বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু পর্ব-৮+৯

0
229

#বিবর্ণ_বৈশাখে_রংধনু (২য় পরিচ্ছেদ)
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
সব শুনে আহান বলে,
“আই থিংক সামওয়ান হু জেলাস উইথ রুহানী। বিকজ, কেউ কি*ডন্যা*প দুই কারণে করবে। ফার্স্ট, ওয়ান্ট মানি এন্ড সেকেন্ড রিমুভ ফর্ম লাইফ! আই থিংক দ্যাট ইজ দ্যা সেকেন্ড ওয়ান। কোনো রেনসম চায়নি।”

আরহান হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“কিন্তু কে ওর প্রতি জেলাস হবে? আর কেনই বা হবে? ওর চাচাতো বোন রিহা, সে এখন এখানেই আছে। নিজের বাবা-মায়ের দেখাশোনা করছেম রিহা এটা করবে না। রিহা ছাড়া আর কে করতে পারে? আর রিহা যদি করতই তবে এতগুলো বছর রিহা অপেক্ষা করত না। রিহা অনেক আগেই করে ফেলতে পারতো। আর যদি রিহা চায় রুহানীর নামে থাকা পোপার্টি নিজের করতে, সেটা করলেও আরো ২-৩ বছর আগে সেটা করতে পারতো। দ্যাটস হোয়াই আমি রিহাকে সন্দেহ করতে পারছি না।”

আহান আবার চিন্তায় পড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর সে কিছু একটা ভেবে চট করে বললো,
“হেই ব্রো, ডিড সামওয়ান লাভ ইউ?”

“মানে?”

“এমন কেউ যে তোমাকে ভালবাসে? তোমার পাশে রুহানীকে সহ্য করতে পারছে না? এমন কেউ আছে?”

আহানের কথা শুনে আরহান চিন্তায় পড়ে গেল। তখনই তার মাথায় সাফা নামটা আসে। সাফা তাকে প্রপোজ করেছিল। অনেকদিন যাবত সাফারও কোনো খোঁজ নেই। আরহান উত্তেজিত স্বরে বলে,

“আছে! আমার ফ্রেন্ড। বেস্টফ্রেন্ড। সাফা! ও আমাকে প্রপোজ করেছিল। তখনো আমি রুহানীকে বিয়ে করবো কী-না এই ব্যাপারে জানতাম না। ওকে ভালোবাসে কী-না তাও জানতাম না। সেদিন আমি সাফাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর থেকেই সাফা আমার সাথে খুব একটা কথা বলতো না। তারপর তো আমার এংগেজমেন্টের পর সে হুট করে হাওয়া হয়ে গেল। আর তাকে খুঁজেই পেলাম না। তার কোনো খোঁজও পেলাম না। এখন জানিও না সাফা কোথায় আছে।”

“সাফার খোঁজ করো ভাইয়া।”

“কিন্তু সাফার এমনটা করে কী লাভ?”

আহান আরহানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“পেয়ার অল জাং মে সব কুচ জায়েজ! সাফা তোমাকে ভালোবাসে। তোমার ফ্রেন্ডের সম্পর্কে এটা শুনতে তোমার হয়তো খারাপ লাগছে। বাট ফ্যাক্ট ইজ ফ্যাক্ট।”

আরহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেল। আহান বুঝলো তারও এখন যাওয়া উচিত।

_________

খাওয়া শেষ করে রুহানী কেয়ারটেকারের কাছে একটা কাগজ ও কলম চাইলো। কেয়ারটেকার বলল,
“নো। ইটস নট অ্যালাউড।”

রুহানী ইশারায় অনেক অনুরোধ করল যে সে কিছু বলতে চায় তাই কাগজ-কলম লাগবে। কেয়ারটেকার ভাবলো সত্যি হয়তো। তাই সে একটা নোটবুক এনে দিল। রুহানী কাগজে নিজের প্রয়োজনের কথা লিখতে লিখতে কৌশলে কেয়ারটেকারকে সরানোর প্রয়াস করল। যা তে সে সফলও হয়। লেখার মাঝেই রুহানী শুকনো কাঁশির অভিনয় শুরু করল। যা তার মাঝে মাঝে হয় এবং এর দরুণ গলায় খুশখুশ করে। কেয়ারটেকার জিজ্ঞাসা করলো,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

রুহানী ইশারায় পানি চাইল। কেয়ারটেকার খাবারের ট্রলির কাছে চেয়ে দেখে গ্লাসে পানি নেই। সে পানি আনতে বাহিরের রুমে গেলে রুহানি এই সুযোগে একটা কাগজ ছিঁড়ে নেয়। তারপর তাতে দ্রুত লিখে, “Please help me. I am k*idn*appe*d.”

লেখাটা শেষ করে কাগজটা দলা মোচড়া করে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখল। অতঃপর আবার কাঁশতে শুরু করে। কেয়ারটেকার পানি দিলে রুহানী পানি খেয়ে নোটবুকটা তার হাতে দেয়। সেখানে লেখা ছিল,

“I have a dry cough problem. Arrange to get honey for me. I will drink 1 glass of warm water, salt, and honey every morning. (আমার শুকনো কাঁশির প্রবলেম আছে। আমার জন্য মধু আনানোর ব্যাবস্থা করুন। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস গরমপানি, লবন ও মধু মিশিয়ে খাব।)”

কেয়ারটেকার সম্মতি দিয়ে নোটবুক ও কলম নিয়ে দরজা লক করে চলে যায়। কেয়ারটেকার চলে যাওয়ার পর রুহানী কাগজটা খুলে আর জানালার দিকে তাকায়। এই জানালাতে গ্রিল আছে সাথে থাই গ্লাস। রাফাত তাকে জানালার কাছে যেতে কখনো নিষেধ করেনি। কারণ রাফাত জানে রুহানী কথা বলতে পারে না। কাউকে ডাকতেও পারবে না। আর তার কাছে কোন খাতা, কলমও দেওয়া হয়নি, যে কারো কাছে সাহায্য চাইবে। তাই রাফাত নিশ্চিন্ত। রুহানী গিয়ে জানালার কাছে বসে। আর দেখতে থাকে রাস্তার কাছে কোনো পথচারী যাওয়া আসা করে কী-না। সচরাচর লন্ডনের মানুষজন রাস্তায় ময়লা কাগজ ফেলে না। তাই হুট করে কোন পথচারীর সামনে কোনো কাগজের দলা এসে পড়লে অবশ্যই সে সেটা তুলে খুলে দেখবে। প্রায় কিছুক্ষণ পর একজন পথচারীকে আসতে দেখল রুহানী। তাই সে চট করে কাগজটা দলা করে ছুঁড়ে ফেলল। পথচারীটি হঠাৎ একটা কাগজের দলা এসে পড়তে দেখে অবাক হয়। সে ঝুঁকে কাগজের দলাটা হাতে নিয়ে দেখল। তারপর দিক অনুসরণ করে তাকিয়েই দেখতে পেল, জানালার গ্রিলের কাছে একটা মেয়ে দাঁড়ানো। মেয়েটি হাত দিয়ে বারবার গ্রিলে আঘা*ত করছে। পথচারীটা কাগজের দলাটা খুলে সেখানের লেখাটা পড়ে। তারপর সে মেয়েটিকে হাতের ইশারায় আশ্বস্ত করে নিকটস্থ পু*লিশে ইনফর্ম করতে যায়।

রুহানী এবার জানালার ধারে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এবার সে উদ্ধার হবে। রাফাত কালকেই দেশে ফিরে গেছে। তাই এখন এতো দ্রুত আসতেও পারবে না।

_______

রহমত শেখ চোখ বন্ধ করে ব্যালকনির রকিং চেয়ারে বসে আছেন। আজ দুই সপ্তাহ ধরে রুহানী নিখোঁজ। রিহার যত্নে জাহানারা শেখ সুস্থ হলেও রুহানীর জন্য কষ্ট তো কমে না। ছোটো থেকে নিজের সন্তানের থেকে বেশি ভালোবেসে আগলে রেখেছেন। রিহা ব্যালকনিতে এলো। এসে বাবার মলিন মুখশ্রী দেখে কাঁধে হাত রাখল।
কাুধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকান রহমত শেখ। অতঃপর মেয়েকে দেখে বলেন,

“ওহ তুমি। বলো।”

“এমনি তোমাকে একটু বলতে এসেছিলাম। আমি কালকে লন্ডন যাব। তারপর পরশু ইটালি। এরপর আবার এখানে আসব। একটা আর্জেন্ট দরকার।”

“আচ্ছা যাও তবে।”

রিহা তার বাবার সামনে এসে বসলো। বাবার হাত ধরে বলল,
“রুহানীকে আমরা ঠিক খুঁজে পাব। এখন আমারও ওর প্রতি রাগ নেই। আমি দোয়াও করেছি।”

রহমত শেখ রিহার মাথায় হাত রেখে বলেন,
“রুহানী জানলে অনেক খুশি হবে। এটা জানার জন্য হলেও ওকে ফিরতে হবে।”

রিহা হালকা হাসে। তারপর বলে,
“হু। আচ্ছা আমি যাই। মায়ের ঔ*ষুধ দিতে হবে।”

“যাও।”

রিহা চলে গেলে রহমত শেখ পূর্বের ন্যায় বসে থাকে। তবে এবার তার ওষ্ঠকোণে খনিক স্বস্তিময় হাসির রেখা।

_______

রাফাতের সিক্রেট ফ্লাটে পু*লিশ এসেছে। সেই পথচারীটা সাথে করে নিয়ে এসেছে। কেয়ারটেকার এটা দেখে রাফাতকে মেসেজ করে পালিয়ে গেছে। পু*লিশ এসে রুহানীকে উদ্ধার করে পাশের রুম থেকে সাফাকেও অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়। রুহানী পু*লি*শ স্টেশনে রুহানী তার সম্পর্কে সব তথ্য দেয়। তাকে কি*ডন্যা*প করার পর থেকে সবটা বলে। তার চাচা ও আরহানের নাম্বারও দেয়। লন্ডন পু*লিশ তাদের সাথে যোগাযোগ করছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

#বিবর্ণ_বৈশাখে_রংধনু (২য় পরিচ্ছেদ)
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
রুহানীর খোঁজ পেয়ে আরহান তৎক্ষণাৎ লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তখন ফ্লাইট ছিল বিধায় সে দ্রুত বের হতে পেরেছে। এদিকে রাফাতও খবরটা পেয়ে এয়ারপোর্টে এসে আরহানকে দেখে। আরহান ওর কাছে এসে খুশিতে কথাই বলতে পারছে না। খুশিতে ভাষা হারানোর মতো অবস্থা তার। কোনরকম নিজের উৎফুল্লতা জাহির করে বলে,

“রুহানীর খোঁজ পাওয়া গেছে রাফাত। ও লন্ডনে আছে। লন্ডন পু*লিশ ওকে উদ্ধার করেছে।”

রাফাত জোরপূর্বক খুশি হওয়ার চেষ্টা করে। সে আরহানে কাঁধ চাঁপড়ে বলে,
“কনগ্রেটস দোস্ত। অবশেষে রুহানীকে ফিরে পেলি।”

“আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমি লন্ডন যাব। ওকে নিয়ে ফিরব।”

“যা। সেফলি নিয়ে আয় রুহানীকে।”

এটা বলে রাফাত ঘুরে চলে যাচ্ছিল তখন আরহান ওকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে,
“তুইও চল আমার সাথে। তোর আজকে কোথাকার ফ্লাইট? ”

“নারে আজকে আমার ডোমেস্টিক ফ্লাইট আছে। তুই নিয়ে আয়। তারপর তো দেখা হবেই।”

“হুম। বায়। ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছে। দোয়া করিস।”

রাফাত ওষ্ঠকোণে মিথ্যে হাসি টেনে আরহানকে বিদায় দেয়। আরহান চলে যেতেই রাফাত রাগে পাশের ওয়েটিং চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে নিজের চুল নিজেই টানতে থাকে। তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে। অতঃপর নিজে নিজেই স্বগোতক্তি করে,

“নো নো নো! রুহানী এই চালাকিটা করে ঠিক করেনি। ড্যাম! আমি ফেঁসে যাব। রুহানী আরহানকে অবশ্যই বলবে। কী হবে এখন? আমি এখানে থাকতে পারব না। আমায় পালাতে হবে। হবেই। কিন্তু সাফা? সাফাকেও তো পু*লিশরা পেয়েছে। ওর কী হবে? আরহান তো জেনে যাবে সাফা কোমাতে তাই সাফার কোন খোঁজ কেউ পাচ্ছিল না। রুহানী হয়তো সাফার কোমাতে যাওয়ার কারণটাও বলে দিবে। আরহান সাফার ট্রিটমেন্ট করবে তো? বা সাফার বাবা-মা? আমি ফেঁসে যাবো। কিন্ত আমি আড়াল থাকতে পারবো। তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ওরা আমার বোনকে বাঁচিয়ে রাখবে তো?”

সাফার কথা চিন্তা করে রাফাত আরো চিন্তায় পড়ে যায়। এবার বেসিনে পানি আটকে তাতে নিজের মাথা নিমজ্জিত করে। প্রায় পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড সেভাবে রেখে মাথা উঠিয়ে আবারো আয়নায় দেখে। তারপর মুচকি হেসে বলে ওঠে,
“ওয়েট ওয়েট! রুহানী জানে সাফা আমার বোন। কিন্তু কেমন বোন তা তো জানে না। এখন জানতে দেওয়া যাবে না। তাছাড়া আরহান, তন্নি, রাইদা জানে আমি সাফাকে বোনের মতো স্নেহ করি। হাহ্! এবার বেঁচে গেলে রুহানী কিন্তু তোমার জীবন ন*রক হতেই হবে। অন্তত যতোদিন আমি বেঁচে আছি ততোদিন তো তুমি সুখের মুখ দেখবে না।”

রাফাত তারপর মাথা-মুখ মোছে ঢাকার ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে চলে গেল। ঢাকা থেকে সে ইন্ডিয়া যাবে। তারপর কোথাও চলে যাবে।

__________

দীর্ঘ জার্নি শেষে আরহান লন্ডন পৌঁছে। তারপর পু*লিশ স্টেশনে ছুটে। চোখের সামনে রুহানীকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে যায়। রুহানী আরহানকে দেখা মাত্রই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আরহান কয়েক মুহূর্তে নির্বাক, নিশ্চল থেকে নিজেও প্রেয়সীকে গভীর আলিঙ্গনে আগলে নেয়। দুই পক্ষেই নিরবতা। যেন ওরা শব্দহীন উপায়ে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করছে।

এভাবে কিছু সময় পর একজন পু*লিশ এসে বলেন,
“Mr Arhan, there we got two lady. Miss Sheikh and a lady who is in coma stage. We transfered her to the hospital. (মিস্টার আরহান, আমরা সেখানে দুইজন মহিলাকে পেয়েছি। মিস শেখ এবং আরেকজন মহিলা যিনি কোমাতে আছেন। আমরা তাকে হসপিটালে স্থানান্তর করেছি। ”

“ওকে থ্যাংকিউ স্যার।”

“ইউ মোস্ট ওয়েলকাম।”

পুলিশটি চলে যেতেই রুহানী আরহানকে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা নিয়ে কিছু বলতে চাইছে। আরহান জিজ্ঞাসা করে,
“কী হয়েছে? কিছু বলতে চাইছো?”

রুহানী ঠোঁট নাড়িয়ে নিঃশব্দে বলে,
“ওই মেয়েটা সাফা। সাফা কোমাতে আছে।”

“সাফা! রিয়েলি?”

রুহানী হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। সাফার কথা শোনা মাত্রই আরহান হতবাক হয়ে যায়। সাফা তাও কোমাতে! তার বিশ্বাস হচ্ছে না। সে রুহানীর হাত ধরে পু*লিশ স্টেশনের দরকারি ফরমালিটি শেষ করে হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। সেখানে কি*ডন্যা*পারের নামও জানতে চায়নি। হসপিটালে গিয়ে রিসিপশনে খবর নিয়ে সাফার কেবিনে যায়। সেখানে গিয়ে সাফা কে এই অবস্থায় দেখে আরহান যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে সাফার পাশে গিয়ে বসে। নিজে নিজেই সাফা কে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,

“জানিস তোকে আমরা কতো মিস করেছি। কতো খুঁজেছি। তারপর আমরা ভেবেছি তুই হয়তো স্বেচ্ছায় আড়াল হয়ে আছিস। কিন্তু তোকে আজ এই অবস্থায়, এই হালে দেখব তা কল্পনাও করতে পারিনি।”

রুহানী এসে আরহানে কাঁধে হাত রাখে। আরহান রুহানীকে দুঃখ করে বলে,
“জানো, ও আমার প্রথম বেস্টফ্রেন্ড। ও যখন ছোটো ছিল তখন থেকেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব। সাথে উঠা, বসা, লড়াই সবকিছু হয়েছে। হয়তো ও যা চেয়েছিল সেটাই হয়নি!”

রুহানী আরাহানকে নিজের দিকে ফেরায়। তারপর দুই হাতের আঁজলায় আরহানের মুখটাকে নিয়ে মায়াময়ী দৃষ্টিতে তাকায়। অতঃপর নিঃশব্দে বলে,

“সাফা আপনাকে ভালোবাসে। তাই আপনার সাথে আমাকে ও মানতে পারেনি। যার দরুণ বেখেয়ালিতে ওর অ্যা*ক্সিডে*ন্টটা হয়েছে। আর এখন ও কোমাতে। ছোটো থেকে একসাথে আপনারা। তাই সাফার মনে আপনার জন্য ভালোবাসার অনুভূতি জন্ম নেওয়াটা তেমন কোনো অস্বাভাবিক কিছু না। হয়তো সেও ভেবেছিল আপনিও তাকে বন্ধুত্বের আড়ালে ভালোবাসেন। জানেন? কোন না কোন ভাবে আমার নিজেকে দোষী মনে হয়। আমি যদি আপনার জীবনের না আসতাম তাহলে হয়তো সাফাই আপনার জীবনের একমাত্র ভালোবাসা হতো। আমিই ওর ভালোবাসা ওর থেকে কেড়ে নিয়েছি।”

রুহানীর মুখ নিঃসৃত বুলি শোনে আরহান অবাক হলো। মেয়েটা নিজেকে দোষ দিচ্ছে।
“তুমি নিজেকে কেন দোষ দিচ্ছ? তুমি আমার জীবনের না আসলে কি হতো সেটা তুমি দাবি করে কিভাবে বলতে পারো? সাফাকে আমি যদি ভালোবাসার নজরেই দেখতাম তাহলে একশটা রুহানী এলেও আমি সাফাকেই ভালোবাসতাম। কিন্তু আমি সাফাকে কখনোই ভালোবাসার নজরে দেখিনি। ওকে আমি সব সময় বন্ধুত্ব, বোন এরকম নজরেই দেখেছি। হতে পারতো যদি আমি অন্য কাউকে ভালো না বাসতাম তখন হয়তো আমি ওর ভালোবাসাকে সম্মান দিতাম আবার ওকে বুঝাতেও পারতাম। সবকিছুই ডেসটিনি।”

রুহানী সাফার পানে উদাস হয়ে চেয়ে রইল। হঠাৎ আরহানের ব্রেনে কিছু প্রশ্নের উদয় হলো। সে রুহানীকে জিজ্ঞাসা করল,

“তুমি এসব জানলে কী করে? মানে সাফার অ্যা*কসি*ডেন্ট আমাদের একসাথে দেখে হয়েছে?”

রুহানী নজর লুকাচ্ছে। আরহানকে রাফাতের কথা বললে কি আরহান বিশ্বাস করবে? ভেবে ভেবে রুহানী অস্থির হচ্ছে। জায়গা থেকে উঠে চলে যেতে নিতেই আরহান তার হাত ধরে আটকায়। তারপর নিজের সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে চোখে চোখ রেখে শুধায়,

“কিছু লুকাচ্ছো তুমি? কী লুকাচ্ছো? কিভাবে জানলে এসব? সাফাকে আর তোমাকে একই জায়গায় কিভাবে পাওয়া গেল? কে কি*ডন্যা*প করেছিল তোমাকে?”

জবাব নেই রুহানীর কাছে। সে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে। রায়হান ভাবল রুহানি কে একটু সময় দেওয়া দরকার। দেশে ফিরে না হয় সবকিছু জেনে নেবে। এখন সাফাকে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আরহান রুহানীকে বলল ,

“আচ্ছা তোমাকে এখন আমি জোর করছি না। কিন্তু সত্যটা তোমাকে বলতে হবে। তুমি সময় নাও তারপর বলো। আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে সাফাকে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করব। ”

আরহান রুহানীর গালে হাত রেখে হালকা হেসে চলে গেল। রুহানী লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে সাফার পাশে বসে। এক দৃষ্টিতে সাফার পান্ডুর মুখশ্রীতে চেয়ে থাকে।

________
রুহানীর আসার খবরে রিহা ফিরে এসেছে। এসেই নিজের মাকে উৎফুল্ল দেখে তার ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি ফোটে। রিহাকে দেখে জাহানারা শেখ ছুটে আসেন। তিনি উৎফুল্লিত চিত্তে বলেন,

“রুহানী আসছে। ওকে খুঁজে পাওয়া গেছে। কতোগুলো দিন মেয়েটা আমার সাথে নেই। ওকে কতোগুলো দিন পর দেখব।”

রিহা মায়ের মুখে হাত রেখে প্রশান্তচিত্তে বলে,
“তোমাকে এভাবেই ভালো লাগে মা। তোমার এই হাসি খুশী শান্তি ভরা মুখটা দেখার জন্য হলেও দোয়া করব রুহানী যেন ভালো থাকে।”

জাহানারা শেখ মিষ্টি হেসে বলেন,
“শুধু রুহানী না। আমার দুই মেয়েই যেন সবসময় ভালো থাকে। হাসি-খুশি থাকে। এক মেয়েও খারাপ থাকলে মা ভালো থাকে না।”

আবেগে রিহার নেত্রকোনে অশ্রু জমে। সে তার মাকে জড়িয়ে নিজের আবেগ প্রকাশ করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

রিচেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।