বিকেলের যতো রঙ পর্ব-১০

0
41

#বিকেলের_যতো_রঙ
পর্ব-১০
#রুবাইদা_হৃদি

‘ভালোবাসি৷ আর ভালোবাসবো৷ তবে এই ঝুমাকে না৷ আমি সেই নিষ্পাপ ঝুমাকে ভালোবাসি যার মনে কোনো পাপ ছিলো না৷ তোমার মন কলুষিত ঝুমা৷ তোমাকে আমি ঘৃণা করি৷’

ভাইয়ার কথাশুনে বোধহয় ঝুমা আপা মেঝে তে বসে পরলো৷ তার কান্নার শব্দ ভারী হচ্ছে৷ ভাইয়া গিয়ে দরজা আটকে দিলো৷ আর ফ্যানের পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

‘এইসব করে প্লিজ মানুষ জড়ো করো না৷’

‘তুমি আমাকে অপবাদ দিচ্ছো কেন আশরাফ!’

‘কারণ তুমি অপরাধী৷’

ঝুমা আপা নিশ্চুপ হয়ে গেলো৷ ভাইয়া বোধহয় চেয়ারে বসলো৷ আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না!

‘আমি বিয়েটা করবো না৷ দরকার পরলে নিজেকে শেষ করে দিবো৷’

ঝুমা আপা কিছুটা এলোমেলো গলায় বললো৷ ভাইয়া কিছুটা সময় চুপ থেকে বললো,

‘নিজেকে শেষ করার জন্য তোমাকে আমি রেখে দেই নাই ঝুমা৷ আমি চাইলে তোমাকে শে’ষ করে দিতে পারি৷’

‘তাই দাও আশরাফ ভাই৷ আমি সেটাই চাই৷ তোমার আব্বা আমার ভালোবাসা মাটি চাপা দিয়েছে আর তুমি আমাকে দাও৷’

‘শোনো ঝুমা,তুমি আমার আব্বাকে দোষারোপ করবে না৷ তোমার মা নিজ ইচ্ছায় আমার আব্বাকে বিয়ে করেছে৷ আর তুমি কি করলে! ইমরানের সাথেই সম্পর্ক করলে৷’

ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম৷ বুক ধড়ফড় করে উঠলো৷
ঝুমা আপা নিশ্চুপ থেকে বললো,

‘আমি ভুল করেছি৷ আর কখনো এমন হবে না৷’

‘পারবে না ঝুমা৷ তুমি স্বার্থপর,লোভী৷’

‘আশরাফ মুখে লাগাম দাও৷’

আপা কিছুটা হুংকার দিয়ে বললো৷ ভাইয়া হাসলো৷ হাসতে হাসতেই বললো,

‘তোমাকে সুখে সংসার করার সুযোগ দিচ্ছি ঝুমা৷ এরপর আর সুযোগ পাবে না৷ ইমরানের সাথে তোমার সম্পর্ক ছিলো৷ ওইদিন দুপুরবেলা ইমরানের সাথে দেখা করার জন্যই তুমি মিথির সাথে বাড়ি ফেরো নি৷ তুমি আর ইমরান আড়ালে আলাপ করছিলে৷ এবং ইমরান তোমার কাছে যাবার চেষ্টা করছিলো৷ আর তা ভাগ্যের পরিহাসে রফিকুল দেখে ইমরান কে মা’রে৷’

‘সবটাই যখন জানো আমাকে বাঁচাচ্ছো কেন!’

‘কারণ আমি ভালোবাসি৷ মন থেকে বাসি৷ তোমার মতো বেইমানি করতে পারছি না বলেই বাচাচ্ছি৷’

‘ইমরান কে আমি কখনো ভালোবাসি নি৷ ওইটা সাময়িক মোহ ছিলো৷ আমি তোমায় ছোট থেকেই ভালোবাসি আশরাফ৷’

‘হ্যাঁ আমার আব্বার টাকা, আমার যোগ্যতাকে ভালোবেসেছো তুমি৷ যখন আমার কিছু ছিলো না তখন তুমি ইমরানকে সুযোগ দিয়েছো৷ এখন আমার সব হয়েছে এইজন্য তুমি ইমরান কে বাদ দিয়ে আমাকে সুযোগ দিচ্ছো৷’

ভাইয়া তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো৷ ঝুমা আপা মিনমিনে কন্ঠে বললো,

‘আমার চাওয়াতে তো কোনো ভুল নেই আশরাফ৷ আমি ভালো একটা জীবন চাইতেই পারি৷’

‘তাই বলে তোমার সব বিলিয়ে দিবে? আমি তো এই ঝুমাকে চিনি না৷তুমি কি ভেবেছিলে! আমি তোমার আর ইমরানের সম্পর্কে জানার পরেও তোমাকে বিয়ে করতাম?’

‘করতে আশরাফ৷ সামাজিক বাধা না থাকলে বিয়েটা তুমি করতে৷’

ঝুমা আপা কথাটা খুব জোর দিয়ে বললো৷ আমি আধবোজা চোখে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়ার চেহারা কেমন উদাস হয়ে গেছে৷ তবে ভাইয়া নিজেকে সামলিয়ে বললো,

‘করতাম হয়তো৷’

ঝুমা আপার অধরে হাসি ফুঁটে উঠলো৷ সে উঠে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরলো৷ ভাইয়ার চোখজোড়া কেমন ছলছলে হয়ে উঠলো যেন৷

‘আমার ভুল মাফ করে দাও আশরাফ৷ চলো আমরা দুজনে একসাথে সংসার করি৷’

আপার কথা শুনে ভাইয়া ধমক দিয়ে বললো,

‘দুনিয়াতে খু’নের শান্তি মাফ করা যায় ঝুমা তবে ভালোবাসা হ’ত্যাকারীকে নয়৷’

ঝুমা আপা ভাইয়ার হাত শক্ত করে ধরলো৷ এরপর বললো,
‘তুমি যখন ঢাকায় ছিলে ইমরান একপ্রকার জোর করেই আমাকে প্রেম নিবেদন করে৷ তুমি তো চিনো ইমরানকে৷ আমি আবেগের বসে আমি ওর সাথে ঘোরাঘুরি করেছি৷ কিন্তু কখনো ওকে মন দিয়ে ভালোবাসিনি আশরাফ৷ আমার মনে সব সময় তুমি ছিলে৷ আমি চাইতাম দ্রুত বিয়েটা হয়ে যাক৷ তবে এরমাঝে খালাম্মার মৃত্যু৷ যদিও আমি জানতাম না আমার মা দায়ী৷ এরপর তোমার আব্বার আমার মাকে বিয়ে করা৷ জানো ওইদিন আমি পায়ে ধরেছি৷ আমারো তো ভালোবাসা পাবার অধিকার আছে৷’

ভাইয়া কিছুটা রাগী স্বরে বললো

‘ছিলো৷ তবে তুমি তা হারিয়েছো৷ আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম৷ আমি ভাবতাম আমার ভালোবাসা পবিত্র৷ তোমার ভেতরে কোনো দোষ নেই৷ তবে আমি ভুল৷ তুমি কিভাবে পারলে ইমরানের সাথে সম্পর্কে জড়াতে!’

আপা কিছু বললো না৷ তবে ভাইয়া নিজ থেকেই বললো,

‘তোমার মা আব্বাকে মারতে চায়নি৷ কিন্তু তুমি নিজে ইমরানকে দিয়ে আব্বাকে মেরে ফেলতে চেয়েছো৷ যেন আব্বা মা’রা যায়৷ মিনু খালা তোমাকে বাঁচানোর জন্যই এতো ভয়ে ভয়ে থাকতো৷ তোমার এতো কিসের চাহিদা ঝুমা? তুমি তো এমন ছিলে না!’

‘আমি ভালো থাকতে চেয়েছি৷ মাঝখানে ওই ইমরান আর তোমার আব্বা এসে সব নষ্ট করে ফেলেছে৷’

‘আমার আব্বা তো তোমাদের ছায়া দিতে চেয়েছে৷’

‘ছায়া দিতে হলে আমাকে তোমার বউ করেও দেওয়া যেতো৷ আসলে সব দোষ আমার মায়ের৷ আমি কেন অন্যের বাড়িতে পরাশ্রয়ী বেঁচে থাকবো! ভেবেছিলাম ইমরান আমাকে সব সুখ দিবে৷ কিন্তু ওর কাছেই তো কানাকড়ি নেই৷ ওইদিকে তোমার আব্বা আর আমার মা নিজে সুখের সংসার গোছাবে৷ তাহলে আমার কি হবে! আমি কি ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়াবো৷ আমি এই সংসার পাই নি এইজন্য মা’কেও সংসার করতে দিবো না বলেই তোমার আব্বাকে মা’রতে চেয়েছি৷ কিন্তু আফসোস! তোমার আব্বার জান মাশাল্লাহ৷’

ঝুমা আপার কথা শুয়ে ভাইয়া উনাকে থা’প্পড় মারলো৷ আমি তখুনি লাফিয়ে উঠে বসলাম৷ ভাইয়া আমাকে দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না৷ তবে ঝুমা আপা ভয় পেয়ে গেছে৷ আমি কষ্ট পাবার থেকে অবাক হয়েছি বেশ! আমি একদম শান্ত কন্ঠে আপাকে বললাম,

‘আব্বাকে কেন মা’রতে চেয়েছিলে?’

‘সংসার আমার করার কথা৷ সেখানে মা নিজের আখের গোছালো৷ পদে পদে মানুষের কাছে আব্বা মারা যাবার পর থেকে হেনস্থা হয়েছি৷ কেন মা পারতো না! আমাকে আশরাফের সাথে বিয়ে দিয়ে আমার আশ্রয়ে বাঁচতে৷ না উনি নিজে খালাম্মাকে মে’রে বউ হয়ে ঢুকলো৷’

আমি আপার কথা শুনে হেসে ফেললাম৷ হাসতে হাসতেই বললাম,

‘আহারে মিনু খালা৷ তোমার মেয়েই তো তোমার সুখ সহ্য করতে পারলো না৷’

আমার কথা শুনে ঝুমা আপা কিছুটা ভড়কে গেলো৷ আমি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

‘তুমি উনাকে ছাড় দিলেও আমি দিবো না ভাইয়া৷ মানুষ তো ভুল কিছু বলে নি৷ মা আর মেয়ে তো পুরো মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ৷’

আমার কথায় ঝুমা আপা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো৷ ভাইয়া আপাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘আমি চেয়েছিলাম আমার ভালোবাসাকে কেউ অপমান না করুক৷ তবে তুমি মর্যাদা রাখতে পারলে না ঝুমা৷’

‘তুমি সব জানলে কিভাবে ভাইয়া?’

আমি কথার মাঝে প্রশ্ন করতেই ভাইয়া বললো,

‘ইমরান সব বলেছে৷’

‘তুমি কেন এমন করলে আপা? আমরা তো তোমাকে অনেক ভরসা করতাম আপা৷’

‘শুন মিথি বাস্তবতা খুব ভিন্ন৷ আব্বা যখন মারা গেলো তখন থেকে বুঝতে শিখেছি কেউ কারো না৷ যখন আশরাফ ভাইয়ের সাথে খালাম্মা বিয়ের কথা বললো আমি যে কত খুশি হয়েছিলাম বলে বুঝানোর মতো না৷ কারণ ইমরান আমাকে সব সময় উত্যক্ত করতো৷ আমি না চাইতে আবেগে পরে ওর সাথে প্রেমে জড়িয়েছি৷ আশরাফ ভাইয়ের চাকরি ছিলো না বলে খালু আমাদের বিয়েটা পরে দিবে বলে জানালেন৷ আমি ভেবেছিলাম আশরাফ ভাইকে বিয়ের করার পর আমার সব কষ্টের মুক্তি মিলবে৷ কিন্তু কি হলো! আমার মা নিজেই খালুকে বিয়ে করে বসলো৷ যেখানে সে আমার সুখ চিন্তা করলো না আমি কেন তার সুখ চিন্তা করবো বলতে পারবি!’

চলবে….

#বিকেলের_যতো_রঙ
পর্ব-১০(পরের অংশ)
#রুবাইদা_হৃদি

ঝুমা আপা ভাইয়ার পা ধরে কান্না করছে৷ আমার উনার কান্নার সুর এতোটাই বিরক্ত লাগছে আমি কিছুটা ক্ষিপ্র গতিতে বললাম,

‘কান্না করে কি লাভ!’

‘সব দোষ তো আমার৷ তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে দেখো আশরাফ ভাই৷ দোষটা কাদের ছিলো!’

‘তুই নিজের মা’কে মার‍তে পারতি?’

ভাইয়া প্রশ্নটা করতেই ঝুমা আপা কিছুটা নিশ্চুপ হলো৷ এরপর থেমে থেমে বললো,

‘তোমাদের একটা সত্য কথা বলি৷ তোমার আব্বা আমাকে নিজের ছেলের বউ করবে না বলেই আমার মা’কে বিয়ে করেছে৷’

‘ভুলভাল কথা বলবা না আপা৷ তোমার মা জোর করে বিয়েটা সাজিয়েছে৷ সাথে হোসেন চাচা ছিলো৷’

আমি কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বলতেই ঝুমা আপা থাক উঁচিয়ে আমাকে থামার ইশারা করলো৷ এরপর ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘তোমার বোনকে সব সত্যিটা কে বলবে আশরাফ৷’

‘ভাইয়া কোন সত্যির কথা বলছে৷ আর কোন কোন সত্যি তোমরা গোপনে রেখেছো বলো তো! কাকে বিশ্বাস করবো আমি?’

আমার কথার কোনো প্রত্যুত্তর ভাইয়া করলো না৷ নির্লিপ্ত ভাবে ঝুমা আপাকে বললো,

‘সেখানেও তোমার মায়ের প্ররোচনা ছিলো ঝুমা৷ সেই কথা তো মিথ্যা না৷’

আপা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘তুই ওইদিন জিগ্যেস করেছিলি না? খালুর সাথে আমার মা’য়ের সম্পর্ক আছে কিনা!’

‘হ্যাঁ কিন্তু তুমি তো বলেছিলে কোনো সম্পর্ক ছিলোনা৷’

‘এই ঝুমা থামো তো৷ তুমি ঘরে যাও৷’

‘না ঘরে কেন যাবে!’

আমি অস্থির কন্ঠে বললাম৷ আপা একদম নির্জীব গলায় বললো,

‘খালুর সাথে আমার মা’য়ের অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো৷ তা বহু বছরের পুরোনো৷ আর বিয়েটা খালুর ইচ্ছাতেই হয়েছে৷ আর হোসেন চাচা সত্যি সত্যিই খালাম্মাকে প্যারালাইজড হবার ওষুধ দিয়েছিলো৷ কিন্তু খালুই আমার মায়ের কাছে ওই ওষুধ টা দেয় ( এইখানে আমি কোনো ওষুধের নাম বলছি না৷ বা কোনো উপায় বলছি না কারণ এইগুলা আমার কাছে বাজে লাগে৷) যেটা খাবার ফলেই খালাম্মার ব্রেইন ড্যামেজ হওয়া শুরু করে৷’

‘আল্লাহ ভাইয়া আপা কি বলে! এইগুলা মিথ্যা কথা৷ কি বলে এইগুলা! আমার আব্বাকে দোষারোপ করবে না৷ তুমি নিজে বাঁচার জন্য এমন বলছো৷’

আমি কিছুটা আর্তনাদ করে বলে উঠলাম৷ ভাইয়া ঝুমা আপার দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘তোমাকে বারবার বলেছি মিথি যেন কিছু জানতে না পারে৷ তুমি এমন কেন ঝুমা! আমাদের পরিবারে বিষাক্ত ধোঁয়া বয়ে নিয়ে এসেছো৷’

‘তোমার আব্বা অপরাধী৷ এখন ওমনি ভং ধরে থাকলে তো আর অপরাধ মাফ হয়ে যাবে না৷ বেঁচারা হোসেন চাচা মাঝে থেকে খু’নের মামলায় ফেঁসে গেছে৷’

শেষের কথাটা বলে ঝুমা বলে অদ্ভুত ভাবে হাসলো৷ আমি রাগ ধরে রাখতে না পেরে সামনে থাকা স্টিলের একটা গ্লাস আপার দিকে ছুড়ে মারলাম৷ ভাইয়া সাথে সাথেই এসে আমার হাত ধরে ফেললো৷ ভাগ্যবশত গ্লাসটা উনার পায়ে লাগলো৷ ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো আপা৷

‘আমাকে মে’রে কোনো লাভ নাই মিথি৷ সত্যটা পাল্টে যাবে না৷ তোমার নিজের আব্বা তোমাদের ভরসার স্থান সেই তোমাদের এতিম করেছে৷ আর আমার বোকা মা! নিজ ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়েছে৷’

‘তুমি ছাড়ো ভাইয়া আমাকে৷ তুমিও অপরাধী৷ তুমি সব জানতে৷’

আমি কান্নামাখা গলায় বলে উঠলাম৷ ভাইয়া আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেই কান্না করে দিলো৷ কাঁদতে কাঁদতে বললো,

‘জানতে পেরেছি কিছুদিন আগে৷ আমাদের আম্মা এতোটাই বোকা মহিলা ছিলেন নিজের স্বামী আর বোনের সম্পর্ক ধরতে পারে নি৷ নিজের বোকা মনের জন্যই নিজের জীবন দিতে হলো৷’

‘আমি বিশ্বাস করি না৷ আব্বা এমন জঘন্য কাজ করতে পারে৷’

আমি কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম৷ ভাইয়া মাথা নিচু করে বললো,

‘সবটাই সত্যি মিথি৷ আব্বার আর খালার যে একটা সম্পর্ক ছিলো সেইটা অজানা ছিলো৷ জানত্র পেরেছি কয়েকদিন আগে৷ আব্বা নিজ মুখেই ঝুমাকে বলছিলো যেন সত্যটা কাউকে না বলে৷ কারণ একমাত্র ঝুমা,মিনু খালা আর আব্বাই তাদের সম্পর্কের কথা জানতো৷ আর হোসেন চাচা মায়ের প্রতি ক্ষোভের কারণেই এই জটিলতার মধ্যে পরে গেছে৷ তার ক্ষোভ ছিলো আম্মার জন্য আব্বার থেকে উনি টাকা পয়সা নিতে পারে না৷ কারণ বাড়িতে আম্মার তদারকি আব্বা বজায় রেখেছিলো৷ যেন আম্মা বুঝতে না পারে তার মধ্যের পরিবর্তন৷ আর অপরদিকে আব্বা হোসেন চাচার প্ল্যানেই আর একটু যোগ করে আম্মাকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলেন৷’

বলতে বলতে ভাইয়া অঝোর ধারায় কাঁদছে৷ আমি ভাইয়ার কান্না দেখে নিজের কান্না ভুলে গেলাম৷ ঝুমা আপা কিছুটা মিনতির সুরে বললো,

‘আমাকে ক্ষমা করা যায় না আশরাফ?’

‘কি করে ক্ষমা করি বলো! তুমি আমার ভালোবাসাকে বিষাক্ত করেছো৷ মানলাম আব্বার কৃতকর্মের জন্যই সবটা হয়েছে কিন্তু তুমি নিজ হাতে অপরাধ করলে কেন ঝুমা?’

‘কারণ ইমরান তোমার আব্বার জন্যই সাহস পেয়েছে আমার কাছাকাছি যাবার৷ কেন ইমরান এইটা তোমাকে বলে নাই?’

‘কি বলবে আর!’

‘বলা উচিৎ ছিলো আশরাফ৷ ওর জন্য আজ আমি গ্রাম ছাড়া হবো৷ তোমার আব্বা আমাদের বিয়ে যেন না হয় এইজন্যই ইমরান কে বলেছিলো আমাকে যেন নিজের প্রেমের জ্বালে ফাঁসায়৷ আর জোরাজোরি ইমরান তোমার আব্বার নির্দেশেই করেছিলো৷ আর জানো ইমরানই কেন তোমার আব্বাকে মা’রলো?’

ঝুমা আপা প্রশ্নটা করতেই ভাইয়া আর আমি অবাক চোখে তাকালাম৷ আপা ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বললো,

‘তোমার আব্বা ওকে আমার সাথে প্রেম করার জন্য রেগুলার টাকা পয়সা দিতো৷ আমি বোকা সেই জিনিস ধরতে পেরেছি ওইদিন দুপুরে যেদিন খালুকে মা’রার জন্য আমি ওকে বলেছিলাম৷ ও মুখ ফঁসকে বলে ফেলেছিলো তোমার আব্বার কাছে কিছু টাকা পাওনা আছে৷ যে টাকার জন্য ওকে নাকি তোমার আব্বা ভরা বাজারে চ’ড় মেরেছিলো৷এই ক্ষোভ থেকেই ইমরান আমাকে সাহায্য করেছে৷ যাইহোক এরপর রফিকুল ভাইয়ের কাছে মা’র খাওয়াটা ওর প্রাপ্য ছিলো৷’

‘তবুও তুমি প্রেম করেছো৷ ওর সাথে মিশেছো৷ টাকার জন্যই তো তাই না ঝুমা? একটু আগে যে বললে আব্বা তোমাকে বলেছে আমার চাকরি হলে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো৷ এইগুলা তোমার মনগড়া কথা৷ কারণ তুমি নিজেও জানতে আব্বা তোমার আর আমার বিয়ে হতে দিবে না৷ এইজন্যই তুমি ইমরানের মিথ্যাতে মজে গেছিলে৷’

ভাইয়ার কথা শুনে ঝুমা আপা চুপ হয়ে গেলো৷ সে হয়তো সত্যিই টাকার জন্যই ইমরানের সাথে গিয়েছিলো৷ তবে সেসব থেকে সবথেকে কষ্টের বিষয় হলো,আব্বা নিজে সব কিছুতে জড়িত এই কথাটা মানতে খুব পীড়া হচ্ছে৷ আব্বা ওইদিন ও কতো সুন্দর করে মিথ্যা বললো৷ সব দোষ হোসেন চাচার উপর দিলো৷ লোকটার উপর ঘৃণা জন্ম হলো৷ ভাইয়া দরজা খুলে আমাকে নিয়েই ঘর থেকে বের হতে হতে ঝুমা আপাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘রফিকুল স্ব-ইচ্ছায় তোমাকে বিয়ে করে এই গ্রাম থেকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে৷ প্লিজ আমাদের আর ঝামেলায় ফেলো না৷ তোমার মা ওইদিন আদালতে আমাকে অনুরোধ করেছে তোমার কথা যেন পুলিশকে না জানাই৷ তুমি আমার কথা মেনে রফিকুল কে বিয়ে করে চলে গেলে আমি কাউকে কিছু জানাবো না৷ আর জানিয়েই বা করবো কি! অপরাধী নিজের শাস্তি পেয়েছে৷ আল্লাহর দোহাই লাগে আর অশান্তি করো না৷’

শেষের কথাটুকু ভাইয়া কান্না গিলে বললো যেন৷ আমি শূন্য মাথা নিয়ে ভাইয়ার বুকে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছি৷ ভাইয়া আমাকে ধরেই রোয়াকে এসে বসলো৷ দু ভাইবোন এই রাতের নিশ্চুপ,শান্ত পরিবেশে বসে আছি৷ এইতো আমাদের পাশের ঘরেই আমাদের জন্মদাতা শুয়ে আছে৷ যিনি আমাদের জন্মদাত্রী কে নিজ হাতে মে’রে ফেলেছে৷ আর তার পাশের রুমেই আমার ভাইয়ার ভালোবাসা আছে৷ যাকে ভাইয়া ভালোবেসেও ভালোবাসা হারানোর এক বুক কষ্ট নিয়ে বসে আছে৷
আকাশ জুড়ে আজ মিটমিট তারা৷ তবে আমাদের জীবনের সুখতারা গুলা যেন নিভে গেছে৷

চলবে