বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখা পর্ব-২৭+২৮

0
485

#বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-২৭

সাহ্নিকের সঙ্গে আবিরের বন্ধুত্ব ভালোই জমেছে। সাহ্নিক এখন আবিরের সঙ্গেই থাকছে। আবিরও সাহ্নিককে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে এদিক সেদিক। দুলুকে আনতে আবির বাস স্ট্যান্ডে গেলে সাহ্নিকও সঙ্গে করে গেল। দুলুর সঙ্গে এবার ওর বরও এসেছে। দুলুর বর আবির কে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

“এটা কে আবির?”

আবির চাপা গলায় বলল, আমার সত।

দুলু পাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো,

“সেটা আবার কী?”

“মহিলাদের ক্ষেত্রে যদি সতীন হয় তাহলে লজিক্যালি পুরুষদের ক্ষেত্রে সত হওয়া উচিত না! এর সঙ্গে বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর আমাদের দেখতে এসেছে।

দুলু ওই ভীড়েই শব্দ করে হেসে ফেলল। আবিরের দুলাভাই বলল,

“বাবাগো! তুই বাংলা ডিকশনারি লেখা শুরু কর। ”

সাহ্নিক দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওরা কাছাকাছি আসতেই আবির বলল,

“আমার আপা আর দুলাভাই। ”

দুজনের সঙ্গেই হেসে কুশল বিনিময় করলো। ”

অন্যদিকে বৃষ্টির সঙ্গে সাহ্নিকের দেখা হয় খুব কম। প্রায় সারাদিনই আবিরের সঙ্গে থাকে। বাকী সময়টা পলিন আর নিলুফারের সঙ্গে বসে লুডু খেলে। দুলু বাড়িতে আসার পর সাহ্নিক কে এখন আর বৃষ্টিদের বাড়িতে পাওয়াও যাচ্ছে না। ওখানেই হৈ হৈ করে কাটাচ্ছে।

আবিরের দুলাভাই এসে ঘোষণা দিলো সবাই মিলে বাড়িতে পিকনিক করবে। বৃষ্টিকেও সেই মিটিং এ ডাকা হলো। বৃষ্টি বলল,

“এই সিজনে পিকনিক?”

পলিন বলল, সাহ্নিক ভাইয়া এই সিজনে আসছে বলে এই সিজনে পিকনিক হবে।

বাকীরাও তাতে সমর্থন জানালো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো যে পিকনিকের স্পন্সর করবে আবিরের দুলাভাই।

এতো সব কিছুর মধ্যে একটা ব্যাপার কারো চোখে পড়লো না যে আতিফ কোনো কিছুতেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহন করছে না। সবকিছুর মধ্যে থেকেও কেমন না থাকার মতো।

***
আতিফ আর পলিনের সম্পর্ক টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। যদিও এটাকে সম্পর্ক বলা ভুল হবে। তবুও দুজনের মধ্যে খানিকটা মনোমালিন্য লেগে আছে। একদিন সন্ধ্যায় আতিফ পলিন কে পড়াতে গেল।

পলিন বই খুলতে খুলতে বলল,

“আজ কিন্তু বেশীক্ষন পড়ব না। ”

“কেন কী সমস্যা?”

“আজ একটু কাজ আছে। ”

আতিফ সন্দিহান চোখে তাকালো। বলল,

“কী কাজ?”

পলিন ব্যাপারটা’কে এড়িয়ে গেল। পড়া শুরুর বিশ মিনিট পর পলিন বলল,

“আজ এই পর্যন্ত পড়ি। কাল আবার পড়ব। ”

আতিফ শান্ত গলায় বলল, পলিন তোমার যে কাজই থাক, সেটা পড়াশোনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ না। তোমার প্রি টেস্ট পরীক্ষার কিন্তু বেশী বাকী নেই।

পলিন মাথা নিচু করে বলল,

“কাল থেকে নিয়মিত পড়ব। ”

আতিফ আর কথা বাড়ালো না। পলিন কে যেতে দিলো। কিন্তু যখন দেখলো ওর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে চোর, পুলিশ খেলা তখন মাথাটা গরম হয়ে গেল। পরদিন পড়াতে গিয়ে একদম নরমাল আচরণ করলো। যতক্ষন সময় পড়ায় ততক্ষন পড়া হয়ে যাবার পর আরও পড়তে বলল। পলিন বলল,

“আপনি তো প্রতিদিন এমনই পড়ান। ”

“আজ বেশী পড়ালে কী সমস্যা? ”

“আসলে আমার পড়তে ইচ্ছে করছে না। ”

আতিফ শান্ত গলায় বলল, বই বের করো। আজ তুমি সারারাত পড়বে। আমি এখানেই বসে থাকব।

পলিন তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলল,

“সারারাত পড়লে ঘুমাবো কখন? আমি এখন আর পড়ব না। ”

আতিফ কঠিন গলায় বলল,

“তুমি পড়বে, দরকার হলে তোমার চৌদ্দ গুষ্টি পড়বে। ফাজলামি হচ্ছে!”

পলিন হতভম্ব হয়ে গেল আতিফের শীতল চাহনী আর গলার স্বরে। আর সেদিন সত্যিই রাত বারোটা পর্যন্ত পলিন কে পড়তে হলো। বৃষ্টি এসে বলল,

“তোর ছাত্রীকে কী একদিনেই বিদ্যাসাগর বানিয়ে দিবি?”

আতিফ কিছু বলল না। পলিন কে যেতে দিলো। সেই থেকে দুজনের সম্পর্ক আরও
শীতল। পলিন পড়ার সময় খুব ঠান্ডা মেরে থাকছে। বাড়তি কথা তো দূরে থাক, কাজের কথাও বলছে না। অন্যদিকে আতিফ নিজের কাজের জন্য নিজেই অনুতপ্ত। এতোটা কঠিন বোধহয় ওর হওয়া উচিত হয় নি। পড়ার বাইরে দুজনের আগে অল্প বিস্তর কথা হলেও এখন একদমই হচ্ছে না। এই ব্যাপার টা আতিফ কে আরও বেশী কষ্ট দিচ্ছে।

***
সাহ্নিক এসেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক হলো। এই এক সপ্তাহে বৃষ্টি খেয়াল করেছে, আবির ও’কে এড়িয়ে চলছে। হঠাৎ এড়িয়ে চলার কারণ টা ওর অজানা। দেখা হলেও কথা বলছে না তেমন। আগের মতো ক্ষ্যাপাচ্ছেও না। বৃষ্টি বুঝতে পারলো না যে ঠিক কী ঘটেছে।

বৃষ্টি ছাদে হাটছিলো। বর্ষাকালে শ্যাওলা জমে খানিকটা পিচ্ছিল হলেও হাটতে ভালো লাগছে। সাহ্নিকও এই সময় হাটতে এলো। বৃষ্টিকে দেখে হেসে বলল,

“তুমি আজ এখানে? ”

“আপনি রোজ আসেন?”

“হ্যাঁ। ”

বৃষ্টি মৃদু হেসে বলল,

“আমার কাছে ছাদে হাটার চেয়ে উঠোনে হাটতে বেশী ভালো লাগে। মাটির একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ আছে। যেটা ছাদে আসলে পাওয়া যাবে না। ”

“এক্সাক্টলি। প্রকৃতির একটা আলাদা ম্যাজিক আছে। ”

বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো,

“আমাদের বাড়ি কেমন লাগছে?”

“খুব ভালো। ”

“বাড়ির লোকজনের মধ্যে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে?”

“সবাইকে। ”

বৃষ্টি হেসে ফেলল।

সাহ্নিক বলল,

“একেকজন একেকরকম। তোমার মা যখন আমাকে খেতে দেয় তখন সে পাশে বসে থাকে। আমি খেয়াল করেছি সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি যখন খাবার টা খেয়ে আনন্দ পাই তখন সে খুব খুশি হয়।

তোমার ছোট মা কথা বলেন কম। তবে সেও খুব ভালো। যখনই দেখা হয় তখনই জিজ্ঞেস করে, কোনো সমস্যা আছে কী না!

তোমার দাদীর কাছ থেকে আমি পান খাওয়াও শিখেছি।

বৃষ্টি হেসে ফেলল। সাহ্নিক আবারও বলল,

“তোমার দাদী আর বাবার টা বুঝতে পারি না। নিলুফারও চমৎকার মেয়ে। যেকোনো খেলায় ও চায় আমি যেন জিতে যাই। টুকু ভাই ভালো না মন্দ বুঝতে পারছি না। উনি সম্ভবত ওনার স্ত্রীকে ছাড়া সবার সাথেই কথা বলতে আনকম্ফোর্ট ফিল করে।
তবে তোমার দুই ভাই ভয়ংকর। সেদিন একটা ফুল টাইপ কিছু এনে দিয়ে বলল ওটা খেতে দারুণ। পরে জানলাম যে ওটা কচুফুল৷ ভাগ্যিস খাই নি।

বৃষ্টি শব্দ করে হাসলো। হঠাৎই জিজ্ঞেস করলো,

“আর আবির কে কেমন লাগছে?”

জিজ্ঞেস করে নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। সাহ্নিক হেসে বলল,

“পরে বলব। ”

“আপনি এখনো বলেন নি যে আবির কে আপনি কিভাবে চিনলেন?”

সাহ্নিক বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমাদের বাড়ি থেকে তুমি ছাড়াও আরও তিনজন আমাকে চিঠি লিখেছে। আমি যাবার আগে সেগুলো তোমাকে দিয়ে যাব। ”

চলবে….

#বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-২৮
পলিন আর আতিফের কথাবার্তা এখন শুধু পড়াশোনায় ই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে কথা হয় না। তবে আতিফের অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন বাড়ির লোকও টের পেল। আতিফের কয়েকটা ভর্তি পরীক্ষা ছিলো পর পর। যেগুলো ও দেয় নি। আবির আর দুলু এই ব্যপারটায় খুব অবাক হলো। আতিফ বরাবরই নিজের পড়াশোনায় সিরিয়াস। আলাদা করে তাই কাউকে খেয়াল করতে হতো না। কিন্তু এই ঘটনার পর আবির আর দুলু আতিফের সঙ্গে কথা বলল। ওর সমস্যা কী সেটা জানতে চাইলো। আতিফ প্রথমে খানিকক্ষন চুপ থাকলেও পরে জানালো যে, এই বছর ও কোথাও ভর্তি হবে না।

দুজনেই বেশ অবাক হলো। আবির জিজ্ঞেস করলো,

“হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারণ? ”

আতিফ বলল,

“এমনিই। আমার ভালো লাগছে না। ”

দুলু জিজ্ঞেস করলো,

“কী ভালো লাগছে না?”

“পড়াশোনা করতে।”

“তাই বলে এক বছর গ্যাপ দিবি?”

আতিফ বলল,

“এক বছর গ্যাপ দিলে তাতে ক্ষতি তো কিছু নেই। ”

আবির বিরক্ত গলায় বলল,

“কিন্তু এক বছর গ্যাপ দেয়ার কথা আসছেই বা কেন!”

আতিফ ধৈর্য্যচ্যুত গলায় বলল,

“কারণ আমি পারছি না। কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছি না।”

দুলু আদুরে গলায় বলল,

“তোর সমস্যা কী হয়েছে সেটা আমাদের বল। বললে না, একটা সমাধান দিতে পারব। ”

আতিফ খানিকক্ষন ভাবলো। বলল,

“পরে বলব। ”

আতিফ চলে যাবার পর দুলু আবির কে বলল,

“কিছু কী বুঝতে পারছিস? ওর কী হতে পারে!”

আবির চিন্তিত গলায় বলল,

“বুঝতে পারছি না আপা। ”

ওরা দুই ভাই বোনের কেউই এই ব্যাপার নিয়ে আর কারোর সঙ্গে আলাপ করলো না। যতক্ষন পর্যন্ত আতিফ নিজের সমস্যা না বলতে পারছে ততক্ষন পর্যন্ত এই ব্যাপারে কথা না বলাই ভালো।

***
সাদামাটা করে আয়োজন করা পিকনিক ভালোই জমে উঠলো। সবাই মিলে হৈ হৈ করে রান্নাবান্না করে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হলো। পলিন পিকনিকে খুব হাসিখুশিই ছিলো। এই ক’দিনে সাহ্নিকের সঙ্গে ওর ভালোই সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ব্যাপার টা অন্য কেউ খেয়াল না করলেও আবির খেয়াল করলো। আবিরের কাগজ পত্র ঠিকঠাক করা নিয়ে কিছু কাজ থাকায় সারাদিন ব্যস্ত ছিলো। সন্ধ্যেবেলা সাহ্নিকের সঙ্গে যখন দেখা হলো তখন শুনলো যে ও আজও ঘুরতে বেরিয়েছিলো। সেখান থেকে সিনেমা দেখতে গেছে পলিনের সঙ্গে। আবির প্রথমে ব্যাপার টা’কে অতো পাত্তা না দিলেও পরে পাত্তা দিতে হলো। পরদিন পলিন স্কুল পালিয়ে এসেছে সাহ্নিকের সঙ্গে লুডু খেলবে বলে।

লুডু খেলার এমন ঘটা দেখে আবিরের খটকা লাগতে শুরু করলো। এই খটকা ক্লিয়ার হলো পিকনিকের দিন। যখন সন্দেহজনক কোনো ঘটনা ঘটে তখন নজর আরও বেশী করে পড়ে বলেই আবিরের চোখে লেগেছে ব্যাপারগুলো। পলিন একটু বেশিই সাহ্নিকের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করে। খাবারের সময়ও সাহ্নিকের পাশে গিয়ে বসলো। আবির এক ধমক দিয়ে বলল,

“তুই এখানে এভাবে বসেছিস কেন! যা শার্ট, প্যান্ট পরে আয়। ছেলেদের মধ্যে বসতে হলে শার্ট, প্যান্ট পরে আয়। ”

পলিন ভেংচি কেটে উঠে গেল। অন্যদিকে আতিফ কে আশেপাশে পাওয়াই যাচ্ছে না। সে দূরে দূরে থাকছে। বৃষ্টি দুলুকে জিজ্ঞেস করলো,

“কী ব্যাপার আতিফ কী এখনো পড়ছে নাকি?”

দুলু একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

“নারে! ওর একটু শরীর ভালো না তো তাই আসছে না। ”

“সেকী! ওর কী হয়েছে!”

“তেমন কিছু না। একটু শরীর খারাপ। ”

***
আবির পলিন কে এই ব্যাপারে কিছু বলল না। তবে পলিনের মা’কে সরাসরি কিছু না বললেও শুধু এইটুকু বলল যে পলিনের দিকে একটু খেয়াল রেখো। ওর কিন্তু আসলেই এখন পড়াশোনায় সময় আরেকটু বাড়িয়ে দেয়া উচিত।

রেনু তারপর থেকে মেয়ের দিকে খেয়াল রাখছে যতটা পারছে। আবির যে শুধু পড়াশোনার ব্যাপারটার জন্য কথা তুলেছে তেমন টা যে না সেটুকু রেনু বুঝতে পেরেছে।

সাহ্নিক ঢাকায় চলে গেল। বলে গেল, আবারও একবার আসবে। ঢাকায় কিছু কাজ আছে। কাজ শেষ করে এখানে আরও কিছুদিন থাকবে।

সাহ্নিক চলে যাবার পর থেকেই পলিনের খুব মন খারাপ। পড়াশোনায় এমনিতেই মন নেই তার উপর এখন কিছুতেই ভালো লাগছে না। সন্ধ্যাবেলা লাইট অফ করে শুয়ে আছে। নিলুফার এসে বলল,

“পলু আতিফ তো আসছে। পড়তে যাবা না?”

পলিন বলল,

“ভাবী আজ শরীর টা ভালো নাই। একটু বলে দাও তুমি। ”

নিলুফার আতিফ কে জানালো। আতিফ বলল,

“আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু পলিন কে একবার আসতে বলুন। আমার একটু কথা আছে। ”

নিলুফার এসে পলিন কে জানালো৷ পলিন অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠে গেল। আতিফ পলিন কে ভালো করে দেখলো। মুখ টা শুকনো লাগছে। চোখ টা’ও কেমন যেন ফোলা ফোলা টাইপ। সচরাচর যেমন থাকে তেমন চোখ না। আতিফ নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“তোমার শরীর খারাপ? ”

পলিন মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।

আতিফ আবারও বলল,

“তাহলে রেস্ট নাও। পড়তে হবে না। ”

পলিন হ্যাঁ, না কিছু বলল না।

আতিফ খানিকটা সময় চুপ করে রইলো। তারপর বলল,

“পলিন!”

পলিন মাথা তুলে তাকালো। আতিফ বলল,

“ওইদিনের ঘটনার জন্য আমি আসলে দুঃখিত। আমার মাথা গরম করা উচিত হয় নি। ”

পলিন এখনো চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না। আতিফ এবার একটু হেসে বলল,

“আচ্ছা শোনো, তোমার জন্য একটা খবর আছে। তুমি কিন্তু চাইলে আমাকে ফেল্টু বলতে পারো। কারণ আমিও তোমার মতো ফেল করছি।”

পলিন এবার অবাক চোখে তাকালো। আতিফের চোখে চোখ পড়লো। ছেলেটা গভীর চোখে তাকিয়ে আছে।

***
আতিফের সঙ্গে কথা বলে ঘরে এসে দেখলো বৃষ্টি বসে আছে। সন্ধ্যেবেলা ও ব্যস্ত থাকে পিকু, পিয়াস কে পড়াতে। আজ ঘরে দেখে পলিন বলল,

“আজ ঘরে যে?”

“তুইও তো ঘরে। ”

“শরীর টা ভালো লাগছে না বুবু। ”

“শরীরের কী হয়েছে রে পলিন?”

“তেমন কিছু না। একটু খারাপ লাগছে। ভালো লাগছে না কিছু। ”

“ভালো লাগছে না কেন? কারণ টা কী?”

পলিন হেসে বলল,

“তুমি তো দেখি পুলিশের মতো জেরা করছো বুবু?”

“পুলিশ ভাবলে ভাব। সারাদিন যে বিন্দাস থাকে, তার হঠাৎ খারাপ লাগার কারণ কী!”

পলিন বলল,

“বোধহয় পরীক্ষার টেনশন। ”

“পরীক্ষার টেনশন! যে পলিন সারাজীবন পড়াশোনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলো! সারাদিন যে গেয়ে বেড়ায় বুবুর বিয়ে হলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে টেনে হিচড়ে ছেলেরা বিয়ে করবে সে করছে পরীক্ষার টেনশন! এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে!”

পলিন হাসলো শব্দ করে। বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো,

“রোগ টা আসলে শরীরের তো? নাকি মনের রোগ?”

পলিন কোনো কথা বলল না। চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

বৃষ্টি উঠে এসে পলিনের গালে হাত রেখে বলল,

“সরল, হাসিখুশি, প্রানবন্ত তোকেই ভালো লাগে। যেমন আছিস তেমনই থাক। জটিল কিছু যদি ঘটে থাকে, কিংবা ঘটার সম্ভাবনা থাকে তাহলে আমাকে জানাতে পারিস। বড়বোন হিসেবে আমি বোধহয় খুব একটা খারাপ না। তাই না?”

চলবে…..