#বাড়ির_নাম_বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-২৫
বৃষ্টি ভালো করে ভদ্রলোক কে দেখলো। ভদ্রলোক হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। চেহারা খানিকটা বাচ্চাসুলভ। চোখেও হাসি লেগে আছে। ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলো,
“আপনার কী বিয়ে হয়ে গেছে বৃষ্টিলেখা? ”
বৃষ্টিলেখা মাথা নাড়িয়ে না বলল।
ভদ্রলোক আবারও জিজ্ঞেস করলো,
“আমি কে বলুন তো?”
বৃষ্টি আবিরের দিকে তাকালো। আবির ও’কে আগেই নাম বলেছে। বৃষ্টি বলল,
“আপনি সাহ্নিক। ”
“রাইট। আপনি কী ভেবেছিলেন আমি আসব?”
“না।”
আবির এখনো দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি বলল,
“আপনি ভেতরে আসুন। ”
বাড়িতে এই সময় শুধু মেয়েরাই আছে। বৃষ্টির মা বসার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। বৃষ্টি বলল,
“উনি আমার মা। ”
সাহ্নিক মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি ভালো আছেন?”
মা মাথা নাড়লো। এখনো বুঝে উঠতে পারছে না ছেলেটা বাড়িতে কেন এলো। তাও আবার কোনো কিছু না জানিয়ে। আবির এতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো। এবার বৃষ্টিকে বলল,
“একটু এদিকে আসবি! কথা আছে। ”
সাহ্নিক বসে বসে ঘরের চারদিক দেখছে। বৃষ্টি বলল,
“আপনি বসুন। আমি একটু আসছি। ”
বৃষ্টির মা বলল,
“তোমাকে শরবত দেব একটু। ”
সাহ্নিক মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।
বৃষ্টি বাইরে আসতেই আবির চাপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“তোর মামাবাড়ির কেউ?”
“না।”
“তাহলে? ”
“ওনার সঙ্গে বিয়ে ঠিই করেছিলেন বাবা। পরে উনি নিজেই ভেঙে দেন। ”
আবিরের মুখটা রক্তশূণ্য হয়ে গেল মুহুর্তেই। বৃষ্টির চোখ এড়ালো না। আবির বলল,
“আমি যাই। ”
আমি যাই বলে আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত পায়ে হাটতে শুরু করলো। বৃষ্টি তাকিয়ে রইলো সেই যাওয়ার দিকে।
***
সাহ্নিক বৃষ্টিকে বলল,
“ওই লোক টা চলে গেছে? ওনাকে থ্যাংকস বলা হলো না।”
“ওনাকে আবারও পাওয়া যাবে। তখন থ্যাংকস জানাতে পারবেন। ”
সাহ্নিক হাসলো। বৃষ্টি বলল,
“আপনি যে আসবেন সেটা আগে কেন জানালেন না?”
“ভাবলাম সারপ্রাইজ দেই। আপনি অবাক হয়েছেন তো!”
“হ্যাঁ। আমি ভাবিনি যে আসবেন। ”
“আমি ভেবেছিলাম আপনার বিয়ে হয়ে গেছে। ”
বৃষ্টি এই প্রথম হাসলো। বাড়ির কেউ সাহ্নিকের সামনে আসছে না। সবাই ই যার যার মতো ঘরে বসে ফিসফাস করছে। পলিন টা থাকলে ভালো হতো। বৃষ্টি বলল,
“এই সময়ে অনেকে বাড়িতে নেই। যারা আছে তাদের সঙ্গে পরিচিত হবেন। বাকীদের সঙ্গে নাহয় পরে আলাপ করবেন। ”
নিলুফার, ফুপু, দাদী এদের সঙ্গে সাহ্নিকের আলাপ করানো হলো। সাহ্নিক এমনভাবে কথা বলল যেন আগে থেকেই ওঁদের চিনে।
সাহ্নিক বৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করলো,
“পলিন স্কুল থেকে আসবে কখন?”
“তিনটে বাজবে। পলিনের নামও দেখি মনে আছে আপনার। ”
সাহ্নিক হেসে বলল,
“আপনার চিঠিটা আমি অনেক বার পড়েছি বৃষ্টিলেখা। ”
বৃষ্টি হেসে বলল,
“আমি আসলে ভাবিনি যে আপনি আমার চিঠি পেয়ে সত্যিই আসবেন। ”
সাহ্নিক হাসলো। বলল,
“আবির কোথায় আছে বৃষ্টিলেখা? ”
বৃষ্টি অবাক গলায় বলল,
“আবিরের কথা আপনি কী করে জানলেন? আপনাকে তো আমি আবিরের কথা লিখিনি!”
সাহ্নিকের হাসিটা মিলিয়ে গেল।
***
পলিন আজ স্কুল থেকে ফিরেই আবির দের বাড়ি এসেছে। আবির পলিন কে দেখে বলল,
“কী ব্যাপার? হঠাৎ বড়লোক লোকজন আমাদের কুঁড়েঘরে?”
পলিন সেকথার জবাব না দিয়ে বলল,
“আবির ভাই তুমি নাকি ওই সাহ্নিক লোক টাকে আমাদের বাড়ি পৌছে দিয়েছো?”
“হু। ”
“ওই খাটাশ টা’কে মেরে বিদায় করতে পারলে না?”
“অতো সুন্দর নায়কের মতো ছেলেটাকে খাটাশ বলিস না। পাপ লাগবে। ”
পলিন রাগে ফুসছে। আবির অবশ্য শান্ত গলায় ই কথা বলছে। আবির বলল,
“ব্যটা এসেছে কেন জানিস?”
“না জানিনা। ”
“মত পাল্টে তোর বুবুকে বিয়ে করবে নাকি!”
পলিন রাগী গলায় বলল, মেরে ও’কে ভুত বানিয়ে পাঠিয়ে দেব।
“তোর সঙ্গে এখনো লোকটার দেখা হয় নি না?”
“না। ”
“হলে অবশ্য মারামারি করতে চাইতি না। দুলাভাই বানানোর জন্য লাফালাফি করতি। ”
পলিন রেগে গিয়ে আবির কে বিভিন্ন পশুর নামে গালাগালি করলো। আবির সেসবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। টেবিলের উপর থেকে একটা খাম পলিনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“বৃষ্টিকে দিস। খবরদার খুলে পড়বি না।”
পলিন চিঠি নিয়ে চলে গেল। আবির বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করলো। সাহ্নিক কে নিয়ে আবিরের এখন আর কোনো চিন্তা হচ্ছে না। প্রেম, ভালোবাসায় তৃতীয় ব্যক্তির আগমন কেবল সিনেমায়ই ঘটে। বাস্তবে ওসব সহজে হয় না। সাহ্নিক কেন এসেছে সেটা আবির জানে না। তবে ওর দৃঢ় বিশ্বাস যে ওর আর বৃষ্টির মাঝখানে চাইলেই যে কেউ আসতে পারবে না।
পরক্ষনেই আবার ভাবে, সাহ্নিক ওর কথা কিভাবে জানলো! বৃষ্টি নিজেই বলেছে।
****
পলিনের সঙ্গে সাহ্নিকের আলাপ পর্ব হলো বৃষ্টির মাধ্যমে। পলিন দুই এক কথা বলে সরে এলো। পরের বার যখন দেখা হলো তখন পলিন জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কেন আসছেন?”
সাহ্নিক পলিনের কথা বলার ধরন দেখে হেসে ফেলল। বলল,
“তোমার চিঠিটা মজার ছিলো। ”
“এই চিঠির কথা বাড়িতে বলবেন না কিন্তু। ”
“আচ্ছা বলব না। ”
পলিন এবার একটু নরম গলায় বলল,
“আপনি কিন্তু না এলেও পারতেন। ”
সাহ্নিক আবারও হেসে ফেলল। বলল,
“ডিয়ার সুইট সিস্টার, রিলাক্স থাকো। আমি জাস্ট তোমাদের দেখতে এসেছি। নাথিং এলস। দেখা হলেই চলে যাব। কোনো টেনশনের দরকার নেই। ”
পলিন মিষ্টি করে হেসে বলল,
“আপনি আসলে খুব ভালো। ”
সাহ্নিক আবারও হাসলো।
****
আবির বৃষ্টিকে লিখেছে,
শোন কাল যখন তুই আমার হাত ধরলি তখন একটা কথা গলায় এসে আটকে ছিলো কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোয় নি। মুখে কে যেন আঠা লাগিয়ে রেখেছে তাই কথা বেরোয় নি। জীবনে প্রথমবার তুই আমার হাত ধরলি। আমি কিন্তু ধরতেও বলিনি। নিজে থেকেই ধরলি। ভুল করে কিংবা ঠিক করে হোক ধরেছিস তো! ওই হাত কিন্তু আর ছাড়ব না। ছাড়িয়ে নিতে চাইলে কিন্তু কেটে রেখে দেব।
আর শোন, ভদ্রলোক কেন এসেছে রে? মত পাল্টে বিয়ে করবে নাকি! তবে যাই হোক ভদ্রলোকের পাশে তোকে মানাচ্ছে না। তোর পাশে রোদে পোড়া, ঠোঁট কাটা, বেয়াদব পাশের বাড়ির ছেলেটাকেই মানাবে।
চলবে….
#বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-২৬
সাহ্নিকের হঠাৎ এভাবে আসাটা কেউ ভালো চোখে না দেখলেও আপ্যায়ন, যত্নে কোনো ত্রুটি করলো না। বৃষ্টির বাবা সবাই কে বললেন, ছেলেটা কয়েকদিন থাকবে। তার যত্নে যেন ত্রুটি না হয়।
সাহ্নিক মিশুক হওয়ার দরুন সকলের সঙ্গে মিশে গেল। সবার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। পিকু, পিয়াসের জন্য চকলেট আর খেলনা। পলিনের জন্য মেকাপ বক্স। দাদীর জন্য কারুকাজ খচিত পানের বাটা। আর অন্যান্য দের জন্য শাড়ি নিয়ে এসেছে। নিলুফারের জন্য কিছু আনতে পারেনি তার জন্য অনেক দুঃখও করলো। নিলুফার কে বলল,
“আসলে বৃষ্টিলেখা যখন চিঠি লিখেছিল তখন আপনি ছিলেন না। আমিও বুঝতে পারিনি যে এরমধ্যে এই বাড়ি আপনার এন্ট্রি হয়ে যাবে। তাই আপনার নাম করে কিছু আনা হলো না। ”
নিলুফার বলল, থাক সমস্যা নাই।
“না না সমস্যা আছে। আমি আপনাকে অন্য একটা জিনিস দিচ্ছি। ”
সাহ্নিক ওর একটা ডায়েরি নিলুফার কে দিলো। নিলুফার সেটা খুশিমনে নিলোও।
বাড়ির পুরুষ দের সবার জন্য এনেছে ঘড়ি। আর বৃষ্টির জন্য এনেছে মোবাইল। মোবাইল দেখে বৃষ্টি বলল,
“আমার জন্য মোবাইল কেন?”
“এখন তো মোবাইল সবাই ব্যবহার করছে। তাই ভাবলাম…..
“আসলে মোবাইলে কথা বলার জন্য আমাদের তেমন আত্মীয় নেই বলে বাবা কেনেনি। তাছাড়া আবির ভাইদের বাড়িতে মোবাইল আছে তো তাতেই হয়ে যায়। ”
“তবুও রাখুন। ”
বৃষ্টি মোবাইল নিলো। সাহ্নিক হেসে বলল,
“থ্যাংকস বৃষ্টিলেখা। ”
বৃষ্টি হাসলো কিছু বলল না।
****
সাহ্নিকের সঙ্গে আবিরের দেখা হলো পরদিন সকালে। পরদিন শুক্রবার থাকায় পলিন বাড়িতেই ছিলো। পলিন সঙ্গে করে সাহ্নিক কে নিয়ে গেল। আবির কে ডেকে বলল,
“এই দেখো কে এসেছে!”
আবির পুরনো পত্রিকা পড়ায় ব্যস্ত ছিল। সাহ্নিক কে দেখে উঠে দাঁড়ালো। সাহ্নিক বলল,
“আপনি কাল কেন বললেন না যে আপনি আবির?”
আবির মাথা চুলকে বলল,
“আপনি তো আমার নাম জিজ্ঞেস করেন নি। ”
সাহ্নিক হাসলো। নিজেই চেয়ার টেনে বসলো। আবির মা’কে ডেকে আনলো। আবিরের মা ওর আসার খবর পেলেও এখনো পর্যন্ত দেখে নি। আলাপচারিতার পর তিনি গেলেন চা বানাতে। সাহ্নিক লেবু চা খাবে।
সাহ্নিক আবির কে বলল,
“কী অদ্ভুত ব্যাপার তাই না? এখানে এসে প্রথমেই আপনার সঙ্গে দেখা হলো। ”
“আপনি কী বাঙালি? এতো স্পষ্ট বাংলা বলছেন তো তাই জিজ্ঞেস করলাম। ”
“হ্যাঁ আমার জন্ম বাংলাদেশেই। মাঝেমধ্যে এখানে আসা হয়। ফরিদপুর আমার নানাবাড়ি। আর আমি যেখানে থাকি সেখানকার ম্যাক্সিমাম লোকই ইন্ডিয়ান বাঙালী আর বাংলাদেশী। ”
“আপনি কিন্তু দারুণ বাংলা বলেন। বিদেশ থেকে যারা আসে তারা বাংলা ভাষা টা’কে এতো বিকৃতি করে ফেলে!”
সাহ্নিক হাসলো। আবির লক্ষ্য করলো এই ছেলেটা সারাক্ষনই হাসে। দেখতে ভালো লাগে। ছেলেদের এমন সুন্দর হাসি আবির খুব একটা দেখেছে বলে মনে পড়ে না।
পলিন চা নিয়ে এলো। চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, চিড়ে ভাজা। সাহ্নিক চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে খাচ্ছে। বিস্কুট ডুবানোর সঙ্গে সঙ্গে গলে চায়ের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছে। অতি সাধারণ একটা বিষয়। তবুও আবির মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আবিরের হঠাৎ মনে হলো এই ছেলেটার সঙ্গে বৃষ্টির বিয়ে হলে ও খুব ভালো থাকবে। কারণ রাগকন্যা যখন রেগে যাবে তখন ওর মতো করে আগুনে ঘি না ঢেলে এই ছেলেটা মিষ্টি করে হাসতে থাকবে। রাগ ভাঙানোর অভিনব পন্থাও খুঁজে বের করবে।
আবির অতিসন্তঃর্পনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কী যে আবোলতাবোল ভাবছে! বৃষ্টির এই ছেলের সঙ্গে কেন বিয়ে হবে! সারাজীবন এই পাড়ায় থাকলো, অথচ বিয়ে করে বিদেশ বিভূঁইয়ে গিয়ে থাকবে! তাছাড়া ভালো ছেলেদের জন্য পৃথিবীতে অনেক ভালো মেয়ে আছে। তাদের মধ্যে থেকে কারোর সঙ্গে এই ছেলেটার বিয়ে হবে। বৃষ্টিলেখা শুধু ওর।
সাহ্নিক চা শেষ করলো। অল্প চিড়েভাজাও খেল নারকেল দিয়ে। পলিন এবার নিয়ে এলো তালের বড়া। আবির বলল,
“কিরে হঠাৎ এতো ভালো হয়ে উঠলি যে! খুব কাজবাজ করছিস। ”
পলিন মুখ বাঁকিয়ে বলল, আমি আগেও ভালো ছিলাম। শুধু তুমি অন্ধ ছিলে।
সাহ্নিক ওদের কথা শুনে হাসলো। আবির সাহ্নিকের উদ্দেশ্যে বলল,
“জানেন পলিন কিন্তু খুবই ইন্টিলিজেন্ট মেয়ে। প্রতি পরীক্ষায় ম্যাথে ভালো রেজাল্ট করে। ”
পলিন আবিরের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। আবির আবারও বলল,
“আপনাকে কী ও বলেছে স্কুলে যাবার পথে একশ ছেলে ওর জন্য রাস্তায় লাইন দিয়ে পিটি করে। ”
পলিন বলল, আবির ভাই ভালো হবে না কিন্তু।
সাহ্নিক পলিন কে বলল,
“পলিন আমাকেও একদিন নিয়ে যেও। আমি একদিন ওদের সঙ্গে আলাপ করব। ”
আবির সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো, হ্যাঁ কাল ই নিয়ে যাস।
পলিন বিড়বিড় করে বলল,
“করো। আমার চৌদ্দ গুষ্টি আরও উদ্ধার করো। চিঠি আছে, দেবনা। ”
আবির সুর পাল্টে বলল,
“না আসলে আমাদের পলিন খুব ভালো মেয়ে। ওর মতো মেয়ে সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না। সচরাচর কী, একদম ই পাওয়া যায় না। ”
দুজনের কথাবার্তায় সাহ্নিক বেশ মজা পাচ্ছে। ও শুধু হাসছে।
প্রথম দিন এর থেকে বেশী আলাপ জমলো না। সাহ্নিক আবির কে বলল, এখানকার সুন্দর জায়গা গুলো তে ও’কে নিয়ে যেতে। আবিরও বলল যে নিয়ে যাবে।
যাবার আগে পলিন চিঠি দিয়ে গেল আর বলল,
“কথাবার্তা সাবধানে বলবে এরপর থেকে। ”
আবির চিঠি টা নিলো। পলিনের কথার পিঠে কিছু বলল না।
চিঠি না বলে এটাকে চিরকুট বলা ভালো। মাত্র দুটো বাক্য লেখা।
“কলেজের সামনে থেকো। জরুরী কথা আছে। ”
****
আবির কলেজের সামনে গিয়ে দেখলো বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে। ও বলল,
“তুই তো কোনো টাইম বলিস নি। তাই আন্দাজে এলাম। ”
বৃষ্টি বলল,
“সাহ্নিক যখন তোমার সঙ্গে আমাদের বাড়িতে এলো তখনও ও জানেনা যে তুমি আবির। ”
“হ্যাঁ। কারণ আমি নাম বলিনি। ”
“আচ্ছা। ”
“কেন?”
বৃষ্টি হঠাৎ গলার স্বর পাল্টে বলল,
“সাহ্নিক তোমাকে চিনে কিভাবে? আমি তো ও’কে তোমার কথা বলিনি। ”
“ওর সঙ্গে আমার কাল ই আলাপ হলো। আমাকে কিভাবে চিনলো কে জানে! আমি তো এখনো দেশের প্রেসিডেন্ট হই নি। ”
বৃষ্টি সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি সাহ্নিক কে চিঠি লিখেছো?”
আবির অবাক গলায় বলল,
“আমি কেন চিঠি লিখতে যাব? ওর এড্রেস পাব কোথায়?”
“পলিনের থেকে নিয়েছো।”
আবির ঠাণ্ডা গলায় বলল,
“এসব কাজ আমি করিনা। আমার মনে যা, মুখেও তা। সাহ্নিক কে চিঠি লিখে অনুনয়, বিনয় করার কোনো দরকারও আমার নাই। কারণ আমি জানি যেটা আমার সেটা আমারই। ”
বৃষ্টি শান্ত গলায় বলল,
” তাহলে পলিন! এই পলিন টা খুব বাড়াবাড়ি করছে। ”
আবির বলল,
“করলে করে ফেলছে। এখন শোধরানো তো আর যাবে না। আর এতো রিয়েক্ট কেন করছিস? আমার কথা বলছে তো কী হইছে? আমি কী তোদের পাড়ার গুন্ডা? যে এসিড হাতে চায়ের দোকানে বসে থাকে তোর জন্য। তার নাম বলে তোর বোন জাত খুইয়েছে। ”
“উফ! যাও তুমি আর থাকতে হবে না। ”
“এই তাহলে ঘটনা! আমি ভাবছি আজও বুঝি সিনেমায় যাবি। এই ভেবে না খেয়ে এলাম। ভাবলাম সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে ভালো, মন্দ খাব।”
বৃষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তুমি আর শোধরাবে না!”
“শোধরানোর কী দরকার! আমি কী তোকে বলি যে তোর চেঞ্জ হওয়া উচিত! তুইও বলবি না। ”
বৃষ্টি কিছু বলল না। রিকশার জন্য হাটতে শুরু করলো। আবির পাশেই হাটছে আর গুনগুন করে গাইছে,
“তুমি, আমি তিন সত্যি হলে বাকী সব আজ মিথ্যে। ”
ফাঁকা রাস্তায় ভরদুপুরে এই গুনগুন শব্দে গাওয়া গান শোনার জন্য বৃষ্টি ছাড়া আর কেউ রইলো না।
চলবে….