#বাড়ির_নাম_বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-১১
আবির এলো পরদিনই। বাড়ি ফিরেই বৃষ্টিকে চিঠি লিখলো দেখা করবে বলে। চিঠি পাঠালো পলিন কে দিয়ে। পলিন এসে বলল,
“বুবু আবির ভাই এসেছে। দেখা করতে বলছে। এই নাও চিঠি। ”
বৃষ্টি চিঠি হাতে নিয়েই বলল,
“তুই আবার চিঠি খুলে পড়েছিস?”
“প্রেমপত্র তো আর দেয় নি। ”
“চুপ কর ফাজিল।”
বৃষ্টি চিঠি খুলে দেখলো। দুই লাইনের চিঠি। পলিনের স্কুলের দিকের রাস্তার মোড়ে থাকতে বলেছে। টুকুও সঙ্গে থাকবে।
পলিন হেসে বলল, উফ! আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে।
“কিসের আনন্দ?”
“তুমি আর আবির ভাই একসঙ্গে! দুজন কথাও বলবে।”
বৃষ্টি কিছু বলল না। কঠিন চোখে একবার পলিন কে দেখলো।
***
আবিরের বুক ধুকপুক করছে। বৃষ্টিকে দেখলে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয় ঠিকই। তবে আজকের অনুভূতি টা একদম আলাদা। বৃষ্টি আসবে, ওর সঙ্গে কথাও বলবে। বলবে তো! হ্যাঁ বলার কথা। ফোনে যেহেতু বলেছে তখন সামনাসামনি বলতে অসুবিধা কই!
বৃষ্টি আসছে। সঙ্গে পলিনও আছে। একটু পিছনে টুকু। বৃষ্টির পড়নের শাড়িটা হলুদ রঙের। আফসোস এখন বসন্তকাল না। মাত্র দিন কয়েক আগে বসন্ত শেষ হয়েছে৷ বৃষ্টির চোখ, মুখ কঠিন। সবসময় এমনই থাকে। এই মেয়েটা কী জানে না যে হাসলে ও’কে চমৎকার লাগে! জানবে কী করে, কেউ হয়তো বলেই নি। আর বলবেই বা কী করে! কারোর সামনে তো হাসেও না৷
বৃষ্টি এসে দাঁড়ালো। সরাসরি আবিরের দিকে তাকালো না। আবির এতক্ষন তাকিয়ে থাকলেও এখন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। পলিন এসে মিটিমিটি হেসে বলল, কী খবর আবির ভাই? কেমন আছ?
আবির কটমট চোখে তাকালো। এই ফাজিল টার সঙ্গে ওর সকালেই দেখা হয়েছে। ডাকাতের মতো পঞ্চাশ টাকা নিয়েছে বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়ার নাম করে। আর এখন এসে ফাজলামি করছে।
বৃষ্টি অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
“পুরো ব্যাপার টা বলা হোক।”
বৃষ্টির ভাববাচ্যে বলা কথা আবির শুনেও না শোনার ভান করছে। পলিন এখনো মিটিমিটি হাসছে। টুকু বলল,
“আবির, বৃষ্টি তোকে বলছে।”
আবির অবাক হবার ভান করে বলল,
“আমাকে যে বলছে সেটা বুঝব কী করে?”
বৃষ্টি একবার পলিনের দিকে আরেকবার টুকুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আবির ভাই আমি তোমাকেই বলছি।”
আবির চোখ তুলে তাকালো। আরেকবার শুনতে পারলে ভালো হতো। সেটা সম্ভব না। আরেকবার শোনার কথা বললে উল্টোপথে হাটা দেবার সম্ভাবনা খুব বেশী। পলিন বলল,
“কী আবির ভাই, তোমাকে বলছে কিন্তু….
আবির কথা বলতে গিয়ে খেয়াল করলো ওর গলা আটকে যাচ্ছে। গলা পরিষ্কার করে বলল,
“আমার দোষ নেই। টুকু আমার হাতেপায়ে ধরেছে তাই আমি ব্যবস্থা করেছি। ব্যবস্থা করেছি বলতে টাকা, পয়সার ব্যবস্থা করেছি।”
“তোমার কী মনে হয় এই কাজ টা করা ঠিক হয়েছে?”
বৃষ্টি সরাসরি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল। আবির বলল,
“না একদম ঠিক হয় নি। কিন্তু মেয়েটার কথাও তো ভাবতে হবে। একা মেয়ে কোথায় থাকবে।”
“টুকু ভাইয়ের তো নিজেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা। তারমধ্যে সে গেছে সমাজসেবা করতে! বাহ! ”
টুকু কোনো কথা বলছে না। মনোযোগ দিয়ে মাটির রাস্তা দেখছে। ভাবখানা এমন যে, রাস্তা মেরামতের প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব ও’কে দেয়া হয়েছে। আবির অবাক গলায় বলল,
“তোদের এতো টাকা, পয়সা! একটা মেয়ের খাবার বন্দোবস্ত করতে পারবি না? ওই মেয়েটা একবেলায় খুব বেশী হলে দুই প্লেট ভাত ই খাবে! তা নিয়ে এতো চিন্তা কিসের।”
বৃষ্টি রাগী গলায় বলল, তুমি এসব না বলে বলো আমরা কী করব?”
“বাড়িতে জানাবি।”
“তারপর? ”
“তারপর তোদের কী! টুকু বুঝবে।”
পলিন বলল, বাবা আর কাকার জুতার বাড়ি টুকু ভাই একলা খাবে নাকি তুমিও ভাগ করে নিবে।
আবির মারমুখী হয়ে পলিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, আজ তোর মুখ টাই ভেঙে দেব। আজকের টাকা সহ আগের সব টাকা ফেরত দিবি মীরজাফর।
পলিন পিছিয়ে গেল। বৃষ্টি বলল,
“চল পলু।”
টুকু এগিয়ে এসে বলল,
“একটু সামলে নিস বৃষ্টি। ঝামেলা যেন একটু কম হয়।”
বৃষ্টি কোনো কথা না বলে পলিনের হাত ধরে হাটতে শুরু করলো।
আবিরের আজ আনন্দের দিন। টুকুর ঝামেলা টা তাই মনে ততোটা প্রভাব ফেলছে না। আজকের ডেট টা লিখে রাখতে হবে। প্রতিবছর এই দিন টা ওর কাছে ঈদের দিন।
****
বৃষ্টি পলিন কে নিয়েই বাড়ি ফিরলো। বৃষ্টির মা অবাক হয়ে বলল,
“কিরে তোরা বাড়িতে? পলু স্কুলে যাস নি?”
বৃষ্টি বলল, না মা। আমিই যেতে দেই নি।
“কেন? আর তোরও তো কলেজে যাবার কথা।”
“আমরা আবির ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। ”
বৃষ্টির মা একবার মেয়ের দিকে আরেকবার পলিনের দিকে তাকালো। পলিন হেসে বলল,
“ও বড়মা বুবু আবির ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছে।”
বৃষ্টির মা বৃষ্টির দিকে তাকালো। তার চোখেমুখেও খুশির ছাপ। বললেন,
“যাক এতোদিনে সুবুদ্ধি হয়েছে।”
বৃষ্টি বলল,
“মা তোমার সঙ্গে কথা আছে। ফুপু কোথায়?”
“ফুপু আছে রান্নাঘরে। কী হয়েছে রে?”
বৃষ্টি টুকুর ঘটনা মা’কে খুলে বলল। বৃষ্টির মা সব শুনে এক সেকেন্ডও শান্ত থাকতে পারলেন না। বাড়ির সবাই কে ডেকে বলল। পলিন কে বাজারে পাঠিয়ে ওর বাবাকে ডেকে আনালো। মুহুর্তেই বাড়ির আবহাওয়া পাল্টে গেল।
****
আবির দুপুরে ফিরেছে হৃষ্টচিত্তে। অনেক সময় নিয়ে গোসল করে খেতে বসবে এমন সময় মৌমাছির মতো ওই বাড়ির সব লোক চলে এলো। বৃষ্টির বাবা এসে বললেন,
“টুকু হারামজাদা কই? আজ তোকে আর ও’কে এক সঙ্গে ঝুলিয়ে ছাল, চামড়া তুলে নেব।”
আবিরের মা শান্ত শিষ্ট মানুষ। বৃষ্টির মা, দাদী, ফুপু সবার সঙ্গেই সদ্ভাব। কিন্তু আজকে তাদের সঙ্গেই ঝগড়া লেগে গেছে। বৃষ্টির মা আর ফুপুর ভাষ্যমতে সব দোষ আবিরের। আর আবিরের মায়ের মতে সব দোষ টুকুর। আর পাঁচ টা সাধারণ বাড়িতে যেমন ঝগড়াঝাটি হয় এখানেও তেমন। আবির নিজে কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে না। সকলের অভিযোগে জর্জরিত। দুই একটা কথা যে সাহস করে বলবে তাও পারছে না বৃষ্টির বাবার জন্য। সে একটু পর পর হাত উচিয়ে আসছে।
এই ঝগড়ায় দর্শকের ভূমিকা পালন করছে পলিন আর আতিফ। দুলু দুই পক্ষকে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর পলিন দাঁড়িয়ে মজা দেখছে। আতিফ অবশ্য লক্ষ্য করছে পলিন কে। মেয়েটা মিটিমিটি হাসছে। ভাব এমন যে আনন্দের কিছু ঘটছে। অথচ আবিরের সঙ্গে ওর ভালোই খাতির।
এই ঝগড়ায় কোথাও বৃষ্টিকে দেখা যাচ্ছে না। আবির রাগে ফুসছে আর বিড়বিড় করে বলছে,
“আমার ভালো দিন টা’কে কেয়ামত বানিয়ে দিলি। তোর খুব খারাপ একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে হবে। এই এলাকায় আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ নেইও অবশ্য।
চলবে…
#বাড়ির_নাম_বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-১২
টুকুকে সত্যি সত্যি জুতাপেটা করা হলো। এই কাজ টা করলো টুকুর মা। টুকু মাথানিচু করে মার খেল। কোনো অভিযোগ করলো না। কেউ অবশ্য ও’কে বাঁচাতেও গেল না। পলিনের বাবা টুকুকে বললেন, বাক্স প্যাটরা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। রেনু অবশ্য সাপোর্ট করেছিল টুকুর। কিন্তু বাড়ির অন্যান্যদের ঝামেলায় খুব একটা লাভ হলো না।
টুকুকে বাড়ি ছাড়তে বললেও ও বাড়ি ছাড়লো না। টুকুর মা ঘোষণা দিলেন যে টুকুকে যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায় তাহলে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।
রাতে টুকুর জন্য পলিন খাবার নিয়ে গেল। বলল,
“ও টুকু ভাই বড় মা খাবার পাঠিয়েছে। খেয়ে নাও। কাল তো বাড়ি ছেড়ে যাবে। খালি পেটে থেকো না।”
টুকু ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলল। বলল,
“তোরা আমাকে কেস খাওয়ালি! আমি তো ভেবেছিলাম তোরা সামলে নিবি!”
“আমরা কিভাবে সামলে নিতাম। শাবানার মতো পায়ে ধরে কেঁদে কেটে বলতাম যে আমাদের মুখ চেয়ে নিষ্পাপ অসহায় মেয়েটাকে ঘরে তুলে নিন হুজুর।”
পলিনের ফিল্মি ডায়লগ শুনে টুকুর কোনো ভাবান্তর হলো না। টুকু বলল,
“এখন কী করি বলতো? হাতে টাকা পয়সাও তেমন নেই যে বউ নিয়ে আলাদা বাসা করব।”
“আবির ভাইয়ের কাছে চাও। তার অনেক টাকা। ”
“আরে না। পঞ্চাশ, একশ টাকার ব্যপার না। আরও টাকা লাগবে। ”
পলিন একটু ভেবে বলল,
“বুবুকে ডাকি। বুবু একটা বুদ্ধি দিতে পারবে।”
টুকু হ্যাঁ, না কিছু বলার আগেই পলিন বৃষ্টিকে ডাকতে গেল।
বৃষ্টি এসে বলল,
“কী হইছে টুকু ভাই?”
“এবার কী করি বলতো। তোরা তো আমাকে বাঁচানোর বদলে আমাকে ফাঁসিয়ে দিলি। ”
“তুমি নিজের দোষে ফেসেছো। একা একা বিয়ে করেছো এখন তো ভোগ করতেই হবে।”
“এখন কী করব?”
“বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। বাবা, কাকা তো সেরকমই বলল।”
টুকু অসহায় চোখে তাকালো বৃষ্টির দিকে। বৃষ্টি একটু ভেবে বলল,
“তোমাকে একটা বুদ্ধি দিতে পারি। যদি কাজে লাগাও তাহলে দেব।”
টুকুর চোখ চকচক করে উঠলো। বৃষ্টি পলিন কে বলল,
“দরজাটা লাগিয়ে আয় তো পলু।”
****
আতিফ আজ পড়াতে এসেছে। দুই বাড়ির ভয়ংকর ঝগড়ায় বেচারা ভয় পেয়ে আর আসেনি। সকালে বাজারে পলিনের বাবার সঙ্গে দেখা হলে সে বলল পড়াতে যেতে। তারপর সাহস করে আজ এসেছে।
পলিন আতিফ কে দেখে বলল,
“আপনি আসছেন কী মনে করে? আপনার ভয় ডর নেই?”
আতিফ পলিনের দিকে তাকালো। পলিন মিটিমিটি হাসছে। এটা বোধহয় ওর মুদ্রাদোষ। আতিফ বলল,
“আমি ভয় পাব কেন?”
“আপনার ভাই যা করছে…..
“তাতে আমার কী? আর আমার ভাই তো টুকু ভাইয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বিয়ে দেয় নি।”
পলিন বলল,
“টুকু ভাই ভালো মানুষ। তার মাথায় এসব শয়তানি বুদ্ধি নাই। বাড়ির লোক বুঝতে পারছে যে এই বুদ্ধি কার। আসলে আমরা ভদ্রলোক তো তাই বেশী কিছু বলিনি।”
পলিনের হাবভাব দেখে আতিফের হাসি পেল। হাসি চেপে রেখে বলল,
“বুঝলাম। এখন ভদ্রলোকের মতো বই বের করো। আগামী এক ঘন্টায় পড়ার বিষয় ছাড়া আর কিছু বলবে না।”
পলিন বিরসমুখে পড়তে বসলো।
**
বৃষ্টি আতিফের জন্য খাবার নিয়ে এলো। এসে জিজ্ঞেস করলো,
“এই তুই নাকি খাবার দিলে ঠিকমতো খাস না। কেন রে?”
আতিফ আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে…..
“ভয় নেই। আমরা হলুদ, মরিচের শরবত দেব না।”
আতিফ আড়চোখে পলিনের দিকে তাকালো। পলিন ফিরেও দেখলো না। খাতায় লিখতে ব্যস্ত। বৃষ্টি হেসে ফেলল। বৃষ্টিকে হাসতে দেখে আতিফ বলল,
“তোমাকে খুশি লাগছে খুব! ভাইয়াকে ফ্যাসাদে ফেলে এতো খুশি!”
বৃষ্টি চোখ কপালে তুলে বলল, বাবা এই ছেলে তো কথা বলতে পারে ভালোই!
পলিন মাঝখানে বলে উঠলো, বুবু এখান থেকে যাও। আমার লেখায় ডিস্টার্ব হচ্ছে।
বৃষ্টি চোখ সরু করে বলল,
“কিরে আতিফ। তোর ছাত্রী তো দেখছি খুব মনোযোগী। ”
আতিফ কিছু বলল না। বৃষ্টি চলে গিয়েও মিনিট দুয়েকের মধ্যে ফেরত এলো। এসে একটা লাঠি টেবিলের উপর রেখে বলল,
“কাকা দিয়েছে। বলেছে তোর ছাত্রীর জন্য দরকার হবে।”
আতিফ আড়চোখে পলিনের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
“আসলেই এটা দরকার। ধন্যবাদ বুবু”
পলিন অবাক চোখে তাকালো।
***
দুই বাড়ির ঝগড়া মিটতে দুদিন লাগলো। আবির দের বাড়ি থেকে আতিফ কে পাঠালো ওদের একটা বাটি নিতে। বৃষ্টির মা খালি বাটি দেয়া যাবে না বলে তাতে খাবার দিয়ে পাঠালো। সন্ধ্যেবেলা আবার আবিরের মা পিঠা বানিয়ে পাঠালেন। আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা না হলেও ভাব হবার প্রাথমিক ধাপে এগুচ্ছে।
আবির বৃষ্টিকে একটা চিঠি পাঠালো। চিঠি দিয়ে গেছে আতিফ। চিঠি দেবার সময় আতিফের মুচকি হাসি দেখে বৃষ্টি বলল,
“তুই ও কী পলিনের মতো অন্যের চিঠি পড়িস? ”
“না অন্যকারনে হাসছি।”
“কী কারন?”
“টুকু ভাইয়ের ঘটনার কারনে তোমার আর ভাইয়ার ব্যাপার টা চাপা পড়ে গেল। নাহলে একটা রমরমে ব্যাপার হতো। ”
“তুই তো দেখি ভালো কথা জানিস! কী আশ্চর্য! দেখলে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিস না।”
আতিফ হেসে চলে গেল।
বৃষ্টি চিঠি খুলল। ওই বাড়ি থেকে এই বাড়ি চিঠি লিখেছে তাও আবার খামে ভরে।
চিঠির শুরুতে কোনো সম্বোধন নেই। তবে বৃষ্টিকে যে লিখেছে সেটা স্পষ্ট। লিখেছে,
“পলিন অসভ্যটাকে বলিস আমার সামনে না পড়তে। ইট দিয়ে মেরে মেরে ওর দাঁত আমি ভাঙব। আতিফের কাছে আমার নামে কুটনামি করে! ওর সাহস দেখে আমি স্তম্ভিত। ওর ব্যবস্থা নেব। তবে তুই যেটা করলি সেটাও খারাপ করলি। তোকে তো আবার কিছু বলা যাবে না। তুই তো সূচিত্রা সেন। দেখা যাবে তার মতো ঘরবন্দী হয়ে থাকবি৷ কাউকে দেখা দিবি না। তাই কিছু বললাম না। পরের বাড়ির মেয়ে ঘরবন্দী থেকে বিয়েশাদি না করলে তখনও আমার দোষ হবে। তবে এই ঘটনা আমি জীবনে ভুলব না।
পুনশ্চঃ পলিন কে বলবি ভালো হয়ে যেতে। ওর বড় ভাই নেই। শ্বশুর বাড়ি আনতে তো আমাকেই যেতে হবে।
***
আবির এর আগে অজস্র চিঠি লিখেছে। বৃষ্টি সেই চিঠির উত্তর দেয় নি কোনোটার। আজ ই প্রথম উত্তর লিখে পাঠালো। ওর মতো করেই সম্বোধন ছাড়া।
লিখলো,
“চোরের মায়ের যে বড় গলা হয় সেটা তোমাকে দেখে বুঝলাম। এতো কিছুর পরও চিঠি লিখতে লজ্জা করলো না। আমি হলে লজ্জায় দুদিন ভাত খেতাম না। আর আমি সূচিত্রা সেন না। আমার নাম বৃষ্টিলেখা। পলিনের চিন্তা করতে হবে না। ও’কে শ্বশুর বাড়ি থেকে আনার লোকের অভাব হবে না। ওর আগে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। আমার স্বামী গিয়ে নিয়ে আসবে।
বৃষ্টির লেখা চিঠি পড়ে পলিন হাসতে লাগলো। কোনো রকম হাসি থামিয়ে বলল,
“বুবু তুমি তো একদম আবির ভাইয়ের স্টাইলে চিঠি লিখছ।”
“চিঠি দিতে তোর যাবার দরকার নেই। আতিফকে দিয়ে পাঠাব। তোকে দেখলেই নাকি দাঁত ভেঙে দেবে।”
পরদিন আবির দুটো সারপ্রাইজ একসঙ্গে পেল। জীবনে প্রথম বৃষ্টির কাছ থেকে চিঠির জবাব পেল। আর দ্বিতীয় সারপ্রাইজ পেল টুকুর থেকে। টুকু তার বউ নিয়ে আবির দের বাড়িতে এসে উঠেছে।
চলবে……..