বিধুর রজনী পর্ব-২৪

0
236

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৪]
_____________________
৫৪.
গতকাল সম্রাট তাসবীরের বিয়ের নিমন্ত্রণে আহমেদাবাদ রাজ্যে এসেছিল উজির হাযম।বিয়ের সব কার্যক্রমে যতক্ষণ সম্রাট আব্বাস ছিলেন তার মুখোমুখি হননি উজির মশাই।বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতে আব্বাস রাশীদকে পুনরায় বন্দিশালায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।সম্রাট তাসবীরের সাথে আরওয়ার বিয়ের ঘটনাটি ছিল উজির হাযমের কাছে ছিল চমকপ্রদ।অবশ্য এই নিয়ে তিনি বড্ড সন্তুষ্ট।ভানু’র কড়া রৌদ্রে গা জ্বলে উঠেছে আহমেদাবাদ রাজ্যের প্রজাদের।জনজীবন ব্যস্ত তাদের কাজে।উজির হাযম প্রাতরাশ শেষ করে বিদায় নিতে এগিয়ে যান সম্রাটের নিকট।

” এবার আমার বিদায়ের পালা সম্রাট।আমার জন্য মন-প্রাণ ভরে দোয়া করবেন আমি যেন আপনার মান রাখতে পারি।অলকপুরী রাজ্যের এত বছরের শোষণ উৎপীড়নের কালো পর্ব চিরতরে মুছে ফেলতে পারি।”

” আপনি আমার বিশ্বস্ত উজির মশাই।আমি নিশ্চিন্তে আছি আপনি যথাযথ ভাবে অলকপুরীর দেখভাল করবেন।আমি মাঝে মাঝেই যাব সে রাজ্যে।”

” অবশ্য’ই অবশ্য’ই সম্রাট।আপনার রাজ্যে আপনি অবশ্য’ই যাবেন।একটা অনুরোধ রাখবেন সম্রাট?”

” বলুন সাধ্য মোতাবেক নিশ্চয়’ই রাখবো।”

” আমাদের শেহজাদীকে নিয়ে যাবেন।সেই ছোট্ট থেকে তাকে দেখে আসছি মায়ায় পড়ে গেছি যে।মহলটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।”

“আরওয়া সুস্থ হলে তাকে নিয়ে আমি যাব।”

উজির হাযম বিদায় জানালেন।সম্রাট তাসবীর তখন সভায় বসেছেন।তার আশেপাশে সকলে উন্মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তবে তিনি বড্ড চিন্তায় পড়েছেন তার অবশ্য চিন্তার কারণ আছে।তাসবীরের চিন্তিত অবস্থা দেখে উজির আতেফ ভ্রু কুঁচকলেন এবং সন্দিহান গলায় বলেন,

” সম্রাট কি কোন বিষয়ে চিন্তিত?”

” হুম।”

হঠাৎ সম্রাটের চিন্তার কারণ ধরতে পারলেন না উজির আতেফ।জহুরি চোখে চাইলেন সম্রাটের নিকট।

” যদি চান বলতে পারেন নিশ্চয় সমাধানের চেষ্টা করবো।”

” অলকপুরীর দায়িত্ব আমি উজির হাযমকে রেখেছি।আমি ভাবছি কয়েকদিন বাদে সে রাজ্যে তাকে সম্রাট ঘোষণা করবো।তবে তার আগে নিশ্চয় তার চালচলনে আমায় গোচর রাখতে হবে। কিন্তু… ”

” কিন্তু? ”

” ইদ্রীসের সেই রাজ্যের উপর অধিকার ছিল।ইদ্রীস যদি সিংহাসনে বসে তাহলে নিশ্চয়’ই বিষয়টা জটিল হবে না।”

” কিন্তু সম্রাট মাথায় রাখবেন রক্ত রক্তকে টানে।আব্বাস রাশীদের হয়ে সে যদি আপনার উপর তরবারি তোলে।প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠলে সবটা আপনার হাতের বাইরে চলে যাবে।”

” হুম তা আমিও ভাবছিলাম।আমি নিজেকে সময় দিচ্ছি আস্তে আস্তে আশা করি সবটা গুছিয়ে আসবে আমরাও বুঝতে পারবো কোনটা উত্তম কোনটা অনুত্তম।”

” আপনি যা ভালো বুঝেন।”

৫৫.
সারাটা দিনের ক্লান্তি তার এক ঘুমেই কুপোকাত।মাথাটা এখন সম্রাজী আরওয়ার বেশ হালকা লাগছে।(সম্রাটের স্ত্রী তাই সম্রাজী)
পিটপিট চোখের পাতা খুলে আশেপাশে পরখ করলেন তিনি।পালঙ্ক সাজানো একটি ফুলো আর নেই।কক্ষের জানালা খোলা থাকলেও তাতে মোটা কাপড়ের আচ্ছাদন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।আরওয়া বেশ অবাক হলো তাকে কেউ জাগিয়ে দিতে আসলো না।ভারি পোশাকটা নিয়ে নেমে প্রথমে জানলার আচ্ছাদন সরালেন তিনি।মন মেজাজ আজ বড্ড ফুরফুরে লাগছে।আজ থেকে তার নতুন পরিচয়। তিনি ছিলেন একজন সম্রাটের কন্যা শেহজাদী তার থেকেও বর্তমানে সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন সম্রাটের স্ত্রী পদবি সরূপ সম্রাজী। সম্রাট তাসবীরের স্ত্রী!যে প্রেমিক পুরুষ তার জীবনের একাংশ পালটে দিয়েছে আজ সেই পুরুষ তার অতি আপনজন।আরওয়া গলা ছেড়ে ডাকলেন লতাকে।লতা এতক্ষণ এই অপেক্ষায় ছিল কখন আরওয়া তাকে ডাকবে।সম্রাট তাসবীর যাওয়ার আগে আদেশ দিয়ে গেছেন কোন মতেই যেন তার বেগমকে ঘুম থেকে তোলা না হয়।তার শরীর ভালো নেই এ মুহূর্তে পরিপূর্ণ ঘুমের প্রয়োজন।অনন্য দাসীদের আদেশ করেন কক্ষে ফুল ছাড়িয়ে যেন পরিষ্কার করা হয়।

” আমায় ডেকেছিলেন সম্রাজী?”

” শেহজাদী থেকে সম্রাজী!”

” এখন আমি সম্রাট তাসবীরের মহলের দাসী।উনি যদি আমার সম্রাট হন আপনি আমার সম্রাজী।নাকি বেগম বলে ডাকবো?”

লতার কথায় ফিক করে হেসে উঠলেন আরওয়া।লতার হাত টেনে বসালেন পালঙ্কে।

” আমার বোন নেই লতা।মনের দু’চারটে কথা খুব সহজে আমি তোমায় বলতে পারি।সম্রাট তোমায় অনন্য দাসীদের মতো এক চোখে দেখে না আশা করি বুঝতে পারছো?”

” জি আমি বুঝেছি।”

” লতা তুমি আমার ছোট।আমাকে আপা বলে ডাকতে পারো।তুমি আমার রক্তের আপনজন না হলেও আত্মার সম্পর্কের আপনজন।”

আশ্চর্যান্বিত চোখে চেয়ে রইলো লতা।মেয়েটাকে হা মুখে থাকতে দেখে তার চিবুক ছুঁইয়ে মুখ বন্ধ করে দিলেন আরওয়া।

” আমি গোসল করবো।উষ্ণ পানির ব্যবস্থা করো যাও।”

সম্রাজী আরওয়ার গোসল শেষে নরম কাপড়ের সাহায্যে তার চুল শুকনোর ব্যবস্থা করছেন একজন দাসী।লতা পাশে বসে আরওয়ার অলঙ্কার কৌটা থেকে বের করছি।বাকি দুজন দাসী হাতে হাত রেখে টুকটাক কাজ করছিল।লতা মিটিমিটি হাসছিল তার সঙ্গ বজায় রেখে বাকি তিন দাসীও হাসছিল।আরওয়ার কক্ষে আসার পর থেকেই তারা হাসছে কিন্তু কেন হাসছে তা ধরতে পারলো না আরওয়া।জহুরি চোখে আরশির নিকট অপলক ভাবে তাকিয়ে রইলেন আরওয়া।

” তোমরা হাসছো কেন?”

” ক..কই আপা হাসছি না তো।”

লতার কথায় ভ্রু কুচকে যায় আরওয়ার।এরা মিথ্যা বলছে কেন?

” লতা মিথ্যা কথা বলবে না।সব কটার শাস্তির ব্যবস্থা করবো।সত্যিটা বলো হাসছিলে কেন?”

লতা ঢোক গিলে পাশ থেকে সরে যায়।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য দাসী সরতে নিলে তার হাত আঁকড়ে ধরেন আরওয়া।

” তোমরা এত পালাই পালাই করছো কেন?কি হয়েছে আমায় বলো।”

” কিছু হয়নি সম্রাজী আপনি উত্তেজিত হবেন না।”

” চুপ এই অসময়ে আমার মন মেজাজ খারাপ করবেনা বলে দিচ্ছি কি হয়েছে যা জানতে চাই বলো।”

দাসী কয়েকবার আমতা আমতা করলেন।বলবে কি বলবে না ভেবে লতার নিকট দৃষ্টি রাখেন।ততক্ষণে লতা শব্দহীন হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

” কথা বলছো না কেন?”

” আ….আপনার গলায় ছা…ছাপ।ওই লালচে ছাপ।”

আরওয়া চমকালেন ভড়কালেন।জহুরি চোখে চাইলেন আরশির নিকট।গলার চামড়া ছিরে কেমন লালচে হয়ে আছে।এবার লতা সহ অনন্য দাসীদের হাসির কারণ বুঝলেন সম্রাজী।লজ্জার পরিবর্তে বেশ হাসি পেল তার।এরা তালকে তিল ভেবে বসে আছে অথচ রসকষহীন তাসবীর আরওয়ার পুরোটা রাত মাটি করে দিয়েছে।হতাশার শ্বাস ছাড়লেন আরওয়া।

” নিজেদের ভাবনায় পানি ঢালো তোমরা।যা ভাবছো এটা তার কিছুই নয়।”

লতা ছুটে এলো আরওয়ার সম্মুখে কুঁচকানো মুখ নিয়ে বলে,

” এ কথা বলছেন কেন আপা?”

” গহনার চাপে গলায় এমন হয়েছে।কাল রাত কিছুই খুলে রাখিনি ঘুম এসেছে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।তোমাদের সম্রাট রসকষহীন বাদ দাও তো এসব কথা।”

এক সঙ্গে চারজন দাসী হতাশার শ্বাস ছাড়লেন।চারজন তাদের দৃষ্টি এক করে মেকি কান্নার ভাব করলো।আরশির মাঝে তাদের কাণ্ড দেখে বেশ হাসি পেল আরওয়ার।

” আমি তো ভেবেছিলাম প্রেমনদীতে আপনাকে সম্রাট চুবিয়ে মা-র-বেন।অথচ কিছুই না।”

” না কিছুই না।”
.
দুপুরের সময় আহার গ্রহণ করতে বসেছেন তাসবীর।তার ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছেন মা বিনিতা এবং বাম পাশে চুপচাপ গুটিয়ে দাঁড়ানো সম্রাজী আরওয়া।মেয়েটা কেমন মোচড়ামুচড়ি করছে নিশ্চয়ই লজ্জায় ভাবতেই কিঞ্চিৎ হাসলেন তাসবীর।আরওয়াকে ভড়কে দিতে ধমকের সুরে বলেন,

” কি হলো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?নিজের কক্ষে যান।”

চকিতে তাকালেন আরওয়া।মুহূর্তে চোখাচোখি হয়ে গেল সম্রাজ্ঞী বিনিতার সাথে।

” তুমি আমার বউমা’কে বকছো কেন?”

” সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন?”

” ও কে আমি নিয়ে এসেছি।এখন থেকে তোমার আহারের সময় পাশে আরওয়া থাকবে।আমার শাশুড়ি মানে তোমার দাদী আমার বিয়ের প্রথম থেকে সবটা নিজ হাতে বুঝিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন এখন আমার সময় আমি বুঝিয়ে দেব।আরওয়া মা তুমি এখানে থাকো আমি বরং যাই।”

সম্রাজ্ঞী বিনিতা সময় ব্যয় না করে বেরিয়ে পড়লেন কক্ষ ছেড়ে।বিশাল কক্ষের মাঝামাঝিতে লম্বা মেজ।সেখানে সুসজ্জিত হরেক রকমের ফল এবং তাসবীরের সামনে হরেক রকমের খাবার।এখানে থাকা প্রতিটি খাবার আগে থেকেই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।এতটা সজাগের কারণ সম্রাট তাসবীরের খাবার বলে কী না।
কক্ষে এই মুহূর্তে আরওয়া ছাড়া কারো উপস্থিতি নেই।নিজের খাবারটুকু মুখে পুরে আরওয়ার দিকে মাথা ঘুরালেন সম্রাট।

” খেয়েছিলে?”

” হুম বেশ কিছুক্ষণ আগে খেয়েছি।”

” ভালো।এবার মাথা নোয়াও।”

” কেন?”

তাসবীর এক লোকমা ভাত নিয়ে আরওয়ার মুখের কাছে তুলে ধরলেন।তাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এখনো স্বাভাবিক হয়নি।কালকের পর থেকেই আরওয়ার কেমন যেন জড়তা বেড়েছে।কক্ষের বাইরে সম্রাটের ভয়ে সবাই কেমন তটস্থ থাকে এসব দেখতে দেখতে এখন নিজেরি কেমন আড়ষ্টতা বেড়ে ধরে।

” বেগম মুখে খাবারটুকু তুলুন।”

আরওয়া কিঞ্চিৎ হেসে খাবারটা মুখে তুললেন।

তাসবীর আহার শেষে কক্ষে ফিরেন।এখন বেশ কিছুক্ষণ তিনি বিশ্রাম গ্রহণ করবেন তারপর বাকি কাজ সারতে হবে।উজির মশাইয়ের সাথে আজ বেশকিছু আলোচনা বাকি আছে।বদ্ধ চোখ খুলতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন আরওয়াকে।মেয়েটা আজ কেমন কেমন করছে।

” কোন সমস্যা বেগম?”

” না না কি সমস্যা হবে।”

আরওয়ার কাণ্ড দেখে রুদ্ধশ্বাস ছাড়লেন তাসবীর।তিনি তার বেগমের হাত টেনে বসিয়ে দিলেন পালঙ্কে।আরওয়ার কোলে মাথা গুজে শুয়ে পড়লেন তাসবীর।

” এমন কেন করছেন?এমন জড়তা দেখাচ্ছেন কেন?আপনার আর আমার সম্পর্ক বাকি পাঁচ দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো নয়।আপনি আমার কাছে কি আপনি জানেন না?”

আরওয়া মিহি হাসলেন।নরম হাতের সাহায্যে বিলি কাটতে থাকেন তাসবীদের চুলে

” আদর যে রাতে একেবারে কম দিয়েছি তাই কি মন খারাপ?”

তাসবীরের লাগামহীন কথায় আরওয়া ঈষৎ লজ্জা পেলেন।তবুও খিলখিলিয়ে হাসলেন তিনি।আরওয়া তখনকার দাসী এবং লতার কাণ্ড তাসবীরকে বলতে হাসতে হাসতে উঠে বসেন তাসবীর।

” তাহলে তাদের কথা সত্যি করে দি?আসুন আসুন আসুন কাছে আসুন দেরি নয় আমার হাতে সময় কম।”

তাসবীর চটজলদি দেখালেন।দ্বিধা নিয়ে পালঙ্ক ছেড়ে লাফিয়ে নামলেন আরওয়া।

” খবরদার কাছে আসবেন না সম্রাট।কথা ছিল আমাদের জীবন হবে স্বাভাবিক অথচ দেখুন আমরা কেমন নিয়মের জীবনে বেঁধে গেছি।এ জীবন আমার ভালো লাগে না।”

তাসবীর হাত টেনে কাছে আনলেন আরওয়াকে।মেয়েটার শুকনো মুখে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলেন বেশ কয়েকবার তাতে অবশ্য আরওয়ার হেলদোল হলো না।তিনি নিশ্চুপ তাসবীরের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বসে রয়।

” পরিস্থিতির শিকার যে।আমরা চাইলে এখানেও আমাদের সুন্দর জীবন হবে।আমি তো আপনাকে বেড়া জালে বেঁধে রাখছি না।কাল রাতে বলেছিলাম কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।আমাদের যদি একসাথে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই কিছু চাওয়াপাওয়া নির্ধারিত রাখতে হবে।
আপনার কাছে আমার চাওয়া,সর্বদা আমার পিতামাতাকে সম্মান করবেন।যখন যা করবেন মনে যা আসবে আমার কাছে নির্দ্বিধায় বলবেন।সর্বশেষ কথা আমার উপর আপনার পূর্ণ বিশ্বাস থাকতে হবে।যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে আমি নেই আমি মনে করি সেখানে কোন সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারেনা।একটা সম্পর্কের ভিত্তি বিশ্বাস।”

” যেখানে আমার জন্মদাতা পিতা বেইমানি করেন সেখানে আমার কাছে বিশ্বাস শব্দটা বড্ড ভারি মনে হয়।তবুও বলছি একবার ভুল করেছি আর তো করবো না।আপনি আমার কাছে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ।জীবনের শেষ নিশ্বাস অবদি আপনার চোখেও আমি যেন বিশ্বস্ত থাকতে পারি এইটুকুই আমার চাওয়া।”

“আমি ফরমান জারি করছি সম্রাট তাসবীরে বেগম সম্রাটের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎকারে ধাপে ধাপে কুর্নিশ করতে হবে না।এতে কি তুমি খুশি আরওয়া?”

” আমি খু্শি হয়েছি সম্রাট।”

” আমার কাছে তুমি মাথা নত নয় বরং মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকো।

#চলবে___

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৪’বর্ধিত অংশ’]
_________________________
৫৬.
“মা তোমার এখানে থাকতে কি অসুবিধা হচ্ছে?”

” আজ্ঞে না।আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না।”

সম্রাট সিদ্দীকের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আরওয়া মাথা নত করলেন।এই সহ তিন বার সম্রাট সিদ্দীকের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে তার।প্রতিবার তার কাছে মনে হয়েছে তিনি মেপে মেপে কথা বলেন আর যতটুকু বলেন বেশ শান্ত স্বরে বুঝে শুনে বলেন।কথা বার্তায় কোন খোঁচা স্বরূপ বাক্য নেই তার ভালোবাসা মিশ্রিত বাক্য কার্যকলাপ নিয়েই কি রাজ্যের মানুষের এত উচাটন।যদিও আরওয়ার কথা বলতে বড্ড দ্বিধা হয় লজ্জা হয়।কেননা আলোর হত্যার পেছনে তার ভাইয়ের হাত আছে পিতার ষড়যন্ত্র আছে সবকিছু মিলিয়ে বড্ড লজ্জায় পড়ে যান তিনি।

” আমার সঙ্গে কথা বলতে কখনো সংকোচ বোধ করবে না মা।তুমি আমার কাছে আমার মেয়ের মতো। আমার আলো মেয়েটা ছিল ছটফটে সরল এইটুকুনি বয়সে সে আমার যত্ন নিতে উঠে পড়ে লাগতো।আমার আহারের সময় পাশে বসে হাত পাখা টানতো তার মা তাকে বারণ করলেও উলটো রেগে যেত হা হা হা আমি যেন চোখের পলকে সবটা হারালাম রে মা।”

শেষোক্ত বাক্যটি আফসোস সুরে বললেন সম্রাট সিদ্দীক।আরওয়া তখন মাথা নুইয়ে নিল।আরওয়ার সংকোচ বুঝতে পেরে সম্রাট তার কথার মোড় ঘুরিয়ে নিলেন,

” আমার তাসবীর বাবার কথা জানো ছেলেটা বড্ড চঞ্চল স্বভাবের।এই যে আমার এত বড় রাজ্যের নাম দাম তাতে তার কোন অভিলাষ নেই।সে তার মতো থাকতে ভালোবাসে।সাদা রঙের তার একটা ঘোড়া আছে।ঘোড়াটা ছোট থেকেই আমার আস্তাবলে বড় হয়েছে।তাসবীর বাবা আদর করে নাম দিয়েছে তারিম।দিনের পর দিন তারিমকে নিয়ে তার সফর চলে।কবিতা আবৃত্তিতে বেশ পারদর্শী।রাজ্যে রাজ্যে তার সুনাম এ নিয়ে তবে কখনো সে সম্রাট সিদ্দীকের পরিচয় দেয় নি।নিজের নামেই পরিচিত লাভ করেছে সে।এসব নিয়ে আমি কখনো মাথা ঘামাই না ব্যক্তি স্বাধীনতা বলেও একটা কথা আছে।তবে এখন যে রাজ্য শাসনে বসেছে ছেলেটা নিরুপায় হয়ে বসেছে।তার কোমল মুখখানি দেখে আমি বুঝতে পারি তার বিরসতা।তবে আমি সুস্থ হচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ এখন হাটতে পারি অল্পস্বল্প।এরপর পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে আমার ছেলের ছুটি।”

” ইনশাআল্লাহ আপনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন আব্বা জান।”

বেশকিছুক্ষণ যাবৎ দুজনের আলাপ আলোচনা চলতে থাকে।এরপর আরওয়া আবু সিদ্দীকের কক্ষ ছেড়ে মাগরিবের নামায শেষ করে হেঁশেলের দিকে রওনা হয়।এই প্রাসাদ তার এখনো ঘুরে দেখা হয়নি তাই কোথায় কি আছে সম্পূর্ণ জানা নয় তার।দিনের আলো ধীরে ধীরে শেষ করে ঘোর অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। হেঁশেলে সকলে মিলে নৈশভোজের আয়োজন করছিলো।দ্বারের সম্মুখে আরওয়াকে দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে যায় সকলে।দ্রুত নত মস্তকে কুর্নিশ জানিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল কয়েকজন।এ কথা কারো অজানা নয় অলকপুরী রাজ্যের শেহজাদী একজন বর্বর অত্যাচারকারী।পান থেকে চুন খসলে তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে সময় নেন না।সেই হিসেবে আরওয়াকে দেখতে পেয়ে সবার ভয় পাওয়া স্বাভাবিক কিছু নয়।

” বেগম সাহেবা আপনি এখানে?কিছু প্রয়োজন?”

” না এমনি হেঁটে দেখছিলাম।তোমাদের প্রাসাদটা আমায় কেউ ঘুরে দেখাও তো।”

দল থেকে হন্তদন্ত পায়ে বেরিয়ে এলো একজন অল্প বয়সী মেয়ে যার নাম সুরমা।

” আমার সাথে যাবেন বেগম?আমার নাম সুরমা।”

আরওয়া সরু চোখে তাকালো মেয়েটার দিকে।অল্প বয়সী কি কোমল মেয়েটি ঠোঁটের কোনে হাসির কমতি নেই।যেখানে সবার ভীত চেহারা সেখানে এই মেয়ে কি মিষ্টি হাসছে।

” তাহলে চলো আমরা ঘুরে আসি।”

সুরমা খপ করে আরওয়ার হাত ধরে নেয়।একচিলতে হাসি দিয়ে হেঁশেল থেকে বের হতে ইশারা করে।বাকি দাসীরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সুরমার দিকে।অনুমতি ব্যতীত একজন সম্রাজী’কে ছুঁয়ে দিয়েছে আজ যে কি হবে।অথচ আরওয়া কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না।সে সুরমাকে নিয়ে হাটতে শুরু করে সামনের দিকে।
আরওয়াকে নিয়ে সুরমা মহলের প্রতিটি কক্ষ চিনে এসেছে কার কোন কক্ষ।সুসজ্জিত মহলটি দেখে বিস্মিত আরওয়া।এ মহল সম্পূর্ণ অন্যরকম ভাবে সাজানো সাদাসিধে অথচ নজর কাড়া।সুরমার হাত ধরে আরওয়া তখন মহলের বাইরে প্রবেশ করে।মহলের বাইরে থাকা প্রহরীরা তাদের সম্রাজীকে দেখে কুর্নিশ জানান তবে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করেন না।সম্রাজী আরওয়ার মুখ ঢাকা আব্রুতে যদিও দুচোখ সাদৃশ্য তবুও তার চোখ চোখ রাখলো না কেউ।
মহলের শেষ কোণে থাকা জলাশয়ের কোণে ফোয়ারা দেখে চমকে তাকান আরওয়া।সারাটা মহলে এ দিকটা সবচেয়ে সুন্দর।আজকের আকাশে এখনো চাঁদের অস্তিত্ব মেলেনি তবে তারারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে।

” ওটা কি সুন্দর!”

আরওয়ার কথায় মাথা দুলালো সুরমা।

” এটা আমাদের সম্রাটের তৈরি গো মানে আপনার শশুড়ের।আমি তো তেমন কিছু জানি না তবে যতটুকু জানি তার স্ত্রীর জন্য এ ফোয়ারা তৈরি করেছেন তিনি।”

” আব্বাজান আম্মীজানের জন্য তৈরি করেছেন।মাশাল্লাহ কি অপরূপ সৌন্দর্য।”

” কাছে যাবেন বেগম সাহেবা?চলুন কাছে যাই খুব সুন্দর দেখতে এখানে সবার প্রবেশের অনুমতি নেই আমি দূর থেকেই দেখেছি আপনি সঙ্গে আছেন যখন তখন কাছে যেতে কেউ নিষেধ করবেনা নিশ্চয়ই।”

সুরমা এখনো আরওয়ার হাত ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আরওয়া মেয়েটাকে নিয়ে অগ্রসর হলো সামনের দিক।এক কোণে থাকা বড় বড় পাথরের সাবধানে বসলেন তিনি সুরমা বসলো তার ঠিক পাশেই।
আরওয়া নিজের কক্ষের বাইরে এক পা ফেললেও তাসবীর নিকট তার খবর পৌঁছে যায়।সেখানে আজ আরওয়া মহলের বাইরে।তাসবীর আশেপাশে প্রহরীদের কড়া পাহারায় রেখেছে অথচ আরওয়া যানেই না তার অগোচরে তাকে কতটা সজাগ দৃষ্টিতে রাখা হয়।
হাতের কাজ সেরে বেশ কিছুক্ষণ পর ফোয়ারার সম্মুখে উপস্থিত হয় তাসবীর।আরওয়া তখন সুরমার সাথে কথা বলছিল।তাসবীরকে দেখতে পেয়ে এক ছুটে বেরিয়ে যায় সুরমা আরওয়া অবাক চোখে সুরমার যাওয়া দেখতে চোখের কোণে ভেসে উঠে তাসবীরের মুখ।

” আপনি কখন এলেন?”

” এইমাত্র।কি করছিলে তুমি?”

” আপনার তারিমের জন্য ঘাস কাটছিলাম।”

তারিমের নাম আরওয়ার মুখে শুনতে ভ্রু কুচকে যায় তাসবীরের।সে তো কখনো তারিমের কথা আরওয়াকে বলেনি তাহলে আরওয়া জানলো কী করে?

” তুমি তারিমের কথা জানলে কি করে?”

” আব্বাজান বলেছিল।”

তাসবীর চমৎকার হাসলো।আগলে ধরলেন আরওয়াকে।

“যাবে আমার তারিমকে নিয়ে ঘুরতে?

” নিয়ে যাবেন?আগে তো বলেননি আপনার একটা সাদা ঘোড়া আছে।”

” তোমায় হঠাৎ চমকে দিতে চেয়েছিলাম।এখন দেখছি আমি উলটো চমকে গেছি।”

আরওয়া ফিক করে হেসে ফেললো।দুজনে নীরব রইলো বেশ কিছুক্ষণ।নীরবতা ঘুচিয়ে প্রশ্ন করলো আরওয়া,

” কোথায় ছিলেন তাসবীর?আমি অপেক্ষায় ছিলাম আপনার।”

” বেশ কিছু প্রহরী বহালকরণ হয়েছে তা উজির মশাই দেখেছেন।আমি বাকি কাজ সামলে নিয়েছি।আশা আছে এই রাজ্যে একটি বড় মহল তৈরি হবে আর সেই মহলে সাহিত্যকর্ম হবে।সেই মোতাবেক জায়গা জমি নির্ণয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম।”

” বাহ বেশ ভালো।”

” আপনি তৈরি থাকবেন আজ রাতের আহার শেষে আমরা তারিমকে নিয়ে বের হবো।”

” সত্যি বলছেন?”

” মিথ্যা বলার প্রশ্নই আসেনা।”

৫৬.
দিনের বেলা নীল আকাশটায় সূর্য তার যতটা তেজ নিয়ে উঠেছিল রাতের আঁধারে আচমকা সেই আকাশটায় ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেল।বজ্রপাতের শব্দে বেসামাল করে তুলছিল সবকিছু।রাতের আহার শেষে কক্ষে ফিরেছিলেন তাসবীর।অলিন্দের কোণে দাঁড়িয়ে বজ্রপাতের শব্দে কেঁপে উঠছিলেন আরওয়া।কক্ষে এসে তাকে ধমক দিয়ে উঠেন তাসবীর।বজ্রের সময় অলিন্দে থাকার কোন মানে হয় না।আজ রাতেই তারিমকে নিয়ে বের হওয়ার কথা ছিল তাদের অথচ এই আচমকা তুফানের কাছে ইচ্ছেটা যেন হাওয়ায় উড়ে গেল।

” বাইরে বৃষ্টি নেই অথচ এতটা বজ্রপাত।”

আরওয়ার প্রশ্নে প্রত্যুত্তর করলেন না তাসবীর।মেয়েটার আফসোসের সুর অথচ সেই সময়টাতে তাসবীর ডুবে ছিল আরওয়ার গ্রীবাদেশে।বজ্রের বেসামালে তাল নিজেকে বেসামাল করে তুলেন তাসবীর। তিনি যেন নিজে নিজের অজান্তে ক্রমশ বেসামাল হয়ে উঠেছেন।তার ঘোরের আচরণে কিছুতেই বাঁধা দিতে পারলেন না আরওয়া।তিনি তখন নিজেও উন্মাদ হয়ে উঠছিলেন তাসবীরের প্রতিটি অসংগত ছোঁয়ায়।হঠাৎ দমকা হাওয়ায় জানলার পর্দা উলটে কক্ষের জ্বলতে থাকা সব প্রদীপ এক নিমিষেই নিভে গেল আরওয়ার অবস্থা নাজেহাল তাসবীর এই ঘোর তমস্রীতে সুযোগটা লুফে নিল।বাইরের কনকনে হাওয়ায় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো আরওয়ার।তাসবীরের বন্ধনী থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ঝুঁকে গেল পেছনটায়।

” জানলার কপাট বন্ধ করুন তাসবীর আমার ঠাণ্ডা লাগছে।”

আরওয়ার এই একটা বাক্য যেন তাসবীরের ঘোর কাটাতে তীরের ন্যায় কাজ করলো।আরওয়ার দিকে তাকালো হতবিহবল দৃষ্টিতে।এই মুহূর্তে আরওয়ার ঠাণ্ডা লাগছে?অদ্ভুত কথাবার্তা।
তাসবীর উঠে বসলো এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রুদ্ধ করে জানলার কপাট পুনরায় একে একে সব প্রদীপ জ্বালিয়ে কক্ষটাকে আলোকিত করে।আরওয়া তখন নিজেকে ঠিকঠাক করে এক কোণায় গুটিয়ে যায়।তাসবীর আর কোন উচ্চ বাক্য না করে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।

” বুকে আসুন আরওয়া আজ আর বের হবো না ঘুমিয়ে পড়ুন।”

” কিছু করবেন না তো?”

আরওয়ার মিহিয়ে যাওয়া স্বরের প্রশ্নে শুনে মাথা তুলে তাকায় তাসবীর।বেচারির মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হলো তাসবীরের বালিশে মাথা রেখে হাস্যরসে বলে,

” কিছু করবো না।আসুন কাছে।”

আরওয়া এগিয়ে গেল।নিশ্চুপ তাসবীরের বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝলো।ধীরে ধীরে সময় কেটে গেল ততক্ষণে ঘুমের অতলে হারিয়ে গেছেন তাসবীর।কিন্তু ঘুম নেই আরওয়ার চোখে কতদিন পর প্রাসাদ ছেড়ে বের হওয়ার সুযোগ ছিল অথচ আজকেই কি না ঝড় উঠতে গেল।সময়ের তালে ঝড়টাও কেটে গেলো কিন্তু কোন বৃষ্টি হলো না।সেই সুযোগে মাঝ রাত্রিরে তাসবীরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেন আরওয়া আবদার করে বসেন এই রাত্রিরেই তিনি বের হবেন।
বাইরে শীতল বাতাস গায়ে কাটে তুলছে আরওয়ার তবে তিনি ভুলেও তাসবীরের নিকট তা প্রকাশ করলেন না।এতক্ষণের ঝড়ে সবকিছু কেমন দম ধরে আছে।অন্ধকার আকাশের নিকট তাকিয়ে বুক কেঁপে উঠলো আরওয়ার।কেমন যেন ভয় করছে।সমস্ত আহমেদাবাদ তখন অন্ধকারে ঘিরে আছে।আস্তাবল থেকে সাদা ঘোড়াটি এনে আরওয়ার সম্মুখে দাঁড়ালেন তাসবীর।

” ভেবে দেখুন আপনি ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছেন আজ না গেলে হয় না।”

” না হয় না।মাশাল্লাহ আপনার ঘোড়া তো বেশ রূপসী।”

” তাই তো আপনার আগে তার প্রেমে মজে ছিলাম।”

খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আরওয়া।তাসবীরের সাহায্য নিয়ে চেপে বসলেন ঘোড়ার পিঠে।তার পেছনে কায়দা করে বসলেন তাসবীর।এভাবে ছুটে চললো তারা।ঘোড়া তার গতি ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুললো প্রাসাদ থেকে তারা ততক্ষণে অনেক দূরে চলে এসেছে।নিঃশব্দ অন্ধকারে ঘোড়ার টগবগ শব্দ বেশ অন্যরকম অনুভূতি ঠেকলো আরওয়ার কাছে।তাসবীর তার অবাধ্য ওষ্ঠ কতবার যে ছুঁয়ে দিল আরওয়ার গালে তার হিসেব নেই।আরওয়াও অনুভব করছিল তার প্রেমিক পুরুষের ছোঁয়া।তারা যখন অনেকটা দূরে পৌঁছে গেল তখন ঘোড়ার লাগাম টানলো তাসবীর।অন্ধকারের মাঝে তারা জানলোই না এতক্ষণ তাদের অনুসরণ করছিল আততায়ীর একটি দল।সুযোগ বুঝে চারদিক থেকে তীর ছুঁড়লো তারা।অন্ধকারে হালকা আলোতে নিজেদের নিশানা ভুল করে বসলো আততায়ীরা।তিনটে তীরের মাঝে একটি আরওয়ার বাহু এবং পায়ে বিঁধলো অপরটি ঘোড়ার গলা বরাবর।মুহূর্তে তীব্র যন্ত্রণায় ছটফটিয়ে উঠলো আরওয়া ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়তে নিলে তাকে শক্ত ভাবে ধরে ফেললো তাসবীর।কিন্তু ঘোড়াটিও তীব্র ব্যথায় লাফিয়ে উঠে যার ফলে আরওয়া প্রায় পড়েই যাচ্ছিল পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আরওয়াকে তুলে ঘোড়াটিকে নিয়ে ছুটলো প্রসাদের দিকে।ঘোড়াটিও প্রভুর বিপদের ইঙ্গিত পেয়ে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে প্রাসাদের রাস্তায় ছুটতে লাগলো।
#চলবে___