সবুজ রঙের জর্জেট থ্রি-পিচ, ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক, চোখে কাজল, মুখে হাল্কা মেকাপ এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে শুভর ভিতর। আনমনেই মুচকি হাসলো সে।’

_____

তুমুল বেগে দৌড়ে গাড়ি থেকে নেমে শুভর বাড়ির ভিতর ঢুকলো আদ্রিয়ান। কিছুক্ষন আগে তার রাখা গার্ডগুলোর কথা শুনে বেশ অবাক হয় আদ্রিয়ান পরক্ষণেই শুভ কোনো ভুলভাল কিছু করে ফেললো নাকি। যতই হোক আপন ভাই তো দরজা পর্যন্ত আসতেই থেমে পড়লো আদ্রিয়ান কেমন যেন এক সংকোচতা ফিল হচ্ছে তাঁর। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে শান্ত করে ভিতরে ঢুকে পরলো সে দরজা খোলাই ছিল শুভর। আদ্রিয়ান বেশি কিছু না ভেবেই সিঁড়ি বেয়ে চলে যায় উপরে দরজার কাছ পর্যন্ত আসতেই ভিতরে শুভর সাথে একটা মেয়েকে দেখে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে পড়ে সে। মেয়েটি আসলে কে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আদ্রিয়ান তবে মেয়েটাকে তার চেনা চেনা লাগছে কোথাও জেনো দেখেছে এর আগে কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা ঠিক মনে করতে পারছে না আদ্রিয়ান। আনমনেই কথাগুলো ভেবে চুপচাপ দরজার আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে রইলো আদ্রিয়ান। শুভ ঠিক আছে এটা ভেবেই তাঁর শান্তি।’

এদিকে….

রিনি শুভর হাত ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে উঠল,

‘ আপনি কি এখানে একা থাকেন? আইমিন আপনি কি একাই আপনার বাবা মা ভাই কেউ থাকে না এখানে?’

রিনির কথা শুনে শুভ নীরব কন্ঠে বললো,

‘ না আসলে ভাইয়া অফিসের কাজে খুব বিজি থাকে তো তাই আর কি?’

‘ তা তো বুঝলাম উনি থাকেন না আপনার সাথে না মানে আপনার এত জ্বর আসছে কেউ নেই তাই আর কি?’

‘ ছিল আপাতত কেউ নেই, আমার বাড়িতে একজন কাজের লোক আছে দু’দিন আগেই তার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গিয়েছে।’

‘ ওহ আর আপনার বাবা মা?’

‘ ওনারা আমি যখন ছোট তখনই মারা যান।’

‘ ওহ আই এম সরি।’

‘ ইট’স ওঁকে।’

‘ তবে যাই বলুন আপনার ভাইয়ের এই মুহূর্তে আপনার সাথে থাকা উচিত ছিল আপনার শরীর দেখে যা বুঝলাম তাতে আপনার গায়ে অনেক জ্বর।’

‘ ওসব ঠিক হয়ে যাবে ঔষধ খেয়েছি আমি, আর তাছাড়া ভাইয়া আমায় খুব ভালোবাসে বুঝলেন।’

‘ ওহ খুব ভালো তা দু’দিন যাবৎ জ্বর ডাক্তার দেখিয়েছেন কি?’

‘ ডাক্তার..

‘ হুম দেখিয়েছেন?

উওরে মাথা নিজের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নাড়ায় শুভ। শুভর মাথা নাড়ানো দেখে রিনিও আর বেশি কিছু না ভেবে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর শুভর কপালের জায়গাটাও ঠিক করতে লাগলো।’

এদিকে আদ্রিয়ান এদের হাল্কা কথোপকথন শুনে ভিতরে ভিতরে খুবই খারাপ লাগলো আজ দু’দিন যাবৎ ছোট ভাইটা অসুস্থ অথচ সে জানতেই পারলো না। নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হচ্ছে তার আদ্রিয়ান আর ভিতরে ঢুকলো না বাহির থেকেই শুভকে দেখে। আর কিছু একটা ভেবে নিজের মোবাইলে ওদের একটা ছবি তুলে বেরিয়ে যায় সে। অতঃপর শুভ জানলোই তার ভাই এখানে এসেছিল।’

পুরো বিকেলটা জুড়েই রিনি ছিল শুভর সাথে শুভর হাল্কা সেবাযত্ন করে সাথে তাঁর রুমের কাঁচ ভাঙাগুলোও পরিষ্কার করে শুভর মোবাইলটা শুভকে ফেরত দিয়ে আর নিজের ফোনটা নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে যায় সে। অবশ্য যাওয়ার আগে শুভ ‘থ্যাংক ইউ’ বলে রিনিকে। রিনিও মুচকি হেঁসে ‘ইট’স ওকে’ বলে চলে যায়।’

____

পরেরদিন সকালে…

মুখে পানি পড়তেই এক প্রকার লাফ মেরে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো আহি। সামনেই সক্কাল সক্কাল রিনিকে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,

‘ তুই এখানে?’

‘ হুম আমি কারন আজ তোর বদলে আমি নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবো?’

রিনির কথা শুনে ঘুম গায়েব আহির চোখ বড় বড় করে বললো সে,

‘ কি?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২৪
_________________

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আহি রিনির মুখের দিকে যেন রিনি কি বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেছে। রিনি আহির অবস্থা বুঝতে পেরে ফিক করে হেঁসে দিল তারপর বললো,

‘ কি মাথার গিলু উল্টে গেলো তো?’

উওরে আহিও তাঁর মাথা চুলকাতে চুলকাতে ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘ হুম।’

‘ জানতাম এমনই হবে এই দেখেন,

বলেই নিজের পিছনে থাকা হাতটা বের করে বললো রিনি,

‘ আপনার লেখা প্রেমপত্র যেটা আজ আর এক্ষুনি নীরব ভাইয়ার কাছে যাবে।’

রিনির কথা শুনে আহি অবাক হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে রিনি দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠল,

‘ প্লিজ এমন করিস না ওটা আমায় দিয়ে দে?’

আহিকে নিজের দিকে আসতে দেখে রিনিও অন্যদিকে যেতে যেতে বলে উঠল,

‘ তা তো আর হচ্ছে না বাবু আজকে তো তোমায় প্রপোজ করতেই হবে আর তুমি না পারলে আমি আজ করেই ছাড়বো তাও আবার তোমার নাম নিয়ে?’

‘ এমন করো কেন আমি কি বলেছি প্রপোজ করবো না ভাইয়ার সামনে গেলেই তো হার্ট বিট কয়েকশত বেড়ে যায় আর এতটাই বেড়ে যায় যে আমি কিছু বলতেই পারি না।’

‘ ওতো শতো জানি না আজ তোমাকে প্রপোজ করতেই হবে?’

‘ একটু বোঝ বোইন, যদি নীরব ভাইয়া রাগ করে?’

‘ কঁচু করবে কিচ্ছু করবে না বি পজিটিভ।’

‘ তারপরও আমার ভয় লাগে।’

‘ তোর ভয়ের গুষ্টি কিলাই, একটু বোঝ এখন যদি তোর জায়গায় অন্যকেউ নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করে তখন কি হবে? জানিস একটু আগেই দেখলাম আমাদের ক্লাসের ঊষা মেয়েটা আছে না রাস্তায় দাঁড়িয়ে গোলাপ কিনেছে নিশ্চয়ই আজ নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবে আমি প্রায় দেখেছি ও নীরব ভাইয়াকে দেখলেই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে তাই বলছি আজ আর এক্ষুনি গিয়ে নীরব ভাইয়াকে তোর ভালোবাসার কথা বলে দে।’

‘ তুই সত্যি বলছিস ওই ঊষা আজ নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবে?’

‘ হুম তাই তো এই সকাল বেলা তোকে নিয়ে ভার্সিটি যাবো বলে এসেছি?’

‘ সত্যি?’

‘ তা নয় কি এমনি এমনি আসছি নাকি তোদের বাসায় এই জন্যই তো এসেছি?’

রিনির কথা শুনে এবার বেশ ভাবনাশীলের মুখের পড়ে গেল আহি, তাহলে কি সত্যি সত্যি আজ ঊষা নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবে না না এমনটা হতে পারে না। আহি রিনির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ তুই সত্যি এই জন্যই এসেছিস?’

‘ আরে বাবা হুম, এখন চল তাড়াতাড়ি না হলে দেরি হয়ে যাবে?’

এমন সময় ওদের রুমে ঢুকলো আহির মা ওদের কথা শুনে তেমন কিছু না ভেবেই বলে উঠলেন উনি,

‘ কিসের দেরি হয়ে যাবে?’

আহির মায়ের কথা শুনে আহি রিনি হকচকিয়ে উঠলো রিনি একবার আহির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল আহির মাকে,

‘ আসলে আন্টি ওই ভার্সিটি যেতে দেরি হয়ে যাবে সেটাই বলছিলাম দেখো না তোমার মেয়েকে সেই কখন থেকে বলছি তৈরি হতে কিন্তু আমার কথা শুনছেই না।’

রিনির কথা শুনে আহির মা মুচকি হেঁসে আহির বিছানা ঠিক করতে করতে বললেন,

‘ ও তো এমন নি ওর থেকে নীরব বেশ ভালো প্রতিদিন টাইম টু টাইম সব কাজ করে কতক্ষণ আগেই দেখলাম রেডি হয়ে চলে গেল হয়তো ভার্সিটি যাচ্ছে?’

আহির মায়ের কথা শুনে আহি রিনি একে অপরের দিকে তাকালো রিনি তো বলেই উঠলো,

‘ নীরব ভাইয়া চলে গেছে আন্টি?’

‘ হুম কিছুক্ষন আগেই বের হতে দেখলাম তো।’

‘ ওহ।’

এতটুকু বলে রিনি আহির কাছে গিয়ে বললো,

‘ তাড়াতাড়ি গিয়ে তৈরি হ তা না হলে…

উওরে আহিও আর বেশি কিছু ভেবে দৌড়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।’

আর রিনি একটা শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বলে উঠল,

‘ আজ তো তোমায় প্রপোজ করতেই হবে চান্দু।’

বলেই হেঁসে ফেললো রিনি।’

কিছুক্ষনের মধ্যেই আহি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো তারপর জিন্স আর টপস পড়ে না খেয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সে। যদিও আহির মা বলেছিল খেয়ে যেতে কিন্তু আহি শুনতে নারাজ অনেক তাড়ায় আছে সে। তবে রিনি বেশ আগ্রহ নিয়ে আহির ঠিটিটা হাতে নিয়ে আরামসে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। সকালেই আহির টেবিলের নিচের ড্রয়ার থেকে এটাকে পেয়েছে যদিও সে পড়ে দেখে নি। এক রহস্যময়ী হাসি দিয়ে চললো সে আহির পিছন পিছন।’

তাঁরপর রিনির আনা গাড়ি করেই চললো আহি আর রিনি ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।’

____

অফিসে নিজের রুমের চেয়ারে বসে আছে আদ্রিয়ান। তাঁর সামনেই টেবিলের উপর তার মোবাইলে কালকের তোলা শুভ আর রিনির ছবিটা। আদ্রিয়ানের দৃষ্টি সেদিকেই, এমন সময় তাঁর রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো নিলয়। হেঁটে আদ্রিয়ানের সামনে এসে বললো সে,

‘ ডেকে ছিলি?’

হুট করেই নিলয়ের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠে আদ্রিয়ান তারপর বললো,

‘ হুম দেখতো শুভর সাথে এই মেয়েটাকে চিনিস কি না?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ কি শুভর সাথে মেয়ে? ও তো মেয়ে দেখলেই আপু বলে ডাকে আমি আজও বুঝলাম ও এখনও মেয়েদের দেখলেই আপু বলে কেন ডাকে?’

বলেই মোবাইলের ছবির মেয়েটার মুখ দেখেই বলে উঠল নিলয়,

‘ আরে ও তো রিনি?’

নিলয়ের কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ রিনি কে?’

‘ আমাদের বিজনেস পার্টনার আফজাল সাহেবের ছোট মেয়ে আরে যার বড় মেয়ের বিয়েতে আমরা গিয়েছিলাম তখনই তো দেখেছিলাম আইথিংক আহির ফ্রেন্ড হবে। এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি যে বিয়েতে তুই প্রেমপত্র পেয়েছিলি যদিও ওটা ভুল করে তোর কাছে চলে এসেছিল?’

নিলয়ের কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বললো আদ্রিয়ান,

‘ হয়েছে আর বলতে হবে না আমার মনে পড়েছে এই জন্যই মেয়েটাকে চেনা চেনা লেগেছিল।’

উওরে হাল্কা হেঁসে বললো নিলয়,

‘ হুম কিন্তু এই মেয়েটার সাথে শুভ কি করছে?’

‘ সেটাই তো প্রশ্ন খোঁজ লাগা মেয়েটার সাথে শুভর কি সম্পর্ক?’

‘ ঠিক আছে।’

বলেই চলে যায় নিলয়। এমন সময় আদ্রিয়ানের ফোনটা বেজে উঠল উপরে পিন্সিপালের নাম দেখে ধরেই বলে উঠল আদ্রিয়ান,

‘ হ্যালো।’

আদ্রিয়ানের হ্যালো শুনে অপরপাশে পিন্সিপাল বলে উঠল,

‘ তুমি কি একবার ভার্সিটি আসতে পারবে আদ্রিয়ান?’

‘ কেন কিছু কি হয়েছে স্যার?’

‘ না মানে একটু দরকার ছিল তুমি বিজি না হলে আসতে পারবে একবার?’

উওরে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে স্যার আমি আসছি।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে পিন্সিপালও খুশি হয়ে বললেন,

‘ থ্যাংক ইউ।’

‘ ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই স্যার।’

উওরে মুচকি হাসলেন পিন্সিপাল যদিও আদ্রিয়ান হাসিটা দেখতে পায় নি। পিন্সিপাল আবারো বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসো আদ্রিয়ান।’

‘ হুম।’

বলেই ফোনটা কেটে দেয় আদ্রিয়ান। তারপর বেশি কিছু না ভেবে সেও বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।’

___

কিছুদূর এগোতেই একটা ফুলের দোকানের সামনে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললো রিনি। রিনির কাজে আহি বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ এখানে গাড়ি থামাতে বললি কেন?’

‘ আরে বুদ্ধু প্রপোজ করতে যাচ্ছিস ফুল নিবি না।’

‘ প্রপোজ কি করতেই হবে আজ?’

‘ হুম।’

বলেই গাড়ি থেকে বের হলো রিনি। রিনিকে বের হতে দেখে আহিও বের হলো গাড়ি থেকে। তারপর দুজন মিলে একসাথে চললো ফুলের দোকানের ভিতরে। তারপর একটা সুন্দর লাল গোলাপ ফুল কিনে দোকানদারের বিল মিটিয়ে আবারো গিয়ে বসলো দুজন গাড়িতে। ওঁরা বসতেই আবারো ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করলো।’

বেশ কিছুক্ষনের মধ্যেই আহি রিনি পৌঁছে গেল ভার্সিটিতে। আহি তো ভয়ের চোটে গাড়ি থেকেই বের হতে চাইছিল না কিন্তু শেষমেশ রিনির জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে বের হতেই হলো তাকে। সে বেশ বুঝতে পেরেছে আজ রিনি তাকে নীরবকে প্রপোজ করিয়েই ছাড়বে।’

____

লাইব্রেরিতে চুপচাপ বইয়ের দিকে মুখ লুকিয়ে বসে আছে অথৈ। এমন সময় হঠাৎই টুং করে মেসেজ বেজে উঠল অথৈ। ফোনে উপরে রিনির মেসেজ দেখে সেও হাল্কা হেঁসে টাইপিং করলো,

‘ আমি লাইব্রেরিতে আছি তোরাও চলে আয়।’

উওরে রিনিও ‘ওকে’ মেসেজ দিলো। রিনির পরবর্তী মেসেজ সিন করে আবারো চোখ রাখলো বইয়ের পাতায় অথৈ।’

অন্যদিকে,

অথৈর সোজাসুজিই বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে নীরব। পরনে তাঁর এস কালার ফুল হাতার টিশার্ট, সাথে ওয়াইট পান্ট, চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে সাজানো, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। সাধারণত নীরবের এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মূল উদ্দেশ্য হলো অথৈকে প্রপোজ করা। বেশ কিছুদিন যাবৎই নীরব ভাবছে অথৈকে সে প্রপোজ করবে। কবে যে নিজের অজান্তে অথৈকে ভালোবেসে ফেললো নীরব নিজেই বুঝতে পারে নি। প্রথম যেদিন বাসে বসে অথৈর সাথে দেখা হয়েছিল নীরবের সেদিনই এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিল নীরবের ভিতর যেটা এর আগে অন্য কোনো মেয়েকে দেখে লাগে নি নীরবের। তারপর শ্রীমঙ্গলের সেদিনে রাতে কিছুক্ষন মুহূর্ত কাটানো, সাথে সেদিন আহিকে খুঁজতে গিয়ে হুট করেই তাঁর হাত ধরা, সাথে রোজ লাইব্রেরিতে সময় কাটানো সবকিছুই বেশ ভালো লাগে নীরবের।’

একরাশ অস্থিরতা, একরাশ অনুভূতিশীল হৃদয় সাথে হাতে একটা গোলাপ নিয়ে জোরে শ্বাস ফেলে এগিয়ে চললো নীরব অথৈর দিকে।’

অন্যদিকে লাইব্রেরির কাছ পর্যন্ত আসতেই রিনির চোখ যায় নীরবের দিকে এদিকেই এগিয়ে আসছে। তাদের মাঝ বরাবরই বসে আছে অথৈ। রিনির আহির হাত ধরে বললো,

‘ এই সুযোগ আহি দেখ লাইব্রেরিতে এখন কেউ নেই তেমন, চটজলদি গিয়ে নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবি আয়?’

বলেই আহির হাত ধরে এগিয়ে গেল অথৈ আর নীরবদের দিকে।’

.

চুপচাপ ফুলহাতে অথৈ এর ভাবনায় মগ্ন হয়েই এগিয়ে আসছিল নীরব। এতটাই অথৈ তে মগ্ন ছিল যে সে আহি আর রিনিকে খেয়াল করে নি। নীরব অথৈর দিকে এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

‘ অথৈ..

হুট করেই নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠে, উঠে দাঁড়ালো অথৈ তারপর বললো,

‘ জ্বী বলুন?’

‘ তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল, অথৈ?’

‘ জ্বী বলুন কি বলবেন আমায়?’

‘ আমায় খারাপ ভাব্বে না তো?’

‘ আরে কিসব বলছেন আপনি খারাপ কেন ভাববো কিছু ভাববো না বলে ফেলুন।’

উওরে জোরে শ্বাস ফেলে বলে উঠল নীরব,

‘ আমি তোমায় আইমিন আই লাভ ইউ..

হুট করে নীরবের মুখে এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় অথৈর। ভয়ংকরভাবে অবাক হয়ে বললো সে,

‘ কি?’

‘ জানি না কখন কোথায় কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়, কিন্তু তোমার খুব ভালোবাসি আমি, আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ।’

‘ এসব আপনি কি বলছেন এগুলো সম্ভব নয় কারন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি, আর তাছাড়া আপনাকে আ…

আর কিছু বলার আগেই পিছন থেকে রিনি বলে উঠল,

‘ নীরব ভাইয়া?’

সাথে সাথে অথৈ নীরব দুজনেই বেশ অবাক হলো অথৈ তো প্রচন্ড ঘাবড়ে গেল না জানি আহি সবটা শুনে ফেলেছে কি না?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..