বিবাহিতার সাতকাহন পর্ব-১২+১৩

0
284

#বিবাহিতার সাতকাহন
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১২

পিয়াস আমার হাত দুটো ধরে মলম লাগাতে লাগল। পিয়াস ছোটো মানুষ তাই আমি এতে বাঁধাও দিতে পারছিলাম না। তবে বিষয়টা আমি অনুধাবনও করতে পারছি না যে, পিয়াস এ কাজ কেন করছে! সত্যিই পিয়াস আমাকে বড়ো বোনের চোখে দেখে এমন করছে নাকি এতে অন্য কারণ আছে? পিয়াসের আবেগী বয়স যা ইচ্ছা তার মনে আসতে পারে। আমি বিষয়টা ইতিবাচক নেতিবাচক দুইভাবেই ভাবতে গিয়ে যেন মাথাটা ঘুরিয়ে যাচ্ছে আমার। নেতিবাচক ভাবনাটা মিথ্যা হলে নিজেকে আমার বড্ড অপরাধী মনে হবে পিয়াসকে এমন ভাবায়। আবার সত্যি হলে গল্পের মোড় যাবে অন্য মোড়ে। আপাতত আমার খারাপ লাগছে এমন ভাবতে। তাই এত ভাবনায় মন দিলাম না। বিষয়টা আমি স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছি। পিয়াস হাতে মলম লাগাতে লাগাতে বলল

“এ মলমটা পুড়া হাতের জন্য অনেক উপকারী। একদম জ্বলা কমে যাবে দেখবে। আমার যখন বাইকের সিলিন্ডারে লেগে পা পুড়ে গিয়েছিল তখন এ মলমটা ডাক্তার আমাকে দিয়েছিল। আর কিছু মনে করো না আমি তোমাকে তুমি করে বলছি। আমার বড়ো বোনকেও আমি তুমি করে বলি।”

পিয়াসের করা কেয়ার আমার খারাপ লাগছে না। তবুও কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলাম

“আমি হাত পুড়িয়েছি তুমি জানলে কী করে? আমাকে কী তুমি ফলো করো?”

পিয়াস মলম লাগানো শেষ করে ঢুক গিলতে গিলতে বলল

“আমার বেড রুম থেকে তোমার রান্না ঘর দেখা যায়। ঐখান থেকেই দেখছিলাম। আর শুনো তোমাকে এখন রান্না করতে হবে না। আমিই রান্না করে দিয়ে যাচ্ছি দাঁড়াও।”

“তুমি এতটুকু বাচ্চা তুমি কী রান্না করবে? পাগলের প্রলাপ কম করো। যাও বাসায় যাও।”

পিয়াস মাথার চুলগুলো এক মুঠ দিয়ে ধরল তারপর পরক্ষণেই ছেড়ে বলল

“আমি পাগল না বড্ড পাগল। ছোটো হতে পারি তবে গুণ আছে অনেক। আমি রান্না তোমার থেকেও ভালো পাড়ি। দাঁড়াও না আমি রান্না করি আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখো।”

পিয়াস অনুমতির তোয়াক্কা না করে দরজা দিয়ে ঢুকে রান্না ঘরে প্রবেশ করল। আমি বেগুন ইলিশ কুটে রেখেছিলাম বেগুন ইলিশ রান্না করব তাই। সাথে সবজি কুটে রেখেছিলাম আর মুরগীর মাংস। পিয়াস বেশ স্বাভাবিক ভাবেই পড়ে যাওয়া ভাতের পাতিলটা তুলল। যতটুকু ভাত উপর থেকে নেওয়া যায় ততটুকু নিয়ে তারপর পরিপক্ব হাতে মাড় গেলে ভাতের পাতিলটা আগুনে একটু ছ্যাকা দিয়ে তুলল। তারপর একেক করে বেগুন ইলিশ,সবজি আর মুরগীর মাংস রান্না করল। আমিও এত দ্রূত রান্না করতে পারতাম না যতটা না’ সে করেছে। বুঝায় যাচ্ছে সে রান্নায় বেশ পরিপক্ব। রান্না শেষে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে ইশারা করে বলল

“আমি কি ভালো রান্না করতে পারি? নাকি কোনো সন্দেহ আছে এখনও?”

আমি কিছুটা মুচকি হেসে উত্তর দিলাম

“আলবাদ পারো। আচ্ছা পিয়াস তুমি আমার জন্য এতকিছু কেন করছো?”

পিয়াস হালকা গলায় উত্তর দিল

“মায়ার টানে।”

“মায়ার টান খুব খারাপ পিয়াস। বেশি বাড়িও না। টান বেড়ে গেলে পরে পরিত্রাণ পাওয়া ভীষণ কষ্ট হয়ে যাবে। সম্পর্কটা যেন এমনেই থাকে, তিক্ততা না আসে। তুমি ছোটো ভুল করতেই পারো। তবে আমি বড়ো আমি তো আর ভুল করব না। আবেগ আমাকে গ্রাস ও করতে পারবে না। বরং আমি তোমার ভুলটা শুধরে দিতে পারব। পরামর্শ দিতে পারব।”

পিয়াসের মোলায়েম সুর কানে আসলো

“তুমি নাহয় ভুল করলে শুধরে দিও। আমি এমন কিছুই করব না। বিশ্বাস রাখতে পারো। আমরা কী ভালো বন্ধু হতে পারি? আর শুনো বিকেলে আমাদের বাসায় যেও একসাথে লুডু খেলবনে। বাসায় লোকজন তিন হওয়ায় লুডু খেলাটা তেমন জমে না। তুমি থাকলে চারজন মিলে লুডু খেলা যাবে। আচ্ছা শুনো আমি এবার গেলাম। পড়াশোনা করতে হবে। পরে আবার আসব।”

কথাগুলো একদমে বলে রান্না ঘর থেকে হনহনিয়ে বের হলো। আমিও পেছন পেছন বের হয়ে পিছু ডেকে বললাম

“এত কষ্ট করে রান্না করলে খেয়ে যাও।”

সে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে দরজা খুলতে খুলতে জবাব দিল

“তুমি খেলেই হবে।”

আমি আর পিছু ডাকলাম না। তবে ছেলেটার পাগলামি আমার মন্দ লাগছে না। একটু না বেশ নাছোরবান্দা বটে। আমি চুপ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। তারপর নুহাশকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম দুপুরে খেতে আসবে কি’না। উত্তরে সে বলল আসতে আসতে তিনটে বাজবে। আমিও তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। তিনটে গড়িয়ে সাড়ে চারটে বাজতে লাগল মহাশয়ের তো আসার নাম নেই। আমি পুনরায় কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“সে কখন থেকে না খেয়ে অপেক্ষা করছি আপনি আসবেন কখন?”

অপর পাশ থেকে জবাব আসলো

“না খেয়ে বসে থাকতে কে বলেছে? আর আমি এখানের প্রেসারে আর আসতে পারিনি। তাই এখান থেকে খেয়ে নিয়েছি। তুমি খেয়ে নিও।”

মনমরা গলায় উত্তর দিলাম

“একটা বার কল করে তো জানাতে পারতেন।”

রাগী গলার জবাব কানে আসলো

“মুমু তুমি বড্ড বেশি বাচ্চামো করো। আমি তো বসে নেই সারাদিন তোমাকে কল দেওয়ার জন্য। এখানে অনেক প্রেসার। এগুলো তো তোমাকে বুঝতে হবে।”

ফোনটা কেটে গেল। না চাইতেও আমার চোখ দিয়ে অভিমানের জল গড়িয়ে পড়ল। খাওয়ার ইচ্ছাটা যেন মরে গেল। নিজেকে কোনোরকম সংযত করে চোখের পানি মুছে সোফায় হেলান দিয়ে বসলাম। কলিং বেলটা বেজে উঠল। চোখটা খোলে দরজাটা খুললাম। পিয়াস তার হাতের মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল

“তোমার জন্য স্পেশাল করে বানিয়ে নিয়ে এসেছি। খেয়ে জানিও কেমন হয়েছে। আর সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় এসো লুডু খেলব একসাথে। ”

আমি মগটা হাতে নিয়ে কথা না বাড়িয়ে দরজা লাগিয়ে রুমে আসলাম। কফিতে চুমুক দিয়ে বুঝলাম পিয়াস বেশ ভালোই রান্নায় দক্ষ। কফিটা বেশ না অনেক ভালো হয়েছে। মজা করেই কফিটা খেলাম। কিছুটা হালকা লাগছে। মান অভিমানের পালা শেষ করে খেতে বসলাম। শুধু শুধু নুহাশের উপর রাগ করে নিজের পেটকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই কারণ নুহাশ এ রাগের কোনো মর্মই বুঝবে না। তবে হাতটা বেশ জ্বলবে হাত দিয়ে খেতে গেলে। তাই চামচ দিয়েই খেয়ে নিলাম। রান্না বেশ ভালো হয়েছে। আমি রান্না করলেও এত মজা হত না। কোনোরকম খেয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। চোখ দুটোতে যেন রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছে। মানুষ বলে কফি খেলে ঘুম হয় না। তবে আমার আবার উল্টাটা হয়। চা, কফি খেলে দ্রূত ঘুম চোখে ঝেঁকে বসে। মানুষ আজব নাকি আমি আজব বুঝতে পারি না।

কলিং বেলের বারংবার আওয়াজ কানে আসতে লাগল। তবে চোখ খুলতে পারছি না ঘুমে। অনেক কসরত করে চোখ খুলে লক্ষ্য করলাম রাত দশটা বেজে গেছে। ভেবেছিলাম সন্ধ্যায় পিয়াসদের বাসায় গিয়ে লুডু খেলব তাও আর হলো না। দরজায় কে এসেছে কে জানে। পিয়াস নাকি নুহাশ বুঝে উঠতে পারছি না। দ্রূত বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার দিকে এগুলাম। এপাশ থেকে জোরে বলে উঠলাম

“কে?”

“মুমু আমি খুলো।”

বুঝতে পারলাম নুহাশ এসেছে। দরজাটা খুলে দিলাম। নুহাশ রুমে ঢুকে কাপড় পাল্টে হাত মুখ ধুয়ে খেতে দিতে বলল। আমি টেবিলে খাবার গরম করে সাজিয়ে নিলাম। নুহাশ বসে খেতে লাগল। এদিকে নুহাশ আমাকে খেতে বলবে সে আশায় দাঁড়িয়ে না থেকে নিজেও খেতে বসলাম। তবে হাত পুড়ে গেছে তাই চামচ দিয়ে খেতে লাগলাম। নুহাশ বিষয়টা একটাবারও লক্ষ্য করল না। একটা বারও জিজ্ঞেস করল না তোমার হাতে কী হয়েছে? চামচ দিয়ে খাচ্ছ কেন? কেন জানিনা নুহাশের এ ছন্নছাড়া ভাবটা আমি নিতে পারছি না। আমি নুহাশকে চাচ্ছি একরকম তবে পাচ্ছি অন্যরকম। বুকে যেন পাথর এসে বসে রয়েছে মনে হচ্ছে।

খাওয়া শেষ হলো কোনোরকম। আমি চুপচাপ খাটে শুয়ে রইলাম। ভাবতেও পারিনি কিছুক্ষণ পর আমার সাথে এমনকিছু হবে যা আমার চাওয়া ছিল না।

#বিবাহিতার সাতকাহন
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৩

নুহাশ আমার উপর ঝাঁপিয়ে উঠল ভালোবাসার দাবি নিয়ে। অথচ সে একবারও আমার এতে সায় আছে কি’না বা আমার শরীর ভালো কি’না জিজ্ঞেস করার তোয়াক্কা করল না। মেয়েদেরও যে একটা ইচ্ছা থাকে সে বিষয়ে হয়তো তার জ্ঞান নেই। থাকবেই বা কী করে মেয়ে মানুষ কেবল ভোগের পন্য। মনে হলো ভোগ করব আর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। স্বার্থ ফুরিয়ে গেল ছেড়ে দিলাম। আমি কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে তাকে আর্জি জানালাম

“নুহাশ আজকে আমার ইচ্ছা নেই। শরীর ভালো নেই। হাতেও প্রচুর ব্যথা। আজকে আপাতত থাকুক। আমি যেমন তোমাকে কালকে তোমার মতো থাকতে দিয়েছি তুমিও আজকে আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। আমার একটু ফ্রেশ ঘুম দরকার। শরীরটা ভীষণ দুর্বল।”

নুহাশ আমার বাঁধা মানল না। বরং রাগে গজগজ করে উত্তর দিল

“কালকের জন্য কী আজকে শোধ নিচ্ছ নাকি? দেখো মুমু তোমার উচিত আমার ডাকে সাড়া দেওয়া। আর এটা তোমার হক।”

আমি আর বাঁধা দিলাম না। যে মানুষ বুকে মাথা রেখে উপভোগ করতে জানে কিন্তু বুকের ভেতরের হাহাকার বুঝতে জানে না তাকে বলে আর কী লাভ হবে। বরং অরণ্যে রোদন ছাড়া কিছু না। আমি চুপ হয়ে রইলাম। নুহাশ আমার সাথে মিশে গেছে। তবে এতে আমার কষ্টটাই বেশি হচ্ছে। হাত দুটো যখন চেপে ধরেছিল। আমি শুধু দাঁত কামড় দিয়ে চোখের জল ফেলেছি। কারণ হাতের পুড়া জায়গার ব্যথার প্রখরতা নুহাশের বুঝার ক্ষমতা নেই।

সকালটা শুরু হলো। আজানের ধ্বনি কানে আসতেই গোসল করে নামাজে দাঁড়ালাম। মোনাজাতে দুহাত তুলার সময় লক্ষ্য করলাম হাত দুটো লাল হয়ে আছে। জ্বলাতো আছেই। মোনাজাত ধরে কোনোকিছু বলতে পারছিলাম না শুধু চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছিল। এতটা যন্ত্রণা হয়তো এর আগে আমার লাগেনি। কেন কাঁদছি কী কারণে কাঁদছি সেটার ব্যখ্যা হয়তো আল্লাহর দরকার পড়বে না। কারণ তিনি অন্তরের সব কথা জানেন। তিনি বুঝেন আমার চোখের জলের কারণ। তাই মোনাজাতেই অনেকক্ষণ কেঁদে নিলাম। তারপর রান্না ঘরে গেলাম। কালকের রান্নাটা পিয়াস করে দিয়েছে এখন তো আর কেউ নেই যে রান্না করে দিয়ে যাবে। পিয়াসের দেওয়া মলমটা হাতে মাখিয়ে নিয়ে রান্না বসালাম। বেশি কিছু না, খুব সহজ পদ্ধতিতে খিচুরি রান্না করলাম। এছাড়া উপায় নেই। এ হাত নিয়ে রুটি বানানো অসম্ভব। আর নুহাশ সকালে ভাত খাবে না। তাই বুদ্ধি করে খিচুরি রান্না করেছি।

এ খিচুরি রান্না শেখার পেছনে আবার বিরাট কাহিনি আছে। হোস্টেলে যখন প্রথম যাই তখন সেখানকার রান্না আমার একদম ভালো লাগত না। তাই প্রায় সময় বাইরে থেকে খিচুরি এনে খেতাম । হোস্টেলের পাশেই একটা খিচুরি রান্নার দোকান ছিল। নাম ছিল নয়ন মামার মজার খিচুরি। সত্যি বলতে মামার খিচুরি বেশ মজাও ছিল। হুট করে মামা দোকান বন্ধ করে গ্রামে চলে যায়। এরপর আমি পড়ি ভীষণ বিপাকে। তখন নয়ন মামার খিচুরির স্বাদকে কেন্দ্র করে আমিও আবিষ্কার করে ফেললাম মুমু আপার মজার খিচুরি। যদিও রান্না জানি না তবে হোস্টেলে যেদিন আমি খিচুরি রান্না করতাম সেদিন সবাই আমার খিচুরি খাওয়ার জন্য লাইন ধরত। তাই এ খিচুরি রান্নায় বেশ পারদর্শী হয়ে পড়ি আমি।

আর রান্নাটাও বেশ সহজ। প্রথমে চাল, কয়েক পদের ডাল একসাথে নিয়ে এতে পরিমাণ মতো সবজি, মাংস সিদ্ধ যা মন চায় দিয়ে সকল ধরণের মশলা দিয়ে তেলে কিছুক্ষণ ভেজে নিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে। যখন পানি প্রায় শুকিয়ে আসবে তখন একটা ডিম ভেঙে দিয়ে ভালো ভাবে নাড়িয়ে কিছুক্ষণ ভাপ দিতে হবে। ভাপ দিলে খিচুরিটায় আঠালো একটা ভাব আসে যা খেতে অনেক মজা।

যাইহোক খিচুরি রান্না শেষ করে একটু শুকনো মরিচ ভেজে নিলাম। খিচুরি খাব সাথে শুকনো মরিচ আর পিয়াজ ভাবতেই জিভে জল চলে আসছে। আমি রান্না শেষে খিচুরি বাটিতে নিয়ে টেবিলে রাখলাম। ততক্ষণে নুহাশ উঠে পড়েছে। সে তৈরী হতে হতেই আমি তার প্লেট সাজিয়ে রাখলাম। নুহাশ টেবিলে খেতে বসলো। এখন আর নুহাশ খেতে বসতে বলবে এ আশা রাখি না তাই কষ্টও হয় না। তাই নিজেই বসে পড়লাম। নুহাশ চুপচাপ খেয়ে নিল। একটু তো আশা ছিল একবার হলেও মিথ্যা প্রশংসা করে বলবে মুমু তোমার হাতের খিচুরি তো ভীষণ মজা। তবে আশায় যেন সেগুরে বালি। নুহাশের কাছে এসব আশা করা ভীষণ বোকামি।

খাওয়া শেষে সে তার কাজে চলে গেল। আমি রুমে বসে সোফায় হেলান দিয়ে রইলাম। নিরসা একটা জীবন পার করতে মোটেও ভালো লাগছে না। একটু কেয়ার তো আশা করতেই ইচ্ছে করে। ছোটো ছোটো বিষয়গুলো ভাববার মতো ক্ষমতা কেন নুহাশকে আল্লাহ দিল না তাই ভাবছি আমি৷

এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠল। কে আর আসবে পিয়াস নিশ্চয়। যা ভাবলাম সেটাই। হাতে কফির মগ। আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল

“তোমার জন্য বানালাম। আমার আবার সকাল বিকেল কফি খাওয়ার অভ্যাস। তাই আমি যখন খাই তোমার জন্য নিয়ে আসি৷ আর গতকাল লুডু খেলতে গেলে না কেন? শরীর ঠিক নেই নাকি? আর হাতের কী অবস্থা দেখি। ঠিক করে মলম দিচ্ছ তো?”

ছেলেটা যখন কথা বলে এক নাগারে বলেই চলে। আমি শুধু শুনলাম। পিয়াস থেমে গেল। আমি কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম

“হাত আগের থেকে ভালো বলা যায়। আচ্ছা পিয়াস খিচুরি খাও?”

পিয়াস মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। তারপর আবার বলে উঠল

“কেন বলোতো? সকালে কি খিচুরি রান্না করেছো নাকি?”

“হুম।”

“তাহলে তো খাওয়ায় যায়। আচ্ছা মুরগীর মাংসের তরকারি আছে না?”

“হুম। থাকবে না কেন?”

“তাহলে খিচুরি নিয়ে আসো আমি খাই।”

আমি হেসে উত্তর দিলাম

“বাইরে দাঁড়িয়ে খাবে নাকি? ঘরে আসো।”

পিয়াস ঘরে আসলো। আমি ওকে খিচুরি আর মুরগির মাংসের তরাকারিটা দিলাম। সে খিচুরিটা মুখে নিয়ে বলল

“বাহ! খিচুরি রান্নাতে তো তুমি বেশ এক্সপার্ট। রান্নাটা মজা হয়েছে। মুমু তুমি বরং আমাকে তোমার এ খিচুরি রান্নাটা শিখিও।”

আমি হাসতে হাসতে বললাম

“নাছোরবান্দা বড্ড তুমি। আমাকে তুমি বাকি রান্না শিখিও। আমি এ এক খিচুরিই রান্না ভালো পারি। বলা চলে মুমু আপার মজার খিচুরি। এছাড়া বাকি গুলোতে একদম জিরো। তুমি তো মাশআল্লাহ বাকিসব ছেলে হয়েও ভালো পারো।”

পিয়াস বেশ জোরে হাসল।

“মুমু আপার মজার খিচুরি আসলেই মজার। তা দুপুরে কী রান্না করবে আজকে?”

“তোমার ভাইয়া যা বাজার পাঠাবে তাই রান্না করব। আচ্ছা পিয়াস তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই?”

প্রশ্নটা করেই আমি কেমন আনমনা হয়ে গেলাম। কেনই বা তাকে এ প্রশ্ন করলাম তাও জানি না। পিয়াসের হাসিতে যেন আনমনা মন নড়ে উঠল। পিয়াস হাসতে হাসতে উত্তর দিল

“তুমি কী যে বলো না। আমার হবে প্রেম! এখনের মেয়েদের যা ডিমান্ড। আর আমাকে তো দেখেছই কেমন। যাকে ভালো লাগে তার জন্য করতেই থাকি। মেয়েরা এটাকে দুর্বলতা ভেবে মাথায় চড়ে বসে। যার দরুণ অনেককে পছন্দ হলেও পছন্দটা আর প্রেমে গড়ায়নি। তুমি ভাইয়ার আগে কখনও প্রেম করেছো? আচ্ছা তোমাদের লাভ ম্যারেজ নাকি এরেন্জ ম্যারেজ?”

আমি একটু জোরে হেসেই উত্তর দিলাম

“হ্যাপিলি এরেন্জ ম্যারেজ।”

“তুমি অনেক হ্যাপি তাই না?”

“হুমম অনেক। আচ্ছা এত বকবক করো না তো। চটপট খাওয়া শেষ করো।”

পিয়াস আর কথা বাড়াল না। খাওয়া শেষে আমার দিকে বিনয়ের সহিত তাকিয়ে বলল

“মুমু আপার মজার খিচুরি খাওয়ানোর জন্য ধন্যবাদ। আর বাসায় যেও বিকেলে। লুডু খেলব। আর দুপুরে কষ্ট করতে হবে না। বাজার আসলে আমাকে কল দিও। আমি এসে রান্না করে দিয়ে যাব। খিচুরি খাইয়েছো এতটুকু তো তোমার জন্য করতেই পারি৷ আর তোমার অনেক মুড সুইং হয় বুঝতে পারি। কারণ ফুসফাস রেগে যাও। থাক এখন আর কথা বাড়ালাম না। পরে আবার আসব।”

পিয়াস চলে গেল। ছেলেটার সাথে কথা বলতে খারাপ লাগে না। ভালোই সময় কেটে যায়। দুপুর হয়ে গেল। কাকা এসে বাজার করে গেল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম পিয়াসকে কল দিব কি’না। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে কল দিতে যাব। এমন সময় মোবাইলের স্ক্রিনে কিছু একটা চোখে পড়ে বিস্মিত হলাম।

কপি করা নিষেধ