বিবাহিতার সাতকাহন পর্ব-২০+২১

0
346

#বিবাহিতার সাতকাহন
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ২০

পিয়াসকে দেখে বিরক্ত গলায় বলে উঠলাম
“দরজার লক খুললে কী করে? আর এভাবে রাতে আসাটা কী ঠিক। পিয়াস তুমি কেন এখনও আমার পিছে পড়ে আছো?”

পিয়াস আমার মুখটা চেপে ধরে একটু পেছন দিকে নিয়ে উত্তর দিল

“একদম চুপ। কথা বলবে না।”

আমার ভয়ে গা, হাত, পা কাঁপতে লাগল। চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকালাম। এদিকে শুদ্ধ অনবরত কাঁদতে লাগল। পিয়াস আমার মুখটা ছাড়তেই বেশ দ্রূত গলায় বলে উঠলাম

“হচ্ছেটা কী? দেখতেছো আমার বাচ্চা কাঁদতেছে আর এর মধ্যে এসব কী করছো? কী চায় তোমার?”

পিয়াস আমার হাতের আঙ্গুলে একটা আংটি জোর করে পরিয়ে দিয়ে বলল

“আজকে তোমার জন্মদিন ভুলে গেছো? তোমাকে উইশ করতে এসেছি। আর কিছু না। আর দরজার ডুপ্লিকেট চাবি আগেই বানিয়ে রেখেছিলাম। আর তোমার হাতে যে আংটিটা দিয়েছি সেটা আমাদের বন্ধনী। মনে রাখবে তোমাকে আমার বন্ধনে আমি আবদ্ধ করলাম। মুমু তুমি নুহাশকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।”

পিয়াসের কথা শুনে আমার মেজাজ কিছুটা রুক্ষ হলো। শুদ্ধকে কোলে নিয়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললাম

“নুহাশকে কেন ডিভোর্স দিব? তার দোষ কোথায়? আর নুহাশ আমার শুদ্ধর বাবা। আমি কেন আমার সন্তানকে শুধু শুধু বাবা ছাড়া করব?”

পিয়াসের আবেগী উত্তর কানে আসলো

“দেখো মুমু আমি জানি তুমি নুহাশের সাথে সুখী নও। থাকতে হচ্ছে তাই থাকছো। তোমাকে নুহাশ ভালোবাসে না। আর বাচ্চা নিয়ে কী টেনশন? আমি তোমাকে বিয়ে করব। বাচ্চা আমার পরিচয়ে বড়ো হবে৷ মুমু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। কত চেষ্টা করেছি মুভ করতে। পারছি না। কত মেয়ের সাথে প্রেম করার চেষ্টা করেছি করতে পারিনি। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। ”

“পিয়াস আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না। আর তোমার আর আমার বয়সের ফারাক জানো? কী বলছো এসব কথা? আমি তোমাকে এতদিন ছোটো ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম। আর সে সম্পর্কটাকে তুমি এত জঘন্য রুপ দিবে চিন্তাও করতে পারিনি। আর তোমার বিকৃত চাওয়া দেখে তো আমার লজ্জায় তলিয়ে পড়তে ইচ্ছা করছে। শুধু শুধু আমাকে আর জ্বালিও না। তোমাকে বিয়ে তো দূরে থাক কথাও বলব না আর। সামনে থেকে বিদায় হও।”

আমার কথা শুনে পিয়াস আমার পায়ে জড়িয়ে ধরল। আমার পা টা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল

“মুমু কথা বলা বন্ধ করো না। বিয়ে করার দরকার নেই। শুধু মাঝে মাঝে কথা বলো। তোমাকে ছাড়া আমার ভীষণ কষ্ট হয়। তুমি যদি কথা বলা বন্ধ করো তাহলে আমি আবার সুইসাইড করে মরে যাব। তুমি শুধু কথা দাও কথা বলা বন্ধ করবে না?”

পিয়াসের কথা শুনে আমার ভয়ও লাগতে শুরু করল। আবেগের বশে সে যদি আবারও সুইসাইডের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে হয়তো এটা আমার জন্য সুখকর হবে না। তাই কিছুটা রাগ আর কিছুটা নম্র গলায় বললাম

“আমার পা ছাড়ো আর বাসায় যাও। যেকোনো সময় নুহাশ আসতে পারে। তোমাকে আমি সরাসরি বলছি। আমার পক্ষে নুহাশকে ছাড়া সম্ভব না। আমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছো সেটা কখনও পূর্ণ হবে না। তবে সুইসাইডের মতো বাজে সিদ্ধান্ত আর নিও না। তুমি চাচ্ছ আমি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখি সুতরাং রাখব। তবে আমার সামনে তুমি এসো না। মন দিয়ে পড়ালেখা করো আর মাঝে মাঝে শুধু ফোনে কথা হবে। আর আমার যেহেতু বাচ্চা ছোটো সেহেতু আমি প্রায় সময় ব্যস্ত থাকব। এসব বুঝে, সময় পেলে তোমার সাথে কথা হবে। আর যদি পাগলামি করো তাহলে তুমি কী সুইসাইড করবে? আমি নিজেই করে ফেলব।”

আমার কথা শুনে পিয়াস আমার পা টা ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে জবাব দিল

“প্লিজ তুমি এমন কথা বলো না। তুমি যখন সময় পাও তখনই কল দিও। আমি তোমাকে টেক্সট দিয়ে রাখব শুধু। এখন গেলাম। বেশি জ্বালাব না তোমাকে।”

পিয়াস বের হয়ে গেল। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। শুদ্ধ কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি শুদ্ধকে শুইয়ে হাতের আংটিটার দিকে তাকালাম। ছেলেটা এতকিছুর পরও আমার জন্মদিনের তারিখটা মনে রেখেছে এটা ভেবে বেশ অবাক লাগছে। ফোনটা হাতে নিয়ে নুহাশকে কল দিলাম। নুহাশ কল ধরতেই হালকা গলায় বললাম

“আমার জন্মদিন আজকে তুমি কি ভুলে গেছো? দেখতে দেখে কীভাবে যেন দু বছর পার হয়ে গেল। এই তো শুদ্ধ যখন পাঁচ মাসের পেটে ছিল তখন আমার জন্মদিন গিয়েছিল আমার তো মনেই ছিল না। তুমিও মনে করো নি। আর আজকে শুদ্ধ আমার কোলে ছয়মাসের। আজকেও আমার জন্মদিন তুমি ভুলে গেছো। ছোটো ছোটো জিনিসগুলো মেয়েরা খুব করে চায় নুহাশ। আমি তো তোমার কাছে টাকা পয়সা, খাওয়া দাওয়ার কষ্ট করি না। কিসের কষ্ট করি জানো? একটু ভালোবাসার, ছোটো ছোটো চাওয়া পূর্ণতার।”

আমার কথা শুনে ওপাশ থেকে উত্তর আসলো

“কেন মুমু? আমার ভালোবাসার কমতি কোথায়? জন্মদিনে উইশ করলেই কী ভালোবাসা হয়ে যায়? গতবছর তোমার জন্মদিনের তারিখ ভুলে গিয়েছিলাম এবারও তাই। একটা মানুষের তো সব মনে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি সারাদিন অনেক ব্যস্ত থাকি। এতই ব্যস্ত থাকি যে নিজে দম নেওয়ার সময় পাই না। তার পরও আমি তোমাকে সময় দিই। তোমার কল আসলে ধরার চেষ্টা করি। আমি এসব কার জন্য করি? তুমি নিজেকে প্রশ্ন করো উত্তর পেয়ে যাবে।”

আমি হতাশ গলায় উত্তর দিলাম

“নুহাশ তুমি যা বলছো সেটা দায়িত্ব। দায়িত্ব আর ভালোবাসা এক হয় না। তুমি কোনোদিন আমাকে বুঝোনি বুঝবেও না। এত বকবক করে লাভ নেই। ঘুমাতে হবে ঘুমালাম আমি।”

কলটা কেটে শুয়ে পড়লাম। সত্যি বলতে ভালোবাসা আর দায়িত্বের পার্থক্যটা হয়তো নুহাশ বুঝে না। বুঝলে আজকে এমনটা হত না। এ পরিণতি দেখতে হত না। আমার ভেতরটা বেশ পুড়ে। আমি নুহাশকে ভালোবাসি তাই এত অবহেলার পরও ছাড়তে পারি না। আর এদিকে পিয়াসের এ পাগলামি গুলো আমাকে ভীষণ দুর্বল করে তুলে তার প্রতি। কিন্তু সংসারের বেড়াজাল নামক মায়া পার হয়ে আমি তার কাছেও যেতে পারি না। এ দুটানা, এ অসহনীয় যন্ত্রণার সমাপ্তি কীভাবে ঘটবে জানি না। তবে আমি একটু মানসিক শান্তি চাই, এক চিলতে ভালোবাসা চাই, তবে কোনো ভুল মানুষের কাছে না, আপন মানুষের কাছে।

ঘুমটা ঝেঁকে এসেছে চোখে। এর মধ্যেই শুদ্ধ কান্না করে উঠল। দ্রূত উঠে শুদ্ধকে খাওয়ালাম। শুদ্ধ আবারও ঘুমিয়ে গেল। আমারও চোখ ঘুমে ছেয়ে গেল। তবে শুদ্ধর জন্য বারংবার ঘুম থেকে উঠতে হচ্ছে। মা হওয়া কত বড়ো লড়াই সেটা কেবল একটা মায়েই বুঝে৷

সমুদ্রের ধারালো স্রোতের মতো সময় পার হচ্ছে। মাঝে মাঝে আঁচড়ে পড়া ঢেউ গুলো বুকে এসে হানা দিচ্ছে। এই তো সব মিলিয়ে দিনকাল চলে যাচ্ছে। বছর তিনেক কী করে পার হয়ে গেল জানি না৷ শুদ্ধর স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় হয়েছে। শুদ্ধকে একটা স্কুলেও দিয়েছি। শুদ্ধর বাবার পোস্টিং হয়েছে অন্যত্র। তবে ছেলের স্কুলের জন্য আমাকে সাথে নিয়ে যায়নি। সে এখন অন্য জায়গায় আর আমি ঢাকায়। ছেলেকে সেখানেই ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করিয়েছি। আর পিয়াসও আমার পিছু ছাড়ে নি। সে যেমন আমার পিছু ছাড়ে নি তেমনি আমিও তার অকৃত্রিম ভালোবাসায় নুইয়ে পড়িনি। নুহাশকে ঠকায়নি। শুদ্ধকে ঠাকায়নি। এতকিছুর পরও আমি পিয়াসকে আমার কাছে ঘেষতে দেইনি৷ তবুও পিয়াস তার ভালোবাসার বুলি আমার সামনে আওরায়ে যাচ্ছে। আমি ঢাকায় এসেছি তাই সেও ঢাকায় এল এল বি তে ভর্তি হয়েছে।

শুদ্ধকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছি। পথ পার হতেই পিয়াসকে লক্ষ্য করলাম। এভাবে পিয়াসকে দেখব আশাও করিনি। একদম বেমানান লাগছে এভাবে দেখতে।

#বিবাহিতার সাতকাহন
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২১

একটা মেয়ের হাত ধরে জড়িয়ে আছে। মুক্ত রাস্তায় এভাবে থাকাটা এ বয়সী ছেলেদের একটু বেমানান লাগছে। আমি বিষয়টা খুব একটা আমলে নিলাম না। এ বিষয় নিয়ে এত ভাবা উচিতও না। তার জীবন সে কী করবে এটা একান্তই তার ব্যাপার। আমি শুদ্ধকে স্কুল পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। স্কুলের ভেতরে ঢুকার অনুমতি নেই। গেইট পর্যন্ত দিয়ে আবার বাসার দিকে রওনা দিলাম। পিয়াসকে আবারও একই জায়গায় একই অবস্থানে দেখলাম। কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করছে। কেন জানি না তাকে বিপথে যেতে দেখলে অনেক খারাপ লাগে। আমি দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।

দুপুরের ত্যাজী সূর্যটা মাথার উপর দগদগ করছে। মনটা অস্থির লাগছে ভীষণ। আমি চাই পিয়াস ভালো থাকুক আমার থেকে দূরে থাকুক। আবার পিয়াসকে অন্য মেয়ের সাথে দেখলেও আমার খারাপ লাগে। এই যে দুর্বলতা এটা যে ভীষণ খারাপ আমি জানি। তবুও মাঝে মাঝে মনটা কেমন যেন বিকিয়ে যায়। কিছু মানতে চায় না। আবার নুহাশকে ছাড়ার কথাও আমি ভাবতে পারি না। নুহাশের প্রতি এত অবহেলার পর এখন আর ভালোবাসা কাজ করে না। যা কাজ করে তা হলো মায়া, সামাজিক বন্ধন আর শুদ্ধর অদূর ভবিষ্যত নিশ্চিতের একমাত্র ভরসার জায়গা। মাঝে মাঝে মনে হয় নুহাশকে ছেড়ে দিয়ে পিয়াসের কাছে চলে যাই একটু কেয়ার তো পাব। ছোটো ছোটো অপূর্ণতা গুলো পূর্ণ তো হবে। তবে ঐ যে সংসারের বেড়াজাল সব পার হয়ে এত হীনও সিদ্ধান্ত নিতে আর পারি না। যতই হোক নারী বলে কথা। পুড়ব, জ্বল, সহ্য করব, নিজেকে শেষ করে দিব তবুও সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করব না। আমার অবস্থানে অন্য একটা মেয়ে হলে হয়তো পিয়াসের প্রেমে পড়ে যেত, পরকিয়ায় জড়িয়ে যেত। কিন্তু আমি তা পারিনি কেবল নিজের দায়িত্বের কথা ভেবে। নুহাশ যেমন নিজের দায়িত্ব পালন করছে আমিও করছি। এ সংসার কেবল দায়িত্ব পালনের ব্যস্ততা নিয়েই টিকে আছে। ভালোবাসা হারিয়ে গেছে।

শুদ্ধকে আনতে কাকা গিয়েছে। আমি রান্না চড়িয়েছে। শ্বশুড় শ্বাশুড়ি আজকে আসবে বলেছেন। কল দিয়েছি দুবার, ধরেনি। এখন আর শ্বশুড় শ্বাশুড়ির সাথে ঝামেলা হয় না। একটা সময় ধরে উনাদের অনেক বুঝাতাম, উনাদের মেয়ে হয়ে থাকতে চাইতাম। এখন আমি আর মেয়ে হতে চাই না ,ছেলের বউ হয়ে উঠেছি। উনাদের কিছুতেই কিছু যায় আসে না আমার। ভালো বললেও না, খারাপ বললেও না। সত্যি বলতে সংসারের মাপকাঠি বুঝা অনেক কঠিন। এ বিস্তর জাল থেকে বের হওয়া আরও কঠিন।

সময় যাচ্ছে, দিন পার হচ্ছে। আরও দুটো বছর গেল। বিবাবহিত জীবনের সাত বছর পার করলাম। সব কিছুই আগের মতো কোনোকিছুই বদলায় নি। পিয়াসও না। পিয়াসের পাগলামি বরং বেড়ে চলেছে। ভেবেছিলাম বড়ো হওয়ার সাথে সাথে এ পাগলামি চলে যাবে তবে এখনও তা যায় নি। এত মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে স্যাটেল হতে চেয়েছে তবুও পারেনি। ঘুরেফিরে মুমুকেই ভালোবাসে সে। মুমুকেই তার লাগবে।

অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস গুলোর প্রতিই আমারা বেশি আকৃষ্ট হই। প্রথমে ভালোবাসা দিয়ে তা পাবার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে তা না পেলে জিদ করে তা পাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মাঝে মাঝে ভুলে যাই মরীচিকার পেছনে ছুটে কেবল শূন্যতায় পাওয়া সম্ভব, অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুটি নয়। পিয়াসের চাওয়াটাও কেবল শূন্যতায় রূপ নিবে আর কিছু না।

শুদ্ধর স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি দিয়েছে। রাত বাজে সাড়ে দশটা। শুদ্ধকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। নুহাশ এসেছে আজ। টেবিলে খেতে খেতে বলতে লাগল

“তোমাকে আমি বেশি সময় দিতে পারি না এজন্য আমিও সরি। আমি চাই তবে অন্যের অধীনে চাকুরি করে সে সময় টা হয়ে উঠে না। বিয়ের সাত বছর পার হয়ে গেল তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারলাম না। যেহেতু শুদ্ধর স্কুল ছুটি তাই কালকে আমরা সবাই কক্সবাজার যাব। যদিও আমি ছুটি পাইনি। কক্সবাজার যেতে হবে কাজে। তোমরা মা ছেলে ঘুরবে আর আমি কাজ করব। ডিউটি টাইম শেষ হলে এসে যোগ দিব।”

নুহাশের এমন কথা শুনে আমার অস্থির মনটা যেন একটু স্থিরতায় রূপ নিল। আমি মন থেকে চাই নুহাশ এমন করে আস্তে আস্তে পাল্টাক। কাজের ফাঁকে এভাবে সময় বের করে আমাকে দিক। আমার প্রতি একটু সচেতন হোক। আমাদের দায়িত্বের সংসারটা ভালোবাসার সংসারে রূপ নিক। সুন্দর হোক আমাদের মায়ায় জড়ানো সংসার। এক অন্যরকম অনুভূতি যেন আমাকে ঘিরে ধরল। কল্পরাজ্যে যেন হারিয়ে গেলাম। সম্ভিত ফিরল নুহাশের ডাকে

“মুমু কী হলো? চুপ করে দম ধরে দাঁড়িয়ে কী ভাবছো? বললাম একটু ডাল দাও। কথা শুনতেছো না আমার?”

আমি আমতা আমতা করে উত্তর দিলাম

“ওহ হ্যাঁ দিচ্ছি। আর আমি কি আজকেই কাপড় চোপড় গুছিয়ে ফেলব?”

নুহাশ খেতে খেতে উত্তর দিল

” হুম গুছিয়ে রাখো। যদিও যাব কাল রাতের ফ্লাইটে। প্লেনে গেলে বেশি সময় লাগবে না। তুমি তোমার মতো গুছাও সব। সাতদিন থাকা হবে।”

নুহাশের খাওয়া শেষ হলে নুহাশ চলে গেল রুমে। আমি টেবিল গুছিয়ে নিলাম। তারপর কাপড় গুছানোতে লেগে গেলাম। আর অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই মহেন্দ্রক্ষণের জন্য।

অবশেষে সে মহেন্দ্রক্ষণ আসলো। কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এটা আমার জীবনের প্রথম প্লেন জার্নি। তার উপর দীর্ঘ সাত বছর পর কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি। আনন্দটা একটু বেশিই লাগছে। অবসরের অবকাশ নিতে কার না ভালো লাগে! একঘেয়েমি জীবনের বিরতি নিতে যাচ্ছি এজন্য শুকরিয়া আল্লাহর নিকট।

কক্সবাজার পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। রয়াল টুলিপ রিসোর্টে প্রবেশ করলাম। রিসোর্টটা এত সুন্দর যে ঢুকার সাথে সাথে বেশ প্রশান্ত আর শান্ত লাগছে। নুহাশ রাতে একটা কাজে যাবে। আমি আর শুদ্ধ রুমে থাকব। নুহাশ কাজ সেরে আসতে আসতে পরদিন সন্ধ্যা হয়ে যাবে। পরিচিত একজনকে বলে গিয়েছে আমাকে আর শুদ্ধকে নিয়ে সমুদ্র পাড় ঘুরে দেখাতে। বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গায় নিয়ে যেতে। আমিও সে আশায় আছি। কখন সকাল হবে সমুদ্রের পাড়ে বিচরণ করব সে কথায় মনে বাজছে।

ক্লান্ত শরীর শুদ্ধকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। শুদ্ধ আমার গালে চুমু কেটে বলল

“মাম্মা তোমাকে আজকে অনেক খুশি খুশি লাগছে। কেন বলো তো?”

আমি শুদ্ধকে জড়িয়ে ধরে বললাম

“দুঃস্বপ্ন কেটে গিয়ে যখন সুসংবাদ আসে তখন তো বাবা খুশি লাগবেই। তুমি এখন বুঝবে না। বড়ো হলে সব বুঝবে। মাম্মার কষ্ট কোথায়, কেন মাম্মা মাঝে মাঝে কান্না করে আর মাম্মা কী পেলে খুশি হয় সব বুঝবে বাবা। কখনও মাকে অবহেলা করিস না বাপ। অবহেলা বড্ড যন্ত্রণাদায়ক জিনিস রে বাবা। আমি যেমন তোরে সব কিছুতে সবার আগে গুরুত্ব দিই তুইও দিস। বিয়ের পর বউ আর মাকে ব্যালেন্স করে চলিস। কাউকে অবহেলা করিস না। অনকে বড়ো হও বাবা।”

বলেই শুদ্ধকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরলাম। শুদ্ধ আমার গালে অনবরত চুমু দিতে দিতে বলতে লাগল

“আই লাভ ইউ মাম্মা।”

কলিং বেলটা বাজলো। শুদ্ধকে বিছানায় শুইয়ে দরজা খুলে লক্ষ্য করলাম কেউ নেই। দরজাটা পুনরায় লাগিয়ে বিছানায় শুতে যাব ঠিক সে সময় কলিং বেলটা আবারও বেজে উঠল। কিন্তু পুনরায় খুললে আগের মতোই ঘটনায় ঘটলো। এভাবে বারংবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে লাগল। একটা সময় বিরক্ত হয়ে দরজা খোলায় বন্ধ করে দিলাম। অনবরত কলিং বেল বাজতে লাগল।

কপি করা নিষেধ