বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
255

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২৫+২৬+২৭
_________________

ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আহি নীরবের দিকে। সময়টা যেন তাঁর ওখানেই থমকে গেছে, সে ভাবতেই পারে নি নীরব অথৈকে ভালোবাসবে। শরীর যেন ওখানেই আঁটকে গেছে তাঁর বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। এতদিনের তাঁর একটু একটু করে গড়া অনুভূতিগুলো যেন আজ এক নিমিষেই ভেঙে চুড়ে চুরমার হয়ে গেল। চোখে পানি টলটল করছে আহির এই মুহূর্তে সে ঠিক কি করবে বা কি করা উচিত সবকিছুই যেন ভুলে গেছে আহি। শুধু স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সে নীরব আর অথৈর দিকে।’

এদিকে….

অথৈরও যেন সেইম অবস্থা। আহিকে এমন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড ঘাবড়ে গেছে সে। হুট করে এমন একটা বাজে পরিস্থিতিতে পড়বে সে এটা যেন একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল তাঁর। অথৈ আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল আহির দিকে তারপর আহির হাত ধরতে গিয়ে বললো,

‘ আহি,

আর কিছু বলার আগেই আহি তার হাত উঠিয়ে চুপ করিয়ে দিল অথৈকে। এতে যেন অথৈ আরো বেশি ঘাবড়ে গেল হয়তো সে যেটার ভয় পেয়েছিল সেটাই হয়েছে। আহি ছলছল চোখে একবার নীরব আর একবার অথৈর দিকে তাকিয়ে তেমন কিছু না বলেই এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেল লাইব্রেরি থেকে। আহির কাজে প্রচন্ড খারাপ লাগে অথৈর। অন্যদিকে রিনি এগিয়ে আসলো নীরবের দিকে। নীরব এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছিল সবটা। আহি কেন হুট করে দৌড়ে চলে গেল এটাই যেন বুঝতে পারলো না সে। এরই মধ্যে রিনিকে নিজের দিকে আসতে দেখে বলে উঠল নীরব,

‘ ওই এইভাবে চলে গেল কেন?’

নীরবের কথা শুনে হতাশ হয়ে বলে উঠল রিনি,

‘ তুমি কি সত্যি কিছু বুঝতে পারছো না নীরব ভাইয়া?’

‘ কি হয়েছে সেটা বলবি তো?’

‘ এরপরও তুমি বলবে কি হয়েছে।’

‘ আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছি না রিনি গুছিয়ে বল না আমায়?’

‘ আর কি বলবো তোমায় যা করার সব তো তুমি আগেই করে দিয়েছো।’

রিনির কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো নীরব,

‘ আমি সত্যি বুঝতে পারছি না রিনি?’

‘ আরে ভাইয়া আহি তোমায় সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসে এটা বুঝতে পারছো না অবশ্য এখন আর বুঝে কি করবে তুমি তো এখন অন্য কাউকে ভালোবাসো।’

বলেই একপলক অথৈর দিকে তাকিয়ে চলে যায় সে আহিকে খুঁজতে। অথৈও কোনোদিক আর তাকিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে যায় ওখান থেকে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে তাঁর। যদিও এসবে তাঁর কোনো দোষ ছিল না। তারপরও তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে এই মুহূর্তে।’

অন্যদিকে অথৈ আর রিনির যাওয়ার পানে জাস্ট অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নীরব যেন এইমাত্র রিনি তাঁকে ঠিক কি বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল। আনমনে নিজেই নিজেকে বলে উঠল,

‘ আহি আমায় ভালোবাসে?’

____

এদিকে লাইব্রেরির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ঠিক কি কি হলো সবই দেখেছে আদ্রিয়ান। সাথে এতক্ষণ ঠিক কি কি হয়েছে সেই জিনিসটা সাজাতে তাঁর কিছুক্ষন সময় লেগেছে। কতক্ষন আগেই গাড়ি করে ভার্সিটি এসেছিল আদ্রিয়ান আর তখনই গেটের ভিতর আহি সাথে কালকের শুভর সাথে থাকা মেয়েটিকে দেখতে পায় আদ্রিয়ান। শুরুতে তো প্রচন্ডই অবাক হয় পরক্ষণেই ওদের পিছন পিছন লাইব্রেরিতে চলে আসে আদ্রিয়ান। মূলত এখানে আসার মূল কারন হলো রিনিকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া যতই হোক কাল সে তাঁর ছোট ভাইটাকে সাহায্য করলো,সেবাযত্ন করলো। এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান আসে লাইব্রেরির দরজা পর্যন্ত আর তখনই আহি আর রিনির কথোপকথন শুনতে পায় সে। আর ওদের কথা শুনে যা বুঝতে পারলো সেটা হলো আহি কাউকে তাঁর ভালোবাসার কথা বলবে। শুরুতে কেমন যেন একটু খারাপ লাগছিল আদ্রিয়ানের কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে পুরো জিনিসটা দেখতে লাগলো সে কিন্তু শেষমেশ যা হলো সেটা যেন আদ্রিয়ানেরও ভাবনার একদমই বাহিরে ছিল। আহি যাকে ভালোবাসে সে নাকি আবার অন্য কাউকে ভালোবাসে। আহির জন্য খুবই খারাপ লাগলো আদ্রিয়ানের। আহির স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাথে হুট করে দৌড়ে চলে যাওয়া সবকিছুই আদ্রিয়ান দেখেছে। আর সব দেখে সে বেশ বুঝতে পেরেছে খুব গুরুতরভাবেই একটা আঘাত পেয়েছে আহি। আদ্রিয়ান ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আহি যে পথ দিয়ে গিয়েছিল সেদিক দিয়েই হাঁটা শুরু করলো।’

___

ভার্সিটির পিছনে একটা গাছের আড়ালে থাকা বেঞ্চের ওপর বসে আছে আহি। বেঞ্চের পাশেই শুকনো মাটিতে ছিঁড়ে পড়ে আছে আহির আনা গোলাপ আর চিঠিটা। চোখ বেয়ে পরছে তাঁর নোনা পানি, কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তাঁর। এই জন্যই হয়তো বলে কাউকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ভালো বাসতে নেই মানুষটা তাঁর না হলে যে প্রচন্ড কষ্ট হয়। এমন সময় আহির কাঁধে হাত রাখলো রিনি, কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই আহি চটজলদি তাঁর চোখের পানি মুছে পিছন ঘুরে তাকালো রিনির দিকে। চোখের পানি মুছলেও আহির চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছে রিনি যে আহি এতক্ষণ কেঁদে ছিল৷ রিনি ছলছল চোখে আহির দিকে বললো,

‘ চোখের পানি মুছে ফেললেই কি কান্নার ছাপ চলে যাবে আহি?’

রিনির কথা শুনে আহি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না রিনিকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো সে। আহির কান্না দেখে রিনিরও কান্না পাচ্ছে খুব সেও আহিকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেঁজা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আই এম সরি দোস্ত তোকে সকালে যদি জোর করে না নিয়ে আসতাম তাহলে হয়তো এসব কিছুই তোকে দেখতে হতো না। সবসময় শুধু তোকে বলতাম নীরব ভাইয়াকে হয়তো এই মেয়ে পছন্দ করে, সেই মেয়ে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে, ওই মেয়ে ভালোবাসে কিন্তু কখনো এই জিনিসটা মাথাতেই আসে নি নীরব ভাইয়া নিজেও তো অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসতে পারে। তোকে কি বলে সান্ত্বনা দিবো ভুলে গেছি আমি। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস বোইন।’

উওরে আহিও কান্নাভেজা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আমার এতদিনের অনুভূতিগুলো ভেঙে চুরে তছনছ হয়ে গেল রিনি, আমার কল্পনা, নীরব ভাইয়াকে নিয়ে গড়া স্বপ্ন, ইচ্ছে, অনুভূতি, ভালোবাসা সবই যেন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।’

বলতে বলতে ঠুকরে কেঁদে উঠলো আহি। আহির কথা শুনে রিনির কি বলবে ভুলে গেছে সে। আহিও জন্য তারও খারাপ লাগছে খুব।’

আর এদের দেখে অল্প কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। ভিতর থেকে প্রচন্ড ভেঙে গেছে সে তাঁর জন্যই আজ এত কষ্ট পাচ্ছে অথৈ। এক নিজে যাকে ভালোবাসে তাকে তো কখনো খুঁজেই পেলো না উল্টো তাঁর জন্য অন্য আরেকজনের হৃদয় ভেঙে গেল। ভাবতেই খারাপ লাগছে অথৈর। চোখের চশমাটা চোখের পানিতে ভিজে গেছে অনেকটাই। অথৈ তাঁর চোখের চশমাটা খুলে গায়ের ওড়না দিয়ে মুছে নিলো। ভেবেছিল একবার যাবে আহির কাছে কিন্তু সাহস আর হলো না তাঁর, তাই ওখানে দাঁড়িয়ে থেকেই উল্টো দিকে হাঁটা দিলো অথৈ। এরই মধ্যে হুট করেই একটা ছেলে আইমিন আদ্রিয়ানকে দেখে হাল্কা চমকে উঠে একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে তক্ষৎনাত জায়গা ত্যাগ করলো সে। আজ আর ভার্সিটি থাকবে না অথৈ এক্ষুনি বাড়ি চলে যাবে। হুট করে এমন এক ভয়ংকর সিচুয়েশনে পড়বে অথৈ এটা ভাবতেই পারে নি। চোখের পানি মুছতে মুছতে দৌড়ে বেরিয়ে গেল সে ভার্সিটি থেকে।’

অন্যদিকে আদ্রিয়ানেরও বেশ খারাপ লাগছে আহির জন্য। যদিও আহিকে সে সহ্য করতে পারে না মোটেও কিন্তু কালকে আহির সাথে কিছুটা সময় কাটানোর পর সাথে আজ আহির চোখের পানি দেখে তাঁর ভিতরটা খা খা করছে। এক অজানা শূন্যতা এসে গ্রাস করলো আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না কিসের শূন্যতা ফিল হচ্ছে তাঁর। আর কিসেরই বা এত খারাপ লাগা। এমন সময় আদ্রিয়ানের ভাবনার মাঝখানে ওর ফোনটা বেজে উঠল উপরে পিন্সিপালের নাম্বার দেখে ফোনটা তুলে বললো আদ্রিয়ান,

‘ এই তো স্যার আসছি আমি?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অপরপাশে পিন্সিপালও বলে উঠল,

‘ ওকে।’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল। তারপর কিছুক্ষন আহির দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস থেকে চলে যায় সে পিন্সিপালের রুমের উদ্দেশ্যে।’

আকাশটা রোদ্দুরের চিক চিক করছে খুব। সময়টা কম হলেও দুপুর এগারোটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। চারিদিকে গাছের পাতারা বাতাসে স্পর্শে হাল্কা হাল্কা দুলছে, পাখিরাও উঁড়ে চলছে দূরে। এসবের মাঝেই কান্নার মাধ্যমে নিজের অনুভূতিগুলোকে একে একে যেন হারিয়ে ফেলছে আহি।’

____

পিন্সিপালের রুমে চুপচাপ বসে আছে আদ্রিয়ান। পাশেই পিন্সিপাল তাঁকে কিছু বলছে। মূলত আদ্রিয়ানকে এখানে ডাকার পিছনে দুটো কারন এক শুভর ব্যাপারে কিছু কথা বলা সাথে সামনের ভার্সিটির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আদ্রিয়ানকে চিপ গেস্ট হিসেবে নিমন্ত্রণ করা। এসব বিষয় নিয়েই আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলছে পিন্সিপাল। আর আদ্রিয়ান চুপচাপ বসে বসে শুনছে হ্যাঁ না কিছুই বলছে না সে, তাঁর মনটা যেন ব্যাকুল হয়ে রয়েছে আহির জন্য। চোখের সামনে বার বার আহির সেই চোখ ভেজা কান্নারত চেহারাটা ভাসছে তাঁর। একরাশ অস্থিরতা ফিল হচ্ছে আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান এটাই বুঝতে পারছে না এত খারাপ কেন লাগছে তাঁর। কেনই বা বার বার মনে হচ্ছে তাঁর, দৌড়ে গিয়ে বলুক আহিকে,

‘ প্লিজ কেঁদো না তোমার কান্না ভেঁজা চেহারাটা আমি জাস্ট নিতে পাচ্ছি না। তোমার জন্য আমারও ভিষণ কষ্ট হচ্ছে আহি।’

আদ্রিয়ান তাঁর অস্থিরতা নিয়ে বলে উঠল পিন্সিপালকে,

‘ স্যার আমার একটু তাড়া আছে যদি সবকিছু একটু তাড়াতাড়ি বলতেন?’

‘ হুম আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেছি, ঠিক আছে আর তোমায় বসিয়ে রাখবো না

এই বলে শুভর কিছু জিনিস সাথে একটা ইনভিটেশন কার্ড দিল আদ্রিয়ানের কাছে। অন্যসময় হলে শুভকে নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতো আদ্রিয়ান কিন্তু আজ যেন কিছুই ভালো লাগছে তাঁর। আদ্রিয়ান সব জিনিসগুলো হাতে নিয়ে পিন্সিপালকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে চলে গেল। পিন্সিপালও খুশি মনে বিদায় জানালো আদ্রিয়ানকে।’

আদ্রিয়ান ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসার আগে আরেকবার গিয়েছিল ভার্সিটির পিছনে আহিকে দেখতে। কিন্তু আহি নেই হয়তো চলে গেছে। তারপর নানা কিছু ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ান গিয়ে বসলো তাঁর গাড়িতে। সে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করলো। আর আদ্রিয়ানও তাঁর শুন্যতা ঘেরা হৃদয়টা নিয়ে এগিয়ে গেল নিজের গন্তব্যের দিকে।’

____

বিকেল চারটা…..

ছাঁদের এক কিনারায় চুপ দাঁড়িয়ে আছে আহি। মনটা তাঁর ভিষণই খারাপ। চুপচাপ উপরে থাকা মুক্ত করা সাদা আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে সে। আজ যেন সবকিছুই শূন্য লাগছে তাঁর। এরই মধ্যে মুক্ত করা আকাশ বেয়ে উড়ে যাচ্ছে এক ঝাঁক পাখি, আর এক ঝাঁক পাখিদের ছেড়ে তাদেরই পিছন পিছন উড়ে যাচ্ছে একটা পাখি। হয়তো তারও আহির মতো মন খারাপ খুব। তাই এমন হাজারের ভিড় ছেড়ে একলা পথে হাঁটছে সে।’

এই মুহূর্তে আহির মনে পড়ছে সেদিনের সেই বাবুইপাখিটার কথা, তার অনুভূতিহীনভাবে চলে যাওয়ার কথা। আহিরও মনে হচ্ছে সেই বাবুইপাখিটার মতো তাঁর অনুভূতিগুলোও অনুভূতি হয়েই রয়ে গেল প্রকাশ করা আর হলো না। আহি আনমনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল,

‘ আমার ‘বাবুইপাখির অনুভূতি’ গুলো যে অনুভূতি হয়েই রয়ে গেল নীরব ভাইয়া। তোমার সাথে আর হাজানো হলো না, অবশ্য এতে তোমার কোনো দোষ নেই, হয়তো আমিই তোমায় নিয়ে বেশি বেশি স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। আর তাই আজ এত কষ্ট হচ্ছে।’

এমন সময় ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আহির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠল নীরব,

‘ আহি,,

হুট করেই সেই প্রিয় মানুষটা নীরবের কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে উঠলো আহি। চটজলদি চোখের পানি মুছে পিছন ফিরে তাকালো সে। তারপর হাল্কা হেঁসে বললো আহি,

‘ হুম বলো ভাইয়া?’

আহির কথা শুনে নীরব এগিয়ে এসে আহির মুখোমুখি দাঁড়ালো তারপর বললো,

‘ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে আহি?’

উওরে আহিও বলে উঠল,

‘ হুম বলো না কি বলবে আমায়।’

আহির এই স্বাভাবিকভাবে কথা বলাটায় আজ কেমন যেন লাগছে নীরবের তাহলে কি সকালে রিনি যা বললো তাই সত্যি। নীরব কিছুক্ষন চুপ থেকে ছাঁদের কিনারা দেখিয়ে বললো,

‘ চল ওখানে বসি।’

নীরবের কথা শুনে আহি বেশ স্বাভাবিকভাবে বলে উঠল,

‘ বসতেই হবে?’

‘ হুম কতদিন হলো বলতো এইভাবে আমরা বসি না চল বসি।’

বলেই আহির হাত ধরে ছাঁদের কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো নীরব। নীরবের কাজে আহিও বাধ্য হয়ে বসে পড়লো ছাঁদের কিনারায়।’

উল্টোদিক ফিরে চুপচাপ বসে আছে আহি। প্রচন্ড খারাপ লাগছে আহির সাথে কান্নাও পাচ্ছে কিন্তু কাঁদবে না সে। কোনোভাবেই এই মুহূর্তে নীরবকে তাঁর চোখের পানি দেখাতে চায় না আহি। আহি যথাসম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

‘ হুম এখন বলো ভাইয়া তুমি কি বলবে আমায়?’

আহির কথা শুনে নীরবও সরল কন্ঠে বেশি কিছু না ভেবেবলে উঠলো,

‘ তুই আমায় ভালোবাসিস আহি?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২৬
_________________

বিষন্ন ভরা মুখ আর ছলছল চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আহি নীরবের দিকে। এই মুহূর্তে ঠিক নীরবের ‘ভালোবাসিস’ প্রশ্নের উওর হিসেবে কি দেওয়া উচিত আহি বুঝতে পারছে না। এই প্রশ্নটা যদি আর আট ঘন্টা আগে করতো নীরব তাহলেও হয়তো হাসি মুখে খুশি হয়ে উওর দিতো আহি। হুম তোমায় আমি ভিষণ ভালোবাসি ভাইয়া। সেটাও আজ থেকে নয় সেই ছোট্ট বেলা থেকে। সেই ছোট বেলা থেকেই তোমায় নিয়ে হাজারো অনুভূতি, হাজারো ছন্দ, হাজারো গল্প, হাজারো কল্পনার রাজ্য বুনেছি আমি। কিন্তু আজ যেন এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল। আহিকে ভাবনাশীল হয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো প্রশ্ন করলো নীরব,

‘ কি হলো কথা বলছিস না কেন ভালোবাসিস আমায়?’

নীরবের আবারো একই প্রশ্ন শুনে মুচকি হেঁসে বললো আহি,

‘ হঠাৎ তোমার মাথায় এই ধরনের প্রশ্ন এলো কোথা থেকে?’

‘ কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা উওর দে আমায় তুই কি ভালোবাসিস আমায়?’

এবার আর আহি চুপ থাকতে পারলো না নীরবের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বলে উঠল আহি,

‘ হুম তোমায় ভালোবাসি আমি। সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোমায় আমি ভালোবাসি ভাইয়া।’

আহির কথা শুনে এবার যেন সত্যি সত্যি শকট হলো নীরব সে ভাবতেই পারে নি সকালের রিনির বলা কথাগুলোই সত্যি হবে। এখন কি বলবে নীরব ঠিক বুঝতে পারছে না। সে কখনোই আহিকে সেই নজরে দেখে নি দেখেছে শুধু নিজের ছোট বোন হিসেবে। সবসময় ছোট বোনের মতোই আগলে রেখেছে আহিকে। কিন্তু আহি যে তাকে নিয়ে অন্য স্বপ্ন দেখছিল এটা কল্পনাও করতে পারে নি নীরব। নীরবকে চুপ থাকতে দেখে আহি বেশ বুঝতে পেরেছে নীরবের মাথায় এখন কি চলছে। আহি নিজেকে সামলে নিয়ে হাল্কা হেঁসে নীরব কন্ঠে বললো,

‘ তবে তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমাকে কখনোই সেই নজরে দেখো নি। তাই বেশি ভাবার প্রয়োজন নেই, তোমায় আমায় ভালোবাসতে হবে না।’

বলেই মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো আহি। আহিকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীরব কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আহির দিকে তারপর আহির হাত ধরে বলে উঠল সে,

‘ বিশ্বাস কর আহি আমি কখনোই তোকে নিয়ে এইরকম কিছু ভাবি নি বা তুই যে আমায় নিয়ে অন্য কোনো স্বপ্ন দেখছিলি সেটাও বুঝতে পারি নি। আমি তোকে সবসময় আমার ছোট বোনের চোখে দেখেছি আর এখন তো আমি অথৈকে ভালোবাসি। প্লিজ আমায় তুই ক্ষমা করে দে, আহি?’

নীরবের কথা শুনে মুচকি হাসলো অথৈ। তারপর নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো আহি,

‘ ক্ষমা কিসের চাইছো ভাইয়া? এতে তোমার কোনো দোষ নেই। আমি যাকে ভালোবাসবো সেও যে আমাকে ভালোবাসবে এমনটা তো না। সবাই যে সবার ভালোবাসার মানুষটাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবে সেটাও যে সবসময় হতে হবে এমনটা তো নয়। আর দুনিয়াতে এমন কত মানুষ আছে যারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে পায় না আমিও না হয় তাদের দলেরই একজন। তুমি টেনশন নিও না আমি ঠিক আছি।’

নীরব শীতল ভেজা কন্ঠে নিরাশ হয়ে বললো,

‘ এখন কি তবে তুই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবি,আহি?’

নীরবের কথা শুনে শরীরটা যেন কেঁপে উঠলো আহির। নীরবের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে এটা তো কাল্পনিক কালেও সম্ভব নয়। আহি ছলছল চোখে নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ না কথা কেন বন্ধ করবো? শুধু আজ যা হয়েছে সব ভুলে যাবো আর তুমিও ভুলে যেও যে ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’ এই কথাটা।’

উওরে নীরব কি বলবে বুঝতে পারছে না। আজকের সময়টা যেন সত্যি খুব বেমানান। সে ভাবে নি আজকের দিনটা তাঁর এমন কাটবে। অথৈকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে এটা একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল নীরবের। নীরব হাল্কা হেঁসে বললো আহিকে,

‘ দেখবি তুই আমার থেকেও খুব ভালো কাউকে পাবি জীবন সঙ্গী হিসেবে।’

নীরবের এবারের কথা শুনে আহি শুধু হাসলো তবে কিছু বললো না। আহিকে চুপ থাকতে দেখে নীরব আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আজ আকাশটা খুব নিরিবিলি তাই না আহি?’

উওরে আহিও বেশি কিছু না ভেবে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ হুম।’

এরপর আর কোনো কথা হয়নি দুজনের মধ্যে। দু’জনেই শুধু চুপচাপ ছাঁদের কিনারায় বসে তাকিয়ে রইলো মুক্ত করা আকাশটার দিকে।’

এরপর সময়ের গতি পথে,
বলতে না বলতেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। আলোকিত আকাশটায় ধীরে ধীরে নেমে আসলো লালচে আলো। ওই যে সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বাভাস। চারপাশ দিয়েই বয়ে আসছে মুক্ত করা ঠান্ডা বাতাস। সন্ধ্যা নামতেই উল্টো দিক দিয়ে উড়ে আসলো এক ঝাঁক পাখি তবে এবার আর সেই একলা চলা পাখিটা এলো না। আহি নীরব দুজনেই তাকিয়ে রইলো সেদিকে। কিছুক্ষন যেতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আহি। তারপর নীরবকে উদ্দেশ্য করে বললো সে,

‘ ঠিক আছে ভাইয়া এখন যাই, তুমি তো জানো আম্মু সন্ধ্যার সময় বাহিরে বা ছাঁদে থাকা পছন্দ করে না। তাই এখন যাচ্ছি পরে আবার কথা হবে? আর হ্যাঁ কিছুক্ষন আগের কথাগুলো ভুলে যেও কিন্তু?’..

বলেই উল্টো দিক ঘুরে হাঁটা শুরু করলো আহি। আজ আর ঘুরে তাকালো না সে নীরবের দিকে। হয়তো ঘুরে তাকালেই নীরব তাঁর কান্না ভেঁজা চেহারাটা দেখে ফেলতো। এতক্ষণ নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেও এবার আর পারলো না আহি। এতক্ষণ আঁটকে রাখা চোখের পানি সব এক নিমিষে বেরিয়ে যেতে লাগলো।’

অন্যদিকে নীরব বেশ বুঝতে পেরেছে আহি ভিষণ কষ্ট পেয়েছে কিন্তু সেই বা কি করবে সে তো আর আহিকে ভালোবাসে না। সে তো ভালোবাসে শুধু অথৈকে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো নীরব এ কোন মায়াজালে আঁটকে পড়লো তার জীবন, আর কবেই বা সব ঠিক হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে নীরব একটাই প্রার্থনা করলো,

‘ আহি যেন বেশি কষ্ট না পায়, আর খুব তাড়াতাড়ি সব ভুলে আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়।’

____

রাত ৯ঃ০০টা…

হসপিটাল থেকে বেরিয়ে একটা সুনসান রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আহি। কয়েক ঘন্টা আগেই আহি এসেছিল হসপিটালে। আজ বড্ড মন খারাপ থাকায় বিকেলে হসপিটালে আসে নি আহি। কিন্তু সে না আসাতে একজন লিটেল ফ্রেন্ড যে না খেয়ে থাকবে এটা সত্যি অজানা ছিল আহির। ভিতরে ভিতরে খুবই ভালো লেগেছে আহির। তাই তো হসপিটাল থেকে ফোন আসতেই চলে আসলো সে হসপিটালে তারপর সেই লিটেল ফ্রেন্ডকে খাইয়ে দাইয়ে তাঁর সাথে কিছুক্ষন কাটিয়ে জাস্ট হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসলো আহি। আজ সারাদিন ঠিক কি কি ঘটলো সবই যেন চোখের সামনে ভেসে আসলো আহির। আহি হাঁটতে হাঁটতে একটা ছোট্ট গোলাকার পুকুর পাড়ের সামনে এসে দাঁড়ালো। আশেপাশে তেমন কোনো লোকজন নেই। আর যারা আছে তাঁরা খুবই ব্যস্ত। আহি চুপচাপ পুকুরের চারিদিকে গোল করে ঘিরে থাকা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। আকাশটায় মেঘে ঢেকে আছে পুরো, হয়তো কিছুক্ষনেই মধ্যে বৃষ্টি হবে। চারপাশে হিমশীতল বাতাস বইছে। বাতাসে আহির চুলগুলো উড়ছে। আহি নিমিষেই তার চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। আজ সারাদিন কি কি ঘটলো সবই একে একে মাথা থেকে ঝেরে ফেলছে সে। শেষমেশ আহি আঁটকে পড়লো অথৈ আর নীরবের মাঝখানে। যেন নীরবের অথৈকে বলা ‘ভালোবাসি’ কথাটা কিছুতেই বের হতে চাচ্ছে না তার মাথা থেকে। বুকের বাম পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে আহি। আবারো হয়তো তাঁর অনুভূতিগুলো বাহিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। আহির ইচ্ছে করছে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে তাহলে হয়তো তাঁর যন্ত্রণাটা একটু কমবে।’

আহি নিমিষেই তার চোখ খুলে তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে। এরই মধ্যে আকাশ বেয়ে ছিঁটকে আসলো বৃষ্টির একফোঁটা পানি আহির চোখের পাশে। চোখে পাশে কিছু পরতেই পুরো চমকে উঠলো আহি। আকাশে মেঘেরা ডাকছে ভিষণ। সাথে বাতাসের প্রবণতাও যেন বেড়ে গেছে অনেক। আশেপাশের লোকজন ছোটাছোটি করছে। হয়তো তাঁরা বৃষ্টিকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। আহি তেমন কিছু না ভেবে রেলিং ছেড়ে উল্টোদিক ঘুরে ভাবনাহীনভাবে হাঁটা শুরু করলো। সে চায় বৃষ্টি নামুক এখন, তুমুল বেগে বৃষ্টি নামুক, যেন বৃষ্টির পানিতে সে তাঁর সব কষ্টকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করতে পারে।’

🍁

আহি হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় অনেক দূরে কিন্তু বৃষ্টি জোরে নামে নি তখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে তবে। সাথে মেঘ চিঁড়ে গর্জন দিচ্ছে। হঠাৎই এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পড়লো আহি, এখানেও একটা পুকুর আছে চতুভূজ আকারের, তবে এটার চারদিক জুড়ে নেই কোনো রেলিং। চারপাশে ছোট বড় কিছু গাছ আছে সাথে চারদিক জুড়ে রয়েছে বসার জন্য বেঞ্চ। এখানে এর আগেও এসেছিল আহি নীরবের সাথে। একসাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে ছিল তাঁরা। চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আহির। এরই মাঝে ঝিরঝিরে তুমুল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আহি আনমনেই গিয়ে বসে পড়লো সামনে থাকা বেঞ্চটাতে। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে সে, আশেপাশে বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছে সবকিছু, সামনের পুকুরটাও ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তাঁর থেকে কিছু দূরে থাকা ল্যামপোস্টটা তখনও আলো দিচ্ছিল আহিকে। আহি বৃষ্টির মাঝে ঠুকরে কেঁদে উঠলো। কষ্ট হচ্ছে তার, বড্ড কষ্ট, কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে আহির। আহি বসে বসেই কেঁদে উঠলো বৃষ্টির মাঝে, তাঁর সাথে ভিজছে সামনের এই পুকুরটা, পাশে থাকা গাছগুলো, গাছে থাকা সবুজ পাতাগুলো আর কিছুটা দুরত্বে থাকা ওই আলোকিত ল্যাম্পপোস্টটা।’

তাঁর পিছনেই রয়েছে শহরের সরু রাস্তা, রাস্তা বেয়ে ছুটছে মিনিট পাচেক পর পর গাড়িরা। তাদের কেউ কেউ হয়তো পিছন থেকে দেখেছে আহিকে। কেউ কেউ কিছু ভাবছে না, আবার কেউ অবাক হয়ে চলে যাচ্ছে নিজেদের গন্তব্যে। এদের কারোই হয়তো কোনো ইন্টারেস্ট নেই আহির ওপর। কারন এটা তো ব্যস্ত শহর। আর ব্যস্ত শহরের মানুষগুলো ভিষণ ব্যস্ত।’

বেশ কিছুক্ষন পর…

হঠাৎই গায়ে বৃষ্টির পানি না লাগাতে কিছুটা অবাক হলো আহি। কারন সে দিব্বি দেখতে পাচ্ছে সামনে প্রবল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। তাহলে তাঁর গায়ে কেন বৃষ্টি পড়ছে না? এখন যে বৃষ্টির খুব দরকার তার কম হলেও চোখের পানি আড়াল করার জন্য তাঁর বৃষ্টি প্রয়োজন। আহি আনমনেই পিছন ঘুরে তাকালো সামনেই আদ্রিয়ানকে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক চোখে তাকালো সে। অবাক হয়েই বললো আহি,

‘ আপনি?’

কিছুক্ষন আগেই আদ্রিয়ান অফিস থেকে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কিন্তু হুট করে মাঝরাস্তায় পিছন থেকে আহিকে দেখে ভিষণই অবাক হয় সে। প্রথমে বুঝতে পারে নি আদ্রিয়ান এটা আহি কিন্তু পরক্ষণেই এটা সত্যি সত্যি আহি বুঝতে পেরে গাড়ি থামিয়ে ছাতা নিয়ে চলে আসে আদ্রিয়ান। সে বুঝতে পেরেছে আহির আজ বড্ড মন খারাপ। আদ্রিয়ানকে চুপচাপ নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহি নীরবে বললো,

‘ কি হলো আপনি কোথা বলছেন না কেন?

উওরে আদ্রিয়ান তাঁর ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো,

‘ এত রাতে এখানে কি করছো তুমি?’

‘ না তেমন কিছু করছি না তো জাস্ট বৃষ্টিটাকে ভালো লাগছিল তাই ভিঁজছিলাম।’

‘ এত রাতে বৃষ্টিতে ভেঁজে কেউ ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে তো?’

‘ কিছু হবে না, আর আপনি এখানে কি করছেন বাড়ি যান নি?’

‘ চলো আমার সাথে আমি তোমায় তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেই?’

‘ তাঁর কোনো প্রয়োজন নেই আমি একাই যেতে পারবো।’

‘ তুমি এতো জেদ করো কেন বলো তো?’

এবার আহির বিরক্ত লাগছে কোথায় চুপচাপ বসে ছিল এতক্ষণ কোথা থেকে এই রাগী হনুমান এসে তাকে বিরক্ত করছে। আহি আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ আপনার কি আর কোনো কাজ নেই বলছি একা যেতে পারবো তাও শুনছেন না কেন?’

‘ নিজের অবস্থা দেখছো একবার ভিঁজে তো পুুরো একাকার হয়ে গেছো।’

এবার আহির রাগ উঠলো সে আদ্রিয়ানের দিকে তেঁড়ে এসে আঙুল দেখিয়ে বললো,

‘ আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি ভিঁজেছি তাতে আপনার কি? আপনি যান না আপনার কাজে…

‘ আমিও তো সেটাই বলছি চলো আমার সাথে এভাবে রাতের বেলা একা একা এখানে থাকা ঠিক হবে না।’

এবার চোখে ঝাপসা দেখছে আহি, চোখ জ্বলছে তাঁর, মাথাটাও ভাড় হয়ে গেছে, সারাদিন তেমন কিছু না খাওয়ায় মাথাটাও ঘুমাচ্ছে তাঁর।’ আহি তাঁর মাথাটাকে একবার ঝাঁকিয়ে আদ্রিয়ানের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নিলো সে। সাথে সাথে আদ্রিয়ান ধরে ফেললো আহিকে তারপর বললো,

‘ ঠিক আছো তুমি?’

আহি নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু শরীরটা যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে তাঁর। চোখ দুটোও যেন মেলে তাকাতে নারাজ। তারপরও যথাসম্ভব তাকানোর চেষ্টা করলো আহি আদ্রিয়ানের দিকে। কিন্তু চমৎকার বিষয় হলো আহি ঝাপসা চোখে আদ্রিয়ানের জায়গায় নীরবকে দেখছে। ছলছল চোখ নিয়ে বলে উঠল আহি,

‘ এমন কেন করলে ভাইয়া আমায় কি একটু ভালোবাসা যেত না?’

উওরে আর কিছু শোনা বা বলার আগেই জ্ঞান হারালো আহি আদ্রিয়ানের বুকে।’

আকাশ ফেটে মুসল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে সবকিছু এরই মাঝে ছাতা হাতে আহিকে বুকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। সে বুঝতে পেরেছে অত্যাধিক হারে বৃষ্টিতে ভেজার কারনে আর ক্লান্ত শরীর থাকায় জ্ঞান হারিয়েছে আহি,,
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২৭
_________________

বৃষ্টির মধ্যে আহিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছে আদ্রিয়ান। আহিকে কোলে নেওয়ার ফলে হাতের ছাতাটাকে নিচে ফেলে দিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে সেটা মাটিতে গোড়াগুড়ি খাচ্ছে। আদ্রিয়ান আহিকে কোলে নিয়ে সোজা গাড়িতে বসিয়ে দিলো তারপর চটজলদি ছাতাটা মাটি থেকে উঠিয়ে সেটা বন্ধ করে গাড়ির ভিতর নিয়ে নিলো সে। তারপর সেও গিয়ে বসলো গাড়িতে। বৃষ্টিতে ভিজে গেছে সেও, আদ্রিয়ান চটজলদি গাড়িতে বসে গাড়ির দরজা আঁটকে বলে উঠল ড্রাইভারকে,

‘ চলো?’

‘ বাড়ি যাবেন স্যার?’

ড্রাইভারের কথা শুনে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন ভেবে বললো,

‘ হুম বাড়িই চলো।’

উওরে ড্রাইভার আর বেশি কিছু না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। আর আদ্রিয়ান আহিকে ঠিক মতো ধরে চুপটি করে বসে রইলো গাড়িতে। বৃষ্টিতে ভিজে পুরো একাকার হয়ে গেছে আহি। চোখে মুখে পানি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে,আদ্রিয়ান তাঁর গায়ের কোটটা খুলে আহির গায়ে জড়িয়ে দিলো। মুখের সামনে থাকা চুলগুলোও হাত দিয়ে সরিয়ে দিল সে। আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে তার ঠিক কি করা উচিত?’

বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির গতি এতটাই তীব্র যে এই রাতে গাড়ি চালাতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে ড্রাইভারকে। আকাশটা পুরো ঘন কালো মেঘে ঢেকে আছে। মাঝে সাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। এই বৃষ্টির কথা ভেবে আদ্রিয়ানের শ্রীমঙ্গের সেই রাতটার কথা মনে পড়ছে যেই রাতে আহি পথ ভুলে তাঁর কাছে এসেছিল তাঁর খরগোশ ছানাটাকে নিয়ে। আনমনেই হেঁসে উঠলো আদ্রিয়ান। তবে আহির জন্য বেশ খারাপ লাগছে তাঁর। যদিও এসব ভালোবাসার ওপর বিন্দুমাত্র ধারনা নেই আদ্রিয়ানের। কারন সে তো মেয়েদের একদমই পছন্দ করতো না। তবে সব মেয়েদের চেয়ে এই আহি মেয়েটা ভীষণ আলাদা। ভেবেই আদ্রিয়ান তাকালো আহির ভেজালো মুখের দিকে। একরাশ স্রিগ্ধতা ঘেরা যেন এই চেহারায়, মায়াবী টানা টানা চোখ,গোলাপি ঠোঁট আর বেশিক্ষণ তাকালো না আদ্রিয়ান চটজলদি চোখ সরিয়ে ফেললো আহির ওপর থেকে কেমন এক ঘোরে আঁটকে যাচ্ছে সে। আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে আহির গায়ে জড়িয়ে দেওয়া কোটটাকে উপরে উঠিয়ে মুখ ঢেকে দিলো আহির। এই জিনিসটা কেন করলো আদ্রিয়ান জানে না কেন যেন আহির চেহারাটায় এই মুহূর্তে তাকাতে চাইছে না আদ্রিয়ান।’

বেশ কিছুক্ষণ পর,

আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে থামলো আদ্রিয়ানের বাড়ির গেটের সামনে। গাড়ির থামতেই আদ্রিয়ান আহিকে কোলে তুলে ভিতরে চলে গেল। আর ড্রাইভারও গাড়ি পার্ক করে চলে গেল নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।’

____

আদ্রিয়ান আহিকে কোলে করে নিয়ে এসে সোফার উপর শুয়ে দিলো। তারপর কল করলো নিলয়কে। আজ একটু তাঁড়ায় থাকায় নিলয় আগেই বেরিয়ে গিয়েছিল বাড়ি। প্রথম কলে ফোন না তুললেও দ্বিতীয় কল তুললো নিলয় উপরে আদ্রিয়ানের নাম্বার দেখে বেশ অবাক হয়ে বললো সে,

‘ এতো রাতে ফোন দিলি কোনো কি প্রবলেম হয়েছে?’

‘ হুম।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে বললো নিলয়,

‘ কি হয়েছে?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ানও একে একে সব গুছিয়ে বললো নিলয়কে। নিলয় তো সব শুনে অবাক হয়ে বললো,

‘ এখন তবে কোথায় আহি?’

‘ এই তো ড্রয়িং রুমের সোফায় শুয়ে আছে।’

‘ কি ও এখন তোর বাসায়?’

‘ হুম তবে কি করতাম ওই মেয়েটার বাসার এড্রেস জানি নাকি আমি যে পৌঁছে দিবো, আর ওই বৃষ্টির মধ্যে ছেড়ে আসতেও পারছিলাম না তাই নিয়ে এসেছি, এখন কি করবো বৃষ্টিতে ভিজে গেছে পুরো তারপর জ্ঞান নেই অজ্ঞান হয়ে গেছে।’

‘ এখন এক্ষেত্রে আমি কি করতে পারি?’

‘ তুই কি করতো পারোস মানে তোর গার্লফ্রেন্ডরে ফোন লাগা আর ওঁকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আয়?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় চমকে উঠে হতভম্ব কন্ঠে বললো,

‘ তোর মাথা খারাপ হইছে এত রাতে ওকে কিভাবে আনবো আমার হিটলার শশুর জানতে পারলে আমায় ওখানেই মেরে দিবে তারওপর এতো বৃষ্টি কিভাবে সম্ভব।’

‘ ওতো শতো জানি না আর এমনিতেও ওর তো ডাক্তার আইথিংক খুব বেশি প্রবলেম হবে না।
আধ ঘন্টার মধ্যে তুই আর তোর গার্লফ্রেন্ড দুজনকেই আমার সামনে দেখতে চাই তা না হলে তোর চাকরি শেষ।’

বলেই ফোন কেটে দিলো আদ্রিয়ান। আর আদ্রিয়ানের কাজে নিলয় দু বার ‘হ্যালো হ্যালো’ করে মাথায় হাত দিলো ‘এখন কি করবে সে।’

_____

রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আদ্রিয়ান। ভিষণ টেনশন হচ্ছে তাঁর। তাঁর ওপর আহি এখনো ভেজালো অবস্থায় শুয়ে আছে সোফাতে। ঘড়ির কাঁটায় একটার ছুঁই ছুঁই। এখনও নিলয়ের আসার খবর কেউ?’ বাহিরেও বৃষ্টিটা এতটা বেড়ে গেছে যে নিলয়দের আশা সত্যি টাফ। এরই মধ্যে আদ্রিয়ানের বাসার কলিং বেল বেজে উঠল আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেছে কারা এসেছে তাই সেও চটজলদি গিয়ে খুললো দরজা। দরজা খুলতেই আরিশা আর নিলয়ের কাঁদা মাখা মুখ দেখে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,

‘ এভাবে ভূত হয়ে এসেছিস কেন তুই?’

উওরে নিলয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

‘ তুই তো আর কথাই বলিস না, আসার সময় ঠ্যাং উল্টে পড়ে গেছি।’

বলেই হন হন করে ভিতরে ঢুকে গেল নিলয়। আরিশা অনেক আগেই ঢুকে পড়েছিল রুমে। নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে হেঁসে বলে উঠল,

‘ তুই কি চোখে দেখিস না?’

উওরে নিলয় কিছু বলবে তার আগেই আরিশা বলে উঠল,

‘ ওর শরীর তো পুরো ঠান্ডা হয়ে গেছে কতক্ষণ যাবৎ অজ্ঞান হয়ে আছে আদ্রিয়ান ভাইয়া?’

আরিশার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো আদ্রিয়ান,

‘ আধ থেকে এক ঘন্টা।’

___

কাঁথা মুড়ি দিয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে আহি কিছুক্ষন আগেই আরিশা আহির ড্রেস পাল্টে ইনজেকশন পুস করে দিয়েছে। যার ফলে এখন আহি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।’

অন্যদিকে বাড়ির দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে আরিশা আর নিলয়কে থ্যাংকস জানিয়ে বিদায় জানালো আদ্রিয়ান। আপাতত আদ্রিয়ান টেনশন মুক্ত। কারন আরিশা বলেছে ভয়ের কোনো কারন নেই কালকের মধ্যেই আহি ঠিক হয়ে যাবে। আদ্রিয়ান ছোট্ট শ্বাস ফেলে দরজা আঁটকে দিয়ে গা এলিয়ে দিলো সোফায়। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে রইলো সে কিছুক্ষন আগে কি কি হলো সব এঁকে এঁকে মনে করতে লাগলো আদ্রিয়ান। আহির লাস্ট কথাটা এখনো বাজছে আদ্রিয়ানের কানে।’

‘ এমন কেন করলে ভাইয়া আমায় কি একটু ভালোবাসা যেত না?’

সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললো আদ্রিয়ান। পরক্ষণেই নিরাশ হয়ে ভাবলো সে এক্ষেত্রে তাঁর কি করার। সবারই নিজের নিজের লাইফ আছে। হঠাৎ আদ্রিয়ানের চোখ গেল আহির দেওয়া সেই বিয়ের দিনের গোলাপি খামের লাভ লেটারের চিঠিটার দিকে। সেটা এখনো আদ্রিয়ানের বুক সেলফের ওপরই আছে। এ কদিনে একবারও এটার কথা মনে পড়ে নি আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে হেঁটে চলে যায় বুক সেলফের কাছে। তারপর আনমনেই চিঠিটা হাতে নিয়ে চলে যায় সে বুক সেলফের পিছনে থাকা টেবিলটার দিকে। বাহিরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে, মনে হয় না আজ রাতে আর এটা থামবে। আদ্রিয়ান বেশি কিছু না ভেবেই গোলাপি খাম থেকে চিঠিটা বের করলো। তারপর ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করলো সে,

চিঠিটা খুলতেই প্রথমেই যে নামটা ভেসে আসলো আদ্রিয়ানের চোখের সামনে সেটা হলো,

প্রিয় নীরব ভাইয়া,

ঠিক বুঝতে পারছি না তোমাকে আমার অনুভূতিগুলো কিভাবে গুছিয়ে বলবো। লাস্ট বারো বছর যাবৎ তোমাকে শুধু আমার অনুভূতিগুলোই বলতে চাইছি কিন্তু কিছুতেই জেনো বলতে পারছিলাম না। যতবারই ভাবি তোমার সামনে গিয়ে বলবো আমার অনুভূতিগুলোর কথা ততবারই কোনো না কোনো প্রবলেম এসে দাঁড়ায়। তাই আমার এই অনুভূতিগুলো আজ চিঠির মাধ্যমে লিখে তোমায় বলবো। প্লিজ ভিতরে লেখাগুলো পড়ে আবার রাগ করো না।’

তোমার সাথে সেই ছোট্ট বেলায় যখন প্রথম আলাপ হয়েছিল সেদিনই তোমায় খুব ভালো লেগেছিল আমার। আমি পড়ে যাওয়ায় তোমার এগিয়ে দেওয়া সেই হাত এখনো অনুভব করি আমি। এরপর আবার যখন তুমি আমি একসাথে পড়াশোনা করতাম, তুমি আমায় হেল্প করতে অংক বুঝাতে বিশ্বাস করো আমার বেশ লাগতো এখনো লাগে। তোমার সাথে সেই ছোট বেলা কাটানোর প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা স্মৃতি এখনো যেন খুব মিস করি আমি। তোমার মনে আছে সেই ছোট বেলায় যখন আমাদের বাড়ির পিছনের সেই বড় গাছটার কাছ থেকে দুটো বাবুইপাখি কুঁড়িয়ে এনেছিলাম। তাঁরপর দুজন মিলে কত যত্ন করে বড় করেছিলাম। তোমার সাথে কাটানো সেই প্রতিটা মুহূর্তই আমার আজও চোখে ভাসে ভাইয়া। সেই খোলা আকাশের মাঝে ছোটাছুটি করা, ছাঁদের ওপর পা ঝুলিয়ে অনেকটা সময় কাটানো,বাবুইপাখি দুটোকে খাঁচায় বন্দী করে সারাপাড়া ঘুরে বেড়ানো আরও কত কি? সত্যি বলতে ছোট বেলার সেই প্রতিটি মুহূর্তকে আমি আজও অনুভব করি , কারন সেই সময়গুলোতে যে শুধু তুমি আর আমি ছিলাম। তারপর মনে আছে তোমার সেদিন যখন দুটো পাখির মধ্যে একটা পাখি খাঁচা থেকে উঠে গিয়েছিল সেদিন কতটা কষ্ট পেয়ে কাঁদছিলাম আমি কিন্তু তুমি বলেছিলে একটা চলে গিয়েছিল তাতে কি হয়েছে আর একটা আছে তো কাঁদে না বোকা? আমি তোর জন্য আবার আরেকটা পাখি নিয়ে আসবো।– সেদিনের কথাটা শুনে আমার যে কি অনূভুতি ফিল হচ্ছিল তোমার জন্য সেটা বলে বোঝানো যাবে না। সেদিন হয়তো এই অনুভূতিগুলো বুঝি নি আমি কিন্তু আজ বুঝতে পারি ক্ষনে ক্ষনে প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব করি। তুমি যে আমার জন্য কতটা জরুরি একটা বিষয় সেটা হয়তো লিখে প্রকাশ করা যাবে না।’

তোমার মনে আছে ওই একটা পাখি চলে যাওয়ার পর তাঁর কিছুদিনের মধ্যেই যখন আর একটা পাখি খাঁচায় বসেই মারা গেলো সেদিন আমি পুরোপুরিই ভেঙে গিয়েছিলাম কিন্তু সেদিনও তুমি আমায় সামলে নিয়ে একটা সুন্দর কুকুর ছানা গিফট করেছিলে। কিন্তু সেটাকেও আমার কাছে রাখতে পারে নি। হুট করেই সেদিন আমায় ছেড়ে চলে গেল। তবে ওর জন্য আমার কষ্ট যতটা হয়েছিল তাঁর চেয়ে খুশি বেশি হয়েছিলাম কারন ওর জন্যই একটা ছেলেকে বাঁচিয়ে ছিলাম আমি।’

আহির এবারের লেখাটা পড়ে আদ্রিয়ানের আর বুঝতে বাকি নেই সেদিনের সেই কুকুর ছানাটা আহিরই ছিল সাথে ওঁকে বাঁচানো আর জড়িয়ে ধরা মেয়েটাও আহিই ছিল। এবার আদ্রিয়ানের কাছে পুরো জিনিসটা পরিষ্কার কেন আহিকে জড়িয়ে ধরতে তাঁর অস্থিরতা কমে যায়। আদ্রিয়ান সেসব বিষয়কে আপাতত দূরে রেখে আবারো চিঠিটা পড়তে শুরু করলো যেখানে লেখা,

আমার সাথেই এমন কেন হয় বলো তো সবসময় আমার প্রিয় জিনিসটা আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। তবে তুমি কখনো ছেড়ে যেও না আমায়। আমি যে তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি ভাইয়া। সেদিনের সেই বাবুইপাখি কেন মারা গিয়েছিল সেটা সেদিন না বুঝলেও এখন আমি বুঝতে পারি ভাইয়া। আমি হয়তো সবকিছু গুছিয়ে বলতে পারি নি তোমায়। আসলে কি বলবো বলো তো আজ চারদিন যাবৎ তোমার জন্য চিঠি লিখছি তাও মন মতো হয়ে উঠছে না। অবশেষে এতটুকুই বলবো,

‘ i really really love you, Do you love me?’

আমি তোমায় ভিষণ ভালোবাসি ভাইয়া, তোমায় নিয়ে যে আমার কত অনুভূতি জড়ানো চিঠিতে লিখে সেগুলো প্রকাশ করা যাবে না। এতত্তো গুলো ভালোবাসা তোমার জন্য। তোমার উওরের অপেক্ষা রইলাম?’

ইতি তোমার প্রিয়,

আহি।’

পুরো চিঠিটা পড়ে আদ্রিয়ান এতটুকু বুঝতে পেরেছে আহির জীবনে এই নীরব ছেলেটি অনেক জায়গা জুড়ে ছিল। কিন্তু এখন ভীষণ খারাপ লাগছে আদ্রিয়ানের। চোখ বন্ধ করে ভাবলো সে,

‘ কেন নীরব আহিকে ভালোবাসলো না, একটু হলেও হয়তো বাসা উচিত ছিল?’

ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় আড়াইটার কাছাকাছি বেজে গেছে। আদ্রিয়ান তাঁর টেবিলের পাশে থাকা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো আকাশে মেঘেরা এখনো ভড় করে আছে, বৃষ্টির রেশটা আগের চেয়ে কমে গেছে অনেক, সাথে ঠান্ডা বাতাসও বইছে। প্রকৃতির রূপ দেখে আপাতত এতটুকু বুঝতে পেরেছে আদ্রিয়ান ‘আজ রাতে তাঁর আর ঘুম আসবে না।’

একরাশ বিষন্নতা এসে গ্রাস করলো আদ্রিয়ানকে, সাথে অনেকটা মন খারাপ।’

____

পরেরদিন সকালে….
!
!
!
!
!
#চলবে…..