বিধুর রজনী পর্ব-২০+২১

0
215

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২০]
__________________
৪৪.
থমথমে মুখে মহলের চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখছেন সম্রাট তাসবীর।বিধ্বস্ত মহলটা প্রহরীরা পুনরায় গুছিয়ে তুলছেন।সম্রাট তাসবীরের পেছন পেছন চলছেন উজির আতেফ।সবাই সর্তক দৃষ্টিতে সবটা পর্যবেক্ষণ করছেন।অতিথিশালার প্রতিটি কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখছেন সম্রাট।অকস্মাৎ পালঙ্কের কাছে এসে থমকে গেলেন সম্রাট তাসবীর।সন্দিহান চোখে চাইলেন উজির আতেফের নিকট।

” কোন সমস্যা সম্রাট?”

” আমাদের গুপ্তচর’দের প্রতি আমার আস্থা উঠে গেছে যে উজির মশাই।”

” তা কেন?কি হয়েছে সম্রাট।”

তাসবীর দু’কদম এগিয়ে আসলেন পালঙ্কে।সেখানে পড়ে থাকা একটি স্বর্ণের মালা হাতে তুলে নিলেন।উজির আতেফ অবুঝ চোখে শুধু চেয়ে রইলেন সে মালার দিকে।

” এই মালা সর্বদা ইবনুল রাশীদের গলায় ঝুলতে দেখছি।আমি অলকপুরী প্রাসাদে বেশ কয়েকবার প্রবেশ করেছি যতবার ইবনুলকে দেখেছি তার গলায় এই মালা ছিল। এর মানে কি প্রকাশ পায় না ইবনুল রাশীদের চলাচল এই মহলে ছিল?”

ব্যর্থতা অকপটে স্বীকার করে উজির আতফে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইলেন।গত কয়েকদিন যাবৎ চতুর্দিকে গুপ্তচর রাখা হয়েছিল অথচ তারা কোন সঠিক সন্ধান দিতে পারেনি।আর তাসবীর কি না শ/কু/ন চোখে সবটা ধরে ফেললো!

” প্রাসাদে ফিরে আপনার আসল কাজ গুপ্তচরদের তালিকা আমার নিকট হাজির করবেন।”

” যথা আজ্ঞা সম্রাট।তবে এরা অনেক দক্ষ গুপ্তচর আমাদের সম্রাট সিদ্দীকের অনুগত।”

“শুনুন উজির মশাই,ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না আর দিরহাম ছুড়লে এমন গুপ্তচরের অভাব হবে না।আমার চাই সঠিক সংবাদ তারা যদি আমায় সঠিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দিতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের রেখে কি লাভ?”

” উত্তম বলেছেন সম্রাট।”

তাসবীর বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ কক্ষ পরিদর্শন করলেন এরপর অগ্রসর হলেন শেহজাদী আরওয়ার কক্ষের নিকট।কক্ষের বাইরে দুইজন প্রহরী তখন কবিরাজ মশাইকে নিয়ে সম্রাটের অপেক্ষায় ছিলেন।সকালে সম্রাট তাসবীরের আক্রমণাত্মক রূপ দেখে আতঙ্কে পড়েছিলেন তিনি।হঠাৎ সম্রাটের নির্দেশে তাকে প্রহরীরা হাজির করেছেন ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো কবিরাজ মশাইয়ের।

” ভয়ে কাঁপছেন কেন কবিরাজ মশাই?আপনাকে মা/রতে এখানে হাজির করিনি। ডেকে পাঠিয়েছি জরুরি কাজে।”

” আদেশ করুন সম্রাট আমার সর্বোচ্চ দিয়ে আপনার খেদমত করতে চাই।”

” আমার নয় শেহজাদী আরওয়া নূর যে অসুস্থ সে কথা নিশ্চয়ই জানেন।আপনি কী তার যথাযথ চিকিৎসা করেননি?শেহজাদীর অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে কেন?”

” আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি সব ধরনের পথ্যি দিয়েছি কিন্তু তিনি মুখে তুলতে তা উগরে ফেলেছেন।উনার খাসদাসী জলপট্টি দিয়েছেন,প্রাক্তন সম্রাট সাঈদ এবং আমাদের বেগম সাহেবা সবটা নিজে তত্ত্বাবধারণ করেছেন এরপর আমি আর কি করতে পারি সম্রাট?”

” কি করবেন না করবেন আমি জানতে চাইছি না আমি চাই আগামীকালের মাঝে তিনি সুস্থ হবেন।আপনি আপনার চেষ্টার ক্রুটি রাখবেন না।”

” যথা আজ্ঞা।”

তেলিকোনা রাজ্যের নব সম্রাট তাসবীরের খবরাখবর ইতোমধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।এ নিয়ে প্রজাদের মাঝে কোন উৎসাহ নেই।বরাবরি সম্রাট সাঈদ ছিলেন প্রজাদের জন্য উত্তম সম্রাট।যিনি ভেবেছেন প্রজাদের কথা প্রজাদের সুবিধার কথা।তার আমলে তেলিকোনা রাজ্যে স্থাপত্যশিল্পের জুড়ি মেলা ভার।কিন্তু ক্ষমতা দখল এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য দখলের স্পৃহা,লিপ্সা সব সম্রাটের মাঝেই থাকে তাই সময়ের অদল বদলে একের পর এক সম্রাট আসবেন রাজ্য শাসন করবেন কেউ প্রজাদের স্বার্থ ভাববে কেউ বা নিজ স্বার্থ। আর এভাবেই অনুকূল প্রতিকূল অবস্থায় টিকে রইবে প্রজাগন।

শেহজাদীর প্রতি সম্রাট তাসবীরের এত আতিশয্য অস্থিরতা নিয়ে প্রহরী দাস দাসীদের মাঝে কানাঘুষা চলছে।বিষয়টা বেশ ভালোভাবে আঁচ করতে পারলেন তাসবীর।শেহজাদীর কক্ষে অপরিচিত একজন পুরুষের আনাগোনা নিশ্চয়ই কেউ ভালো চোখে দেখবেন না।এত শত কিচ্ছা কুৎসা শ্রবণ করার আগ্রহ সম্রাট তাসবীরের নেই।শেহজাদী নিদ্রার অতলে হারিয়ে গেছেন।গায়ের ঘাম ছেড়েছে বেশ কিছুক্ষণ এর মানে দাঁড়ায় জ্বর নামবে।শিথানে বসে শেহজাদীর কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন লতা।সময়টা মধ্যরাত।তাসবীর পালঙ্কের কাছে আসনে বসে আছেন।কেদারার হাতলে বাম হাত ঠেকিয়ে তর্জনীর আঙুল ওষ্ঠে ছুঁয়ে শীতল আবেশে তাকিয়ে আছেন বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ আরওয়ার পানে।যদিও তার উপস্থিতি লতাকে বড্ড অস্বস্তিতে ফেলছে।তাসবীর উঠে দাঁড়ালেন বেশ সশব্দে শ্বাস ছেড়ে নরম স্বরে লতাকে বলেন,

” আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন লতা।শেহজাদীর ঘুম অতি সহজে ভাঙবে না।আমি বরং এখানে থাকি।”

” প্রয়োজন নেই সম্রাট।শেহজাদীর জ্বর ছেড়েছে আশা রাখছি কাল প্রভাতে তার সুস্থ অবস্থায় ঘুম ভাঙবে।”

“ইনশাআল্লাহ।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।আমি তাহলে যাই যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে ডেকে পাঠাবেন।”

লতা মাথা দুলালেন।তাসবীর ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে গেলেন দ্বারের কাছে।কিছু একটা ভেবে পুনরায় ফিরে আসেন কক্ষে।

” আরেকটা কথা শেহজাদীকে নিয়ে পালানোর ফন্দি আঁটবেন না।আমার নির্দেশে চারিদিকে প্রহরীরা আছে।নিজের বিপদ নিজে না ডাকাই শ্রেয় আশা করি এই কথা উপলব্ধি করার ক্ষমতা আপনার আছে।”

হঠাৎ তাসবীরের নির্দেশে লতা ঘাবড়ে গেছে।সে ভেবেই রেখেছিল যে করে হোক শেহজাদীকে নিয়ে পালাবে তবে তা আর বোধহয় সম্ভব নয়।

তাসবীর কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দ্বারের বাইরে উজির আতেফকে বসে থাকতে দেখে তাসবীর বেশ বিচলিত হয়ে উঠেন।

” উজির মশাই আপনি এখানে কেন?ঘুমাতে যাননি?”

” আমার সম্রাট ঘুমাননি আমি কি করে ঘুমাই বলুন।”

প্রৌঢ়ত্ব মানুষটার দিকে মায়াময় দৃষ্টিতে পরখ করে চাইলেন তাসবীর।এত অনুগত ভালোবাসার কাছে এইজন্যই কি পিতা সম্রাট সিদ্দীক বারবার ফিরে আসতেন।উজির মশাইকে ছাড়া কখনো আহারে বসতেন না তিনি সম্রাট সিদ্দীকের এ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এখন আঁচ কর‍তে পারছেন পুত্র তাসবীর।

” উজির মশাই বাইরে যে কানাঘুষা চলছে সে বিষয়ে আমি বেশ ভালোভাবে অবগত।”

চোরা চোখে ইতস্তত হয়ে তাকালেন উজির আতেফ।তিনি ভেবেছিলেন এ সম্পর্কে সম্রাট তাসবীর জ্ঞাত নয়।

” আমি যেদিন আহমেদাবাদে ফিরেছিলাম সেদিন পিতাকে জানিয়েছিলাম শেহজাদী আরওয়া নূরকে বিবাহের কথা।এ বিষয়ে প্রথমে পিতা সংশয়বোধ করলেও পরবর্তীতে সর্বদিক মাথায় রেখে বিবাহে সম্মতি জানান।”

” সম্রাট এ বিষয়ে আমার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন।আমিও শুনে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলাম।কিন্তু এ বিষয়ে বাকিরা যানে না তাই হয়তো… ”

” কে কি বললো এ বিষয়ে আমার ভাবার ইচ্ছে নেই।আপনি ঘুমাতে যান আগামীকাল প্রত্যুষে আমরা আহমেদাবাদের উদ্দেশ্যে বের হবো যদি শেহজাদীর শরীর সুস্থ থাকে।”

” শুভ রাত্রি সম্রাট।”

৪৫.
ধবধবে সাদা জামায় নিজেকে অপ্সরীর ন্যায় কম লাগছে না শেহজাদীর কাছে।দীঘল চুলে সাদা গোলাপের ছড়াছড়িতে নিজেকে একটু বেশি আড়ম্বরি লাগছে।অবশ্য লাগবে না কেন সে যে শেহজাদী আরওয়া নূর।সম্রাট আব্বাস রাশীদের একমাত্র কন্যা অপরদিকে সম্রাট আবু তাসবীরের বেগম ইসস লজ্জায় নুইয়ে পড়ছেন শেহজাদী।বাদামি ঘোড়ার পিঠে চড়ে টগবগিয়ে প্রাসাদের ফটকে হাজির হয়েছেন সম্রাট তাসবীর।তাকে দেখে সবাই অভ্যর্থনা জানাতে ব্যস্ত।কিন্তু সেদিকে যে তার মন নেই একটুও নেই তিনি ঘোর চোখে চেয়ে আছেন তার সাদা ফুলের দিকে।ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে শেহজাদীর হস্ত পৃষ্ঠে চুমু খেলেন তাসবীর।সকলের সম্মুখে লজ্জায় নিংড়ে গেলেন শেহজাদী।

” তুমি আস্ত একখান ফুল।এই ফুল ছোঁয়ার সাধ্য আর কারো নাই।এই মকরন্দের সুধায় আমি বিলীন হতে চাই শেহজাদী আরওয়া নূর।”

লজ্জা মিশ্রীয়ে হাসলেন শেহজাদী।তাসবীদের হাতে হাত রেখে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলেন।তারপর পেরিয়ে গেল অনেক দূর।টগবগিয়ে ঘোড়ার দৌড়ে হাওয়া’রা ছুঁয়ে দিল শেহজাদীর গাল,চোখ, মুখ আর সেদিকে হিংসায় জ্বলে উঠলেন তাসবীর।কাঁধে মাথা আগলে নিজের শুষ্ক ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলেন শেহজাদীর গালে।লহমায় হতবিহবল নয়নে মাথা ঘুরালেন শেহজাদী।তবে তার চোখে চোখ রাখলেন না তাসবীর।তিনি ঘোড়ার লাগাম টানছেন।

” হাওয়া’রা তোমরা তাকে ছুঁয়ে দিও না সে আমার অধিকারী।”

বিস্মিত হলেন শেহজাদী।অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন তাসবীরের পানে।

” আপনি উন্মাদ হয়ে গেছেন তাসবীর।”

” আপনার সান্নিধ্যে।”

ঘুমের ঘোরে নাকে এসে যেন ধাক্কা খাচ্ছে মিষ্টি ফুলের সুভাস।সোনা রোদ্দুর হুটোপুটি করছে শেহজাদীর চোখে মুখে।পিটপিট চোখ খোলার চেষ্টা চালালেও খুব একটা সুবিধা মতো চোখ খুলতে পারলেন না তিনি।তবুও চেষ্টার কমতি রাখলেন না শেহজাদী।ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন কক্ষের দেয়ালে।মাথাটা কেমন ঝিম ধরে গেছে।মনে হচ্ছে বহু বছর পর পৃথিবীর আলো দেখতে পারছেন তিনি।মাথা কাত করতে ঘাড়ের অসহ্য ব্যাথায় নড়েচড়ে উঠেন।তবুও নিজেকে স্থির রেখে জানলার দিকে তাকালেন।ফুলে ফুলে সজ্জিত এই কক্ষ।চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে মনে হলো এই কক্ষ তার পরিচিত নয়।তিনি কি এখনো স্বপ্নে বিভর?ভাবতে শেহজাদীর মনটা চনমনিয়ে উঠলো ইসস সে কি সুন্দর স্বপ্ন।মাথা কাত করে করে পাশে তাকালেন শেহজাদী।তাসবীর কেদারায় বসে থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছেন তার দিকে।ভাবনা ভেবে মিষ্টি হাসলেন শেহজাদী।ঘোর গলায় মিলিয়ে আসা কন্ঠে বলেন,

” মনে হচ্ছে নতুন রূপে আবার এ পৃথিবী দেখেছি।আপনি নিশ্চুপ বসে কি দেখছেন তাসবীর?”

” আপনাকে।”

” স্বপ্নেও লজ্জা দিচ্ছিলেন আর এখনো!”

” কি করবো?ভালোবাসি যে।”

তাসবীর আসন ছেড়ে এগিয়ে আসলেন শেহজাদীর সম্মুখে।পালঙ্কের এক কোণে বসে ছুঁয়ে দিলেন শেহজাদীর হাত।

” এটা স্বপ্নঘোর নয়?”

” একদমি না।”

শেহজাদী অবাক হলেন দু’হাত তুলে তাসবীরের গাল ছুঁয়ে দিলেন।তাসবীর মুখখানি এগিয়ে এনে আরওয়ার চোখে ফুঁ দিতে ভ্রম কাটলো শেহজাদীর।এটা বাস্তব স্বপ্ন নয়!তাসবীর এখনে আছে ফুলে সজ্জিত এই কক্ষ স্বপ্নে নয় বাস্তবে।তীব্র ঘৃণায় তাসবীরের বুকে প্রবল ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন শেহজাদী।মেয়েটার আকস্মিক আক্রমণে দু’কদম পিছিয়ে গেলেন তাসবীর।

” বিশ্বাসঘাতক বেইমান ছুঁবে না আমায়।”

তাসবীর কিঞ্চিৎ অবাক হলেন তবে সেদিন রাতে শেহজাদীর অপেক্ষার কথা ভেবে রাগটা ধুলোয় মিশিয়ে দিলেন।

” বিশ্বাসঘাতকতা করিনি আমি শেহজাদী সেদিন আমার জন্য আপনি হয়তো অপেক্ষা করেছিলেন তবে আমি কেন যাইনি তা আপনাকে অবশ্যই জানাবো।”

আরওয়া মাথা তুলে বসলেন চারিদিকে তাকিয়ে মনে হলো এটা সম্রাট সাঈদের দেওয়া সেই কক্ষ নয়।

” এ..এটা কোথায়?লতা কই।”

” গত কয়েকদিন জ্বরে আপনার হুঁশ ছিল না।আপনার অবস্থার অবনতি দেখে আমি আর অপেক্ষা না করে আপনাকে আহমেদাবাদ রাজ্যে নিয়ে আসি।”

” কেন আনলেন মে/রে ফেললেই তো পারতেন।”

তাসবীর নিশ্চুপ রইলো।শেহজাদীর পাশ থেকে সরে গিয়ে পানপাত্র নিয়ে এগিয়ে এলেন শেহজাদীর নিকট।

” এটা শেষ করুন ভালো লাগবে।”

” ভালো লাগার প্রয়োজন নেই আমার।”

” ঠিক আছে প্রয়োজন নেই।বিয়েটা হোক কি করে ভালো লাগতে হয় উপর্যুপরি বুঝিয়ে দিব।”

শেহজাদীর রাগ লাগলো।আশেপাশে থাকা সমস্ত ফুল ছিড়ে ছড়িয়ে দিলো।এই মুহূর্তে তার দম বন্ধ লাগছে, মৃত মা বাবার কথা স্মরণে আসতে তিনি যেন ক্রমান্বয়ে পা/গ/ল হয়ে উঠছেন।

” বিয়ে? বিয়ে আমি আপনাকে করছি না।সেদিন আসেননি বেশ ভালো হয়েছে সবাই সব কিছুর যোগ্য নয়।আমি এক বেইমান বিশ্বাস-ঘা/ত/ককে বিশ্বাস করেছি।আমার জন্য অন্তত উপযুক্ত সম্রাট সাঈদ।যদি বিয়ে করি, করলে ওনাকে করবো।আমার জীবন বাঁচানোর দামটা তাকে দিতেই হতো।কিন্তু তার আগে তো তাকেও সর্বহারা করলেন।”

“আমি এখন কোন কথা শুনতে চাইছি না।আপনি প্রস্তুত হোন দাসীদের পাঠিয়ে দিচ্ছি তারা আপনার অবগাহনের ব্যবস্থা করবেন।”

তাসবীর বেশ জোর কসরত করে শেহজাদীকে পালঙ্ক ছেড়ে নামালেন তাতে আরো দ্বিগুণ রেগে গেলেন শেহজাদী।

” আপনার সান্নিধ্যে আমার ঘৃণা হয়।”

” তবে কার সান্নিধ্যে ভালো লাগে সাঈদের?সে এখন পরাজিত নৃপতি।”

” তাতে কি?বেইমান তো নয়।আপনি আমার সঙ্গে ছলনা করেছেন মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন সর্বোপরি আমার জীবন থেকে আপনজন দের কেড়ে নিয়েছেন।আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কেন?দেহের স্বার্থে?”

আরওয়ার অবজ্ঞা সুরের কথায় তেতে উঠলেন তাসবীর।মেয়েটা তাকে ভুল বুঝছে কেন?নিশ্চয়ই সম্রাট সাঈদ অকপটে মিথ্যা বলেছেন আর তা সহজে বিশ্বাস করে নিয়েছেন আরওয়া।তবে চরিত্রের দিকে কেন আঘাত করছেন শেহজাদী।

” ধৈর্যর সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে আরওয়া নিজেকে স্থির করুন সম্পূর্ণ সুস্থ আপনি নন।”

তাসবীরের হাত পুনরায় ঝাঁকড়া দিলেন শেহজাদী।করে বসলেন এক দুঃসাহসিক কাজ।তাসবীরের পাঞ্জাবির গলার অংশে মুচড়ে ধরলেন দাঁতে দাঁত খিচে।একজন সম্রাটের সঙ্গে এমন ব্যবহার করার দুঃসাহস হয়তো তার স্ত্রী’র নেই কিন্তু এই মেয়েটি নিজের অজান্তে রাগের বর্শে ভুল করে বসলেন।তীব্র অপমানে গা জ্বলে উঠলো তাসবীরের।তবুও নিজেকে রাখলেন স্থির।

” হাত সরান আরওয়া।”

“সরাব না।সম্রাট সাঈদকে ছেড়ে দিন আমি তাকে নিয়ে চলে যাব।”

” কোথায় যাবেন?”

” তা আপনার জানার প্রয়োজন নেই আমরা এক হবো আমাদের সংসার হবে আপনাকে দেখিয়ে…..”

আরওয়ার কথা শেষ হওয়ার আগে তাসবীর নিজের গলা ছাড়িয়ে নিল।বাম হাতের সাহায্যে খামছে ধরলেন আরওয়ার মুখ।নখের ধারালো অংশ ধীরে ধীরে দেবে গেল শেহজাদীর গালে সেদিকে চোখ পড়লো না তাসবীরের।অসহ্যকর ব্যথায় চোখ খিঁচে কেঁদে ফেললেন আরওয়া।

” ইবনুল রাশীদ আমার কলিজায় যে দাগ লাগিয়েছে তার কোন অন্ত নেই।ভেবেছিলাম আপনাকে দিয়ে উসুল করবো।কিন্তু ওই যে আমি মায়ের বাধ্য ছেলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো পরিস্থিতি থাকতেও সে পন্থা অনুসরণ করতে পারলাম না।ভালোবাসার টান আর মায়ের আদেশ দু’টো মিলিয়ে আপনি আজ এখনো চড়া গলায় কথা বলার সাহস পাচ্ছেন।আমার স্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে নেই?
বুকে ঠাই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু হজম হচ্ছেনা বেশ সারাজীবন আমার খাস দাসী হয়ে থাকবেন।রাতের আঁধারে না হয় নর্তকী হবেন।তবুও সম্রাট সাঈদের কাছে আপনাকে ছাড়বো না আরওয়া।ভালো লাগলেও এ মহলে থাকবেন না লাগলেও থাকবেন।”

আরওয়ার অশ্রুপাত গিয়ে ঠেকলো তাসবীরের হস্তে উষ্ম জলে ভেজা চোখ দেখে মায়া হলো ছেলেটার।তপ্ত শ্বাস ছেড়ে নিজের রাগ সংবরণ করে সরিয়ে নিলেন হাত।ছেঁড়া চামড়ায় র/ক্তের দাগ দেখে ঘাবড়ে গেলেন তাসবীর।ততোক্ষণে দেয়াল ঠেকে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়েছেন শেহজদী।তার সাথে সাথে হাঁটু মুড়িয়ে বসলেন তাসবীর।ছুঁয়ে দিলেন শেহজাদীর আঘা/ত প্রাপ্ত গাল।

“আপনি কি ভাবেন আপনাকে আঘা|ত করতে কি আমার বুক কাঁপে না?কিন্তু উত্তেজিত আমায় আপনি করেছেন।যাই হোক আমি দুঃখিত শেহজাদী আপনি কাঁদবেন না।অপেক্ষা করুন অবগাহনে আপনার মন মস্তিষ্ক উভয় শীতল হবে।”

তাসবীর উত্তেজিত হয়ে উঠলেন গলা ছাড়িয়ে ডাকলেন দাসীদের।একে একে লতা সহ সাত জন দাসী ততক্ষণে হাজির হয়ে গেছে তারা অপেক্ষায় তাদের সম্রাটের আদেশ বাক্য শোনার।

” স্নানাগারে সবকিছু তৈরি করুন শেহজাদী আরওয়া স্নান করবেন।দুধ এবং গোলাপের পাপড়ির সংমিশ্রণে তাকে অবগাহন করতে সাহায্য করুন।”

#চলবে___

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২১]
___________________
৪৬.
দুগ্ধ জলে অবগাহনে শেহজাদীর দেহ শিথিল হলেও মন মস্তিষ্ক একটুও শিথিল হয়নি।তিনি ব্যর্থ মনে জীবনের গোলমেলে হিসেবটা সরলভাবে মেলাতে চাইছেন।যদিও তিনি এর সঠিক কোন মীমাংসা পেলেন না।আবু তাসবীর একের পর এক যেভাবে খেল দেখিয়ে চলেছেন তার হাত থেকে কারো নিস্তার নেই।অবশ্য কার আর নিস্তার হবে!সর্বপ্রথম বিলীন করেছেন অলকপুরী রাজ্যের এত বছরের পুরাতন সম্রাট আব্বাসকে এবং তার পরিবার সহ।এরপর সম্রাট সাঈদ বাকি রইলেন শেহজাদী আরওয়া।নিশ্চয়ই বৈধ সম্পর্ক জড়িয়ে দেহের ক্ষুদা মিটিয়ে অবর্জনার ন্যায় ছুড়ে ফেলবেন শেহজাদীকে।তবে এত সহজে হার মানতে রাজি কেন হবেন শেহজাদী?হার মানলেও তার জীবন ধ্বংসের মুখে পতিত হবে না মানলেও হবে তাহলে বরং লড়াই চলতে থাকুক।এসব কথা ভাবতে ভাবতে আরওয়ার নড়ে চড়ে বসেন।কোমল দুই গাল অশ্রুতে ভিজে আছে চোখের সফেদ অংশে রক্তিম লালের আভা ছড়িয়ে এমন করুণ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।
লতা লাল রেশমি কাপড়ে মুড়ানো মূল্যবান অলংকার এনে শেহজাদীর সম্মুখে রাখলেন।আড় চোখে সবটা পরখ করলেন শেহজাদী।দামি হিরা খচিত গহনা,রৌপ্য,স্বর্ণের সমারোহে গা জ্বলে উঠলো আরওয়ার।

” এসব এখানে কেন এনেছো লতা?”

” সম্রাট পাঠিয়েছেন আপনাকে পরিয়ে দিতে।”

” জুতা মে/রে গ’রু দান!এসব নিয়ে যাও আমার ইচ্ছে নেই চাকচিক্যে বেঁচে থাকার।”

তীব্র রাগ জেদ পুঁজি করে শেহজাদী ফোঁপাতে লাগলেন।সম্রাট তাসবীরের দেওয়া ক্ষত গালে এখনো কাঁচা হয়ে আছে।স্পষ্ট তিন আঙুলের নখের দাগ বোঝা যাচ্ছে।শেহজাদীর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দাসি কক্ষ ছেড়ে সম্রাট তাসবীরের কাছে গেলেন এবং শেহজাদীর অপ্রসন্নতার কথা জানান।তাতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না সম্রাট বরং নিজের কক্ষ ছেড়ে এগিয়ে এলেন শেহজাদীর কক্ষে।
শেহজাদী তখন মাথা নুইয়ে গাল ভার করে আছেন তাসবীর কক্ষে প্রবেশ করার ইঙ্গিত পেলেও তিনি মাথা তুলে তাকালেন না।মাথায় লেগে থাকা পাতলা কাপড়ের দোপাট্টায় শেহজাদীর কাটা চুল অতি সহজেই নজর কাড়লো তাসবীরের।লহমায় চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার।পেছনে ঠেকানো হাত মুষ্টি বদ্ধ করে এগিয়ে গেলেন শেহজাদীর নিকট।অতি যত্নে বড় করা দীঘল কেশ কাটা তাসবীর লক্ষ্য এসেছিল সেদিন যেদিন বমিতে ক্লান্ত হয়ে তাসবীরের কোলে ঢলে পড়েন আরওয়া।পরবর্তীতে এ বিষয়ে লতা সবটা বললে মনে মনে বেশ রাগ হলো তাসবীরের।বেছে বেছে
চুল কাটতে গেল।তবে এর জবাব একদিন নিয়েই ছাড়বে আগে পরিস্থিতি সামলে যাক।

” গয়না গুলো পরে নিন আরওয়া।লতা যাও।”

লতা শেহজাদীর কাছে ঘেঁষতে শেহজাদী খুবলে ধরে তার হাত দাঁতে দাঁত চেপে রোষ নিয়ে বলেন,

” বলেছি না এসব পরবো না।বাড়াবাড়ি কেন করছো?”

” সম্রাটের আদেশ আমি…”

” চুপ।”

শেহজাদীর ধমকে কেঁপে উঠলো লতা।চোটানো আরওয়ার দিকে তাকিয়ে তাসবীর দাসীদের ইশারা করলেন সরে যেতে।ইশারা মোতাবেক দাসীরাও খানিকটা দূরে সরে গেলেন সে সুযোগে এগিয়ে এলেন তাসবীর।অল্পস্বল্প ঝুঁকে মুখ ঠেকালেন শেহজাদীর কানে।

” আমি যদি এখন এসব গহনা নিজের হাতে তুলে পরিয়ে দি তবে তা সবার নিকট দৃষ্টি কটু হবে।চুপচাপ পরে নিন আশা করি এর ফল বিপরীত দিকে নিবেন না।”

তেতে উঠলেন শেহজাদী।অসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে রুক্ষ স্বরে বলেন,

” কেন এসব পড়বো আমি?আমি কে?সম্রাট তাসবীরের রাত্রের রমণী?”

” বাজে কথা বলবেন না।আপনি সম্রাটের কন্যা একজন শেহজাদী অপরদিকে সম্রাট তাসবীরের ভাবী স্ত্রী।একজন সম্রাজ্ঞী হতে চলেছেন।”

” আমি সম্রাটের কন্যা?হা হা হা হাসালেন।না আছে সম্রাট না আছে সাম্রাজ্য সবটা তো ধূলিসাৎ করে দিলেন।”

” জমিদাররা যখন জমিদারি হারায় তখন তাদের সবটা হারিয়ে গেলেও তাদের চলন বলন ধরণ কখনই পালটায় না।তাদের ভাব স্বভাবে জমিদারি মিশেই থাকে। আপনার পিতা সাম্রাজ্য হারিয়ে ফেললেও আপনি আমাদের শেহজাদী আছেন।তাছাড়া সম্রাট তাসবীরের ভাবী স্ত্রী সাদামাটা মানায় না আরওয়া।এতক্ষণ যাবৎ বুঝিয়ে গেলাম তবে এরপর হেরফেত করলে ভালো হবে না।চুপচাপ তৈরি হয়ে আহার গ্রহণ করে বিশ্রাম করুন।আপনি সুস্থ হননি এখনো।”

যেভাবে কক্ষে হাজির হয়েছিলেন তাসবীর ঠিক সেভাবেই আবার বেরিয়ে গেলেন।তবে তার দিকে একবারের জন্যেও তাকালেন না শেহজাদী আরওয়া নূর।

সম্রাট প্রাসাদের বাইরে বেরিয়েছেন বেশ কিছুক্ষণ।যাওয়ার আগে দাসী লতাকে আদেশ করে গেছেন যত যাই হোক শেহজাদী যেন খাবার মুখে তুলে।প্রয়োজনে জোর করে খাওয়াবে।এছাড়াও আরেকটি আদেশ বাক্য দিয়েছেন নির্দিষ্ট সংখ্যক দাসী ছাড়া শেহজাদীর কক্ষে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।শেহজাদী নিজেও কক্ষের বাইরে পা ফেলার মতো সাহস না করে।সব কিছুর বেড়াজালে চাপা পড়ছে লতা।শেহজাদীর অতীতের রাগ জেদ তিল তিল করে যেন বেড়ে চলেছে।লতা খাওয়ার নিয়ে জোরাজোরি করায় আরওয়া থালাটা ছুড়ে ফেলেছে মেঝেতে।তাতেও অবশ্য ক্ষান্ত হলেন না আরওয়া আশেপাশে থাকা হালকা ওজনের আসবাবপত্র সব ছুড়ে দিয়েছেন।পিতলের ফুলদানি ছুড়তে দুর্ভাগ্য ক্রমে সেই ফুলদানি লতার ললাটে ঠেকে।চামড়া ফেটে লহমায় ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে।নিজের হাত র/ক্তা/ক্ত ললাটে ঠেকিয়ে এক ছুটে বেরিয়ে যান কক্ষ ছেড়ে।আরওয়া তখন হতবিহবল কাতর চোখে তাকিয়ে ছিলেন লতার র/ক্তা\ক্ত ললাটের দিকে।নিজের অজান্তে লতাকে দুঃখ দিয়ে তিনি নিজেই হতভম্ব।রাগের পরিমাণ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে নখের সাহায্য নিজের শরীরের চামড়া খা/মছে যেন রাগ সংবরণ করলেন।সবটা তার ধোঁয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।ভাই ইদ্রীসের কথা বার বার কেন মনে পড়ছে।ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে তিনি বার বার কাঁ/টার আঘাতে ফিরে আসছেন।

এভাবে সময় গড়িয়ে গেল বেশ কিছুক্ষণ।ভয়ে তটস্থ হয়ে কোন দাসী শেহজাদীর কক্ষে প্রবেশ করার সাহস করলেন না।সবটা চুপচাপ হজম করছিলেন তাসবীরের মা বিনিতা।বেলা গড়িয়ে গেছে একটু পর রাত্রির ধরা দিবে এ ধরণিতে।মেয়েটা সারাটা দিন খালি পেটে নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে।মায়া হলো বিনিতার তিনি দাসীদের আদেশ করলেন থালা সাজিয়ে দিতে।শেহজাদীর কক্ষে তিনি নিজে যাবেন।এতে সব দাসী বার বার বরণ করলো।কিন্তু তাদের পাত্তা দিলেন না বিনিতা।থালা সাজিয়ে এগিয়ে গেলেন আরওয়ার কক্ষে।দ্বার রক্ষক’রা পথ আটকালে সরু চোখে তাকালেন তাদের নিকট।

” মার্জনা করবেন বেগম সম্রাটের আদেশ আছে আপনাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।”

” এসব তো শুনছি না।আমি এখন কক্ষে যাবো বাকি বোঝাপড়া আমি আমার পুত্রের সঙ্গে করবো পথে থেকে সরে দাঁড়াও।”

দু’জন রক্ষী তৎক্ষণাৎ সরে গেলেন।কক্ষে কারো উপস্থিতিতে পিলে চমকে উঠেন শেহজাদী।শ্যাম বর্ণের প্রৌঢ়া ভদ্রমহিলাকে দেখে তিনি সন্দিহান চোখে তাকান।রাজীয় পোশাক তার সাথে মানান সই সাজসজ্জা দেখে ভেবে নিলেন তাসবীরের আপন কেউ নিশ্চয়ই।

” চিনতে পারলে না তাই না?”

নেতিবাচক ইঙ্গিতে মাথা নাড়লেন আরওয়া এর বহিঃপ্রকাশ তিনি চিনতে পারেননি।

” আমি তাসবীরের জন্মদাত্রী মা।

আরওয়া ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে রইলেন বিনিতার দিকে।মেঝেতে পরে থাকা থালার দিকে তাকিয়ে বিনিতা আফসোস সুরে বলেন,

” এত খাবার নষ্ট করলে।তাসবীর জানলে খুব রেগে যাবে।লতা মেয়েটার জ”খ’ম কিন্তু মা’;রাত্মক আকারে হয়েছে।কবিরাজ মশাইয়ের র-ক্ত বন্ধ করতে অনেক সময় লেগেছে।আজ তোমাকে তাসবীরের বকার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।”

” সামান্য বকবে!মে/রে ফেললেই তো পারে।”

” আহারে আমাদের আরওয়ার বুঝি এত গোসসা।এত কথা নয় একটু খেয়ে নাও।আমি কিন্তু কোন না শুনবো না।”

কথার ছলে বলে শেহজাদীর মুখে খাওয়ার পুরে দিলেন বিনিতা।এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ।মায়ের কথা মনে পড়তে আকস্মিক কেঁদে উঠে শেহজাদী।অভিযোগ স্বরে বিনিতাকে বলেন,

” আপনার মতো আমার একজন ভালো মা ছিল যে আমার যত্ন নিত।কিন্তু আপনার ছেলে তাকেও বাঁচতে দিল না।”

কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে নিলেন বিনিতা।

” কেন কি হয়েছে?”

” আমার মা বাবা আপনার পুত্র হ/ত্যা করেছে।অথচ সেদিন আমার বাবা ভাইজানের হাত থেকে আপনার পুত্রকে আমি বাঁচিয়েছিলাম।”

কথার গড়মিলে থমকে গেলেন বিনিতা।এসব কি বলছে আরওয়া।গতকালকেই তো আরওয়ার মা বিনিতার সঙ্গে দেখা করলেন তিনি; তাহলে মেয়েটা বলছেন কেন মা/রা গেছে?

” মা তোমার ভুল হচ্ছে।”

” কিসের ভুল?আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে আর সেই ধ্বংসের কারিগর আপনার পুত্র।যাকে আমি চোখ বুঝে ভরসা করেছি।”

” মিথ্যা অপবাদ দেওয়া বন্ধ করো আরওয়া।তোমার পিতামাতা ভাই ফুফু সকলে বেঁচে আছেন।”

” ব..বেঁচে আছেন!কোথায় তারা।সম্রাট সাঈদ আমাকে বলেছেন তারা মা/রা গেছেন।”

হতাশার শ্বাস ছাড়লেন বিনিতা।অর্ধ মাখানো ভাত শেহজাদীর মুখে তুলে দিয়ে আদেশ সুরে বলেন,

” এ ভাত টুকু শেষ করো মেয়ে।আমার পুত্র শুনলে কষ্ট পাবে যদি তুমি পেট পুরে না খাও।এতটা দিন তোমার পিছনে কম পরিশ্রম করেনি।সে এখন ক্লান্ত।রাজ্যের সবটা নিজের কায়দায় এনে ক্ষান্ত হবে ছেলেটা।”

আরওয়া চিবন ছাড়াই ভাত গিলে ফেলছে পিতামাতার সাঙ্গে সাক্ষাৎকারে লোভ তিনি আর সামলে উঠতে পারছেন না।

” এখানে আসার পর থেকে মা কেন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেননি?”

” কারণ তোমার মা জানেন না তুমি এখানে।তোমার অসুস্থতার কথা শুনলে ব্যকুল হয়ে উঠবেন।”

” আরওয়া একটা প্রশ্ন করি?”

“কি প্রশ্ন?”

” আমার পুত্র তাসবীরকে ঘৃণা করো?”

থমকে গেলেন আরওয়া।এতদিন যাবৎ ঘৃণা করেছেন তার বাবা মায়ের মৃত্যুর কারণে তবে এখন কেন ঘৃণা করবেন?অবশ্য ঘৃণা করার কারণ আছে সেদিন রাতে তাসবীর আসেননি শেহজাদী তো বেইমানি করেননি তিনি অপেক্ষায় ছিলেন তাসবীরের।পিতার সজানো সাম্রাজ্য।ধ্বংস করার কারণেও তাসবীরকে তিনি ঘৃণা করেন।

” ঘৃণা না করার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।”

” যেদিন সত্যটা জানবে সেদিন নিজের হাত কা’ম’ড়াবে।”
#চলবে___